অনুভূতিরা_শব্দহীন প্রথম পর্ব লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী

0
817

বিয়ে বাড়িটা মুহূর্তের মধ্যেই শো°কে স্ত°দ্ধ হলো কনের মৃ°ত্যুতে। পার্লার থেকে সাজ শেষে ফেরার পথেই সড়ক দু°র্ঘ°টনার কবলে প্রাণ হা°রায় তাহসিনা, যার আজকে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।

তাহসিনার সাথে তার বড়বোন তাহমিনা আর ছোটখালা রিপাও পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। তাহসিনার ছোট ভাই তানজিম আর ওর মা-বাবা পাগল প্রায় হয়ে গেছে। এ কেমন মৃ°ত্যু আসলো তাহসিনার জীবনে?

সদ্য মাস্টার্স শেষ করা মেয়েটি নিজের প্রথম প্রেমকে আজ নিজের করে নিতো। কিন্তু বিধাতা হয়তো তা চায়নি, তাইতো তাকে তুলে নিয়েছে।

তাহমিনার স্বামী, ইমতিয়াজ তাহমিনার হাত ধরে নিরবে কাঁদছে। মেয়েটা যে অন্তসত্ত্বা ছিল, নিজের ঘরটা সাজিয়েছিল অনাগত সন্তানের জন্য।

“কেন চলে গেলে? বেবিকে নিয়ে আমরা কি একসাথে থাকতে পারতাম না। ও আমার মিনা, কথা তো বলে।”

একটু থেমে আবারো বলে,
“মিনা, আমাকে কেন নিলে না তোমার সাথে?”
ইমতিয়াজের কথা কি তার মিনা আর শুনবে?

তাহসিনার খালা রিপার মেয়ে মৃত্তিকা মায়ের প্রাণ°হীন দেহের পাশে বসে আছে, ওকে দেখলে জীবন্ত লা°শ মনে হবে। বিদেশে বড় হওয়া মৃত্তিকাকে মা ছাড়া বাকি সবাই মিউকো বলে ডাকতো৷ এখন ওকে মৃত্তিকা বলবে কে? মায়ের মৃ°ত্যু কিভাবে সইবে সে। তার যে আর কেউ নেই। বাবা তো ওর চার বছর বয়সেই মাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছে।

মৃত্তিকার মুখ দিয়ে অ°স্ফুট স্বরে বের হয়,
“মাম, আমার মাম।”

কিছুক্ষণ পরই বর আহনাফের গাড়ি প্রবেশ করলো। দূর থেকে সাজানো এই রিসোর্ট দেখে পুলকিত হচ্ছিল সে, অথচ কাছে আসতেই একটা অদ্ভুত অনুভূতি হলো। শব্দ নেই, গান-বাজনা নেই, হৈ-হুল্লোড় নেই। বিয়ে বাড়িতে এসব তো থাকার কথা।

আহনাফ গাড়ি থেকে নেমে রিসোর্টের ভিতরে চলে গেল। ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখলো পরপর রাখা তিনটা লা°শ। হঠাৎ থমকে দাঁড়ালো সে, মাঝের মানুষটা যে তার বড্ড চেনা।

তাহসিনার মায়ের চিৎকার ওর কানে আসছে না, তানজিমের ডাকও সে উপেক্ষা করলো। সোজা গিয়ে তাহসিনার মাথার কাছে বসে পড়লো। মাথায় হাত রেখে চেয়ে রইলো চেহারাটার দিকে। এই মানুষটা ওকে দেখলেই লজ্জায় লুটিয়ে পড়তো।

ও যে প্রতিনিয়ত তাহসিনার কাজল কালো বড়বড় হরিণী চোখের প্রশংসা করতো, আজ চোখজোড়া বন্ধ কেন? আজ সে বর সেজেছে, তাহসিনা তো দেখতে চেয়েছিল। তবে দেখছে না কেন?

ছেলেরা তো মনের বি°লাপ মুখে আনতে পারে না, তাই ওর মনের অবস্থাটা কেউই বুঝছে না।

তাহসিনার খুব ইচ্ছা ছিল বিয়েতে সাদা-গোলাপী শাড়ি পড়বে আর আহনাফ চেয়েছিল লাল বধূ। সাদা শাড়ি তো আজ ঠিকই পড়েছিল, কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে তা এখন লালে র°ঞ্জি°ত।

আহনাফ চিৎকার করতে পারছে না, কাঁদতে পারছে না। সকলে কাঁদছে, এখানে উপস্থিত সবার চোখে জল। অথচ ওর চোখও আজ বে°ই°মা°নি করছে।

বরাবরের মতোই নিজেকে প্রকাশে অপারগ আহনাফ। শান্ত ছেলেটা মেঝেতে বসে রইলো। তার বড় বোন আফরোজা এসে ওর পাশে বসলো, ওর পিঠে হাত রাখলো যেন ওকে সান্ত্বনা দিতে চাইছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই, শুধু চোখে জল আর বি°লাপের শব্দ।

ঘন্টাখানেক পর লা°শ°বাহী ফ্রিজিং গাড়ি আসলো। তাহসিনার ইচ্ছায় সিলেটের এই রিসোর্টে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল৷ এখন আবারো ফিরে যাবে ঢাকায়, দেহগুলোকে কবর দিতে। ইচ্ছেটা যে চির অপূর্ণ রয়ে গেল।

লা°শ গাড়িতে তোলা হচ্ছে, আহনাফের চোখজোড়া স্থির হয়ে রইলো তাহসিনার চেহারার দিকে। এখনো এই ধা°ক্কাটা মেনে নিতে পারছে না সে৷ স্বপ্ন তো সাজানো হয়েছিল বহু আগে, তবে আজ কেন ভে°ঙ্গে গেল?

রাতেই ঢাকায় ফিরলো সবাই। সকাল ১০ টায় জানাজা হলো আর তারপর শেষবারের মতো তাহসিনার মুখটা দেখলো আহনাফ৷ সাদা কাফনে মাটির নিচে চলে গেল তাহসিনা। শুভ্র রঙ তার খুব প্রিয় ছিল, এজন্যই বুঝি?

কবরের পাশে বসে থাকলো আহনাফ। এখনো পড়নে বরের শেরওয়ানি। আফরোজা এসে বলল,
“আহনাফ, ফ্রেশ হয়ে নিবি আয়। কাল থেকে তো কিছুই খাসনি।”

সামনের ছোট গাছটায় হাত মু°ষ্ঠিবদ্ধ করে আহনাফ বসে রইলো, কোনো জবাব দিলো না। আফরোজার কথা ওর কানে যাচ্ছে কিনা আল্লাহই ভালো জানে। কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে আফরোজা দূরে চলে গেল।

ইমতিয়াজ একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। ছোট থেকে এ°তিম ছেলেটার তাহমিনা আর তার পরিবারই ছিল একমাত্র ভালোবাসার স্থান, তাদের সাথেই তো সে ভালোবাসার রংমহল গড়েছিল। বিয়ের পর থেকে তাদের সাথেই থাকতো ইমতিয়াজ, ঘরের জামাই কম আর ছেলে বেশি সে।

আজ তার সেই ভালোবাসা চোখ বুজলো। ছেলেরা কাঁদলে নাকি বেমানান দেখায়, নিয়মের তোয়াক্কা না করেই কাঁদছে ইমতিয়াজ।

আফরোজা এখনো আহনাফের আশায় রইলো, হয়তো সে উঠবে৷ কিন্তু উঠছে না, কাঁদছে না, ডাগর চোখে একইভাবে চেয়ে রয়েছে।

“শুনছেন আপু?”

আফরোজা পিছু ফিরে মৃত্তিকাকে দেখে বলে,
“জি।”

মৃত্তিকা পিটপিট করে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে। সারারাতের নির্ঘুম কান্নায় চোখমুখ ফুলে আছে তার। আফরোজা যত্ন করে ওর চোখ মুছে দিয়ে বলল,
“বলো।”

মৃত্তিকা কান্না চেপে বলল,
“ওখানে কেউ একজন আপনাকে ডাকছে, ফরেইনার মনে হলো।”

একটু থেমে দূরে থাকা গাড়ির দিকে ইশারা করে বলল,
“ওখানে?”

আফরোজা ওদিকে চেয়ে বলে,
“মাই হাসবেন্ড, জুহাইব।”
“ওহ।”

আহনাফকে নিয়ে যাওয়ার জন্যই গাড়ি এসেছে। আফরোজা গিয়ে জুহাইবকে বলল,
“আফনাফকে জোর করে হলেও নিয়ে আসো, ওর অবস্থা আমার ঠিক লাগছে না।”

আফরোজার গলা কেঁপে উঠলো,
“ম°রে যাবে আমার ভাইটা।”

জুহাইব একটু ভেবে বলল,
“হুম, যাচ্ছি।”

বিদেশি সাদা চামড়ার জুহাইব আফরোজাকে বিয়ে করেছে। বিয়ের পর আফরোজা জুহাইবের সাথে তার দেশ তুরস্কতে থাকতে শুরু করেছে। বছরে একবার দেশে আসা হয়, এবার এসেছে আহনাফের বিয়ে উপলক্ষ্যে। দুজনেই পরস্পরের ভাষা আয়ত্ত করে ফেলেছে।

একপ্রকার টে°নে হিঁ°চড়ে আহনাফকে নিয়ে আসা হলো। তানজিম ছাড়া তাহসিনার পরিবারের আর কারো সাথেই দেখা হলো না, তাহসিনার মা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আহনাফকে নিয়ে ওরা কুমিল্লায় নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

বাড়িতে ফিরেই আহনাফ নিজের রুমে চলে গেল। সারাটা রাস্তা বিড়বিড় করে একটা কথাই বলতে থাকে,
“তাহু, ফিরে এসো প্লিজ।”

আফরোজা চিন্তিত ভাইয়ের এ পরিণতি নিয়ে। তাহসিনার বাসার পরিস্থিতিও ঠিক নেই, না থাকারই কথা। এমন মৃ°ত্যু মেনে নেয়াটা কষ্টের।
___________________________________

আজ অনার্স ফাইনালের রেজাল্ট বেরিয়েছে সারাহ্-র। আনন্দ যে তার আর ধরে না, সিজিপিএ ৩.৮০ পেয়েছে বলে কথা। খুশিতে সারাদিন ডগমগ করেছে সে আর অপেক্ষা করেছে কখন বাবা বাসায় ফিরবে।

সারাহ্-র বাবা আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর সাহেব মাত্রই অফিস থেকে ফিরেছেন। সারাহ্ উনার পাশে গিয়ে বসে বলল,
“বাবা?”

উনি পায়ের মোজা খুলতে খুলতে বললেন,
“জি আম্মুটা, বলেন।”
“আজকে রেজাল্ট দিয়েছে।”

জাহাঙ্গীর সাহেব মুচকি হেসে বললেন,
“জানি তো আমি আমার মেয়েটা ভালো সিজিপিএ নিয়ে এসেছে।”
“কিভাবে জানো?”
“আপনার আম্মুজান বলেছে।”

সারাহ্ রাগী চোখে মায়ের দিকে তাকালো। ওর মা নার্গিস পারভিন মুচকি হাসলেন।

জাহাঙ্গীর সাহেব মেয়ের অবস্থাটা বুঝলো, উনাকে সারপ্রাইজ দেয়া হলো না বলে মেয়ে যে রাগ করেছে তাও বুঝলো। সারাহ্-র মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“আম্মু, খুব খুশি হয়েছি তোমার রেজাল্টে৷ এখন সামনের পরিকল্পনা কি?”

সারাহ্ একটু চুপ থেকে বলল,
“বাবা আমি মাস্টার্স করতে চাচ্ছি আর তারপর জব নিয়ে ভাববো।”
“ভালো কথা, তা সরকারি চাকরির জন্য তো আগে থেকে পড়তে হবে। পড়ছো তো তুমি?”
“জি, বাবা। আমি তো অনার্সের শুরু থেকেই একটু একটু করে পড়ছি।”
“এইতো আমার গুড আম্মুটা।”

জাহাঙ্গীর সাহেব মেয়ের কপালে চুম্বন করলেন।

“দেও দেও, সব ভালোবাসা ওই একজনকেই দাও। এদিকে আমি যে ঢাবিতে ভর্তি হলাম, সেটার কি হবে?”

সামিহার কথায় জাহাঙ্গীর সাহেব হাসলেন, সাথে সারাহ্ও হাসলো।

সারাহ্ সামিহাকে বলল,
“ঢাবিতে ভর্তি হওয়ার আদর তোকে বহুবার করেছে, এখনের আদর শুধু আমার।”

দুইমেয়েকে দুইদিকে বসিয়ে দুজনকেই আদর করলো জাহাঙ্গীর সাহেব৷ সামিহা বলল,
“বাবা, ক্লাস শুরু হতে দেরি আছে। এর আগে আমি একটু ট্যুরে যেতে চাই।”
“হুম, অবশ্যই যাবে।”
“ইয়ে..”
চেঁচিয়ে উঠলো সামিহা।

সারাহ্-র ছোট বোন সামিহা। সারাহ্ বুঝদার, শান্ত হলেও সামিহা ওর উলটো। চঞ্চল স্বভাবের মেয়েটা সারাদিন বাসাটাকে মাথায় করে রাখে। জাহাঙ্গীর সাহেব খুব খুশি তার দুই জান্নাতকে নিয়ে, যা আল্লাহ তাকে দান করেছে।

এক সপ্তাহ পর,

আহনাফের ছুটি শেষ হয়েছে আজ। এতোদিন কলেজে না গেলেও আজ তো যেতেই হবে। ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও রেডি হয়ে নেয় সে৷ দায়িত্বশীল এই লোকটি নিজের কষ্টের জন্য নিজের স্টুডেন্টদের ভোগান্তিতে ফেলতে পারবে না।

টানা সাতদিন নিজেকে ঘরবন্দী রাখা আহনাফ বের হয়ে যাচ্ছে, আবার ফর্মাল ড্রেসআপ। আফরোজা নাস্তা সাজাচ্ছিল, ওকে দেখে বলল,
“আহনাফ, তুই কলেজে যাচ্ছিস?”
“হুম।”

আহনাফের বাবা, আব্বাস ফয়েজ এসে নাস্তার টেবিলে যোগ দিলেন। উনি বললেন,
“আহনাফ, নাস্তা করবে না?”

আহনাফ একটু চুপ থেকে নিচুস্বরে বলল,
“বাবা, আমার লেট হচ্ছে।”

চলে যেতে নিলে আব্বাস সাহেব ওর হাত ধরে এনে নিজের পাশে বসিয়ে বলল,
“খেয়ে নেও।”

আহনাফ খেলো না, বসে রইলো চুপ করে। কোনোমতে একটু খাবার খেয়ে আহনাফ বলল,
“বাবা, আমি আসছি।”

ঘড়ি দেখে কথাটা বলেই আহনাফ হনহনিয়ে চলে গেল। বেশি কথা বলার ইচ্ছেটা ওর নেই। আফরোজা চেয়ে থাকলো ভাইয়ের দিকে।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের লেকচারার আহনাফ। সে জানে ক্লাসে তার মন বসবে না, কিন্তু মনকে পাথর করে যাত্রা করলো কলেজ পথে।

কলেজে পৌঁছে রিকশা ভাড়া দেয়ার সময় ওয়ালেটের ছোট্ট পকেটে মায়ের ছবিটা চোখে পড়লো। ভাড়া মিটিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভিতরে গেল সে, ২০ বছর হতে চলল মাকে ছাড়া। অন্ধকার কবর ভালোবাসার মানুষগুলোকে তাড়াতাড়ি নিয়ে নেয় কেন, উত্তরটা জানা নেই আহনাফের।
___________________________________

মৃত্তিকা এখনো তাহসিনাদের বাসায়ই আছে৷ যাওয়ার আর জায়গা কোথায় তার ওই ইতালির বাসা ছাড়া?

জানলার পাশে বসে আছে সে। চোখের নিচের কালো জায়গাটা নির্দেশ করছে মেয়েটা ভালো নেই।

“মাম, ও মাম, সারাজীবন আমাকে দিয়ে গেলে আর আমি কিছুই দিতে পারলাম না। তার আগেই চলে গেলে তুমি।”

বাবা নামক বে°ই°মা°ন মানুষটা চলে যাওয়ার পর মৃত্তিকাকে আদরে আদরে বড় করেছে রিপা৷ তখন দেশ ছেড়ে ইতালিতে গিয়ে মৃত্তিকাকে নিয়ে রিপা ঠিক কতটা যু°দ্ধ করেছে তা মৃত্তিকা জানে। রিপা পিএইচডি করেছে, সাথে মৃত্তিকার দেখাশোনাও। সবাই ভেবেছে হয়তো প্রচুর টাকা থাকে রিপার হাতে। অথচ মাস গেলে মেয়ের শখগুলো আর পূরণ করতে পারতো না রিপা বেগম। রিপা বেগম যখন চাকরি পেল তখন মেয়ের জন্য একটা বাড়িও কিনেছে ইতালিতে।

সেই মৃত্তিকা বড় হয়েছে, পড়াশুনা শেষ করে সদ্যই চাকরিতে যোগ দিয়েছে আর তার মাম চলে গেল।

বাবার প্রতি তার অগাদ ঘৃ°ণা৷ শৈশবকাল যে ধ্বং°স করেছে তার বাবা, তেমনি গড়ে দিয়েছে তার মাম।

মৃত্তিকা চোখ বন্ধ করে৷ মামের হাতের স্পর্শ অনুভব করার চেষ্টা করে। এভাবে আর কে তাকে আপন করবে?

“আপু আসবো?”

তানজিমের কন্ঠে চমকে উঠে সে। ঢোক গিলে বলল,
“তানজিম, আসো।”

তানজিম ভিতরে আসলো না। দরজাটা একটু খুলে বলল,
“আব্বু হাসপাতালে গেছে, তাই তোমাকে বলেছে ইমতিয়াজ ভাইয়াকে দুপুরের খাবার দিতে৷ আমিও এখন একটু হাসপাতালে যাচ্ছি।”

মৃত্তিকা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। তানজিম বেরিয়ে গেল। বোনদের চলে যাওয়ার পর ওর মা আজ চারদিন হলো হাসপাতালে ভর্তি। ওর জানা নেই ওর মা ঠিক কবে সুস্থ হবে বা আদৌ সুস্থ হবে কিনা।

মৃত্তিকা কিছুক্ষণ নিজঘরে থেকে তারপর বেরিয়ে রান্নাঘরে গেল। চাল ধুয়ে ভাত বসিয়ে দিলো। মামের কাছ থেকে ছোটখাটো রান্না ও ভালোই আয়ত্ত করেছে৷

ডিম আনতে ডাইনিং এ যাওয়ার সময় হঠাৎ ইমতিয়াজ এসে রান্নাঘরে ঢুকায় চমকে উঠে মৃত্তিকা। অপ্রীতিকর মুহূর্ত এড়াতে ইমতিয়াজ “সরি” বলে বেরিয়ে যায়।

মৃত্তিকা বাইরে এসে দেখে ইমতিয়াজ ডাইনিং এ বসে আছে। অফিসে যাচ্ছে না, কেমন যেন ছ°ন্ন°ছা°ড়া ভবঘুরে হয়ে গেছে।

ফ্রিজ থেকে ডিম নামাতে নামাতে মৃত্তিকা বলল,
“আজ কি বড়মণিকে দেখতে হাসপাতালে যাবেন?”
তাহসিনার মা মৃত্তিকার বড়খালা, তাইতো তাকে বড়মণি বলে।

ইমতিয়াজ ওর দিকে না তাকিয়েই বলে,
“হুম।”
“তবে আমাকেও নিয়ে যাবেন। বড়মণিকে দেখে আসবো।”
“হুম।”

হুম ছাড়া আর কোনো জবাব ইমতিয়াজ দিলো না। মৃত্তিকাও আর কিছু না বলে রান্নাঘরে চলে গেল। ভাতের পাতিলে উঠা বুদবুদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আবারো চোখজোড়া জলে ভরে উঠলো।

চলবে……..

#অনুভূতিরা_শব্দহীন
প্রথম পর্ব

লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী

নোট: উপন্যাসটি রোমান্টিক-থ্রিলার জনরার। প্রতি পর্বের কমেন্টে পরবর্তী পর্বের লিংক দেয়া থাকবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here