অনুভূতিরা_শব্দহীন লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী দ্বিতীয় পর্ব

0
421

#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী

দ্বিতীয় পর্ব

ক্লাস শেষে বের হলো আহনাফ৷ কলেজ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকালো। কুমিল্লার আকাশটা আজ বড্ড কালো হয়ে আছে, ঝিরঝির করে বৃষ্টিও পড়তে শুরু করেছে।

আহনাফের মনে পড়লো ভার্সিটি লাইফের কথা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কাটাপাহাড় রোডে বৃষ্টির দিনেই দেখা হয়েছিল তাহসিনার সাথে। বাদলার দিনে ভিজা শরীরে জোঁ°কের কবলে পড়েছিল সে।

আহনাফ কাছে গিয়ে বলেছিল,
“হেল্প লাগবে ম্যাডাম।”

তাহসিনা ওর দিকে সন্দেহের চোখে চেয়ে বলেছিল,
“নো।”

আহনাফ হেসে হাঁটু গেড়ে বসে জোঁ°ক তুলে দিয়ে বলেছিল,
“বৃষ্টির দিন এভাবে রাস্তায় কি করছেন? স্টুডেন্ট নাকি ঘুরতে আসছেন?”
“স্টুডেন্ট।”
“তবে হলে চলে যান, সা°পে ধরবে।”

আহনাফ চলে আসার সময় তাহসিনা পেছন থেকে চেঁ°চিয়ে বলে উঠেছিল,
“চবিতে কি শুধু সা°পই থাকে, মানুষ থাকে না? ভর্তির পর থেকে শুধু এই কথাই শুনছি।”

আহনাফ ফিরে হেসে দেয়।
“ফার্স্ট ইয়ার?”
“হুম।”

দুজনে সেদিন পরিচিত হয়েছিল। আহনাফ তখন সেকেন্ড ইয়ারে ছিল আর তাহসিনা ফার্স্ট ইয়ারে। পুরো ভার্সিটি লাইফ দাঁ°পিয়ে প্রেমে মজেছিল দুজনে।

“বেস্ট কাপল, মেইড ফর ইচ আদার” এমন অনেক কথা বলতো তাদের বন্ধুরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাহাড়গুলোতে প্রায়ই ঘুরতে যেতো, শাটলে করে শহরে আসতো। কত সকাল শাটলে ঘুরেছে, কত দুপুর ষোলশহরের তপ্ত রোদে ঘুরে বেড়িয়েছে।

শুধু প্রেম না, পড়াশুনা আর চাকরির প্রস্তুতিতেও পাল্লা চলতো ওদের৷ একে অন্যের পড়া ধরা, ব°কা দেওয়া সব চলতো। প্রচন্ড মেধাবী এই দুজনের বেবি নাকি বাংলার আইনস্টাইন বা নিউটন হবে, এই বলে ভবিষ্যতবানী করেছিল অনেকে। তবে মাত্র কয়েকটা মুহুর্তে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল।

হঠাৎ ব°জ্রপাতের তীব্র শব্দে বাস্তবে ফিরে আসলো আহনাফ৷ গতসপ্তাহের শনিবারটা যে তাকে বড্ড পো°ড়াচ্ছে।

বিয়ের আগের দিন রাতে অর্থাৎ শুক্রবার দিবাগত রাতে ফোনে তাহসিনার বলা একটা কথা তো আজও তার কানে বাজছে,
“দূরত্ব মিটে গেছে আহনাফ, আর মাত্র কয়েক ঘন্টা।”

দূরত্ব মিটেনি, ঘন্টার ব্যবধানে বেড়েছে এবং বেড়েই চলেছে। এতোটাই বেড়েছে যে এখন অসীম দূরত্বে আছে দুজনে।

বাতাসের ঝাপটায় বৃষ্টির পানি এসে আহনাফের মুখে পড়ছে, ওর শার্ট ভিজে গেছে, দাঁড়ি বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে গলা থেকে বুকে। সেদিকে ওর খেয়াল নেই, মন যে এখনো ভাবছে সেই চলে যাওয়া পাখিটিকে।

জীবনের প্রথম বিসিএস পরীক্ষায় শিক্ষা ক্যাডারে চান্স পেয়ে গিয়েছে আহনাফ। মানুষ বছরের পর বছর পরীক্ষা দেয় আর সে একবারেই উত্তীর্ণ হয়ে গেল। সেদিন তাহসিনা বোধহয় সবচেয়ে খুশি ছিল।

দুজনে রেস্টুরেন্টে গিয়েছিল সেলিব্রেশনের জন্য। তাহসিনার বলা প্রথম কথা ছিল,
“বিয়েতে আমি সাদা শাড়ি পড়বো আহনাফ, আই লাভ হোয়াইট।”

সূচনা ছাড়া এমন কথায় আহনাফ অবাক হয়েছিল।
“লাল বধূ চাই আমার।”
“বাট আমার সাদা রং প্রিয়।”

তাহসিনার কথা ফেলতে পারেনি। তার ইচ্ছা মেনে নেয়ায় মেয়েটার খুশির অন্ত ছিল না। বড় বড় চোখগুলো সেদিন খুশিতে থৈথৈ করে নেচে উঠেছিল।

সেই চোখগুলো আহনাফ আর দেখতে পারবে না, এই একটা কথাই মানতে পারছে না সে।

“স্যার, আপনি তো পুরো ভিজে গেছেন।”

এক ছাত্রের ডাকে ফিরে তাকিয়ে আহনাফ অপ্রস্তুত হয়ে বলল,
“ইটস ওকে, তুমি ক্লাসে যাও। এখানে কি করো?”
“সরি স্যার।”
“যাও।”

ধ°ম°ক খেয়ে ছেলেটা ক্লাসে চলে গেল। আহনাফ একটা বড় নিশ্বাস ফেলল, যেন কষ্টগুলোকে বিদায় করার একটা উপায় এটা। ওই অন্ধকার আকাশ আর এই জমিনের মাঝে অসহায় হয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে সে। না আকাশের বুকে মিশতে পারছে আর না জমিনে লুকাতে পারছে।
______________________________________

দুপুরের রান্নাটা আজ সারাহ্ একা হাতে করছে, কিন্তু সব কাজে বাধা দিচ্ছে সামিহা। সাহায্যের নামে কাজ বাড়ানোই যেন তার উদ্দেশ্য। রেগে গেলেও নিজেকে শান্ত রেখে সামিহাকে সহ্য করছে সারাহ্।

মাত্রই ভাতটুকু ফুটতে শুরু করেছে। চুলা কমিয়ে সারাহ্ বেগুন ভাজতে শুরু করেছে। সামিহা এসে বলল,
“আপু, বেগুন তো পু°ড়ে যাচ্ছে।”
“পু°ড়ুক।”
“কি পু°ড়ুক? (একটু থেমে) আজকে খিচুড়ি রান্না করলে ভালো হতো।”
“এতো পারবো না, আগে বলতে পারিস নি।”
“ব°কা দেও কেন?”

একটু পরে সামিহা ন্যাকাসুরে বলল,
“আপু, আজকে একটু বাইরে যাবো।”
“কোথায়?”
রান্না করতে করতেই সারাহ্ বলে।

সামিহা হেলেদুলে বলল,
“চলো, আজকে রাতের খাবার‍টা বাইরে কোথাও খাই।”

সারাহ্ একটু ভেবে বলল,
“আইডিয়া খারাপ না, কোথায় যাবি?”
“যেখানে নিয়ে যাবা, সেখানেই যাবো। আব্বুকে আমি রাজি করিয়ে ফেলেছি, আম্মুকে তুমি করো।”

সারাহ্ হাসলো, যদিও ওর হাসি সামিহা দেখেনি। তার আগেই হেলেদুলে নিজের রুমে চলে গেছে সে। মাথানেড়ে আবারো সে রান্নায় মন দিলো। কিছুক্ষণ যেতেই যে সামিহা এসে আবার হাজির হবে তা সে জানে।

সারাহ্-র ভাবনা সত্যি হলো, একটু পরেই সামিহা এসে হাজির হলো। হাতে একটা নিউজপেপার।

সারাহ্ ওর দিকে একবার তাকিয়ে বলল,
“কি রে? আবার কি দেখাতে এসেছিস?”

সামিহা বলল,
“দেশে কত কত দু°র্ঘ°ট°না ঘটে যাচ্ছে গো আপু।”
“কেন? আবার কি হলো?”

সামিহা নিউজপেপার এগিয়ে দিয়ে বলল,
“দেখো না, সড়ক দু°র্ঘ°ট°নায় কনেসহ তিনজনের মৃ°ত্যু।”

সারাহ্ নিউজপেপারের তারিখ দেখে বলল,
“দেখ, একসপ্তাহ আগের নিউজ।”
“বাদ দাও না তারিখ, দেখো এখানে কি লিখছে। এক পরিবারের দুই মেয়ে মা°রা গেছে। বাবা-মায়ের কি অবস্থা গো?”

সামিহার কথায় সারাহ্ হঠাৎ চুপ করে গেল। নিজের বাবা-মায়ের কথা মনে পড়লো৷ ওরা দুইবোন ছাড়া আর কেউ তো নেই তাদের। পরক্ষণেই সারাহ্ ভাবলো,
“আল্লাহ্ যা করবেন ভালোর জন্যই করবে, সবার জীবন তো আর একরকম হবে না।”

কিন্তু মানুষের মন তো খারাপটাই ভাবে বেশি। সারাহ্ আর বেশি কথা বলতে পারলো না।

একটা কথাই সামিহাকে বলল,
“মানুষের জীবনে কত কষ্ট দেখেছিস। আমরা ভালো আছি, সুখে আছি, এজন্য শুকরিয়া না করে উলটো আফসোস করি এটা নেই ওটা নেই করে।”

দুপুর দেড়টা,

নামাজ পড়া শেষ করেও জায়নামাজে বসে আছে মৃত্তিকা। মামের জন্য দোয়া করছে। তার মাম বলেছিল,
“নেককার সন্তানদের দোয়া মৃ°ত্যুর পরেও সুখের কারণ হয়।”

দোয়া করলে মামের সুখ হবে, একটুকু ভেবেই দোয়া করছে সে। ঠোঁট নড়ছে না, কিছু মুহূর্ত পর পর শুধু কেঁপে উঠছে আর চোখ দিয়ে নিরবিচ্ছিন্নভাবে অশ্রু ঝরছে। ঝরুক অশ্রু, তবুও রব তার দোয়া কবুল করুক।

চোখ মুছে জায়নামাজ গুছিয়ে রেখে ডাইনিং এ গেল। ইমতিয়াজকে খাবার দেয়ার কথা বলে গিয়েছিল তানজিম। ও প্রায় ভুলেই গিয়েছিল বাসায় ও ছাড়াও আরো কেউ আছে।

রান্নাঘর থেকে ডাইনিং টেবিলে খাবার নিয়ে এলো মৃত্তিকা। ইমতিয়াজ কি রুমে আছে নাকি বাইরে তা ও জানে না। কিভাবে ডাকবে?

ইমতিয়াজের রুমের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে রইলো মৃত্তিকা।

এদিকে ইমতিয়াজ ফ্লোরে বসে আছে, দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে তাকিয়ে আছে উপরে ঘুরতে থাকা ফ্যানটার দিকে। ওর ইচ্ছা করছে চিৎকার করতে অথচ ও নিরবে বসে আছে। যোহরের নামাজটাও এখনো পড়া হয়নি তার। কয়টা বাজে তাও জানে না।

হঠাৎ দরজায় নক পড়ায় চমকে উঠলো।
“কে?”

ওপাশ থেকে মৃত্তিকা বলল,
“খেতে আসুন।”

ইমতিয়াজ গলা ঝে°ড়ে বলল,
“খাবো না।”
“হাসপাতালে কখন যাবেন?”

ইমতিয়াজ ফোন হাতে নিয়ে সময় দেখে বলল,
“তিনটায় বের হবো।”

আর কোনো সারাশব্দ পাওয়া গেল না। মৃত্তিকা নিজের রুমে চলে গেছে। ইমতিয়াজ উঠে ওযু করে এসে নামাজ পড়ে নিলো। তাহমিনা থাকলে জামায়াত ছাড়া নামাজ পড়তেই পারতো না ইমতিয়াজ, ঠিক সময়ে ঠে°লে°ঠু°লে মসজিদে পাঠাতো ওকে। এমনকি অফিসে থাকলেও বারবার ফোন করে নামাজের কথা মনে করিয়ে দিতো। অফিসেও যাচ্ছে না সে, চাকরিটা আছে কিনা তাও জানে না। এসব জানার ইচ্ছা ওর নেই, কার জন্য আর চাকরি করবে আর টাকা আয় করবে? নেই তো ওর কেউ।

নামাজ শেষে রুম থেকে বের হয়ে দেখে মৃত্তিকা খাচ্ছে। ইমতিয়াজকে আসতে দেখে মৃত্তিকা একটা প্লেট এগিয়ে রেখে নিজের প্লেট নিয়ে রুমে চলে গেল। খাওয়ার ন্যূনতম ইচ্ছা নেই ইমতিয়াজের। তাই আবারো রুমে চলে গেল। আজকাল একবেলা খাবার খেয়ে আরেকবেলা উপোস থাকা একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে তার।

তিনটার দিকে বেরিয়ে গেল দুজনে। কাকরাইল থেকে স্কয়ার হাসপাতাল খুব একটা দূরে না হলেও পাবলিক বাহনে যাওয়া একটু কষ্টেরই বটে।

বাসে উঠে মৃত্তিকা বসার জায়গা পেলেও ইমতিয়াজ দাঁড়িয়ে রইলো। আরেকজন পুরুষ মৃত্তিকার কাছে এসে দাঁড়ালে ইমতিয়াজ সামনে একহাত দিয়ে রাখলো। হুট করে সামনে একটা হাত আসায় মৃত্তিকা চমকে উঠে তাকালো ইমতিয়াজের মুখের দিকে। মৃত্তিকার দিকে তাকায়নি সে, সামনের দিকে তাকিয়ে আছে অপলক।

মৃত্তিকা জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালো। বাবা তার মামকে প্রতিদিন কিভাবে মা°রধর করতো তা মৃত্তিকা দেখেছে, হয়তো ছোট ছিল কিন্তু প্রত্যেকটা ঝ°গড়া ওর সামনে হতো। রিপা বেগম যতই মেয়েকে দূরে রাখুক, ওর বাবা এসবের পরোয়া কখনো করে নি। এই নি°কৃ°ষ্ট মানুষটা নাকি আবার ডাক্তার ছিল, ভাবতেই অবাক হয় ও।

তার মামের শরীরের ক্ষ°ত°স্থান আর পো°ড়া জায়গাগুলো সে দেখেছে। সি°গা°রেট জ্বালিয়ে গলার কাছে, হাতে, পায়ে চে°পে ধরতো আর রিপা বেগম কিভাবে চিৎকার করতো তা ও জানে। ওই আ°র্ত°নাদ° ভুলতে পারবে না এই মৃত্তিকা। আবারো কান্না পাচ্ছে ওর, গাল বেয়ে অশ্রুধারা গড়িয়ে পড়তেই মুছে ফেললো।

স্কয়ার হাসপাতাল থেকে একটু দূরে নেমে গেল ওরা। ৫-৬ মিনিটের রাস্তা হেঁটে যেতে হবে। ইমতিয়াজ একটু আগে আগে হাঁটছে আর মৃত্তিকা পিছনে।
_____________________________________

সন্ধ্যা ৭ টায় বাবা-মায়ের সাথে সারাহ্, সামিহা বেরিয়েছে। সামিহার ইচ্ছা অনুযায়ীই রাতের খাবারটা বাইরে কোনো রেস্টুরেন্টে খাবে সবাই।

যমুনা ফিউচার পার্কে গেল সবাই। টুকটাক শপিং এর এটা ওটা দেখছে সামিহা আর কিছুক্ষণ পর পর সারাহ্কে বলছে,
“আপু, এটা সুন্দর না?”

সারাহ্-র উত্তর “সুন্দর” হলেই বলে,
“কিনে দাও।”

সারাহ্ ধমকের মাঝেও কয়েকটা কসমেটিকস কিনেছে সে। জাহাঙ্গীর সাহেব কিংবা নার্গিস পারভিন তেমন ব°কা দেননা মেয়েদের। দুজনের খুনশুটি ভালোই উপভোগ করছেন উনারা।

বড় বড় আয়নাগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েকটা মিরর সেলফিও তুলেছে ওরা৷ সামিহা যতটা নাচানাচি করে খেতে এসেছিল, তার একভাগও খেতে পারেনি। মেয়েটার চঞ্চলতা দিন দিন বাড়ছে। বড় হয়েছে সে, এইটুকু বোধ এখনো তার পুরোপুরি হয়নি।
_____________________________________

“মা আমার, আর ইতালিতে ফিরে যেও না। আমাদের সাথেই থাকো।”

লুৎফর সাহেবের অনুরোধে মৃত্তিকা মাথানিচু করে ফেলল। একটু চুপ থেকে বলল,
“মামের স্মৃ°তিটুকু ইতালিতেই আছে। এখানে আমি ভালো থাকতে পারবো না।”

হাসপাতালে মমতাজ বেগমের কেবিনে বসে কথা বলছে উনারা। তানজিম পাশেই বসে আছে, ইমতিয়াজ বাইরে আছে। মমতাজ বেগমকে ঘু°মের ওষুধ দেয়া হয়েছে, মেয়েদের চলে যাওয়া সহ্য করার ক্ষমতা উনার এখনো হয়নি।

“আপু, ওখানে গিয়েও আপু ভালো থাকবে না।”

মৃত্তিকা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বাইরে চলে এলো। একটু দূরে ইমতিয়াজ দাঁড়িয়ে আছে, ফোনের স্ক্রিনে তার চোখদুটো নি°ব°দ্ধ।

“আরে মিউকো যে, মায়ের মৃত্তিকা।”

ব্য°ঙ্গসুরে বলা কারো কথায় ফিরে তাকালো মৃত্তিকা। কপাল কুঁচকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো সামনের লোকটির দিকে। চেনাচেনা ঠে°কলেও হুট করে চিনলো না।

অবশেষে চিনতে পারলো, এ যে ওরই বাবা, শরীফ আহমেদ। কপালের ভাঁজগুলো গভীর হলো।

“আমাকে কি করে চিনলেন?”

মৃত্তিকার কথায় শরীফ হাসলো। মাথা ঝাঁ°কিয়ে কুঁকড়ানো চুলগুলো নেড়েচেড়ে বলল,
“তোমার মা আমার থেকে তোমাকে দূরে রাখতে চাইলেও আমি কিন্তু দূরে থাকিনি, তাই চিনি। (একটু থেমে) শুনলাম সে ম°রে°ছে।”

মৃত্তিকা রেগে গিয়ে বলল,
“ভদ্র ভাষায় কথা বলুন।”
“হুশ।”
শরীফ মুখে আঙ্গুল দিয়ে বলল।

ঝা°মেলা কিছু হয়েছে ভেবে ইমতিয়াজ এগিয়ে এলো। শরীফ ইমতিয়াজকে দেখে বলল,
“এখানে দেখার কিছু নেই, যেতে পারেন।”

ইমতিয়াজ মৃত্তিকাকে বলল,
“এনি প্রবলেম?”

মৃত্তিকা তার বাবার দিকে শুধু ইশারা করলো। শরীফ আবারো বলল,
“কে হয় এই মেয়ে আপনার? এতো ইন্টারেস্ট কেন?”
“বোন হয়, কোনো সমস্যা? বি°র°ক্ত করছেন কেন?”

ইমতিয়াজ স্বাভাবিক কথায় শরীফ হেসে উঠে বলল,
“বোন? (একটু হেসে মৃত্তিকার দিকে তাকিয়ে) তোর মায়ের আরো কোনো চ°ক্ক°র ছিল নাকি?”

মৃত্তিকা কিছু বলার আগেই শরীফের গালে একটা থা°প্প°ড় বসায় ইমতিয়াজ। মৃ°ত একজন মানুষের প্রতি এমন ভাষা ওর সহ্য হয়নি।

শরীফ সরে গিয়ে বলল,
“বড়দের সাথে এমন বিহেভ কেন? মা-বাবা কিছু শেখায়নি?”
“সে কৈফিয়ত আপনাকে না দিলেও হবে।”

ইমতিয়াজ আর কিছুই বলে না, চলে যায় এখান থেকে। জন্মের পরে মাকে আর ১৭ বছর বয়সে বাবাকে হা°রিয়ে একা বড় হওয়া ছেলেটা এই ৩২ বছর বয়সে এসে বাবা-মাকে নিয়ে অচেনা কাউকে কিছু বলতে চায় না।

মৃত্তিকা আবারো কেবিনের ভিতরে চলে গেল। শরীফ ওকে ফলো করছে, শুধু এখন না আরো আগে থেকে করছে। এটা মৃত্তিকা হা°ড়ে হা°ড়ে টের পাচ্ছে। ওর মামের মৃ°ত্যুর পিছনে আবার এর হাত নেই তো? হঠাৎ অজানা একটা ভ°য়ে ঘা°ব°ড়ে যায় মৃত্তিকা।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here