মেঘের_শহর #পর্ব_১০ Saji Afroz

0
128

#মেঘের_শহর
#পর্ব_১০

Saji Afroz

.
মেঘের ফ্যাকাসে মুখটা দেখে হো হো শব্দে হেসে উঠল হুরায়রা।
তাকে এভাবে হাসতে মেঘ এই প্রথমবার দেখছে। কি সুন্দর ভাবে হাসতে পারে মেয়েটি! আজ না দেখলে জানতোই না মেঘ।
হুরায়রা হাসি থামিয়ে বলল-
ভয় পাওয়ার কিছু নেই। মেয়েটি আমিই ছিলাম।
.
মেঘ মুগ্ধ দৃষ্টিতে হুরায়রার দিকে তাকিয়ে বলল-
আরেকবার শব্দ করে হাসবেন? আপনার হাসি টা অদ্ভুত সুন্দর!
.
হুরায়রা হাসলো না। গম্ভীরমুখ নিয়ে হাঁটতে শুরু করলে মেঘও হাঁটতে লাগলো তার পাশেপাশে।
এই হাসি এই মুখ ভার! কেমন যেন মেয়েটা। তাকে বুঝে উঠতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মেঘের।
দুজনেই নীরব। পাশাপাশি হঁাটছে কিন্তু কোনো কথা বলছে না।
প্রিয় মানুষ টা এত কাছে থাকলে কথা না বলে থাকা যায়? মেঘের মনে হচ্ছে তার মুখটা তো কথা বলার জন্য লাফালাফি করছে। সুপার গ্লু দিয়ে লাগিয়ে রাখলেও এখন কাজ হবে না!
-আমাকে বন্ধু বলে পরিচয় করিয়ে দেন মানুষের কাছে অথচ পাশে থাকলে কাজের ছেলের পাত্তাও দেন না। কেনো বলুন তো?
-কাল আমিই কিন্তু আপনাকে চা বানিয়ে খাইয়ে ছিলাম।
-সেটাও মন থেকে নয়। খালা কে চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য খুশি হয়ে…
মেঘ থেমে গেল। চা এর কথা উঠতেই তার গায়েব হওয়া ও দোকান খোলা থাকার ব্যাপার টি মনে পড়ে গেল তার। তৎক্ষনাৎ মেঘ বলল-
আচ্ছা কাল ওভাবে হঠাৎ উধাও কিভাবে হলেন? আর সব দোকান বন্ধ ছিল৷ আমার জানামতে করিম চাচার দোকানও বন্ধ ছিল। তবে আপনি কিভাবে ভেতরে প্রবেশ করলেন?
.
প্রশ্নগুলো শুনে থেমে গেল হুরায়রা। সে যেন এই প্রশ্ন মেঘের কাছে আশা করেনি। এখন হুট করে মেঘ এমন একটা প্রশ্ন করে বসায় কি উত্তর দিবে ভেবে পাচ্ছে না।
ঠিক এক মিনিট দাঁড়ানোর পর আবারো হাঁটতে লাগলো সে। মেঘ ও হাঁটা শুরু করে বলল-
বললেন না তো?
-সত্য বলব না কি মিথ্যে?
-অবশ্যই সত্য।
-তবে দুঃখিত। সত্যি টা বলা যাবে না।
.
এমন একটা উত্তর পাবে মেঘ ভাবেনি! সে জানে তাকে জোর করেও লাভ নেই। কারণ যতটুকু সে হুরায়রা কে চিনে, মেয়েটি বেশ গম্ভীর স্বভাবের। তাই মেঘ আর জোর করলো না। কোনো না কোনোভাবে দোকান সে খুলেছে। হতেই পারে করিম চাচার দোকানের চাবি তার কাছেও আছে। যেহেতু তাদের মাঝে একটা ভালো সম্পর্ক আছে। অথবা মেঘ খেয়াল করেনি, হয়তো দোকানে তালাই দেওয়া ছিল না। বাকি রইলো উধাও এর বিষয়। মেঘ হয়তো বা অন্যকিছুতে মগ্ন থাকায় সে কখন সেখান থেকে চলে গিয়েছে টের পায়নি।
.
নিজের মন কে শান্তনা দেয়ার মতো অনেক কিছু ভেবে নিলো মেঘ। তবে তার মাথায় আরেকটা বিষয়ও ঘুরপাক খাচ্ছে। সত্যি টা বলতে অসুবিধে টা কোথায়? হুরায়রা কি ইচ্ছে করেই মেঘ কে এই বিষয়ে চিন্তায় ফেলতে চাচ্ছে? হতেও পারে এটা করে হুরায়রা মজা পাচ্ছে।
আপাতত এই প্রসঙ্গ টা বাদ দেওয়া দরকার। তাই সে হুরায়রা কোথায় থাকে জানতে চাইলো। হুরায়রা কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল-
এবার নিশ্চয় বাসায় গিয়ে চা খেতে চাইবেন? আমার মা বাবা এসব পছন্দ করেন না।
-তাই বুঝি আপনার কোনো বন্ধু নেই?
-হু।
-মেয়ে বন্ধু নেই কেনো? মেয়ে কে নিয়েও আপনার পরিবারের কি সমস্যা?
-আপনি কিভাবে জানলেন আমার কোনো বন্ধু বা বান্ধবী নেই।
-শুনেছি।
-এত আগ্রহ কেনো আমার বিষয়ে?
-আপনি কি আমার কোনো প্রশ্নের জবাব দিবেন না ঠিক করেছেন?
.
সেই কথার জবাব না দিয়ে রিকশাওয়ালা কে ডাকলো হুরায়রা। রিকশাওয়ালা জানতে চাইলো সে কোথায় যাবে। শুধু সামনে বলেই রিকশায় উঠে বসলো সে।
মেঘ বুঝতে পারলো হুরায়রা ইচ্ছে করেই রিকশায় উঠেছে। যাতে করে মেঘ তার সাথে আর না আসে।
কেনো হুরায়রা নিজেকে এত আড়াল করছে!
.
.
.
কাল সাইয়ারার বান্ধবীর জন্মদিন। বান্ধবীর বাসায় দাওয়াতও আছে জন্মদিন উপলক্ষে। একটা উপহার তো দিতেই হয় বান্ধবী কে। তাই সে উপহার নিতে আনন্দ নগরের সবচেয়ে বড় উপহারসামগ্রীর দোকানে আসলো।
এদিকে মিন্নীও সেই দোকানে উপস্থিত। কাল তার প্রিয় একজনের জন্মদিন। তাই সে ঘুরেঘুরে উপহার পছন্দ করছে। উপহার পছন্দ করতে গিয়ে একটি হাত ঘড়ি তার বেশ পছন্দ হয়। সেটি হাতে নিয়ে সে দেখতে থাকলো। কাছ থেকে ঘড়িটি আরো আকর্ষনীয়!
কিন্তু ঘড়ির দাম দেখে সে হতাশ হলো। পাঁচ হাজার টাকা! তার কাছে এত টাকা নেই। তাই মন খারাপ করে সে ঘড়িটি আগের জায়গায় রেখে দিবে ঠিক করে। রাখার সময় ভুলবশত তার হাত থেকে ঘড়িটি পড়ে যায়। সাথে সাথে দোকানে দায়িত্বে থাকা কয়েকজন কর্মচারী তার কাছে এগিয়ে আসে। বেশ ঘাবড়ে যায় মিন্নী।
তারা দেখলো ঘড়িটি ভেঙে গেছে। যার কারণে মিন্নীর কাছে তারা ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করে।
মিন্নীর কাছে দুই হাজার টাকা আছে। তার উপহারের জন্য বাজেট ছিল এক হাজারের মতো। বাজেট কত ছিল সেটা বড় কথা নয়। সে পাঁচ হাজার টাকার দামের ঘড়ি ভেঙে ফেলেছে এখন এটাই বড় কথা!
মিন্নী কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে জানায়, তার কাছে দুই হাজার টাকা আছে এখন।
.
কর্মচারীদের মাঝে একজন তার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করে।
টাকা না থাকলে এই দোকানে কেনো এসেছে, কেনোই বা এত দামি ঘড়ি হাতে নিয়ে দেখেছে…
এসব কথা শুনে মিন্নীর চোখজোড়া পানিতে টলমল করে উঠল। মনে হচ্ছে এখুনি কেঁদে ফেলবে সে। অনেক কষ্টে কান্না চেপে রেখেছে মিন্নী।
আশেপাশে মানুষও জড়ো হয়ে গেছে। এখানে যেন কোনো সিনেমা চলছে মানুষ দেখে বেশ মজা পাচ্ছে, বিষয়টা এইরকম!
কয়েকজন তো হাসাহাসিও শুরু করে দিয়েছে।
এমন সময় একটি মেয়েলী কণ্ঠের স্বর ভেসে এল তাদের কানে-
কারো বিপদে সাহায্য করতে না পারো, উপহাস অন্তত করো না।
.
চোখ তুলে সাইয়ারা কে দেখে কেঁদেই ফেললো মিন্নী। সাইয়ারা কে তার মোটেও পছন্দ নয়। কিন্তু অচেনা এই মানুষের ভিড়ে তাকে পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ পেল সে! এখন তাকেই সবচেয়ে আপন মনে হচ্ছে মিন্নীর।
মিন্নী দৌড়ে সাইয়ারার পাশে এসে সবটা খুলে বলল।
সাইয়ারা তার চোখ মুছে দিয়ে তাকে শান্ত হতে বলল। এরপর নিজের ব্যাগ থেকে পাঁচ হাজার টাকা বের করে সেই কর্মচারীর দিকে এগিয়ে দিলো, যে মিন্নী কে কথা শুনিয়েছে। সাইয়ারা বলল-
সবার কাছে সব সময় টাকা থাকবে বলে কথা নেই। আর এমন নয় যে আপনাদের শপে পাঁচ হাজার টাকার নিচে কোনো জিনিস পাওয়া যায় না। আপনি ওসব কথা না বলে সমাধান কি সেটা বলতে পারতেন! মিন্নী কে বাসায় খবর দিতে বলতেন। তা না করে উল্টাপাল্টা কথা বলেছেন। মানুষ জড়ো করে তামাশা করেছেন। তাই মিন্নী কে আপনি সরি বলবেন।
.
সে সরি বলতে না চাইলে সাইয়ারা তার মালিক কে এসব জানাবে বলে ভয় দেখালো। সরি বলতে বাধ্য হয় সে। এরপর মিন্নী কে নিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে আসলো সাইয়ারা।
একটা রিকশা ঠিক করে দুজনে উঠলো তাতে।
আজ সাইয়ারার প্রতি জমে থাকা সব রাগ উধাও হয়ে গেল মিন্নীর। মেয়েটা কে চিনতে সে ভুল করেছে! একটু দুষ্টু হলেও ভালো একটা মেয়ে সে। নাহলে আজ মিন্নী কে সে সাহায্য করতো না। সে পারতো মিন্নী কে ওখানে রেখেই চলে যেতে।
মিন্নী হালকা কেশে ধন্যবাদ জানালে সাইয়ারা বলল-
বফ এর জন্য বুঝি গিফট কিনছিলে?
.
সাইয়ারার প্রশ্ন শুনে মিন্নী মাথা নিচু করে রাখলো। সাইয়ারা তাকে অভয় দিয়ে বলল-
বাসায় কিছু জানাব না। চিন্তার কিছু নেই।
-তোমার কাছে এত টাকা কি সবসময় থাকে?
-নাহ। খালা একজনের কাছে পেত। মানে ধার দিয়েছিল। তার কাছ থেকেই ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে নিয়ে এসেছি। ভাগ্যিস পাঁচ হাজারই ছিল!
-এখন কি হবে?
-সত্যিটা বললে তোমার বাসায় কথা পাচার হতে পারে। আমি সামলে নিব।
-আমি রিলেশনে আছি জানলে মা আমাকে মেরেই ফেলবে।
-এমন নয় আন্টি। হয়তো একটু রাগ করবেন।
-আমার থেকে বেশি তুমি মা কে চেনো না।
-এই বিষয়ে এখন তর্কে যেতে চাচ্ছি না। তুমি টাকা নিয়ে ভেবো না। রিলাক্স থাকো।
.
.
.
আজ জিকো কে জোর করে নিজের বাসায় নিয়ে এল মোখলেস। আসার পথে তাকে অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়েছিল।
এই যেমন-
মা বাবা কে দেখেই সালাম করবেন, আমার ছোট্ট বোন টাকে আদর দিবেন, ওর একটা বোনের বড্ড শখ…
.
এসব শুনে জিকোর বুঝতে বাকি রইলো না মোখলেস কেনো এসব করছে। সে জানে মোখলেসের বাসায় তার বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। জিকোর সাথেও তো প্রথমদিকে একটা মেয়ে দেখতে গিয়েছিল। কিন্তু মোখলেসের ভালো লাগেনি মেয়েটিকে। তখন মোখলেসের মা রাগে বলেছিলেন, জিকো একটা অপয়া। সেই থেকে মোখলেসও আর জিকো কে সাথে যেতে বলেনি। মোখলেসের মা তাকে একেবারেই পছন্দ করেন না। এর অবশ্য যথেষ্ট কারণও আছে। মোখলেস নানাভাবে চেষ্টা করেছে জিকো কে মায়ের চোখে ভালো করার। কিন্তু লাভ হয়নি। বদলাইনি জিকোর স্বভাব। তাই ধীরেধীরে তাদের সম্পর্ক টা অনেকটাই শেষ হয়ে যাচ্ছিল।
সেদিন অনেকদিন পরেই মোখলেস তার বাসায় এসেছিল। এসেই তাকে মেয়ে রূপে দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়। কেনো এসেছে এখনো জিজ্ঞাসা করা হয়ে উঠেনি।
মোখলেসের কথা মতো তার মা ও বাবা কে সালাম করে জিকো, ছোট বোন টাকেও অনেক আদর করে। অবশ্য আগে থেকেই তাকে বেশ পছন্দ জিকোর।
মোখলেসের মা জিকো কে দেখে খুশি হন। তিনি বুঝতে পারেন তার ছেলে কেনো এই মেয়েটি কে এখানে নিয়ে এসেছে। এর আগে মোখলেসের কোনো মেয়ে বান্ধবী আছে বলে তিনি শুনেন নি। তার মানে এই মেয়েটি কে সে পছন্দ করে। এভাবে হুট করে একটা মেয়ে বাসায় নিয়ে আসাতে তিনি রাগ করলেন না। অবশ্য করবে না এটা জানা ছিল মোখলেসের। নিজের পরিবার কে তার চেয়ে ভালো কে চিনবে!
বোনের রুমে জিকো কে বসিয়ে রান্নাঘরে আসলো মোখলেস৷ তার মা জিকোর জন্য নাস্তা বানাতে ব্যস্ত।
মোখলেস মায়ের কাছে এসে জানতে চাইলো, তিনি কি রাগ করেছেন কি না।
মোখলেসের মা মরজিয়া খাতুন এক গাল হেসে জানান, তিনি রাগ করেন নি৷ বরং খুশি হয়েছেন। এবং তিনি বুঝতে পেরেছেন মেয়েটিকে সে পছন্দ করে।
মায়ের খুশি দেখে জেসিকা যে জিকোর বোন তা আর জানালো না মোখলেস। সে যাওয়ার পরেই নাহয় জানাবে।
মরজিয়া খাতুন নিজের হাতে জিকো কে মিষ্টি খাইয়ে দিলেন।
এই মহিলা কে অনেক শক্ত মনের ভেবেছিল জিকো। সে ছেলে থাকতে ভালো করে দু’টো কথাও তিনি বলেন নি। আজ নিজের হাতে তাকে খাইয়ে দিচ্ছেন। কিছু মানুষ এমনি হয়। ভালোর জন্য ভালো, খারাপের জন্য খারাপ!
.
.
দুপুরের খাবারের পর জিকো কে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসলো মোখলেস। বাসায় আসতেই তার মা হাসিমুখে জানালো, মেয়েটিকে তার বেশ পছন্দ হয়েছে, তার বাড়ির ঠিকানা দিতে।
মোখলেস বলল-
মেয়েটিকে আমি পছন্দ করি। কিন্তু ও আমাকে পছন্দ করে কি না জানিনা। আমার আগে ওর মতামত প্রয়োজন। তারপরেই এগুতে চাই আমি। আজ ওকে এখানে এইজন্যই আনলাম, যাতে ও আমার পরিবার সম্পর্কে জানতে পারে আর তোমরা ওর সম্পর্কে। তারপর দুই পক্ষেরই সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হবে।
..
মোখলেসের সিদ্ধান্ত কে সম্মান জানালো তার পরিবার। তাকে বুঝেশুনে এই বিষয়ে আগাতে বলল।
এদিকে বেশ চিন্তায় পড়ে গেল জিকো। মোখলেস তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে এতে কোনো সন্দেহ নেই! আজ তাকে বাসায় অবধি নিয়ে গেল। তার পরিবার নিশ্চয় জানেনা তার নকল পরিচয়ও! জিকোর বোন জানলে এত আদর দেখানোর কথা নয়।
তবে এটা তার ভাবার বিষয় নয়। মোখলেস কে কিভাবে নিজের কাছ থেকে দূরে রাখবে এটাই ভাবতে হবে। বেচারা এতদিন পর একটা মেয়ে পছন্দ করেছে আর সে কি না তারই বন্ধু! সত্যি টা জানলে কি যে হবে…
.
.
.
কোনোকিছুতেই মন বসছে না মেঘের। সারাক্ষণ মাথায় হুরায়রার নাম ঘুরপাক খাচ্ছে। মেয়েটি দিনদিন তার কাছে রহস্যময়ী হয়ে উঠছে। সে কি আসলেই গম্ভীর না কি গম্ভীর থাকার ভান করে?
কাল যে হুরায়রা কে সে দেখেছিল, মনেই হয়নি মেয়েটি আজকের এই হুরায়রা।
কেনো প্রতিটা দিন কালকের মতো কাটছে না? কেনো আবারো বৃষ্টি হচ্ছে না! বৃষ্টি হলেই মেঘ ছুটে যাবে নদীর পাড়ে৷ যেখানে পাবে হুরায়রার দেখা। আবারো দুজনে একসাথে ভিজবে আর ধোঁয়া উড়ানো গরম চা খাবে!
-চা খাবেন?
.
ছাদে রেলিং এর পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের চাঁদ দেখে হুরায়রার কথা ভাবছিল মেঘ।
সাইয়ারার কণ্ঠ শুনে ঘোর কাটলো তার। সাইয়ারার দিকে না তাকিয়েই খাবে না জানালো।
সাইয়ারার হাতে চায়ের মগ ছিল। সে মগে চুমুক দিয়ে বলল-
আমি খাচ্ছিলাম তো তাই জিজ্ঞাসা করেছি।
-তুমি খেলেই যে আমাকে খেতে হবে কথা নেই।
.
মেঘ দ্রুতবেগে নিচে নেমে গেল। একটাবার সাইয়ারার দিকে তাকালোও না।
মেঘের এরূপ ব্যবহারে সাইয়ারার চোখে পানি চলে এল।
এসব বিষয়ে কখন থেকে কষ্ট পেতে শুরু করেছে সে! সে তো কষ্ট পায় না সহজে। না কি প্রিয় মানুষের দেওয়া একটু কষ্টও অনেক বেশি মনেহয়?
চা খাওয়ার ইচ্ছে নেই আর সাইয়ারার। মগটা একপাশে রেখে সে দোলনায় বসলো। দুলতে দুলতে ভাবতে লাগলো মেঘের হঠাৎ কি হয়েছে?
তবে কি অন্তরা আহম্মেদ তাকে কিছু বলেছে? তিনি কি মেঘ কেও একই প্রশ্ন করেছে যা সাইয়ারা কে করেছিল? যার কারণে মেঘ তার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকছে?
হতেও পারে। তাহলে কি অন্তরা আহম্মেদের সাইয়ারা কে পছন্দ নয়! সত্যি টা জানতেই তিনি এসব প্রশ্ন করেছেন?
সাইয়ারা সেদিন কোনো জবাব দেয়নি। যার কারণে হয়তো বা তিনি এসব সত্য ভেবে মেঘের সাথে রাগারাগি করেছেন। বিষয় টা তার পরিষ্কার করার প্রয়োজন। এটা ভেবে দাঁড়িয়ে পড়লো সাইয়ারা। অন্তরা আহম্মেদের বাসায় যেতে চেয়েও থেমে গেল সে। হ্যাঁ তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু সে যে তার মন দিয়ে বসে আছে মেঘ কে। এটা তো মিথ্যে নয়।
মেঘ কি সত্যিই তাকে পছন্দ করে না? না কি মায়ের জন্য দুরত্ব বজায় রাখছে?
উফফ…
নানাধরনের প্রশ্নই গিজগিজ করছে সাইয়ারার মাথাটা। এসবের উত্তর কখন যে মিলবে!
উত্তর না মিলুক। এখন সবটা পরিষ্কার করতে হবে। এভাবে মেঘের কাছ থেকে দূরে থাকতে সে পারছে না। মনে হচ্ছে দম আঁটকে মারাই যাবে। মেঘ কে সে ভালোবেসে ফেলেছে কি না!
ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে একটুখানি দূরে থাকাও যে কষ্টকর।
.
চলবে
.
বি:দ্র: আজ দশম পর্ব শেষ হলো গল্পের। এতটুকু তে কার কেমন লেগেছে জানাতে ভুলবেন না৷ 💖

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here