হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(১৬) #Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

0
541

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(১৬)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(৩৮)
কুশল তরুকে কোলে নিয়ে ছাদের মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে দু’জনেই একে-অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। সেইসময় হঠাৎ গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হলে তরুর ধ্যন ভেঙে যায়। তরু দ্রুততার স্বরে বললো…

—“আরে বৃষ্টি শুরু হলো তো, আমাকে নিচে নিয়ে চলুন।”

তরুর কথাগুলো যেনো কুশলের কান পর্যন্ত পৌঁছালো না। কুশল আকাশের দিকে তাকিয়ে তরুকে কোলে নিয়েই গোলভাবে ঘুরতে শুরু করে। হঠাৎ খুব জোড়ে বা*জ পড়ার শব্দ হলে তরু ভরে দু’হাতে কুশলের গলা জড়িয়ে ধরে ওর বুকের মাঝে মুখ লুকায়। নিজের বুকের উপর তরুকে জায়গা দ*খ*ল করে নেওয়ার অনুভূতি উপলব্ধি করতে পারার সাথে সাথেই কুশল স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। পরক্ষণেই মুষল ধারে বৃষ্টি শুরু হলে কুশল রাতের কালো চাদরে মোড়ানো আকাশের দিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে বললো…….

—“ও আকাশ, ও বৃষ্টি আজকের এই শ্রেষ্ঠ সুন্দর মুহূর্ত উপহার দেওয়ার জন্য আমি তোমাদের কাছে কৃতজ্ঞ রইলাম।”

কুশলের মুখে এমন কথা শুনে তরু কুশলের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে কুশলের দিকে তাকায়। কুশল আকাশের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তরুর মুখশ্রীর উপর কিছুটা ঝুঁকে ওর দিকে স্থির করে। যার ফলে কুশলের মুখশ্রী বেয়ে বৃষ্টির পানি গুলো তরুর মুখশ্রীতে পড়তে শুরু করে।

এভাবেই কিছুসময় পেরিয়ে গেলে বৃষ্টি পড়া থেমে যায়। তরু হঠাৎ হাঁচি ফেলতেই কুশলের ধ্যন ভা*ঙে। ওদের দু’জনেরই বৃষ্টিতে ভিজে একাকার অবস্থা। কুশল আর একমুহূর্তের জন্য সেখানে না দাঁড়িয়ে ছাদের দরজা দিয়ে বেড়িয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে চলে আসে। নিচে এসে দাঁড়াতেই কুশল আর তরু একসাথে হাঁচি ফেলে। তরু রাগী দৃষ্টি নিয়ে কুশলের দিকে তাকিয়ে আছে। কুশল তরুর দিকে তাকানোর সাহস না করে রুমের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। রুমে আসার এই রাস্তাটুকু অতিক্রম করতে করতে কুশল আর তরু দু’জনেই পরপর বেশ কয়েকবার হাঁচি ফেলেছে। অতঃপর কুশল তরুকে নিয়ে রুমে এসে সোজা ওয়াশরুমে প্রবেশ করে চৌ*বা*চ্চার সাইড দিয়ে টাইলসের তৈরি বসার জায়গাটির উপরে তরুকে বসিয়ে দিয়ে বললো….

—“আমি টাওয়াল আর তোমার কাপড় দিয়ে যাচ্ছি চেইঞ্জ করে নাও।”

এই বলে কুশল ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আলমারি খুলে টাওয়াল আর এক সেট জামা-পাজামা-ওড়না বের করে আবারও ওয়াশরুমে গিয়ে সেগুলো তরুকে দিয়ে বললো….

—“চেইঞ্জ করা হলে আমাকে ডাক দিও। আমি ওয়াশরুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি।”

তরু কোনো প্রতিত্তুর করলো না। কুশল ওয়াশরুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়াতেই নিজের ভেজা অবস্থা দেখে বললো….

—“আমার চেইঞ্জ করে নেওয়া উচিত নয়তো এই ভেজাঅবস্থাতে ওকে কোলে নিলে ও আবারও কিছুটা ভিজে যাবে।”

তরু যেহেতু ওয়াশরুমের ভিতরে আছে তাই কুশল আর উপায় না পেয়ে রুমের দরজা ভিতর থেকে লক করে দিয়ে আলমারী থেকে টাওয়াল, কফি রংয়ের টি-শার্ট আর ট্রাউজার বের করে চেয়ারের উপর রাখে। টাওয়ালটা কমোর থেকে হাটু অব্দি জড়িয়ে নিয়ে পরণের ভিজা টি-শার্ট আর ট্রাউজার খুলে ফেলে। তরুর কুশলের উপর কিছুটা রাগ থাকায় সে চেইঞ্জ করার পর আর কুশলকে না ডেকেই ওয়াশরুমের দেওয়াল ধরে বাম পায়ে সম্পূর্ণ ভর দিয়ে খু*ড়ি*য়ে খু*ড়ি*য়ে হেঁটে ওয়াশরুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়াতেই কুশলকে শুধু টাওয়াল পড়া অবস্থায় দেখে সঙ্গে সঙ্গে উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে নিয়ে বললো…….

—“অ*স*ভ্য, নি*র্ল*জ্জ লোক কোথাকার। রুমের ভিতরেই চেইঞ্জ করবেন সেটা আগে বলে দিতে পারেন নি? সব মেয়েদের নিজের সিক্স প্যক বডি দেখিয়ে আকর্ষিত করতে পারলেও আমাকে পারবেন না। তাই এইসব নি*র্ল*জ্জ*পণা ঘরের বাহিরে গিয়ে করবেন আমার সামনে করবেন না একদম।”

তরুর এমন কথায় কুশল এর কিছুটা খারাপ লাগে। কুশল কোনো প্রতিত্তুর না করে টি-শার্ট আর ট্রাউজার পড়ে তরুর কাছে গিয়ে দাড়িয়ে ওকে আবারও পাজাকোলে তুলে নিয়ে বিছানায় এনে শুইয়ে দেয়। এরপর তরুর পায়ের ক্ষ*ত স্থানটিতে ড্রেসিং করে কিছু ঔষধ বের করে বেডসাইড টেবিলের উপর রেখে তৎক্ষনাৎ রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। তরু অবাক দৃষ্টিতে কুশলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে বললো…

—“হঠাৎ কি হলো এনার! কিছু না বলেই চলে গেলেন। ঔষধ বের করে রেখে গেলেন কিন্তু খাবার যে খেতে হবে সে সম্পর্কে তো কিছু বললেন না।”

তরুর চিন্তাভাবনার মাঝেই একজন মহিলা সার্ভেন্ট খাবারের ট্রে হাতে নিয়ে তরুর রুমে প্রবেশ করে বললেন…
—“ম্যম আপনার রাতের খাবার নিয়ে এসেছি।”

তরু শান্ত স্বরে মহিলা সার্ভেন্টটি বললো…
—“রেখে যাও তুমি।”

—“ম্যম স্যার বলেছেন আপনি সম্পূর্ণ খাবারগুলো খাওয়া শেষ করে ঔষধ খাওয়ার পরই যেনো আমি এই রুম থেকে চলে যাই তার আগে নয়।”

তরু ভ্রু কুঁচকে মহিলা সার্ভেন্টটির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন….
—“তোমার স্যার কোথায়?”

—“স্যার কোথায় সেই বিষয়ে আমি কিছু জানি না ম্যম। আমাকে যতোটুকু কাজ করতে বলেছেন আমি ততোটুকুই করছি।”

তরু আর কোনো প্রশ্ন না করে খাবারটুকু খেয়ে ঔষধ খেয়ে নেয়। মহিলা সার্ভেন্টটি চলে যেতে নিলে তরু বললো….

—“তোমার সন্ধ্যা ম্যমকে একটু আমার রুমে আসতে বলো তো।”

—“ঠিক আছে ম্যম।”

এই বলে মহিলা সার্ভেন্টটি রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।

কিছুসময় পর সন্ধ্যা তরুদের রুমে প্রবেশ করে বললো…

—“ভাবী তুমি হঠাৎ আমাকে ডেকে পাঠালে কোনো সমস্যা হয়েছে কি?”

—“আমার পাশে এসে বসো।”

সন্ধ্যা তরুর পাশে এসে বসতেই তরু সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে প্রশ্ন করলো….

—“আচ্ছা সন্ধ্যা, আমার সাথে বিয়ে হওয়ার আগে কি তোমার মেজো ভাইয়ার অন্য কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিলো?”

সন্ধ্যা সহজ কন্ঠে বললো….
—“আমার জানামতে ভাইয়ার কখনও কোনো মেয়ে ফ্রেন্ড পর্যন্ত ছিলো না সেখানে কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্ক করা তো দূরের বিষয়। কিন্তু তুমি হঠাৎ এমন প্রশ্ন করলে কেনো ভাবী? তুমি কি ভাইয়াকে স*ন্দে*হ করছো?”

—“আরে না না, সেরকম কোনো বিষয় না। এমনিই জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি অন্যভাবে নিও না আমার প্রশ্নটিকে।”

—“আচ্ছা।”

—“আচ্ছা সন্ধ্যা, তুমিও কি কাওকে ভালোবাসো না?”

তরুর প্রশ্নে সন্ধ্যা কিছুটা থমকে যায়। কেনো যেনো মুখ দিয়ে ‘না ভালোবাসি না’ বাক্যটি সে উচ্চারণ করতে পারছে না। মন, বিবেক, মস্তিষ্ক শরীরের পন্ঞ্চইন্দ্রীয়ই যেনো সন্ধ্যাকে বাঁ*ধা প্রদান করছে ‘না’ শব্দটি উচ্চারণ করতে। কিছুসময় পেরিয়ে গেলেও সন্ধ্যার কোনো প্রতিত্তুর না পেলে তরুনিমা সন্ধ্যার ডান হাত নিজের হাতের মুঠোয় মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে বললো…..

—“মনে হচ্ছে তুমি কাওকে ভালোবাসো। যদি সত্যিই তুমি কাওকে ভালোবেসে থাকো তাহলে তার নিকট থেকে নিজের মনের ভিতর জমে থাকা অনুভূতি গুলো আর লুকিয়ে রেখো না। জীবনে খুব কম মানুষ এর ভাগ্য এমন হয়, যেখানে যে যাকে ভালোবাসে সে তারই ভালোবাসা পায়। তাই যদি জীবনে এমন কাওকে পেয়ে থাকো তাহলে তাকে হাতছাড়া হতে দিও না। এই স্বা*র্থ*পর পৃথিবীতে সত্যিকারের ভালোবাসা পাওয়া সবথেকে দূর্লভ ও মূল্যবান জিনিস পাওয়ার সমতুল্য।”

তরুনিমার কথাগুলো সন্ধ্যার মনের ভিতর যেনো পুরোপুরি ভাবে গেঁথে যায়। সন্ধ্যা নিজেকে সামলে নিয়ে বললো….

—“ভাবী..তুমি কি ভাইয়াকে ভালোবাসো?”

তরুনিমা বললো….
—“জানি না।”

তরুনিমার এমন প্রতিত্তুর শুনে সন্ধ্যা একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো….
—“আমার মেজো ভাইয়া মন-মানসিকতা ও আচার-ব্যবহার এর দিক থেকে অনেক ভালো মানুষ গো। কখনও যদি তোমার মনে হয় ভাইয়া তোমাকে ভালোবাসে তাহলে তাকে ক*ষ্ট দিও না। দেখবে ভাইয়া তোমাকে তার সবটুকু উজার করে দিয়ে রানীর মতো করে রাখবে।”

তরুনিমা কোনো প্রতিত্তুর করলো না। সন্ধ্যা বসাবস্থা থেকে উঠে তরুর রুম থেকে চলে যায়।

(৩৯)
সন্ধ্যা নিজের রুমে এসে দরজা ভিতর থেকে আটকে দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবির দিকে তাকিয়ে বললো….

—“তবে কি আমি তারই মতো করে তাকে ভালোবেসে ফেললাম!”

(৪০)
অনেকসময় ধরে অপেক্ষা করার পরেও কুশল রুমে না ফিরলে তরু নিজের মতো করে ঘুমিয়ে যায়।

পরেরদিন সকালে……
সকালের মিষ্টি রোদের আলো এসে তরুর মুখশ্রীর উপর পড়লে ওর ঘুম ভে*ঙে যায়। আড়মোড়া ভে*ঙে তরু শোয়াবস্থা থেকে উঠে সোফার দিকে লক্ষ্য করতেই বুঝতে পারে কুশল রাতে আর রুমে আসে নি৷ তরু এবার অনেক অবাক হয়। মনের ভিতর ঘুরতে থাকে নানান ধরনের প্রশ্ন। তরুর চিন্তা ভাবনার মাঝেই কুশল রুমে প্রবেশ করে সোফায় গিয়ে বসতেই, তরু কিছুটা রু*ক্ষ কন্ঠে কুশলকে প্রশ্ন করলো…..

—“সারারাত কোথায় ছিলেন আপনি?”

কুশলকে কোনো প্রতিত্তুর না করেই সোফায় শরীর এলিয়ে দিতে দেখে তরুর অনেক রাগ হয়। তরু বিছানা থেকে নেমে কুশলের সামনে গিয়ে রাগী স্বরে বললো….

—“আমি আপনাকে কিছু জিজ্ঞাসা করেছি! কোথা ছিলেন সারারাত আপনি?”

কুশল তবুও কোনো প্রতিত্তুর না করে ডান হাত কপালের উপর ভাজ করে নিয়ে চোখ বন্ধ করে। এতে যেনো তরুর রাগের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। তরু বেডসাইড টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাসটি হাতে নিয়ে আবারও কুশলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে গ্লাসে থাকা সম্পূর্ণ পানিগুলো কুশলের মুখের উপর ছুঁ*ড়ে মে*রে রাগে ফোঁস ফোঁস করতে শুরু করে। তরুর আকস্মিক এমন কাজে কুশল দ্রুত শোয়াবস্থা থেকে উঠে বসে একহাতে মুখের উপর থেকে পানি গুলো মুছে নিয়ে তরুকে কিছু না বলেই ওর পাশ কেটে আলামীর কাছে চলে যায়। আলমারী থেকে টাওয়াল আর অন্য টি-শার্ট, ট্রাউজার বের করে ওয়াশরুমে চলে যায়। তরু কুশলকে এমন ইগনোর করতে দেখে অবাক স্বরে বললো…

—“এই লোকটা হঠাৎ আমাকে ইগনোর কেনো করছে বুঝলাম না!”

চলবে ইনশাআল্লাহ………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here