হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(বোনাস পর্ব) #Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

0
610

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(বোনাস পর্ব)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(১৫)
কুশল শান্ত স্বরে তরুকে বললো….

—“আমি তোমাকে বিশ্বাস করি তরুনিমা।”

কুশলের মুখে এরূপ কথা শুনে তরুনিমা ঘাড় ঘুরিয়ে কুশলের দিকে তাকায়। কুশল তরুর দিকে শান্ত দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে। কুশল আবারও বললো……

—“বাবা-চাচা-চাচীর এমন ব্যবহারের জন্য আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি। তাদের বলা কথাগুলো ভেবে আর কষ্ট পেও না। এরপর আর কখনও যদি বড় বাবার বা আমাদের পরিবারের কোনো সদস্যের মাঝে তুমি সন্দেহজনক কিংবা অস্বাভাবিক কোনো আচারণ লক্ষ্য করো তাহলে পরিবারের সকলকে জানানোর পূর্বে তুমি বিষয়টা আমাকে জানিও। তখন পরিস্থিতি এতোটা জটিল হবে না। আমি চাই না আমার স্ত্রীর সম্মান ও শিক্ষার উপর আর কখনও কেও আঙুল উঠানোর সাহস করুক।”

এই বলে কুশল আবারও সোফায় শরীর এলিয়ে দিয়ে চোখ বুঝে নেয়। তরু স্তব্ধ নয়নে কুশলের দিকে রয় কিছু সময়। অতঃপর দৃষ্টি সরিয়ে বিছানায় শরীর এলিয়ে দেয় তরুনিমাও।

(১৬)
পরেরদিন সকালবেলা………
তরু আর কুশল দু’জনেই নিজ স্থানে ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। সেইসময় ওদের রুমের দরজায় নক করার আওয়াজ ভেসে আসে। তরু আর কুশল দু’জনেরই ঘুম ভেঙে যায়। কুশল সোফা ছেড়ে উঠে দরজা খোলার জন্য সামনের দিকে অগ্রসর হয়। তরু দ্রুত বিছানা থেকে নেমে সোফার উপর থেকে কম্বল আর বালিশ নিয়ে বিছানার উপর রাখে। কুশল দরজা খুলে দিতেই দেখে দরজার বাহিরে সন্ধ্যা দাঁড়িয়ে আছে। সন্ধ্যা কুশলকে দেখামাত্র শান্ত স্বরে বললো…

—“মেজো ভাইয়া… তোমাকে মেজো ভাবীকে এক্ষুনি নিচে আসার জন্য বলতে পাঠালেন দাদীমা।”

কুশল শান্ত স্বরে বললো….
—“তুই যা, আমরা যাচ্ছি।”

—“ঠিক আছে।”

এই বলে সন্ধ্যা নিচে চলে যায়। অতঃপর কুশল আলমারির কাছে এসে আলমারি থেকে একটা পাঞ্জাবি আর পাজামা বের করে ওয়াশরুমে চলে যায়। কিছুসময় পর ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে তরুনিমাকে বললো….

—“ফ্রেশ হয়ে নাও, দাদীমা তোমাকে আর আমাকে নিচে যেতে বলেছেন।”

তরুনিমা কিছু না বলে আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে চলে যায়। কুশল বিছানার কাছে এসে দাঁড়িয়ে নিজেই বিছানা গোছাতে শুরু করে। বিছানা গোছানো শেষ হলে কুশল সোফায় বসে সোফার পাশে থাকা টি-টেবিলের উপর থেকে ফোনটি ফোন দেখতে শুরু করে। বেশ কিছুসময় পর তরুনিমা ওয়াশরুম থেকে বের হলে দু’জনে একসাথে নিচে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রুম থেকে বের হয়। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে তরুনিমা লক্ষ্য করে ড্রয়িংরুমের সোফায় চৌধুরী পরিবারের সকল সদস্যই উপস্থিত আছেন। কুশল আর তরুনিমা ড্রয়িংরুমে এসে দাঁড়ায়। অতঃপর কুশল তার নিজস্থানে বসে আর তরুনিমা সন্ধ্যার পাশে গিয়ে বসে। সাগরিকা সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন…..

—“সকলেই যখন উপস্থিত হয়েছো এখন যে কারণে সকাল সকাল সকলকে একত্র করা হয়েছে সেই কারণটি বলছি।”

কুশল শান্ত কন্ঠে বললো….
—“দাড়ান দাদীমা, এখনও পরিবারের সকল সদস্য উপস্থিত হয় নি এখানে।”

সাগরিকা চৌধুরী সহ বাকি সকলেই নিজেদের চারপাশ দেখে বুঝতে পারলেন কুশল কার অনুপস্থিতির কথা বলছে। কুশল দু’জন সেক্রেটারিকে ডাক দেয়। সেক্রেটারি দু’জন কুশলের সামনে এসে দাঁড়ালে কুশল বললো….

—“বড় বাবাকে সাবধানে হুইলচেয়ারে বসিয়ে এখানে নিয়ে এসো।”

সেক্রেটারি দু’জন চলে যায়। কামিনী নিজের বিনুনি নাড়াতে নাড়াতে বললেন….

—“বড় ভাসুর মশাই তো রোবট এর মতো হয়ে গিয়েছেন। তার উপস্থিতি কিংবা অনুপস্থিতিতে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করা সমানই। তিনি তো আর কোনো মতামত জানাতে পারবেন না। আমার তো মনে হয় তার কান দ্বারা আমাদের কথাগুলো তার মস্তিষ্ক পর্যন্তও পৌঁছাবে না।”

কামিনীর এমন কথায় কুশল শান্ত কন্ঠে বললো….
—“বড় বাবার অনুপস্থিতিতেই যদি সব আলোচনা করার হয় তাহলে আমি বড় বাবাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে বাসায় নিয়ে আসলাম কেনো চাচী? আমাদের বলা প্রতিটি কথা তার কান দ্বারা মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌছায় কি না তা তুমি বা আমরা কেওই উপলব্দি করতে পারবো না কখনও। এমনও তো হতে পারে আমাদের সাথে থেকে আমাদের বলা কথা গুলো শুনলে বড় বাবার মাঝে ইম্প্রুভমেন্ট হতে শুরু করবে। তাই পরবর্তীতে যেকোনো পারিবারিক বিষয়ে আলোচনা করার সময় বড় বাবার সেই স্থানে উপস্থিত থাকা নিয়ে কেও কোনো কথা উঠাবে না।”

কুশলের কথাগুলো শুনে কামিনী কোনো প্রতিত্তুর না করে নিজের চেহারায় গম্ভীরতার ছাপ ফুটিয়ে দ্রুততার সাথে বিনুনি নাড়াতে শুরু করেন। সেইসময় সেক্রেটারি দু’জন হুইলচেয়ারে বসিয়ে রায়হানুলকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে উপস্থিত হয়। অতঃপর সেক্রেটারি দু’জন স্থান ত্যগ করে। কুশল শান্ত স্বরে বললো…

—“দাদীমা…এবার বলুন কি বলবেন আপনি!”

সাগরিকা উপস্থিত সবাইকে একপলকে দেখে নিয়ে শান্ত স্বরে বললেন….
—“কনক দাদুভাই-অনন্যা দিদিভাই, কুশল দাদুভাই-তরু দিদিভাই তোমাদের বিবাহকার্য যেহেতু অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সম্পন্ন হয়েছে তাই আমি আজ সন্ধ্যায় সোসাইটির সকল আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকে দাওয়াত করে তোমাদের সাথে তাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করছি আমার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তোমাদের কারোর কোনো সমস্যা নেই।”

সাগরিকা চৌধুরীর এমন সিদ্ধান্তে কনক আর অনন্যার চেহেরায় খুশির ছাপ ফুটে থাকলেও কুশল আর তরুর চেহারায় কোনো খুশির ছাপ ফুটে নেই। সন্ধ্যায় রিসিপশন হওয়া নিয়ে সকলের সম্মতি আছে বুঝতে পেরে কুশল, তরুও আর মতবিরোধ করে না।

(১৭)
সন্ধ্যেবেলা…….
পুরো চৌধুরী মেনশন রঙিন আলোয় ঝলমল করছে। একে একে আমন্ত্রিত সকল অতিথিরা চৌধুরী মেনশনে আসতে শুরু করেছেন।

সাগরিকা চৌধুরী নিজ দায়িত্বে দুই জোড়া কাপলের জন্য ম্যচিং করে ডিজাইনার ল্যহেঙ্গা ও শেরওয়ানি আনিয়েছেন। কনক আর অনন্যা গাড় নীল আর গোল্ডেন এর কম্বিনেশনে তৈরি ডিজাইনার লেহেঙ্গা ও শেরওয়ানি পড়েছে। অন্যদিকে কুশল আর তরু গাড় কালো আর হোয়াইট এর কম্বিনেশনে লেহেঙ্গা ও শেরওয়ানি পড়েছে। যথাসময়ে দুই জোড়া কাপল একে-অপরের হাত ধরে হেঁটে বাগানে পাশে আয়োজিত জায়গায় এসে উপস্থিত হয়। অতঃপর ওরা মন্ঞ্চে উঠে স্ব স্ব স্থানে বসে পরে। একদিকে কনক ও অনন্যার মুখশ্রীতে খুশির ঢেউ বইছে অন্যদিকে কুশল ও তরু নিজেদের মুখশ্রীতে জোরপূর্বক খুশির ছাপ ফুটিয়ে রেখেছে। একে একে আমন্ত্রিত সকল অতিথিরা মন্ঞ্চে এসে ওদের সাথে পরিচিত হয়ে ওদের হাতে উপহার সামগ্রী দিচ্ছে। এভাবেই কেটে যায় বেশ লম্বা সময়। এতো লম্বা সময় ধরে একস্থানে বসে থাকার কারণে ভিষণ অস্বস্তি বোধ করছে তরু। তরুর এই অস্বস্তি বোধ হওয়ার বিষয়টি কুশলের চোখ এড়ায় নি। কুশল পকেট থেকে নিজের ফোনটি বের করে কাওকে একটা মেসেজ পাঠায়। পরক্ষণেই উপস্থিত সকল অতিথিদের খাবারের আয়োজন করা হয়েছে এমন সংবাদ নিয়ে আসে খাবার পরিবেশনের মূল দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিটি। ধীরে ধীরে সব অতিথিরা খাবারের আয়োজন করা জায়গাটিতে চলে যায়। সকল অতিথিদের অন্যত্র চলে যেতে দেখে তরু কিছুটা স্বস্তি পায়। কুশল ওর বসার স্থান থেকে উঠে দাঁড়িয়ে কমোরের পিছনে দু’হাত রেখে তরুকে উদ্দেশ্য করে শান্ত স্বরে বললো……

—“রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও তরুনিমা। সকল অতিথিদের সাথে পরিচয় পর্ব যতোটুকু হওয়ার তা শেষ হয়েছে।”

তরু কুশলের এমন কথা শুনে অবাক দৃষ্টি নিয়ে কুশলের দিকে তাকায়। কুশল ওভাবেই দাড়িয়ে থেকে বললো….

—“বাসার কেও কিছু ভলভে না, চিন্তা করো না। যাও তুমি, ফ্রেশ হয়ে রেস্ট করো। যদি কেও কিছু বলার সাহস করে তাহলে তোমার স্বামী তা বুঝে নিবে।”

তরু ওভাবেই কুশলের দিকে তাকিয়ে থেকে মনে মনে বললো…

—“খা*রু*শ টাকে যতোটা খা*রা*প ভেবেছিলাম ততোটাও খারাপ না৷”

অতঃপর তরুনিমা সোফা ছেড়ে উঠে চৌধুরী মেনশনের ভিতরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।

চলবে ইনশাআল্লাহ………..

[ বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আমার গল্পের সকল পাঠক-পাঠিকাদের এই অংশটুকু পড়ার জন্য অনুরোধ করছি।

আমি আগের পর্ব গুলোতেই বেশ কয়েকবার এই একটা বিষয় সম্পর্কে বলেছি আজ আবারও বলতে একপ্রকার বাধ্য হচ্ছি। আপনাদের মাঝে হয়তো অনেকেই পাকিস্তানের ফেমাস সিরিয়াল Tere bin দেখেছেন। আবার অনেকেই দেখেন নি। যারা দেখেছেন তারা অনেকেই বলেছেন গল্পটি Tere bin সিরিয়াল টাইপ। হ্যা এমনটা মনে হওয়াটা স্বাভাবিক। কারণ আমি Tere bin সিরিয়ালের নায়ক মুরতাসিম এর ক্যরেক্টারটা আমার গল্পের নায়ক কুশলের মাঝে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি মাত্র। এখন কিছু পাঠক-পাঠিকা গল্প পড়ার পর বলছেন আমি সিরিয়াল দেখে কপি করে লিখছি নিজের মাথা খাটিয়ে লেখছি না। আচ্ছা পৃথিবীতে কি কেবল ১জন স্বামীই নিজের স্ত্রীর প্রতি সাপোর্টিভ আচারণ করতে পারবে? সিরিয়ালে মুরতাসিম তার স্ত্রীর সাপোর্টিভ ছিলো বলে কি আমি গল্পে কুশলকে তরুনিমার সাপোর্টিভ বানাতে পারবো না? এটাকে কি কপি বলে? এখন যদি আমি কুশলকে বাকি বেশির ভাগ গল্পের নায়কের মতো তরুনিমার উপর অ*ত্যা*চা*র করে এমন একজন খা*রা*প স্বামী রুপে তুলে ধরতাম তখন তো কেও আমাকে বলতে আসতেন না আমি অমুক গল্পের নায়কের ক্যরেক্টার কপি করছি! তাহলে একজন স্ত্রীর প্রতি শালীন আচারণ করা, নিজের মাঝে এটিটিউড রাখা, যুক্তি দিয়া কথা বলা, শান্ত আচারণ করা ক্যরেক্টার নিয়ে লেখলে কেনো আপনারা আমাকে বলছেন আমি সিরিয়াল দেখে কপি করেছি? যদি আমি সিরিয়ালের কোনো ডায়লগ সরাসরি তুলে ধরতাম, সিরিয়ালের মতো করেই পর্ব সাজাতে থাকতাম তখন আপনাদের আমার লেখাকে কপি বলাটা মাননসই হতো। ক্যরেক্টারের মিল থাকলেই সেটা কপি হয়ে যায় না।

আমার কথাগুলো পড়ার পর দয়াকরে কেও মনে দুঃখ নিবেন না বা রাগ হবেন না। আমার খারাপ লাগাটাই শুধু প্রকাশ করেছি। গল্পটিকে আমি নিজের মতো করেই গুছিয়ে লিখবো। দয়াকরে, ধৈর্য নিয়ে গল্পের পরবর্তী পর্বগুলো পড়বেন। ক্যরেক্টারের মিল দেখে সেটাকে কপি বলা থেকে বিরত থাকবেন। ভু’ল ত্রু’টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আল্লাহ হাফেজ, আসসালামু আলাইকুম। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here