হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৩২) #Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

0
510

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৩২)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(৮৪)
চেয়ারম্যানের ছেলে আরিফের গলা থেকে ফাঁ*সে*র দড়িটা খুলে আগের ন্যয় দুই খুঁটির সাথে ওর দুইহাত বেঁ*ধে দেয় একজন গার্ড। অন্যদিকে চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেনের সামনে বসে কুশল নিজের ফোনের ভিডিও রেকর্ড অন করে ফোনটি ওর পাশে দাঁড়ানো একজন গার্ডকে ধরতে দিয়ে চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে বললো…

—“এবার বলুন আমার সাথে আপনার স*ম*স্যা*টি আসলে কোথায় হয়েছে যার রে*শ ধরে আপনি আমাকে মা*র*তে লোক পাঠালেন।”

চেয়ারম্যান একপলকে নিজের ছেলের নি*স্তে*জ হয়ে যাওয়া রূপ দেখে নিজেকে পৃথিবীর সবথেকে অসহায় মানুষ বলে মনে করছেন। পরক্ষণেই আর কিছু ভেবে সময় ন*ষ্ট না করে বললেন…..

—“আগামীকাল যেই চাষীর মেয়েকে ধ্ব*র্ষ*ণে*র অ*প*রা*ধে আপনি মেম্বার ছেলেকে উপযুক্ত শা*স্তি দেওয়ার জন্য বিচার বৈঠকখানার আয়োজন করেছিলেন সেই বৈঠকখানা ভে*স্তে দেওয়ার জন্যই আমি আপনাকে আ*হ*ত করতে লোক পাঠিয়েছিলাম।”

চেয়ারম্যানের কথায় কুশল কিছুটা অবাক হয়ে বললো..
—“মেম্বারের ছেলের জন্য বসা বিচার বৈঠকখানা ভে*স্তে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে যদি মেম্বার আমাকে আহত করার জন্য লোক পাঠাতেন তাহলে বুঝতাম তিনি নিজের ছেলেকে বাঁচানোর জন্য এমন কাজ করেছেন। কিন্তু মেম্বারের এই কাজ আপনি কেনো করলেন? আপনার কোন স্বা*র্থ হা*সি*ল হতো এই কাজ করে?”

কুশলের প্রশ্ন শুনে আমজাদ হোসেন একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন….
—“কারণ চাষীর মেয়েকে মেম্বারের ছেলে একা ধ্ব*র্ষ*ণ করে মে*রে ফেলার চেষ্টা করে নি। মেম্বারের ছেলের সাথে আমার ছেলেও ছিলো। যদি আগামীকাল মেম্বার এর ছেলের বিচার বৈঠকখানা বসতো তাহলে মেম্বারের ছেলে স্বীকারোক্তিতে ওর সঙ্গ দেওয়ার জন্য আমার ছেলের নাম ও বলতো। তখন আমার ছেলের জীবনেও ধ্ব*র্ষ*ণে*র কালো দাগ পড়তো, আমার মান-সম্মান ন*ষ্ট হতো, এমনকি আমাকে চেয়ারম্যান পদ থাইকা ইস্তফাও নিতে হতো। নিজের ছেলের জীবন, আমার সম্মান ও চেয়ারম্যানের ক্ষমতা বাঁচানোর জন্যই আমি আমার জমিতে কাজ করে এই চাষীকে নিজের মেয়েদের ই*জ্জ*ত ন*ষ্ট করার ভ*য় দেখিয়ে আপনাকে আ*হ*ত করার জন্য পাঠিয়েছিলাম।”

চেয়ারম্যানের কথাগুলো শুনে কুশলের সামনে এখন পুরো বিষয়টা স্বচ্ছ পানির মতো পরিষ্কার হয়ে যায়। কুশল ওর দু’চোখ বন্ধ করতেই সাদিকের নিষ্পাপ মুখশ্রী যেনো ওর চোখের সামনে ভেসে উঠে। পরক্ষণেই কুশল নিজেকে সামলে নিয়ে শান্ত স্বরে বললো…

—“সব বাবা-মায়ের কাছেই তাদের নিজ নিজ সন্তানরা অনেক প্রিয় হয়। কিন্তু সন্তান যখন পা*পে*র পথে অগ্রসর হতে শুরু করে তখন প্রতিটি বাবা-মায়ের উচিত কঠোর ভাবে নিজের সন্তানদের শাষণ করে ভালোর পথে আনার চেষ্টা করা। এটা প্রতিটি বাবা-মায়ের দায়িত্ব ও কর্তব্যের মাঝে পড়ে। সন্তানরা ভু*ল করলে, পা*প করলে সেই ভু*লকে প্রশ্রয় দেয় যেই বাবা-মায়েরা তারা নিজ হাতে নিজের সন্তানদের জীবন ন*ষ্ট করে। আপনার ছেলে ধ্ব*র্ষ*ণে*র মতো একটা জ*ঘ*ন্য কাজ করেছে কোথায় আপনি আপনার ছেলেকে শাস্তি মাধ্যমে উচিত শিক্ষা দিবেন যেনো পরবর্তীতে কোনোরূপ খা’রাপ কাজে লি*প্ত হওয়ার আগে শত বার চিন্তা করে তা না করে নিজের ছেলের অ*প*রা*ধকে ধা*মা*চা*পা দেওয়ার চেষ্টা করলেন? কেমন বাবা আপনি? আপনার মুখে থু*তু ফেলতেও ঘৃ*ণা হচ্ছে আমার। আজ যদি ঐ চাষীর মেয়ের জায়গায় আপনার নিজের মেয়ে ধ্ব*র্ষ*ণে*র শিকার হতো তখনও কি আপনি চাইতেন আপনার মেয়ের ধ্ব*র্ষ*ণ*কারী নিজের করা অ*ন্যা*য়ে*র জন্য কোনোরূপ শা*স্তি না পেয়ে হাসিখুশি ভাবে চলাফেরা করুক?”

কুশলের কথাগুলো শুনে চেয়ারম্যান লজ্জায়, অ*প*মানে মাথা নুইয়ে রেখেছেন। কিছুসময় নিরব থাকার পর কুশল আবারও বললো….

—“বাহিরে মাটির উপর সাদা চাদরে মুড়ানো প্রাণহীন অবস্থায় আমার খুব কাছের একজন মানুষ শুয়ে আছেন। আজ যদি তার আগে আমি গাড়ি থেকে নামতাম তাহলে ঐ জায়গায় আমার লা*শ পড়ে থাকতো। তখন আপনাদের ছেলেদের জীবন, সম্মান ও পদ অক্ষত থাকতো। কিন্তু আপনারা হয়তো ভুলে গিয়েছিলেন যে আমাদের সকলের উপরেও একজন আছেন। যার কাছ থেকে কোনো অ*ন্যা*য়*কারী, পা*পী*রা নি*স্তার পায় না। সকল পা*পীদের নিজ নিজ কর্মের জন্য উচিত ফল দেন তিনি। নি*মি*ষের মধ্যেই অ*ন্যা*য়*কারীদের জীবন ধ্বং*স স্তুূপে পরিণত করে দেন তিনি। তাই আগামীকাল বিচার বৈঠকখানা বসবেই। সেখানে আপনার ছেলে ও মেম্বারের ছেলে উচিত শিক্ষা লাভ করবে। এর পাশাপাশি আমার উপর আ*ক্র*মণের চেষ্টা করতে গিয়ে আমার পারসোনাল অ্যাসিস্ট্যান্টকে খু*ন করার জন্যও যথাযথ শা*স্তি পাবেন আপনি। কেও বাঁচাতে পারবে না আপনাকে।”

আমজাদ হোসেন শা*স্তি*র কথা শুনে উচ্চস্বরে বললেন…
—“শা*স্তি পাওয়ার হলে আমি একা কেনো পাবো? ঐ মেম্বার ও আমাকে ব্লাকমেইল করে বলেছিলো ওর ছেলেকে শা*স্তি*র হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা না করলে ও আমার ছেলের গোপনীয়তাও ফাঁ*স করে দিবে। তাহলে এই কাজে সেও কি সমান ভাবে দো*ষী হলো না? শা*স্তি কি ওর ও প্রাপ্য নয়? আর ছোট খান সাহেব! ওনার কি হবে? উনি তো সর্বক্ষণ আপনার ও গ্রামবাসীর ক্ষ*তি কিভাবে করা যায় সেই চিন্তাভাবনা নিয়ে ঘুরেন। অনেকবার ক্ষ*তি করার চেষ্টাও করেছেন। এবারও ওনার কথানুযায়ীই তো আমি আপনাকে আ*হ*ত করতে লোক পাঠিয়েছিলাম। উনি তো সবথেকে বড় দো*ষী। ওনার ও যথাযথ শা*স্তি হওয়া উচিত। বিচার বসাইলে সব পা*পী*দের নিজ নিজ কর্মনুযায়ী শা*স্তি দিতে হবে আপনাকে। যদি এমনটা আপনি করতে পারেন তাহলে আমি আমার জন্য নির্ধারণ করা শাস্তি মাথা পাইতা মাইনা নিমু।”

কুশল শান্ত স্বরে বললো…
—“কোনো পা*পীই পা*প কর্ম করে নি*স্তার পাবে না চেয়ারম্যান সাহেব। মুবিন খান ভিষণই ধু*র*ন্ধ*র স্বভাবের মানুষ। সে এমন ভাবে প্রতিটি কাজ করে যেনো কাজ অসম্পূর্ণ হলেও তার উপর কোনোরূপ দো*ষ না পড়ে। উপযুক্ত প্রমানের অভাবে সে প্রতিবারই শা*স্তি*র হাত থেকে বেঁচে যায়। কিন্তু এবার আর বাঁচতে পারবে না মুবিন খান। এতোদিন ধরে করে আসা পা*প কর্মের জন্য উচিত শিক্ষা এবার সে পাবে। ওর বিরুদ্ধে শ*ক্ত প্রমাণ এবার আমার হাতে আনার সুব্যবস্থাও আমি আজই করবো।”

কুশলের এমন কথায় চেয়ারম্যান অবাক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছেন ওর দিকে। পরমুহূর্তেই কুশল চেয়ারম্যানের উপর শান্ত দৃষ্টি স্থির রেখে আবারও বললো…

—“মুবিন খানের বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রমাণ এনে দেওয়ার কাজ সম্পন্ন করবেন আপনি চেয়ারম্যান সাহেব।”

চেয়ারম্যান অবাক স্বরে বললেন….
—“আ-আমি? আমি কিভাবে ওনার বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রমাণ এনে দিবো চৌধুরী সাহেব?”

অতঃপর কুশল চেয়ারম্যানকে তার কাজ খুব ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়ে বললো….
—“আপনার স্ত্রী ও ছেলে কিন্তু আমার কাছে ব*ন্দী হয়ে আছে। আপনার ছেলে যে কাজ করেছে তার জন্য ওকে প্রা*ণে মা*র*তে আমার হাত একটুও কাঁ*প*বে না। তাই কোনোরকম চালাকি করার চেষ্টা না করে যতোটুকু করার কথা বুঝিয়ে বললাম ঠিক ততোটুকুই করা হয় যেনো।”

চেয়ারম্যান ইতিমধ্যে বুঝতে পেরেছেন কোনো ভাবেই শা*স্তি*র হাত থেকে তিনি বা তার ছেলে বাঁচতে পারবে না। তাই নিরুপায় হয়ে কুশলের কথানুযায়ী কাজ করতে তিনি রাজি হয়ে যান। অতঃপর কুশল চেয়ারম্যানকে বাঁ*ধা অবস্থা থেকে মুক্ত করে দেন এবং কয়েকজন গার্ডসদের সাথে মুবিন খানের বাসায় যাওয়ার জন্য পাঠিয়ে দেন। কুশলও চেয়ার ছেড়ে উঠে গু*দা*ম*ঘর থেকে বেড়িয়ে একটা গাড়ি নিয়ে বাহিরে চলে যায়।

(৮৫)
তরুনিমা সন্ধ্যার রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়াতেই দেখতে পায় সন্ধ্যা মলিন মুখশ্রী নিয়ে জানালার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে বাহিরের দিকে দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে৷ তরুনিমা ছোট্ট করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে সন্ধ্যার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে ওর কাঁধের উপর একহাত রেখে বললো….

—“সন্ধ্যা..এসেছো পর থেকে এক ফোঁটা পানিও মুখে তুলো নি। এখন একটু কিছু খেয়ে নাও। তোমার শরীর এমনিতেই অনেক দূ*র্ব*ল এই সময় না খেয়ে দু*শ্চি*ন্তা করলে শরীর আরো খা*রাপ করবে।”

সন্ধ্যা মলিন কন্ঠে বললো….
—“ভাবী..এমনটা তো হওয়ার কথা ছিলো না। কখনও ভাবি নি জীবনে এমন ও কোনো দূ*র্বি*ষ*হ সময় পাড় করতে হবে। বড় ভাইয়া, মেজো ভাইয়ার মতোই সাদিক ভাইকেও আমি আমার আপন একজন মনে করতাম সবসময়। আজ মৃ*ত্যু*র পূর্বে উনি যখন খুব শক্ত করে আমার হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ধরেছিলেন তখন মনে হচ্ছিলো আমার ভিতরটা ভে*ঙে আসতেছে। উনি হয়তো আমাকে কিছু বলার জন্য খুব চেষ্টা করছিলেন কিন্তু ওনার শরীর ওনাকে সেই শক্তিটুকুও দেন নি। আমার দিকে স্থির করা ওনার অশ্রুসিক্ত চোখ জোড়া ফেঁ*টে যেনো ওনার মুখ দিয়ে বের না হওয়া কথাগুলো বের হতে চাইছিলো। কিন্তু ওনার চোখের সেই ভাষাগুলো আমি বুঝতে পারি নি। আমার কোলের উপর মাথা রাখা অবস্থায় উনি শেষ নিঃশ্বাস ত্য*গ করেছেন এখনও আমার এই কথাটা বিশ্বাস করতে ভিষণ ক*ষ্ট হচ্ছে ভাবী।”

তরুনিমা একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো….
—“বাস্তবতা ভিষণ নি*র্ম*ম হয় সন্ধ্যা। জীবনে যখন বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয় তখন কিছু চরম সত্যকে বুকের ভিতর পাহাড় সমতুল্য কষ্টগুলো চা*পা দিয়ে হলেও মেনে নিতে হয়। আজ সাদিক ভাই যদি আগে গাড়ি থেকে না নেমে তোমার মেজো ভাইয়া নামতেন তাহলে হয়তো সাদিক ভাইয়ের জায়গায় তিনি থাকতেন। সাদিক ভাই নিজের জীবন বি*স*র্জ*ন দিয়ে ওনাকে বাঁচিয়েছেন। উনার এই ঋণ আ*মৃ*ত্য কেও ভুলতে পারবো না। দেখিও সাদিক ভাইয়ের মৃ*ত্যু*র জন্য দা*য়ী একটা প্রাণীকেও নি*স্তার দেবেন না তোমার মেজো ভাইয়া। সাদিক ভাই যেনো জান্নাতবাসী হতে পারেন এই প্রার্থনা করা ছাড়া আমার বা তোমার করণীয় কিছুই নেই।”

তরুনিমার কথাগুলো শুনে সন্ধ্যা তরুনিমার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে নিরবে অশ্রুপাত করতে থাকে।

চলবে ইনশাআল্লাহ……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here