এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️ #লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️ — পর্বঃ০২

0
623

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ০২

নিভু নিভু আলোতে জ্বলছে মোমবাতি। অন্ধকারে প্রায় ভরপুর চারপাশ। ফারিশ ক্ষীপ্ত মেজাজে বললো,
“আমায় একদম স্পর্শ করবেন না?”
“আশ্চর্য তো স্পর্শ না করলে সেবা করবো কি করে।”
“আপনি মেয়ে বহুত ভেজাল করছেন। বলছি তো ফারিশ কারো সেবা নেয় না।”
“এমন উদ্ভট লজিক আপনার কাছেই রাখুন।”

ফারিশ তাও শুনলো না। সে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। আদ্রিতাও উঠে এগিয়ে গেল তার দিকে। রাগী রাগী চেহারা নিয়ে বললো,
“আপনি এমন বাচ্চাদের মতো করছেন কেন?”
“আপনি আমার কথা শুনছেন না কেন!”

আদ্রিতা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়লো। চিন্তিত স্বরে বললো,
“কেন বুঝচ্ছেন না এভাবে থাকলে আপনার ক্ষত স্থানটায় আরো সমস্যা হবে। ইনফেকশন হবে। প্লিজ আমার কথা শুনুন।”
“দেখুন আমার চিকিৎসা পছন্দ নয়।”
“প্লিজ এভাবে বলবেন না। রোগ হলে চিকিৎসা করতে হয়। আমার কথা মানুন নয়তো সমস্যা হবে। কষ্ট পাবেন অনেক।”

আদ্রিতা শেষ কথাটা এমনভাবে বললো যে ফারিশ না চেয়েও আর বারণ করতে পারলো না। নীরব স্বরেই বললো,“ঠিক আছে।”

আদ্রিতা খুশি হলো। ফারিশ আস্তে আস্তে বসে পড়লো সামনের চেয়ারে। আদ্রিতা বললো,“টিশার্ট খুলুন?”

ফারিশ অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বললো,
“খুলতেই হবে?”
“জি। না খুললে চিকিৎসা করবো কি করে!”
“না আমার সমস্যা নেই কিন্তু তখন জ্যাকেট খুলেছিলাম বলে কেউ একজন ঘাবড়ে গেছিল।”

আদ্রিতা আবার লজ্জা পেল। না এ ছেলে তাকে বার বার লজ্জায় ফেলার জন্যই এইসব বলছে। আদ্রিতা মাথা নিচু করে বললো,“তখন তো…

থামিয়ে দিলো ফারিশ। বললো,“থাক বলতে হবে না।”

আদ্রিতা থেমে গেল। ফারিশ তার টিশার্ট খুললো। আদ্রিতা দেখলো পিঠে বেশ জখম হয়েছে। আদ্রিতা তার হাতের বামদিকটা দেখিয়ে বললো,“ওইখানে বেড আছে আসুন আমার সাথে।”

ফারিশের বিরক্ত লাগলো। কিন্তু তাও কিছু বললো না চুপচাপ উঠে দাঁড়ালো। হেঁটে গেল বেডের কাছে। আদ্রিতা তার হাতের মোমবাতিটা এক সাইডে রেখে বললো, এখন উল্টো হয়ে শুয়ে পড়ুন।”

ফারিশ বিরক্তির দৃষ্টি নিয়ে তাকালো আদ্রিতার দিকে। আদ্রিতা ফারিশের দৃষ্টিটাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে বললো,“শুয়ে পড়ুন দ্রুত।”

ফারিশ চেয়েও কিছু বলতে পারলো না। শুয়ে পড়লো। বললো,“আচ্ছা আপনি সত্যিই ডাক্তার তো নাকি আবার ভুল চিকিৎসা করে আমাকে মারার প্লান করছেন।”

আদ্রিতা তার ডাক্তারি বাক্সটা খুলে তুলো বের করে আস্তে আস্তে ক্ষত জায়গাটা পরিষ্কার করতে লাগলো। একটা লম্বা আকৃতির ক্ষত হয়েছে পিঠে। মনে হচ্ছে কেউ দাঁ, বটি, বা বড় ধারালো ছুঁড়ি দিয়ে পিঠে বারি দিয়েছিল। ফারিশ আবার বললো,
“আপনি কিন্তু কোনো উত্তর দিলেন না। আপনি সত্যি ডাক্তার তো?”
“আমার পোশাক দেখে কি আমাকে ডাক্তার মনে হয় না।”
“পোশাক পড়লেই ডাক্তার হয় নাকি?”
“রাত তিনটা বাজে কোন সুখে আমি অন্যের চেম্বারে ডাক্তারি পোশাক পড়ে বসে থাকবো বলুন তো।”

ফারিশ দ্বিধাহীন ভঙ্গিতে বললো,
“তাও ঠিক।”
“জি। তা ক্ষতটা কি করে লাগলো?”
“আপনায় বলতে চাচ্ছি না।”

আদ্রিতা আরো একবার প্রশ্ন করলো,
“লোকগুলো কারা ছিল?”
“কি জানি এদেশেরই কেউ হবে হয়তো।”
“ভয়ংকর কি তারা ছিল নাকি আপনি ছিলেন?”
“কেউ একজন হবে জানা নেই।”
“তাদের দেখে পুলিশ টাইপ লাগলো চুরি ডাকাতি করছিলেন নাকি?”
“আমায় দেখে তা মনে হয়?”
“না হওয়ার মতোও তো কোনো কারণ দেখছি না।”

ফারিশ হাসে। বলে,“আমি চোর ডাকাত নই কিন্তু তার চেয়েও বড় কিছু।”

আদ্রিতা কিছু বললো না। ছেলেটা যে ত্যাড়া এ বিষয়ে তার কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু কোনো অপরাধী বলে মনে হচ্ছে না।

ডা. আদ্রিতা। পুরো নাম ওয়াজিহা আদ্রিতা। সে ঢাকার একটা সরকারি হসপিটালের কর্মরত আছে। পরিবারে বাবা মা আর ছোট ভাই আছে। তারা বর্তমানে বাড়িতে নেই। আদ্রিতার মামাতো ভাইয়ের ছেলের আকিকায় গেছেন। আদ্রিতাকেও নেয়ার ইচ্ছে ছিল কিন্তু আদ্রিতার সময় হবে না বলে আর যায় নি। বাড়িতে কেউ ছিল না বিদায় আজ বাড়ি যাওয়ার তেমন তাড়া ছিল না আদ্রিতার। তাই পেশেন্ট দেখা শেষ করে রাউন্ড থেকে ঘুরে এসে চুপচাপ নিজ চেম্বারে বসে ছিল অনেকক্ষণ। কখন রাত তিনটা বেজে গেল টের পায় নি। হঠাৎ লোডশেডিং হয়। আদ্রিতা তার সাইলেন্ট করে রাখা ফোনটা খোঁজে। কিছুক্ষণের মাঝে ফোনটা পেয়েও যায়। ফোনটা অন করে লাইটটা জ্বালাতেই সেই মুহুর্তেই রুমে এসে হাজির হলো ফারিশ। তাকে দেখেই ঘাবড়ে যায় আদ্রিতা। এরপর কত কি ঘটে গেল তার সাথে! আদ্রিতা পর পর কথাগুলো ভেবেই তাকালো ফারিশের ক্ষতের দিকে। অনেকটা কেটে গেছে সেলাই লাগতে পারে। আদ্রিতা বললো,“ক্ষতটা জোড়া লাগানোর জন্য সেলাই করতে হবে। আপনি একটু বসুন আমি যন্ত্রপাতি আর ইনজেকশন নিয়ে আসি। একটু অপেক্ষা করুন।”

ফারিশ তক্ষৎণাৎ উঠে বসলো। টিশার্টটা গায়ে জড়িয়ে জ্যাকেকটা গায়ে দিলো। বললো,“ওসব সেলাই ফেলাইলের আমার প্রয়োজন নেই। আমায় এখন যেতে হবে। শুনুন আমায় আর মনে রাখবেন না। এতে বিপদ আপনারই হবে।”

কথাটা বলেই উঠে দাঁড়ালো ফারিশ। তার গাড়ি চলে এসেছে। আদ্রিতা বললো,“ক্ষতটা এভাবে রেখে দিলে আপনার খুব কষ্ট হবে।”

ফারিশ আবার হাসে। বলে,“এসব কষ্ট ফষ্ট ফারিশের হয় না আমি ঠিক আছি।”

ফারিশ বেড থেকে নেমে সামনে যেতে লাগলো একটু দূর গিয়েই আবার দাঁড়িয়ে আদ্রিতাকে উদ্দেশ্য করে বললো,“আর একটা কথা এভাবে রাত জেগে চেম্বারে বসে থাকবেন না। ফারিশ কাউকে ধন্যবাদ দেয় না তাই আপনাকেও দিলাম না। তবে সাহায্য করেছেন এটা মনে রাখবো আমি। কিন্তু আপনি আমায় মনে রাইখেন না বিপদ হবে আপনার। গুড বাই। আমাদের আর দেখা না হোক। ভালো থাকবেন।”

ফারিশ বেরিয়ে গেল। আদ্রিতা ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। ফারিশ যাওয়ার তিনমিনিটের মাথাতেই কারেন্ট চলে আসলো। পুরো হসপিটাল আবার উজ্জ্বল হলো। আদ্রিতা কিছুক্ষণ থ মেরে দাড়িয়ে থেকে বললো,“কারা ছিল ওই লোকগুলো আর এই ছেলেটাও বা কে ছিল? কেমন যেন অদ্ভুত ছেলেটা।”

আদ্রিতা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এবার সে বাড়ি যাবে পুরো বিষয়টাই যেন তার মাথার উপর দিয়ে গেল। ছেলেটা কি ভয়ংকর কেউ ছিল? নাকি যারা খোঁজ করছিল তারা ভয়ংকর ছিল? দুটো প্রশ্ন নিয়েই আজ বাড়ি ফিরবে আদ্রিতা।”

আকাশ তখন একটানা অল্প কিছুক্ষণ বৃষ্টি দিয়ে থেমে গেছে। ফারিশ আকাশ পানে তাকায়। হসপিটাল থেকে অনেকটা দূরই চলে এসেছে সে। আজ কেমন যেন নিজেকে অদ্ভুত অদ্ভুত লাগছে। কথায় কথায় হাসছে। এটা ভাড়ি অদ্ভুত বিষয়। এমন হচ্ছে কেন!’

ফারিশের সামনে সেই মুহূর্তে গাড়ি আসলো। সঙ্গে সঙ্গে তার চোখমুখ শক্ত হয়ে গেল। অদ্ভুত সব ভাবনা মাথা থেকে ঝেরে ফেলে ভাবলো সবার আগে সেই বেইমানকে খুঁজতে হবে যার কারণে আজ প্রথম তাকে পালাতে হলো। তাও কি না পুলিশনামক আহাম্মকের দলের থেকে। ফারিশ গাড়িতে উঠে বসলো। সে বসতেই গাড়ি ছুটে গেল সুদূরে।
—–
সকাল দশটা। লাগাতার ফোনে কল আসছে আদ্রিতার। বার বার কল এসে কল কেটে যাচ্ছে কিন্তু আদ্রিতা ফোন ধরছে না। কারণ সে গভীর ঘুমে মগ্ন। হঠাৎ হুস ফিরলো আদ্রিতার। টেবিলের উপর থেকে সাঁতরে ফোনটা নিলো সমানে তার পাঁচ বন্ধু আশরাফ, মুনমুন, মৃদুল, রনি আর চাঁদনী কল করছে। তাঁরা পাঁচজন একসাথেই আছে। একজনের কল কেটে যেতেই আরেকজন কল করছে। শেষে গিয়ে মৃদুলের কলটা তুলতে পারলো আদ্রিতা৷ ঘুম জড়ানো গলায় বললো,
“হ্যালো।”

সঙ্গে সঙ্গে বিশ্রী ভাষায় একটা গালি দিয়ে রাগী কণ্ঠে বললো মৃদুল,“ওই ছ্যামড়ি এতক্ষণ সময় লাগে ফোন তুলতে কতক্ষণ থেকে আমরা ফোন করছি জানিস।”

তক্ষৎনাৎ ঘুম উড়ে গেল আদ্রিতার। ফোনটা কান থেকে সরিয়ে নাম্বার দেখে বললো,“কি হইছে?”

এবার মৃদুলের থেকে চাঁদনী ফোনটা নিয়ে বললো,“তুই ঠিক আছিস তো আদু?”

আদ্রিতা অবাক হয়ে বললো,
“সকাল সকাল মদ খেয়ে কল করলি নাকি আমার আবার কি হবে?”

এবার আশরাফ ফোনটা নিয়ে বললো,
“তুই নিউজ দেখিস নি?”
“কিসের নিউজ?”

মুনমুন তীক্ষ্ণ স্বরে বললো,
“টিভি দেখ হারামি।”

আদ্রিতা এবার লাফিয়ে উঠলো সকাল সকাল হলো কি এদের! আদ্রিতা তার ফোনটা দেখলো সকাল দশটা বাজে। সঙ্গে সঙ্গে আরো যেন চমকে উঠলো আদ্রিতা। এত বেলা অবদি সে ঘুমিয়ে ছিল। আদ্রিতা ফোনটা কানে ধরে বললো,“দোস্ত সকাল দশটা বাজে এদিকে আমি এখনও ঘুমিয়ে ছিলাম।”

রনি বললো,“বোইন টিভি খুলে নিউজ দেখ?”

আদ্রিতা বিছানা থেকে নামলো। চলে গেল সোফার রুমে দ্রুত টিভিটা অন করে নিউজের চ্যালেন ধরলো। একজন ভদ্রমহিলা বলছেন,
“দেশ বিরোধী এক মাফিয়াকে পুলিশ আটক করতে গিয়েও একটুর জন্য বেঁচে যায়। জানা যায় কাল শেষরাতের দিকে কোনো এক হসপিটালে গা ঢাকা দেয় মাফিয়াটি। পরে আর খোঁজ পাওয়া যায় নি। ছেলেটির মুখ ঢাকা থাকার কারণে চেহারা দেখা যায় নি।”

আদ্রিতা থ মেরে সোফায় বসে পড়লো হাত থেকে অটোমেটিক রিমুটটা পড়ে গেল। সে অদ্ভুত শব্দ করে বললো,“তবে কি কাল রাতের ফারিশ নামের ছেলেটিই দেশ বিরোধী মাফিয়া ছিল?”

#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ।]

নীল ক্যাফের উপন্যাস シ︎

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here