ছায়া মানব ২ ১৭.

0
127

ছায়া মানব ২

১৭.
মাহতিম গোসল করে এসে চুল ঝাড়তে ঝাড়তেই দরজা খুলে। সাথে সাথেই নিহার মুখটা ভেসে ওঠে,
‘তুমি এখনো যাওনি?’

নিহা মাহতিমকে আপাদমস্তক দেখে নিয়ে ঢোক গিলল,’ওফ্ মেমে, তুমি কতোটা হট। তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে এই অবস্থায়।’
বলেই ভেতরে ঢুকে গেল। মাহতিম বিরক্তিতে কপাল কুঁচকায়। নিহাকে তার উটকো ঝামেলা মনে হয়। যাকে তাড়াতেও পারছে না, না সহ্য করতে পারছে। মাহতিমের তোয়ালে চেপে ধরে নিহা। মেয়েটার আস্পর্ধা দেখে অবাক মাহতিম। তোয়ালে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। এমন একটা কান্ড করবে মেয়েটা এমনটা আশা করেনি। নিহা মাহতিমের খুব কাছাকাছি ঘেঁষে যায়। তার লোমশ বুকে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু পানির কণা নজরে আসতেই যেন নেশা ভর করল‌। এক হাত রাখল মাহতিমের বুকে,
‘মাতাল করা স্পর্শ তোমার। আমি মাতাল হয়ে গেলাম যেন।’

‘তোমাকে নয় অন্যকাউকে মাতার করতে চেয়েছিলাম।’

‘বিয়ে করব দ্রুত, আমি আর সহ্য করতে পারছি না এতোটা দূরত্ব।’

‘পাগলামী ছেড়ে নিজের ঘরে যাও।’

‘তাড়িয়ে দাও কেন বারবার? আমি তোমার কাছেই থাকতে চাই। চলো না, আজ রাতে আমরা একসাথে থাকি, অনেক মজা হবে তাই না?’

মাহতিমের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। নিহাকে সে সহ্য করতে পারছে না। অথচ সরতেও পারছে না। একবার সরে গেলেই তার পরনের তোয়ালে হারাবে। নিহা মাহতিমের ঠোঁট স্পর্শ করে। পরপরই উঁচু হয় কিছুটা।

অহনা বের হতেই মাহতিমের ঘরের দিকে চোখ গেল। মূলত সে মাহতিমকে দেখতেই এসেছে। কিছুটা বড়ো বড়ো পা ফেলেই এলো। মাহতিম এবং নিহাকে এতোটা অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখে তার আত্মা শুকিয়ে এলো। এমনটা অন্তত আশা করেনি সে। কেমন হিংসেও হলো। মাহতিমের‌ও চোখ পড়ল অহনার ওপর। সে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। অহনা আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না। কোনোরকমে আড়াল হলো। নিজের ঘরে গিয়েই বিষন্ন হয়ে গেল। মোহনা কয়েকবার জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে! কিছুই বলল না অহনা‌। বারবার নিজের মনকে বোঝাচ্ছে, মাহতিম অন্য মেয়ের সংস্পর্শে আসলে তার সমস্যা কী? তাও আবার নিজেই খুব বিরক্ত হচ্ছে। সহ্য হলোনা একটু আগের বিষয়টা।
মাহতিম‌ও প্রচন্ড রাগে ফেটে পড়ল। নিহাকে কয়েকটা কটু কথা বলতেও দ্বিধাবোধ করল না। বলেই বসল,’তুমি আমার বোন হ‌ও। আশা করি নিজের লিমিট ক্রস করবে না। এসব বেহায়াপনা। মনে রাখো, আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি, তোমাকে ভালোবাসা সম্ভব নয়। যত তাড়াতাড়ি এই কথাটা নিজের মাথায় সেট করে নেবে তত‌ই মঙ্গল। আবার কখনো ভুল করেও আমার পেছনে লাগতে এসোনা। আমি এসব পছন্দ করিনা।’

‘চুমু খাওয়া দোষের কী? বিদেশে পঞ্চাশ জনের সাথে কিস করলেও কেউ কিছু বলবে না তোমায়।’

‘এটা তোমার লন্ডন নয়, এটা বাংলাদেশ। তুমি বিদেশে গিয়ে তাদের স্ট্যাটাস বহন করছ। তোমার আর আমার মাঝে অনেক পার্থক্য। তুমি আমার থেকে দুরেই থেকো। আমি তোমাকে পছন্দ করিনা।’

নিহার চোখ বেয়ে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। কষ্ট সহ্য করতে না পেরে দৌড়ে বের হয়ে গেল। আর দেখা করতে এলো না মাহতিমের সাথে। ঘরের কপাট‌ও খুলল না।
_
রাত অনেকটা গড়িয়েছে। চারিদিকে ঝিঁঝিঁ পোকার আর্তনাদ বেড়েই চলেছে। মাহতিম এখনো ঘুমায়নি। ল্যাপটপে টুকিটাকি কাজ করছে। হঠাৎ করেই কিছু একটা খুঁজল। পেল না। পুরো ঘর তন্নতন্ন করেও খুঁজে পেল না। অস্ফুট স্বরে উচ্চারণ করল,’মোবাইলটা কোথায় রাখলাম আবার!’
অনেক খুঁজেও পেল না। মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল খাটে। উদাসীন লাগছে ভীষণ। খুব‌ই গুরুত্বপূর্ণ মোবাইলটা। এই মোবাইলেই সমস্ত তথ্য রয়েছে। ভুল মানুষের হাতে গেলেই সমস্যা হবে। মাহতিমের কাছে দুটো ফোন। একটি সবসময় ব্যবহার করার জন্য অর্থাৎ নিজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য। অন্যটা সিক্রেট! এটা কাজের জন্য। অথচ এখন পাচ্ছে না। কিছুতেই মনে করতে পারছে না কোথায় রেখেছে। অনেকক্ষণ চিন্তা করল। হঠাৎ করেই মনে হলো গত দিনের কথা। রাতে ফোনটা তার হাতে ছিল। কিছু নথির গোপনীয়তা রক্ষার্থে সেগুলোকে সে আলাদা করে অন্য একটা ঘরে রেখেছিল। মাঝে মাঝেই সে ঐ ঘর ব্যবহার করে। একা কিছুটা সময় কাটাতো। মনে পড়ল, ঘরটা এখন অহনা দখল করে বসে আছে। দ্রুত সে নিজের ঘরে থেকে বেরিয়ে এলো। সবাই ঘুমাচ্ছে এখন। এতরাতে কাউকে বিরক্ত করাও অপরাধ। কিন্তু এছাড়া আর কোনো উপায় সে পাচ্ছে না।
অহনার ঘুম আসছিল না‌। হঠাৎ করেই খেয়াল পড়ল মাহতিমের ফোনটার কথা। কাছেই ছিল বলে সেটা অন করে। ওয়ালপেপারে থাকা ছবিটার দিকে তাকিয়ে হাসল। পরক্ষণেই বিষন্ন হয়ে গেল। নিহা এবং মাহতিমের মাঝে কোনো সম্পর্ক আছে বলেই বুঝে নিল। ফোনটা ছুঁড়ে ফেলার ইচ্ছে হলো। কিন্তু সে করল না। আজ এমন অবস্থা হয়েছে যে চোখে ঘুম নামছে না কোনো মতেই। দরজায় আ’ঘাত পেতেই হকচকিয়ে ওঠে। এতরাতে কে এসেছে বুঝতে পারল না। অবশ্য ভাবল, মোহনা ছাড়া আর কেউ হতেই পারে না। কিছুটা সময় নিয়ে ওঠে দাঁড়াল। আবারো দরজায় আঘাত শোনা গেল। আর বিলম্ব করল না। দরজা খুলে দিল। মাহতিম দ্রুত ভেতরে ঢুকতেই অহনা আঁতকে ওঠে,
‘আপনি?’

মাহতিম কিছু বলল না। সে ঘরের কোণে থাকা ড্রয়ার থেকে কিছু ফাইল নিল। বারান্দায় গিয়েই আরো কিছু ফাইল নিয়ে এলো। এমনটা দেখে অহনা খুব‌ই অবাক। সেগুলোকে বয়ে মাহতিম নিজের ঘরে নিয়ে গেল। তারপর আবার ফিরে এসে মোবাইলটা খুঁজতে শুরু করল। দীর্ঘ পাঁচ মিনিট খোঁজার পর সে ক্লান্ত হয়ে বসে গেল। কোমরে দু’হাত গুঁজে এতক্ষণ মাহতিমের কান্ডকারখানা দেখছিল অহনা। এখনো মুখ খুলেনি। যেন খুললেই তাকে চিবিয়ে খাবে। অহনাকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মাহতিম কিছুটা ব্রু কুঁচকালো। কপালে জমে থাকা ঘাম মুছে বলল,’তোমার কাছে হয়ত। লুকিয়ে রেখেছ মনে হয় তাই না?’

‘লুকানোর বিষয়টা পরে আসবে, আমি এখনো জানিইনা আপনি আসলে কী খুঁজছেন! আবার আমাকেও দোষী করছেন। অসাধারণ!’

অহনার কথায় মাহতিম ওঠে দাঁড়াল। অদ্ভুত ভঙ্গিমায় বলল,’নিজেকে ভীষণ চালাক ভাবো তাই না?’

‘ অবশ্যই ভাবি‌। কারণ আমি চালাক। এবার বলুন, কেন আমার ঘরে এসে তাণ্ডব চালালেন? সমস্যা কী?’

মাহতিম কিছুটা লজ্জিত হয়। এতরাতে তার আসা সত্যিই উচিত হয়নি।
‘আমার ফোনটা পাচ্ছিলাম না।’

‘ খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নাকি?’

মাহতিম কিছুক্ষণ চিন্তা করল। পরপরই বলল,’ততটা না। তবে দরকার ছিল।’

‘তাহলে ঐ ফোন দিয়ে আপনার আর কাজ নেই। ওটার আশা ছেড়েই দিন। যার কাছে আছে তার কাছেই ভালো থাকুক।’

‘এতক্ষণে সিউর হলাম, ফোনটা তোমার কাছেই। আপাতত নিশ্চিন্ত আমি।’

‘কিন্তু আমি দেব না। দেখি কিভাবে নিতে পারেন।’

‘আমাকে তুমি বলা উচিত ছিল তোমার।’

‘ওকে। কোনো ব্যাপার না।’

অহনা ফোনটা হাতে নিয়ে নিল। মাহতিম সুন্দর করেই বলল,’দিয়ে দাও।’

‘পারলে নিয়ে নাও। কখনোই দেব না আমি। তোমার প্রতি অনেক রাগ হয়েছে আমার।’

মাহতিম ব্রু বক্র করে জিজ্ঞেস করল,’আমার ওপর রাগ? সেটা কেন?’

‘নাতো, আমার কেন রাগ হবে? আপনি যেকোনো মেয়ের সাথেই থাকেন না কেন আমার কখনো রাগ হবে না।’

মাহতিম হাসল। নিশ্চয় নিহার কথা বলছে। ভীষণ আনন্দ পেল মাহতিম। ওকে আরো কিছুটা জ্বালাতে ইচ্ছে করল তার। বুক ফুলিয়ে শ্বাস নিয়ে বলল,’তুমিতো সুযোগ দিলে না। তার ওপর নিহা অনেক বছর ধরে আমাকে পাওয়ার আশায় বসে আছে। তাকে কী করে কষ্ট দিই আমি? ভাবছি ওকেই বিয়ে করব।’

অহনার চোখে মুখে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সত্যি নাকি বাক্যটা বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে। মাহতিমের কথাটা গ্রাহ্য না করার ভঙ্গিতেই বলল,’ভালোইতো। করে ফেলুন। দেরী করছেন কেন?’

সমস্ত রাগ যেন মোবাইলটার ওপরেই। ইচ্ছে করল এটাকে আ’ছাড় মেরে গায়ের জ্বালা মিটিয়ে নিক। তার আগেই মাহতিম ওঠে এসে গপ করে তার হাত চেপে ধরে,
‘ফোনটা ভাঙার চেষ্টা করছিলে তাই না? নিহাকে ঈর্ষা করো?’

অহনা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়,
‘মোটেও না। আমি কাউকে ঈর্ষা করছি না।’

‘আমিতো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, কারো হৃদয়ে দহন চলছে। বলছিলাম কী, সেটা কি আমার জন্য?’

‘ফোনটা ফেলে দেব।’

‘পারো কিনা দেখো। তোমার হাতটাই আমার দখলে। এমন কি তুমিও! পালাতে পারবে?’

‘এবার কিন্তু বেশি হয় যাচ্ছে। আপনার ফোন নিয়ে চলে যান। আমি ঘুমাব।’

মাহতিম শয়তানি হাসি দিয়ে বলল,’শুনেছি চুমুতে এমন এক প্রকার জেলি থাকে যেটা ঠোঁট ফাটা রোধ করে। তোমার ঠোঁটজোড়া ফেটে চৌচির, ভাবলাম মেডিসিন দিয়ে দিই। কী বলো?’

‘নিহার কাছে যান। ওর ঠোঁট ফেটে অষ্টচির হয়েছে। আমাকে ছাড়ুন, আমার লাগবে না।’

‘ কিন্তু আমিতো তোমাকেই দেব। শত হোক, জীবনের প্রথম চুমু বলে কথা। সেটা আমাদের মাধ্যমেই শুরু হোক।’

চলবে….

Sathi Islam : সাথী ইসলাম

পাঠকদের জন্য সাথীর পাঠকমহল (পাঠক+পাঠিকা) – Sathi’s Readership

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here