মিশে_আছি_তোমাতে ❤ #Nusrat_Jahan_Bristy #Part_4

0
148

#মিশে_আছি_তোমাতে ❤
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_4

“তোমাকে আমায় নিজে থেকে এসে জড়িয়ে ধরতে হবে।”

“হোয়াট? কোনো দিন না আমি মরে গেলেও আপনাকে জড়িয়ে ধরবো না।”

“ঠিক আছে ধরো না জড়িয়ে আমাকে, এটা সর্ম্পূন তোমার ইচ্ছে। তুমি যদি পেটে খিদে নিয়ে থাকতে পারো তাহলে থাকো।”

তিশা ঠোঁট ফুলিয়ে মন মনে বলে, “হিটলার একটা। ইচ্ছে করে এমনটা করছে আমার সাথে । ইচ্ছে করছে তো ল্যাপটপটা দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দু’ভাগ করে ফেলতে। কিন্তু পেট যে মানতে চাইছে না কোন সকালে খেয়েছি আর এখনও খাওয়া হয় নি কি যে করি?”

আবির সরল গলায় বলে, “কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কেন? আমার সামনে থেকে যাও কারণ তোমার আমার কাজে মনযোগ দিতে সমস্যা হচ্ছে।”

তিশা মুখ ভেংচি কেটে আবিরের কথাটা ভেঙ্গিয়ে বলে, “হুমম! কাজে মনযোগ দিতে সমস্যা হচ্ছে যত্তসব।”

“কিছু বললে।”

তিশা মুচকি হেসে বলে, “না না কিছু বলে নি। আচ্ছা শুনুন না।”

“হুম বলো।”

তিশা আমতা আমতা করে বলে, “না মানে বলছিলাম কি আমি আপনার শর্তে রাজি আছি। আপনাকে আমি জড়িয়ে ধরবো। তবে জড়িয়ে ধরার পরে কিন্তু আমাকে খাবার এনে দিতে হবে।”

আবির অভিনয় করে বলে, “তাই…! ঠিক আছে তাহলে কাছর আসো আর তোমার খাবার আমি এনে দিবো চিন্তা করো না।”

আবির বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। তিশা এক পা এক পা করে আবিরের দিকে এগিয়ে আবিরের বুকে এসে মাথা রাখে। তাও আবার আবিরের বুক স্পর্শ না করে এমনভাবে মাথা রাখে।

আবির নিঃশব্দে হেসে বলে, “তোমাকে আমি জড়িয়ে ধরতে বলেছি আমার বুকে মাথা রাখতে বলে নি।”

তিশা নাক ফুলিয়ে মনে মনে বলে, “ইচ্ছে করছে তো তোকে এক ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে। কিন্তু কি আর করার হাতি কাদায় পড়লে চামচিকেও লাথি মারে।”

তিশা আস্তে আস্তে করে ওর দু হাত দিয়ে আবিরকে জড়িয়ে ধরে। আবির মুচকি একটা হাসি দেয়। এই দিকে তিশার হৃদস্পন্দন নিজের অজান্তেই বেড়েই যায়। এই প্রথম কোনো ছেলের এতটা কাছে এসেছে তিশা। আবিরের শরীরের থেকে পারফিউম ঘ্রাণ তিশার নাকে এসে বারি খাচ্ছে। আবির তিশাকে জড়িয়ে ধরতে যাবে সাথে সাথে তিশা আবিরের কাছ থেকে সরে এসে আমতা আমতা করে বলে।

“আপনাকে আমি জড়িয়ে ধরেছি এবার আমার খাওয়ার ব্যবস্থা করুন।”

“ঠিক আছে চলো আমার সাথে।”

তিশা আবিরের পেছন পেছন যায়। দু তলা থেকে নেমে তিশা ডাইনিং টেবিলে গিয়ে যা দেখে তাতে তিশার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়।

টেবিল ভর্তি খাবার আর টেবিলের পাশে অনেক কাজের লোক দাঁড়িয়ে আছে। তিশা বাড়ির চারপাশটা ভালো করে তাকিয়ে দেখে অনেক সুন্দর করে বাড়িটা সাজানো মনে হচ্ছে যেন কোনো রাজপ্রাসাদের ছোয়া। তিশা এখানে আসার পর থেকে শুধু আবিরের ঘরেই ছিল। এখন ঘর থেকে বের হয়ে তো তিশা পুরাই আবাক।

“কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কেন? বসো তুমি না বলেছিলে তোমার খুব খিদে পেয়েছে তাহলে এখন দাঁড়িয়ে আছো কেন?

“না মানে এই এত বড় বাড়িতে কি আপনি একা থাকেন?”

“হুম! আগে একা থাকতাম কিন্তু এখন তো আর একা নই তুমি তো আমার সাথে আছো। আচ্ছা কি খাবে বলো?”

তিশা এক নজরে খাবার গুলার দিকে তাকিয়ে আছে। কোনটা দিয়ে আগে শুরু করে বুঝতে পারছে না। আবির তিশা মনোভাব বুঝতে পেরে বলে।

“আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমাকে সার্ভ করে দিছি। তুমি তো বিরিয়ানি খেতে ভালোবাসো তাই না তাহলে আগে বিড়িয়ানি খাও।”

আবির তিশার প্লেটে বিরিয়ানি সার্ভ করে আর তিশা আবিরের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

“কি হলো খাও?”

“হুম।”

তিশা আর আবির ডিনার করে নিজেদের ঘরে চলে যায়। তিশা আর কিছু না বলে গিয়ে শুয়ে পড়ে সারা দিন অনেক দখল গেছে তিশার উপর। আবির সোফাতে বসে অফিসের কাজ করতে করতে সোফাতে ঘুমিয়ে পড়ে।

_____

সকালে তিশা ঘুম থেকে উঠে দেখে ঘরে আবির নেই।

“উফ! ভালোই হয়েছে ওই‌ বদটা ঘরে নেই কিন্তু গেল কোথায়? আবার কোনো কিছু অঘটন ঘটাবে না তো আবার দেখে আসি তো একটু বাইরে থেকে।”

তিশা ঘর থেকে বের হয়ে যা দেখে তা তিশার কল্পনার বাহির ছিল। সারা বাড়ি ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। আর সবচেয়ে অদ্ভুদ বিষয় হলো যত রকম ফুল দিয়ে বাড়িটা সাজানো হয়েছে সব ফুল তিশার খুব প্রিয়।

“এসব কি? গতকাল রাতে তো কোনো ফুল ছিলো না তাহলে এত তাড়াতাড়ি কি করে বাড়িটা সাজানো হলো। এখন কি সকাল নাকি দুপুর?”

তিশা একটা দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে মাত্র নয়টা বাজে।

“মাত্র নয়টা মাঝে আর এর মাঝে এত কিছু কি করে সম্ভব? কিন্তু এসব কেন করা হচ্ছে?”

তিশা ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখে আবির দাঁড়িয়ে ফোনে কার সাথে কথা বলছে। তিশা আবিরের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে আবিরের কথা শুনে।

“আরে তুই নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে একা আসছিস কেন? গাড়ি ড্রাইভ করার জন্য আমি ড্রাইভারকে পাঠিয়েছি তো আর তুই ড্রাইভারকে একা রেখে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লি কেন এয়ারপোর্ট থেকে? তুই কেন বুঝতে পারছিস তোর কিছু হয়ে গেলে আমার কি হবে বলতো? আচ্ছা যাই হোক আস্তে আস্তে গাড়ি ড্রাইভ করে আসবি। এখন আমি রাখি।”

তিশা আবিরের কথা শুনে মনে মনে বলে, “বাবা এত কেয়ার করে কার সাথে কথা বলছে এই হিটলার?”

আবির ফোন কেটে পিছনে ফিরতেই তিশাকে দেখে বলে, “আরে তুমি উঠে গেছে ঘুম থেকে।”

“হে উঠে গেছি তো কি হয়েছে?”

আবির আফসোসের স্বরে বলে, “কি আর হবে যখন হওয়ার দরকার তখন হবে এখন কিছু হবে না জান।”

“এই যে শুনেন এক দম জান ফান এসব বলে ডাকবেন না আমাকে।”

“কেন ডাকবো না এসব? আমি তো জানতাম মেয়েদেরকে নাকি জান তারপর সুইটহার্ট এসব বলে ডাকলে খুশি হয়।”

“আমি খুশি হই না বুঝেছেন।”

“ওওও তুমি তো আবার অন্য গ্রহের মানুষ তুমি খুশি হবে কি করে?”

“কি বললেন আপনি? আমি অন্য গ্রহের মানুষ।”

“না না তুমি এই গ্রহেরই মানুষ। জাস্ট তোমার মনটা অন্য গ্রহের।”

তিশা মুখ ভেংচি কেটে বলে, “আচ্ছা যাই হোক! কি করছে সবাই এখানে?”

“তুমি কি‌ চোখে কম দেখো?”

“হোয়াট? আমি চোখে কম দেখি মানে?”

“না মানে তুমি যেভাবে বলছো কি হচ্ছে এখানে এসব? তাই বললাম আর কি!”

“শুনুন আপনি না একদম ত্যাড়া ত্যাড়া কথা বলবেন না।”

“ওকে ওকে সরি আর বলবো না।

“হুম….আচ্ছা কেউ আসছে বাড়িতে যার জন্য বাড়িটা এত সুন্দর করে সাজানো হচ্ছে।”

“হে কেউ তো আসছে। কিন্তু বাড়ি সাজানো হচ্ছে আমার আর তোমার বিয়ের জন্য।”

“কিহ?”

“হুম। তোমার আর আমার বিয়ে হবে আজকে। কি বলো তো কেউ তো জানে না তোমার আর আমার বিয়ে হয়েছে তাই ভাবলাম আজকে সবার সামনে তোমাকে বিয়ে করবো আমি।”

“আমি আপনাকে বিয়ে করবো না।”

“তুমি তো আামকে কবেই বিয়ে করে রেখেছো শুধু তিন কবুল বলাটা বাকি আর সেটা তো তুমি আজকেই বলবে জান।”

“কোনো দিনও না আমি কোনো দিন কবুল বলবো না।”

“ঠিক আছে দেখা যাবে। এখন আমি আসি তুমি বরং তাড়াতাড়ি করে বিয়ের জন্য রেডি হয়ে পড়ো। ঘরে গিয়ে দেখো বিয়ের সব জিনিসপত্র রাখা আছে আর পার্লারের মেয়েরাও একটু পর চলে আসবে। আর তোমার ব্রেকফাস্টও ঘরে রাখা আছে খেয়ে নিও কেমন।”

আবির চলে যেতেই তিশা আপন মনে বলে, “এই লোকটা কি ভাবে নিজেকে? কোনো হিরো যে তাকে আমি বিয়ে করবো, কোনো দিনও তো আ‌মি বিয়ে করবো না তোকে‌ কোনো দিনও না। ওই বিয়েটা তুই আমার অজান্তে করেছিস কিন্তু আমার জ্ঞান থাকতে তোকে কোনো দিনও বিয়ে করবো না।”

তিশা উপরের ঘরে গিয়ে দেখে সোফার উপরে শাড়ি লেহেঙ্গা গয়না সবকিছু রাখা। তিশা রাগে সোফার উপর থেকে সব কিছু নিচে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলে।

“তোর মতো একটা ঠকবাজ লোকের জন্য আমি কোনো দিনও বউ সাজবো না কোনো দিনও না। তুই আমার জীবনের সব সুখ কেড়ে নিয়েছিস। বাবা মাকে সবার সামনে তুই ছোট করেছিস আর সেই আমি তোর জন্য বউ সাজবো কোনো দিনও না কোনো দিন না। আজকে শুধু মাত্র তোর জন্য আমার বাবা আমার মুখ দেখতে চায় না শুধু মাত্র তোর জন্য এর শোধ তো আমি তোর থেকে তুলবো।”

কথাটা বলেই তিশা হাটু ঘেড়ে বসে কান্না শুরু করে দেয়। জীবনটা হঠাৎ করেই যেন তছনছ হয়ে গেছে চোখের পালকে। যে মেয়ে বাবার সবচেয়ে আদরের ছিল আজকে সেই মেয়েকে সেই বাবা দেখতে চায় না। এর থেকে কষ্টের আর কি হতে পারে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here