মিশে_আছি_তোমাতে ❤ #Nusrat_Jahan_Bristy #Part_6

0
237

#মিশে_আছি_তোমাতে ❤
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_6

“এই যে দেখো তোমার মা রান্না ঘরে কাজ করছে আর তোমার বাবা মনমরা হয়ে বসে আছে তোমার জন্য। এটা দেখার বিষয় না বিষয়টা হলো তুমি যদি বউ না সাজো আজকে তাহলে তোমার বাবা মাকে আমার লোকেরা শুট করবে। ওই যে দেখছো লোকগুলোকে ওদের হাতে একটা করে গান আছে যদি তুমি বউ না সাজো তাহলে ওরা আমার অর্ডার পাওয়ার সাথে সাথে তোমার বাবা মাকে শুট করবে।”

তিশা আবিরের কথা শুনে চমকে আবিরের দিকে তাকায়। আবির মুচকি হেসে বলে, “ভয় পেয়ো না সুইটহার্ট তুমি যদি বউ সাজো বিশ্বাস করো ওদের গায়ে কেউ একটা ফুলের টুকাও দিতে পারবে না।”

তিশা কপাল কুচকে বলে, “এত বাজে আপনি এতটা! কাজটা আপনি একদম ঠিক করছেন না মিস্টার আবির রহমান এর দাম কিন্তু আপনাকে দিতে হবে।”

“ওকে জান আমি দাম দিয়ে দিবো। তুমি বরং চুপচাপ বউ সেজে ফেলো।”

তিশা এতটা রেগে গেছে যে রাগে কারণে নাক মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। আবির প্যান্টের পকেটে ফোনটা ঢুকাতে ঢুকাতে বলে।

“আমি এখন আসি সুইটহার্ট তোমাকে বউ সাজতে হেল্প করার জন্য কয়েক জনকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।”

আবির দু কদম চলে গিয়ে আবারও তিশা দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে, “সরি জান আমি এটা করতে চাই নি কিন্তু তুমি যে বড্ড জেদি যার জন্য আমাকে এসব বাধ্য হয়ে করতে হলো।”

হঠাৎ করে আবিরের ফোনে একটা কল আসে আবির ফোনটা পিক করে বলে, “হ্যালো! ”

ফোনের ওপর পাশ থেকে বলে, “হ্যালো স্যার নিবর স্যারকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে।”

“হোয়াট? এটা কি করে হলো? তোমরা থাকতে এত বড় অঘটন হলো কি করে?

“স্যার আসলে নিবর স্যার তো আমাদেরকে ফাঁকি দিয়ে অন্য রাস্তায় চলে গিয়েছিল আর এখন রাস্তার মাঝে এসে দেখি নিবর স্যারের গাড়ি আর লোকজনের কাছ থেকে জেনেছি যে নিবর স্যারকে নাকি পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে।”

“ঠিক আছে আমি এক্ষুনি আসছি।”

আবির তাড়াতাড়ি করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। আর এদিকে তিশা চিন্তায় পরে যায় কি এমন হলো যে এত তাড়াতাড়ি করে আবির বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।

________

আবির যত দ্রুত পারে গাড়ি ড্রাইভ করে পুলিশ স্টেশনে পৌঁছায়। পুলিশ স্টেশনে আবিরকে দেখে সবাই কিছুটা অবাক হয়ে যায়। আবির সোজা ওসি সাহেবের কাছে গিয়ে বলে।

“আমার ভাই কোথায়?”

থানার ওসি আবিরকে দেখে তাড়াতাড়ি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “একি স্যার আপনি এখানে আমাকে বলতেন আমি নিজেই চলে যেতাম আপনার কাছে।”

“আমার ভাই কোথায় সেটা আগে বলুন?”

ওসি সাহেব অবাক হলে বলেন, “আপনার ভাই মানে!”

“হে আমার ভাই যাকে আপনার এখানে তুলে নিয়ে এসেছেন।”

“ভাইয়া আমি এখানে।”

নিরবের গলায় স্বরে শুনতে পেয়ে আবির পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে নিরব বসে আছে একটা কাঠের ব্রেঞ্চে। আবির তাড়াতাড়ি করে নিরবের কাছে গিয়ে বলে।

“নিবর তুই এখানে আসলি কি করে? আর কি এমন হয়েছে যার জন্য পুলিশ তোকে ধরে নিয়ে এসেছে?”

এর মাঝে ওসি সাহেব বলেন, “স্যার আমি বলছি, আসলে স্যার একটা বড় ভুল হয়ে গেছে একটা মেয়ে ফোন করে বলেছে যে ওনি নাকি রাস্তায় খুব জোরে গাড়ি চালাচ্ছেন যার জন্য রাস্তার সব মানুষের অসুবিধা হচ্ছে তাই আমার ওনাকে ধরে নিয়ে এসেছি এখানে তবে ওনাকে আমি লকআপে ঢুকাই নি।”

আবির শান্ত গলায় বলে, “নিবর কি হয়েছিল বলতো আমাকে?”

নিবর দাঁড়িয়ে বলে, “আরে ভাইয়া আমার গাড়ির সামনে হঠাৎ করে একট মেয়ে চলে এসেছিল ভাগ্যিস আমি তাড়াতাড়ি ব্রেক করাতে বেঁচে গেছে।”

আবির ভাইকে কিছু বলতে গিয়েও কিছু বলে না। সবার সামনে ভাইকর বকাটা ঠিক হবে না তাই নরম গলায় বলে, “ঠিক আছে তুই যা গাড়িতে গিয়ে বস।”

ওসি সাহেব বলেন, “হে স্যার ওনাকে নিয়ে যান আপনার সাথে।”

আবির গম্ভীর গলায় ওসিকে শাসানোর স্বরে বলে, “নেক্সট টাইম সবকিছু জেনে শুনে তারপর একজনকে ধরে নিয়ে আসবেন ওকে। কথাটা যেন মনে থাকে।

ওসি সাহেব মুচকি হেসে বলেন, “হে! স্যার মনে থাকবে আমার।

“গুড! আর হে সন্ধ্যায় আমার বিয়ে নিশ্চয়ই জানেন সেটা। তাই সন্ধায় তাড়াতাড়ি চলে আসবেন এখন আমি আসি।”

“ওকে স্যার।”

আবির চলে যাওয়ার সাথে সাথে ওসি সাহেব চেয়ার বসে ধপ করে বসে টেবিলের উপর রাখা পানির গ্লাস নিয়ে একদমে সবটা পানি খেয়ে ফেলে।

_______

নিরব আবিরের আদরের ছোট ভাই। বাবা মা মারা যাওয়ার পর আপন বলতে আবিরের শুধু মাত্র নিরবেই আর কেউ নয়। তাই তো এতটা উদগ্রীব হয়ে পড়েছিল নিরবের জন্য।

আবির গাড়ি ড্রাইভ করছে আর পাশেই নিরব বসে আছে। আবির নিরবের দিকে তাকিয়ে দেখে নিবর কিছু একটা নিয়ে ভাবছে।

“কি ভাবছিস?”

“মেয়েটা এত কেন সুন্দর? আমি তো প্রেমেই পড়ে গেছি ভাইয়া।”

আনমনে মুখ ফুসকে বেরিয়ে যায় কথাটা নিরবের মুখ থেকে। আবির সাথে সাথে গাড়ি ব্রেক করে বলে।

“কি বললি তুই?”

নিবর আমতা আমতা করে বলে, “কই কিছু না তো!”

আবির চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলে, “নিবর সত্যি কথা বল আমাকে।”

নিবর মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে, “না মানে ভাইয়া।”

“বুঝেছি বাংলাদেশে এসেই প্রেমে পড়ে গেছিস তাই তো। ঠিক আছে নো প্রবলেম তোর বিয়েটা আমি দিয়ে দেব যার প্রেমে তুই পড়েছিস তার সাথে। এখন আপাতত আমরা বাড়ি যাই কেমন।”

“হে ভাইয়া চলো।”

“আচ্ছা ভাইয়া তুমি বলেছিলে আমি বিদেশ থেকে ফিরে আসার পর তুমি আমাকে একটা সারপ্রাইজ দিবে সেটা কি?”

আবির ড্রাইভ করতে করতে বলে, “আগে তুই বাড়ি তো চল তারপর সারপ্রাইজ দিবো। এর আগেই যদি সবকিছু বলে দেই তাহলে সারপ্রাইজটা তো আর সারপ্রাইজ থাকে না তাই না।”

নিরব জোরে শ্বাস ফেলে বলে, “ঠিক আছে আগে বাড়ি যাই তারপরেই সারপ্রাইজটা দেখাবো না হয় আমি।”

আবির আর নিরব রহমান ভিলাতে এসে পৌঁছায়। নিরব গাড়ি থেকে বের হয়ে তো পুরাই অবাক হয়ে যায় বাড়ি সাজানো দেখে।

“একি ভাইয়া বাড়িটা এত সুন্দর করে সাজানো হয়েছে কেন?? তাহলে এটাই কি তোমার সারপ্রাইজ!”

“না রে তোর সারপ্রাইজ ভেতরে আছে এখন তুই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে কিছু খাবার খেয়ে রেডি হয়ে নে একটু পরেই অনুষ্টান শুরু হবে।”

“ভাইয়া আমি কিছুই‌ বুঝতে পারছি‌ না।”

আবির ভাইয়ের কাঁধে হাত রেখে বলে, “তোকে এখন কিছু বুঝতে হবে না। তুই গিয়ে রেডি হ।”

“ঠিক আছে।”

________

সন্ধ্যায় হয়ে গেছে সব গেস্টরাও এসে পড়েছে। শুধু তিশার বাড়ি থেকে কেউ‌ আসে নি আবির গাড়ি পাঠিয়ে ছিল‌ তিশার বাড়িতে তিশার বাবা, মা আর বোনকে আনার জন্য কিন্তু ওরা গাড়ি ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে।

নিরব আবিরের কাছে এসে বলে, “ভাইয়া অনেকক্ষন তো হয়ে গেলো আমার সারপ্রাইজটা কোথায় বলো তো?”

“একটু ওয়েট কর তোর সারপ্রাইজ এসে পড়বে।”

আবির ঘাড় বাকিয়ে সিঁড়ির দিকে তাকাতেই দেখে তিশা নামছে। তিশাকে দেখে আবিরের ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসির রেখা ফোটে উঠে।

তিশা লাল টুকটুকে একটা লেহেঙ্গা পড়েছে, মুখে হালকা মেকাপ, ঠোঁটে হালকা লাল লিপস্টিক, চোখে গাঢ় করে কাজল দিয়েছে, নাকে নথ পড়াতে যেন একটু বেশিই সুন্দর লাগছে তিশাকে। দু হাত ভর্তি চুড়ি, খোপাতে বেলি ফুলের মালা, কানের দু সাইডে কিছু চুল ফেলে রেখেছে। তিশাকে আজকে ভীষণ মিষ্টি লাগছে কিন্তু আফসোস তিশার মুখের ওই মিষ্টি হাসিটা নেই। যেই হাসিটাতে তিশাকে আরও বেশি মিষ্টি আর সুন্দর লাগতো।

নিরব আস্তে করে বলে, “ভাইয়া ওনি কে?”

আবির তিশার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে বলে, “তোর ভাবি।”

নিরব চোখ বড় বড় করে বলে, “হোয়াট? তুমি বিয়ে করছো আজকে আর আমাকে এখন বলছো।”

“আরে এটাই তো তোর সারপ্রাইজ সবসময় বলতি না আমি যাতে বিয়ে করি তাই তো বিয়ে করছি।”

“এটা খুব খারাপ হলো ভাইয়া। তুমি আমাকে এখন বলছো তোমার বিয়ে আজকে আমি কিন্তু খুব রাগ করেছি তোমার উপরে।”

“আচ্ছা আচ্ছা বাবা আমার ভুল হয়ে গেছে সরি এই দেখ কান ধরছি।”

“হুম ঠিক আছে।”

আবির গিয়ে তিশার পাশে দাঁড়ায়। তিশা আবিরকে দেখে দুরে সরে যেতে চাইলে আবির তিশার হাত ধরে তিশার কান বরাবর নিচু হয়ে বলে।

“কোথায় যাচ্ছো সুইটহার্ট আমাকে ছেড়ে?”

তিশা দাঁতে দাঁত চেপে বলে, “আমার হাত ছাড়ুন।”

“ঠিক আছে ছেড়ে দিব কিন্তু আমার পাশে থেকে তুমি এক পাও নড়বে না।”

“আপনার পাশে দাঁড়াতে আমার গা ঘিনঘিন করছে বুঝলেন।”

আবির অবাক হওয়ার ভান ধরে বলে, “ও মা তাই বুঝি।”

“আমার হাতটা ছাড়ুন বলছি।”

“ঠিক আছে ছেড়ে দিছি কিন্তু এর পর কিন্তু আমার হাত থেকে ছাড়া পাবে না সুইটহার্ট।”

আবির আর তিশাকে এক সাথে মুখোমুখি বসানো হয় কিন্তু কেউ কারো মুখ দেখতে পাচ্ছে না কারন দুজনের মাঝখানে সাদা কাপড় টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কাজী আসে বিয়ে পড়ানোর জন্য তিশার কাছে কিন্তু তিশা কবুল বলছেই না। কখন থেকে কাজী বলেই যাচ্ছে কবুল বলার জন্য কিন্তু তিশা তব্দা হয়ে বসে আছে।

আবির তিশার কার্যকলাপ দেখে তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে একজনকে তিশার কাছে একটা ফোন দিয়ে পাঠায়। তিশা ফোন ওপেন করে দেখে একটা মেসেজ।

“সুইটহার্ট তুমি এখন যদি তিন কবুল না বলো তাহলে নিশ্চয়ই তুমি বুঝতে পারছো আমি কি করবো। তাই প্লিজ জান আমাকে এমন কিছু করতে বাধ্য করো না।”

তিশার আর বুঝতে বাকি রইলো এটা কার মেসেজ? আর এটাও বুঝতে পারছে আবির কিসের কথা বলছে। তাই তিশা ওর বাবা, মা আর বোনের সুরক্ষার কথা ভেবে কাজী সাহেব কবুল বলার জন্য তিশাকে আবার বলাতে তিশা সাথে সাথে কাঁপাকাঁপা গলায় বলতে শুরু করে।

“ক…. বু…. ল ক…. বুল…. ক… বু… ল…।”

তিশা খুব কষ্ট করে তিন বার কবুল বলে। না চাইতেও দু চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে নোনা জল। আবির সব রকম ভাবে তিশাকে নিজের জীবনের সাথে জুড়ে ফেলে। আইনগত ভাবে তো আগেই তিশাকে স্ত্রী রুপে গ্রহণ করেছিল এবার শরিয়ত মোতাবেক ভাবে তিশাকে নিজের অর্ধাঙ্গিনী রুপে গ্রহণ করে নিয়েছে আবির।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here