মিশে_আছি_তোমাতে ❤ #Nusrat_Jahan_Bristy #Part_7

0
116

#মিশে_আছি_তোমাতে ❤
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_7

তিশা ফুল দিয়ে সাজানো খাটে বসে আছে। চোখে মুখে ফুটে আছে আবিরের প্রতি রাজ্যের সকল আক্রোশ। কিছুক্ষন পরেই আবির ঘরে আসে তিশা আবিরের দিকে রাগী চোখে তাকায়। আবির তিশার রাগী চাওনি দেখে মুচকি হেসে খাটে এসে বসে তিশার হাতটা ধরতে যাবে সাথে সাথে তিশা খাট থেকে নেমে বলে।

“একদম র্স্পশ করবেন না আমাকে আপনার ওই‌ নোংরা হাত দিয়ে।”

আবির নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলে, “নোংরা হাত আমার কোথায় জান? আমার হাত তো একদম পরিস্কার।”

“দেখতে পরিস্কার কিন্তু আপনার ওই হাতের ইশারাতে আমার বাবা মা আর বোনের মু’ত্যৃর কথা হয়েছে।”

আবির উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “আরে ওই‌টা তো আমি তোমাকে ভয় দেখিয়েছি যাতে তুমি আমাকে সবার সামনে বিয়ে করো।”

“বাহ খুব ভালো কাজ করেছেন আপনি আমাকে বিয়ে করে। মনে হচ্ছে যেন আকাশের চাঁদ পেয়ে গেছেন।”

আবির ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বলে, “চাঁদ তো আমি অনেক আগেই পেয়ে গেছি এখন শুধু সেই চাঁদকে ধরার অপেক্ষা।”

কথাটা বলে আবির তিশার দিকে এক পা এক পা করে এগিয়ে আসে আর তিশা পিছিয়ে যাচ্ছে আর বলছে।

“কি করেছেন আপনি? একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না।”

আবির ভ্রু উঁচু করে বলে, “কেন কাছে আসবো না? তুমি আমার বিয়ে করা বউ তাহলে তো তোমার কাছে আসতেই পারি সে অধিকারটা আমার আছে।”

“আমি বলছি আপনি ওখানেই থেমে যান।”

তিশা পিছাতে পিছাতে আলমারির সাথে আটকে যায়। আবির তিশার অনেকটা কাছে চলে আসে। এক জন আরেক জনের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে। তিশা পাশ কেটে চলে যেতে চাইলে আবির তিশার দুপাশে হাত রেখে তিশাকে আটকে দেয়। তিশা কন্ঠে তেজ এনে বলে।

“আপনি অসভ্যতামি করছেন মিস্টার আবির? নিজের লিমিটের ভেতরে থাকেন।”

আবির তিশার ঠোঁটের দিকে নিজের মুখ এগিয়ে নেয়। তিশা ঠোঁট দুটো চেপে ধরে মুখের ভেতরে নিয়ে নেয়। না চাইতেও তিশা নিজের দু চোখ বন্ধ করে ফেলে। প্রায় অনেকক্ষন হয়ে যায় তিশা কোনো কিছুর অনুভব না পেয়ে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে আবির তিশার এক হাত দুরে‌ দাঁড়িয়ে আছে। আবির নিজের দু ভ্রু নাচিয়ে বলে।

“কি ভেবেছিলেন মিসেস? আপনাকে আমি কিস করবো? চিন্তা করো না আমি এতটাও খারাপ না যে নিজের বউয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে তাকে কিস করবো। তোমার জন্য একটা গিফট এনেছি।”

তিশা থমথমে গলায় বলে, “কিসের গিফট? আমি আপনার কাছ থেকে কোনো গিফট টিফট নিবো না বুঝেছেন। এখন শুধু একটাই চিন্তা আমার এই বাড়ি থেকে আমি কখন বের হতে পারবো সারাজীবনের জন্য।”

“তুমি কোনো দিনও এই বাড়ি থেকে বের হতে পারবে না যতক্ষন না আমি চাইবো।”

“ওও তাই নাকি! তার মানে বলতে চাইছেন আপনি আমি এই বাড়ি থেকে বের হতে পারবো না।”

“না আমার অনুমতি ছাড়া এই বাড়ি থেকে কোনো মশা মাছিও বের হতে পারে না আর তুমি বের হবে কি করে জান?”

তিশা শব্দ করে হেসে বলে, “হাস্যকর কথাবার্তা! মশা মাছিও নাকি ওনার অনুমতি ছাড়া বের হতে পারবে না এই বাড়ি থেকে। তা বলছি আপনার কথা মেনে চলে নাকি এই মশা মাছির দল।”

আবির দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে। মানে এই মেয়ের সাথে যে সে কথায় পেরে উঠবে না এই টুকু বুঝে গেছে। ও যদি হয় বুনো ওল তো এই মেয়ে বাঘা তেতুল। আবির দু কাঁধ নাচিয়ে বলে।

“ওইটা তো কথার কথা বললাম জাস্ট। এটাতে ভুল ধরার কি আছে আজব।”

“আপনার পুরো জীবনটা ভুলে ভরা বুঝলেন।”

আবির ম্লান হেসে বলে, “তাহলে ভুল গুলা শুধরে দাও আমার।”

তিশা কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “এই বাড়িতে থাকার কোনো ইচ্ছে নেই আমার আর আমি আপনার ভুল শুধরাবো। স্বপ্ন দেখতে থাকেন মিস্টার এই বাড়িতে আমি বেশি দিন থাকব না খুব জলদি এখান থেকে বের হব।”

আবির চুলগুলা ব্যাক ব্রাশ করে বলে, “বাই এনি চান্স তুমি কি কোনো ভাবে আমাকে চ্যালেঞ্জ করছো?”

“হুম আপনাকে আমি চ্যালেঞ্জ করছি ২৪ ঘন্টার ভেতরে আমি এই বাড়ি থেকে বের হব।”

“ভেবে বলছো বলত।”

“হুম ভেবেই বলছি।”

“ঠিক আছে তোমার চ্যালেঞ্জ একসেপ্ট করলাম আমি। তুমি যদি এই ২৪ ঘন্টার ভেতরে এই বাড়ি থেকে বের হতে পারো তাহলে আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি তোমাকে আমার জীবন থেকে সারাজীবনের জন্য দুরে সরিয়ে দিব। কিন্তু তুমি যদি এই ২৪ ঘন্টার মধ্যে বাড়ি থেকে বের হতে না পারো তাহলে তুমি কি করবে?”

“আমিও আপনাকে কথা দিচ্ছি আমি যদি এই ২৪ ঘন্টার মধ্যে যদি এই বাড়ি থেকে বের হতে না পারি তাহলে সারাজীবন আমি এই বাড়িতেই থাকব কোনো দিন আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো না।”

“ওয়াও! এই তো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি আমি তো ভাবছিলাম তোমাকে কি করে এই বাড়িতে আটকে রাখতে পারি আর সেই তুমি কি না এমন শর্ত দিয়ে বসলে। তাহলে তুমি ধরেই রাখো তুমি এই বাড়ি থেকে বের হতে পারবে না।”

“এটা তো এখন বুঝা যাবে না মিস্টার আবির রহমান। আমি এই বাড়ি থেকে বের হতে পারবো নাকি পারবো না। এটা তো ২৪ ঘন্টা পর বুঝা যাবে আর আপনার কথাটা আপনার মগজে রাখবেন যে আমি এই বাড়ি থেকে বের হতে পারলে আপনি কি করবেন?”

“আবির রহমান যাকে একবার কথা দেয় সেটা অব্যশই রক্ষা করে। কিন্তু তোমার বাড়ি থেকে বের হওয়ার পরেই আমি কথাটা রাখব এর আগে নয়। এখন গিয়ে শুয়ে পড়ো রাত অনেক হয়েছে এখন তো আর বাড়ি থেকে বের হতে পারবে না অনেক রাত হয়ে গেছে তাই গিয়ে শুয়ে পড়ো।”

আবির কথা বলে সোফাতে গিয়ে শুয়ে পড়ে। তিশা ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে চলে যায়।

________

সকালে আযানের ধ্বনি শুনে তিশার ঘুম ভাঙ্গে। তিশা সোফাতে তাকিয়ে দেখে আবির নেই।

“গেলো কোথায় বজ্জাতটা? জাহা ন্নামে যাক তাতে আমার কি আমি বরং ওযু করে নামাজটা পড়ে নেই।”

তিশা ওযু করে জায়নামাজ ফ্লোরে বিছিয়ে নামাজ আদায় করে নেয়। নামাজ পড়ে তিশা সবসময়ের মতোই‌ বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়িয়। তিশা নিচের দিকে তাকাতেই দেখে আবির আর একটা ছেলে মাথায় টুপি পড়ে বাড়িতে ডুকছে। তিশা ভ্রু কুচকে বলে।

“বাবা বজ্জাতটা নামাজও পড়ে মসজিদে গিয়ে এত ভালো কিন্তু সাথে ওই ছেলেটা কে আবার?”

আবির ঘরে ঢুকে দেখে তিশা ঘরে নেই। আবির চিন্তায় পড়ে যায় এত সকালে তিশা বাড়ি থেকে চলে যায় নিতো। আবির ঘর থেকে বের হতে যাবে এমন সময় তিশা কাশি দিয়ে উঠে। তিশার কাশির শব্দটা শুনে আবির স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। তিশার কাশিটা যেন বেড়েই চলছে।

তিশার মুখের সামনে হঠাৎ করে কেউ একজন পানির বোতল ধরে তিশা তাকিয়ে দেখে আবির। তিশা আবিরের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আবির তা দেখে বলে।

“আমার উপর রাগ করে নিজেকে কষ্ট দিবে না তাই পানিটা খেয়ে নাও প্লিজ।”

তিশা আবিরের কাছ থেকে পানির বোতলটা নিয়ে পানি খেয়ে বলে, “ধন্যবাদ পানি দেওয়ার জন্য।”

আবির অবাক হওয়ার ভান ধরে বলে, “বাবা তুমি দেখা যায় ধন্যবাদও দিতে জানো।”

তিশা কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “এই আপনার প্রবলেম কি বলুন তো? আমাকে একটু একা থাকতে দিন।”

“ঠিক আছে ঠিক আছে এতে এত রাগ দেখানোর কি হলো? আর এটা কি ভেবেছো কি করে বাড়ি থেকে বের হবে?”

তিশা আবিরের দিকে তাকিয়ে চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলে, “আমাকে কি আপনার লুলা মনে হয়?”

আবির হতভম্ব হয়ে বলে, “মানে।”

“এই যে জিঙ্গেস করলেন কি করে বাড়ি থেকে বের হব? আমি আমার সুন্দর পা দুটো দিয়ে হেঁটে হেঁটে বের হব এই বাড়ি থেকে।”

আবির নিঃশব্দে হাসে। আবির তো জিঙ্গেস করছে কোনো প্ল্যান করেছে কিনা এই বাড়ি থেকে বের হওয়ার। আর তিশা কিনা আবিরের কথার মানে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে গেল। আবির আবার বলে।

“আমি বলতে চাইছি কোনো প্ল্যান করেছো কি না এই বাড়ি থেকে বের হওয়ার। মানে বাড়ির চারপাশে তো গার্ড আছে তাই আর কি।”

“আমি যদি কোনো প্ল্যান করেও থাকি তাহলে সেটা আমি আপনাকে বলতে যাবো কেন?”

আবির মাথা নাড়িয়ে বলে, “ওওও এটাও তো একটা কথা। ঠিক আছে বলো না।”

আবির যেতে চাইলে তিশা আবিরকে ডাক দেয়, “শুনুন?”

“হুম বলো।”

“ওই ছেলেটা কে?”

“কোন ছেলেটা?”

“যেই ছেলেটার সাথে আপনি একটু আগে বাড়িতে ঢুকলেন সেই ছেলেটা।”

“ওও আচ্ছা! তার মানে তুমি আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে উপর থেকে দেখছিলে তাই তো।”

“এই যে শুনুন আমার এত শখ নেই যে আপনাকে দেখবো তাও আবার লুকিয়ে লুকিয়ে।”

“শখ নেই তোমার আমাকে দেখার তাই তো। একদিন তুমি আমাকে চোখে হারাবে। এক মুহূর্তও তুমি আমাকে না দেখে থাকতেই পারবে না।”

“সে গুড়ে বালি। এটা কোনো দিন হবে না যে আমি আপনাকে চোখে হারাবো। আমি আপনাকে দু চোখে দেখতে পারি না বুঝতে পেরেছেন। তাই আমি আজকে যে করেই হোক এই বাড়ি থেকে বের হবই হব।”

“ঠিক‌ আছে দেখা যাবে‌ মিসেস তিশা। আর ওই ছেলেটার সাথে তোমাকে আমি পরে পরিচয় করে দিবো কেমন? এখন আমার খুব ঘুম পাচ্ছে যাই একটু ঘুমাই গিয়ে।”

“এখন আবার কিসের ঘুম তাও আবার সকালে।”

আবির তিশার কথার পাত্তা না দিয়ে বিছানাতে গিয়ে শুয়ে পড়ে। এই মেয়ের সাথে কথা বললেই কথা বাড়বে। তার চেয়ে ভাল ঘুমিয়ে সময়টা পাড় করা। রাতে একটুও ঘুমাতে পারে নি আবির।

_______

ব্রেকফাস্ট করার জন্য নিরব অনেকক্ষণ ধরে ডায়নিং টেবিলে বসে আছে কিন্তু আবিরের কোনো দেখা নাই। নিরব বিড়বিড় করে বলে।

“ভাইয়া বিয়ে করে পুরাই গেছে আমি যে ছোট ভাই হয়ে অপেক্ষা করছি কখন থেকে তার কোনো মুল্যই নেই ওনার কাছে।”

“কিরে একা একা কি বিড়বিড় করচ্ছিস?”

ডায়নিং টেবিলের কাছে আসতে আসতে কথাটা বলে আবির। নিরব কপট রাগ দেখিয়ে বলে।

“এতক্ষণে তোমার আসার সময় হলো ভাইয়া।”

“আরে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তাই একটু লেইট হয়ে গেল।”

নিরব তিশাকে আসতে দেখে বলে, “গুড মর্নিং ভাবি।”

তিশা মুচকি হেসে বলে, “গুড মর্নিং।”

আবির বলে, “আচ্ছা তিশা তোমার সাথে আমার ছোট ভাইটার পরিচয় করে দেই। ও হলো নিরব রহমান আমার একমাত্র আদরের ছোট ভাই। ও এতদিন বিদেশে ছিল পড়াশোনার জন্য গতকালকে দেশে ফিরেছে আর এখন থেকে ও আমাদের সাথেই থাকবে।”

তিশা হাসি হাসি মুখে বলে, “ওওওও।”

কিন্তু মনে মনে বলে, “ও থাকুক বা না থাকুক তাতে আমার কি? আমি তো আজকে চলেই যাবো এই বাড়ি থেকে।”

আবির, তিশা আর নিরব খাওয়া শুরু করে। নিরব খাওয়া শেষ করে বলে, “আচ্ছা ভাইয়া শুনো আমাকে একটু বের হতে হবে। অনেক দিন পরে দেশে ফিরেছি তো তাই বুন্ধরা সবাই মিলে একটা পার্টি রেখেছে তাই আজকে ফিরতে হয়তো আমার রাত হয়ে যাবে।”

“আচ্ছা যা তবে গার্ড আর ড্রাইভার নিয়ে যাবি সাথে করে।”

“আচ্ছ! তাহলে আমি আসি।”

“আচ্ছা সাবধানে যাস।”

আবির তিশাকে লক্ষ্য করে দেখে তিশা খাচ্ছে না আর একজন কাজের মহিলার দিকে একনজরে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে। আবির তা দেখে বলে।

“তিশা খাচ্ছো না কেন?”

তিশা নিজের ঘোর থেকে ফিরে এসে বলে, “কি হয়েছে?”

“বলছি খাচ্ছো না কেন?”

“আমার ইচ্ছে আমি খাই বা না খাই তাতে আপনার কি?”

আবির সব সার্ভেন্টদের ইশারায় বলে এখান থেকে চলে যেতে। সবাই চলে যেতেই আবির তিশার হাত ধরে নিজের কোলে এনে বসায়। ঘটনাটা এতটা তাড়াতাড়ি হয়েছে যে তিশা বুঝে উঠতে পারে নি। তিশা চিৎকার করে বলে।

“আরে এসব কি করছেন আপনি? ছাড়ুন আমাকে।”

তিশা উঠতে চাইলে আবির তিশার কোমড় চেপে ধরে। তিশা আবিরের হাত থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করা শুরু করে দেয়।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here