সে_আমার_চিত্তমহলের_প্রেয়সী #সাবিকুন্নাহার_সুমী #রাজনীতি+রোমান্টিক #পর্ব:১৪

0
572

#সে_আমার_চিত্তমহলের_প্রেয়সী
#সাবিকুন্নাহার_সুমী
#রাজনীতি+রোমান্টিক
#পর্ব:১৪
(🚫দয়া করে কেউ কপি করবেন না। কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ 🚫)
—-আনজারার এক দূর সম্পর্কের চাচা অ*সুস্থ। সেই, ব্যাক্তিকে দেখার জন্য তার বাবা,মা দুজনেই সিলেট যাবেন । সাইফুদ্দীন সিকদার বোন,ভগ্নিপতিকে ট্রেনে উঠিয়ে দিয়ে আদরের ভাগ্নিকে সাথে করে সিকদার বাড়িতে নিয়ে এসেছেন। সাইফুদ্দীন সিকদার বাড়ির সদর দরজার কলিং বেল টিপ দিতেই মরিয়ম বেগম দরজা খোলে দিলেন।
আনজারা মামিকে দেখে জড়িয়ে ধরে। মরিয়ম বেগম হাসিমুখে আনজারাকে বলে,
~ফ্রেশ হয়ে আগে রাতের খাবার খাও।তারপর, একসাথে গল্প করবো।

সাইফুদ্দীন সিকদার ও ভাগ্নিকে তাড়া দিলেন।
~তোর মামি ঠিকই বলেছে আগে খাওয়া -দাওয়া তারপর গল্পগুজব।
আনজারা হাসিমুখে বলে,
~ঠিক আছে মামা যাচ্ছি।

আনজারা ধীরপায়ে সিঁড়ি দিয়ে নিজের নির্ধারিত রুমে প্রবেশ করে। ফ্রেশ হয়ে মামা,মামি সকলের সাথে রাতের খাবার খায়।আনজারা আসার পর থেকে সুয়ারেজ এর সাথে দেখা হয়নি।সুয়ারেজ বাড়িতে না থাকায় আনজারা কিছুটা স্বস্তি পায়।সে মামি,মামির সাথে অল্প সময় গল্প-গুজব করে নিজের রুমে চলে আসে।
পরিপাটি বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই দরজায় কেউ করা*ঘাত করে।আনজারা বি’র’ক্তি’তে চ-কারান্ত শব্দ করে। বালিশের পাশ থেকে ওড়না নিয়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে দরজা খোলে দেয় সে।দরজার বাহিরে সুয়ারেজদের বাড়ির কেয়ারটেকার আর দারোয়ান দাঁড়িয়ে আছে। তাদের হাতে দুইটা বিশাল আকৃতির গিফট বক্স।আনজারা কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

আনজারা কণ্ঠে উৎকন্ঠা নিয়ে তাদেরকে জিজ্ঞেস করল,
~চাচা আপনারা?আর এসব কি?

তারা, কিছু বলবে তার আগেই সুয়ারেজ হেলেদুলে আনজারার সামনে এসে দাঁড়ায়। সুয়ারেজের উপস্থিতিতে আনজারা বি*রক্তিতি চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। সুয়ারেজ চোখ দিয়ে ইশারা দিলে লোকগুলো আনজারার অনুমতি ছাড়াই তার রুমে গিফট বক্সগুলো রেখে মাথা নত করে বের হয়ে যায়।

আনজারা রাগা*ন্বিত স্বরে সুয়ারেজকে বলে,
~আবার কি নাটক শুরু করেছো ভাইয়া?

সুয়ারেজ দরজার সামনে দাঁড়িয়েই উত্তর দিলো,
~তোমার জন্য সামান্য উপহার এনেছি।শুনেছি ভালোবাসার মানুষকে উপহার দিতে হয়।

সুয়ারেজের মুখে তুমি, ভালোবাসার মানুষ সম্বোধন আনজারার একদম পছন্দ হলোনা।

আনজারা কাট*কাট কণ্ঠে বলে,
~এসব উপহার নিয়ে আমার চোখের সামনে থেকে যাও ভাইয়া।

সুয়ারেজ আনজারারর আপাদমস্তক একবার চোখ বুলিয়ে দেখল।ঠোঁট কা*মড়ে হাসি দিলো সে।

~কেন পছন্দ হয়নি?নাকি তোর এমপি তোকে আরও দামি উপহার দেয়?যার লো*ভে পড়ে একজন বিবাহিত পুরুষের সাথে অ*বাধে মেলামেশা করিস।

সুয়ারেজের মুখে এধরনের ঘৃ*ণ্য কথা শোনে আনজারা ক্ষি*প্র চোখ সুয়ারেজের দিকে তাকায়।

সুয়ারেজের ডান গালে সশব্দে থা*প্পড় বসিয়ে দিয়ে তেজী কণ্ঠে আনজারা বলে ওঠে,
~তোর মতো জানো*য়ারকে সম্মানের আসনে বসিয়েছিলাম।মুখোশধারী শয়*তান।আমার চোখের সামনে যেন তোকে আর না দেখি।

আনজারা রাগে ফুঁ*সছে।
সুয়ারেজ গালে হাত দিয়ে গা দুলিয়ে হেসে উঠল।
আনজারা সুয়ারেজের বাম গালে আরেকটা থা*প্পড় দিয়ে সশ*ব্দে দরজা আটকিয়ে দিলো।সুয়ারেজ একটা পৈশা*চিক হাসি দিলো।আনজারার রুমের ডানপাশে সাইফুদ্দীন সিকদারের রুম।সেই রুমের করিডোর থেকে সম্পূর্ণ দৃশ্য মরিয়ম বেগম স্বচক্ষে দেখলেন।
__________________

সিকদার বাড়ির দোতালার ড্রয়িং রুমের সোফায় মুখোমুখি বসে আছে সুয়ারেজ আর তার বাবা।সাইফুদ্দীন সিকদার এর পাশের সোফাটা দখল করে বসেছে মরিয়ম বেগম।

সাইফুদ্দীন রা*গান্বিত স্বরে বললেন,
~তোমার মতো লাফা*ঙ্গার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আমি কখনোই আয়েশা আর মাহমুদের নিকট যেতে পারবনা।

মরিয়ম বেগম ছেলে আর স্বামীর দিকে ম্লানমুখে তাকিয়ে আছে।

নিজের বাবার মুখে নিজের সম্পর্কে ক*টু কথা শোনে সুয়ারেজের চোয়াল শক্ত হল।রাগে তার মস্তি*ষ্কের দুইপাশের র*গ দপদপ করছে।সুয়ারেজের ইচ্ছে হলো বাপের বুক বরাবর লা*থি দিতে।পরক্ষণে, নিজের বাপ বলে ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রাখল।মরিয়ম বেগম নিশ্চুপ।

সুয়ারেজ তেজী কন্ঠে বলে,
~তোমাকে বলেছি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেতে তুমি নিয়ে যাবে।নয়,অন্য পন্থায় তোমার ভাগ্নিকে বিয়ে করতে আমি বাধ্য হবো।এতে, তোমার বোন,বোনজামাইয়ের সম্মান ন*ষ্ট হলেও হতে পারে।
__________________

সিলেট থেকে আয়েশা বেগম, মাহমুদ সাহেব আসতেই স্বপরিবারে সাইফুদ্দীন বোনের বাড়িতে আসেন ।অনেকদিন পর ভাই তার পরিবার নিয়ে নিজের বাড়িতে আসায় আয়েশা বেগম ও অনেক খুশি হয়েছেন।ড্রয়িংরুমের সব-কয়টা সোফা দখল করে তারা বসেছেন।মাহমুদ সাহেব কলেজ থেকে এখনো আসেননি।আনজারা মীরাদের বাসায় গিয়েছে।
সাইফুদ্দীন কোন ভনিতা ছাড়াই বোনের নিকট সুয়ারেজের সাথে আনজারার বিয়ের প্রস্তাব রাখেন। আয়েশা বেগমের মুখ জ্বলজ্বল করে উঠে। সুয়ারেজের আচার, ব্যবহার তার সর্বদাই মন কাড়ে।এমন এক সুদর্শন ছেলেকে মেয়ের জামাই হিসেবে পাওয়া যেন হাতে চাঁদ পাওয়ার সমান। ভাতিজার সাথে মেয়ের বিয়ে হলে মেয়ে সুখে,শান্তিতে থাকবে। আর, যখন খুশি তখন মেয়ের কাছে যেতে পারবে এই খুশিতে আয়েশা বেগম স্বামী, মেয়ের মতামত না নিয়েই ভাইয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করেন।

~ভাই সুয়ারেজ আমার ছেলের মতো। ছোটবেলা থেকে ও আমার চোখের সামনে বড় হয়েছে। মাঝে দশবছর হয়তো আমাদের দেখা হয়নি তবুও ভাতিজা আমার কাছে সোনার টুকরো ছেলে।আমি ভাই এই বিয়েতে রাজি।

সুয়ারেজের মাথা নত। মনে মনে সে এক পৈশা*চিক হাসি দিলো।নাদমানের কাছে জিতে যাওয়ার আনন্দে তার আজ উল্লাস করতে মন চাচ্ছে।

সাইফুদ্দীন হাসিমুখে বললেন,
~মাহমুদ আসলেই বিয়ের দিনক্ষণ নিয়ে আলোচনা করবো।কি বলিস আয়েশা?

আয়েশা সম্মতিসূচক মাথা নাড়ায়
~ঠিক আছে ভাই।

আয়েশা বেগম সুয়ারেজের দিকে তাকালেন। আসার পর থেকে ভাতিজা তার লাজুক মুখভঙ্গিতে মাথা নত করে বসে আছে। আয়েশা বেগম প্রশান্তির হাসি দিলেন। ভাতিজা তার একদম মায়ের মতো লাজুক হয়েছে। এই,ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে হলে মেয়ের সুখের কমতি থাকবে না। এসব ভেবেই আয়েশা বেগম হাসলেন।

মরিয়ম বেগম ম্লান হেসে আয়েশা বেগমকে বললেন,
~আনজারার মতামত না নিয়ে বিয়েতে আগানো কি ঠিক হবে আয়েশা?

সুয়ারেজ ক্রোধা*ন্বিত দৃষ্টিতে মার দিকে তাকালো।যেন সে চোখের দৃষ্টিতেই মরিয়ম বেগমকে ভ*ষ্ম করে দিবে।সঠিক সময়ে সঠিক কথা বলা যেন তার মায়ের স্বভাবে পরিণত হয়েছে। মনে মনে সে প্রচন্ড বি*রক্ত হলো।সুয়ারেজ এবার নড়েচড়ে বসলো। এবার নিশ্চুপ থাকলে তার মা সবটা ঘে’টে দিবে।

সুয়ারেজ নমনীয় কণ্ঠে মরিয়ম বেগমকে বললেন,
~আম্মু আনজারা ফুপির হ্যাঁ তে হ্যাঁ বলে জানোই তো।আমি নিশ্চিত আনজারা বিয়েতে রাজি হবে।

মরিয়ম বেগম ছেলের দিকে আ*হত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।

সাইফুদ্দীন গলা খাঁ*কারি দিয়ে বললেন,
~সেটাই আনজারা মা রাজি হবে আমিও নিশ্চিত।

সরল মনের আয়েশা বেগম মনে মনে ভেবেই নিয়েছেন। সুয়ারেজ তার মেয়েকে পছন্দ করে। তাই, হয়তো কণ্ঠে এতো দৃঢ়তা।
____________

বন্ধ দরজার আড়ালে মাহমুদ আর আয়েশার ঠান্ডা যু*দ্ধ চলছে। মাহমুদ সাহেব আজ তার সহধর্মিণীর প্রতি খুব অসন্তুষ্ট।তার মেয়ের মতামত না নিয়ে তার স্ত্রী বিয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করার ব্যাপারটা সে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেনা।বাবা,মা হিসেবে মেয়ের মতামতকে প্রাধান্য না দিয়ে বারবার তারা বিয়েতে রাজি হচ্ছে। এভাবে, মেয়েকে জোর করে বিয়ে দেওয়া খুবই ঘৃ*ণিত কর্মকান্ড। সে বাবা হিসেবে খুবই লজ্জিত।

মাহমুদ সাহেব স্ত্রীর মতামতের পক্ষ*পাতিত্ব করে বললেন,
~আয়েশা বরাবর তোমার মতামতকে আমি প্রাধান্য দিয়েছি।তোমার মতামত বরাবর প্রশংসনীয় ছিল।তবে, আনজারার মতামত না নিয়ে এভাবে বিয়েতে সম্মতি দেওয়া তোমার ঠিক হয়নি।এখনও, সময় আছে ভাইজানকে না করে দাও।

আয়েশা বেগম ব*জ্র কণ্ঠে স্বামীকে বললেন,
~আমার মেয়ের সুখের চিন্তা করেই আমি বিয়েতে রাজি হয়েছি।আর আমি নিশ্চিত আপনার মেয়েও এই বিয়েতে রাজি হবে।আনজারার উপর আমার ভরসা আছে।

মাহমুদ সাহেব স্ত্রীকে বললেন,
আনজারা আমার নিকট অন্যের আমানত।আমি তাকে কথা দিয়েছি তার সাথেই আনজারার বিয়ে হবে।এতগুলো বছর সঠিক সময়ের জন্য ছেলেটা অপেক্ষা করেছে।আর, তুমি সবটাই ঘেটে দিয়েছো।এটা তোমার থেকে আশা করে নি আয়েশা।

আয়েশা তাচ্ছি*ল্যের স্বরে বললেন,
~জন্মের পর থেকে মেয়েকে খাইয়ে, পড়িয়ে বড় করেছি।আর, সেই নাকি অন্যের আমানত!আর কত সঠিক সময়ের অপেক্ষা করবে সেই ছেলে?

পাশের রুমে নিরবে অশ্রু বিসর্জন দেওয়া মেয়েটির কানে কিছুই পৌঁছাল না।
_______
আয়েশা বেগমের সাথে রাগা*রাগি করে মাহমুদ সাহেব বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন।আনজারা কল দিয়ে অনুরোধ করলে মধ্যরাতে মাহমুদ সাহেব বাসায় আসেন। পুরো ড্রয়িংরুম থম*থমে মাহমুদ সাহেব সোফায় বসে আছেন। আনজারা দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় কাঁপা*কাঁপা কণ্ঠে মাহমুদ সাহেবকে বললেন,
~বাবা আমি বিয়েতে রাজি।মামার সাথে বিয়ের দিনক্ষণ নিয়ে কথা বলতে পারো।

আনজারা চোখের কার্নিশে দুফোঁটা তরল জমা হলো।একসময় তা গড়িয়ে পড়ল গাল বেয়ে।মাহমুদ সাহেব মেয়ের দিকে আ*হত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। পর্দার আড়াল থেকে আয়েশা বেগম তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেন।মেয়ে তার অনুরোধ রেখেছে। মাহমুদ সাহেব ঝগ*ড়া করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর আয়েশা বেগম মেয়ের ঘরে আসেন।আনজারা বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে একদৃষ্টে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে আছে। কারও পায়ের আওয়াজে আনজারা পাশ ফিরে তাকায়।আনজারার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আয়েশা বেগম গলা খাঁকারি দিয়ে খাটে বসেন।আয়েশা বেগম বুকভরা আশা নিয়ে মেয়ের হাতটা ধরেন।আনজারা শোয়া থেকে উঠে বসে।

আয়েশা বেগম কান্নাভেজা কণ্ঠে মেয়েকে বললেন,
~ আমি তোর মামাকে কথা দিয়েছি মা।তুই না করিস না মা। তুই বিয়েতে রাজি হয়ে যা। আমাকে ফিরিয়ে দিস না।

আনজারা আহ*ত দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকাল। একজন নোং*রা মনমানসিকতার পুরুষকে বিয়ে করার জন্য তার মা তাকে অনুরোধ করছে।আনজারা তাচ্ছি*ল্যের হাসি হাসল।আনজারা একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে আয়েশা বেগমের দিকে।যাকে মনপ্রাণে ভালোবাসলো তার থেকে ফিরে আসার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা সে করছে।আর, যাকে ঘৃ*ণা করে তাকে বিয়ে করার জন্য তার মা তার কাছে অনুরোধ করছে।

আয়েশা বেগম আবারও কান্না ভেজা কণ্ঠে বললেন,
~সুয়ারেজ তোকে সুখে রাখবে মা।

মায়ের মন রক্ষার্থে আনজারা অস্ফুটস্বরে বলে,
~আমি বিয়েতে রাজি।
মায়ের অনুরোধে আনজারা মনের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়েতে রাজি হয়।
__________
ক্লা*ন্ত, অব*সাদ দেহটা নিয়ে রাত দশটায় বাসায় ফিরে নাদমান। হাতে তার বেশ কয়েকটা শপিং ব্যাগ। তামিম গাড়ি থেকে নেমে গিয়েছে। তার নাকি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে মনটা আনচান আনচান করছে। কলিং টিপ দিতেই জেসমিন দরজা খুলে দিলো।

নাদমান ম্লান হেসে বলে,
~স্বর্ণভা কি ঘুমিয়েছে?

জেসমিন বির*ক্ত কণ্ঠে বলে,
~আর বইলেন না ভাইজান ঘুমন্ত বাচ্চাটা নাবহান ভাইয়ের বকব*কানিতে ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে।

নাদমান আর বাক্যব্যয় করল না।ধীরপায়ে ভিতরে প্রবেশ করল। সকলেই নিচতলার ড্রয়িং রুমে বসে আছে।নাদমানকে দেখে দৌড়ে সাহিম আসলো।ভাইয়ের হাতে শপিং ব্যাগ দেখে সে বোঝে গিয়েছে ভাই তাদের জন্য আজ শপিং করেছে।ড্রয়িংরুমের সবাই নাদমানের দিকে তাকিয়ে আছে। সবার মুখ খুশিতে চকচক করছে।রাজিয়া ছেলের দিকে ক্ষি*প্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। একের পর এক মেয়েকে রিজেক্ট করছে নাদমান। সেজন্য রাজিয়া ছেলের প্রতি বির*ক্ত।সাহিম নাদমানের হাত থেকে শপিং ব্যাগগুলো নিলো।

সাহিম কণ্ঠে উৎকন্ঠা নিয়ে নাদমানকে জিজ্ঞেস করল,
~ভাইয়া আমার জন্য সাদা পাঞ্জাবি এনেছো।

নাদমানের নির্লিপ্ত উত্তর,
~হুম
নাইসা ও ভাইকে জিজ্ঞেস করল,
~আমার জন্য নীল শাড়ি এনেছো ভাইয়া।
~তোদের সবার জন্যই এনেছি।

নাইসা,বাড়ির সকলেই খুশি হলো।
নয়ন তালুকদার আড়চোখে তাকিয়ে আছে নাদমানের দিকে।

সীমা ছেলেকে ধ*মক দিয়ে বলল,
~ছেলেটাকে ফ্রেশ হওয়ার সময়টুকু দে বাপ।তারপর না বির*ক্ত করিস।

সাহিম শপিং ব্যাগগুলো সেন্টার টেবিলের উপর রেখে আবারও সোফায় বসলো।

কবির গলা খাঁকা*রি দিয়ে বলে,
~তাড়াতাড়ি আসিস নাদমান । অনেকদিন পর সকলে আজ এক সাথে খাবো।
_______
নাদমান হেলেদুলে সিঁড়ি ভেঙে দোতলায় উঠলো।দোতলার করিডোরে আসতেই নাবহানের মুখোমুখি হলো নাদমান।

নাবহানের কোলে স্বর্ণভা।
~ ছোট বাবাই আমি বাবাইয়ের কোলে যাব।নাবহান নিষেধ করে বলে,।
~না মামনি তোমার বাবাই বাহির থেকে এসেছে। আগে, ফ্রেশ হবে তারপর কোলে নিবে তোমাকে। তোমার বাবাইয়ের শরীরে অনেক জীবাণু।

স্বর্ণভা ভা*বুক দৃষ্টিতে নাবহানকে বলল,
~কিন্তু,ছোট বাবাই তুমি যে বাহির থেকে এসেই আমাকে কোলে নাও। তখন, তোমার শরীরে জীবাণু থাকেনা।

নাবহান কেঁশে উঠলো এভাবে তাকে ফাঁ*সিয়ে দেওয়ার মানে আছে।
নাদমান কট*মট দৃষ্টিতে নাবহানের দিকে তাকিয়ে আছে। নাবহান দাঁত কেলানো হাসি দিয়ে বলে,
~দুষ্ট ছেলে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?

নাদমান ভাইয়ের দিকে এগিয়ে আসল।

~স্বর্ণভাকে আম্মুর কাছে দিয়ে আয়।আর চুপচাপ আমার রুমে আসবি।
___________
নাদমান ফ্রেশ হয়ে স্বর্ণভাকে খাবার খাওয়ালো।খাবার খাওয়ার পরপর স্বর্ণভা ঘুমিয়ে গিয়েছে। নাদমান এসে সোফায় বসলো। নাদমানের উপস্থিতি টের পেয়ে নয়ন তালুকদার সোফা থেকে উঠে দাঁড়াল।
দোতলায় যাওয়ার জন্য সিঁড়িতে পা রাখলো সে।

নাদমান বিদ্রুপের স্বরে বলল,
~এতোসময় তো দিব্যি বসে ছিলেন। আমি বসতেই মুখ লুকিয়ে চলে যাচ্ছেন কেন?

নয়ন তালুকদার কাট*কাট বললেন,
~তোমার মতো নি*র্লজ্জ, বেয়া*দব ছেলের চেহারা দেখার ইচ্ছে আমার নেই।

সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

নাদমান কণ্ঠে গাম্ভীর্য এনে বলে,
~আমার চেহারা দেখতে হবে না। সাহিম,নাইসা আর আপনার বাধ্যগত ছেলে নাবহানের চেহারাটা দেখার জন্য হলেও এখানে বসতে পারেন।

নাবহান ভাইয়ের দিকে তাকাল। মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,
~আর বাধ্যগত।

কবির তালুকদার বুঝতে পারলেন এখনি বাপ,ছেলেকে না থামালে একজন, আরেকজনকে খোঁ*চা দিতেই থাকবে। তাই তিনি তাড়া দিলেন,

~নাদমান বাবা আমার খিদে পেয়েছে চল খেতে বসি।
নাদমান শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাবার দিকে।
রাজিয়া রাগমিশ্রিত কন্ঠে বললেন,
~কবির তুমি তোমার ভাতিজাকে জিজ্ঞেস কর।
আমাকে আর কত পাত্রীপক্ষের সামনে অপমানিত করবে? সে কি বিয়ে করবেনা।

নাদমানের নির্লিপ্ত উত্তর,
~হুট করে একদিন আমার বউ নিয়ে আসবো। তাই,আম্মু আর বিয়ে বিয়ে করো না।নাবহানকে বিয়ে করাতে পারো।

নাবহান চিৎকার দিয়ে বলল,
~তুই বিয়ে করবিনা ভালো কথা। আমাকে নিয়ে পড়েছিস কেন?

সাহিম নাইসার কানে ফিসফিস করে বলে,
~আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলের বিয়ে নিয়ে কারও টেনশন নেই।

~একদম কানের নিচে দিবো।তুই হ্যান্ডসাম!আয়নায় আধও চেহারা দেখিস?

তখনি বাড়ির সদর দরজা দিয়ে হেলেদুলে প্রবেশ করে তামিম। নয়ন তালুকদার তামিমের দিকে তাকিয়ে বাজ*খাই কণ্ঠে বলল,
~ বখাটেপনা শেষ করে এই মধ্যরাতে তোমার ফেরার সময় হয়েছে?
তামিম আহাম্মক বনে গেলো।চোখের চশমাটা ঠেলে নাকের উপরে রাখল।
~আংকেল আমি এমপি নাদমান সাইক তালুকদার এর লোক বখাটেপনা করি না।ডিরেক্ট মারা*মারি করি।
নাইসা ঘরকাঁপিয়ে হেসে উঠল।সকলের দৃষ্টি তার দিকে। সীমা তালুকদার রান্নাঘর থেকে তাড়া দিলেন,
~তাড়াতাড়ি খেতে বসেন।আমার ঘুম পেয়েছে।
________

ভার্সিটি ক্যাম্পাসে বসে আছে বন্ধুমহল।সকলেই কৌ*তুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আনজারার দিকে। অহনা আনজারার বিয়ের কার্ডটা একবার ভালো করে দেখল।
সে কণ্ঠে উৎকন্ঠা নিয়ে আনজারাকে বলল,
~হঠাৎ বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গেলি?

আনজারার কাট*কাট উত্তর,
~বিয়েতো হঠাৎ করেই করে। তবুও আমি তোদের চারদিন আগে ইনভাইট করেছি।

আনজারাকে দেখে বুঝার উপায় নেই শুধু মায়ের মন রক্ষার্থে মনের বিরুদ্ধে সে এই বিয়েতে রাজি হয়েছে।

মাহাদ বিরক্ত নিয়ে বলে,
~কত নারীর হৃদয় পুড়*বে ধলা বিলাইয়ের বিয়ের দিন।এখনই, নাকে গ*ন্ধ পাচ্ছি। শত হলেও সে কিছু লু*চ্চা নারীর ক্রাশ।
বলেই মীরার দিকে তাকাল।
মীরা মুখ ভেংচি দিলো।

আয়মানের ঠোঁটের কোণে হাসি বিদ্যমান।
~তুই আবার ঐ সুয়ারেজের সাথে রিলিস করা শুরু করিস না।তাহলে, নগদে তোকে ব্লক করে দিবো।

আনজারা কট*মট দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আয়মানের দিকে।
মীরা কণ্ঠে উৎকন্ঠা নিয়ে বলল,
~তুই কি আধও মন থেকে রাাজি হয়েছিস দোস্ত।
আনজারা মলিন মুখে মীরাকে বলল,
~এতো প্রশ্ন করিস কেন?বিয়েতে আসতে বলেছি আসবি।
______________

তাড়াহুড়ো করে বৃষ্টিতে ভিজে নাদমানের পার্টি অফিসে প্রবেশ করে কবির।নাদমান দলের ছেলেদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং করছে।চাচার হঠাৎ আগমনে নাদমান তার দিকে কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকাল। কবিরের মুখশ্রীতে অস্থিরতা।

চিন্তিত মুখ নিয়ে সে নাদমানকে বলল,
~তোর সাথে কথা ছিলো।

~পাঁচমিনিট ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করো।মিটিং শেষ করে কথা বলছি।

কবির বাক্যব্যয় না করে চুপচাপ ওয়েটিং রুমে নাদমানের জন্য অপেক্ষা করে। মিটিং শেষ করে নাদমান কবিরকে ডাকে।

~ছোট আব্বু কিছু বলবে?

কবির চিন্তিত মুখে বলে,
~সুয়ারেজের সাথে আনজারার দুইদিন পর বিয়ে। আর তুমি চুপচাপ বসে আছো?

নাদমান কু*টিল হাসল,
~চুপচাপ বসে থাকবো কেন ছোট আব্বু?বিয়েতে যাওয়ার প্রিপারেশন নিচ্ছি।তুমিও রেডি হয়ে থেকো।অভিভাবক হিসেবে তুমিই তো প্রধান সাক্ষি হবে।

__________
সিকদার বাড়ির আনাচে কানাচে বিয়ের আমেজ।সুয়ারেজ হাসি মুখে চাপানো দরজা ঠেলে নিজ রুমে প্রবেশ করল। ফুলের সুভাস নিঃশ্বাসের সাথে টেনে নিলো সে।তারই ঘরে তারই খাটে লেহেঙ্গা পরিহিত তার বিয়ে করা বউ আনজারা মাথায় ঘোমটা দিয়ে বসা।সুয়ারেজ একটা পৈশা*চিক হাসি দিয়ে দরজার সিটকিনি লাগালো।তীক্ষ্ম চোখে পুরো রুমে তাকাল সে।পুরো রুমে ফুলের ছড়াছড়ি।ফুল*শয্যার পুরো খাট নানারকম কাঁচা ফুলে সাজানো হয়েছে। সুয়ারেজ শেরওয়ানির বোতাম গুলো খুলে শেরওয়ানিটা ছুঁড়ে ফেলে দিলো।
দুইহাতে আনজারার ঘোমটা তুলে গা দুলিয়ে হেসে উঠলো সুয়ারেজ ।

সুয়ারেজ বিদ্রুপ কণ্ঠে বলল,
~এতো তে*জ দেখিয়ে কি লাভ হলো?সেইতো আমার শয্যা*সঙ্গি হতে হলো তোকে।

আনজারা পিটপিট চোখে তাকিয়ে আছে তার সামনের ব্যাক্তিটির দিকে।লজ্জায় তার ঠোঁট তিরতির করে কাঁপ*ছে।
সুয়ারেজ ধীরে ধীরে আনজারার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আচমকা আনজারা তার শাড়ির আঁচলের নিচে লুকায়িত জুতা দিয়ে সুয়ারেজের গালে এলোপাতাড়ি মা*রতে থাকলো।
গালে হাত দিয়ে ধড়ফড়িয়ে শোয়া থেকে উঠে বসল সুয়ারেজ। আশেপাশে তাকিয়ে দেখল মেঝেতে বসে আছে সে।আশেপাশে তাকিয়ে দেখল ঘরে ফুলের ছিটাফোঁটা ও নেই।
সুয়ারেজ কিছু মুহূর্তে সময় নিয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করল।এতক্ষণ, সে স্বপ্ন দেখছিল তবে!গতকাল রাতে নে*শার ঘোরে মেঝেকে বিছানা ভেবে সে ঘুমিয়ে গিয়েছিল।

চলবে______
(আজকের পর্ব কেমন হয়েছে সে সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করতে ভুলবেন না।ভুলগুলো কমেন্টে লিখবেন। বেশি বেশি শেয়ার করবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here