সে_আমার_চিত্তমহলের_প্রেয়সী #সাবিকুন্নাহার_সুমী #ক্যাটাগরি:রাজনীতি +রোমান্টিক #সূচনা পর্ব।

0
643

#সে_আমার_চিত্তমহলের_প্রেয়সী
#সাবিকুন্নাহার_সুমী
#ক্যাটাগরি:রাজনীতি +রোমান্টিক
#সূচনা পর্ব।
(কেউ কপি করবেন না। কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।)

~সারাজীবন কুমারী থাকব।তবুও আপনার মতো এক বাচ্চার বাপকে বিয়ে করব না।আপনার লজ্জা হওয়া উচিত মি. নাদমান সাইক তালুকদার। তিন মাসের বাচ্চা কোলে নিয়ে,ড্যাং ড্যাং করে বিয়ে করতে চলে এসেছেন।আপনি কি ভেবেছেন?আপনি এই শহরের একজন নামকরা রাজনীতিবিদ বলে আপনার বাচ্চা থাকা সত্ত্বেও আমি আপনাকে বিয়ে করবো?কখনোই না।
তাই বলছি দয়া করে এই বিয়েতে আপনি রাজি হবেন না।

—–মনের ক্ষোভ নিয়ে,
সম্পূর্ণ কথা গুলো বলে শেষ করে আনজারা মাহমুদ ।তার সম্মুখে দন্ডায়মান নাদমান সাইক তালুকদার। একজন স্বনামধন্য রাজনীতিবিদ।ভার্সিটি লাইফ থেকেই ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত ছিল নাদমান সাইক তালুকদার। রাজনীতির প্রতি তার আমূল ঝোঁক।অসহায় মানুষের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়া।তাদের সাধ্যমতো সাহায্য সহযোগীতা করা তার এক গভীর নে*শা।তার মা রাজিয়া তালুকদার এর জোর**জবর**দস্তিতেই আজ সে পাত্রী দেখতে এসেছিল। কথা ছিল আজই বিয়ে হবে নাদমান আর আনজারার। কথাবার্তার একপর্যায়ে আনজারা সরাসরি সকলের উদ্দেশ্য বলল, সে নাদমানের সাথে আলাদা কথা বলবে।আর রুমে প্রবেশ করতে না করতেই আনজারা নাদমানকে এতগুলো কথা বলল। নাদমানের কোলে তিনমাসের ফুটফুটে এক মেয়ে বাচ্চা।বাচ্চাটি গভীর তন্দ্রায় আচ্ছন্ন। নাদমান সাইক তালুকদার অতি স্নেহের সাথে বাচ্চাটির কপালে চুমু দিল।
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আনজারার দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নাদমান।

কয়েক মূহুর্ত সময় নিয়ে, আনজারার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষন করল নাদমান। লম্বায় আনুমানিক পাঁচফুট চার ইঞ্চি হবে,গলুমলু শরীর, কাঁধ পর্যন্ত চুল, গোলাপের পাঁপড়ির মতো পাতলা ঠোঁট,উজ্জ্বল ফর্সা বর্ণের আনজারার চেহারাটা মায়াবী। পরনে হালকা আকাশী রংয়ের শাড়ি,চোখে সরু কাজল, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, এককথায় অপ্সরা।
বয়স কত হবে? কেবলই আঠারোতে পা দিল।অথচ তার কথার তে*জ দেখে নাদমান অবাক হল।আজ পর্যন্ত তার সামনে কেউ এত তে*জ দেখিয়ে কথা বলে নাই।অথচ তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অষ্টাদশী তাকে তে*জ দেখিয়ে কথা বলল!

গুরুগম্ভীর ব্যাক্তিত্বের নাদমান, আনজারাকে উদ্দেশ্য করে তপ্ত কন্ঠে বলল,
~এই বেয়া*দব মেয়ে বিয়ে করবেন না,সেটা আপনার মাথা মোটা বাবাকে বলতে পারলেন না।আমাকে পারসোনালি ডেকে এনে বলছেন কেন?

আনজারা শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুঁজে, নাদমানের দিকে নিজের অনামিকা আঙ্গুল উঁচিয়ে বলল,
~আপনার সাহ*স-তো কম নয়!আমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আপনি আমাকেই বেয়া*দব বলছেন?আবার আমার আব্বুকেও মাথামোটা বললেন?
আনজারার কথায় নাদমানের কোলের বাচ্চাটি নড়েচড়ে উঠল।সে নিজের বাম হাত বাচ্চাটির বুকের উপরে রাখল,যেন বাচ্চাটির ঘুম ভেঙে না যায়

আনজারার দিকে বির*ক্ত হয়ে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল,
~একদম চিৎ*কার করবেন না।আমার মেয়ে ঘুৃম থেকে জেগে গেলে।এক থাপ্প*ড়ে আপনার নিঃশ্বাস বন্ধ করে দিব।আর এখানের সাহসের কি আছে আপনি বেয়া*দবই।নিজের আট বছরের বড় কারও সামনে আঙুল উঁচিয়ে কথা বলছেন! এটাকে বেয়াদ**বি ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে?

নাদমানের কথায় আনজারা বিরক্ত চোখে অন্যদিকে ঘুরে তাকাল।

নাদমান আবারও থেমে বলল,
~আর একজন বেয়া*দবের নিকট থেকে কখনোই, আমার মেয়ে আদবকায়দা শিখবেনা।তাই এই বিয়ে ক্যান্সেল।

বিয়ে ক্যান্সেল এই কথা শুনে আনজারার চোখমুখে হাসির ঝলক দেখা দিল।

~আর আপনার বাবা-তো মাথামোটা-ই নিজের মেয়ের মতামত না নিয়ে। মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়েছেন।

কথা শেষ করে নাদমান আর একমিনিট ও আনজারার রুমে অবস্থান করলনা।তাড়াহুড়ো করে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
আর আনজারা মনে মনে কয়েকটা গা*লি দিল নাদমানকে।আনজারা দুই হাত দুই দিকে পাখির ডানার মতো করে রুমের এ পাশ থেকে ঐপাশে দৌড়াতে লাগল।বিয়ে ভাঙতে পেরে সে খুবই আনন্দিত।
নাদমান মেয়েকে কোলে নিয়ে আনজারাদের ড্রয়িং রুমের সোফায় বসল। ড্রয়িং রুমে আরও অনেকেই আছে।
নাদমানের মা রাজিয়া তালুকদার, আনজারার বাবা মাহমুদ সাহেব, আনজারার মা আয়েশা বেগম।

নাদমান আয়েশা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল,
~আন্টি স্বর্ণভাকে একটু শোয়ার ব্যবস্থা করে দিবেন।অনেকক্ষণ হয়েছে ঘুমিয়েছে।

আয়েশা বেগম মুচকি হাসল। নাদমানকে উদ্দেশ্য করে বলল,
~হ্যাঁ বাবা আমার কোলে দাও আমি স্বর্ণভাকে, আনজারার রুমে দিয়ে আসি।

একথা বলেই আয়েশা বেগম হাত বাড়িয়ে নাদমানের কোল থেকে, স্বর্ণভাকে কোলে নিল।

আনজারার খাটে স্বর্ণভাকে শোয়ানো হল।আনজারা ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নিজের খাটে স্বর্ণভাকে দেখে মুচকি হাসল।আনজারা তোয়ালে বারান্দার রশিতে মেলে দিয়ে রুমে এসে খাটের উপর বসল।একনজরে স্বর্ণভার দিকে তাকিয়ে তার মনে হলো।একটা সাদা হাওয়াই মিঠাই তার বিছানায়।

আনজারা, স্বর্ণভার কপালে চুমু দিয়ে ফিসফিস করে বলল,
~এই হাওয়াই মিঠাই। তোর বাবাকে বিয়ে না করার কারণ ছিল, আমি আগে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।তুই -তো একটা অজুহাত ছিলি কেবল।তোর মতো একটা হাওয়াই মিঠাই এর মা হওয়াতো ভাগ্যের ব্যাপার।

আনজারার মনে কিছু প্রশ্নের উদয় হল,
নাদমান সাইক তালুকদার এর স্ত্রী সম্পর্কে তার বাবা,মা তো তাকে কিছু বলল না।কি এমন হল যে,তিনমাসের বাচ্চা থাকার পর নাদমান সাইক তালুকদার বিয়ে করতে এসেছে? কিন্তু, প্রশ্নের উত্তর তার জানা নেই।
ফিসফিস করে কথা বললেও স্বর্ণভা ঘুম থেকে জেগে গেল।ঘুম থেকে উঠেই ট্যা ট্যা করে ঠোঁট ভেঙ্গে কান্না করা শুরু করল। আনজারা পরম স্নেহে স্বর্ণভাকে দুইহাতে পাঁজাকোলে তুলে নিল।

নাদমান শান্তদৃষ্টিতে সকলের দিকে তাকাল। মাহমুদ সাহেব এর দিকে তাকিয়ে বলল,
~আংকেল আপনার সাথে আমার কিছু প্রয়োজনীয় কথা ছিল। আপনি যদি অনুমতি দেন তাহলে আপনাকে কিছু প্রশ্ন করব।

মাহমুদ সাহেব ভ্রু কুঁচকে নাদমানের দিকে তাকাল।

পরক্ষণে নিজেকে স্বাভাবিক করে নাদমানকে বলল,
~হ্যাঁ বাবা হাজারটা প্রশ্ন কর।

নাদমান সিনা টান করে হেলান দিয়ে সোফায় বসল।শীতল কন্ঠে মাহমুদ সাহেবকে প্রশ্ন করল।
~আমার সাথে আপনার মেয়েকে বিয়ে দিতে আপনি কোন কারণে রাজি হয়েছেন? নিজ থেকে রাজি হয়েছেন? নাকি আম্মুর মন রক্ষার্থে রাজি হয়েছেন?

নাদমানের প্রশ্নে রাজিয়া তালুকদার বি*রক্ত হল। পরক্ষণে নাদমানের বিচক্ষণতার কথা মনে পড়ে । আর তার ছেলে যে প্রতিটি কাজ যাচাই -বাছাই করে সামনে আগায় রাজিয়া তালুকদার খুব ভালো করে জানে।তাই তার বিরক্তমুখশ্রী স্বাভাবিক হল। নাদমানের করা প্রশ্নে মাহমুদ সাহেব মনে মনে কথা গোছাল।নাদমানকে সে কয়েকবছর আগে থেকেই চিনে।কোন না কোন দিক দিয়ে নাদমানের পরিবার তাদের আত্মীয় হয়।নাদমানের আচার,আচরণ, কথাবার্তা,চালচলন, সবকিছুই মনোমুগ্ধকর। প্রতিটি বাবা,মাই চায় তাদের মেয়ে এমন একটা ছেলের জীবনসঙ্গী হোক।আর তা যদি হয় স্বয়ং নাদমান সাইক তালুকদার তাহলে যেকোন বাবাই নিজেদের মেয়েকে তার হাতে তুলে দিতে বাধ্য।এখানে কারও মন রক্ষার কোন কারণ নেই।

মাহমুদ সাহেব নিজেকে ধাতস্থ করে প্রশ্নের উত্তর দিল।
~আমি নিজ থেকেই রাজি হয়েছি বাবা।

নাদমান নিজের গাম্ভীর্যভাব বিদ্যামান রেখে বলল,
~আংকেল আমি সদ্য মাষ্টার্স কমপ্লিট করেছি।চাকরি বা ফ্যামিলি বিজনেস কোন কিছুতেই জয়েন করব না।আমি সম্পূর্নরুপে নিজের মনোযোগ রাজনীতিতে দিতে চাই। আমি রাতে ঠিকমতো বাড়িতে আসবনা।সেই সাথে জীবন বাজি নিয়ে মিটিং, মিছিলতো আছেই। আমার বর্তমান, ভবিষ্যৎ সম্পূর্নই আমার সাধারণ জনগণের জন্যে,সাথে আমার মেয়েতো আছেই।তা আমাকে আপনার মেয়ের জামাই হিসেবে মানতে পারবেন?

এবার মাহমুদ সাহেব ভড়কালো।এভাবে-তো সে কখনোই চিন্তা করে দেখে নাই।একজন রাজনীতিবিদের জীবনের কি গ্যারান্টি আছে?তার মেয়ের ভবিষ্যৎই বা কি হবে?মাহমুদ সাহেব এবার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলনা।অসহায় দৃষ্টিতে নাদমানের দিকে তাকাল।

আমতা আমতা করে তবুও বলল,
~আমার বিশ্বাস তুমি তোমার পরিবার, রাজনীতি দুটোই সামলাতে পারবে।

নাদমানের গাম্ভীর্য মুখশ্রীতে এবার তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠেছে ।
~কিন্তু আংকেল সেটা কিন্তু আপনার মেয়ে বুঝবে না।একদিন, দুইদিন স্বাভাবিক ভাবে নিবে।তার বয়সটাই আবেগের আংকেল। বিয়ের রাত থেকেই অন্যের সন্তান লালন-পালন, নিজের স্বামী পরিবারে সময় না দিতে পারাটাকে সে কিন্তু স্বাভাবিকভাবে নিবেনা।তাই আংকেল বলছি নিজের মতামতকে অন্যের উপর জোর করে চাপিয়ে দিবেন না।আনজারার মতামত নিয়ে আপনার বিয়েতে রাজি হওয়া উচিত ছিল।কিন্তু আপনি সেটা বোধ হয় করেন নি।

মাহমুদ সাহেব এর মুখশ্রীতে অপ*রাধবোধ জাগ্রত হল।
সে-তো সত্যিই মেয়ের মতামত না নিয়েই বিয়েতে রাজি হয়েছে।

নাদমান হাসি মুখে মাহমুদ সাহেবকে বলল,
~আজ আসি আংকেল।

রাজিয়া তালুকদার ছেলের উপর রাগা*ন্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
কি বলছিস তুই এসব?তুই বিয়ে করবি না মানে?

নাদমান মায়ের বলল,
~বিয়ে আজ করব না এটা বলেছি।কখনোই যে করবনা এটা বলি নাই। আনজারাকে সময় দেওয়া উচিত। সে যদি কখনো মনে করে সে আমাকে বিয়ে করবে।তাহলে বিয়ে করব।
আর উনি যদি অন্য কাউকে বিয়ে করতে চান তাহলে অন্য কাউকে করবে।

রাজিয়া তালুকদার ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল,
~ততোদিন কি তুমি অপেক্ষায় থাকবে?

~আমি আপাতত বিয়ে করছিনা আম্মু। প্লিজ বিয়ে এই অধ্যায় টা বাদ দাও।

রাজিয়া তালুকদার ছেলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল।বাসায় গিয়ে সে আবার মেয়ে দেখবে।এটাই সে মনে মনে স্থির করল।
সকলের থেকে বিদায় নিয়ে নাদমান আনজারাদের বাসা থেকে বের হল।
যাওয়ার পূর্বে মাহমুদ সাহেবের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলল,
~আপনার নিকট চির কৃতজ্ঞ থাকব আংকেল। আমার জীবনের চির সত্যিটা আপনি আপনার মেয়ের নিকট ও গোপন করেছেন।
******
চারবছর পর,,,,,,,

সাভারের এক বিশাল বড় কলেজ মাঠে,বিশাল জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। মাঠভর্তি হাজার হাজার লোক অপেক্ষা করছে। সদ্য সংসদ নির্বাচনে বিপুলভোটে জয় লাভ করা ঢাকা১৯ আসনের সংসদ সদস্য নাদমান সাইক তালুকদার এর ভাষণ শোনার জন্য। (শিল্পাঞ্চল,সাভার,আশুলিয়া নিয়ে গঠিত ঢাকা ১৯ আসন।)ছোট, বড়,মধ্যবয়সী, বায়োজৈষ্ঠ নারী পুরুষ সকলেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে,তাদের এমপি নাদমান সাইক তালুকদারকে একনজর দেখবে বলে।সকলের অপেক্ষার পালা শেষ হয়।শুভ্র পাঞ্জাবি, পায়জামা পরিহিত এক সুঠাম দেহের, শ্যামবর্ণের পুরুষ স্টেইজে দাঁড়িয়ে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে,
সকলের উদ্দেশ্য বলিষ্ঠ কন্ঠে বলে উঠে,
~আসসালামু আলাইকুম।
আমার সম্মানিত আমার প্রাণপ্রিয় ভাইবোনেরা।

উপস্থিত সকল জনগণ স্টেইজে দাঁড়িয়ে থাকা এমপির সালামের উত্তর দেয়।
আপনাদের সকলকে আমার অন্তরের অন্তস্তল থেকে জানাই প্রাণঢালা ভালোবাসা।আজকে আপনাদের ভালোবাসা আমি নাদমান সাইক তালুকদার এখানে দাঁড়িয়ে আছি।আপনাদের ভালোবাসায় আজ আমি একজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি।আজ থেকে আমি যেন আপনাদের সুখ,দুঃখের সঙ্গী হতে পারি ।আপনাদের বিশ্বাসের মর্যাদা যেন রক্ষা করতে পারি। আমার জন্য সেই দোয়া করবেন। আপনারা আমাকে বিশ্বাস করে এই আসনে জয় লাভ করিয়েছেন।আমার দ্বারা আপনাদের উপকার ছাড়া অপকার যেন না হয় সে দোয়া করবেন। সকলেই মনোযোগ দিয়ে তাদের এমপির ভাষণ শোনছে।

****
সুঠাম দেহের, লম্বাটে চেহারার, এক সুদর্শন পুরুষ চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে। তার চোখ জোড়া বন্ধ।কালো রংয়ের পাঞ্জাবির সব গুলো বোতাম খোলা। মাথার উসকোখুসকো চুল গুলো অযত্নে কপালে পড়ে আছে।ফর্সা শরীরে কালো পাঞ্জাবি অত্যন্ত সুন্দর লাগছে পুরুষটিকে।যেকোন মেয়ে প্রথম দেখাতেই এই সুদর্শন পুরুষটিকে বলিউড,বা হলিউড বা তাদের পছন্দসই নায়কের সাথে তুলনা করে বসবে।নাদমান সাইক তালুকদার এর ভাষণ পুরুষটির শ্রবণ গ্রন্থিতে প্রবেশের সাথে সাথে পুরুষটি গা দুলিয়ে হেসে উঠছে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রাফানের চোয়াল শক্ত হয়ে আসছে। হাতদুটো মুঠোবন্দি করে বারবার রা*গ সংবরণ এর চেষ্টা করে সে ব্যর্থ হচ্ছে। অথচ তার সামনে বসে থাকা সুদর্শন পুরুষটি বিপুলভোটে পরাজিত হয়েও কি হাসিটাই না হাসছে।

~ভাই আমাদের জয় নিশ্চিত ছিল। অথচ ঐ নাদমান সাইক তালুকদার বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে গেল।আজ ঐ মঞ্চে দাঁড়িয়ে সুয়ারেজ সিকদার ভাই আপনি ভাষণ দিতেন।এমপি আসন আজ আপনার থাকত।অথচ আজ আমরা পরাজিত। ভাই একটা অনুমতি দেন। ঐ মাঠে রক্তে*র বন্যা ভাসিয়ে দিব।

সুয়ারেজ সিকদার চোখ জোড়া খুলে সোজা হয়ে বসল।দুই ঠোঁট উঁচু করে রাফানকে চুমু দেখাল।
রাফান ভড়কে গেল।এরকম সিরিয়াস মূহুর্তে সুয়ারেজ সিকদার যে তাকে চুমু ইশারা করবে, সে ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি।সে লজ্জাতুর দৃষ্টিতে সুয়ারেজ সিকদার এর দিকে তাকাল।তার প্রচুর লজ্জা করছে। এভাবে কেউ কাউকে চুমুর জন্য ইশারা করে? রাফান দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলল।

~এরকম নতুন বউদের মতো লজ্জা পেয়ে মুখ ঢাকছিস কেন?

রাফান মাথা নত করে মুচকি হাসি দিয়ে বলল,
~ভাই আপনি আমাকে চুমু দিবেন! ভাবতেই লজ্জা লাগছে।

সুয়ারেজ সিকদার চেয়ারে পুনরায় হেলান দিয়ে বলল,
~শা*লা তোকে চুমু না আমি গু***লি করব।মশা মেরে মশার র*ক্তের দিকে তাকাতে ভয় পাওয়া ছেলে নাকি র***ক্তের বন্যা ভাসাবে!

রাফান ভড়কে গেল। মাথা নুইয়ে রেখে ভয়ে ভয়ে দৃষ্টিতে সুয়ারেজ সিকদার এর দিকে তাকাল। পাতলা ফিনফিনে শরীরের,কালো বর্ণের পুরুষটির শরীরের কম্পন জানান দিচ্ছে। যে কোন সময় বেহুঁ*শ হয়ে পড়বে।কেন যে সে এই সাই*কোটাকে ক্ষে*পাতে গেল সেটা ভেবে নিজেকে নিজেই গালমন্দ করছে।এই লোকের নিকট গু*লি করা ওয়ান টুর ব্যাপার।হাসতে হাসতে গু**লি করেও দিতে পারে বিশ্বাস নেই।

সুয়ারেজ সিকদার হাসি হাসি মুখে রাফানকে বলল,
~নির্বাচনে হেরে গিয়েছি বলে এখন বিপক্ষ দলের উপর হাম**লা করব?জনগণ নাদমান সাইক তালুকদারকে যোগ্য মনে করেছে, তাই তারা তাকে ভোট দিয়ে জয়ী করেছে।মোদ্দাকথা, আল্লাহ তার ভাগ্যে জয়ের মুকুট রেখেছেন, তাই নাদমান সাইক তালুকদার জয়ী হয়েছে।

সুয়ারেজ সিকদার এর কথা শুনে রাফান যেন আকাশ থেকে পড়ল।সে কি কানে কম শুনছে?

পরক্ষণে,সুয়ারেজ সিকদার বলল,
~আজতো আর সময় নেই। কাল দুপুরের মধ্যে ফুলের মালা,ফুলের বুকে, আর বিশ কেজি মিষ্টি নিয়ে, এমপির পার্টি অফিসে যেতে হবে। সব কিছু অর্ডার করে আমাকে ইনফর্ম করবি।সবকিছু যেন ঠিকঠাক পাই।

চলবে……

(আজকের পর্বে প্রকাশিত চরিত্র গুলো :নাদমান সাইক তালুকদার, আনজারা মাহমুদ, স্বর্ণভা,মাহমুদ সাহেব, আয়েশা বেগম, রাজিয়া তালুকদার, সুয়ারেজ সিকদার, রাফান।

সকলে নিজেদের মতামত প্রকাশ করবেন। দয়া করে ভুল ত্রুটি গুলো ধরিয়ে দিবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here