হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৭০) #Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

0
1285

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৭০)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(১৬০)
তালুকদার ভিলার ড্রয়িংরুমে সোফায় তাহির, হুমায়রা, ওদের বাবা-মা, নিলাদ্র, সন্ধ্যা, কুশল, তরুনিমা আর একজন মধ্যবয়সের কাজীসাহেব বসে আছেন। তাহিরের তরফ থেকে নিলাদ্র-সন্ধ্যা আর হুমায়রার তরফ থেকে কুশল-তরুনিমা বিবাহে সাক্ষীদাতার ভূমিকা পালন করে। ওদের সকলের উপস্থিতিতে ইসলামিক ও আইনি দুই পদ্ধতি অবলম্বন করেই তাহির ও হুমায়রার বিবাহকার্য সম্পন্ন হয়। এরপর সকলে ওদের বৈবাহিক জীবনের জন্য সুখ ও শান্তি কামনা করে মোনাজাত করে। একসাথে রাতের খাবার খাওয়া শেষ করে সন্ধ্যা আর তরুনিমা দু’জনে মিলে হুমায়রাকে তাহিরের রুমে নিয়ে যায়। পারিবারিক ভাবে খুবই ছোট আয়োজনে ওদের বিবাহ হওয়ায় বাসরঘরের ডেকোরেশনও সাধারণ রেখেছে। বেলি, রজনীগন্ধা ও গোলাপ ফুলের সুগন্ধে পুরো ঘর এক অন্যরকম সুন্দর পরিবেশে পরিণত হয়েছে। সন্ধ্যা আর তরুনিমা হুমায়রাকে বিছানার মাঝ পর্যায়ে বসিয়ে দেয়। তরুনিমা শান্ত স্বরে বললো…

—“সন্ধ্যা..তোমার মেজো ভাইয়া আর নিলাদ্র ভাইয়ার কাছে গিয়ে বলো ওনারা যেনো তাহিরকে নিয়ে আসেন এখুনি।”

—“আচ্ছা ভাবী।”

এই বলে সন্ধ্যা বিছানা থেকে নেমে রুমের বাহিরে চলে যায়। তরুনিমা হুমায়রার ডান হাতের উপর হাত রেখে স্মিত হাসি দিয়ে বললো….

—“মন খারাপ করো না হুমায়রা। আজ যেভাবে তুমি তোমার ভালোবাসার মানুষের সাথে বৈধ সম্পর্কে আবব্ধ হয়েছো তেমনি খুব তাড়াতাড়ি তোমার ভালোবাসার মানুষটির থেকে তুমি তোমার প্রাপ্য সম্মান, ভালোবাসা, আদর-যত্ন ও পাবে। বিয়ের সম্পর্ক অনেক পবিত্র হয়। এই সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালারা রহমত থাকে। তিনিই দু’জন মানুষের মাঝে ভালোবাসার অনুভূতির সৃষ্টি করেন। সর্বদা ভরসা রেখো তার উপর।”

তরুনিমার কথাগুলো শোনার পর হুমায়রার মাঝে কিছুটা ভালোলাগা ও স্বস্তি কাজ করে। হুমায়রা তরুনিমার দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললো….

—“ইনশাআল্লাহ….তরুনিমা তোমার কথাগুলোই যেনো ঠিক হয়।”

তরুনিমা হাসিমুখে হুমায়রার মাথার উপরে ওড়না থেকে পিনটা খুলে দিয়ে সেটা ওর গলা পর্যন্ত টেনে দেয়। সেইসময় কুশল আর নিলাদ্র তাহিরকে নিয়ে রুমে প্রবেশ করে। সন্ধ্যাও ছিলো ওদের সাথে। তরুনিমা বিছানা থেকে নেমে ওদের সামনে এসে দাঁড়ায়। নিলাদ্র তরুনিমাকে দেখামাত্র তাহিরের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো….

—“ভাই…গালে কি এখনও ব্য*থা করছে!”

তাহির বললো…
—“শুধু গাল না ভাই দুই পার্শের দাঁতের মাড়ি শুদ্ধ ব্য*থা ধরে আছে।”

—“এবার হুমায়রা ভাবীকে বলে স্বইচ্ছায় দুই গালে আর দু’টো ডো*জ দিয়ে নিও তাহলে ছক্কা হয়ে যাবে।”

—“সন্ধ্যা ভাবীর থেকে ১ ডজন ডো*জ খাওয়ার শখ হয়েছে তোমার সেই কথা সরাসরি বললেই পারো!”

—“আরে কি যে বলো তুমি ভাই! সন্ধ্যা যেই পরিমাণের ভিতু সে দিবে আমায় ডো*জ এগুলা কল্পনাতেও সম্ভব না।”

—“আমিও কখনও কল্পনা করি নি তরুনিমা আমাকে পর পর চার-চারটে থা*প্প*ড় দেওয়ার মতো সাহস করতে পারবে। কিন্তু কল্পনাতেও সম্ভব না হওয়া এটা তো বাস্তবে হয়ে গেলো। শুনেছিলাম সুন্দরী মেয়েদের হাত অনেক নরম হয় কিন্তু থা*প্প*ড় গুলো খাওয়ার পর সেই ধারণাও ভে*ঙে গেছে আমার ভাই।”

—“আমি সন্ধ্যাকে ভ*য় পাই না বুঝলে ভাই!”

তাহির নিলাদ্রের এরূপ কথা শোনার পর সঙ্গে সঙ্গে সন্ধ্যাকে উদ্দেশ্য করে বললো….
—“সন্ধ্যা ভাবী…নিলাদ্র ভাই বললো আপনার নাক নাকি অনেক মোটা হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। আপনাকে বুঁ*চি বলেও সম্বোধন করেছে।”

তাহিরের মুখে এরূপ কথা শোনার পর নিলাদ্রের চোখের আকার স্বাভাবিক এর তুলনায় অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। নিলাদ্র ওর মুখ একহাতে চেপে ধরে। সন্ধ্যা নিলাদ্রের দিকে অ*গ্নী দৃষ্টি নি*ক্ষে*প করে রাগে ফোঁ*স ফোঁ*স করতে করতে বললো….

—“আমাকে বুঁ*চি বলে সম্বোধন করা এক্ষুণি বের করছি।”

নিলাদ্র ঘন ঘন মাথা এদিক-ওদিক নাড়িয়ে বোঝাতে চায় সে এমনটা বলে নি। কিন্তু সন্ধ্যা নিলাদ্রের ইশারাকে পরোয়া না করে ওর হাত ধরে টানতে টানতে সামনের দিকে নিয়ে যেতে শুরু করে। নিলাদ্র উচ্চস্বরে বললো…

—“কুশল…বন্ধু আমার তোর ডা*কা*ই*ত*নি বোনের হাত থেকে বাঁ*চা আমায়। তাহির ভাই…এ তুমি কি করলে! আমারে এভাবে ফাঁ*সি*য়ে দিলে! ওরে কে আছো বাঁ*চা*ও আমায়!”

নিলাদ্র আর সন্ধ্যা চোখের আড়াল হতেই তাহির, কুশল, তরুনিমা তিনজনই শব্দ করে হাসতে শুরু করে। কুশল হাসি থামিয়ে বললো….

—“বেচারাকে এভাবে ফাঁ*সি*য়ে দিলে তুমি ভাই!”

—“সে তো জোর গলায় বলছিলো সে নাকি ভাবীকে একটুও ভ*য় পায় না। তার নমুনা দেখতেই এই কাজ করলাম।”

তরুনিমা শান্ত স্বরে বললো…
—“কুশল…এখন আমাদের যাওয়া উচিত। হুমায়রা অনেক সময় হলো ভিতরে একা বসে আছে।”

—“হুম ঠিক বলেছো। তাহির ভাই, বেস্ট অফ লাক।”

এই বলে কুশল তরুনিমাকে নিয়ে স্থান ত্যগ করে। তাহির একবার শব্দ করে নিঃশ্বাস ফেলে রুমের ভিতর প্রবেশ করে ভিতর থেকে দরজা আটকে দেয়। দরজা আটকে দেওয়ার শব্দ শোনা মাত্র হুমায়রা ওর বেনারসির এক অংশ মুষ্টিবদ্ধ করে করে ধরে ঘোমটার নিচে থেকেই ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করে। তাহির ধীর পায়ে বিছানার দিকে অগ্রসর হয়। তাহির বিছানার কাছে এসে একপার্শে বসে আরো একবার শব্দ করে নিঃশ্বাস ফেলে শান্ত স্বরে বললো….

—“হিমু…তোকে আমার কিছু বলার আছে।”

হুমায়রা নিশ্চুপ হয়ে আছে। তাহির কিছুসময় নিরব থাকার পর আবারও বললো….

—“আজ আমরা বৈবাহিক সম্পর্কে আবব্ধ হয়েছি তাই একজন স্ত্রী হিসেবে তোর আমার উপর সম্পূর্ণ অধিকার আছে আমি এটা জানি আর মানিও। কিন্তু তুই খুব ভালো করেই আমার মনের অবস্থা সম্পর্কে জানিস। হয়তো এটাও বুঝতে পেরেছিস নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে হুট করে হারিয়ে ফেলার পর পুনরায় তোকে ভালোবাসাটা আমার জন্য খুব বড় একটা চ্য*লে*ঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার কিছুটা সময় প্রয়োজন। আশা রাখছি তুই আমাকে আর আমার অবস্থাটা বুঝতে পারবি।”

এই বলে তাহির বিছানা থেকে উঠে বেলকনিতে চলে যায়। হুমায়রা কিছুসময় নিরব হয়ে বসে থাকার পর নিজের মুখের উপর থেকে ঘোমটা সরিয়ে বিছানা থেকে নেমে ধীর পায়ে বেলকনির দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই দেখে তাহির বেলকণির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ওর দৃষ্টি ঐ বিশাল আকাশের একঅংশ জুঈে ছোট থালার মতো অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী চাঁদের উপর স্থির হয়ে আছে। হুমায়রা তাহিরের পিছনে গিয়ে দাড়িয়ে পিছন থেকে ওকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে। তাহির এই ১ম এতোটা কাছে হুমায়রার উপস্থিতি উপলব্ধি করতে পেরে সাথে সাথেই নিজের দু’চোখ বন্ধ করে ফেলে। হুমায়রা তাহিরের পিঠে মাথা ঠেকিয়ে শান্ত স্বরে বললো…

—“এতো বছর অপেক্ষা করার ফলস্বরূপ আজ আমি তোমাকে আমার স্বামীরূপে পেয়েছি। তাই তোমার ভালোবাসা, আদর-যত্ন পাওয়ার জন্য যদি আমাকে আরো কয়েকযুগ অপেক্ষা করতে হয় আমি তা করতেও রাজি আছি তাহির। শুধু আমাকে আমার মতো করে তোমায় ভালোবাসতে দিও, যত্ন করতে দিও। আমার নিজের প্রতি এতোটুকু বিশ্বাস আছে যে আমি আমার ভালোবাসা আর যত্ন দিয়ে তোমার মন অবশ্যই জয় করতে পারবো। তোমার অ*ব*হে*লা, কড়া ভাষায় বলা কথা আমি একদমই নিতে পারি না। আমার বুকের ভিতরে ভিষণ য*ন্ত্র*ণা হয়। এমনিতেই তোমার ভালোবাসার অভাব আমায় দরুণ য*ন্ত্র*ণায় ভো*গা*চ্ছে এর ভিতর আমি তোমার তরফ থেকে আর কোনো বাড়তি য*ন্ত্র*ণা সহ্য করতে পারবো না। প্লিজ তুমি আমায় ভালোবাসতে সময় নাও কিন্তু অন্যান্য দিক থেকে আমায় আর কখনও য*ন্ত্র*ণা দিও না।”

তাহির শক্ত পাথরের মতো স্থির ও নিরব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

(১৬১)
তালুকদার ভিলায় সন্ধ্যার নিজের জন্য ঠিক করে দেওয়া রুমটিতে সন্ধ্যা নিলাদ্রকে নিয়ে এসে ওকে ধা*ক্কা দিয়ে ভিতরে রেখে সে নিজেও ভিতরে প্রবেশ করে ঠাস করে দরজা আটকে দেয়। সন্ধ্যার এভাবে দরজা আটকানোর শব্দ শোনা মাত্র নিলাদ্র উল্টো ঘুরে থাকা অবস্থায় নিজের দু’গালে দু’হাত চে*পে ধরে বিরবিরিয়ে বললো….

—“নিল…নিল রে…আজ তুই শেষ। তাহিরের মতো আজ তোর গালেও ১০-১২ টা ধা*লা*ই পড়বে। কিন্তু এমনটা তো হতে দেওয়া যায় না। বিয়ের আগেই জুনিয়র বউয়ের হাতে থা*প্প*ড় খেলে আমার প্রেসটিজ বলতে তো কিছুই বেঁচে থাকবে না। তাই আমি আমার গাল থেকে এইমূহূর্তে আর হাত সরাবো না কিছুতেই না। এতে যদি পৃথিবী উ*ল্টে অগুনতিকভাগ ও হয়ে যায় তবুও আমি আমার গাল থেকে হাত সরাবো না।”

সন্ধ্যা নিলাদ্রের সামনে গিয়ে কমোরে দু’হাত রেখে দাড়িয়ে ওর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি স্থির করে বললো……

—“গাল থেকে হাত সরান।”

নিলাদ্র ওভাবে থেকেই দ্রুত এপাশ-ওপাশ মাথা নাড়িয়ে না সূচক জবাব দেয়। সন্ধ্যা ধ*ম*কের স্বরে বললো…

—“সরান বলছি।”

নিলাদ্র সঙ্গে সঙ্গে ওর দু’গাল থেকে দু’হাত সরিয়ে বুকের সাথে গু*জে নেয়। সন্ধ্যা আবারও বললো……

—“হাত দু’টো ওখানে না রেখে নিজের কানে রাখুন আর গুণে গুণে ১০০ বার উঠাবসা করুন।”

সন্ধ্যার এরূপ কথা শুনে নিলাদ্রের চোখ জোড়া স্বাভাবিক এর তুলনায় বেশ বড় হয়ে যায়। পরক্ষণেই নিলাদ্র বললো….

—“এই এই তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে! তুই জানিস ১ এর পিঠে দু দু’টো শূন্য বসালে তবেই ১০০ হয়। আর ১০০ বার কানে ধরে উঠাবসা করলে কি আমাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে নাকি!”

সন্ধ্যা স্বাভাবিক স্বরেই বললো….
—“১মিনিট লেইট করলে ১০ বার করে বেশিবার কানে ধরে উঠাবসা করতে হবে আপনায়। আপনি অলরেডি ২মিনিট সময় অপচয় করেছেন তাই আপনাকে ১০০ নয় ১২০ বার কানে ধরে উঠাবসা করতে হবে।”

নিলাদ্রের মুখ অটোমেটিক হা হয়ে যায়। নিলাদ্র আবারও বললো….….

—“সন্ধ্যা জান আমার, একমাত্র হবু বউ আমার, স্বপ্ন-কল্পনা- বাস্তবের অফুরত্ন শক্তি আমার। নিজের একমাত্র হবু জামাইয়ের সাথে এতো বড় অ*ন্যায় তুই করতে পারিস নাই। তুই তো আমায় ভালোবাসিস বল!”

—“১৪০ বার।”

—“এ এ…তোর মনে কি বিন্দুমাত্র মায়া-দয়া কাজ করছে না! দেশে পুরুষ নি*র্যা*ত*ন মা*ম*লা সম্পর্কিত কোনো আইন নেই বলে আমার মতো নিরীহ, অবলা পুরুষের উপর তুই এতো বড় নি*র্যা*ত*ন করবি!”

—“১৫০ বার।”

নিলাদ্র বুঝতে পারে এতো কথা বলে কোনো লাভই হবে না এখন উল্টে নিজের পায়ে কু*ড়া*ল মে*রে মে*রে পায়ের অবস্থা খা*রা*প করা হবে। তাই নিলাদ্র অ*স*হা*য়ের মতো মুখশ্রী করে দুই কানে দুই হাত রেখে উঠাবসা করতে শুরু করে। সন্ধ্যা নিলাদ্রের সামনে চেয়ার নিয়ে বসে কাউন্ট করতে শুরু করে৷

#চলবে ইনশাআল্লাহ……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here