সে_আমার_চিত্তমহলের_প্রেয়সী #সাবিকুন্নাহার_সুমী #পর্ব:১৮

1
1100

#সে_আমার_চিত্তমহলের_প্রেয়সী
#সাবিকুন্নাহার_সুমী
#পর্ব:১৮
(🚫দয়া করে কেউ কপি করবেন না। কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ 🚫)
বৃদ্ধ লোকটির কান্নার তোপে শরীর কাঁপছে। নাদমান তার হাত আঁকড়ে ধরলো।নাদমান কণ্ঠে নমনীয়তা এনে প্রশ্ন করলো,
~চাচা আপনি কি পুলিশের কাছে কমপ্লিন করেছেন?

লোকটি কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বললেন,
~বাবা গিয়েছিলাম। আমার মেয়ের জামাই মেয়রের ভাগ্নে জানার পর পুলিশ আমাকে অপমান করে ফিরিয়ে দিয়েছে।

নাদমান কণ্ঠে গাম্ভীর্য এনে বলল,
~সাব্বির আপনার মেয়ের জামাই?

লোকটি চোখের পানি মুছে মাথা উপর নিচ করে ইশারা করল।
____________
ঘুটঘুটে অন্ধকারে আচ্ছাদিত ধরণী।রাস্তার বেওয়ারি*শ কুকুর গুলো দলবেঁধে ডাকছে। দমকা হাওয়ার শোঁ শোঁ শব্দ ভেসে আসছে। সাব্বির মাতা*ল অবস্থায় হেলেদুলে বাড়ির সামনে আসল।সাব্বির পকেট হাতড়িয়ে চাবি খোঁজে বের করে গেইটের তালা খোলে। গুনগুনিয়ে গান গেয়ে সদর দরজার সামনে এসে দরজায় নক করতে তার মনে পড়লো বাড়িতে কেউ নেই। বউকে সে মার*ধর করে বাপের বাড়িতে রেখে এসেছে। সাব্বির বুক ফুলিয়ে আওয়াজ করে হাসল। বউটা তার সোনার ডিম পাড়া হাঁস।একটু হুমকি দিলেই বাপের বাড়ি থেকে টাকা এনে দেয়। হাতে থাকা চাবি দিয়ে সদর দরজার তালা খুলল সে।নিভুনিভু চোখে সাব্বির সদর দরজা পেরিয়ে ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করে।দরজার সিটকিনি লাগিয়ে পিছনে ফিরে হাঁটতে শুরু করার পরপর গেইটের কলিং বেল বেজে উঠল। সাব্বির ভ্রু কুঁচকে বিরক্ত মুখশ্রী নিয়ে সদর দরজা খুলে গেইটর সামনে এসে গেইট খুলে দিলো।চোখের সামনে শুভ্র পাঞ্জাবি পরিহিত সুঠাম দেহের পরিচিত অবয়বের ব্যাক্তিটিকে সাব্বিরের মাতাল অবস্থাতেও চিন্তে অসুবিধা হলো না।

সাব্বিরের মুখ হাসিতে জ্বলজ্বল করছে। মাতাল কণ্ঠে বলল,
~এমপি সাহেব আপনি?

নাদমান গা দুলিয়ে হেসে বলল,
~হ্যাঁ আমি তোকে আপ্যায়ন করতে আসলাম।

সাব্বির নিজের শার্টটা টেনেটুনে ঠিক করে বললো,
~এমপি সাহেব আসুন বাড়ির ভিতরে আসুন।

শপিং ব্যাগ হাতে তামিম পাশ থেকে বলল,
~আমিও আছি তোর স্পেশাল খাতির যত্নের জন্য।

সাব্বির চেহারা ভালো করে দেখার জন্য এগিয়ে গেলো তামিমের দিকে।

মাহিন বলল,
~শা**লা দূরে গিয়ে ম*র। শরীর থেকে তোর কু*ত্তা পঁ*চা গ*ন্ধ করছে।

সাব্বির অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
~ভিতরে আসেন আপনারা।

নাদমান সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসল।দৃষ্টি তার মেঝেতে নিবদ্ধ। তামিম, মাহিন সোফার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
সাব্বির নাদমানের পাশের সোফায় বসল। নাদমান চোখ তুলে পুরো ড্রয়িংরুমটা দেখল।পুরো ড্রয়িংরুমে শৌখিনতার ছোঁয়া। কোন এক নারী অতি যত্নে তার সংসারটাকে গুছিয়েছে। অথচ,তার সম্মুখের কাপুরু*ষটা তার সুন্দর সাজানো সংসারটা টাকার জন্য নষ্ট করেছে।সাব্বির তার মোটাতাজা শরীরটা সোফায় হেলিয়ে দিয়েছে।

নাদমান ক্ষী*প্র কন্ঠে সাব্বিরকে বলল,
~একটা মজবুত টাইপের লাঠি নিয়ে আসতো সাব্বির।

সাব্বির ঝিমাচ্ছে। নাদমানের কথা তার শ্রবণগ্রন্থিতে প্রবেশ করেনি।
মাহিন একটা লাথি দিলে সাব্বির ধড়ফড়িয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।

সাব্বির ভয়াতুর কণ্ঠে বলল,
~ভাই সরি ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।

নাদমান শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাব্বিরের দিকে।

তামিম ধমকের স্বরে সাব্বিরকে বলল,
~তাড়াতাড়ি একটা লাঠি নিয়ে আয়।

সাব্বিরের মাথায় কিছুই ঢুকছে না।সে রোবটের মতো খোঁজে একটা হকিস্টিক এনে নাদমানের হাতে দিলো।

নাদমান সাব্বিরকে বলল,
~সোফায় বস।
নাদমান বসতে বলার সাথেই সাব্বির বসলো।

নাদমান তামিমের দিকে তাকিয়ে বললো,
~একলক্ষ টাকা ওর সামনে রাখ তামিম।

মাহিন একটা টি -টেবিল সাব্বিরের সামনে রাখলো।তামিম শপিং ব্যাগ থেকে একলক্ষ টাকার একটা বান্ডিল বের করলো।টি টেবিলের উপর একলক্ষ টাকার বান্ডিলটা রাখলো।সাব্বির কিছুই বুঝতে পারছেনা।সাব্বির লোভা*তুর দৃষ্টিতে টাকাগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। নাদমান ফিচেল হাসলো।

হাতের হকিস্টিক এর দিকে তাকিয়ে বলল,
~শুনলাম একলক্ষ টাকার জন্য নাকি তোর প্রেগন্যান্ট বউকে মার*ধর করে বাপের বাড়িতে রেখে এসেছিস?

সাব্বির ভয়ে ঢোঁক গিললো।তার শরীর ভয়ে থরথ*র করে কাঁপছে। আজ কোথাকার জল কোথায় গিয়ে গড়াবে সে তা বুঝতে পারল।

নাদমান বললো,
~ ভয় পাচ্ছিস?ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এখানে একলক্ষ টাকা আছে । আরও একলক্ষ টাকা তোকে দিবো।

সাব্বির এর মুখ জ্বলজ্বল করে ওঠে।সে কি সাধে তার বউকে সোনার ডিম পাড়া হাঁস বলে।

নাদমান থেমে বললো,
~শর্ত একটা তুই এই বান্ডিল থেকে দশহাজার টাকা পানি বিহীন পাঁচমিনিটের মধ্যে গিলে খাবি।

সাব্বির অবাক চোখে তাকালো।
~ভাই এটা কি করে সম্ভব?

`~তুই আমাকে প্রশ্ন করছিস?
~টাকার জন্য বউকে মারতে তোর হাত কাঁপেনি।টাকা গিলতে তোর গলা কাঁপছে?তুই টাকা খাবি নয় এই হকিস্টিক তোর পিঠে ভাঙতে আমার হাত কাঁপ*বে না।

মাহিন দৌড়ে গিয়ে একটা লাথি দিয়ে বলল,
~ভাই যা করতে বলেছে তাড়াতাড়ি কর।তোর পাঁচমিনিট সময় দেওয়া হলো তাড়াতাড়ি কর।

সাব্বির ভয়াতুর মুখশ্রী নিয়ে একটা একহাজার টাকার নোট রাবারে বন্ধনকৃত বান্ডিল থেকে বের করলো। চিনচিন ঘাম সাব্বিরের পুরো মুখশ্রীতে দৃশ্যমান।পরনের শার্টটা ঘামে ভিজে একাকার। তিনজোড়া চোখ সাব্বিরের দিকে নিবদ্ধ। মাহিনের হাত নিশপিশ করছে সাব্বিরকে মা*রার জন্য।
তামিম তার চশমা নাক থেকে ঠেলে ঠিক করলো।হাতের ঘুড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখতে শুরু করলো।
সাব্বির একহাজার টাকা মুখে ঢুকিয়ে চিবাতে লাগলো।চিবিয়ে গিলতে গিলতে পাঁচমিনিট সময় শেষ হয়ে গেলো।নাদমান ফিচেল হাসল। বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। সাব্বিরকে হকিস্টিক দিয়ে এলোপাতাড়ি মার*তে শুরু করলো সে। একেকটা আঘাতে সাব্বির গগন বিদারী চিৎকার দিয়েও রেহাই পেল না।

তামিম হাঁক ছেড়ে বলল,
~ভাই আরও জোরে মা*রেন।আমি বিয়ে করার জন্য বউ পাইনা।আর,শা*লা মদ*খোর বউ নির্যাতন করে।

মাহিন ফিসফিস করে তামিমকে বলল,।
~আমিও তোর মতো অসহায় তামিম্মা।

তামিম বিরক্ত মুখে বলল,
~ মাহিন তুই মেয়েদের মতো আর কোনদিন ফিসফিস করে কথা বললে তোর চেহারার মানচিত্র চেঞ্জ করে দিবো আমি ।

মাহিন মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
নাদমান ক্লান্তিহীন সাব্বিরকে মারছে।

সাব্বির নাদমানের পা আঁকড়ে ধরে বলল,
~ভাই আমি কোনদিন আর টাকার জন্য আমার বউকে মার*ধর করব না।ভাই আমার টাকা লাগবো না।আমাকে মাফ করেন ভাই। আমি কালকে সকালেই আমার বউকে সসম্মানে বাড়িতে নিয়ে আসবো।

নাদমানের হাত থামল।গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
~ আর কোন দিন যদি শুনতে পাই তুই বউকে মারধর করেছিস বা টাকার জন্য বউ,শ্বশুর বাড়ির লোকদের হুম*কি দিয়েছিস। তাহলে মনে রাখিস হুম*কি দেওয়ার জন্য তুই আর দুনিয়াতে থাকবি না।
___________________

নাবহান, আনজারা,স্বর্ণভা, ব্যাতীত তালুকদার বাড়ির বাকি সদস্যরা নাদমানদের এতিমখানায় গিয়েছে। আনজারা বারান্দার গ্রীল আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি তার আকাশে নিবদ্ধ।বিকালের নির্মল বাতাসে আনজারার ছোট ছোট চুলগুলো উড়ছে। মাহাদ,মীরা,আয়মান, অহনা সকলের কথা আনজারার মনে পড়তেই তার চোখের কার্নিশ ভরে উঠে অশ্রুতে।বাবা,মায়ের কথাও তার খুব মনে পড়ছে।

~মাম্মাম নুডলস খাবো।

স্বর্ণভার কণ্ঠ কর্ণগোচর হতেই আনজারা হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে। পিছনে ফিরে নিচু হয়ে স্বর্ণভাকে কোলে তুলে নেয়।
মলিনমুখে স্বর্ণভাকে আনজারা বলল,
~আমার সাথে নিচে আসো।আমি নুডলস রান্না করে দিচ্ছি।
___________
স্বর্ণভাকে সোফায় বসিয়ে আনজারা প্রথম বারের মতো নাদমানদের রান্নাঘরে ঢুকে।সারাদিন রুমে শুয়ে, বসে কাটায় সে। খাবারটাও জেসমিন রুমে দিয়ে আসে।আনজারার এককথা যে সংসার সে করবেনা সে সংসারে মন বসানোর কোন প্রয়োজন নেই।আনজারা পুরো রান্নাঘরটা দেখল।খুব সুন্দর পরিপাটি রান্নাঘর।আনজারা তাক খোঁজে নুডলস বের করে স্বর্ণভার জন্য ঝটপট নুডলস রান্না করে দেয়। নুডলস নিয়ে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসলো আনজারা।স্বর্ণভা উৎসুক দৃষ্টিতে খাবারের দিকে তাকিয়ে আছে।

আনজারা স্বর্ণভাকে নুডলস খাইয়ে দিচ্ছে। স্বর্ণভা খিলখিল হেসে বলল,
`~মাম্মাম ইয়াম্মি হয়েছে।
আনজারা মলিন হাসলো। আগের মতো হাসিটা তার আর প্রাণবন্ত নেই।
কারও হাঁটার শব্দ কানে আসতেই আনজারা সিঁড়ির দিকে তাকাল।নাবহান লাফিয়ে লাফিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছে।

আনজারা ভ্রু কুঁচকে তাকাল।

নাবহান সোফায় বসতে বসতে বলল,
~এই,যে আমার পাঁচ মিনিটের বড় ভাইয়ের আট বছরের ছোট পিচ্চি বউ।আমার পিচ্চি ভাবি কফি বানাতে পারো?

নাবহানের এরকম সম্বোধনে আনজারা অবাক হলো না।নাবহানকে তো সে আর নতুন চিনে না।

আনজারা তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল,
~তা আপনার পরিবার দলবেঁধে বাহিরে গিয়েছে। আপনাকে কি আপনার গুণধর ভাই আমার পাহারাদার হিসেবে রেখে গিয়েছে?

নাবহান সামনের দাঁত গুলো দৃশ্যমান করে হাসলো।

সোফা থেকে স্বর্ণভাকে টেনে নিজের উরুতে বসিয়ে বলল,
~বাড়িতে দুইটা অবুঝ বাচ্চা আছে বলা তো যায় না যদি হারিয়ে যায়।আমার ভাই বেরসিক হলেও সে অনেক দায়িত্ববান।তাই, আমাকে রিকুয়েষ্ট করলো বাড়িতে থাকার জন্য।

নাবহান বারবার আনজারাকে পিচ্চি বলে সম্বোধন করায় আনজারা মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,
~মাথামোটা আমাকে তোর পিচ্চি মনে হয়?তোর বউ আমার থেকেও পিচ্চি হবে।

নাবহান সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
~গালা*গাল না করে পিচ্চি ভাবি কফি বানিয়ে দাও।
____________
আনজারা ঝটপট কফি বানালো।কফি মগ নাবহানের হাতে দিলো।

নাবহান কফি মগ হাতে নিয়ে বলল,
~কফির সাথে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই হলেও ভালো লাগবে খেতে। পিচ্চি ভাবি ঝটপট বানিয়ে দাও না।

আনজারা মনে মনে বিরক্ত হলো।তবে তা প্রকাশ না করে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বানিয়ে টি টেবিলে রাখলো।

নাবহান মুখে দিয়ে বলল,
~কফির মতোই অসাধারণ হয়েছে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই । তোমার রান্নার হাত তো দারুণ।
~ধন্যবাদ।
আনজারা স্বর্ণভাকে কোলে নিয়ে সিঁড়িতে পা রাখলো।

নাবহান আবার ডাক দিয়ে বললো,
~পিচ্চি ভাবি টমেটো সসটা দিয়ে যাবে।

আনজারা চোখ মুখ কুঁচকে টমেটো সস,মেয়োনিজ,এক গ্লাস পানি টি টেবিলের উপর শব্দ করে রাখলো।
স্বর্ণভা সোফায় বসে মনোযোগ সহকারে কার্টুন দেখছে।
নাবহান হাসিমুখে বলল,
`~তুমি তো দারুণ কাজের ভাবি!সস চাইতেই এতো কিছু দিলে।ভাবি কফি টা শেষ হয়ে গিয়েছে। আর এক কাপ কফি করে দিবে।আনজারার রাগ তরতর করে বাড়ছে।আনজারা নাক ফুলিয়ে আবারও রান্নাঘরে গেলো।তার হাত পা গুলো ব্যা*থা করছে।নাবহান দাঁত কেলানো হাসি দিয়ে কার্টুন দেখা শুরু করল।আনজারা কফি এনে টি টেবিলের সামনে রাখল।

নাবহান কফি হাতে নিয়ে বলল,
~কফি খাব না। ফ্রীজ থেকে জুস এনে দিবে।

আনজারা এবার রাগে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে টি-টেবিলের উপর থেকে একগ্লাস পানি নিয়ে নাবহানের মাথায় ঢেলে দিলো।রাগে আনজারার শরীর কাঁপছে। স্বর্ণভা খিলখিল করে হাসছে।নাবহান অবাক। আনজারা এমন কিছু করবে নাবহান তার ভাবনাতেও আনেনি।নাবহানের মাথা থেকে টুপটাপ পানির ফোঁটা মুখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে।আনজারা ধপাধপ পা ফেলে দোতলায় চলে গেল।

নাবহান ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,
~সামান্য ধৈর্য্যর পরীক্ষাই তো নিচ্ছিলাম।তাই আমাকে ভিজিয়ে দিবে!
এই মেয়ের স্বামী একে সামলাবে কি করে?পরক্ষণে,নাবহান বলে এর স্বামী তো আমার ভাই। একদম ঠিক আছে নাদমান বেরসিকের জন্য আনজারাই পারফেক্ট।
________________

পার্টি অফিসে দলের লোকদের সাথে মিটিং শেষ করে নাদমান বাড়িতে আসে রাত দেড়টার দিকে।

জেসমিন ঘুমঘুমু চোখে নাদমানকে বলে,
~ভাইজান রাইতের খাওন খাবেন না?

নাদমান গম্ভীরস্বরে বলল,
~না।তোর ভাবি, স্বর্ণভা খেয়েছে?

জেসমিন তার ডানহাতের পিঠ দিয়ে চোখ কঁচলে নাদমানের দিকে তাকিয়ে বলল,
~স্বর্ণভাকে ভাবি খাইয়ে দিয়েছে তয় সে নিজে খায় নাই।
খালাম্মা অনেক জোরাজোরি করেও তাকে খাওয়াতে পারে নাই।

নাদমানের মুখ গম্ভীর হলো। ধপাধপ পা ফেলে সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় নিজেদের রুমের সামনে আসলো।দরজাতে দুইবার করাঘাত করেও যখন আনজারার সারা পাওয়া গেল না।নাদমান চাপানো দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে।পুরো রুম অন্ধকারাচ্ছন্ন।নাদমান বিগলিত হাসলো।লাইটের সুইচ অন করে বিছানার দিকে তাকালো নাদমান। তৎক্ষনাৎ চোখ বন্ধ করে দরজার দিকে মুখ ঘুরিয়ে নাদমান লাইট অফ করে দিলো।আনজারা আধশোয়া হয়ে শুয়ে আছে। শাড়ির আঁচল এলোমেলো হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। হাঁটুর উপরে শাড়ি উঠে যাওয়ার ফলে ফর্সা ধবধবে পা দৃশ্যমান।নিজের স্ত্রী এহেন অবস্থায় নাদমানের মাথায় নিষিদ্ধ ইচ্ছেগুলো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। নাদমান নিজেকে কন্ট্রোল করলো।দ্রুত পায়ে রুম থেকে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতেই দরজার কটমট শব্দে আনজারা ধড়ফড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে বসলো। দরজার ফাঁক দিয়ে ড্রয়িংরুমের কিঞ্চিৎ আলো রুমে প্রবেশ করায় নাদমানের অবয়ব আনজারার চোখে দৃশ্যমান হলো।আনজারা নিজের শাড়ি ঠিক করল।

আনজারা তিরিক্ষি কণ্ঠে বলল,
~ লাইট অন না করে এরকম চোরের মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেন?

নাদমান বিড়বিড় করে বলল,
~শেষ পর্যন্ত চোর অপবাদ পাওয়া ও বাকি ছিল?
ভাগ্যিস একটু আগে দেখে নাই তাহলে ধর্ষ*ক অপবাদ দিতেও দ্বিধা করতো না।

নাদমান সুইচ অন করে বলল,
~আমার ঘরে আমি এসেছি। চোরের মতো দাঁড়িয়ে থাকবো নাকি লাইট অন করে দাঁড়িয়ে থাকবো আপনাকে কেন কৈফিয়ত দিবো?

আনজারা কর্কশ কন্ঠে বলল,
~যতদিন আমি এই ঘরে আছি এই ঘর আমার।

নাদমান নিশ্চুপ।গটগট পায়ে কাভার্ড খুলে একটা ট্রাওজার নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।তার এই মুহূর্তে ঝগড়া করার মুড নেই। দীর্ঘসময় শাওয়ার নেওয়ার পর নাদমান ট্রাওজার পরিহিত অবস্থায় ওয়াশরুম থেকে বের হলো।আনজারা বিছানায় বসে ছিল।আনজারার মন না চাইতেও চোখ অপলক তাকিয়ে রইলো নাদমানের দিকে।ভেজা এলোমেলো চুল কপালে পড়ে আছে।মুখোয়বে গাম্ভীর্যের চিহ্ন। পেঠানো শরীর, সুঠামদেহের শ্যামবর্ণ পুরুষটির খালি শরীরের দিকে আনজারা মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে।
শান্ত, লাল চক্ষুকোটরে নাদমানের অন্যরকম শীতলতা।তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছে নাদমান ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়াল। আয়নায় আনজারার অপলক দৃষ্টি নাদমানের দৃষ্টিগোচর হলো।

নাদমান মনে মনে বলল,
~আপনার অশান্ত মনকে আমি আমার ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে দিবো আনজারা।

আনজারা দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।নিজের দৃষ্টিকে সংযত করে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে রইলো সে।আনজারার মন বলছে নাদমান তার চোখের সামনে থাকলে সে নিজেকে সংযত করতে পারবেনা।যেভাবেই হোক এই বাড়ি ছেড়ে আনজারা চলে যাবে।নাদমান বাহিরে বের হয়ে গেলো।কয়েক মুহূর্ত পর হাতে খাবারের প্লেট এনে বিছানায় রেখে আনজারাকে শীতল কন্ঠে বললো,
~নেক্সট টাইম খাবারের অনিয়ম আমি সহ্য করব না আনজারা।আমি চাই না আমার দায়িত্বে থাকা কোন মানুষ অভুক্ত থাকুক সেটা আমার পছন্দ নয়।

আনজারা হিসহিসিয়ে বলে,
~আমি বাড়ি যাব।আমি খাব না।

নাদমান হাঁটু গেড়ে বিছানায় বসলো।ভাত মাখিয়ে এক হাত দিয়ে আনজারার দুই গাল চেপে ধরলো।আনজারা মোচড়ামুচড়ি শুরু করল।

নাদমান স্বর্ণভার দিকে তাকিয়ে বলল,
~চুপচাপ হা করুন।স্বর্ণভা ঘুম থেকে উঠে যাবে। আনজারার চোখে অশ্রু জমা হলো গড়িয়ে পড়ল তা গাল বেয়ে। সম্মুখের ব্যাক্তিটির উদ্দেশ্য তার অজানা। কেন বিয়ে করেছে,কেন আঁটকে রেখেছে সবকিছুই তার অজানা।
_____________
চাপানো দরজার ফাঁক দিয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে মরিয়ম বেগম সুয়ারেজকে দেখছে। আনজারার বিয়ের দিন রাত থেকে আজ দশদিন দিন যাবৎ রুম থেকে বের হয়নি সুয়ারেজ। খাবার নিয়ে কাজের লোক রুমের ভিতরে গেলেই মদে*র বোতল দিয়ে তাদের আঘা*ত করার জন্য তেড়ে আসে সুয়ারেজ ।অর্ধ অনাহারে তার সুঠাম দেহের ছেলের শরীর শুকিয়ে গিয়েছে কিছুটা। মরিয়ম বেগম শরীর কাঁপিয়ে কাঁদলেন।

সাইফুদ্দীন সিকদার স্ত্রীর পিঠে হাত রেখে বলল,
~কান্না করছো কেন মরিয়ম? নিজের হাতেই তো আনজারাকে নাদমানের হাতে তুলে দিয়েছো।

মরিয়ম বেগম শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছে বললেন,
~আমার ছেলেটার সাথে আনজারার বিয়ে হলে মেয়েটা ম*রে যেত সুয়ারেজের আব্বু।আমার ছেলের অতিরিক্ত ভালোবাসা মেয়েটার জীবন বিষাক্ত হয়ে যেত।আমার ছেলে এতোটা নিষ্ঠুর কেন হলো?

সাইফুদ্দীন সিকদার মরিয়ম বেগমকে বললেন,
~কান্না করো না মরিয়ম। আমি ভিতরে যাচ্ছি তুমি রুমে যাও।
মরিয়ম বেগম কান্নাভেজা চোখে স্থান ত্যাগ করলেন।
সাইফুদ্দীন সিকদার দরজা ঠেলে রুমের ভিতরে ঢুকলেন। সুয়ারেজ ভাবলেশহীন ভাবে মদে*র গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে।
পুরো ঘর এলোমেলো, আসবাবপত্র ছড়ানো ছিটানো।
ম*দের বিদঘুটে গন্ধ পুরো রুম ছেয়ে গিয়েছে।

সাইফুদ্দীন সিকদার হাত দিয়ে নাক চিপে সুয়ারেজের কাঁধে হাত রাখলেন।

সুয়ারেজ মাতা*ল কণ্ঠে বলল,
~আমাকে ঠকিয়ে মা****গি সুখে সংসার করছে আব্বু? আব্বু আনজারার পেঠে কি নাদমানের বাচ্চা এসেছে?

সাইফুদ্দীন সিকদার লজ্জায় মুখ নত করলেন। ছেলে তার অতিরিক্ত নেশা*রঘোরে মুখ দিয়ে যা আসছে তাই বলছে।

সুয়ারেজ থেমে আবার ও বলল,
~দশটা বাচ্চা হলেও আমি আনজারাকে বিয়ে করবো আব্বু।

সাইফুদ্দীন সিকদার ধমকের স্বরে বলল,
~তুমি উম্মা*দ হয়ে গিয়েছ সুয়ারেজ। আনজারাকে ভুলে রাজনীতিতে মনোযোগ দাও।

সুয়ারেজের ভগ্ন হৃদয়ে আনজারার শোকে দাউদাউ করে আগু*ন জ্বলছে। বাবার কথায় তা যেন দ্বিগুণ হলো।সুয়ারেজ রক্তচক্ষে সাইফুদ্দীন সিকদারের দিকে তাকালো।হাতে থাকা মদে*র গ্লাসটা ম*দ সহ ছুঁড়ে ফেলে দিলো সাইফুদ্দীনের মুখে। গ্লাসের আঘাতে তিনি আর্তনাদ করে ওঠলেন।সুয়ারেজ বসা থেকে উঠে দাঁড়াল।

সাইফুদ্দীন সিকদারের দিকে তর্জনী আঙুল উঁচিয়ে ক্ষীপ্র কণ্ঠে সুয়ারেজ বলল,
~কুত্তা*র বাচ্চা আমার রুম থেকে বের হ।
_________________

চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে মাহমুদ সাহেব। নাদমান শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাহমুদ সাহেবের দিকে।

মাহমুদ সাহেব নাদমানকে উদ্দেশ্য করে বলল,
~শোন, নাদমান আমার মেয়ে নিজেকে যতই ম্যাচিউর ভাবুক। আনজারা তার মায়ের মতো হয়েছে। চোখের সামনে যা দেখে যা শোনে তাই বিশ্বাস করে। তাই বলছি আমার মেয়েটাকে আর ধোঁয়াশায় রেখোনা।
তোমার শ্বাশুরিকে নয় ছয় বুঝিয়ে এতোগুলো দিন তালুকদার বাড়িতে যাওয়া থেকে আটকে রেখেছি। আনজারার কানে আয়েশা বি*ষ ঢালার আগেই
আনজারাকে বলে দাও তুমি পূর্বে কোন বিয়ে করো নাই।স্বর্ণভা নাহিয়ান তালুকদার আর তাজমিরা জান্নাত স্বর্ণার ঔরসজাত সন্তান। দুনিয়ার মানুষ না জানুক আমার মেয়েটাকে তুমি সত্যিটা বলে দাও।
চলবে——–
(পরবর্তী পর্বে নাহিয়ান তালুকদার কে?তাজমিরা জান্নাত স্বর্ণা কে খোলাসা করবো। গল্পের রহস্য এখানেই শেষ না।আপনারা ধৈর্য্য দারুণ করুন। আর দুই পর্ব আনজারাকে সহ্য করুন। গল্পে আগের মতো রিচ নাই। আমি হতাশ দয়া করে কমেন্ট, রিয়েক্ট, শেয়ার করবেন)

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here