কথা দিলাম 🌸❤️ ||পর্ব ~ ৫|| কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

0
224

কথা দিলাম 🌸❤️
||পর্ব ~ ৫||
কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

“আমি জানি আমি তোমাকে ঠিক কতটা আঘাত করেছি। আমি এতদিন সুযোগ পেয়েও তোমার কাছে যাইনি শুধুমাত্র এই ভেবে যে, ঠিক কোন মুখে আমি তোমার সামনে গিয়ে দাঁড়াবো? যেই মানুষটা আমাকে নিজের সবটা উজাড় করে ভালোবেসেছে তাঁকে আমি প্রতিদান হিসেবে শুধু কষ্টই দিয়েছি! এটার সত্যতা আজ তুমি আমাকে প্রমাণ করে দিলে। কিন্তু বিশ্বাস করো? আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি, আমার কি করা উচিৎ আমি বুঝে উঠতে পারিনি।”

সিয়ারা আবার কেঁদে উঠলো। বিগত তিরিশ মিনিট ধরে সে শুধু কাঁদছে। আধভিকের শেষের কথাগুলো তাঁকে নিজের চোখে অপরাধী বানিয়ে দিয়েছে। সে জানতো সে অপরাধী কিন্তু আধভিকের কথাগুলোতে আরো বেশি করে সে নিজের অপরাধ উপলব্ধি করতে পারছে।

“এখন আমি হাজার চাইলেও আমার ভুল শুধরাতে পারবো না। পারবো না ছুটে তোমার কাছে গিয়ে বলতে, আমি এখনও তোমাকে ভালোবাসি আধভিক! ভীষণ ভালোবাসি! নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসি! আর সেই উপায় নেই। আমি নিজেই সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছি। নিজের হাতে তিনজনের জীবনটা নষ্ট করেছি। তোমার জীবনটা শে!ষ করে দিয়েছি। আমার ভুলের পরেও তুমি আমাকে শাস্তি না দিয়ে সাহায্য করছো। এটাই আমার কাছে অনেক বড়ো শাস্তি কারণ তুমি এতকিছুর পরেও আমাকে ভালোবাসছো, আর আমি? আমি শুধু কষ্ট দিয়েছি তোমায়। এভাবে, এভাবে আমাকে অপরাধী করে তুলো না। প্লিজ, প্লিজ!”

সিয়ারা কাঁদতে কাঁদতে ওয়াশরুমের দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে, ধীরে ধীরে বসে পরলো। অঝোরে কাঁদছে সে আজ দু বছর পর। দরজার অপর প্রান্তে, সিয়ারা ঠিক যেখানে বসে আছে সেখানেই আধভিক বসে আছে দরজায় মাথা ঠেকিয়ে। চোখের কোণ থেকে জল গড়িয়ে পরলে সেটা মুছে নিয়ে আধভিক মনে মনে বললো,

“তুমি আমাকে যতই কষ্ট দাও না কেন, আমি পারবো না তোমাকে কষ্ট দিতে। কিছুতেই পারবো না! তুমি আমাকে ভালোবাসার মানে বুঝিয়েছো। ভালোবাসতে শিখিয়েছো। কষ্ট দিতে তো শেখাওনি? আর যে আমার পুরো জীবনটাই বদলে দিয়েছিলো এক নিমিষে। আমার এই রঙহীন জীবন, ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে তুলেছিলো তাঁকে আমি কীভাবে কষ্ট দেবো? আমি মনে করি শুধুমাত্র তোমার অধিকার ছিলো আমার জীবন শে!ষ করার কারণ এই জীবন তো তোমারই দেওয়া। যে শুরু করে, সেই না হয় শে!ষ করলো। আগে আমি যেভাবে বাঁচতাম সেটাকে তো বাঁচা বলে না, সেটাকে জীবন বলে না তুমিই তো বলেছিলে। কিন্তু যদি আমাকে আগের মতোই বাঁচতে হয় তাহলে কেন এসেছিলে তুমি কিছুক্ষণের জন্য? তুমি পারতে না আমার রাতের অন্ধকার আকাশের মতো জীবনে চাঁদের আলোর মতো থেকে যেতে? পারতে! কিন্তু তুমি কিছুক্ষণের জন্য জোৎস্ন্যার মতো এলে, আমার অন্ধকার জীবনটা আলোয় ঝলমল করে তুললে আর আবারও মিলিয়ে গেলে অন্ধকারে।”

আধভিক চোখ বন্ধ করে নিলে আবারও তাঁর চোখের কোণ বেয়ে জল গড়িয়ে পরলো। ভিতর থেকে জলের আওয়াজ পেতেই আধভিক উঠে দাঁড়ালো, আর চলে গেলো দ্রুত পেয়ে ঘর থেকে। কিছু মুহূর্ত আগে সে যায়নি, সিয়ারাকে কাঁদতে কাঁদতে ওয়াশরুম যেতে দেখে আবার ঘরে ঢুকে এসেছিলো। সে বা সিয়ারা কেউই জানে না তাঁরা একে অপরের বিপরীতে বসে আছে। সিয়ারা ওয়াশরুম থেকে বেরোতেই ওর নাকে পরিচিত একটা সুবাস এসে বারি খেলো।

“আধভিক কি যায়নি? কিন্তু ও তো তখনই চলে গেছিলো তাহলে এখনও ঘরে ওর পারফিউমের স্মেল কীভাবে আসছে?”

সিয়ারা এদিক ওদিক তাকালো কিন্তু কাওকে দেখতে পেলো না। তাই হাল ছেড়ে দিয়ে সেন্টার টেবিলের উপর পরে থাকা কনট্র্যাক্ট পেপারটার দিকে এগিয়ে গেলো। পেপারটা একবার দেখে নিয়ে নিজের হ্যান্ডব্যাগে ভরে নিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। হোটেল থেকে বেরোতেই সে দেখলো আধভিকের অ্যাসিস্টেন্ট সোহমকে দাঁড়িয়ে থাকতে। সিয়ারাকে দেখতেই সে তাঁর উদ্দেশ্যে একটু এগিয়ে গিয়ে বললো,

“আপনি এসে গেছেন ম্যাডাম? স্যার আপনাকে আপনার বাড়িতে পৌঁছে দিতে বলেছেন। আসুন, আমি পৌঁছে দিচ্ছি।”

“না না। এসবের কোনো দরকার নেই। আমি চলে যেতে পারবো। আপনি ব্যতিব্যস্ত হবেন না এটা নিয়ে।”

“ম্যাডাম এটা আমার ডিউটি। স্যার আমাকে অর্ডার দিয়েছেন আপনাকে ঠিক মত পৌঁছে দেওয়ার জন্য। প্লিজ, আসুন।”

সিয়ারা আর কথা না বাড়িয়ে সোহমের কথা মতো গাড়িতে উঠে বসলো। সোহম সামনের সিটে বসতেই ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিলো। প্রথমে একটু ইতস্তত বোধ করলেও, সাহস করে সোহম মনের মধ্যে চলতে থাকা কথাটা জিজ্ঞেস করেই ফেললো সিয়ারাকে।

“স্যারের প্রস্তাবে আপনি কি রাজি ম্যাডাম?”

“হম? এখনও ভেবে উঠতে পারছি না। আর প্লিজ! আমাকে ম্যাডাম বলতে হবে না তোমায় সোহম দা।”

সোহমের হাসির রেখা প্রশস্ত হলো সিয়ারার উত্তরে। তবুও কিছুটা অভিমান নিয়ে বললো,

“মনে আছে তাহলে দাদা কে? আমি তো ভেবেছিলাম ভুলে গেছেন।”

“কোনো কিছুই ভুলতে পারিনি জানো তো? ভুলতে পারলে তো হয়েই যেত। বাদ দাও, কেমন আছো তুমি?”

“ঠিকই আছি। কিন্তু তোর কথা বাদ দিলে তো চলবে না। কতদিন আর পালিয়ে বেরাবি? পারলি কি পালাতে? সেই তোকে মুখোমুখি হতেই হলো।”

“হম, এবার থেকে প্রতিনিয়ত হয়তো মুখোমুখি হতে হবে নিজের ভুলের।”

“কেন করেছিলি এমন ভুল? যা শোধরানোর উপায় নেই। যার অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো উপায় নেই?”

সিয়ারা নিশ্চুপ সোহমের প্রশ্ন শুনে। চোখ জলে ভরে উঠেছে ইতিমধ্যে। সোহমও কথা বলছে না, পিন পতন নীরবতা বিরাজ করছে গাড়ির মধ্যে।

“যেটা হওয়ার সেটা হয়ে গেছে। আর ভেবে লাভ নেই।”

“তোমার স্যারকে বলো একবারে শাস্তি দিতে। এভাবে তিলে তিলে আমাকে শে!ষ না করতে। আমি খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারছি ও আমাকে প্রতিনিয়ত একটু একটু করে শে!ষ করে দেবে। ওর মধ্যে জ্ব!লতে থাকা আগু!নে আমাকে পু!ড়তে হবে।”

সোহম হাসে। সিয়ারা অবাক চোখে তাকালে বলে,

“স্যারের মধ্যে থাকা আগুনে স্যার নিজেই পুড়ে মরছে। তোকে আর কি পোড়া!বে? ভুল তুই করেছিস কিন্তু শাস্তি হয়তো উনি পাচ্ছেন। এইভাবে আঘাত না করলেও পারতি। তোর মনে হয় উনি তোকে শাস্তি দিতে পারেন?”

“তোমার মনে হয় ও আমাকে কোনো শাস্তি দিচ্ছে না। আমার উপকার করছে, আমার ভালো চাইছে। এটাই তো সবথেকে বড়ো শাস্তি সোহম দা। যে ওর সাথে এতো বড়ো অন্যায় করেছে তাঁকে ও কোনো শাস্তি না দিয়ে মুখ বুজে সব মেনে নিয়ে, তাঁরই উপকার করছে। তাঁকে ভালো রাখার চেষ্টা করছে। আমাকে কতোটা অপরাধী বানিয়ে দিচ্ছে নিজের কাছে সেটার ধারণা ওর নেই। আমার মতে এর থেকে বড় শাস্তি আর কিছু হয় না। ঘৃনা আসছে আমার নিজের প্রতি।”

সিয়ারা দু হাতে নিজের মুখ ঢেকে নিলে সোহম চুপ করে যায়। সিয়ারা ভুল কিছু বলেনি। অন্যায় হয়েছে জেনেও রাগ না দেখিয়ে, ক্ষোভ না প্রকাশ করে চুপ করে থাকার মতো ভয়ানক শাস্তি আর একটা নেই পৃথিবীতে। নিজের বিবেক নিজেকে শে!ষ করে দেয় সেক্ষেত্রে।

“সোহম দা? ও ভালো আছে তো? নাকি অভিনয় করছে শুধু?”

“এর উত্তর তোর জানা। তাও বলছি, স্যার প্রোডিউসার না হয়ে অভিনেতা হলে আরো বেশি বিখ্যাত হতেন।”

সিয়ারা সোহমের ঘোরানো উত্তর পেয়েও সবটা বুঝে গেলো। চোখ চেপে বন্ধ করে পিছন দিকে মাথা এলিয়ে দিলো। সোহম শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো আড় চোখে তাকিয়ে। কিছুক্ষণ পর, সিয়ারার বাড়ির সামনে গাড়ি দাঁড় করাতেই সিয়ারা নেমে গেলো।

“আগামীকাল দেখা হবে। শুভ রাত্রি।”

“শুভ রাত্রি।”

সিয়ারার কথা বলার ধরন দেখে সোহম বুঝেছে আধভিকের প্রস্তাব সে মেনে নিয়েছে। এখন সেটা শুধু আধভিককে জানানো বাকি। এখন আগামীকাল সকালের অপেক্ষা। কিন্তু সামনে যে ঠিক কি হতে চলেছে তার আন্দাজ করতে পারছে না সোহম। বেশি না ভেবে সিয়ারা বাড়িতে প্রবেশ করতেই সে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়।

“সিয়া মা, তুমি একা ফিরলে যে? দেবু কোথায়?”

“দেব বাড়ি ফেরেনি? আমি তো ওকে ফিরে আসতে বলেছিলাম।”

ড্রয়িং রুমে আসতেই সুধাংশু বাবুর কথা শুনে সিয়ারার মনে হলো দেবাংশু হয়তো ওর অপেক্ষা করছে। সে বলেছিলো বেড়ানোর সময় ফোন করতে। কিন্তু ও তো জানিয়ে দিয়েছিলো যাতে না অপেক্ষা করে। তৎক্ষণাৎ সিয়ারা ফোন করলো দেবাংশু কে।

“তুই কোথায় দেব?”

“ফিরছি।”

কেটে দেয় এটুকু বলেই দেবাংশু। সিয়ারা সুধাংশু বাবুকে চিন্তা করতে না বলে নিজের ঘরে চলে যায়। দেবাংশু যে রাগ করেছে সেটা বুঝতে পেরেছে সিয়ারা। ওকে বুঝিয়ে বলতে হবে বাড়ি ফিরলে, কেন ও আর দেবাংশুকে ডাকেনি।

দেবাংশুর ঘরে,

দেবাংশু বাড়ি ফিরে, ফ্রেশ হয়ে গল্পের বই নিয়ে বসেছে। দরজায় টোকা পরলে সেদিকে না তাকিয়েই দেবাংশু উত্তর দেয়,

“আসতে পারিস ভিতরে।”

সিয়ারা গুটি গুটি পায়ে ঘরে ঢুকে পরে। ওর দিকে দেবাংশু এখনও পর্যন্ত তাকায়নি। দেবাংশুর হাবভাবেই সিয়ারা বুঝতে পারছে সে রেগে আছে।

“রাগ করেছিস তুই?”

“রাগ করার মত কোনো কাজ করেছিস তুই?”

“আধভিকের অ্যাসিস্টেন্ট আমাকে বেরানোর সময় বললো আধভিক বলেছে আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে। তাই আমি আর না করতে পারিনি। তোকে তো বলেছিলাম ফিরে আসতে।”

“হম।”

“এই দেব? রাগ করে আছিস কেন বল তো? সমস্যা হলে তোকে তো কল করতাম আমি।”

“রাগ করিনি আমি। এখনই যদি রাগ করি তাহলে পরবর্তী সময়ে কি করবো?”

“মানে?”

সিয়ারা বেশ অবাক হলো দেবাংশুর কথায়। দেবাংশু সেটার পাত্তা না দিয়ে বললো,

“শুয়ে পর গিয়ে অনেক রাত হয়েছে। কাল সকালে আবার বেড়াতে হবে তো? আমি পৌঁছে দিয়ে আসবো।”

“তুই কীভাবে জানলি?”

“আধভিক কল করেছিলো আমাকে। বললো তোকে নিয়ে চলে আসতে আগামীকাল। নিউ সিরিয়ালটা নিয়ে কথা আছে। ডিরেক্টর কেও ডেকেছে।”

“ওহ!”

সিয়ারা একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো দেবাংশুর কথা শুনে। সে ভাবছিলো আধভিক হয়তো কনট্র্যাক্ট এর কথাটা বলে দিয়েছে। কিংবা সুধাংশু বাবুর সাথে কাছের কেউ ‍‍ষড়যন্ত্র করেছে এটা জানতে পারলেও মাথা গরম করে ফেলবে।

“রাগ করিস না দেব।”

“করিনি সিয়া। আমি জানি তুই ভুল কিছু করবি না। তোর যেটা ঠিক মনে হচ্ছে, তোর মন যেটা চাইছে সেটাই কর। অন্যের কথা মত চলিস না। আমি জানি এক ভুল দুবার করবি না তুই। আমি পাশে আছি সবসময় তোর।”

সিয়ারা সৌজন্যমূলক একটা হাসি দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে দেবাংশু শুয়ে পরে। সিয়ারা ঘরে গিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে আগামীকাল সকালের জন্য।

পরেরদিন সকালে,

“আসতে পারি মিস্টার রায় চৌধুরী?”

“ইয়েস অফকোর্স। প্লিজ, আসুন।”

আধভিক নিজের ল্যাপটপে কিছু কাজ করছিলো এমন সময় দেবাংশু নক করলে আধভিক সঙ্গে সঙ্গে ভিতরে আসতে বলে। ভিতরে আসার পর আধভিক উঠে দাঁড়িয়ে সমরেশ বাবু ও দেবাংশুর সাথে হ্যান্ডশেক করে নিয়ে ওদের বসতে বলে।

“সমরেশ বাবু, আমি ঠিক করেছি আপনাদের সিরিয়ালটা স্থগিত রাখবো।”

“কেন? কোনো কি অসুবিধা আছে? তাহলে বলো আমি শুধরে নেবো কিন্তু…

“আপনি ব্যস্ত হবেন না। আমি এই সিরিয়ালটা অবশ্যই কন্টিনিউ করবো। কিন্তু যেহেতু এখনও সিরিয়ালটা শুরু হয়নি শুধু প্রোমো দেখানো হয়েছে তাই আমি ঠিক করেছি কিছুদিন বাদে এটার শুটিং শুরু করবো।”

দেবাংশু আধভিকের কথা শুনে সমরেশ বাবুর দিকে তাকায়। তারপর জিজ্ঞেস করে,

“কিন্তু এখন কেন নয়?”

“আসলে, আমি চাইছি সমরেশ বাবু আমার হয়ে একটা সিনেমা তৈরি করুক।”

“সিনেমা? আমি?”

“হ্যাঁ, আপনি। আপনিই পারবেন। আমি আপনাকে স্ক্রিপ্ট পাঠিয়ে দেবো। আপনি পড়ে নিয়ে আমাকে জানাবেন কেমন হতে পারে। এই সিনেমার কাজ শেষ হলে আপনি আপনাদের সিরিয়ালের শুটিং শুরু করতে পারেন।”

“আচ্ছা কিন্তু হিরো, হিরোইন মানে কাস্ট সম্পর্কে কি কিছু ভেবেছেন?”

“এখনও পর্যন্ত না। আপনার স্ক্রিপ্ট পছন্দ হলে একসাথে মিলে ঠিক করবো না হয়। মিস্টার গাঙ্গুলি? আপনার কি কোনো আপত্তি আছে?”

দেবাংশু একটু সময় নিয়ে ভেবে উত্তর দেয়,

“নাহ। সিনেমার শুটিং এ এটলিস্ট ছয় মাস তো লাগবেই। আমি তাহলে ততদিনে আমার সাইন করা শর্ট ফিল্ম টা কমপ্লিট করে নেবো। সিয়া? তোর কোনো প্রবলেম আছে?”

এতক্ষনে আধভিক সিয়ারার দিকে তাকালো। এতক্ষণ ধরে একবারের জন্যেও সে সিয়ারার দিকে তাকায়নি। সিয়ারা মাথা নেড়ে কোনো সমস্যা নেই জানাতেই আধভিক সমরেশ বাবুকে বললো,

“ঠিক আছে। তাহলে এটাই কথা রইলো তবে?”

“হ্যাঁ, একদম। তুমি আমাকে স্ক্রিপ্ট পাঠিয়ে দাও আমি তোমাকে রাতের মধ্যে জানিয়ে দেবো।”

“তাহলে আজ আমরা আসি? আসলে আমাকে একটু বেড়াতে হবে কাজ আছে।”

“চা, কফি কিছু নেবে না?”

“কয়েক মাস পর আসা যাওয়া তো লেগেই থাকবে। তখন না হয় হবে। আজ উঠি।”

“সমরেশ বাবু আপনিও চলে যাবেন?”

“হ্যাঁ আধভিক। আজ একটু কাজ তাড়া আছে।”

“আচ্ছা।”

দেবাংশু আর সমরেশ বাবু উঠে দাঁড়ালেও সিয়ারা উঠে দাঁড়ায় না। দেবাংশুর দিকে তাকিয়ে বলে,

“তোমরা এগাও, আমি আসছি। আমার একটু দরকার আছে ওনার সাথে।”

দেবাংশু আর সমরেশ বাবু এগিয়ে গেলে সিয়ারা ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। কেবিন থেকে বেড়াতেই সে আধভিকের দিকে ফেরে, দেখে আধভিক আবার ল্যাপটপে মুখ গুঁজেছে। নিজের হ্যান্ডব্যাগ থেকে চুপচাপ কনট্র্যাক্ট পেপারটা বার করে আস্তে করে টেবিল ঘেষিয়ে আধভিকের দিকে ঠেলে দিলে আধভিক সেটার দিকে তাকিয়ে দেখে সিয়ারা সাইন করে দিয়েছে।

“ওকে! আপনি যখন রাজি তাহলে আমি আপনাকে কল করে নেবো।”

“আমাকে কি করতে হবে?”

“ঠিক করা হয়নি এখনও।”

“আমার কাছে জুয়েলারি ব্র্যান্ড থেকে ফটোশুটের অফার…

“করবে না! আই..আই মিন করতে পারবেন না। কনট্র্যাক্ট এর বাইরে এটা।”

সিয়ারার কথা শুনে আধভিক উত্তেজিত হয়ে সিয়ারার দিকে তাকিয়ে কথা বলে। সিয়ারা বেশ মজা পায় কারণ সে ইচ্ছা করেই কথাটা বলেছে। আধভিক কিছুতেই ওর দিকে তাকাচ্ছিলো না তাই জন্য এমন করা। আধভিকের কথা শুনে সিয়ারা মুচকি হাসলে আধভিক বুঝতে পারে এটা সিয়ারা জেনে শুনে করেছে।

“আমার একটু কাজ আছে আমি উঠলাম। সোহম! ম্যাডামের কিছু দরকার হলে দেখে নিও। আমি আসছি।”

“আপনাকে যেতে হবে না। এটা আপনার অফিস, আমার জন্য আপনি কেন বেরিয়ে যাবেন? আমি চলে যাচ্ছি।”

সিয়ারা উঠে দাঁড়িয়ে কথা বলে বেড়িয়ে যেতে নিলে আধভিক খুব ধীরে বলে,

“হ্যাঁ! চলে যাওয়াটাই তো জানো শুধু।”

কথাটা শুনতেই সিয়ারা সঙ্গে সঙ্গে আধভিকের দিকে তাকায় করুন ভাবে। আধভিক ঘুরে যায় পিছন দিকে। সিয়ারা একবার সোহমের দিকে তাকায় তারপর বেরিয়ে যায় আর কিছু না বলে।

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here