কথা দিলাম 🌸❤️ ||পর্ব ~ ৬|| কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

0
194

কথা দিলাম 🌸❤️
||পর্ব ~ ৬||
কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

দুদিন পর,

“আজ দুদিন হতে চললো আধভিক কোনো রকম কোনো খবর দিলো না। ব্যাপারটা কি? আমি কি একটা ফোন করে খোঁজ নেবো? নাহ, এটা ভালো দেখাবে না। কিন্তু ওর সাথে কথা বলাটা আমার জরুরি। আমি চাই না আঙ্কেল বা দেব জানুক আমি ওর প্রোডাকশন হাউজ বা এ. ভি. আর. ডিজাইনসের হয়ে কাজ করছি। তাছাড়া আমি তো মডেলিংয়ের বিশেষ কিছু জানি না, আঙ্কেলের কথায় প্রথম দেবী করতে যাচ্ছিলাম। এগুলো তো জানানো হলো না।”

সিয়ারা হাতে ফোনটা নিয়ে পায়চারি করছে ঘরের মধ্যে আর নিজে নিজে কথা বলছে। এমন সময় নীচ থেকে রাতের খাওয়ারের জন্য ডাক পরলে সে ফোনটা টেবিলে রেখে নীচে চলে যায়। খাওয়া দাওয়া শেষে সে ঘরে এসে ওয়াশরুমে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে নেয়। শোয়ার জন্য বিছানায় উঠতেই নিজের ফোনের কথা মনে পরলে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে ফোনটা টেবিলে। এগিয়ে এসে টেবিল থেকে ফোনটা তুললেই ফোনের লাইট জ্বলে ওঠে আর সাথে সাথে একটা নোটিফিকেশন দেখতে পায় আর মনে মনে বলে,

“আধভিক টেক্সট করেছে?”

তৎক্ষণাৎ মেসেজ ওপেন করে সিয়ারা দেখে আধভিক কল করার জন্য অনুমতি চেয়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগে। সিয়ারাও তো কথা বলতেই চেয়েছিলো তাঁর সাথে তাই আর না ভেবে উত্তর দিলো,

“ইয়াহ, সিওর।”

আধভিকের কলের ওয়েট করতে থাকে সিয়ারা। যেহেতু কথা নরমাল মেসেজে হচ্ছে তাই বোঝার উপায় নেই অপরজন মেসেজ দেখেছে নাকি না। প্রায় পাঁচ দশ মিনিট পর হঠাৎ করেই সিয়ারার ফোন বেজে ওঠে।

“হ্যালো?”

“স্যরি ফর লেট। আমি একটু বিজি ছিলাম তাই আপনার রিপ্লাই টা খেয়াল করিনি।”

“ইটস ওকে। লেট আমারও হয়েছে রিপ্লাই করতে। বলুন কি বলবেন?”

“হ্যাঁ বলছি। আপনি আমাকে আপনার মেইল আইডিটা একবার মেসেজ করে দেবেন প্লিজ?”

“মেইল আইডি কেন?”

“কিছু ডিজাইনসের ছবি পাঠাবো।”

“ড..ডিজাইনস?”

“হম। আমি যেই ছবিগুলো পাঠাবো সেগুলো একবার দেখে নিয়ে ওই ক্যাটাগরির নিউ ডিজাইনস আমাকে বানিয়ে দিতে হবে আপনাকে।”

“আমি পারবো না।”

সিয়ারা এক নিশ্বাসে কথাটা বলে ফেললো। সে ভারী নিশ্বাস নিচ্ছে আর মনে মনে যেটা ভাবছে সেটা বলা শুরু করলো আধভিককে।

“তু…আপনি কি ঠিক করেছেন বলুন তো? আমাকে আমার অতীতের মুখোমুখি প্রতিটা মুহূর্তে করবেন তাই তো? এইভাবে প্রতিনিয়ত আমাকে নিজের অতীতের সামনে দাঁড় করিয়ে আমাকে শাস্তি দিতে চাইছেন? বেশ ভালো পথ বেছে নিয়েছেন শাস্তি দেওয়ার। ঠিক যেই জিনিসের মুখোমুখি আমি হতে চাই না ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আপনি সেই জিনিসগুলোর সামনেই আমাকে দাঁড় করাচ্ছেন। আমি…

“সিয়ারা প্লিজ!”

আধভিকের কণ্ঠস্বর বদলে যাওয়ায় সিয়ারা থেমে গেলো। হঠাৎ করেই আধভিকের কণ্ঠের স্বর আদেশ থেকে অনুরোধে বদলে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে সিয়ারার। সে চুপ করে রইলো আধভিকের পুরো কথা শোনার জন্য।

“আই..আই নিড ইউর হেল্প সিয়ারা। দেখুন, আপনার কথা মতো আমি যদি আপনাকে শাস্তি দিতে চাইতাম তাহলে প্রথম দিনই আপনাকে নিজের কোম্পানিতে নিয়ে আসতে পারতাম আর ডিজাইন করতে বলতাম। আমার কোনো উদ্দেশ্য ছিলো না আপনাকে ডিজাইন করতে বলার কিন্তু আমি একটা সমস্যায় পরেই আপনাকে বলছি।”

“সমস্যা? কি সমস্যায় পরেছেন?”

“অ্যাকচুয়ালি যে এম্প্লয়ীর ডিজাইন দেওয়ার কথা ছিলো সে হঠাৎই ভীষণ অসুস্থ হয়ে পরেছে। ডিজাইন করার মতো অবস্থা তাঁর নেই। এদিকে আমাদের হাতে সময়ও নেই, ক্লাইন্ট কে পরশু দিনের মধ্যে ডিজাইনগুলো দেখাতে হবে। ইউনিক ডিজাইনস উনি চেয়েছিলেন কিন্তু সেটা হয়তো এই মুহুর্তে পসিবল না। তবে যদি কোনো ডিজাইনসই না দেখাতে পারি তাহলে সেটা খুব বাজে দেখাবে। আপনি একটু বোঝার চেষ্টা করুন…

“আমার একটা শর্ত আছে। যদি সেটা মানেন তাহলেই আমি চেষ্টা করে দেখতে পারি নাহলে আমার কিছু করার নেই।”

“বলুন, কি শর্ত আছে আপনার।”

“আমি আপনাকে ডিজাইনস বানিয়ে পাঠিয়ে দেবো। আপনাকেই সেগুলো প্রেজেনট করতে হবে ক্লাইন্টের সামনে। আমি যেতে পারবো না কারণ..

“কারণ আপনি চান না সুধাংশু বাবু জানুক আপনি আমাদের হয়ে কাজ করছেন। তাই তো?”

“আপনি কীভাবে জানলেন?”

সিয়ারা বেশ অবাক হলো আধভিক ওর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলে দেওয়ায়। আধভিক কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

“আমিও চাই না এখনই কেউ জানুক আপনি আমাদের হয়ে কাজ করছেন। আমি আপনাকে আমার অফিসে আজকে ডাকতেই পারতাম কিন্তু ডাকিনি শুধুমাত্র জানাজানি হবে সেই ভয়ে। ইভেন আপনাদের প্রোডাকশন হাউজ যে আমরা কিনে নিয়েছি সেটাও প্রকাশ্যে যাতে না আসে তার সবরকম চেষ্টা আমি করে যাচ্ছি। আমি চাই না সুধাংশু স্যারের কোনো রকম অসন্মান বা অপমান হোক। নাহলে আমি আজকে আপনার বাড়িতে গিয়ে কথাটা বলতে পারতাম আর আপনি আমার হয়ে কাজ করতে বাধ্য কনট্র্যাক্ট পেপার অনুযায়ী সেটাও জানিয়ে দিতে পারতাম।”

সিয়ারা নীরব থাকলে আধভিকও নীরব হয়ে যায়। সে জানে সিয়ারার অবস্থাটা এখন কি। সে জানে সিয়ারা নিজের কান্না আটকানোর অবিরাম চেষ্টা চালাচ্ছে। আধভিকের ধারণাটা সঠিক প্রমাণ করে দিলো সিয়ারা কিছুক্ষণের মধ্যেই। হালকা ফোঁপানোর আওয়াজ পেলো সে ফোনের অপর পাশ থেকে, সাথে সাথে হাত মুঠ করে চোখ বন্ধ করে নিলো আধভিক।

“আপনি আমাকে ডিজাইনস পাঠিয়ে দিন আমি নিজের সবটা দিয়ে চেষ্টা করবো কমপ্লিট করে দেওয়ার।”

“ওকে, আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি। থ্যাংক ইউ সো মাচ।”

“থ্যাংক ইউ টা সত্যি কি আপনার বলা উচিত এ. ভি. আর.?”

আধভিক নীরব রইলো। আজ বহুদিন পর সিয়ারার মুখে নিজের শর্ট ফর্মের নাম শুনতে পেলো। সিয়ারাই এই নামের উল্লেখ করেছিলো প্রথম। সিয়ারাকে দেখলেই খালি অতীতগুলো হাতছানি দেয় আধভিককে। বারবার সে অতীতে হারিয়ে যায়। কারণ সিয়ারা যে তাঁর জীবনের সাথে সাথে তাঁর অতীতের সাথেও ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। বাস্তবে সিয়ারা তাঁর ভবিষ্যত হতে না পারলেও কল্পনায় অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত সবকিছুই শুধু সিয়ারা। সত্যি সে তাঁর জীবনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত তাই তো কিছুতেই ভুলতে পারেনি তাঁকে হাজার চেষ্টার পরেও।

“এ. ভি. আর. আমি আপনাকে আরো কিছু বলতে চাই।”

“হ.. হম! বলুন কী বলবেন। শুনছি আমি।”

“আসলে, আমি এই প্রথম আঙ্কেলের কথায় অভিনয় জগতে পা রাখতে চলেছিলাম। তাই আমি কিন্তু খুব একটা পারদর্শী নই অভিনয়ে। আর মডেলিং? ওরে বাবা ওই জিনিসটা আমার জন্য নয়। তাই প্লিজ, আপনার কাছে আমার একটাই রিকুয়েস্ট আপনি আমাকে মডেল হওয়ার জন্য বলবেন না।”

“আচ্ছা, আর কিছু?”

“আর, আমি প্রায় অনেকগুলো দিন পেন্সিল ছুঁয়ে দেখিনি। তাই হয়তো খুব একটা ভালো ডিজাইন তৈরী করতে পারবো না। তবে চেষ্টা করবো ভালো করার।”

“আর?”

“আর… ক..কিছু না। আর কিছু না।”

“আমি তাহলে রাখি?”

“হ্যাঁ। গুড নাইট।”

“গুড নাইট।”

আধভিক ফোন রেখে দিলে সিয়ারা মনে মনে বলে,

“নিজেকে সংযত কর সিয়া! তোর মনের মানুষ এখন অন্য একজনের স্বামী। আর সেই অন্য একজন টা তোর বোন। নিজের সীমা অতিক্রম করিস না, আজ নিজের ভুলেই তোর এই পরিস্থিতি। নিজের বোকামির জন্য তুই সব পেয়েও হারিয়েছিস। আধভিকের সাথে তোর সম্পর্ক শুধুমাত্র এক বছরের, তারপর আবার যে যার পথে।”

কথাটা নিজেকে ভালো মত বুঝিয়ে দিলো সিয়ারা। একটা নিশ্বাস ফেলে সে বিছানায় গিয়ে চোখ বুজলো। ঘুম আসছে না, কেন জানো অতীতের ভুলগুলো আজ কাল চোখ বন্ধ করলেই ভেসে ওঠে। আগে শুধু রাতে মনে পড়তো কিন্তু এখন তো চোখ বুজলেই মনে পরে। ভীষণ অস্বস্তি হয় ওর, মনে হয় “ইশ! যদি অতীতে গিয়ে নিজের ভুল শুধরে সবটা ঠিক করে ফেলতে পারতাম? কতই না ভালো হতো।” আর ভাবে না এই বিষয়ে। যেই বিষয় নিয়ে ভাবা বৃথা সে বিষয় নিয়ে ভেবে লাভ নেই, এখন ফোকাস করতে হবে নিজের কাজের উপর।

অন্যদিকে,

“সমরেশ বাবু আপনি স্ক্রিপ্ট টা এতো তাড়াতাড়ি পড়ে ফেলেছেন?”

“কি করবো বলো? পড়া শুরু করতেই কেমন একটা নেশা লেগে গেলো পরবর্তীতে কি হবে তা জানার জন্য। আচ্ছা, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?”

“হ্যাঁ করুন না। আপনার কি ভালো লাগেনি স্ক্রিপ্ট টা নাকি কোনো চেঞ্জ করতে হবে?”

“ভালো না লাগার প্রশ্নই ওঠে না। আমি জানতে চাইছিলাম যে, এটা তোমার লেখা তাই না?”

আধভিক নীরব থাকে সমরেশ বাবুর প্রশ্নে। একটা চিনচিন ব্যথা অনুভব হয় তাঁর বুকের বাম পাশে।

“আমি নিশ্চিত এটা তোমার নিজস্ব লেখা। কারণ তুমি যেই অনুভূতি নিয়ে এটা লিখেছো সেটা তোমার সাথে ঘটেছে বলেও তুমি লিখতে পেরেছো। পড়লেই বোঝা যাচ্ছে যে, তোমার অভিজ্ঞতার অনুভূতি তুমি নিজের লেখায় ফুটিয়ে তুলেছ। অন্তত আমার এতদিনের অভিজ্ঞতা তো এটাই বলছে আমাকে।”

“হ্যাঁ, ঠিকই বলছে আপনার অভিজ্ঞতা।”

এতো নীচু গলার স্বর শুনে সমরেশ বাবুর কেমন জানো একটা খারাপ লাগলো। তিনি বুঝতে পারলেন আধভিক কতোটা আঘাতপ্রাপ্ত। কৌতূহলবশত আবার জিজ্ঞেস করে ফেললেন,

“আর কিছু কি করা যেতে পারে না?”

“নাহ। সব রাস্তা বন্ধ। আচ্ছা আমি আপনার সাথে আগামীকাল কথা বলছি। আমার একটা কাজ আছে।”

“আচ্ছা।”

আধভিক কল কেটে ফোনটা রেখে দিয়ে দু আঙুল নিজের কপালে চেপে ধরে চোখ বুজে। কিছুক্ষণ পর, ঘুমাতে যাওয়ার ডাক পরলে সে চোখ খুলে সজোরে একটা বারি মারে টেবিলে আর বলে ওঠে,

“কেন তুমি ফিরে এলে? কেন? তুমি ফিরে আসার পর থেকে প্রতিটা মুহুর্তে আমার সাথে যা ঘটছে তার অধিকাংশ তোমার সাথে রিলেট করতে পারছি। অনেক কষ্টে এই জিনিসটা থেকে বেড়িয়ে এসেছিলাম আমি কিন্তু সেই সময়ই তুমি ফিরে এলে। কেন সিয়ারা? আমাকে কি শান্তিতে বাঁচতে দেবে না তুমি? ফেড আপ হয়ে গেছি আমি, জাস্ট ফেড আপ হয়ে গেছি।”

আধভিক চোখ বুজে নিজের চেয়ারে পিছন দিকে মাথা এলিয়ে দেয়। শরীরটা ছেড়ে দিয়েছে ওর। মাথা যন্ত্রণা করছে তাই আবারও আঙুলটা কপালে রেখে ডলতে শুরু করে। কিছুক্ষণ পর হঠাৎই অনুভব করে কেউ ওর মাথাটা টিপে দিচ্ছে। আধভিক নিজের হাত নামিয়ে দেয় আর হালকা হাসে। নিমিষে ঘুমিয়ে পরে।

এদিকে,

সিয়ারা নিজের হাতে একটা খাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ব্যালকনিতে। কিছুতেই ঘুম না আসে হঠাৎ ওর এই খাতাটার কথা মনে পরে। সঙ্গে সঙ্গে খুঁজতে আরম্ভ করে আর বেশ কিছুক্ষণ পর পেয়েও যায়। সবকটা পেজ দেখা শেষে খাতাটা বন্ধ করে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে খাতাটাকে সিয়ারা। চোখ বন্ধ করতেই চোখ দিয়ে জল গাল গড়িয়ে পরে। সে বলে ওঠে,

“এটাই তো আমার স্বপ্ন ছিলো। আমি জানতাম এটা কখনও পূরণ হবে না তাই অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। নিজের সবটুকু দিয়ে বোনের স্বপ্ন পূরণ করার চেষ্টা করছিলাম। আর সেই সময়েই তুমি এলে আমার জীবনে আধভিক। না না, আমি তোমার জীবনে ঢুকে পড়েছিলাম। ভুল করে! কিন্তু এই ভুলটা যদি না করতাম তাহলে প্রেমিকের ভালোবাসা ঠিক কি? সেটা বুঝতাম না।”

কিছুক্ষণ কাঁদার পর একটু নিশ্বাস নিয়ে সিয়ারা আকাশের দিকে চেয়ে অভিযোগ করলো,

“এমনটা কেন করলে মা? কেন এভাবে আমার থেকে সবটা কেড়ে নিলে? নিজের সবটা আমি তোমাকে আর বোনকে উজাড় করে দিয়েছিলাম, কখনও নিজেকে নিয়ে ভাবিনি। তাহলে কেন তুমি আমাকে নিয়ে একটু ভাবতে পারলে না? দিনের পর দিন এইভাবে মরণ যন্ত্রণা সহ্য করার দিকে আমাকে ঠেলে দিতে পারলে? নিজের চোখে নিজেকে অপরাধী বানিয়ে দিলে আমায়? কীভাবে করতে পরলে তুমি এটা আমার সাথে? কীভাবে?”

সিয়ারা ছুটে ঘরে গিয়ে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে বালিশে মুখ চেপে কাঁদতে থাকলো। কাঁদতে কাঁদতে একটা সময় ঘুমিয়ে পরলো ও।

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here