ফুলকৌড়ি (২০) #লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম

0
176

#ফুলকৌড়ি
(২০)
#লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম

সারাদিন তুমুল ঝড়-বর্ষনের পর রাতে গিয়ে নিস্তব্ধ হলো প্রকৃতি।যদি-ও রাত, তবু-ও বাহিরের পরিবেশটা ঘোর আমাবস্যা ন্যায় ঘুটঘুটে আঁধার।শীতল ভাবটা যেনো মাঘের কনকনে ঠান্ডাভাব!সেই ঠান্ডাভাবটা আর-ও বাড়িয়ে দিচ্ছে,মাঝেমধ্যে গ্রীল ভেদ করে আসা মৃদুমন্দ বাতাসে।অতি শীতল ঠান্ডাভাব আবহাওয়ার মধ্যে-ও বেলকনিতে সটান দাঁড়িয়ে আছে নিভান।গায়ে পাতলা টিশার্ট।বলিষ্ঠ দেহটা ক্ষনে ক্ষনে ছুঁয়ে যাচ্ছে শীতল বাতাসে তবু-ও নড়চড় নেই তার।ট্রাউজারের দু-পকটে দু-হাত গুঁজে স্থির পায়ে দাঁড়িয়ে আছে সে।পলকহীন শান্ত,সুগভীর নজরজোড়া তার ঘুটঘুটে আঁধারে আচ্ছন্ন প্রকৃতিতে।জানোয়ার গুলোকে ইচ্ছেমতো পিটিয়ে এসেছে সে।যদি তৃনয় না ঠেকাতো তবে আজ মৃতলাশে পরিনত করে আসতো সবকটাকে।যদি-ও নিঃশ্বাস নেওয়ার অবস্থায় ছেড়ে আসেনি।যদি কোনোক্রমে বেঁচে যায়,তবে ওদের হাত পা হাড়গোড় ঠিকঠাক হতে কতো মাস সময় লাগবে তারও ঠিক নেই।তবু-ও এতো মেরেও শান্তি মেটেনি নিভানের।মনে হচ্ছিলো,সবগুলোর আত্মা বের করে,মৃত লাশে পরিনত করে তারপর ছেড়ে আসতে।

কৌড়িকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে তখন ওই অবস্থায় বের হয়ে,তৃনয়কে ফোন দিয়ে সাথে নিয়েছিলো সে।তারপর ছেলেগুলোর বিষয়ে তথ্য নিয়ে খুঁজে খুজে বের করতে যেটুকু সময় লেগেছে।কলেজের আশেপাশে একটা বদ্ধ ঘরে জুয়া খেলছিলো আর হাসি তামাশা করছিলো জানোয়ারগুলো।বিষয়টা কৌড়িকে নিয়েই ছিল।ওদের মধ্যে একজন লালসিত অঙ্গিভঙ্গি করে বলছিলো যে–ওই সিনজিওয়ালা যদি তখন মাঝখানে এসে সময়টা ওয়েস্ট না করাতো তবে ওমন সুন্দর চিকনাচামেলি ময়না পাখিটা আজ তাদের হাতের মুঠোয় থাকতো।হাতছাড়া হতোনা।আর হাত ছাড়া না হলে এই ওয়েদারে ময়নাটাকে ভোগ করতে কি মজাটাই না পেতো!ইশশ!তন্মধ্যে একটা ছেলের গলায় তখন-ও কৌড়ির ওড়নাটা ঝুলতে দেখে নিজেকে আর কন্ট্রোল রাখতে পারি-নি।ছেলেগুলো কিছু বুঝে উঠার আগেই,সাথে নিয়ে যাওয়া হকিস্টিক দিয়ে এলোপাতাড়ি ইচ্ছেমতো পিটিয়েছে।তাদের আকুতি-মিনতি,জ্বালা-ব্যথা কোনোপ্রকার বাক্য কানে তোলেনি নিভান।শুধু মনের জ্বালা অনুযায়ী ইচ্ছেমতো ছেলেগুলোর যেখানে খুশি সেখানে মেরেছে।প্রথমে তৃনয় সাথে থাকলেও,যখন দেখলো নিভান, আউট অফ কন্ট্রোলে গিয়ে ছেলেগুলোকে পেটাচ্ছে।আধমরা হয়ে গেছে,নাকমুখ দিয়ে রক্ত ছুটছে তখন-ও ছাড়ছে-না।তখন গিয়ে নিজের হাতের হকিস্টিকটা ফেলে দিয়ে নিভানকে বাঁধা দিতে ব্যস্ত হলো তৃনয়।শক্তপোক্ত বলিষ্ঠ দেহের নিভানকে একা সামলিয়ে উঠতে পারা মুশকিল!পারছিলো না তৃনয়।কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছিলো,তবুও নিজের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে,বিভিন্ন কিছু বলেকয়ে তারপর তাকে ঠান্ডা করতে হয়েছে তাকে।না-হলে ওই জানোয়ার গুলোর দাফন করেই তারপর তবে বাড়ি ফিরতো!নিভানকে এতোটা উদভ্রান্ত হতে আগে কখনো দেখিনি তৃনয়।বিধায় আশ্চর্য হয়ে তখন তাকে থামাতে বলতে বাধ্য হয়েছে—পরের বাড়ির একটা মেয়ের জন্য তুই এভাবে নিজেকে কেনো খুনী প্রমান করার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছিস?বাড়ির মেয়েকে উত্যক্ত করেছে,অসম্মান করেছে!মারতে এসেছি,ব্যাস!মেরেছি!তারজন্য খুন করে ছাড়বি নাকি?

তৃনয়ের কথার উত্তর সরূপ মুখে কিচ্ছুটি বলতে পারিনি নিভান।শুধু অসহায়,পাগল পাগল নজরে তারদিকে তাকিয়ে ছিলো।সেই নজরে যেটা বুঝে নেওয়ার সেটা বুঝে নিয়েছিলো তৃনয়।বিস্মিতও হয়েছিলো,এটা ভেবে।যে তার সবসময়ে গম্ভীর হয়ে থাকা তীক্ষসম্পূর্ণ, বুদ্ধিমান বন্ধুটা একটা বাচ্চা মেয়েতে মন হারিয়েছে।সেই মেয়েটাকে উত্যক্ত করার জন্য এতোটা উদভ্রান্ত!এতোটা পাগল পাগল ভাব!তৃনয়ের সেই বিস্মিত ভাবটা আরও বাড়িয়ে তখন নিভান শক্তগলায় বলেছিলো।

‘ও শুধু পরের বাড়ির মেয়ে নয়,তৃনয়।ওর দিকে নজর দেওয়া তো অন্যায় ছিলো!আর সেই অন্যায়টা তো ওরা করেছেই!সাথে ওকে ছুঁতে চেয়ে সেই অন্যায়টা পাপে পরিনত করে ফেলেছে।তারজন্য আমার হাতে খুন হওয়া তো ওদের প্রযোজ্য।ওরা নিভানের ঠিক কোথায় ছুঁয়েছে,ওদের জানা নেই।যদি ওরা বেঁচে ফিরে,তবে রন্ধ্রে রন্ধ্রে টের পাবে।নিভান আওসাফ আহমদের ঠিক কোথায় হাত দিয়েছিলো ওরা।

তারপর আর তৃনয় একটা-ও কথা বাড়াইনি।নিভানের অনুভূতি মেয়েটাকে নিয়ে ঠিক কতোদূর গড়িয়েছে।সেটা নিভানের কথা কাজে বেশ ভালোভাবে অনুধাবন করতে পেরেছে।কথাগুলো ভাবতে ভাবতে চোখ বুঁজে নিলো নিভান।মূহুর্তেই বদ্ধ নজরে ভেসে উঠলো,স্বপ্নে দেখা সেই ক্রন্দনরত চোখজোড়া।যা আজকের ক্রন্দনরত চোখজোড়ার সাথে মিলেমিশে একাকার।সেই স্বপ্নে দেখা ক্রন্দনরত চোখজোড়ার সাথে আজকের চোখজোড়ার নতুন করে মিল পেয়েছে, এমনটা নয়!মিল তো সে সেদিনই পেয়েছিলো যেদিন নাফিমের বাহুভেদ করে ভয়ার্ত চোখজোড়া উঁকি দিয়ে তাকে দেখেছিলো,সেদিনই।তবে সেবিষয়ে অবুঝ শিশুটি হতে চেয়েছিলো সে।পারলো কোথায়!বরং সেসব স্মৃতি তার হৃদয়ে মস্তিষ্কে জোকের মতো জেঁকে ধরে বসে আছে।স্মৃতিকে মধুরতা করতে,শীতল একদল বাতাস তখন সঙ্গী হয়ে ছুয়ে দিলো তাঁকে।নিজের অনুভূতি প্রকাশে বরাবরই সে অক্ষম হলেও,আজ তৃনয়ও খুব ভালোভাবে বুঝে গিয়েছে,কৌড়িকে নিয়ে তার অনুভব।এখন আর-ও একজন জানবে।যদি-ও তাতে তার সমস্যা নেই।তবে ইভানের ব্যাপারটাতে এখনো সে ক্লিয়ার নয়।তবু-ও নিজের মনকে তো শান্ত করতে হবে তাকে!ওই অসুস্থ মেয়েটাকে না দেখা পর্যন্ত তো ভিতরটাকে শান্ত রাখতে পারছেনা।আর না মিলছে নিজের শান্তি।আর না পারছে নিজের ক্লান্ত শরীরটাকে বিছানায় আরাম দিতে।

চোখ খুললো নিভান।আবার শান্ত নজর ফেললো বাহিরের নিকষ কালো আঁধারে!বাড়িতে আসার পর শুনেছে,কৌড়ির প্রচন্ড জ্বর!কড়া ডোজের ঔষধেও নাকি জ্বর নামেনি।ডাক্তারের কাছে না গেলেও,পরামর্শ নেওয়া হয়েছে। আপতত আজকের রাতটা দেখে কালকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে। মা, এমনটা জানিয়েছেন তাঁকে।সেখান থেকেই নিজের দেহের বাহিরটাকে স্বাভাবিক আর শান্ত রাখতে পারলে-ও, ভেতরটাকে নিয়ে প্রচন্ডভাবে অশান্ত সে।দুদন্ড একজায়গায় বসে,শুয়ে,দাঁড়িয়ে শান্তিতে থাকতে পারছে না সে।না পেরে নিজের মনো-শান্তির জায়গা বেলকনিতে চলে এসেছে।তবু-ও শান্তি মিলছে কৈ!
ক্ষনিকের জন্য নিজেকে শান্ত রাখতে পারলে-ও মন মস্তিষ্কে চলছে তার,কৌড়ি কৌড়ি কৌড়ি!এই মেয়ে তাকে সত্যিই পাগল করে দেবে।

নিজেকে আর কতো দমিয়ে রাখবে!এতোযাবত সকল বিষয়ে নিজের ধারালো ব্যক্তিত্ব আর নিজের সিদ্ধান্তকে কঠিনরূপে গুরুত্ব দিয়ে এসেছে সে।সেখানে নিজের কাছের মানুষগুলো ছাড়া প্রধান্য পায়নি কেউ।অন্যের ভালোমন্দ মন অতোটাও গুরুত্ব দিয়ে দেখিনি। পায়-নি তার মন মস্তিকে গুরুত্ব। আর আজ,ওই মেয়েটার কাছে সেই কঠিন ব্যক্তিত্ব ঠুনকো হয়ে গেলো!মন মস্তিস্ক হয়ে গলো পরাজিত!সে, ওই মেয়েটার কাছে পরাজিত সৈনিক!দীর্ঘশ্বাস ফেললো নিভান।নজরজোড়া ফের বন্ধ করে নিয়ে মৃদুস্বরে আওড়ালো।–তবে তার কাছে পরাজিত সৈনিক হতে ক্ষতি কোথায়!নেই ক্ষতি।

নিজের ব্যক্তিত্বের কঠিন্যত্ব বজায় রেখে নিজেকে আর দমিয়ে রাখতে রাখতে পারলে-না নিভান।পা বাড়ালো, নিজের তোলপাড় হয়ে যাওয়া অশান্ত ভিতরটাকে পরম শান্তি দিতে।যাওয়ার সময় রুম থেকে নিজের ফোনটা নিতে ভুললো না।কৌড়ির রুমের সামনে দাঁড়িয়ে কিছু একটা ভাবলো।হয়তো মন দোনো-মোনো করলো..এই এতো রাতে মান্যতার বিস্ময় বাড়িয়ে দিয়ে,মেয়েটার কাছে যাওয়া ঠিক হবে কি-না?এই ঠিক হবে কি-না,শব্দটা মস্তিষ্ক ভাবতেই।ভিতরটা আরও উতলা হলো।বুঝলো,মেয়েটাকে না দেখা পর্যন্ত আজ তার কোনোক্রমে নিস্তার নেই।দরজা বন্ধ।মান্যতাকে ফোন দিলো সে।আজ মান্যতা,কৌড়ির সাথে রয়েছে এটা সে জানে।প্রথমবার কল রিসিভ হলোনা।দ্বিতীয়বার আবারও কল দিলো নিভান।একটানা কল বেজে যাওয়ার পর শেষে গিয়ে রিসিভ হলো।ওপাশ থেকে মান্যতা কিছু বলার আগেই,এপাশ থেকে কিছুটা উদ্বিগ্ন গলায় নিভান বললো।

‘দরজাটা খোল মান্য।

বিস্ময়ের চুড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেলো মান্যতার ভাবনারা।এমনিতেই এতো রাতে দাদাভাই ফোন দেওয়াতে সে বেশ আশ্চর্য।তারউপর দাদাভাই যেটা বললো সেটা কি বাস্তব নাকি সে এখনো ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে চলেছে?নিজ হাতে চিমটি দিলো মান্যতা।ব্যথা পেতেই চোখমুখ কুঁচকে ফেললো।সত্যি জেগে আছে সে!তবে এতোরাতে কৌড়ির রুমে দাদাভাইয়ের কি দরকার?শত ভাবনা মনের মধ্যে ঘুরপাক খেলেও,উত্তর নেই।গায়ের কথাটা ফেলে উঠে দাঁড়ালো মান্যতা।দরজা খুলতেই তার দেখে আসা এতোযাবতকালের,উল্টো মানুষটাকে দেখলো সে। এরকম উদভ্রান্ত চেহারা,অসহায় নজর। এরআগে কখনো এই মানুষটার মধ্যে লক্ষ্য করেছে বলে মনে হয় না মান্যতার।অবাক হয়ে শুধু সামনে দাড়ানো মানুষটার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো সে।সামনে দাড়ানো মানুষটাও বুঝি ছোট বোনটার চাহুনিতে একটু অপ্রস্তুত হলো।তবুও অন্তরের অশান্ততায় মুখ তাকে খুলতেই হলো।

‘আমি ভিতরে যেতে চাই মান্য।

বিস্ময় বাড়লো বৈ কমলোনা মান্যতার।তবে নিভান কথাটা বলতেই ফটাফট পা পিছে নিয়ে সরে দাঁড়ালো সে।ভিতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো নিভান।নিভানকে দরজা লাগাতে দেখেই মান্যতার যেনো হুঁশ ফিরলো।নারীমন চেনা-জানা ভাইটার অচেনা রূপ দেখে বুঝতে চাইলো বা বুঝে নিলো অনেক কিছু।নিভান দরজা লাগিয়ে পিছে মুড়ানোর আগেই,দ্রুত পা চালিয়ে বেলকনিতে চলে গেলো মান্যতা।দাদাভাইয়ের মনে কৌড়িকে নিয়ে কিছু চলছে,ভাবতেই সমস্ত শরীর শিরশির করে উঠলো তারও।না চাইতে-ও বেলকনির জানালায় নজর দিলো সে।বিস্ময়ে চোখ স্থির হয়ে গেল তার।এই মানুষটা তার দাদাভাই নিভান!কখনোই হতে পারে না!

দরজা লাগিয়ে সামনে তাকাতেই দেখতে পেলো।মোটা কম্বল জড়িয়ে,শান্ত বাচ্চাটার মতো ঘুমিয়ে থাকা কৌড়িকে।বুকের স্পন্দন বেড়ে গেলো নিভানের।পৃথিবীর সব সুখ মনেহয় ওই মুখে লেপ্টে আছে,নাহলে তার অশান্ত মনটা মূহুর্তেই শান্ত হয়ে গেলো কি-করে!
নিষ্পলক মুগ্ধ নজরে এগিয়ে গিয়ে কৌড়ির পাশে বেডটায় বসলো।নিঃসংকোচে তার রুক্ষ ডান হাতটা ছুলো কৌড়ির কপাল।প্রচুর জ্বর মেয়েটার।হয়তো একারনেই এরকম বেহুঁশ হয়ে ঘুমাচ্ছে।নিথর দেহে পড়ে আছে।হাত সরিয়ে নিলো নিভান।কৌড়ির জ্বরে মলিন হয়ে থাকা মুখটা দেখে,খুবকরে একটা ইচ্ছে জাগলো মনে।কৌড়ির নিস্পাপ মুখটা যেনো বাধ্য করলো সেই ইচ্ছেটাকে প্রশ্রয় দিতে।মাথা নিচু করে নিজের ওষ্ঠ ছোঁয়ালো কৌড়ির তপ্ত কপালে।জ্বরের ঘোরে-ও কেঁপে উঠলো কৌড়ি।নড়েচড়ে ফের শান্ত বাচ্চাটি হয়ে গেলো।ঠোঁট ছোঁয়ানো অবস্থায় মৃদু হাসলো নিভান।ভিষন আদর-প্রিয় মেয়েটা!না-হলে অজানা অচেনা একজন পুরুষ তাকে ছুলো আর সে শান্ত বাচ্চাটার মতো আদর উপভোগ করলো।পরক্ষণে মনে পড়লো,মেয়েটা তো জ্বরের ঘোরে বেহুশ হয়ে আছে।না হলে কি তার এই ছোঁয়াটা মেনে নিতো?কখনোই নিতো-না।

ঠোঁট সরালো নিভান।এভাবে ছুঁতে চায়নি সে কৌড়কে।কিন্তু নিজের মনকে যে কিছুতেই মানাতে পারছিলো না।ঘুমান্ত কৌড়ির মুখের দিকে নিস্প্রভ নজরে তাকিয়ে মৃদুস্বরে বললো।–আজ একজন পুরুষ তার অশান্ত মনকে শান্ত করার জন্য তোমাকে তার ছোঁয়ায় কলঙ্কিনী করে রাখলো।যদি কখনো আমার না হও, তবে তোমার অজানাতে একজন পুরুষের ছোঁয়ায় তুমি কলঙ্কীনি হয়ে থাকলে।

আর সময় ব্যয় করলোনা নিভান।যদি মেয়েটা একান্ত তার হতো,তবে ওই অসুস্থ মেয়েটাকে বেডে ওরকম নিথর দেহে পড়ে থাকতে দিতোনা।কখনোই দিতো না।
কতোকিছু ভুলভাল ভাবনা মনে এলো নিভানের।আর প্রশ্রয় দিতে চাইললনা,যদি কখনো প্রশ্রয় দেওয়ার সুযোগ আসে।তবে ওই মেয়েটাকে সবকিছু দিয়ে আগলে রাখবে,নিজের সর্বচ্চ সর্বস্ব দিয়ে ভালোবাসবে।হ্যা নিভান ভালোবাসবে তাঁকে।কাল ইভানের সাথে কথা বলা খুব প্রয়োজন তার।খুব প্রয়োজন।কেননা মেয়েটাকে যে তার হওয়া চাই।

দরজায় গিয়ে ফের দাঁড়িয়ে পড়লো নিভান।মান্যতা এখনো রুমে আসেনি।কৌড়ির দিকে আরও একপলক তাকিয়ে মৃদুস্বরে মান্যতাকে ডাক দিলো সে।তৃনয়ের মতো মান্যতাও আজ বুঝে গিয়েছে তার হাল। মনের বেহাল দশা।সেখানে লুকোচুরি করে লাভ আছে?নেই।আর এমনিতেই লুকোচুরি সে করতেও চায়-না।তার ধারনা মান্যতা তার মনের দশা জানার সাথেসাথে,একটু আগে কৌড়ির সাথে ঘটা নিজের আবেগ-ঘনো ঘটনাটা দেখেছে।মান্যতা রুমে আসতেই নিভান বললো।

‘আমি এসেছিলাম,আর ওকে ছুঁয়েছি।ও যেনো বিষয়টা না যানে।

মান্যতার আশ্চর্যতা হয়তো এখনো কাটেনি।সে সামনের মানুষটাকো এখনো ভুল দেখছে বলে তার মনেহলো।
সেই আশ্চর্যতা বহাল রেখে মাথা উপরনিচ করে সম্মতি জানালো।সেটা দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিভান চলে গেল।বোনটা যে,তার কর্মকান্ডে ভিষন আশ্চর্যতা হয়েছে এটা মান্যতার চেহারায় প্রকাশ পেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছে সে।এরা যে কেনো তাকে স্বাভাবিক ভাবে নেয় না বা নিতে পারে,বুঝে আসেনা নিভানের।না-হয় সে সবার সাথে খোলামেলা মিশতে পারে-না, বেশি-বেশি কথা বলতে পারে না।তাই বলে কি সে সবার মতো সাধারণ একজন মানুষ নয়?কথা কম বললে, মানুষের সাথে না মিশলে কেউ আশ্চর্য মানুষ হয়ে যায় কিকরে!এটাও বুঝে আসে না তার।

‘কোথায় গিয়েছিলি নিভান?

চেনা কন্ঠ শুনে মনেমনে মৃদুমন্দ হাসলো নিভান।ফের বললো–আমাকে প্রশ্ন করার তুই কে?যেখানে এবাড়ির বড়কর্তাও আমাকে প্রশ্ন করার সাহস করেনা, স্পর্ধা দেখায়না।সেখানে তুই কে?

নিভানের কথাগুলোয় কষ্ট পেলেও,কথাগুলো উপেক্ষা করে দীবা বললো।–কৌড়ির কাছে গিয়েছিলি তাই না?

বিরক্ত হলো নিভান।গম্ভীর গলায় বললো—তাতে তোর সমস্যা কোথায়?তোরতো সমস্যা হওয়ার কথা না?আর ইদানীং আমি কোথায় যাচ্ছি,কি করছি,না করছি।গোয়েন্দাগিরি করছিস?তবে পরমর্শ দিতে বাধ্য হচ্ছি,আমার পিছনে গোয়েন্দা গিরি না করে নিজের বরের পিছনে কর।কাজে দেবে, উপরন্তু সংসারটা টিকে যাবে।

চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো নিভান।সামনে এগোলোও ক-কদম।পিছন থেকে দীবা ফের বললো– যদি কৌড়িও আমার মতো অন্যায় করে।তখন কি করবি?

থামকালো নিভান।থমকে গেলো বুকের ভিতরের চলা হৃদস্পন্দন।রাগে চোয়ালদ্বয় কঠিন হয়ে এলো তার।তবে তার নিজের রাগটাও যে অপাত্রে দান করতে চায় না সে। দু’হাতের মুঠো শক্ত করে নিজের রাগটা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলো।সময় নিয়ে পিছে ফিরে দীবার দিকে ফের দুকদম পা বাড়ালো।দীবাও একটু ভড়কে গেলো।যেটা তার সুন্দর চোখমুখে প্রকাশ পেলো।সেটা দেখে মৃদু হেসে তাচ্ছিল্যের সুরে নিভান বললো।

‘ও তোর মতো নিচু মানসিকতা বা লোভী প্রকৃতির মেয়ে নয়।আর যদি হয়ে-ও থাকে,তবে কৌড়ি মানে সাতখুন নয় সহস্রখুন মাফ,বুঝেছিস?তাহলে এটাও বুঝে-নে ওর স্থান নিভানের ঠিক কোথায়!কোন জায়গায়!

চলবে…..

ও আমার অল্পসল্প কমেন্টবাসীরা।গল্প পড়ে দিল খুলে নিজেদের অনুভূতি জনাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here