#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
১৪,১৫
বেশ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে আঁখি আদৃত,কেউ কোনো কথা বলছে না,পিনপিন নিরবতা বজায় রয়েছে দু’জনের মধ্যে,অনেকটা অস্বাভাবিকতা গ্রাস করে আছে দু’জনকেই।মনে জমে গেছে যেন পাহাড় সমান বাক্য যা বলতে চায় দু’জন দুজনাকে, জমে আছে কতো মান অভীমান,জানাতে চায় যে একে ওপরকে তবুও ব্যর্থ দু’জন, খুব করে চেয়েও সেই অধিকারত্ব আর সাহস কোনোটাই জুটিয়ে উঠতে পারছে না তারা, অবশেষে নিরবতা কাঁটালো আদৃত।স্বাভাবিক ভাবে বলল।
″তা কেমন আছো?″
″খুব ভালো।″
″সত্যিই কি খুব ভালো?″
″ভালো না থাকার আলাদা কি কারণ থাকতে পারে?স্বাচ্ছন্দ্য বেঁচে থাকাটা কি যথেষ্ট না।″
″হুম,কথাটা ভুল না।″
″তা,বিয়ে করে নিয়েছেন তাই না?কেমন আছেন স্ত্রী সন্তান নিয়ে?″
″হয়ত কাঙ্ক্ষিত সে অঙ্গনা জীবনে থাকলে অবশ্যই ভালোই থাকতাম তাকে আর নিজের ভালোবাসার অংশ কে নিয়ে।আফসোস না তো সে নেই আর না তো ভালোবাসার কোনো অংশ।″
আদৃতের কথায় কিছুই মিলিয়ে উঠতে পারল না আঁখি ডা.সানিয়াকে তো আঁখি সেদিন একটা শপিংমলে দেখেছিল,তবে আদৃত কেন বলছে ও তার কাঙ্ক্ষিত জনকে জীবনে পায় নি,কিন্তু আদৃত তো ডা.সানিয়াকে প্রচন্ড ভালোবাসত আর ডা.সানিয়াও তো আদৃতকে ভালোবাসত,দু’জন দু’জনাকে ছাঁড়া বাঁচবে না এমনই জানত আঁখি,যার ফলস্বরূপ আঁখিকে ছাড়তে হলো আদৃতকে,মেনে নিতে হলো হার সানিয়ার ভালোবাসার কাছে,পরাজিত হলো আঁখির একতরফা ভালোবাসা,আদৃতের সুখের জন্য ত্যাগ দিলো তাকেই,সীমাহীন পী*ড়া সহ্য করে নিল হাসিমুখে, তবে যার সুখের জন্য এতকিছু করল আঁখি সেই সুখী নয় বিষয়টা জানতে পেরে বুকের ভিতরটায় কেমন এক শুণ্যতায় ভরে গেল,আশ্চর্যও হলো সাথে প্রচুর,সানিয়া তো ভিক্ষে চেয়েছিল আদৃতকে আঁখির কাছে,নিজের প্রাণের চেয়েও প্রিয় দাবী করেছিল আদৃতকে তবে কেন সে আদৃতের সাথে নেই,কেন আদৃত নিঃস্ব, খুব কৌতুহল জাগল আঁখির মনে বিষয়টা জানার,আদৃতকে কি এ বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে তার?আঁখির ভাবনার মধ্যেই পুলিশ এসে পরল সেখানে।
অনেক বলার পরও আদ্রিশ না খেলে খাবার নিয়ে গিয়ে কিচেনে রেখে এলো রিদিকা,আদ্রিশ শুয়ে আছে বিছানায়,রিদিকা এগিয়ে এসে তার পাশে শোয়ে পরল,বুকের উপরের শার্টের বোতাম খোলে আদ্রিশের বুকে তার নখ দিয়ে হালকা করে আঁচড় কাটতে কাটতে বলল।
″কি হয়েছে তোমার?এই রুমে আমায় আসতে দাও না,আমার রুমে তো যাও ই না,এভাবে আমার থেকে দূরে থাকতে কষ্ট হয় না বুঝি তোমার?আমাকে যখন পর করেই রাখার ছিল তবে আপন করলে কেন?″
″দেখো রিদিকা তুমি যেমনটা ভাবছ তেমন কিছু না,আসলে আঁখি আবারও ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছে,ভেবে পাচ্ছি না কী করব,বিরক্ত লাগছে আমার সবকিছু, তুমি বরং রুমে যাও গিয়ে ঘুমিয়ে পরো।″
″না আমি কোথাও যাব না,আমি তোমার পাশেই থাকব।″
″জেদ করো না রিদিকা,চলে যাও।″
কথাটা বলে আদ্রিশ রিদিকার হাত তার বুক থেকে সরাতে গেলে রিদিকা ব্যথায় কুকরে উঠে আহ বলে,আদ্রিশ রিদিকার জন্য বেশ অস্থির হয়ে উঠে বসে এবার।
″কি হয়েছে রিদিকা?″
″কিছু না।″
অতঃপর আর কিছু না বলে রিদিকা তার হাতটা আদ্রিশের চোখের অগোচরে নিতে চাইলে আদ্রিশের চোখ চলে গেল তার হাতের উপর। দেখতে পেল নখের বেশ কটা আঁচড়ের দাগ রিদিকার হাতে,অনেকটা ফুলে গেছে জায়গাটা,লাল বর্ণ ধারণ করে আছে।রিদিকার হাতের এমন হাল দেখে অনেক খারাপ লাগল আদ্রিশের।অস্থির স্বরে জিঙ্গেস করল।
এটা কেমনে হলো রিদিকা?
রিদিকা আমতা করে বলল।
″কিছু না এমনিই।″
″কি হয়েছে রিদিকা বলো?″
″কিছু না,তুমি শুয়ে পরো আমি না হয় চলে যাই।″
রিদিকা চলে যেতে নিলে তার হাত পাকড়াও করল আদ্রিশ,এবার বেশ রেগে গিয়ে বলল।
বলো রিদিকা কি হয়েছে?
রিদিকা এবার কান্না করে দিয়ে বলল।
″আমি বললেও তুমি বিশ্বাস করবে না,যেতে দাও।″
″আগে বলবে তো কি হয়েছে?কে করেছে এসব?″
″শুভ্রতা আপু,আসলে আজকে আমি রিহানকে একবার ডেকেছিলাম আমার পাশে আসার জন্য,কিন্তু ও আসতে চায় না,তাই আমি ওর পাশে যাই,জানোই তো আমার বাচ্চাদের কতো পছন্দ তাই,কিন্তু যেই আমি রিহানকে কোলে নিতে যাব ঠিক তখন শুভ্রতা আপু এসে খামছি দিয়ে দেয় আমার হাতে,আমি জ্বা*লা*য় হাত সরিয়ে নিলে উনি রিহানকে কোলে নিয়ে আমায় বলতে লাগেন।উনার স্বামী বাচ্চাদের থেকে দূরে থাকতে,আমি না কি কা*ল*না*গি*নী।
″এ কি বলছ তুমি?ভাবি এমনটা কখনও করতে পারে না।″
″বিশ্বাস হলো না তো,আমি জানতাম,তাই বলতে চাই নি।আসলে আমি কপালপোড়া, কখনও কারো মন পাই নি,না পেলাম মা বাবার মন,না পেলাম প্রথম স্বামীর মন,না পেলাম বেস্ট ফ্রেন্ড এর,না পেলাম তোমার আর তোমার পরিবারের, এমন জীবন পাওয়ার থেকে অকাল মৃ*ত্যুও ভালো হতো।আমি মরে কেন যাই না।″
আদ্রিশের অবিশ্বাসের ন্যায় বলা কথাটার উত্তরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উক্ত জবাব দিলো রিদিকা।রিদিকার কান্নায় আদ্রিশের মন এবার যেন মোমের মতো গলে গেল,আঁখির ব্যাথাভরা স্মৃতি এড়িয়ে রিদিকার চোখের জ্বলে মন ভোলে গেল আদ্রিশের।এবার আবারও অনেকটা রেগে বলল।
ভাবির সাহস হয় কেমনে তোমার সাথে এমন করার,আমি এখনই কথা বলছি উনার সাথে।
______
পুলিশ এসে ছি*ন*তা*ই*কা*রী গুলোকে নিয়ে গেল আঁখি আর আদৃতকে ধন্যবাদ দিয়ে।এবার আঁখি বলল।
″তা আপনি বাইক চালাবেন?″
″আজ না হয় তোমার পিছন বসি।″
হুম, বলে আঁখি বাইকে চড়ে গেলে আদৃত তার পিছন বসল।আজ এতো বছর পর আবারও একই বাইকে পাশাপাশি দু’জন বসে আছে,দু’জনের বুকের স্পন্দন যেন একই গতিতে চলছে, সেই পুরানো সুপ্ত অনুভুতি গুলো বুকের ভিতর কেমন জানি নতুন শিহরণ তৈরি করছে।
বাইক চলছে আপন গতিতে,প্রবল হাওয়া ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে দু’জনকে,হাওয়ার বেগে বাইক চালানো আঁখির পুরাতন অভ্যেস,আজও তার ব্যতীক্রম কিছু ঘটছে না,যার ফলস্বরূপ বাতাসের বেগ অত্যদিক হয়ে লাগছে তাদের গায়ে,সহসা বাতাসের একটা ঝপটে আঁখির মাথার হুডিটা সরে পরে যায়,আদ্রিশ পিছন থেকে আয়নায় অপলকে দেখে যাচ্ছে আঁখিকে,হুডিটা পরে যাওয়ার পর চুলের কাঁটাটাও কেমন খুলে যাচ্ছে বলে মনে হলো আদৃতের,সাথে সাথে আঁখি বলল।
ডা.আদৃত আমার কাঁটাটা পরতে দিবেন না।
বলতে না বলতেই কাঁটাটা পরে গেল খুলে,আঁখির ঘন চুলগুলো খোলে বাতাসে দুলতে শুরু হয়েছে।আঁখি এবার কর্কশ গলায় বলল।
ইশ বলেছিলাম কাঁটাটা ধরতে পারলেন না তো।
আদৃতের বেশ মজা লাগল,এতবছর পর আজ আবারও আঁখির অধিকার খাটিয়ে আদৃতকে বকে দেওয়া,তাছাড়া ওর খোলা চুলের পরশ যেন আদৃতের জন্য সোনায় সোহাগা,ইচ্ছে করেই আঁখির কাঁটা ধরে নি আদৃত তার চুলের ঘ্রাণ নিবে বলে।কথাটা ভেবে মুচকি হাসল আদৃত।
সময়ের সাথে রাস্তা ফুরচ্ছে,সাথে কল্পনায় বিমোহিত হচ্ছে আদৃত,আঁখির উড়ন্ত চুলের শোভনীয় ছোঁয়া মন দোলাচ্ছে আদৃতের,নিয়ে যাচ্ছে তাকে সুদূর অতীতে।আদৃত তখন বাইক চালাতে খুব পছন্দ করত,আর আঁখি প্রায় আসত সে সুযোগ উঠাতে।
″এই যে ডা.আদৃত কোথায় রওয়ানা হলেন?″
″কাজ আছে।″
″আমাকেও সাথে নিন,আমাকে আমার বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে তারপর আবার কাজে চলে যাবেন।″
″বাড়িতে গাড়ি আছে তো, যেকেনো ড্রাইবার ছেড়ে দিবে তোমায়।″
″আপনার মতো হ্যান্ডসাম ড্রাইবার থাকতে অন্যের সাথে গাড়িতে কেন চড়ব?″
ও হ্যালো আমি হ্যান্ডসাম হই বা না হই আমি তোমার কোনো ড্রাইবার না ওকে,সো নাও গো টু হেল।
রেগেমেখে কথাগুলো বলে আদৃত বাইক ছাড়তে যাবে তখনি আঁখি গিয়ে এক ছোটে তার পিছনে চেঁপে বসল।
″এই এই কি করছ?নামো নামো।″
″নামব না,আপনি আমার কেনা ড্রাইবার না হলেও মনের ড্রাইবার ঠিকই,আর আপনার জীবনের গাড়িতে আমি যাত্রীর তালিকায় একমাত্র থাকব আজীবন।″
″দেখো আঁখি তুমি কিন্তু আমার ভদ্রতার বাঁধ ভেঙে ফেলছ।রাগিয়ো না আমায়।″
″রাগলে কি হবে শুনি?কি হবে? কি হবে?কি হবে?″
অতঃপর দুষ্টুমি করে আঁখি আদৃতের বাইক ঝাঁকানি দিতে শুরু করলে দু’জনই উল্টে পরে যায় বাইক থেকে,আদৃত রেগে আ*গু*ন রূপে ঝটফট উঠে পরে নিচ থেকে,আঁখি হাসতে হাসতে শেষ।
ইউ আর জাস্ট এনোয়িং।
কথাটা বলে আদৃত ঘরের ভিতর চলে যেতে শুরু করল।আঁখি পিছন থেকে হাসতে হাসতে বলতে লাগল।
আমি এনোয়িং হই বা কিউট,যেরকমই হই না কেন আমি তো শুধু আপনারই,বুঝলেন ডা.সাহেব।
হঠাৎ বাইকটা থেমে গেলে অতীত থেকে ফিরে আসে আদৃত। আঁখি বলে উঠে তাকে।
এই যে ডা.সাহেব নামেন, আপনার বাড়ি চলে এসেছি।
আদৃত আর কিছু না বলে নেমে যায় বাইক থেকে।আঁখি চলে যাচ্ছে এমতাবস্তায় পিছু ডাক দেয় আদৃত।
আঁখি…
আদৃতের ডাকে চলে যেতে নিলেও পিছু মুড়ে দেখে আঁখি,স্বাভাবিক ভাবেই বলে।
কিছু বলবেন ডা.আদৃত?
আদৃত যে আঁখিকে বলতে চায় অনেক কিছুই তবে চাইলেও যেন এই মুহুর্তে মুখে কোনো প্রত্যাশিত বাক্য ফুটিয়ে তুলতে পেরে উঠল না,হালকা স্বরে শুধু বলল।
গুড নাইট।
গুড নাইট,বলেই আঁখি বাইক ছেড়ে চলে আসলো।পুরনো কিছু স্মৃতি যে খুব বাজেভাবে আঁখিকেও আঁকড়ে ধরেছিল তখন, হয়ত তা আদৃতের কাছে প্রকাশ্যে না বেড়োয় সেই ভয়েই তাড়াহুড়োয় চলে আসলো।
____
আদ্রিশ উঠে শুভ্রতার কাছে আসতে নিলে রিদিকা তাকে আটকে নিল।
″প্লিজ তুমি যেও না,আমি চাই না আমার কারণে ঘরে অশান্তি আসুক।″
″কিন্তু রিদিকা ভাবি এমন কিছু তোমার সাথে কিভাবে করতে পারে!আমার তো গা জ্বলছে।″
″থাকুক না,আঁখির চলে যাওয়া তো কেউ মেনে নিতে পারছে না,সবাই তো আমাকেই দোষী ভাবে,আর তুমিও হয়ত তাই ভাবো,কিন্তু আমি চাই না কারো মনে কষ্ট দিতে,সবাই ভালো থাকুক এটাই চাই,তুমি প্লিজ আমার জন্য হলেও এ বিষয়ে ভাবির সাথে কোনো কথা বলো না।প্লিজ। প্লিজ আমার এই কথাটা রাখো।″
″ওকে ওকে বলব না এখন তুমি প্লিজ কেঁদো না।তুমি এতো ভালো দেখেই তো সবাই তোমার উপর চড়ে বসে।আসলে তোমার এই সরলতা,এই শান্ত স্বভাবই আমায় তোমার প্রতি আ*স*ক্ত করে বার বার।আর আঁখি চলে যাওয়া নিয়ে আর কেউ হলেও আমি কখনও তোমায় দোষী মনে করি না,ওর সমস্যা আমার সাথে,তাই তুমি নিজেকে দোষী মনে করবে না কখনও।আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি রিদু পাখি।সবাই তোমাকে অবহেলা করলেও আমি কখনও করব না।″
আঁখির মা একটু আগেই আঁখির কথা বলে কান্না করতে করতে শুয়ে পরেছেন।প্রায়ই উনি এমনটা করেন,মেয়ের শোকে কাতর হয়ে পরা উনার নিত্যদিনের কাজ,উপর থেকে মেয়ের এমন দূরাবস্থা সম্পর্কে জানার পর কোন মায়েরই বুকে শান্তি থাকে।
আজ মেয়ের কথা মন থেকেই সরছে না ডা.আশরাফ খানের,কলিজার টুকরোকে তিন বছর পর দেখতে পেয়ে এবার মন আর শান্ত করে রাখতে পারছেন না সেই বাবা।বার বার তাকে দেখতে মন চাইছে।কিন্তু দম্যের উপর অনুভুতিকে জায়গা দিতে পারছেন না উনি।অবশেষে মস্তিষ্কে খেলিয়ে গেল যুক্তিযুক্ত ভাবনা।পার্সোনাল সম্পর্ক আঁখির সাথে রাখা না গেলেও প্রফেশনাল তো রাখতেই পারবেন ডা.আশরাফ খান।যাতে মেয়েকে নিয়ে উনার সেই লুকিয়ে রাখা অনুভুতি বেড়িয়ে আসার কোনো সুযোগ থাকবে না।
অবশেষে আঁখিকেও নিজের হাসপাতালে জয়েন হওয়ার প্রস্তাব দিবেন ঠিক করে নিলেন ডা.আশরাফ খান।
রিদিকার হাতে ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলো আদ্রিশ।রিদিকা বলল।
তুমি ঘুমোয় আমি না হয় আসি।আমাকে তো আর পাশে চাই না তোমার।
রিদিকা চলে যাবে তার আগেই তাকে টান দিয়ে নিজের বুকের উপর ফেলে দিলো আদ্রিশ।
″একা কেনো যাবে?তোমাকে তোমার রুম অব্দি নিয়ে যাওয়ার জন্য তোমার প্রেমিক পুরুষ আছে না।বিয়ের পর বউ থেকে বেশি দূরে থাকা ঠিক হয় না,তাই না।″
রসিকতার স্বরে কথাটা বলে পাজকোলে নিয়ে নিল আদ্রিশ রিদিকাকে,তারপর তাকে তার কক্ষে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।
রিদিকাতে মত্ত হয়ে আঁখির দেওয়া দুঃশ্চিতা থেকে অল্প দূরে থাকার ছোট্ট প্রচেষ্ঠা করতে লাগল আদ্রিশ।পারি দিল সুখময় ক্ষণে।
চলবে……
#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
(১৫)
আদৃতের মনের আনচান ভাবটা বেড়েছে আজ হাজারগুণ,প্রিয়সীকে ফিরে পাওয়ার এক তীব্র আকাঙ্খা ধরা দিয়েছে মনের কোণে,তাকে না দেখে ছয় টা বছর কোনোরূপ পার করে দিতে পারলেও তাকে দেখার পর থেকে তার দূরত্ব আর সয়ে উঠতে পারছে না,আঁখির জীবনে তো এখন আদ্রিশ নামক সেই ব্যক্তি,যাকে আঁখি খুব করে পাশে চেয়েছিল, তার ভালোবাসার সেই মানুষটা তো এখন আর নেই,সে তো আঁখির অনুভুতি নিয়ে খেলা করেছে, তাই আদৃত কি তার বদলে একটা সুযোগ নিতে পারে না?পারে না চেষ্টা করতে তার মনের রানীকে আবারও জীবনে ফিরিয়ে আনার?আঁখির জীবন থেকে তার বি*ষা*ক্ত সেই অধ্যায় কি মুছে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে না আদৃত?খুব বড় কি কোনো ভুল হবে তাতে?না তাতে ভুল কই,সত্য ভালোবাসাকে পবিত্রভাবে নিজের জীবনে নিয়ে আসার চেষ্টা করা ভুল কেন হতে যাবে!
নিজের উপরই হাসি উঠল আদৃতের, কোনো এক সময় আঁখি পা*গ*ল ছিল আদৃতের প্রেমে,কতরকম ভাবে অদেখা করত আদৃত তাকে,কতভাবে অবহেলা করত,তবে আঁখি কখনও হার মানে নি,আদৃতের মন চু*রি করে নেওয়ার কোনো রাস্তা বাদ দেয় নি,অবশেষে যখন আদৃত আঁখিতে মন হারাল ততক্ষণে আঁখিকেই সে হারিয়ে গেল। নিয়তির খেলা এতটাও হাস্যকর হতে পারে নিজের সাথে না ঘটে গেলে হয়ত কেউ তার পরিমাণ বুঝে উঠতে পারবে না।বিছানায় গা এলিয়ে আঁখির স্মৃতিতে ডুব দিল আদৃত আবারও।সেদিন আদৃতের জন্মদিন ছিল,আদৃত শুয়ে ছিল বিছানায়,হঠাৎ নিজের রুমের বারান্দায় কারো আগমণ আন্দাজ করতে পারল আদৃত,আদৃত উঠে বারান্দার দরজার সামনে আসতেই দরজায় ধাক্কা পরা শুরু হলো,বাহির থেকে ধীমি স্বরে বলছে আঁখি।
″ডা.সাহেব,দরজা খুলুন,আমি আপনার প্রিয়তমা আঁখি।″
″তুমি এতো রাতে এখানে কি করতে এসেছ?″
″আপনার বারান্দা ভাঙতে এসেছি।″
″কি….!″
″ওফ অসহ্য,দরজা খুলুন পরে দেখবেন কি করতে এসেছি।″
আদৃত বিরক্ত হয়ে দরজা খুলে দিতেই আঁখি ঘরে ঢুকে আদৃতের চোখে কালো কাপড় বেঁধে দিল।
″আরে আরে কি করছ!″
″আরে এতো কথা বলবেন না তো একটু অপেক্ষা করুন খুলবেন না এটা।চলুন আমার সাথে।″
আদৃতকে হাত ধরে নিয়ে গেল আঁখি,১২ টা বাজতেই আদৃতের চোখ খুলে দিল,বড় করে বলে উঠল শুভ জন্মদিন আমার ডা.সাহেব।আদৃত দেখতে পেল অনেকগুলো বেলুনের মধ্যেখানে উঁচু কিছুর উপর একটা কেক রাখা,সেখানে আদৃতের ছবি খুবই স্পষ্ট করে ফুটিয়ে তোলা আর তাতে শুভ জন্মদিন ডা.আদৃত লেখা। আদৃত বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।
″তুমি এখানে আসলে কি করে?তাও এসব নিয়ে?″
″ওই যে আপনাদের বাগানে বড় একটা সিঁড়ি রাখা আছে না,ওটা এখানে এনে বারান্দা দিয়ে ঢুকেছি,আপনার একজন গার্ডকে হাত করে,হিহি হা হা।হয়েছে এসব ছাড়ুন আর কেক কাটুন।″
″আমার এসব জন্মদিন পালন পছন্দ না তুমি জানো।″
″আপনার পছন্দ অপছন্দ কে দেখছে!আমার পছন্দ এসব এটাই যথেষ্ট, তাছাড়া আপনার মতো নিরামিশের এসব পছন্দ হবেই বা কি করে।″
″কি আমি নিরামিষ।″
″না, আপনি আমিষ বিহীন,এবার চুপচাপ কেক কাটুন তো।″
আদৃত বাধ্য হয়ে কেক কাটলে তার হাত থেকে জোর করেই নিজে কেক খেয়ে অর্ধেকটা আদৃতের হাত থেকে নিয়ে তাকে খাওয়ালো,তারপর হাতে লেগে থাকা কেকের ক্রিম আদৃতের পুরো মুখে লাগিয়ে এক ছোটে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে বলল।
বর্তমানে আর এখানে থেকে আপনার বকা খাওয়ার কোনো রুচি নেই আমার,আমি না হয় আসি,সকালে আপনার জন্য গিফ্ট নিয়ে আসব আবার।
আদৃত বেশ বিরক্ত হয়ে আঁখির দিকে তাকিয়ে থাকল,তবে আঁখি চলে যাওয়ার পর বেশ একটা মুচকি হাসি দিয়েছিল,সে সময়টাতে আঁখিকে ভালোবাসার স্বীকৃতি না দিলেও আঁখির আদৃতকে নিয়ে পাগলামি বড্ড ভালো লাগত আদৃতের।
রিদিকা শুয়ে আছে অগোছালো অবস্থায়, আদ্রিশ তার পাশেই শুয়ে আছে,আজ আর তার কক্ষে যায় নি সে,হঠাৎ রিদিকা বারান্দার দিক থেকে কিছু শব্দ শুনতে পেল,রিদিকার ঘুম বরাবরেরই হালকা,অল্পতেই ভেঙে যায়,তাই উঠে গেল শব্দটা শুনে,দেখতে পেল বারান্দার দিকের দরজাটা খোলা,দরজার সামনে সাদা রঙের পর্দা ঝুলানো,বাতাসে বেশ নড়ছে,রিদিকা নিজের কাপড় ঠিক করে পরে নিল,রোজ বারান্দার দরজা লাগিয়ে ঘুমোয়,আজ খেয়াল করে নি,তাই উঠে গেল দরজা বন্ধ করবে বলে,তখনই কারো হেঁটে যাওয়া বড় ছায়া পর্দার উপর দিয়ে ভেসে উঠল,ওপরদিকে কেউ হেঁটে গেছে বুঝে উঠতে পারল সে।রিদিকা সেদিকে এগিয়ে গেল ঝটপট।
কে?কে ওখানে?কে?
রিদিকা বারান্দায় তাড়াতাড়ি ছোটে গেলেও কাউকেই পেল না সেখানে,তখনি পিছন থেকে আদ্রিশ ডাক দিল তাকে।
″রিদিকা কি হয়েছে?″
″কেউ এখানে ছিল আদ্রিশ।″
″কি বলছো এতো রাতে এখানে কে হবে!তোমার ভ্রম হবে,চলে এসে শুয়ে পরো।″
অতঃপর আদ্রিশ রিদিকাকে নিয়ে কক্ষে চলে যেতে লাগল,কিন্তু রিদিকা মানতে নারাজ হলো যে এটা তার ভ্রম ছিলো,যাচাইয়ের জন্য আরো একবার পিছু ফিরে তাকালো,কিন্তু কাউকেই পেলো না।
বাড়ি ফিরে আবারও সেই বিষাদে ছেঁয়ে গেল আঁখির মন,সাথে এক রাশ ভাবনার ঢল নামল।আদৃত কেন একা রয়ে গেছে জীবনে!কি হলো এমন আদৃত আর ডা.সানিয়ার মধ্যে যে ওরা আলাদা হয়ে গেল!যাদের কথা ভেবে নিজের ভালোবাসা বিসর্জন দিয়েছিল আঁখি তারাই কেন একসাথে থাকছে না!কেন?কিছুই ভেবে পাচ্ছে না আঁখি, তবে জবাবটা জানার কৌতুহল ধরে রাখতেও পারছে না,যে করেই হোক জবাবটা তাকে জানতেই হবে।ভাবনার দখল পেরিয়ে ঘুমের দেশে তলালো অবশেষে আঁখি,ভোর হওয়ার পূর্বে ঘুম ভাঙল তার,ফজরের আযান ভেসে আসল কানে,উঠে নামাজটা আদায় করে নিল।মোনাজাতে চাইল আজ বেশ জিনিস।
আল্লাহ, রাব্বুল আল আমিন,আমি বড্ড একা হয়ে পরেছি মালিক,পারছি না একাকিত্ব মানিয়ে নিতে,যে ভালোবাসার সুখের জন্য তাকে ছাড়লাম সেই সুখী নয়,যাকে হারানোর ভয়ে সব ছাড়লাম সেই প্রতারণা করল, আদ্রিশ বা রিদিকা কারো ভালো খারাপ কিছুই চাইব না আমি আপনার কাছে শুধু চাইব আমার মা বাবাকে।মনের টানের জন্য নাড়ীর টান ছিঁড়ে ফেলা আমি এক পাপী গুনাহগার,বাবা মায়ের চোখের জলের দাম দেওয়ার সাধ্য আমার নেই,জানি না কেমনে তাদের কাছে ক্ষমাটাও আমার চাইতে হবে।শুধু চাই উনারা আমায় ক্ষমা করে দিক,আমার জীবনে আবারও ফিরে আসুক,আমি আর কোনোদিনও প্রাণ থাকতে তাদের অবাধ্য হবো না মালিক,একবার তাদের ফিরিয়ে দিন,একটা সুযোগ দিন আমায়,রহম করুন এই অসহায়ের প্রতি ,ক্ষমা করুণ আমায়।হেদায়াত দান করুন আমাকে।ডা.আদৃতকে দান করুন উনার কাঙ্ক্ষিত সুখ।আমিন…….
অপরদিকে আদৃতও মোনাজাতে হাত পেতেছে।
আল্লাহ, আমি জীবন সঙ্গিনী হিসেবে চেয়েছি তো শুধু আঁখিকে,আমার চাওয়ায় তো কোনো খুঁত ছিল না, তবে কেন ও আমার হলো না?রাব্বুল আল আমিন এবার আর শুণ্য হাতে ফিরিয়ে দিবেন না আমায় দয়া করে,দ্বিতীয় সুযোগ যখন পেয়েছি তবে তাতে জয়ী হওয়ার সক্ষমতাও আমায় দান করুন মালিক।আমিন……
হাসপাতাল ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া শেষ আঁখির, কথাও বলে নিয়েছে কতৃপক্ষের সাথে এ নিয়ে।আজকে সেই হাসপাতালে শেষ দায়িত্ব পালনে যাচ্ছে আঁখি,নতুন কোন হাসপাতালে জয়েন করবে তা এখন অব্দি নির্ধারণ করা হয় নি।হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বের হবে তখনি একজন গার্ড আসলো তার কাছে।তার হাতে একটা লেটার ধরিয়ে দিল।
ম্যাম,একটু আগে একজন এসে এই লেটারটা দিয়ে গেছেন,বললেন উনাকে ডা.আশরাফ খান পাঠিয়েছেন আপনাকে এই লেটারটা দেওয়ার জন্য।
বাবার নাম শুনেই অতি খুশিতে লেটারটা তাড়াতাড়ি খুলে নিল আঁখি।লেটারটা পরে এবার চোখে জল চলে এলো তার,আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল।
শুকরিয়া আল্লাহ,আপনি সর্বশক্তিমান,পরম দয়ালু,আমার চাওয়া এতো জলদি পূরণ করে দিবেন কখনও ভাবী নি,শুকরিয়া মাবুদ।
লেটারটাতে আশরাফ খান নিজের মেয়েকে উনার হাসপাতালে জয়েন হবার প্রস্তাব পাঠিয়েছেন।
যাতে খুশিতে আঁখির মন আত্নহারা হলো। হাসপাতালে চলে আসলো আঁখি,বসে ছিল কেবিনে তখনই ইন্সপেক্টর জিসান প্রবেশ করলেন সেখানে।
″আসসালামু আলাইকুম ডা.আঁখি।″
″আরে ইন্সপেক্টর জিসান আপনি?ওয়ালাইকুম আসসালাম।তা কেমন আছেন?″
″এইতো আলহামদুলিল্লাহ।″
″হুম তা হঠাৎ এখানে?″
″ওই আসলে কিছু প্রয়োজনে এসেছিলাম,নয়ত ডিউটি টাইমে এভাবে কখনও আসতাম না।″
″হুম,তা বলুন কি সাহায্য করতে পারি আমি আপনার?″
″আমি আসলে কলি মা*র্ডা*র কেস নিয়ে কথা বলতে এসেছি আপনার সাথে।″
″আমার সাথে কলিকে নিয়ে কি কথা বলতে এসেছেন!″
″ সুত্র অনুযায়ী খবর পাওয়া গেছে মিস কলির সম্পর্ক আপনার সাথে ভালো ছিল না,তাছাড়া উনি না কি আপনার পার্সোনাল খবর ফাঁস করে দেওয়ার হু*ম*কি দিচ্ছিলেন আপনাকে,কলির মৃত্যুর একদিন আগেই সে না কি আপনার সাথে দেখা করতে এসেছিল?″
″হ্যাঁ এসেছিল,আর আমার ওর সাথে সম্পর্ক ভালো চলছিল না এটাও সত্যি।কিন্তু এসবে আপনি কি প্রমাণ করতে চাইছেন?″
″আমি কিছু প্রমাণ করতে চাইছি না মিস আঁখি।আসলে পুলিশ মানুষ সন্দেহের তালিকায় সবাইকেই রাখতে হয়,হোক না কেন সে নিজের মা বা বাবা।বুঝতেই পারছেন,কলি কেসে আপনিও সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন মিস আঁখি,তাই কেসটা চলাকালীন আপনি আমাদের না জানিয়ে দেশের বাইরে কোথাও যেতে পারবেন না।″
আঁখি কি বলবে কিছু ভেবে পাচ্ছে না।চুপ করে জিসানের দিকে তাকিয়ে আছে,জিসান আবার বলল।
″আচ্ছা তবে আসি ডা.আঁখি,আমার আরও কাজ আছে।″
জিসান চলে গেল,আঁখি আবার নিজের কাজে মন দিল,কিন্তু হঠাৎ কেবিনে প্রবেশ করল আদ্রিশ,আদ্রিশের আগমণে বেশ বিরক্ত হলো আঁখি।ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল।
″তুমি এখানে কি করতে এসেছো আদ্রিশ?″
″তোমার কাছে এসেছি ফুলপরি।″
″আর ইউ মেড।আমার তো মনে হয় তুমি মেন্টালি সিক,কি করে ডাকতে পারো আবার আমায় ফুলপরি বলে,লজ্জা করে না তোমার?″
″লজ্জা করবে কেন!আমি আমার বউকে ডাকছি।″
″ছিঃ আদ্রিশ,দ্বিতীয় বউয়ের সাথে রাতের পর রাত কাটাও আর প্রথম বউয়েও উপরও অধিকার খাটাও,ছিঃ″
″কারণ তোমরা দু’জনই আমার স্ত্রী, আমার দু’জনেরই উপর অধিকার আছে।″
″ওহ,এবার বুঝেছি,তোমার এক বিছানায় এক নারীতে হচ্ছে না,দু’জন চাই একসাথে তাই না,তবে বিয়ের মতো পবিত্র পথ কেন বেঁছে নিলে আদ্রিশ পতি*তা*ল*য়েই যেতে পারো।
″আঁখি……কি বলছ এসব তুমি!এতো নোংরা জিনিস কি করে বলতে পারো তুমি?″
″কেনো রে তুই যা তা নোংরামি করবি আর আমি তা মেনে নিব,সম্মান করব তোকে,রাত কাটাব তোর সাথে।শুনে রাখ আমি আঁখি রিদিকা না যে শুধু শরীরের টানে স্বামীর ঘরে পরে থাকে।ভালোবাসায় শুধু শারিরীক চাহিদাই সবকিছু হয় না,তবে তুই কি বুঝবি সেটা, অধম কি বোঝে ভালোবাসার মানে।″
″তুমি কিন্তু লিমিট ক্রস করছ আঁখি।″
″লিমিটের কি দেখেছিস রে তুই,এটা হাসপাতাল,আজকে আমার শেষ দিন এখানে,চিৎকার চেঁচামেচি করতে বাধ্য করিস না আমায়,চলে যা ভালোয় ভালোয়,গার্ড ডেকে ঘাড় ধাক্কা দেওয়াতে চাই না আমি তোকে।″
″বড্ড তেজ না তোমার?আমার সাথে তেজ দেখাও,যাব না আমি,কি করবে শুনি?তোমাকে আমার সাথে যেতেই হবে।″
আঁখির দুই হাতের বাজু আদ্রিশ নিজের দু′হাতে চেঁপে ধরে কথাগুলো বললে আঁখি তাকে ধাক্কা দিয়ে নিজে থেকে ছাড়িয়ে নেয়,আর তাল গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় মেরে গর্জে ডেকে উঠে তার গার্ডদের।
গার্ডস,গার্ডস।
গার্ডেরা ছোটে আসে সাথে সাথে।
এই কু***ত্তা টাকে ধরে নিয়ে গিয়ে বাইরে ছেড়ে আসো,এ যেন আমার আশেপাশেও আর আসতে না পারে কখনও।
গার্ডেরা আদ্রিশকে ধরতে এলে আদ্রিশ কর্কশ গলায় বলল।
ধরতে হবে না চলে যাচ্ছি। কিন্তু মনে রেখ আঁখি আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে তুমি ভুল করছ।আমার মতো কেউ তোমাকে কখনও পাগলের মতো ভালোবাসবে না।ভালোবাসি বলেই পিছনে পরে আছি,নয়তো তোমার মতো মেয়ের দিকে চোখ তুলেও তাকাতাম না আমি।
কথাটা কানে যেতে ওপর হাতে আরেকটা থাপ্পড় আদ্রিশের ওপর গালে বসিয়ে দেয় আঁখি,আদ্রিশ থাপ্পড় টায় বেশ রেগে এবার আঁখির দিকে এগিয়ে গেলে তার ঢালস্বরূপ তার দুই গার্ড সামনে চলে আসে,আঁখি এবার ঝাঁঝালো স্বরে উত্তর দিলো।
″কে ভুল করছে বা করেছে,এখন না হয় বলা বাদ দিলাম কু****ত্তা,সময় তোকে বলে দিবে।চোখের সামনে থেকে দূর হো এবার।″
″পস্তাবে তুমি আঁখি।″
অ*গ্নি*দৃ*ষ্টি*তে আঁখির দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলে চলে গেল আদ্রিশ,আঁখি এবার গার্ডদের উদ্দেশ্যে বলল।
″তোমাদের কাজে কেন রেখেছি?আমার কেবিনে যে কেউ কিভাবে ঢোকে যায় তোমরা থাকতে?″
″দুঃখীত ম্যাম,আমরা সামনে থেকে খেয়াল রাখব।″
হাসপাতালে আজকের শেষ দিন এতো বা*জে কাটবে ভাবে নি আঁখি, সবাই আঁখির বিদায়ের ব্যবস্থা ভালো রকম করলেও সেই ভালোলাগার অনুভুতি ধরা দিল না আঁখির মনে।দিনটাই নষ্ট করে দিলো আদ্রিশ।
হাসপাতালের নার্স থেকে শুরু করে অন্যান্য ডাক্তারেরা তাকে বিভিন্ন গিফট আর ফুলের তোড়া দিয়েছে।আঁখির চলে যাওয়া নিয়ে যে সবাই শোকাহত।
নিরাশ মন নিয়ে আঁখি বেরুলো হাসপাতাল থেকে,কিন্তু হাসপাতালের গেটের দিকে চোখ যেতেই আরেকদফা বিরক্তি ধরা দিলো আঁখির চোখেমুখে, গেটের বাইরে রিপোর্টারদের ঢল নেমেছে,গেটের দারোয়ানেরা তাদের আটকানোর অসীম চেষ্টা করছে,সবার মুখে যেন একটাই কথা।
ডা.আঁখির সাথে কথা আছে, ভিতরে যেতে দিন।পুরো হাসপাতালের লোক প্রায় বাইরে চলে এসেছেন।আঁখি জানে তার আর আদ্রিশের ব্যাপারটা নিয়ে এরা তাকে জেরা করতে এসেছে,যেখানে আঁখিকে হেনস্তা করার কোনো পথ ছাড়বে না এরা।আঁখি চোখ দিয়ে শুধু দুই গার্ডদের ইশারা করল,যাতে তারা দু’জন তার দু’দিকের ঢাল হলো।হিজাব এর উপর মাস্ক টা লাগিয়ে নিল,তারপর হাঁটা ধরল গেটের দিকে।
চলবে…………
আদ্রিশরে কেউ গা*লি দিয়েন না,ওর মতো ভালোবাসে ক’জন🤣।
আসলে হয়ত অনেকেই আমার উপর রা*গ করছেন আদ্রিশের কেরেক্টার আমি এমন কেন দিলাম,আমি চাইলেও তো তার কেরেক্টার আরও একটু ভালো দিতে পারতাম,কিন্তু ভেবে দেখেন আমাদের আশেপাশে আদ্রিশের মতো অনেক লোক আছে,আমি শুধু এমন কিছু লোকের ব্যক্তিত্ব গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরতে চেয়েছি মাত্র,আসসালামু আলাইকুম সবাইকে।