#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
১৮,১৯
রাত ১ টা,আদৃতের ঘুম আসছে না,বার বার আঁখির স্মৃতি মনে ভাসছে,সারাদিন আঁখির সংস্পর্শে কাটিয়ে এসেও যে মনটা ভরে উঠে নি তার।আঁখির সাথে কথা বলতে বড্ড ইচ্ছে করছে। আঁখির কথা ভাবতে ভাবতে গিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকল,সুখপাখি নামের নিচে অনলাইন লেখা দেখে মুখে এক চিলতে হাসি ফুটল তার,আজ ছয় বছর পর সেই নাম্বারে আবার মেসেজ পাঠানোর জন্য প্রস্তুত হলো আদৃত,আসসালামু আলাইকুম লিখে সেন্ড করবে এর আগেই ওপর পাশ থেকে মেসেজ আসলো।
আসসালামু আলাইকুম ডা.সাহেব।
আঁখির তরফ থেকে মেসেজ পেয়ে আশ্চর্য হলো আদৃত।তাড়াতাড়ি জবাব দিলো।
″ওয়ালাইকুম আসসালাম।কি করছ হিটলার?″
″আপনার কথা মনে করছি।″ল
আদৃত কথাটার জবাবে অবাকত্বের ইমোজি দিলে আঁখি তার বদলে হাসির ইমোজি দিলো।আদৃত ভালোয় জানে আঁখি এসব মজা করছে।আদৃত আবার জিজ্ঞেস করল।
″তা ঘুম রেখে এতো রাতে অনলাইনে কি করা হচ্ছে?জানতে পারি?″
″ঘুম না আসলে যা হয় আরকি,টাইম পাস।তা আপনি কি করছেন? আমার কথা মনে করছেন না তো?″
রসিকতার ছলে বলল আঁখি কথাটা।উত্তর দিলো আদৃত।
″হতেও পারে।″
″কখনও সম্ভব না।″
″কেনো?″
″সাত বছর আগে যা হয় নি তা সাত বছর পরে হবে উক্ত আশা রাখাটা বোকামি হবে না?″
″এমনটাও তো হতে পারে আশাটা না করা বোকামি হবে।″
″ভালোবাসার মানুষ চিনতে তো আঁখি সারাজীবন বোকামি করে আসছে আগামীতে আর করবে না নির্ধিদায় থাকতে পারেন।ভালো থাকেন,শুভ রাত্রী।
অতঃপর আর দেরি না করে আঁখি অফলাইন চলে গেল।পুরনো সে ক্ষতগুলো মুহুর্তেই জাগ্রত হয়ে গেল তার।ফোন রেখে দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করে ঘুমানোর চেষ্টাতে মন দিল।
আদ্রিশ ক্ষিপ্ত হলো নিজের উপর।
ধূর, কই আঁখি নিজে থেকে কথা বলছিল আর আমি ওকে মানসিক একটু প্রশান্তি দেওয়ার বদলে উল্টো ওর মন খা*রা*প করে দিলাম।
আঁখি ঠিকই বলত আমি নিরামিষ,মেয়ে পটানোর নামে আসত ঢেঁড়স,তখন ওর এসব কথায় বিরক্ত হলেও এখন দেখছি এটাই সত্যি,যে বয়সে লোক ২ টা সন্তানের বাবা হয়ে যায় সে বয়সে আমি এখনও একজনের মনে রাজত্ব করে ওঠতে পারি নি,বিয়ে তো দূরেই থাক।ধূর, কি যে করি…
বিরক্ত হয়ে ফোন রেখে দিল আদৃত।
″কি হয়েছে আদ্রিশ?কিছু তো বলবে?তোমার গালের দাগগুলো কিসের ছিল?তোমার মন খারাপ কেন?″
″আঁখির জন্য।আঁখিকে আনতে গিয়েছিলাম তখন ও আমার সাথে কু*কু*রে*র মতো আচরণ করে।আমি ওকে সত্য ভালোবাসি রিদিকা কিন্তু ও আমার ভালোবাসার মর্ম দিল না।″
″কি!ও তোমায় মেরেছে!কী করে করতে পারে ও তা!সব আমার জন্য হয়েছে,আমি তোমাদের জীবনে না আসলে এমনটা হতোই না,আমি চলে যাব তোমাদের জীবন থেকে,দেখবে আঁখি ঠিকই ফিরে আসবে তোমার কাছে,আমার আর কি কপালপোড়া যেভাবেই পারি বাকি জীবন কাটিয়ে নিব।আমি কাল সকালে নিজে যাব আঁখিকে আনতে।″
রিদিকা কেঁদে কেঁদে কথাগুলো বললে আদ্রিশ তাকে বুকে টেনে নিল,তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল।
″না রিদিকা,অনেক হয়েছে আর না।তুমি কেন নিজের সুখ ত্যাগ করবে ওর জন্য যেখানে ও তোমার কথা ভাবতেও চায় না,ও আমাকে ছাড়া ভালো থাকতে চাইছে ওকে থাকতে দাও,আমিও বেশি মর্ম দিয়ে গেছি ওকে,ও ডিভোর্স দিবে তাই না?ঠিক আছে আমিও সাইন করব সে কাগজে,যখন উপলব্ধি করবে সত্যিই আমাকে হারিয়ে যাচ্ছে তখন কেঁদে কেঁদে ফিরে আসবে আমার কাছে।″
″আর যদি ফিরে না আসে।″
″ও আসবে,আমি জানি ওর মনে আমার জন্য সীমাহীন ভালোবাসা বিদ্যমান,যে আমার জন্য সব ছাড়তে পারে সে আমাকে কখনও ছাড়তে পারে না,কোনো কিছুর বিনিময়েও না।″
″হুম,আচ্ছা ঠিক আছে,এখন তুমি শুয়ে পরো,আমি দোয়া করব আঁখি যাতে ফিরে আসে।আমি এখন চলি।″
চলি বলে রিদিকা যেতে নিলে আদ্রিশ তার হাত ধরে নিল।
″কোথায় যাচ্ছো?″
″আমার রুমে।″
″তোমাকে যেতে হবে না,আঁখি নিজেই নিজের অধিকার হারিয়েছে,ফিরে আসলে ওর কক্ষ নিয়ে দেখা যাবে,বর্তমানে তুমি এখানে আমার সাথে থাকবে।″
কথাটা শুনে রিদিকার চেহারাতে খুশির উজ্জ্বলতা ফুটে উঠল,ঝাপটে ধরল আদ্রিশকে,তার বুকে মাথা গুঁজল।
চারিদিকেই আঁখির নাম শোনা যাচ্ছে, প্রথমত রিপোর্টার লিজানকে পাবলিক প্লেসে থাপ্পড় মারার ভিডিও কেউ ভাইরাল করে দিয়েছে সামাজিক গণমাধ্যমে, হিটলার আঁখি নামে পরিচিতি পেয়েছে আঁখি,যাতে তরুণ তরুণীরা তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হচ্ছে,অপরদিকে সেই লিজানের অপ্রত্যাশিত মৃ*ত্যু আঁখির উপর পুলিশকে আঙুল তুলতে বাধ্য করেছে।টেলিভিশন খুললে খবরে আর ফোন হাতে নিলে সামাজিক গণমাধ্যম সব জায়গাতেই আঁখির বিচরণ,এসব বহুল চাপে আঁখির নিশ্বাস নিতেও যেন দূরুহ লাগছে,সত্যিই আজ দূরে কোথাও চলে যেতে ইচ্ছে করছে আঁখির।ঘর থেকেও বেরুনোর কোনো মানসিকতা নেই বর্তমানে আঁখির,তবুও মন মানিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বেরুল,আজকে বেশ সকাল বেড়িয়েছে,আদ্রিশের ফ্রেন্ড রিয়াদ ওকে কিছু আর্জেন্ট প্রয়োজন বলে কফিশপে ডাকাল,আঁখি যদিও বলেছিল তার বাড়িতে চলে আসতে তবে রিয়াদ তাকে কফিশপেই আসার জন্য অনুরোধ করল,আঁখি বলল হাসপাতালে যাওয়ার আগে ৫-১০ মিনিটের সময় ও রিয়াদকে দিতে পারবে তাতেই রিয়াদ রাজি হয়ে গেল।আঁখি আসার আগেই রিয়াদ এসে সেখানে তার অপেক্ষা করছিল।আঁখি এসে তার দু’জন গার্ড সহিত রিয়াদের বিপরীত দিকে গিয়ে বসল।রিয়াদ এবার বেশ অস্বাভাবিকতা নিয়ে বলল।
আসলে আমি তোমার সাথে প্রাইবেট কিছু কথা বলতে চেয়েছিলাম।
আঁখি রিয়াদের মনোভাব বুঝতে পেরে তার গার্ডদের একটু দূর হয়ে দাঁড়াবার ইশারা করল,কথামতো গার্ডগুলো একটু দূর হয়ে দাঁড়ালো। এবার আঁখি বলল।
″আশা করি যা বলার তাড়াতাড়ি বলবে রিয়াদ,আমি কিন্তু তোমাকে সময় বেশি দিতে পারব না,তোমার ভালোয় জানা আছে।″
″হুম,তোমাকে তো পাওয়াই যায় না,এখন যখন হাতের নাগালে পেয়েছি তবে যা বলার পরিষ্কার বলে দিব। ″
″বলো কি বলবে?″
″ওই বলছিলাম যে তোমার সাথে আদ্রিশ এমনটা করবে কখনও ভাবি নি আমি,ওকে আমি বেস্ট ফ্রেন্ড মনে করতাম ভালো মানুষ মনে করতাম,কিন্তু ও কি করল,তোমার মতো পেয়েকে হাতছাড়া করল সামান্য ওই রিদিকার জন্য।কতো বড় বোকা ও,ছিঃ…ওর জায়গায় আমি হলে কখনও এমনটা করতাম না,তুমি এডাল্ট,আত্ননির্ভরশীল,সাহসি,তার উপর সুন্দরী এমনটা করার কথা হয়ত কখনও কোনো পুরুষই ভাবত না যেমনটা আদ্রিশ করেছে।ওকে বন্ধু বলতেও লজ্জা হচ্ছে আমার।″
″তুমি কি বলতে চাও রিয়াদ?পরিষ্কার করে বলো।″
″দেখো আঁখি অনেকদিন ধরেই তোমার সাথে আমার চ্যাটে কথা হয়,হয়ত তুমি ভালোয় বুঝে গেছো আমার মনোভাব,এখন আর ঘুরিয়ে কিছু বলতে চাই না তোমায় আমি।আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি আঁখি,সত্যি বলছি আদ্রিশের মতো কখনও তোমাকে ঠকাব না।″
″হুম বুঝলাম,তা তোমার আগের স্ত্রী আর দুটো সন্তানকে কি করবে ভেবেছো?″
″আরে ওদের নিয়ে তুমি চিন্তা করো না তো,মাসুমা কে তো এমনিতেই ছাড়ছি আমি,ওর সাথে ভালো যাচ্ছে না আর আমার,আর যেখানে প্রশ্ন আমার বাচ্চাদের ওরা মাসুমার কাছেই থাকবে ওদের ভরণ পোষণ আমি দিব,আমিও তো একজন উকিল টাকার কমতি হবে না তুমি জানোই,ডিভোর্সের ব্যপারটাও দেখে নিব।″
সহসা আঁখি রিয়াদের এক হাত অতি স্বাভাবিক
ভাবে খামছে দাঁত কটমট করে বলতে শুরু করল।
পাবলিক প্লেস তাই সিন ক্রিয়েট করতে চাইছি না,এমনিতেই অনেক প্যারায় আছি,নইলে এখনই তোর এমন জায়গায় এমনভাবে মা*র*তা*ম যে আবারও বাচ্চা জন্মদানের যোগ্য থাকতি না,শা**লা লু**ই**চ্ছা,কতো ভালো ভাবতাম তোকে,কিন্তু কয়েকদিনে তোর সাথে চ্যাটে কিছু কথা বলে বুঝতে পারলাম তুই কেমন।আমি তো এমনিই তোর কথার উত্তর দিতাম আদ্রিশের বন্ধু ভেবে কিন্তু তোর মনোভাব বুঝতে পারার পর তোকে এরিয়ে চলি অবশেষে তুই দেখিয়ে দিলি তোর আসল রুপ,আদ্রিশের ফ্রেন্ড তুই তোর কাছ থেকে আশাও আর কি করা যেতে পারে।জানিস আমার মতে তোদের মতো পুরুষের উপর কোনো কেস না করে তোদের একদম প্রাণে মে*রে ফেলা উচিৎ। নোং*রা কোথাকার। আর যেনো তোকে আমার সামনে না দেখি,নইলে আঁখি কি জিনিস দেখিয়ে দিব।
কথাগুলো বলে আঁখি উঠে চলে গেল,হাতে যন্ত্রণা হলেও রিয়াদ এতসময় দাঁত চেপে তা সহ্য করছিলে,আঁখি চলে গেলে হাতের দিকে তাকালো,আঁখির নখগুলো বেশ ক্ষত করেছে তার হাতে,র**ক্ত বেড়িয়ে গেছে এতসময়ে।
আদ্রিশ ডিভোর্স পেপারে সাইন করার জন্য হাতে কলম নিয়েছে।সাইন করার জায়গায় গিয়ে যেন আর শক্তি জুটিয়ে উঠতে পারছে না সে জায়গায় কলম বসানোর,কতো কিছুর পর যে আঁখিকে সে নিজের করে পেয়েছিল তাকে এতো সহজে কেমনে হারিয়ে দেবে!না আঁখি তো তার জন্য অসাধ্য এক সাধনা ছিল।যাকে সে তার বুকের চূড়ায় জায়গা দিয়েছে,তার সর্বাঙ্গে তো আঁখির বাস।হাজার ছেলের প্রেমিক হৃদয়ে ছু*রি চালিয়ে জয় করেছিল সে আঁখিকে,তার আঁখির জোরি দেওয়ার মতো নারী আর একটাও আদ্রিশ কখনও দেখে নি,এমন এক রমণীকে হাতছাড়া সে কিভাবে করবে!না ভাবতেই তো ধম বন্ধ লাগছে আদ্রিশের,কি করবে সে?
আদৃত ফোন করল আঁখিকে,আঁখি গাড়িতে বসে আছে বেশ বিরক্তি নিয়ে।আদৃতের ফোন আসলে সে বিরক্তি কিছুটা হলেও দূর হলো,আদৃতই যে প্রথম এবং শেষ ব্যক্তি যার কোনো কাজেই কখনও আঁখির বিরক্তি আসে নি।ফোন ধরল আঁখি।
″হ্যাঁ ডা.সাহেব,বলুন?″
″আসছো হাসপাতালে?″
″হুম, এখন তো সার্জনের সাথে প্রফেসরও,ক্লাস ও জয়েন করতে হবে না আসলে পারি?তা আপনি আসছেন?″
″ভুলে যাবেন না,প্রফেসর শুধু তুমি একা নও।″
″হুম,তবে চলে আসুন প্রফেসর সাহেব।″
″আসছি প্রফেসর সাহেবা,তা রাখি হাসপাতালে দেখা হচ্ছে ″
″হুম।″
ফোন কেটে দিয়ে বেশ খুশি মনে কক্ষের বাইরে বেড়িয়ে আসল আদৃত,আস্তে আস্তে তার আর আঁখির সম্পর্কের তিক্ততা দূর হচ্ছে তার আর কি চাই।আঁখিকে ফিরে পাওয়ার কোনো পথ বাদ রাখবে না আদৃত এবার।
ড্রয়িংরুমের সোফায় মিডি ড্রেস পরে বসে আছে রিংকি,ইশিকা তাকে নানান রকম জেরা করছে।
″তুমি কি অস্ট্রেলিয়া থেকে এখানে এসেছ শুধু ভাইয়ার সাথে দেখা করবে বলে?″
″হ্যাঁ,ও এতদিন থেকে এসেছে যাওয়ার নাম নিচ্ছে না,তাই ভাবলাম এসে ওর খোঁজ নেই,এমনি তো ফোনও ধরে না,তাছাড়া বাংলাদেশে কখনও আসা হয় নি এক সুযোগে বাংলাদেশ দেখাও হয়ে যাবে সেই ভাবনায় চলে আসলাম।″
″আমার ছেলে আর যাবে না।আমি ওকে বিয়ে করাব।তুমি যখন এসছো দু’দিন ঘুরে চলে যেতে পারো।″
″মা,কি বলছ এসব?…বাবা তুমি মাকে একটু বোঝাও আমি ভাইয়াকে ডেকে আনি।″
শায়েলা আর আরিয়ান মির্জা একপাশে দাঁড়িয়ে আছেন।রিংকিকে প্রথম দেখায়ই পছন্দ হয় নি শায়েলা মির্জার।
আরিয়ান মির্জা উনার স্ত্রীকে বুঝানোর চেষ্টা করছেন।
″শায়েলা তুমি তো মেহমানদের সাথে কখনও এমনটা করো না,তবে ওর সাথে এমনটা করছ কেনো?″
″আরে দেখছ না,শেউলা গাছের পে*ত্নি আসছে আমার ছেলের ঘাড়ে চড়বে বলে।কাপড় দেখো ওর।″
″কি শায়েলা শিক্ষিত হয়ে এমনটা করছ!এটা আজকালকার ফ্যাশন।তাছাড়া ও আমেরিকায় বড় হয়েছে″
″গো*ল্লা মারো তোমার ফ্যাশন,শিক্ষিত হলেই যে হাঁটুর উপর কাপড় পরতে হবে এটা কোন বইয়ে লিখা আছে।আমার মেয়েও তো শিক্ষিত কই কখনও এমন কিছু পরতে দেখি নি তো,আঁখিও তো ধনী বাপের একমাত্র মেয়ে ছিল,কখনও তাকে তো এমন কাপড় পরতে দেখি নি,ফ্যাশন করবে ঠিক আছে সীমানার ভিতরে করলেই তো হয়।শরীর দেখিয়ে আবার কেমন ফ্যাশন?″
″ইশ তোমাকে বোঝানোর ক্ষমতা আমার দাদারও নেই হয়ত।মা ছেলের মনের দড়ি ঘুরে ফিরে আঁখিতেই সীমাবদ্ধ ″
″আর ওখানে থাকবেও সীমাবদ্ধ,কারণ আঁখির জায়গা নেওয়া ক্ষমতা যার তার নেই।লাখে একটা মেয়ে আঁখি।″
তাদের কথার ফাঁকে আদৃত চলে আসলো সেখানে।রিংকিকে দেখে অবাকত্বের সাথে বিরক্তি ভাব নিয়ে বলল।
″তুমি এখানে কি করছ?″
″তোমার খোঁজে এসেছি, তুমি তো ফোনই ধরো না,দেশে কবে ফিরছ?″
″আমি আমেরিকা আর যাব না,তোমার এখানে এভাবে আসা ঠিক হয় নি,এসেছ ভালো কথা,এখানে থাকো কয়েকদিন বেড়িয়ে যাবে,ইশিকা ওর জন্য যেকোনো একটা গেস্ট রুম রেডি করাও।″
কথাটা বলে চলে গেল আদৃত,শায়েলা মির্জা মনে মনে অনেক খুশি হলেন।
চলবে…….
#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
(১৯)
হাসপাতালে এসে একটা ক্লাস এটেন্ড করে নিজের কেবিনে বসে আছে আঁখি,আদৃতের বর্তমানে কোনো ক্লাস নেই,অন্য কাজও নেই তেমন তাই আঁখির কেবিনে চলে আসলো।
″মে আই কাম ইন হিটলার?″
″আরে ডা.সাহেব আপনি?আসুন।তা হিটলার ডাকটা কবে ছাড়বেন?″
″হিটলারকে হিটলার ডাকব না তো কি ডাকব?″
″কি হিটলারি করলাম আপনার সাথে আমি? ″
″তা তুমিই তো ভালো জানো।″
″ছয় বছর আগের কথাগুলো এখনও মনে নিয়ে বসে আছেন।এমনও তো হতে পারে হিটলার আঁখি এখন বদলে গেছে।″
″হিটলার আঁখি কখনও বদলাতে পারে না,পরশু সকালেই রিপোর্টার লিজানকে ভরা সমাজে থাপ্পড় মেরে তাকে সঠিক জবাব দিয়ে এসে যদি আজ বলে সে বদলে গেছে তবে কি করে মানা যায় বলো?″
″আরে কিছু কিছু লোক এমন আছে যাদের উপস্থিত মূহুর্তে সঠিক জবাব না দিলে তারা সায় পেয়ে মাথায় ওঠে, যা আমি কখনও মেনে নেই না।″
″এটাই তো হিটলার আঁখি,আমার মতে প্রতিটা মেয়েকে তোমার মতো হওয়া চাই।″
″বাহ,ডা.নিরামিষও কারো প্রশংসা করতে পারেন আমি জানতাম না,এত বড় পরিবর্তনের কারণ জানতে পারি এবার?″
″এটা কোনো পরিবর্তন না,মানুষ কখনও কখনও নিজের পছন্দের মানুষের খুশির জন্য তার রঙে রেঙে যায়,আমার ক্ষেত্রেও এমনই কিছু মনে করতে পারো।″
″তা সেই মানুষটা কে জানতে পারি? ″
″আছে একজন,যাকে খুব করে চাই আল্লাহর কাছে রোজ মোনাজাতে।″
আঁখির চোখে গভীর চাহনি স্থির রেখে মনের গহীনের লুকানো সত্য যেন তাকে বুঝানোর চেষ্টা করে গেল আদৃত,আঁখিও অপলক চাহনিতে তাকিয়ে আদৃতের মুখে না বলা সত্য তার চোখের মধ্যে দিয়ে বোধগম্যে নেওয়ার সম্ভবপর চেষ্টা করতে লাগল,যেখানে নিজের জন্য অসীম ভালোবাসার গভীরতাই খোঁজে পাচ্ছে আঁখি,যার হয়ত কোনো শেষ নেই।তবে তাতে বিশ্বাস করে উঠার সক্ষমতা নেই তার।বড্ড অস্বাভাবিক অনুভুতি হলো আঁখির এতে,তাই আদৃতের উপর থেকে চোখ সরিয়ে নিল,কেবিনে তখন প্রবেশ করল ইন্সপেক্টর জিসান তার ফোর্স সহিত।আঁখি বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল তাকে।
″আরে ইন্সপেক্টর জিসান আপনি?″
″হ্যাঁ আমি ডা.আঁখি,আপনার সাথে কিছু দরকারি কথা ছিলো।বসতে পারি?″
″হ্যাঁ, অবশ্যই।″
″জিসান বিচক্ষণ এক দৃষ্টি আদৃত আর আঁখি উভয়ের উপর বুলিয়ে আদৃতের পাশের চেয়ারে বসল।এবার বলা শুরু করল।
″হ্যাঁ তো মিস আঁখি,আমার আবার সময় কম তাই সোজা পয়েন্টে আসি।আপনি গত পরশু রিপোর্টার লিজানকে পাবলিক প্লেসে থাপ্পড় মেরেছেন,উনার সাথে আপনার সমস্যা হয়েছিল আর কাল রাতেই তাকেও নির্মমভাবে হ*ত্যা করা হয়,কলি আর লিজান মা*র্ডা*র কেসে আপনি বর্তমানে মেইন সাসপেক্ট,তাই বলুন কাল রাত ১১ টার সময় আপনি কোথায় ছিলেন?″
″আমার বাড়িতে, কেনো?″
″তার কি কোনো প্রমাণ আছে আপনার কাছে?″
″অবশ্যই,আপনি আমার বাড়ির সিসিটিভি ফোঁটেজ চেক করতে পারেন,রাত ১১ টায় আমি আমার খাবার টেবিলে বসে ডিনার করছিলাম,আপনার বিশ্বাস না হলে সেখানকার ফোঁটেজ আপনি চেক করে নিতে পারেন আমার বাড়ি গিয়ে।আমি আমার কাজের লোক আর গার্ডদের বলে দিচ্ছি,আপনি নির্ধিদায় যান।″
কথাগুলো বলেই আঁখি তার একজন গার্ডকে ফোন করল।
″আমির একজন ইন্সপেক্টর আসবেন,নাম জিসান হাসান,উনাকে আমার বাড়ির সকল স্থানের সিসিটিভি ফোঁটেজ দেখিয়ে দিবে,উনি যেদিনের আর যে ক্ষণের দেখতে চাইবেন সব।″
″ওকে ম্যাম।″
ফোন কেটে এবার বলল আঁখি।
″এবার আপনি যেতে পারেন।″
″ধন্যবাদ, আপনি না বললেও আমি তা করতে যেতাম,আর তা করতে আপনি আমাকে আটকাতেও পারতেন না,কিন্তু ভাবলাম এর আগে আপনাকে বলে নেওয়া যাক,আমি আবার অপরাধীদের সবসময় একটা সুযোগ দিতে পছন্দ করি।″
″আপনি এতো আত্নবিশ্বাসের সাথে কিভাবে বলতে পারেন যে আঁখিই অপরাধী?ভুলে যাবেন না প্রমাণ ব্যতীত আপনার কাউকে মন গড়া অপরাধী বলার কোনো ক্ষমতা নেই।″
″ক্ষমতা নিয়ে আমার সাথে কথা বলতে আসবেন না ডা.আদৃত।আপনি আপনার কাজ করুন,আমাকে আমার কাজ শেখাতে না আসলে খুশি হবো।″
আদৃত আরও কিছু তাকে বলবে এর আগেই আঁখি বলল।
″ইট’স ফাইন ডা.আদৃত,উনাকে উনার কাজ করতে দিন,আমি জানি আমি কে আর আমি কি করতে পারি। বাকি তো সন্দেহ যে সেই করতে পারে,করতে দাও,প্রমাণ ব্যতীত কারোই কিছু করার থাকে না,এখন সে পুলিশ হোক বা কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রী।″
″অভার কনফিডেন্ট ভালো না ডা.আঁখি।প্রমাণ সহিত কথা বলতে আসব আপনার সাথে।″
″আমিও অপেক্ষা করব আপনার।″
আঁখি নির্ভয়ে ইন্সপেক্টর জিসানের জবাব দেয়,ইন্সপেক্টর জিসান প্রস্থান করেন সাথে সাথে,আঁখি এবার টেবিলে রাখা গ্লাস থেকে গ্লাস ভর্তি পানি এক টানে খেয়ে নেয়।আঁখির হাবসাব দেখে আদৃতের কেমন জানি লাগল,যেন আঁখিকে স্বাভাবিক দেখা যাচ্ছে না,আদৃত কিছু বুঝে উঠার আগেই আঁখি জ্ঞান হারিয়ে ফ্লোরে পরে গেল।
বেশ চিন্তিত হয়ে বসে আছে জিসান,আঁখির বাড়ির সিসিটিভি ফোঁটেজ চেক করে এসেছে,লিজানের মৃ*ত্যু*র সময় আঁখি তার বাড়িতেই ছিল,এমনকি কলির মৃ*ত্যু*র সময়ও আঁখি তার বাড়িতে ছিল সিসিটিভি ফোঁটেজ মোতাবেক।তবে কে খু*ন করল এদের!সবকিছু তো আঁখিকেই ইশারা করে,কিন্তু সে একসাথে দুই স্থানে কিভাবে থাকতে পারে!কলি আর লিজানের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী তাদের মৃত্যুর সময় তো আর ভুলও দেখাতে পারে না।কিছু ভেবে মিলাতে পারছে না জিসান,হঠাৎ তার একজন কনস্টেবল আসলো তার কাছে।
স্যার,আপনি বলেছিলেন প্রমত্ত অঙ্গনা নামের ৬ বছর আগের ফাইল বের করতে,কিন্তু তা বের করতে গিয়ে বেশ পুরাতন একটা আলমারি থেকে প্রমত্ত অঙ্গনা নামের আর একটা ফাইল বেড়িয়ে আসে,যেটা প্রায় ১৩ বছর পুরোনো।
কথাটা শুনে অনেক আশ্চর্য হলো জিসান,কন্সটেবল এর হাত থেকে ফাইলটা নিয়ে নিল টান দিয়ে। ফাইলটা খোলে কৌতূহল ও মনোযোগ সহকারে পড়তে শুরু করল।
ফাইলের লেখাগুলো পড়ার পর বাকরুদ্ধ হয়ে গেল ইন্সপেক্টর জিসান,১৩ বছর আগে একজন পুরুষ খুন হয়েছিল যার লা*শে*র পাশে প্রমত্ত অঙ্গনা নামটা পাওয়া যায়,তারপর আরও ১৫ টা খুন হয় সব কয়টা লা*শে*র পাশে একই নাম ছিল,কিন্তু আলাদা বিষয় সেই সকল লা*শে*র পাশে প্রমত্ত অঙ্গনা নামটা লিখা থাকার সাথে কয়েকটা বাক্যও লিখা ছিল।সেগুলো এই ফাইলে এতো বিস্তারিত ভাবে দেওয়া না থাকলেও জিসান লক্ষ করল আলাদা একটা বিষয়।৬ বছর আগে যখন একজন পুরুষের খুন হয়েছিল তখন তার লা*শে*র পাশে প্রমত্ত অঙ্গনা লেখাটার সাথে লেখা ছিল।
কারো অকাল মৃত্যুর আসল কারণ জীবিত অবস্থায় মানায় না।
৪ বছর আগেও তিনটে খু*নের প্রথম একজন পুরুষের মৃত্যু হয় যার লাশের পাশে লিখা ছিল,
ইচ্ছের বিরুদ্ধে নারীর লাজ হরণকারী বেঁচে থাকার অধিকার রাখে না,
প্রমত্ত অঙ্গনা।
কিন্তু এর পরবর্তী দু’ইটা লা*শে*র পাশে প্রমত্ত অঙ্গনা নাম ব্যতীত অন্য কোনো বাক্য পাওয়া যায় নি, ১৩ বছর আগের ফাইল অনুযায়ী প্রমত্ত অঙ্গনা তার নামের সাথে খু*নে*র কারণ বলে দেয়।কিন্তু ৪ বছর আগের শেষ সেই দুই খু*ন আর এখন কলি আর লিজানের খুন এই চারটে লা*শে*র পাশে প্রমত্ত অঙ্গনা নাম ব্যতীত কিছুই পাওয়া যায় নি,এর মানে কি হতে পারে!এই প্রমত্ত অঙ্গনা ১ জন,না দু’জন। এমনও হতে পারে কেউ আসল প্রমত্ত অঙ্গনার নাম নিয়ে নিজে খু*ন করে বেড়াচ্ছে। সব কিছুই যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে জিসানের,অনেক ভাবনার পর জিঙ্গেস করল হাবিলদার ফয়েজকে জিসান।
″ফয়েজ সাহেব ১৩ বছর আগে প্রমত্ত অঙ্গনা কেস কে দেখছিল আপনি জানেন?আপনি পুলিশ ফোর্সে অনেক আগ থেকে আছেন,আপনি জানতে পারেন বলে মনে হয় আমার।″
″স্যাঁর যতটুকু জানি ইন্সপেক্টর ইশতিয়াক কেসটা দেখছিলেন,কিন্তু আমি শুনেছি এ বিষয়ে, জানিনা তেমন কিছু।″
″ইশতিয়াক সাহেবের বাড়ির এড্রেস জোগার করে দিতে পারবেন আমায়?″
″ইয়েস স্যার,আমি দেখছি।″
স্যালাইন চলছে আঁখির,অচেতন হয়ে পরে আছে একটা কেবিনের বেডে,পাশে আদৃত বসে আছে।খুব ইচ্ছে হলো তার আঁখির মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার,তার হাতটা ধরার,তবে হাতটা ধরতে গিয়েও ধরল না।ব্যাথাভরা স্বরে বলল।
তোমার অগোচরে কখনও তোমাকে স্পর্শ করি নি আর করবও না,আমার ভালোবাসায় যে কোনো অবিত্রতা নেই সুখপাখি।আমি যদি পারতাম তবে এক নিমিষেই তোমার সব অশান্তির কারণ দূর করে দিতাম, নিয়ে যেতাম তোমাকে এক নতুন সুখের ছোঁয়ায়,যেখানে দুঃখ তোমায় দূর থেকেও দেখে যাওয়ার সাহস জুটিয়ে ওঠতে পারত না।সেই স্বাধীন, চঞ্চল আঁখি কখনও আর দুঃখের সাগরে তলিয়ে যেতে পারত না,আমারই দোষ ছিল আঁখি সেদিন যদি ওভাবে চলে না যেতাম,জো*র করে নিজের ভালোবাসা নিজের কাছে ধরে রাখতে চাইতাম তবে হয়ত আজ আমাদের দু’জনেরই জীবন সুখে ভরপুর হতো।কিন্তু তুমি চিন্তা করো না,আমি ফিরে যখন এসেছি তবে আর তোমায় কোনো পিছুটানে পরতে দিব না।মিথ্যে হাসির আড়ালে আর কখনও তোমাকে লুকোতে দিব না সত্য ব্যাথা,তোমার চেহারার হাসিতে শুধু সত্য সুখ লুকিয়ে থাকবে তুমি দেখে নিও।
আঁখির দিকে তাকিয়ে আদৃত কথাগুলো বলছিল হটাৎ আঁখির জ্ঞান ফিরে,চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে সামনে আদৃত বসে আছে।
আঁখি ঝটপট উঠে বসলে আদৃত তাতে বাঁধা প্রদান করে।
″কি করছ?শুয়ে থাকো,তোমার শরীর অনেক দূর্বল, ইউ নীড রেস্ট। ″
″আই এম ফাইন ডা.আদৃত,তা আমাকে এখানে কে এনেছে?আর স্যালাইন কে দিলো?″
″সামনে বসে থাকা আসত এক জলজ্যান্ত মানুষ দেখতে পাও না?″
″তার মানে আপনি আমায় কোলে করে এখানে এনেছেন?″
″তো আমি তোমায় আর কিভাবে আনতে পারতাম?″
″তাই বলে আপনি আমাকে না বলে,আমার অগোচরে আমায় কোলে নিবেন!″
″প্রয়োজনে নিয়েছি আঁখি,এমন ভাব করছ যেন আর কখনও নেই নি,একসময় নিজে থেকেই কোলে চড়ার ধান্দা করতে যখন তখন আর এখন ক্ষেপে ওঠছ।″
″একসময় উঠতাম বলে আপনি আমায় রোজ কোলে নিবেন এখন?আর তখন আমি ১৮ বছরের তরুণী ছিলাম আর এখন ২৫ বছরের মেচোয়ার একজন নারী,তাছাড়া আমাদের সম্পর্ক এখন আলাদা।″
″কোন বইতে লিখা আছে ১৮ বছরের মেয়ে কোলে ওঠতে পারবে আর ২৫ বছরের নারী পারবে না।″
″আপনি খুব বেশি লজিক খোঁজছেন বলে মনে হয় না?″
″তুমি খুব বেশি লজিক দেখাতে চাইছ বলে মনে হচ্ছে না?″
″আপনি কিন্তু এবার অতিরিক্ত বিরক্ত করছেন।″
″তুমি কোথায় কম করছ?″
″আপনি যে আসত ঢেঁড়স ছিলেন সেই আসত ঢেঁড়সই রয়েছেন একটুও বদলান নি।″
″হ্যাঁ আর তুমি সেই ঢেঁড়সের পঁচা অংশ।″
কথাটা শুনে আঁখির হাসি চলে আসল,হাসতে হাসতে বলল।
″ঢেঁড়সের পঁচা অংশ এ কেমন উপাধী?হা হা হা।″
″বেশ করেছি তোমার সাথে কথায় জিতে উঠার ক্ষমতা আমি কোথা থেকে জুটাবো,মুখে তো কথার ফুলঝরি,এবার চুপ করে শুয়ে পরো,স্যালাইনটা শেষ না হওয়া অব্দি জায়গা থেকে নড়বে না।″
″আপনি বললেন আর আমি করলাম, তাই না?মোটেও এমনটা ভাববেন না,আমি একদম ঠিক আছি,কাজ আছে আমার।″
আঁখি উঠে যেতে নিচ্ছিল,আদৃত আঁখিকে টান দিয়ে বসা থেকে বালিশে শুইয়ে দিল যাতে আদৃত বেশ ঝুকে আঁখির উপর চলে গেল,দু’জনের চোখে চোখ পরল,দু’জনের ঘন নিশ্বাস উপছে পরছে একে ওপরের উপর,হৃৎস্পন্দন দ্রুতগতির হয়ে গেল মুহুর্তেই দু’জনার,পুরাতন সেই সুপ্ত অনুভুতিগুলো নাড়া দিয়ে গেল দু’জনেরই মনে।তবে অল্প সময়ে আঁখি স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসলে আদৃতের বুকে আলত ধাক্কা দিল ওঠে যাওয়ার জন্য,ধাক্কাটাতে আদৃতও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসে আঁখির উপর থেকে উঠে বসল। বেশ শান্ত গলায় বলল আদৃত।
″সবকিছুতেই জেদ ভালো না আঁখি,আমার সাথে ঝগড়া করার ইচ্ছে, করো ইচ্ছেমতো কিন্তু নিজেকে কষ্ট দিয়ে না।ঘুমিয়ে থাকো,সুস্থ হয়ে গেলে ইচ্ছেমতো ঝগড়া করে নিও।″
″ঝগড়া আপনি শুরু করেন,আমি না।″
″না তুমি কেন শুরু করবে,ঝগড়া কাকে বলে তুমি তো জানোই না।″
আদৃতের কথায় দাঁত কেলিয়ে হাসি দিল আঁখি।আঁখির মুখের সে দুষ্টু হাসি মন ভুলালো আদৃতের,আঁখি ইচ্ছে করেই তার সাথে ঝগড়া বাঁধায় জানে আদৃত,আদৃতের সাথে ঝগড়া করা যে তার একসময়কার সব থেকে পছন্দের একটা অভ্যেস ছিল।অভ্যেসটা এখনও আঁখি যেতে দেয় নি জেনে মনে বেশ শান্তি পেল আদৃত,এবার বলল।
পারোও বটে তুমি,ঘুমোয় এবার, ঘুমের ঔষধ দিচ্ছি খেয়ে নাও, এমনিতেই ঘুম চলে আসবে।
রিয়াদ দেখা করতে এসেছে আজ আদ্রিশের সাথে,দু’জন বেশ সময় থেকে গল্পে মগ্ন একে ওপরের সাথে।আজ আদ্রিশ রিদিকাকে নিয়ে বাইরে যাবে বলেছিলে কিন্তু হঠাৎ রিয়াদ আসলেই যাওয়া কেন্সেল করে দিল সে।সেই কবে থেকেই রিয়াদকে নিয়ে পরে আছে,আদ্রিশ রিয়াদকে পেলে যেন দুনিয়া ভুলে যায় এমনটা মনে হয় রিদিকার,এখন থেকে নয় যবে থেকে এ বাড়িতে এসেছে রিদিকা তখন থেকে দেখছে এই রিয়াদকে নিজের জীবনের একটা আলাদা অংশ মনে করে আদ্রিশ,দু’জন ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছে দূর থেকে তাদের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে তাকিয়ে আছে রিদিকা।
″রিয়াদ কি করব বল?আঁখিকে তো কোনোমতে আর ধরে রাখতে পারছি না।″
″আরে চিন্তা করিস না,এই মেয়েদের পিছন বেশি ঘুরলেই এমন,পাত্তা দেওয়া বন্ধ করে দিয়ে দেখ এমনিই পিছন পিছন এসে ঘুরঘুর করবে।″
″আঁখি এমন না রিয়াদ।″
″আরে ঘুরে ফিরে সকল মেয়েরাই একই সেইম।″
চলবে……..
অনেকেই বলছেন রহস্য কেনো উন্মোচন করছি না,যেখানে রহস্য এখনও ভালো মতে গড়ে ওঠে নি,আমি হুটহাট সবকিছু ক্লিয়ার করে দিতে পারি কিন্তু এতে গল্পটা সৌন্দর্য হারাবে,তাই সবকিছু আসতে আসতেই সামনে আসবে।আসসালামু আলাইকুম সবাইকে।