#আঁধারের_তারাবাজি
#অভ্রায়ীনি_ঐশি
#পর্ব_৪
“আপনার কে হয় উনি? মি.রায়ানিশ?”
ড. সোহানের কথায় তার দিকে ফিরে তাকালো নভ।তবে উত্তর দিলো না,,,,ড. আবার প্রশ্ন করলো..
“কি নাম উনার?”
এবার নভ ভাবতে লাগলো…
“নাম,?,,,কি যেন একটা নাম,,,,?একটু আগেও তো ডাকলাম,,কি নাম যেন..”
“সেকি,,,আপনি উনার নামও জানেন না?”
থেমে গেলো নভ,,,,হালকা রাগ দেখিয়ে বললো…
“এতো কিছু জানার কোনো প্রয়োজন আপনার নেই ডক্টর,,,, ওর কি হয়েছে সেটা বলুন,,,”
ড. সোহান হাফ ছাড়লো,,,সে চেনে এই অবয়ব রায়ানিশকে।এ যে কোনো কথার উত্তর দেবে না তা ভালোই বুঝতে পারছে।বেশি প্রশ্ন করে নিজের প্রাণ হারানোর কোনো প্রয়োজন নেই,,,,
“আপাতত উনি ঠিক আছে,, আমি ইনজেকশন দিয়ে দিয়েছি।,,,”
” কিন্তু হঠাৎ এমনটা কেন হলো?”
“আমি শিওর নই,,,,তবে মনে হয়,,উনার মাইগ্রেনে কোনো প্রবলেম আছে।আর তাই হয়তো মাথায় চাপ অনুভব করায় মস্তিষ্ক থেকে এভাবে রক্ত ক্ষরণ হয়েছে,,,,”
নভ ভ্রু কুচকালো…
“মাইগ্রেনে প্রবলেম?,,,,কি প্রবলেম?”
“সেটাতো আমিও ঠিক বলতে পারছি না,,,আপনি পারলে একবার হসপিটাল থেকে উনার সিটি স্ক্যান করিয়ে নিবেন।,,,,,আর হ্যা,,,খেয়াল রাখবেন উনার।”
বলতে বলতেই উঠে রিসোর্ট ত্যাগ করলো ড.সোহান।
নভ ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে বসলো মোমের পাশে।মুখে স্পষ্ট চিন্তার ছাপ,,, মোমের ব্যপারটা খোলাসা হচ্ছে না তার কাছে।,,,,
মোমের থেকে চোখ সরিয়ে নিজের দিকে তাকালো নভ।শার্টে এখনো ছোপ ছোপ রক্তের দাগ লেগে আছে।,,,আবার তখনকার মোমের মুখটা ভেসে উঠলো চোখের সামনে।সাথে সাথেই চোখ বুজে ফেললে নভ।,,,,,,,কেনো জেনো ভাবতে পারছে না মোমের এমন মুখশ্রী,,,,,। একটা নিঃশ্বাস ফেলে উঠে গেলো চেঞ্জ করার জন্য।,,,
—————
ভেজা ভেজা চোখে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে আছে মোম।মাথার যন্ত্রণা এখনো আছে,,তবে অতি স্বল্প।সহনীয় যাকে বলে,,,,,,মাথায় ঘোরপাক খাচ্ছে নভের কথা,,,লোকটা এমন কেন?ভয়ংকর?,,মোম কিকরে থাকবে এর কাছে?,,নভ তো মোমের যন্ত্রণা বোঝে না,,, বোঝার চেষ্টাও করে না,,,,,,ধুর,,সে কেন চেষ্টা করবে বোঝার?,,,এমনটা কখনো হয় নাকি?, নভ তো তাকে নিজের প্রয়োজনে এখানে এনে রেখেছে।প্রয়োজন মিটলেই ছেড়ে দিবে।,,,আচ্ছা এই প্রয়োজনটা কি আদেও মিটবে?,,আব্বু কি পারবে এই কয়েক মাসের মধ্যে ১৬ লক্ষ্য টাকা জোগার করতে?,, কি করে পারবে?তাদের অবস্থা যে এতোটাও সচ্ছল নয়।,,,,,তাহলে কি মোমের জানান দেওয়া অসহনীয় মৃত্যুটা এই বদ্ধ রিসোর্টেই ঘটবে?,,,আব্বু আম্মি ভাইয়া আমার লাশটা দেখতে পারবে?,,,আমি কি আর কখনোই তাদের চোখের দেখা দেখবো না?”,,,,,
বিষাদ ভরা ভাবনার মাঝেই ভেসে এলো এক নরম, মোলায়েম পুরুষালি কন্ঠ..
“উঠে গেছো?,,এখনো কষ্ট হচ্ছে মাথায়?”
ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো মোম।,,,নভ তার পাশে দাড়িয়ে,,,, ইশশশ এই নভকে কি স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে,,,চোখে ব্যাকুলতা মিশ্রিত চাহনি,,,সুপ্ত ইচ্ছে মোমের উত্তর জানার।কন্ঠে মোলায়েম ভাবটা,,,সধ্য গোসল করার ফলে ভেজা চুলগুলো কপাল লেপ্টে আছে ঠোট দুটোও গোলগোল করে হালকা খোলা,,,ইশশশ কি চকলেটি।,,,
কিন্তু,,,, এই লোকটা তো সবসময় এমন থাকে না,,,,কি ক্ষতি হয় নিজের এই কিউটসি ফেইসটা সবসময় সবার চোখের সামনের হ্যাংকারে ঝুলিয়ে রাখলে?, তা নয়,,,চোখ লাল করে ভুতের মতো তাকিয়ে গিলে খাওয়া লুক নিয়ে থাকে সব সময়,,,একদম ভ্যাম্পায়ার টাইপ।,,,,
“কি হলো মেয়ে,,,মাথায় কি এখনো যন্ত্রণা করছে?”
মোম ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এলো,,,কাতর কন্ঠ নিয়ে বললো…
“আমি,,,,, আমি বাড়ি যাবো প্লিজ,, ”
নভ চুপ করে তাকিয়ে রইলো মোমের দিকে। এই মেয়ে এতো যাই যাই কেন করে?, নভকে দ্বিধায় ফেলবে বলে?,,,আচ্ছা,,,, জয়নাল সাহেব যদি টাকাটা দিয়ে ফেলে,,তাহলে কি আমি ওকে ছেড়ে দেবো?, না না,,,কেন ছাড়বো?,,ছাড়বো নাহ,,,নিজের নিরব নওয়াজ রাজ্যে লুকিয়ে রাখবো।,,,আচ্ছা এই মেয়ে থাকতে চাইবে আমার কাছে?,,এই প্লে বয় টাইপ নষ্ট ছেলেটাকে পছন্দ হবে তার?,,,,,’
“কি হলো,,,,আমায় বাড়ি দিয়ে আসুন,,,, ”
ঘোর কাটলো নভের,,,,ছি ছিহ,,,কি সব ভাবছি।,,,,একে আমার কাছে কেন রাখবো?,,,কাজ শেষ তো এও চলে যাবে।,,নভ,,, কি সব ভাবছিস তুই,,,,যাস্ট থ্রো ইট ইন ডাস্টবিন।,,,,
নভ শান্ত স্বাভাবিক স্বরে বললো…
“তোমার বাবা তোমায় আর ঐ বাড়ি নিতে চায় না,,,,,।তাই এখান থেকে যাওয়ার চিন্তা মাথা থেকে ঝেরে ফেলে দাও মেয়ে।”
মোম যেমন অবাক হলো,,,,আব্বু সত্যিই এমনটা চায়?,,,কিন্তু কি করে?,,, তাহলে কি আব্বুও অনুমান বুঝে গেছে যে আমার জন্য এতো কিছু করা সবই বৃথা?,,,,
কাদলো না মোম।কন্ঠে কঠোরতা এনে বললো…
”আমি আব্বুর সাথে কথা বলতে পারি?”
নভ তাকালো মোমের মধুময় মুখের দিকে,,,,,,না করার ইচ্ছে জাগলো না আর,,,মেয়েটা যে এমনই মোহ নিয়ে নভের সামনে উপস্থিত।,,, একটু পর নভ পকেট থেকে ফোন বের করলো।,,,মোম উঠে বসতে চাইলে নভ বাধা দেয়,,,
“উঠতে হবে না।শুয়ে শুয়েই কথা বলো,,,”..
মোম মানলো।এমনিতেই তারও খুব ক্লান্ত লাগছে।,,,তাই আর উঠলো না।,,,,
নভ ফোন লাগালো জয়নাল এহসানকে।রিসিভ হতেই বললো…
” জয়নাল সাহেব?”
“জ্বি,,,, সালাম স্যার,,,”..
” সালাম,,,সালাম জয়নাল সাহেব।,, আমার টাকার ব্যবস্থা হয়েছে?”
“জ্বি,,, মানে,,,ইয়ে স্যার,,আর কিছুটা সময়…”
“আপনার মেয়ের সাথে কথা বলুন।,,,কি একটা মেয়ে বানিয়েছেন।,,সারাক্ষণ বাচ্চামো করে,,,আরে এর জন্য তো আমার পেসেন্সের টেস্ট দিতে হচ্ছে,, ”
“আ্ আসলে স্যার,,, আমার মোমমা একটু এরকমই,,,”
“বুঝলাম৷ এবার কথা বলুন,,,”
বলেই ফোনের লাউড স্পিকার দিলো,,,,মোমের সামনে ধরলো।,,,,মোম অশ্রু সিক্ত নয়নে তাকালো ফোনের দিকে।,,,,কাতরতায় ভরা কন্ঠে বললো…
“আব্বু?”
জয়নালের মনটা হুহু করে কেদে উঠলো…,,আজ দুদিন মেয়ের এই ডাকটা শুনতে পায়নি।মেয়ের মুখের মাদলে হাসিটাও দেখেনি এই অভাগা বাবা,,,,যার জন্য তার পদ্মা ফুলের মতো একমাত্র দুহিতাটা অবয়ব নামক এক বিভীষিকাময় মানবের হাতে পড়েছে।সত্যিই বাবা হিসেবে সে সব দিকেই ব্যর্থ।,,,,মেয়ের এই কন্ঠটা যে আর কিছুদিনের ক্ষনস্থায়ী,,, তা যেন মানতে চাইছে না এই অকুল পিতৃ মন।৷, তার একটা মাত্র সোনায় সোহাগা মেয়ে যে আর কিছুদিনের মধ্যেই তলিয়ে যেতে চলেছে এক গভীর সমুদ্রের ন্যায় উদ্দাম মহলে,,,যেই মহল থেকে চাইলেই আর তাকে ফিরিয়ে আনা যাবে না।চাইলে বাবার আকুল হৃদয় তাকে হাসি মুখে বুকে জড়াতে পারবে না।পারবে না মেয়ের অপরূপ কেশ গুলোতে নিজের ক্ষয়ে যাওয়া রুক্ষ হাতটা স্বযত্নে বুলিয়ে দিতে।,,,,,,এই কঠিন সত্যিটাকেই মিথ্যা বলে দাবি করতে ইচ্ছে হলো জয়নাল এহসানের।,,,,
“কেমন আছিস মোমমা?”
মোম চুপ রইলো,,,, জয়নাল আবার তার আদুরে কন্ঠে ডাকলেন..
“আম্মিজান? ”
“তুমি কেন আমার জন্য এতোগুলো টাকা নিলে আব্বু?”
“মারে,,,,তোর এই অধম বাবাটা যে চেয়েও কিছু করতে পারছে না।,,,আমি সব শোধ করে তোকে আবার ফিরিয়ে আনবো আম্মিজান.”
“মিথ্যা আস্থা কেন দিচ্ছো আব্বু?,,,আমি জানি তুমি আমায় আর নিতে চাও না তোমাদের কাছে,,,ও বাড়ি আর আমার নয়।,,”
জয়নাল বুঝে গেলো,, তার মেয়ে ইতোমধ্যেই জেনে গেলো বিষয়টা,,,,নির্বাক হয়ে শুনতে লাগলো মেয়ের অন্তর নিঙরানো কথা গুলো…
“ঐ লোকটার সাথে বিয়ে দিয়েও তো তাড়াতেই চেয়েছিলে,,,, তা যখন হলো না, তখন এই ফন্দি আব্বু?,,,কেন আব্বু?,,,আমি কি বলেছিলাম আমার জন্য এতো কিছু করতে?,,,,,আচ্ছা? আমি কি তোমাদের কাছে খুব বেশি কিছুই চেয়ে ফেলেছি?,,যে আমায় এভাবে দুরে সরাতে চাইলে?,,,”
জয়নাল দুপাশে মাথা নেড়ে চোখ খিচে বন্ধ করে রাখলো,,,তবে গলা দিয়ে আর “না” শব্দটা উচ্চারণ করার মতো শক্তি পেলো না,,৷ সে যে আজ বাবা হিসেবে অক্ষম।,,,,
“কটা দিন তোমাদের সাথে হেসে খেলে থাকতে চেয়েছিলাম আব্বু,,,,আম্মিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে চেয়েছিলাম আর কটা দিন।,,,তোমার সাথে রৌদ্রময় বিকেলে বারান্দায় বসে খুশ মেজাজে খোসগল্প করতে চেয়েছিলাম।,,৷ ভাইয়ার সাথে আরো কয়েকটা দিন রিক্সায় ঘুরে ভেলপুরি খেতে চেয়েছিলাম।,,আর তো মাত্র কটা দিনের ব্যপার ছিলো,,,,পারতে না তোমরা সহ্য করে নিতে?,,,আমি এতোটাই অপ্রয়োজনীয়?,,,,যাওয়ার সময় হওয়ার আগেই তাড়িয়ে দিচ্ছো?”,,,,
জয়নাল আর পারলো না,,,,লোকে বলে পুরুষ মানুষ সহজে কাদে না৷ , কিন্তু তার পিতৃ হৃদয় আর নিজের কান্না আটকাতে পারলো না,,,,ব্যর্থ বাবা সে।বাকি বাবাদের মতো তার পুতুলের মতো মেয়েটার সুপার হিরো হতে পারলো না তিনি।,,, এই আক্ষেপ যে কোনোদিনও আর পূরন হওয়ার নয়।,,,,,
মোম শুনছে তার নিথর বাবার অন্তরের কান্না।খুব করে অনুভব করছে তার আব্বুর চোখ বেয়েও নোনা জল পড়ছে।,,,, তবুও নিজেকে শান্ত রেখে মোম বললো…
”আব্বু?”
জয়নাল নিজের কান্না আটকানোর চেষ্টা করে বললো..
“ব্ বল আম্মিজান?”
“কিছুদিন পর,,,, আমার শেষ স্তম্ভটা তোমাদের বাড়ির পানে জায়গা পাবে তো?, ”
জয়নাল আর পারলো না।ব্যথাতুর কন্ঠে বলে উঠলো…
“মোমমা??,,,”
মোমের শান্ত কন্ঠ..
“বলো না আব্বু…?”
জয়নাল উত্তর খুজে পেলো নাহ।,,,তবে এই দিকে এতক্ষণ কৌতুহল নিয়ে মোম আর জয়নালের সব কথা শুনলেও মোমের শেষ কথাটা কেন যেন পছন্দ হলো না নভের।,,কিছুটা রাগ নিয়ে মোমের হাত থেকে ফোনটা হালকা টান দিয়ে বললো…
“এই মেয়ে,,, এসব বলার জন্য ফোন দিয়েছি তোমায়?”
মোম ফোনটা শক্ত করে ধরে বললো..
“আর একটু প্লিজ,,,”
কন্ঠ কাতরতায় থামলো নভ।সম্মতি দিলো কথা বলতে,,,,মোম আবার ফোনে মনযোগ দিলো…
“আমায় এতোদিন মিথ্যা বললে কেন আব্বু?,,,যে আমার জন্য তেমন কিছুই খরচ হয়না,,,,?”
“আর বলিস না আম্মিজান,,,, আর নাহ…”
“টাকা গুলো শোধ করবে কিভাবে?”
“শোধ করবো মোমমা,,,,আমি সব শোধ করে দিবো,,,আমার নামের জমিটা……”
“না আব্বু,,,,একদম না,,,,,ঐ টায় হাত লাগাবে না।ওটা আমাদের শেষ সম্বল আব্বু।আমি না হয় থাকবো না,,,তাই বলে তুমি ভাইয়ার হকটা নষ্ট করো না প্লিজ।,,,”
“কিন্তু আম্মিজান তুই….”
“আর কত করবে আমার জন্য?,,,প্রয়োজন নেই আর।অনেক তো করলে,,, তুমি এই লোকটার টাকা শোধ দিয়ে আর কারোর থেকে আমার জন্য টাকা চাইবে না বলে রাখলাম।,,,আমার দিব্বি তোমায়…রাখছি আমি,,,,,ভালো থেকো,,,আম্মিকেও দেখো,,,চেষ্টা করবো আর কখনো না ফিরার তোমাদের নীড়ে।,,আমার আঁধার বাড়িটাই বেশ আমার জন্য… ”
রেখে দিলো মোম।ওদিকে আত্মা নিংড়ানো কান্না বেরিয়ে এলো এক ব্যর্থ বাবার বুক চিরে।যার অসহনীয় যন্ত্রণা শুধু তিনি নিজেই অনুভব করতে পারছেন।,, আর কেউ না,,,,,কেউই না৷, কারন তিনিই যে ঐ মোমের মতো মেয়েটার বাবা।,,,,,
,,,,,,,,,,কেটে গেলো আরো কয়েকটা দিন।,,,এই কটাদিনে নভের অজানা অনুভুতি গুলো আরো কিছুধাপ এগিয়ে গিয়েছে।নিজের কাছেই নিজেকে অচেনা লাগছে।,,,,আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করছে….
“এটা কি সেই অবয়ব রায়ানিশ?,,,, ”
আগের মতো এখন আর ক্লাব পাব ভালো লাগে না,,,,অফিস শেষে মনে হয় এখন আমার গন্তব্য রিসোর্টের ৯ তলার ঐ কর্নাররুমটা।যেখানে গেলে দেখবে কাঙ্ক্ষিত মুখটি,,,,ডাগর গড়ন কৌতুহলি দুটো চোখ দেখলে নাইট ক্লাবের উইস্কির বোতলের কথা আর মনে পরে না।ঐ মেয়েটার চিকন কন্ঠনালী নাড়িয়ে বলা কোমল কথা গুলি শুনলে মনে হয় যেন পাবের ডিস্কো সং গুলো খুবই নগন্য।,,, রুমের দরজা খুলেই ঐ মেয়েটার বিছানায় পড়ে থাকা মোলায়েম শাড়ী জরিত শরীরটা দেখলে মনে হয়,, প্রতিদিন রাতের স্মার্ট সুন্দরী রমণী গুলোর দেহ কোনো কাজেই আসে না।,,,,,,,,
এসবের কারব নভের অজানা।নিজের অবাধ্য অনুভুতি গুলোকে বাধা দিতে গেলেও তারা যেন আরো আস্কারা পেয়ে বসে।,,,তাই প্রথম কদিন বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও এখন আর করে নাহ।ভাবে,,,মেয়েটা চলে গেলেই তার মোহ কেটে যাবে।আর এমন কিছুই হবে নাহ।,,,,
()()()()()()()()
রাত প্রায় ১২ টা,,,,
ড্রীম লাইটের নীলছে আলোয় বিছানায় ভাসমান হয়ে আছে দুটো অর্ধনগ্ন শরীর।,,,নভ ব্যস্ত তার আজকের বেডপার্টনারকে খুশ করতে।সেই রমণীও আপ্রান চেষ্টা চালাচ্ছে নিজেকে নভের সামনে সর্বোচ্চ তুলে ধরতে,,,,,দুজনই মত্ত এক রঙ্গলীলায়,,,,,,,
হঠাৎ খাটে থাকা নভের ফোনটা শব্দ করে বেজে উঠলো,,,,,এতে খানিক বিরক্তই হলো দুজন,,,,পাত্তা দিলো নাহ,,,,মত্ত হলো নিজেদের কাজে।৷,,, আবার বাজলো ফোনটা,,,,বিরক্ত হয়ে উঠে এলো নভ,,,,,ফোন হাতে নিতেই ভাসমান হলো চেনা পরিচিত টেলিফোন নম্বরটি,,৷ হ্যা,,,,মোমের রুমের টেলিফোনটি।২ দিন আগেই দেওয়া হয়েছে,,, তবে এই দুদিনে মোম একবারও নভকে ফোন করেনি,,,এতে নভেরও কোনো হেলদোল নেই,,,, তবে এখন কেন ফোন করছে?,,,
রিসিভ করলো নভ,,,,,,,হালকা রাগান্বিত কন্ঠে বললো…
“কি হয়েছে?”
ভেসে এলো মোমের উতলা কন্ঠ। নভ বুঝতে পারছে মোম ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে…
“কোথায় আপনি?,,,,আ্ আপনার শার্ট এখানে কেন রেখে গেলেন?”
নভ যেন এবার একটু বেশিই বিরক্ত হলো…
“এই কথা বলার জন্য এখন ফোন করলে ইডিয়েট…”
“আ্ আপনার শার্টে এ্ এগুলো কি?,, কোথা থেকে আসলো এগুলো?,,, এটা নিয়ে যান,,,”
“পারবো না,,,,,বেশি প্রবলেম হলে নিজে ধুয়ে দাও,,,রাখো…”
ধমকে ফোন রেখে দিলো নভ,,,,মাথায় এলো,,,, সন্ধ্যায় একজনের লাশ কেটে ফিরেছিলো সে,,,,সাদা শার্টটা রক্তে ভরেছিলো।,,,সেটাই মোমের রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে ঝুড়িতে রেখে দেয় তখন।মোম প্রতিদিনের মতোই ঘুমিয়ে ছিলো,,তাই তখন হয়তো লক্ষ্য করেনি।সে ঘুম থেকে উঠতে উঠতে নভ চেঞ্জ করে নিয়েছিলো।,,,
,,নভ তাকালো পাশে থাকা মেয়েটার দিকে,,৷ আরো একবার তার শরীরে হাত বুলিয়ে ঠোটে ঠোট ছুয়ে উঠে বললো..
‘”ওকেয় সুইটহার্ট,,,, আই হ্যাভ টু গো।”
মেয়েটাকে কিছু বলার সুযোগ দিলো না।,,,পাতলা গোল গলা টি শার্টটা গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে পড়লো ঐ রুম থেকে৷,,, যেতে যেতে ভাবলো…
“আজ একটা কিছু করতেই হবে ঐ মেয়ের৷৷ সামান্য শার্টের জন্য পুরো মুডটাই নষ্ট করে দিলো শালা,,,,আজ তো ওকে দিয়েই জ্বালা মেটাবো,,,,”,,
মোমের রুমের দরজা খুলতেই চোখে পড়লো বেসিনে ঝুকে থাকা শাড়ী পড়া মেয়েটার উপর,,,,,বুঝলো নভ,,মোম বমি করছে।,,,,দ্রুত এগিয়ে গেলো তার দিকে,,,,,,মোম চোখে মুখে জল দিয়ে হাপাচ্ছে,,,শরীরটা খুব দুর্বল লাগছে,,,,,,
” কি হলো?,,,আমি তো কিছুই করিনি,,,তাহলে বমি হওয়ার কারন কে?,,,”
,,,মোম ক্লান্ত দৃষ্টিতে তাকালো নভের দিকে।,,, বাম হাতের তর্জনী আঙুলটা ফ্লোরের কোনে তাক করে বললো..
“এ্ এটা নিয়ে জান প্লিজ,,,,”
নভ তাকালো তার রক্ত মাখা শার্টটার দিকে,,,যা এই মুহুর্তে ফ্লোরে গরাগরি খাচ্ছে।,,,, এরপর আবার মোমের দিকে তাকাতেই দেখলো,,, মোম ঢুলুঢুলু পা নিয়ে বিছানায় গিয়ে উপুর হয়ে পড়লো,,,,মাথাটা একপাশে ফিরে রাখলো,,,,
নভ এগিয়ে গেলো মোমের দিকে। মোমের দিকে ঝুকে তার মাথায় আলতো করে নিজের হাতটা রাখলো,,,,..
” বেশি খারাপ লাগছে?? ”
নভের কোমল কন্ঠে মোম যেন একটু সাহস পেলো কথা বলার,,মাথাটা উপর নিচ ঝাকিয়ে হ্যা সূচক উত্তর দিলো।
নভের একটু খারাপ লাগলো,,,যদি জানতো রক্ত দেখে মোম এতোটা ঘাবরে যাবে তাহলে আগেই শার্টটা সরিয়ে ফেললো।,,,,
নভ ফোন লাগালো তেজকে..
“কিয়ারে দোস্ত?,,,আইজ্জা কি কোনো বেডি টোয়াই হাচনো?,,এই রাইত্তা আআরে কিল্লাই স্বরণ কইচ্ছোস?”
“ড.সোহান কে নিয়ে এক্ষুনি রিসোর্টে চলে আয়।”
“এমা?তোর আবার কিছে?”
“কিছু না,,,তোকে যা বলছি তাই কর।,,,কুইক।”
বলেই ফোন রেখে মোমের কাতর শরীরের দিকে দৃষ্টি দিলো নভ।
+++চলবে+++