#আঁধারের_তারাবাজি
#অভ্রায়ীনি_ঐশি
#পর্ব_৩
থাই গ্লাস ভেদ করে রোদের উজ্জ্বল আলো চোখে পড়তেই পিটপিট করে চোখ খোলে মোম।,,,নিজের অবস্থানের কথা চিন্তা করতেই কাল রাতের কথা মাথায় এলো।,,নিজেকে দেখে একটা সস্থির নিঃশ্বাস ফেললো।সে ঠিক আছে।,,,উঠে দাড়ালো মোম,,,ডান পায়ে ব্যান্ডেজ করা।ব্যথাও করছে।,,,,তবুও ওয়াশরুম গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।পড়নের জরজেট শাড়িটা চেঞ্জ করবে ঠিক করলো।কিন্তু এখানে তো তার কোনো ড্রেসও নেই।চোখে পড়লো গতকালের পড়ে থাকা হলুদ সুতির শাড়িটা।ভাবলো এটার থেকে ওটাই বেটার।,,,এমনিতেও এই ব্লাউজট একদম ঢিলেঢালা,,,,,,, ভাবনা মতোই চেঞ্জ করে নিলো।আবার খাটে এসে বসতেই অনুভব করলো পেট ক্ষিদায় চো চো করছে।কিন্তু এখানে খাবার কোথায় পাবে?,,,আবার উঠে দাড়ালো মোম,,,দরজার কাছে গিয়ে খোলার চেষ্টা করলো।তবে বৃথা।,,,অগত্যা আবার এসে বসলো খাটে।পানি ছাড়া খাওয়ার মতো কিছুই নেই।তাই একটু পানিই খেয়ে নিলো।,,,,
কিছুক্ষণ রুমটা পর্যবেক্ষণ করে নিলো মোম,,,বিশাল রুম।একপাশের দেয়াল সম্পুর্নই থাই গ্লাস।তার মধ্যে থাই দিয়ে একটা জানালা।আর এককোনায় ওয়াশরুম।তার পাশেই একটা বেসিন।,,,থাইয়ের সামনেই একটা বেতের রকিং চেয়ার,,,,এছাড়া বসার জন্য আর কিছুই নেই।,,,ওহ আছে,,,ড্রেসিন টেবিলের সামনে একটা ছোট টুল।,,,,ব্যাস,,আর কিছু টেবিল,বড় বড় সোপিস, একটা খাট দিয়েই রুমটা সাজানো।।,,,,,,,
মোম একটু বিরক্ত হলো,,কারন রুমে একটা সিঙ্গেল বারান্দাও নেই।,,,,মনে পড়ে গেলো নিজের প্রাণ প্রিয় রুমটার কথা।,,,,ইশশ তার রুমের বারান্দাটা ভাইয়া কতো সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছিলো।,,,ভাইয়া?,,,ভাইয়া কি খুজছে আমায়?,,,হ্যা,,,খুজবেই তো,,,ভাইয়া তো আমায় খুজবে।,,,,না না না,,,,আমায় এখান থেকে পালাতে হবে।যে করেই হোক।পালাতে হবে।,,,কিন্তু কি করে?,,,,
ভাবনার মাঝেই দরজা খোলার আওয়াজ হলো,,,পেছনে ফিরলো মোম।,,,,নভকে দেখেই হালকা ভয় হলো,,,,লোকটা তো একটুও ভালো না,,,,রোমিও টাইপ একটা,,,ছিহ।,,,
নভ তাকালো মোমের দিকে।,,,,তার দিকে তাকিয়েই পাশ থেকে টাওয়ালটা নিয়ে নিজের শরীরের ঘাম মুছতে লাগলো।পর্যবেক্ষণ করে শান্ত ভাবেই বললো…
”আবার এই শাড়িটা কেন পড়েছো?”
মোম আমতা আমতা করে বললো..
“,,আ্ আমার তো এখানে কিছু নেই।,,”
নভের স্বাভাবিক কন্ঠ…
“কিছু না থাকলে ন্যাকেড থাকো??””
মোম চোখ বড় বড় করে তাকালো নভের দিকে।কি বলে এই খচ্চরটা,,,,বিরবির করে বললো…
“তুই ন্যাকেড থাক,,,রোমিও একটা,,”
নভ যেন শুনেও শুনলো না।,,,ভ্রু কুচকে বললো…
“কি বললে তুমি?”
“ক্ কই কিছু না তো?”
নভ একপা একপা করে এগোতে লাগলো.
“বলো, কি বললে?”
মোম ভয় পাচ্ছে।অনেক ভেবে বললো..
“ব্ বলছিলাম যে,,আ্ আমার খুব খিদে পেয়েছে।,,”
থেমে গেলো নভ।মনে পড়লো কাল রাত থেকে কিছুই খায়নি মেয়েটা।,,,,,ওহ,,এতোটা কেয়ারলেস কবে হলো নভ?,,,,,সাথে সাথেই ফোন বের করে কাউকে একটা মেসেজ করে দিলো।তারপর আর এক মুহুর্তও দাড়ালো না,,,বাইরে থেকে দরজা লক করে চলে গেলো কোথাও একটা।,,,,মোম যেন হাফ ছেড়ে বাচলো।,,,,,একটু পর রিসোর্টের একজন স্টাফ এসে ট্রলি ট্রে ভরতি খাবার নিয়ে এলো।তবে সেগুলো দেখে খুব একটা খুশি হলো না মোম।কারন সবগুলো খাবারই অখাদ্য টাইপ।ভেজিটেবল স্টু,,চিকেন সুপ,আর স্যান্ডুয়েজ।,,ইচ্ছে না থাকার সর্তেও কিছুটা খেয়ে নিলো মোম।খিদে পেয়েছে যে,,,খাওয়া শেষে ভাবতে লাগলো এখান থেকে কি করে পালানো যায়,,,তবে কিছুই মাথায় এলো না।,,হঠাৎই চোখ পড়লো খাবারের ট্রের দিকে।মুহুর্তেই মুখে খুশির ঝলক ফুটে উঠলো তার।এবার শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা।,,,
()()()()
“কিয়ারে,,,কি হুনিয়ের এগাইন?,,কাইল্লা রাইত্তা এগিন কিচছত তুই?”
তেজের কথায় ফাইল থেকে মুখ তুলে তার দিকে তাকালো নভ।তারপর আবার ফাইলে তাকিয়ে বললো…
“তোর কাছেও খবর চলে গেছে?”
তেজ একগাল হাসলো।সামনে চেয়ারে বসতে বসতে বললো..
“তুই আআআর জিগরি ধুসথ,,সরি দোস্ত।তোর খবর বেগ্গাইন আআই জাইনতাম না তো কনে জাইনবো?”
নভ কিছুই বললো না।,,তেজ আবার জিজ্ঞেস করলো…
”এহন ক তো ব্যাটা,,,কাহিনি কেলা??”
নভ এবার ফাইলটা বন্ধ করলো।টেবিলের দিকে তাকিয়ে রাগি কন্ঠে বললো…
“আরে ঐ জয়নাল এহসানের মেয়ে ওটা।,,শালা আমার ১৬ লাখ টাকা নিয়ে বসে আছে।,,,একমাস আগে দেওয়ার কথা ছিলো।আমার টাকা না দিয়ে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছিলো রাসকেলটা।তাই ওর মেয়েকেই তুলে নিয়ে আসলাম।”
থামলো নভ।,,,তেজ শান্ত ভাবে বললো..
“মাত্র ১৬ লাখ টাকার জন্য? ”
“ইউ নো ওয়াট,,,এই অবয়ব রায়ানিশ এক টাকাও কাউকে মাফ দেয় না।,,”
তেজ এবার একটু সিরিয়াস হলো..
“এটা কি ঠিক করেছিস?”
নভ সরাসরি তাকালো তেজের দিকে।
“মানে?”
“মানে ঐ মেয়েকে তুলে এনে….আগে তো এমন করিস নি?যে মেয়ে গুলো তোর কাছে আসে তারা নিজের ইচ্ছেয় টাকার জন্য আসে।এভাবে জোর করে তুই মেয়েটাকে…”
নভ বিচ্ছিরি একটা হাসি দিলো..
“ইউ নো ওয়াট ডুড,,,ঐ মেয়ে ভীষন ওয়াইনি।,,,দেখেই ইচ্ছে হলো বেডে ফেলতে।ব্যস,,,নিয়ে এলাম।”
তেজ তাচ্ছিল্য হাসলো…
“ওহ,,,তারমানে অলরেডি তুই ঐ মেয়ের ভার্জিনিটি নষ্ট করে দিলি?”
নভ এবার অন্য মনষ্ক হলো..মাথা নাড়িয়ে বললো..
“উহুম,,,,আই কুডেন্ট।”
নভের কথায় তেজ ভ্রু কুচকালো..
“পারিস নি মানে?”
“জানি না,,কেন পারিনি,,,আরে তাই তো একে কাল রাতে পলকদের কাছে পাঠালাম।”
“তাহলে আবার ওকে বাচালি কেন,,?”
নভ তাকালো তেজের দিকে।কিছুক্ষণ চুপ রইলো।,, তেজও যেন তাকে সময় দিচ্ছে।,,, একটু পর নভ বলে উঠলো..
“দেখ,,,তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড।তাই তোকে ইজিলি সবই বলছি।,,,,,,,আমি কাল না নিজে পেরেছি কিছু করতে আর না পলকদের দিয়ে কিছু করাতে পেরেছি।,,,জানি না তখন আমার কি হয়েছিলো,,,মনে হলো ঠিক হচ্ছে না এটা,,,তাই তো ওকে,,,,,,,ত্ তুই জানিস,,আমি,,আমি ঐ মেয়েকে মারতেও চেয়েছি,,,তাও পারিনি,,ভেতর থেকে কেউ যেন আমায় বাধা দিচ্ছিলো,,,এমন কেন হচ্ছে বলতো?”..
তেজ মনোযোগ দিয়ে শুনলো নভের কথা।,,,তারপর হঠাৎই হুহা করে হেসে উঠলো…
” দোস্ত,,,আআআই বুইজ্জি,,,,এককানা এককানা,,,তুই গেছস দোস্ত,,,তুই গেছস,,,”
হাসতে লাগলো তেজ,,, নভ কিছুই বুঝলো না,,,
“কি সব বলছিস?”
“হ,,,আই ঠিক কতাই কইছি।,,,”
“আরে বলবি তো কি?”
তেজ কোনো রকম হাসি থামিয়ে বললো…
“আমি বললে খুব একটা ভালো লাগবে না,,,কিছুদিন দেখ,,,আশা করি নিজেই বুঝতে পারবি।,,,তা নাম কি মেয়েটার?”
নভ ভাবতে লাগলো…
“নাম?,,,নাম তো জানিনা,,,কি যেন ডেকেছিলো,,,কি যেন…”
তেজ অবাক হলো…
“একটা মেয়েকে কিডনাপ করলি,,আর তার নামও জানিস না?”
“ধুর,,,আমি কি এর ডিটেইলস নিয়েছি নাকি?,,,গতকাল জয়নাল সাহেবের বাড়িতেই তো হুট করে দেখলাম।,,আর তখনই নিয়ে এলাম।”..
” তাও শালা,,নামটাও জানবি না?”
“নাম দিয়ে কি হবে,,,, আমার টাকা পেলে ওর পথে ও,,,,”
“তা এখন কোথায় রেখেছিস?পালিয়ে গেলে?”
“আমার রিসোর্টেই আছে।পালাতে পারবে না,,,,রুম লক করা আছে। পথ নেই আর পালানোর।,,”
তেজ বললো…
“কদিন রাখবি?”
“ঠিক নেই,,,টাকা পেলেই ছেরে দেবো।”
তেজ আবার তার কিউটসি হাসি দিয়ে বললো…
“তাই?,,,তাহলে তো তুই তোর টাকা আর জিবনেও পাবি না দোস্ত।…”
বলেই হাসতে লাগলো,,,,আর নভ বিরক্তি নিয়ে নিঃশ্বাস ফেললো,,,সে জানে,,,তার এই ইউনিক বেস্টফ্রেন্ড এমনই,,,আজব টাইপ।,,,,,
()()()()
সন্ধ্যা প্রায় ৭ টা।,,,,,
লক খুলেই রুমে ঢুকতেই চোখে পরলো গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে থাকা মোমকে,,,নভ ভ্রু কুচকালো…
“এই মেয়ে এতো নিশ্চিন্তে ঘুমায় কি করে,,বুঝে পাইনা।কোথায় কিডনাপ হয়েছে,ঘুম উজার করে কাদবে,,তা না,,যখন তখন ঘুমিয়ে পড়ে।উপহ,,”
নভ এগিয়ে গিয়ে মোমকে ডাকতে গিয়ে আবার থামলো,,,,ভাবলো..
“না না,,,ডাকবো না,,,কখন আবার আম্মু আব্বু ডেকে দেয় কে জানে?,,এর ঘুমের বিশ্বাস নেই।”
সরে এলো নভ।,,,একটু তাকিয়ে রুম ত্যাগ করলো।,,,,অন্য রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আবার ফিরে এলো,,,এবার উঠেছে মোম।পানি খাচ্ছে,,,, নভ এসে দাড়ালো তার সামনে,,,,কিছুই বললো না।,,,
মোম পানি খেতে খেতে গ্লাসের ফাকে নভকে দেখে নিলো,,,খাওয়া শেষ করে গ্লাসটা রেখেই মুখে খই ফুটালো…
“আপনি এতো গাধা কেন?”
নভ ভ্রু কুচকালো,, এই মুহুর্তে এই কথা একদমই আশা করে নি,,,
“ওয়াট,,,?”
“কি ওয়াট?,,, কাউকে আটকে রাখতে পারেন,,আর দিনে দুবার খাবার পর্যন্ত দিতে পারেন না?”
এটুকু বলেই মোম মুখটা বাচ্চাদের মতো করে ঠোট উলটিয়ে বললো…
“জানেন সারাদিন এই অখাদ্য গুলো খেতে হয়েছে আমায়,,,প্রথমে ঠিক ছিলো,,,একটু আগে খেলাম,, কেমন যেন টক টক হয়ে গেলো,,,ইয়াকক কি বিচ্ছিরি।”
মোমের কথার ধরন বুঝতে পেরে নভ অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলো..
“কিহ,,,তুমি সকালের ব্রেকফাস্টটা এতোক্ষণ পর্যন্ত খেয়েছো?ওগুলো তো এতোক্ষণে নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা,,”
মোম তেজ দেখিয়ে বললো…
“আমি কি করবো,,এখানে খাওয়ার মতো আর কি আছে?,,আমি বেচে থাকা লাগবে না?খাওয়া লাগবে না?”..
নভ গিয়ে বসলো মোমের গা ঘেসে,,, মোম একটু সরে বসলো,,,,নভ বাকা হেসে বললো…
” মরতে তো তোকে হবেই মেয়ে,,,তোর বাপ টাকা না দিলে তুই তো শেষ।,,,”
এতোক্ষণের রাগি তেজি ফেইসটা মুহুর্তেই পরিনত হলো একরাশ অভিমানে,,,উদাস হয়ে বললো…
“আচ্ছা,,,কিসের টাকা নিয়েছিলো আব্বু?”
নভ স্বাভাবিক ভাবেই বললো…
“তোর বাপ প্রায় ৪ মাস আগে নিয়েছিলো টাকা। বলেছিলো তার মেয়ের জন্য লাগবে,,,ইট মিনস তোর জন্য লাগবে,,,তুই জানিস না এসব?”
মোম যেন অবাক,,,,তার চোখ ছলছল করছে,,,,অবাক হয়েই বললো…
“আব্বু,,,আমার জন্য টাকা ধার নিয়েছে?,,”
“ইয়াহ,,”
“ক্ কত টাকা?”
“16 লাখ,,,”
“১৬ লাখ?”
মোমের অবাক কন্ঠ শুনে নভ বুঝলো মোম এর কিছুই জানে না,,,তাই সে আর ঘাটলো না বিষয় টা।,,,,ফোন করে খাবার আনতে বললো…
একটু পর একটা সার্ভেন্ট এসে দিয়েও গেলো খাবার।,,,এবার ফ্রাইড রাইস আর চিকেন চপ দিয়েছে।,,,খাবার পেয়েই মোম আশপাশ না তাকিয়ে খেতে বসে গেলো।মুখের সামনে এক লোকমা তুলতেই মনে পড়লো পাশে বসে থাকা লোকটার কথা।,,,,তাকালো নভের দিকে,,,নভও যে তার দিকে তাকিয়ে ছিলো।,,কাপাকাপা কন্ঠে বললো…
“আ্ আপনি খেয়েছেন?”
মোমের কথায় নভ তার দিকে অপলক চেয়ে রইলো,,,, একটু পর বললো…
“হুম,,,তুমি খাও।”
মোম হাসলো,,,নির্মল এক হাসি,,,বাচ্চাদের মতো মাথা কাত করে বললো…
“ওকেয়,,,”
বলেই খেতে লাগলো,,,
মিনিট পাচেক পরেই মোম খাওয়া শেষ করে খাটে উঠে বসলো..
“আপনি যাবেন না?”
নভের সরাসরি উত্তর..
“নো,,,”
মোম ভাবলো…’এই হনুমানটা না গেলে আমি পালাবো কি করে??’,,,,তবে মুখে বললো..
“আ্ আমি এখন ঘুমাবো,,,আপনি যান এখান থেকে।”
নভ অবাক দৃষ্টিতে তাকালো মোমের দিকে..
“মাত্রই তো ঘুম থেকে উঠলে,,,,এখন আবার ঘুমাবে?”
“হ্ হ্যা,,,আ্ আমার খুব ঘুম পাচ্ছে,,, আপনি যান এখান থেকে…”
নভ এতোক্ষণে বুঝতে পেরে গেছে এই মেয়ে আস্ত একটা কুম্ভকর্ণ,,, সরি কুম্ভকর্ণি,,।তাই নভ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো…
“ওকেয়,,,তো ঘুমাও,, কে ডিসট্রাব করছে?”
মোম যেন বিষ্মিত হলো..
“আমি ঘুমাবো আর আপনি এখানে থাকবেন?,,,হাউ?”
“এখন যেভাবে আছি,,,”
মোম মাথা নাড়ালো,,,,
“না না৷ আ্ আপনি এখানে থাকলে আমি ঘুমাবো নাহ,,”
নভের যেন এবার রাগ উঠে গেলো…
“এক্ষুনি তো বললে ঘুম পাচ্ছে,,, আর এখন ঘুমাবে না?,, নো ওয়ে,,,এখন তো তোকে ঘুমাতেই হবে,,,,নে ঘুমা,,,কুইক.. ”
“নাহ,,আমি কিছুতেই ঘুমাবো না,,,আমার অসহ্য লাগছে আপনাকে,,,”
আর সহ্য হলো না নভের,,,দ্রুত পেছন থেকে পিস্তল টা বের করে মোমের কপাল বরাবর ঠেকলো,,,,এতেই ভয়ে তটস্থ মোম,,,,
“নে ঘুমা,,,নাহলে এক্ষুনি আজিবনের ঘুম পারিয়ে দেবো,,”
” এই এই,,,,এ্ এটা কেন?,, আমায় মারবেন না প্লিজ,,,,এটা সরান,,,”
“তোকে ঘুমাতে বলছি,,,নে শো?”
“হ্ হ্যা,,,ঘ্ ঘুমাচ্ছি আমি,,,,এ্ এটা সরান,৷ ”
বলতে বলতেই মোম পায়ের নিচ থেকে কম্বল টেনে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়লো,,,
“চোখ খোলা কেন?,,,বন্ধ কর,,,ঘুমা বলছি…”
“ক্ করছি তো,,,,আ্ আপনি এটা সরান,,,আ্ আমার খুব ভয় করছে,,,”
নভ সরালো পিস্তলটা,,,,সাথে সাথেই মোম কম্বল টেনে মাথা পর্যন্ত ঢেকে নিলো,,,,আর নভ দেখতে লাগলো মোমের কান্ড।,,,,,
সকালে ঘুম থেকে উঠতেই মোম আর নভকে দেখলো না।তবে খাটের কোনায় ৬-৭ টা প্যাকেট দেখলো সে।সন্দেহ নিয়ে খুলতেই দেখলো কিছু শাড়ী আর কয়েকটা রেডিমেড ব্লাউজ।,,,হাসলো মোম,,বুঝেও গেলো এগুলো তারই জন্য।,,,,,, গোসল সেরে ওখান থেকেই একটা শাড়ি পড়ে নিলো।তবে বিপত্তি বাধলো ব্লাউজে।সব গুলো ব্লাইজই সাইজে হালকা বড় আর পেছনের গলা অনেকটাই কাটা,,যার ফাকে পিঠ বেরিয়ে আছে।,অগত্যা মোম শাড়ির আচল দিয়ে পিঠটা ঢেকে নিলো,,আর কিছুক্ষণ পর পর ব্লাউজের ঢিলা হাতাটা টেনে টেনে উপরে উঠাতে লাগলো।,,
ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলো ১১ টা ৩৪,,,।কিহ৷ এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়েছি আমি?, উপহ,,,এখান থেকে তো পালাতে হবে আমায়,,,,ভাবতে ভাবতেই চোখ গেলো টেবিলে,,,,গতকালের মতোই খাবার রাখা।,,,,মনটা খারাপ হয়ে গেলো মোমের।কত বড় একটা সুযোগ হাত ছাড়া হয়ে গেলো৷ ,,,,,,,
কি আর করার,,,,খাওয়া শেষে খাটে বসে রইলো।,,,,এখানে করার মতো আর কিছুই নেই,,।। বোরিং একটা যায়গা,,,
১১ঃ৫৬,,,,,,,
দরজার দিক থেকে শব্দ হতেই মোম জড়োসড়ো হয়ে নিজেকে গুছিয়ে বসলো।,,,ভাবলো হয়তো নভ হবে।তবে তার ধারণাকে সম্পুর্ন ভুল প্রমাণ করে রুমে ঢুকলো একটা সার্ভেন্ট। এসেই বললো…
“সরি ম্যাম,,,আসতে লেইট হয়ে গেছে।১:৩০ এর দিকে আপনার লাঞ্চ পাঠিয়ে দেওয়া হবে।,, ”
মোম উঠে দাড়ালো,,,,এখনই সময়,,,এক পা এগোতে গেলেই সার্ভেন্টটি বলে উঠলো…
“ম্যাম,,আপনার বাইরে যাওয়া বারন আছে।,, অবয়ব স্যার বলেছে।প্লিজ ম্যাম।,,”
থেমে গেলো মোম,,,আবার ঐ লোকটাহ,,,উপহ,,,কি অসহ্য।।,,, বুঝে গেলো মোম,,,পালাতে হলে কায়দায় পালাতে হবে।এতো সহজে এরা যেতে দেবে না।৷৷ ভাবনার মাঝেই চলে গেলো সার্ভেন্টটি।,, আবার অপেক্ষা।৷৷
()()()()()()
“ওকেয় মি.তাসিব, আই উইল হ্যান্ডেল দিস।,,,ওহ ইয়া সিওর।, ওকে,, ওকেয়,,,”
ফোনে কথা বলতে বলতেই লিফটে উঠলো নভ।,,,,,৯ তলায় আসতেই লিফটের দরজা খুলে গেলো,,,,সাথে সাথে চোখের সামনে ভাসমান হলো মোমের শাড়ী ধরে দৌড়ে আসার দৃশ্য।,,,, নভকে দেখতেই থমকালো মোম।ভুত দেখার মতো চমকালো সে।,, এই মুহুর্তে নভকে একদমই আশা করেনি সে।,,,,
পেছন থেকে একজন সার্ভেন্ট দৌড়ে এসে থামলো তাদের সামনে।,,,,হাপাতে হাপাতে বললো…
“স্যার,,,,সরি স্যার,,,আমি খাবার দিতে গিয়েছিলাম,,, সেই সুযোগেই ম্যাম দরজা খোলা পেয়ে দৌড়ে পালিয়ে এলো,,,,আম রিয়েলি সরি,, স্যার।”
নভ অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করলো মোমের দিকে।তা দেখেই মোমের কলিজার পানি শুকিয়ে এলো,,,কি হিংস্র চাহনি নভের।,,,,
কিছু বলার সুযোগ দিলো না মোমকে,,৷ হাত ধরে টেনে নিতে লাগলো।,, মোমও ছাড়ার পাত্রী নয়,,,,হাত মুছড়াতে মুছড়াতে বললো…
‘”ছাড়ুন আমায়,,, আমায় যেতে দিন এখান থেকে,৷ আমি এখানে কিছুতেই থাকবো না,৷ বাড়ি যাবো আমি।,৷, হাত ছাড়ুন বলছি,,”
কে শোনে কার কথা,,,, নভ রুমে এনে ফ্লোরে ছুড়ে ফেললো মোমকে।,,,দরজাটা ভেতর থেকে আটকে দ্রুত এগিয়ে এলো মোমের দিকে।,,, মোম খাটের কোনায় নিচে বসে আছে।,,,,নভ গিয়েই মোমের স্নিগ্ধ কেশগুলো মুঠো বন্ধি করলো,, সাথে সাথেই মোম ব্যাথায় কুকড়িয়ে উঠলো…
“,,আহ,,,লাগছে আমার।,৷ চুল ছাড়ুন।,,”
নভের রাগ আকাশ তুঙ্গে,,,, দাতে দাত চেপে বললো…
“এতো শখ না পালানোর?হুম?,, খুব শখ/?, তুই আমার কবল থেকে পালাবি?এই অবয়ব রায়ানিশের কবল থেকে.”
বলতে বলতেই মোমের চুল টেনে মাথাটা একটু পেছনের দিকে এলিয়ে দিলো।,,, মোমের চোখের বাধ ভাঙলো,,,ব্যাথা সহ্য হচ্ছে না আর৷,, নিজের হাত দিয়ে নভের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে,,,তবে কিছুতেই শক্তি কুলাচ্ছে না।,,,
“প্লিজ আমার চুল ছাড়ুন,,,ভিষন লাগছে আমার,,”
নভের রাগ তরতর করে বেড়েই চলেছে…
“লাগছে না?,,,এটুকুতেই লাগছে?,,,লাগুক,,,আরো লাগুক।এবার বোঝ তুই পালানোর ফল..”
বলতে বলতেই আরো শক্ত করে চেপে ধরলো মোমের চুলের মুঠি।,,,,,,মোমের চিৎকার কে শোনে,,,,পাগলের মতো চেচাচ্ছে ও।কি অসহ যন্ত্রণা,,,,,,
মোম জ্ঞান হারালো,,,,মাথাটা এলিয়ে পড়লো খাটের উপর,,,,,নভ এতে আরো রেগে গেলো,,,,গদগদ করতে করতে দরি নিয়ে আসলো,,,,,মোমের হাত আর পা দুটো বাধতে বাধতে বললো…
“খুব পালানোর শখ না তোর?,,,আজ থেকে এভাবে বেধে রাখবো তোকে।দেখি তুই আবার কি করে পালাস,,,,”
,,,উঠে গিয়ে সেন্ট্রাল টেবিলে দু তিনটা লাথি মেরে নিজের রাগ কমানোর চেষ্টা করলো,, তবে কিছুতেই যেন কমছে না তা।,,,,,তাকালো মোমের দিকে,,,কি নিশ্চিন্তে মেয়েটা ঘুমাচ্ছে।,,, সহ্য হলো না নভের।এগিয়ে গিয়ে ডাকতে লাগলো মোমকে।,৷ তবে মোমের কোমো হেলদোল নেই,,,বিরক্ত হয়ে মোমের গালে দুটো থাপ্পড় ও মারলো নভ,,,,বেশ অনেকক্ষণ পর মোমের নড়চড় হলো,,,,,
চোখ বন্ধ অবস্থায় কুচকে আছে,,,,,ঠোট দুটো তিরতির করে কাপছে তার।,,,,অস্থির হয়ে উঠছে সে,,,হাত পায়ের বাধন ছাড়ানোর চেষ্টা করছে,৷ বিরবির করে কিছু একটা বলছে,,,,নভ ভ্রু কুচকে নিজের কানটা এগিয়ে নিলো মোমের দিকে,,,শুনতে লাগলো মোমের নীরব আর্তনাদ,,,,
“আআহ,,আ্ আমায় বাচতে দাও,,, আ্ আমায় এতো তারাতারি মেরো না,৷ আল্লাহ,,,আল্লাহ, মেরো না আমায়,,,,আর কিছুদিন বাচাও আমায় আল্লাহ,,,আআহ,,,,আ্ আর পারছি না আল্লাহ,,,,আআআআহ…”
নভের কপালে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠলো,,, এমন করছে কেন মেয়েটা?,, কি হয়েছে ওর?,,,,
ঘাড় ধরে সোজা করলো মোমকে,,,,,
“এই মেয়ে,,,কি হয়েছে?,,,এমন করছো কেন?এনি প্রবলেম?”
মোম আধো আধো চোখ খুললো,,,বারবার বাধা হাতটা ছাড়ার চেষ্টা করছে,,,টিকে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে,,,,তবে শেষ রক্ষা আর হলো না,,, আবারও চোখ বুজে ঢলে পড়লো নভের বুকের উপর,,,,
নভ বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে,,,,,,, নিঃশ্বাসের গতি বেরে যাচ্ছে তার।,,,,মোম তার বুকে ঢলে পড়তেই পিঠে হাত দিয়ে জড়িয়ে নিলো মোমকে সে।,,,,,,
বেশ কিছুক্ষণ কাটলো,,,,,মোম শান্ত হয়ে পড়ে আছে নভের বুকে।নভও চুপ হয়ে গেছে,,,কেনো যেনো তার বুকটা ধকধক করছে,,,,কি করবে ভাবছে,,,রাগটা এতোক্ষণে কমে গেছে,,,ভাবতে ভাবতেই আনমনে পিঠ থেকে হাতটা উঠিয়ে মোমের গলা বেয়ে ডান পাশে কানের নিচে আসতেই ভ্রু কুচকে এলো নভের,,,,,
হাতে কি লাগলো এটা,,,,তরল,,,আঠালো,,,, কি এটা?”
ঘাড় নামিয়ে নিজের হাতের দিকে তাকাতেই বিস্ময়ে চোখ বড়বড় হয়ে গেলো নভের,,,
“রক্ত?,,,,রক্ত কোথা থেকে এলো?,,,”
বলতে বলতেই মোমের ঘাড়ের দিতে তাকালো,,,,,,কান থেকে রক্ত গড়িয়ে ঘাড় গলা সব ভরে যাচ্ছে মোমের,,,,,,নভ অবাক হয়ে…
“এই মেয়ে,,,এই…”
বলতে বলতেই মোমের মুখটা নিজের বুক থেকে ওঠাতেই কলিজা কেপে উঠলো তার।,,,এটা কি করে হলো….
মোমের নাক,কান,মুখ থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে রক্ত পরছেই,,,,এমনকি দু চোখের কার্নিশ বেয়েও ঝরছে ঘন লাল রঙের রক্ত।,,,
থমকে গেলো নভ,,,মুহুর্তেই জ্ঞান শূন্য হলো,,,নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগছে,,,,এটাহ,,,এটা ক্ কি করে হলো?..,,
“এই,,,,এই শুনছো?ওঠো,,,,এই মেয়ে চোখ খোলো,,,এই ওঠো না,,,,এই মেয়ে,,,,,এই,,,,ম্ মোম??,,ওঠো,,,চোখ খোলো প্লিজ…”
++++চলবে+++++