আঁধারের_তারাবাজি #অভ্রায়ীনি_ঐশি #পর্ব_২

0
388

#আঁধারের_তারাবাজি
#অভ্রায়ীনি_ঐশি
#পর্ব_২

রাত ১১ টা ৩৪,,,,,

রিসোর্টের ৯ তলার একটি রুমের আলিসান বেডে শুয়ে আছে নভ।একটু আগেই ক্লান্ত হয়ে ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড শেষ করলো সে।,,,পাশে এখনো ঢাকার আধুনিকতার ছোয়ায় বেড়ে উঠা এক সুন্দরী রমণী।,,,,, তবে তার দিকে আপাতত নভের খেয়াল নেই।,,,,তার মন কেন জানি ছটফট করছে। অনেক খুজেও বুঝলো না সে কারনটা।আগে তো কখনোই এমন হয় নি।নিজেকে সারা রাত মত্ত রাখতো পাশে থাকা রমণীতে,,,কিন্তু আজ তো তাও পারছে না।কিন্তু কেন?,,,ঐ মেয়েটার জন্য?,,, তাতো হওয়ার কথা নয়,,,,,,অনেক চেষ্টা করে সব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললো নভ।,,,ধুর,,কে ঐ মেয়ে হ্যা,,,,আমার কিহ,,,এতক্ষণে হয়তো ওকে ছিবলে খুবলে খাচ্ছে ওরা,,,,যাইহোক,,,মজা নিক ওরা,,, এতে আমার কিচ্ছু যায় আসে নাহ।,,,,

এসব ভেবেই চোখ বন্ধ করলো নভ।,,,,তবে তা ন্যানো সেকেন্ডও টিকলো নাহ।চোখের পাতায় ভেসে উঠলো মোমের তখনকার কান্নারত চেহারাটা,,,,আর সাথে কাতর কণ্ঠধ্বনি…..

“প্লিজ,,,,এই কয়েকটা দিন আমাকে একটু শান্তিতে বাচতে দিন।”

তড়িৎ গতিতে চোখ খুললো নভ।হঠাৎই বলে উঠলো…

“আমার ওকে বাচাতে হবে..”

অস্থির হয়ে উঠলো নভ।উঠে দাড়িয়ে যেতে নিলেই পাশে থাকা মেয়েটি তার হাত চেপে ধরলো। কন্ঠে মাদকতা এনে বললো..

“Where are you going sweetheart? ”

নভ তাকালো তার দিকে।তারপর আবার সামনে ফিরে টেবিলে রাখা নিজের জ্যাকেটটার পকেট থেকে একটা মোটা টাকার বান্ডেল নিয়ে মেয়েটির দিকে ছুড়ে মারলো,,,,

“তোমার আজকের পেইমেন্ট।Now you can go,,”

আর দাড়ালো না সেখানে।উদাম শরীর নিয়েই দ্রুত পা চালিয়ে বেরিয়ে গেলো ঐ রুম থেকে।,,,,

প্রায় বিশ কদম পেড়িয়ে এসে দাড়ালো আরেকটা রুমের সামনে।কড়া নাড়লো,,, তবে কোনো রেসপন্স পাওয়া গেলো না।,,,,আর সহ্য হচ্ছে না নভের।বুকটা কেমন লাফাচ্ছে।মনে হচ্ছে মোমকে এক্ষুনি না দেখলে হৃদয়টা শরীরের পাজর ছিড়ে বেরিয়ে আসবে।,,,,

পকেটে থাকা মাস্টার কি কার্ডটা দরজার লকে লাগাতেই খুলে গেলো দরজা।,,,,দ্রুত ঢুকলো নভ।একটু যেতেই পায়ের সাথে লাগলো কিছু একটা।ঝনঝন করে শব্দ করে উঠলো,,,,নভ তাকালো সেদিকে।,,,,একটা স্টিলের শো পিস।,,,,আগমনের দিক লক্ষ্য করে তাকাতেই দেখলো মোম বিধ্বস্ত অবস্থায় রুমের এককোনে দাড়িয়ে,,,, হাতে থাকা কাচের ফ্লাওয়ার ভাসটা মাত্রই ছুড়ে মারলো সামনের দিকে।টুকরো টুকরো হয়ে গেলো সেটি।আরেকটি তুলে নিলো হাতে।,,,,মোমের দৃষ্টি অনুসরণ করে রুমের আরেক দিকে তাকাতেই দেখলো,,,তখনকার ৬ টা ছেলে দাড়িয়ে।,,, বারবার কৌশলে মোমকে ধরার চেষ্টা করছে।তবে মোম তাদের দিকেই নানা জিনিস পত্র ছুড়ে মারছে।,,,,ইতে মধ্যে একটা ছেলের নাকও ফেটে গেছে মোমের আক্রমণে।,,,,

এতো কিছুর মাঝেও নভ মনে মনে মোমের বাহবা দিলো,,,,

“” বাহ,,,,এতক্ষণ পর্যন্ত নিজেকে সেইফ রেখেছে মেয়েটি,,,,সাহস আছে মাইরি,,,”

এদিকে মোমের মাথা চক্কর দিচ্ছে।তবুও আপ্রাণ চেষ্টা করছে,,, নিজেকে ঠিক রাখার।এখন জ্ঞান হারালে যে নিজের সর্বস্ব হারিয়ে যাবে।,,,,,,নভের দিকে চোখ যেতেই যেন দেহে প্রাণ ফিরে এলো তার।,,,কে,কেন এসেছে,, এসব ভাবার সময় নেই।দৌড় লাগালো নভের দিকে।কাছাকাছি যেতেই পায়ে কিছু একটা ঠেকলো,,,একটু থামলো,,,তবে বেশি নাহ,,,আবার দৌড়ে গিয়ে ঝাপটে ধরলো নভের গলা।,,

“আমায় বাচান প্লিজ।এখানে থাকলে আমি ম্ মরে যাবো,,,আ্ আ্ আমি মরতে চাই না,,,প্লিজ আমায় বাচান।ও্ ওরা আমায় মেরে ফেলবে।।”

বলতে বলতেই অঝোরে কেদে উঠলো মোম।,,,,নভের বুকটা ধক করে উঠলো।এমন কেন হচ্ছে তার??,,,,কিছুই বুঝতে পারছে নাহ।,,,,আনমনেই নিজের হাত দিয়ে মোমকে জড়িয়ে ধরতে যাবে তখনই ঐ ছেলে গুলোর মধ্যে একটা ছেলে বলে উঠলো….

“ইয়ার,,,তুই এখন এখানে?”

থেমে গেলো নভ।মাথা চাড়া উঠলো,,৷ ”””নো,নো,নো নভ।তুই এটা কি করছিস,,,,একদম নিজেকে উইক করবি নাহ।,,,,

নিজেকে সামলে শক্ত হাতে মোমকে ছাড়ালো নিজের থেকে।টেনে ছুড়ে ফেললো ফ্লোরে।,,,রাগি গলায় বললো…

“এই মেয়ে,,,তোর সাহস কি করে হয় আমায় টাচ করার,,,,ইউ ব্লাডি, বাস্টার্ড,,”

নভের কথায় তার দিকে করুন চোখে তাকালো মোম।,,,ঐ ছেলেগুলোর একজন একটু এগোতে এগোতে বললো…

“এবার বাগে পাইছি শালিরে।যা করতেছিলো এতক্ষণ। এখন দেখবি মজা।”

ছেলেটির কথা শুনে অন্তরাত্মা কেপে উঠলো মোমের।উঠার চেষ্টা করলো,,তবে পায়ে খুব যন্ত্রণা হচ্ছে।তখন ফ্লোরে থাকা কাচে লেগে কেটে গিয়েছে।,,,,,,,,ছেলেটিকে এগোতে দেখে নিজে ফ্লোর গড়িয়ে গিয়ে নভের একপা জড়িয়ে ধরলো।,,,

“প্লিজ আমায় বাচান।এ্ এরা একটুও ভালো না।,,,আমার সাথে এমনটা করবেন না দয়া করে।,,,,আ্ আমা,,কে বাচান প্লিজ।,,আআআমি ব্ বাচতে চাই,, ”

মোমের কন্ঠ খাদে নেমে গেলো।বন্ধ হয়ে গেলো কথা।,,,হাত দুটোও আলগা হয়ে এলো নভের পা থেকে।নিজের শরীরের সমস্ত ভর ছেড়ে দিলো নভের পায়ে।হেলান দিয়ে পড়ে রইলে সেখানটায়।,,,,

নভ তাকালো মোমের দিকে।সাথে বাকিরাও।,,,,

“অজ্ঞান হয়ে গেছে।এবার আর কিচ্ছু করতে পারবে না।নে চল…”

বলেই একটি ছেলে এগোতে লাগলে নভ হাত সামনে এনে বাধা দেয়।,,,

“ওয়েট,,,,থাক এখন।আজ ছেড়ে দে একে।”

একটা ছেলে অবাক হয়ে বললো..

”নভ তুই এ কথা বলছিস?”

“হ্যা বলছি।,,,এখন ঘুমিয়ে পড় তোরা,,,আজ আর কিছুই হবে নাহ।”

নভ ঝুকলো মোমের দিকে।হাত দিয়ে মোমের বাম হাতের কব্জি ধরে টানতেই মোমের নিথর শরীর বেসামাল হয়ে ঢুলতে লাগলো,,,, একটা নিঃশ্বাস ফেলে নভ পাজা কোলে তুলে নিলো মোমকে।বেরিয়ে এলো রুমটা থেকে।পেছন থেকে ঐ ছেলে গুলো অবাক নয়নে দেখতে লাগলো নভের কার্যকলাপ।,,,

()()()()()()

“কেন কেন কেন আমি একে বাচালাম,,,,কেন ড্যামিড।,,,কেন আমার সাথে এমনটা হচ্ছে… হুয়াই…”

উত্তেজিত হয়ে কথা গুলো বলতে বলতে নিজের চুল খামছে ধরলো নভ।নিজেকে আজ পাগল পাগল লাগছে তার।,,,এই মেয়েটাকে নিয়ে এসেছে নিজের আয়েশের জন্য। কিন্তু এখন কিছুই করতে পারছে না।ভেতর থেকে কেউ যেন বারবার বাধা দিচ্ছে।,,,,ঘন ঘন কয়েকটা নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে সামলালো নভ।নিজে নিজেই বলে উঠলো….

“নাহ,,,,একে আর বাচিয়ে রাখা যাবে নাহ।,,,এ বেচে থাকলে আমার এমনটা হবে।,,এখনই শেষ করবো একে।হুম,,,এক্ষুনি। ”

বলেই সামনে থাকা টেবিলের উপর থেকে পিস্তলটা হাতে নিলো।ট্রিগার অন করে পেছন ফিরে তাকালো খাটে পড়ে থাকা মোমের দিকে।,,,,,,এক মুহুর্তও দেরি করলো নাহ।দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে পিস্তল ঠেকলো মোমোর বুকের বা পাশটায়।,,,ট্রিগারে আঙুল দিয়ে চোখ তুলে তাকালো মোমের মুখের দিকে।,,,,

মোম একটু নড়েচড়ে উঠলো। ঘুমের মধ্যেই নিচের ঠোট দিয়ে উপরের ঠোট একটু চেটে নিয়ে আবার হালকা নাড়াতে নাড়াতে থেমে গেলো।ঠিক যেমন একটি দুধের বাচ্চা করে ঘুমের মাঝে।,,,,,ব্যাস,,,হালকা চেপে রাখা আঙুলটা আলগা হয়ে এলো ট্রিগার থেকে।,,পিস্তলটাও লক্ষ্য ভেদ করলো।,,,,নভ উদ্ভ্রান্তের ন্যয় তাকিয়ে রইলো মোমের রক্ত জবার মতো লালছে, পাতলা ঠোট দুটির দিকে।,,,,মুহুর্তেই জমে গেলো সে।,,,,কি হচ্ছে এসব?,,কিচ্ছু মাথায় আসছে না।,,,

পিস্তলটা সরিয়ে ফেললো মোমের বুক থেকে।,,,ঘুরে বসলো নভ।দু হাটুতে দু হাত ভর করে নিজের মাথার চুল খামছে ধরলো আবার।,,,মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে তার।,,এই মেয়েটাকে সে কেন মারতে পারছে না,,,,এমনটা তো আগে কখনোই হয়নি।কাউকে মারার আগে দু বার পর্যন্ত ভাবে নি সে তাহলে আজ?আজ এসব কি হচ্ছে.. ”

নিস্তব্ধতা জুড়ে হঠাৎ টপ টপ করে শব্দ হওয়ায় মাথা তুলে তাকালো নভ।,,,শব্দের উৎস খুজতে গিয়ে দেখলো মোমের পা জোড়া খাট থেকে বাইরে।আর সেখানেই একটা পা বেয়ে বেয়ে ফোটায় ফোটায় রক্ত গড়িয়ে পড়ছে ফ্লোরে।,,,,

পিস্তলটা রাখলো নভ।এগিয়ে গেলো মোমের পায়ের কাছে।,,,

“ইশশশ,,,পা কাটলো কিভাবে এই মেয়ে,?”

হাত লাগাতেই দেখলো কাচ ফুটে আছে পায়ের তালুতে।,,,,ভ্রু কুচকে নিলো নভ।ধীর হাতে কাচটা ছাড়ালো মোমের পা থেকে।তার এক্সপ্রেশন দেখে মনে হচ্ছে পাটা তারই কেটেছে।,,,উঠে গিয়ে ফার্স্ট এইড বক্স এনে রক্ত পরিষ্কার করতে লাগলো নভ।,,,চোখ পড়লো মোমের পায়ের পাতার উপরিভাগে অঙ্কিত মেহেদীর দিকে।,,,,শুভ্র পা জোড়ায় কালো খয়েরি মেহেদীর রংটা একদম ফুটে রয়েছে।,,,ব্যান্ডেজ করতে করতে নভ নিজেকেই প্রশ্ন করলো…

“এই মেয়ের বিয়েটা ভাঙলো কেন?,,,, দেখতে তো ভালো,,,,কোন ছেলে একে বিয়ের দিনই রিজেক্ট করে,,,?তাও হুট করেই?”

উত্তর মিললো না নভের।নিজেকে প্রশ্ন করলে কি উত্তর পাওয়া যায়?,,,,,

ব্যান্ডেজ শেষে নভ গিয়ে বসলে মোমের পাশে।,,,,কি করবে ভাবছে তবে কিছুই মাথায় আসছে নাহ।,,,এর সাথে কিছু করতেও পারছে না,,,এখন?কি করবে?,,,,,

হঠাৎ নভের চোখ পড়ে মোমের কাধের দিকটায়।ঢিলা ব্লাউজটা একটু সরে গেছে ঘার থেকে।,,,,নভের মাথায় এক নতুন পরিকল্পনা হানা দিতেই বাকা হাসলো সে।,,,,

দ্রুত পায়ের কাছ থেকে সাদা রঙের পাতলা কম্বলটা টেনে দিলো মোমের বুক পর্যন্ত। এরপর হাত বাড়িয়ে মোমের শাড়ির আচলটা একটু সড়ালো।এরপর ব্লাউজটাও হাতার কাছ থেকে টেনে একটু করে দুপাশে নিচে নামিয়ে দিলো।ঢিলা থাকায় তা সহজেই হয়ে গেলো।এখন হঠাৎ মোমকে দেখে মনে হবে যেন কম্বলটা ছাড়া আর একটা সুতোও নেই ওর শরীরে।,,,,হাত দিয়ে মোমের চুল আর ঠোটের লিপস্টিকটা একটু এলোমেলো করে দিলো নভ।,,,,ব্যাস,,,কাজ প্রায় শেষ।ফোন হাতে নিয়ে মোমের এই অবস্থায় কয়েকটা ছবি তুলে নিলে।,,,ব্যপারটা বিশ্বাস যোগ্য করার জন্য নিজের বাম হাতটা নিয়ে মোমের গলায় রেখেও কয়েকটা ছবি তুললো।,,,এরপর উঠে দাড়িয়ে ছবিগুলো পাঠিয়ে দিলো কেউ একজনকে।আর মুখে ফুটে উঠলো শয়তানি হাসি।,,,,,

()()()()()

এদিকে নিজের রুমে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে জয়নাল এহসান।সামনেই আতিয়া বসে বসে কাদছে।আর পাশেই দাড়িয়ে মোয়ান,,,স্তব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হাতে থাকা ফোনের দিকে।,,,,

চোখের সামনে নিজের ছোট বোনের এমন একটা চিত্র দেখবে,,তা সে কল্পনাতেও ভাবে নি।,,,,আর সাথে লিখা একটা এস এম এস,,,,

“দ্রুত টাকা ফেরত না দিলে মেয়ের প্রাণটাও যাবে,,,, সবে তো সম্মান গেলো।,,”

,,,মোয়ান মাথা তুলে তাকালো বাবার দিকে।লোকটা পাথর হয়ে গেছে,,,এদিকে তার মা আহাজারি করে কাদছে..

” আমার আম্মিজানটারে মাইরা ফেললো রে,,,,ঐ শয়তান পোলায় বাচতে দিলো না আমার মাইয়াডারে।,,”

সেকি কান্না,,,মা যে মাই হয়,,,তবে তাদের এই পরিস্থিতিতে সাথে নেই বাড়ির অন্যরা।সবাই যার যার ঘরে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে।

মোয়ানের গলা ধরে এলো,,,,ধীর পায়ে এগিয়ে বাবার কাছে দাড়ালো,,,,জয়নাল তা অনুভব করে বললো…

“সবটা শেষ হয়ে গেলো রে আব্বা।,,,আমার আম্মিজান আর নেই,,,,চলে গেছে সে,,,আমার আম্মিজান,,,”

গলা ধরে এলো জয়নালের,,,,,মোয়ান বললো…

”এটা হতে পারে নাহ,,,আব্বু এটা হতে পারে নাহ,,, বোনি আমায় ছেড়ে কোথাও যাবে না।,,,,আব্বু,,,ঐ লোকটাকে ফোন দাও,,,আমার বোনি কোথায় বলতে বলো৷৷ ফোন করো আব্বু,,,,”

জয়নালের স্তম্ভিত ফিরলো,,,, হ্যা,,,ফোন করা উচিৎ।তার মেয়ের খবর নিতে হবে তো৷৷

ফোন লাগালো নভের নম্বরে,,,

এদিকে জয়নালের ফোন পেয়ে নভের হাসি আরেকটু চওড়া হলো।রিসিভ করলো সে।সাথে সাথেই ভেসে এলো জয়নালের কান্নারত ভাঙা গলা..

“হ্য্ হ্যালো,,,”..

” জয়নাল সাহেব,,,,কেমন লাগলো৷৷ মেয়ের ছবিটা?”

কথাটার উত্তর দিলো না জয়নাল,,,,তবে নিজের মতোই বলে উঠলো…

“আ্ আমার মেয়ে ব্ ব বেচে আছে?”

ভ্রু কুচকালো নভ।এটা কি বলছে?,,কোথায় মেয়ের সম্মান হানির কারনে তাকে ছেড়ে দিতে বলবে,, তা না,, কি জিজ্ঞেস করছে মেয়ে বেচে আছে কিনা৷,,,,,,৷ নভ তাকালো মোমের ঘুমন্ত মুখের দিকে।,,নাহ,,নিঃশ্বাস পড়ছে,,,,সাথে সাথে বক্ষ গহ্বরও ওঠা নামা করছে।,,,বেচেই আছে।,,,,,,, নভ আবার মনোযোগ দিলো ফোনে…

“এতে মরার কি আছে জয়নাল সাহেব?আপনার মেয়ে এখনো দিব্বি শ্বাস নিচ্ছে।,,,”

সাথে সাথেই ফোনের ওপাশ থেকে জয়নালের উৎকন্ঠ ভেসে এলো…

”কিহ,,,,,,ম্ মোম মা ঠিক আছে?,,,এ্ এখনো বেচে আছে আমার আম্মিজান,,,?”

নভ বিরক্ত হলো..

“আরে হ্যা,,,বেচে আছে আপনার মেয়ে,,,, এখন দ্রুত টাকা টা দিয়ে নিজের এই মেয়েকে নিয়ে যান,,,”

জয়নালের কন্ঠ খাদে নেমে গেলো,,,,

“ও্ ওকে আ্ আমি আর এই বাড়িতে তুলতে পারবো নাহ,,,”

নভ অবাক হলো,,,মেয়েকে নিতে চাইছে না?,,,নভ প্রশ্ন করলো..

“কেন জয়নাল সাহেব?,,এক দিনেই মেয়ের মায়া শেষ?”

“মায়া কখনো শেষ হয় না স্যার,,,সেটি দিন কে দিন বাড়তে থাকে।,,,, আমার বাড়ির সবাই সাফ বলে দিয়েছে,,মোম মাকে বাড়িতে আনলে আমাদের এই সমাজ ছাড়া করবে সবাই মিলে।,,,”.

নভ বুঝলো ব্যপারটা,,, তবে এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে কি বলা যায় তা ভেবে পেলো না সে তবুও বললো…

” এসব আমার দেখার বিষয় না।আমার টাকা টা চাই ব্যাস,,,”

বলেই কল কেটে দিলো নভ।,,,ফিরে তাকালো আবার মোমের দিকে।বাচ্চাদের মতো ঘুমাচ্ছে মেয়েটা,,,,আনমনেই হেসে দিলো। হাসির কারন তার নিজেরই অজানা।,,,,,,,ওয়েট,,এই মেয়ে না জ্ঞান হারিয়েছিলো?তাহলে এখন নড়ছে কিভাবে?,,,,

ভেবেই নভ এগিয়ে গেলো মোমের দিকে।ঝুকে ডাকলো মোমকে…

“এই যে,,,,এই মেয়ে শুনছো?,,,”

নড়চড় হলো না মোমের।,,,এবার নভ নিজের হাত দিয়ে আলতো চাপড় দিলো মোমের গালে,,,দু তিন বার করতেই নড়েচড়ে উঠলো মোম।ঘুম ঘুম কন্ঠে বিরক্ত হয়ে বললো….

“উমমহ,,,এমন করছো কেন,,,?”

নভ যেন তব্দা খেলো,,,

“যাহ বাবা,,,এই মেয়ে ঘুমাচ্ছে?জ্ঞান হারায়নি?ওয়াট দা….,,,,আর ওরকম সিরিয়াস মোমেন্টেও কারো ঘুম পায়’

নভ এবার তেতে গেলো।মোমকে ঠেলতে ঠেলতে ডাকতে লাগলো….

” এই মেয়ে,,,,উঠো,,,,উঠো বলছি।,,,ঐ…”

মোম এবার বিরক্তির চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়,,,, ঘুমের মাঝেই বিরক্ত নিয়ে বললো…

“উহ আম্মি,,,,ঘুমাচ্ছি তো,,,বিরক্ত করছো কেন,,,”

আবার ঘুমে তলিয়ে গেলো মোম।এদিকে নভ ক্যাবলার মতো হা করে তাকিয়ে রইলো..

“আমাকে দেখে আম্মি মনে হয়?এই অবয়ব রায়ানিশ নাকি আম্মি,,,,লাইক সিরিয়াসলি?”

++++চলবে++++

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here