প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি #সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী #পর্ব_২৮

0
298

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_২৮
,
ডয়িং রুমের সোফায় গম্ভীর মুখে বসে আছে সমুদ্র, যেনো কোনোকিছু ভাবছে সে। শাহানারা রোদ্রের চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে রাতে ডাক্তার এসে ঔষধ দিয়ে গেছে এই জন্যই এতো বেলা অবধি ঘুমাচ্ছে। কলিং বেল বাজতেই কাজের লোকটা গিয়ে দরজা খুলে দিলো, রোদ্র আস্তেধীরে ভিতরে প্রবেশ করলো। চোখদুটো লাল হয়ে ফুলে আছে, মাথার চুলগুলোও বেশ উষ্কখুষ্ক, গায়ের টিশার্ট টাও নোংরা হয়ে আছে ঢুলুঢুলু পায়ে সোজা হেঁটে সিঁড়ির দিকে চলে গেলো। সমুদ্র সোফায় বসে সবটাই দেখলো তবে কিছু বলল নাহ, রোদ্র যখন সিঁড়ি তে পা রাখবে তখনি পিছন থেকে সমুদ্র ওকে ডেকে বলে উঠল।

সারারাত কোথায় ছিলি? আর এই অবস্থা কেনো তোর কি হয়েছে?

সমুদ্রের ডাকে থেমে গেলো রোদ্র পিছন ফিরে সমুদ্রের দিকে তাকালো, সমুদ্র ভ্রু কুঁচকে রোদ্রকে দেখে বোঝার চেষ্টা করছে। বেশকিছু সময় রোদ্র সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থেকে আস্তে আস্তে গিয়ে আচমকা সমুদ্র কে জড়িয়ে ধরলো। সমুদ্র প্রথমে চমকে গেলেও পরক্ষণেই নিজেও দুহাত রোদ্রের পিঠে রেখে পুনরায় জিগাস করল, কি হয়েছে তোর আমাকে বল।

রোদ্র সমুদ্রের কথাশুনে এবার কান্না করে দিলো, সমুদ্রের কাঁধে নিজের থুতনি রেখে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, আমি আমার নিজের হাতে আঁকা অনেক প্রিয় একটা ছবি হারিয়ে ফেলেছি রে ভাইয়া। আমার অনেক শখের ছবি খুব কাছের খুব ভালোবেসে ছবিটা এঁকেছিলাম, সেটা খুঁজতেই তো হিজলতলী গিয়েছিলাম কিন্তু ওখানে গিয়ে বুঝলাম আমি আর কখনোই সেই ছবিটা আর পাবো নাহ। ওটা একেবারের জন্য হারিয়ে গেছে, এই জন্য অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে আসলে ছবিটাকে অনেক আগলে আগলে রেখেছিলাম কিন্তু তবুও কীভাবে যেনো হারিয়ে গেলো আসলে অনেক শখ করে এঁকেছিলাম তো। তবে ওটা যে পেয়েছে আমি জানি সে ছবিটাকে অনেক ভালো রাখবে যত্নে রাখবে তাই এটা ভেবেই শান্তি লাগছে। কিন্তু আরো বেশি কষ্ট লাগছে এটা ভেবে যে আমি আর কখনোই সেই ছবিটাকে আঁকতে পারবো নাহ। কারণ আমিতো আঁকতেই ভুলে গেছি, ভাইয়ারে বিশ্বাস কর আমি অনেক চেষ্টা করলাম কিন্তু কিছুতেই সেই ছবিটার মতো আঁকতে পারলাম নাহ। ছবিটা হারিয়ে গিয়ে আমার সবকিছু সে সাথে করে নিয়ে গেছে, দম বন্ধ লাগছে আমার একটু একা থাকতে চাই।

কথাগুলো বলে রোদ্র সমুদ্র কে ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো, সমুদ্র এখনো ওখানে সেভাবেই শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কাঁধের কাছটাই ভেজা ও জানে রোদ্র কথাগুলো বলার সময় কান্না করছিলো, কিন্তু কেনো? কি এমন হারিয়েছে ওর যে ও সেটার জন্য এতো কষ্ট পাচ্ছে। না না আমাকে জানতেই হবে আমার ভাই ঠিক তার কোন আঁকা ছবিটার জন্য কষ্ট পাচ্ছে।
,,,,,,,,,

রোদ্রের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে শাহানারা যখনি শুনেছে রোদ্র বাড়ি ফিরেছে আর এক মুহুর্ত দেরি করেনি। তবে ভিতরে যেতে ভয় লাগছে ছেলের সামনে কীভাবে দাঁড়াবে কী বলে শান্তনা দিবে সেটা ভেবে৷ তবুও অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে ভিড়িয়ে রাখা দরজাটা খুলে ভিতরে গেলো। রোদ্র উপর হয়ে বিছানার মাঝখানে শুয়ে আছে। পরনের জামা খুলেনি পায়ের জুতোটা পযন্ত ওভাবেই আছে। শাহানারা আস্তে আস্তে রোদ্রের মাথার কাছে গিয়ে বসলো, কাঁপা কাঁপা হাতটা রোদ্রের উষ্কখুষ্ক চুলে বুলাতেই মাথা তুলে তাকালো রোদ্র। রোদ্রের মুখটা দেখতেই বুকের মধ্যে কেঁপে উঠল একি হাল হয়েছে আমার ছেলের সবদোষ আমার আমি যদি সমুদ্র কে আগেই কথাটা বলে দিতাম তাহলে এতসব কিছুই হতো নাহ। এখনো সময় আছে আমি এখনি গিয়ে সমুদ্র কে সবটা বলে দেবো তারপর যা হবার হবে তোর এই অবস্থা আমার সয্য হচ্ছে না।

কথাটা বলেই শাহানারা বিছানা থেকে উঠতে গেলে রোদ্র শাহানারার হাত ধরে পুনরায় বিছানায় বসিয়ে দিলো। অতঃপর হালকা হেসে মায়ের কোলে নিজের মাথা রেখে বলল, তারপর ভাইয়া যখন আমার থেকেও বেশি কষ্ট পাবে সেটা সয্য করতে পারবে?

রোদ্রের কথার পিঠে শাহানারা কিছুই বলতে পারলো নাহ। সত্যিতো এক ছেলের কষ্টই সয্য হচ্ছে না তখন বড়টার কষ্ট কীভাবে সয্য হবে। তাছাড়া সমুদ্র কষ্ট পেলেও সেটা প্রকাশ করবে নাহ নিজের মধ্যে চেপে রেখে ভিতরে ভিতরে গোমরে মরবে। শাহানারার ভাবনার মাঝেই রোদ্র বলে উঠল, কি বলোত মা দোষটা তোমার নয়। আসলে এখানে দোষ কারোও নয় দোষী হলাম আমি, শশী তো জানে না যে আমি ওকে ভালোবাসি তাহলে ও কেনো আমার জন্য অপেক্ষা করবে। মাগো তুমি বিশ্বাস করো আজকে যদি শুধু ভাইয়া শশীকে ভালোবাসতো তাহলে আমি ভাইয়ার কাছে শশীকে চেয়ে নিতাম আমি জানি ভাইয়ার কষ্ট হলেও আমার ভাই আমাকে খালি হাতে ফেরাতো নাহ। কিন্তু শশী নিজে ভাইয়াকে ভালোবাসে অনেক বেশিই ভালোবাসে। সেখানে আমি নিজের ভালোবাসার মানুষের থেকে তার ভালোবাসা কীভাবে কেড়ে নিই বলো। আমিতো শশীকে কখনোই নিজের মনের কথা বলেনি তাহলে ও কেনো আমাকে বুঝবে আমার জন্য অন্য কিছু ভাববে৷ ওতো আমাকে শুধুই একজন ভালো বন্ধু বড়ভাই হিসেবে দেখেছে মা। ও কীভাবে বুঝবে ওর জন্য কারো মনে বিশাল ভালোবাসার পাহাড় জমে আছে। ও মা জানো আমার না ভীষণ কষ্ট হচ্ছে দম বন্ধ হয়ে আসছে কেমন জানি ভিতরে ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। আমি কেনো বিদেশ গেলাম মা কেনো ওকে সেই সময় তোমার কথামত বিয়ে করে নিলাম না মা এখন যে আমার ভীষণ আফসোস হচ্ছে মা। আমি শ্বাস নিতে পারছি না আমি একটু প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে চাই মা। একটু শুদ্ধ বাতাস প্রয়োজন ভিতরে কেমন জ্বলছে আচ্ছা মা আমি কি মারা যাচ্ছি?

রোদ্রের এমন কথা আর সয্য হলো না শাহানারার রোদ্রের মাথাটা বুকে চেপে ধরে কান্না করতে করতে বলল, একটু চুপ কর বাবা কিচ্ছু হয়নি এই যে মা আছে তো আর কষ্ট হবে নাহ চোখটা একটু বন্ধ করে একটু ঘুমা দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছ।

আমিও ঘুমাতে চাই মা কিন্তু ঘুম তো আসছে না আমার ঘুমটাও শশীর মতো ছেড়ে চলে গেছে। আমি কীভাবে বাঁচবো মা আমার যে অনেক কষ্ট হচ্ছে সয্য করতে পারছি নাহ মা। আমি কেনো গেলাম তখন কেনো তোমার কথা শুনলাম না মা কেনো।

রোদ্র ছোট বাচ্চার মতো হাউমাও করে মায়ের কোলে মাথা রেখে কাঁদছে আর নিজে নিজেই এসব কথা বলছে। শাহানারা আস্তে আস্তে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে একটা সময় কান্না করতে করতে রোদ্র ঘুমিয়ে গেলো। শাহানারা আস্তে করে রোদ্রের মাথাটা বালিশে রেখে ওর মুখের দিকে তাকালো, একটা রাতের মধ্যে ছেলেটার কি হাল হয়েছে। পায়ের কাছ থেকে কথাটা নিয়ে গায়ের উপর দিয়ে বেরিয়ে গেলো।
,,,,,,,,,,,
সমুদ্র শশীর থেকে সবটা শুনেছে তবে এটা বুঝতে পারছে নাহ রোদ্রের হয়েছেটা কি। এসে থেকে তো সব ঠিকি ছিলো তাহলে হঠাৎ কি এমন হলো যে ও কাউকে কিছু না বলে হিজলতলী গেলো। আর ওখানেও কেমন আনমনা ছিলো কারো সাথে তেমন কথাও বলেনি। আবার হঠাৎ করেই চলে আসছে তবে সেদিন আর ঘরে ফেরেনি তাহলে রাতে ও কোথায় ছিলো? এভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করলো কেনো? আগে তো কখনো এমন করেনি তাহলে হঠাৎ কি এমন হলো যে ও এমন বদলে গেলো। সেদিনের পর থেকে কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে, রুমের বাইরে বের হয় নাহ কথাও বলে নাহ কারো সাথে। ডয়িং রুমের সোফায় বসে সমুদ্র এসব ভাবছিলো তখনি শাহানারা হাতে একটা লিস্ট নিয়ে সমুদ্রের পাশে বসে ওটা ওকে দেখাতে দেখাতে বলল।

দেখতো বাবা এটা ঠিক আছে কিনা এখান থেকে কাকে কাকে বাদ দিতে হবে আর কে কে বাকি আছে।

সমুদ্র মায়ের দিকে তাকিয়ে হাতের লিস্ট টা নিচে নামিয়ে গম্ভীর কন্ঠে জিগাস করলো, রোদ্রের কি হয়েছ মা?

সমুদ্রের এহেন কথা শুনে শাহানারা ভয় পেয়ে গেলো, আমতা আমতা করে কিছু একটা বলতে যেতেই সমুদ্র থামিয়ে দিয়ে বলল, যেটা জিগাস করেছি সেটারই উত্তর দাও মা। ও এমন চুপচাপ হয়ে গেলো কেনো? সেদিন কী এমন হলো যে এভাবে কাউকে না জানিয়ে হিজলতলী চলে গেলো।তারপর ওখানে গিয়েও কেমন অদ্ভুত ব্যাবহার করছে, সেদিন রাতে ঘরেও ফেরেনি পরদিন এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কি সব ভুলভাল বকছিলো আর কান্না করছিলো। তারপর থেকেই এমন চুপচাপ হয়ে গেছে, মূলত ওর হয়েছে টা কি মা?

সমুদ্রের কথার জবাবে শাহানারা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে নাহ। চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে সমুদ্র আরো কিছু বলতে যাবে তখনি সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে রোদ্র বলল, তোর সব প্রশ্নের উত্তর আমি দিচ্ছি ভাইয়া। আজকে তোকে সব বলবো কেনো আমি সেদিন হিজলতলী গিয়ে ছিলাম সবটা তবে শোনার পর সয্য করতে পারবি তো?

রোদ্রের কথাশুনে শাহানারা ভয়ে রোদ্রের দিকে তাকালো সত্যি কি রোদ্র সমুদ্র কে সবটা বলে দেবে? তারপর, তারপর কি হবে?

#চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here