তোমার_মাঝে_আমি 🌸❤ [I_Am_In_You] #লেখিকা_আয়েশা (কোয়েল)** #পর্ব_৮+৯+১০ ।

0
231

#তোমার_মাঝে_আমি 🌸❤ [I_Am_In_You]
#লেখিকা_আয়েশা (কোয়েল)**
#পর্ব_৮+৯+১০



আয়েশা ভয়ে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর নিজের ওড়নায় আঙ্গুল পেঁচাচ্ছে,,,আয়েশার সাথে ঘটে যাওয়া আগের মুহুর্ত টাকে আয়েশা যতোটা না ভয় পেয়েছে তার চাইতেও বেশি এখন ভয় পাচ্ছে,,,কারণ ওর সামনে দাঁড়িয়ে একজন রাগে ফোস ফোস করছে,,এটা আর কেউ না আহিল যার রাগকে আয়েশা সাংঘাতিক ভয় পায়,,,আয়েশা কি করবে,,কি বলবে এসব ভাবতে না ভাবতেই আহিল শান্ত গলায় আয়েশা কে জিজ্ঞেস করলো,,,

আহিল: আমায় না বলে কেনো বেরিয়েছিস তুই কলেজ থেকে (শান্ত গলায়)

আয়েশা: আ..আ..আমি ম..মা..মানে

আহিল: আমি জিজ্ঞেস করেছি কেনো বেরিয়েছিস তুই কলেজ থেকে আমায় না বলে (একটু জোরে)

আয়েশা: আ..আসলে আ..আমি

আহিল: আই সেড আমাকে না বলে কেনো বেরিয়েছিস?? (আয়েশার দু-বাহু জোরে চেঁপে ধরে চিৎকার করে)

আহিল: যদি কিছু হয়ে যেতো আজকে তখন কি করতিস তুই?? আমি বলেছিলাম আমাকে না বলে কোথাও বেরাবি না,,,আমি বলেছিলাম আমি এসে তোকে বাড়ি নিয়ে যাবো?? বলিনি?? (চিৎকার করে)

আয়েশা ভয়ে কিছু বলতে পারছে না,,কারণ আহিলের মুখ টা পুরো লাল হয়ে গেছে রাগে,,আহিল উত্তর না পেয়ে গাড়ির বোনাটের উপর জোরে একটা ঘুসি মারতেই আয়েশা কেঁপে উঠলো আর বলতে শুরু করলো,,,

আয়েশা: আহিল আমি বেরোতে চাইনি,,,আমি অনেক বার বলেছি তুই এসে আমাকে নিয়ে যাবি তখন ও আমাকে বললো তুই নাকি বলেছিস ওকে নিয়ে যেতে আমায় তাই ও এসেছে,,,(এক নাগাড়ে বলে ফেললো)

আহিল: ফোন করিসনি কেনো আমায়?? ফোন করিসনি কেনো বল?? আসলে তুইও বেরোতে চেয়েছিলিস,,,তোর মতো মেয়েরা আর কি বা চাইতে পারে,,হারে হারে চিনি এখন তোকে আমি,,

আয়েশা: ফোন তো তুই সেদিন ভেঙে দিয়েছিস আমি কি করে ফোন করতাম?? ওর কাছ থেকে ফোন করতে চেয়েছিলাম কিন্তু দেয়নি আশে পাশে আরু ও ছিলো না যে ওর ফোন দিয়ে ফোঁ করতাম আমি,,,এতই যখন খারাপ মেয়ে আমি তাহলে বাঁচাতে গেলি কেনো?? যা হওয়ার হতো আমার,,,মরে গেলে যেতাম,, (আয়েশা চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বললো)

আহিল চুপ করে গেলো আসলেই তো ও নিজে আয়েশার ফোন টা আছাড় মেরে ভেঙে ফেলেছিল আর আরু ও তো ক্লাসে ছিলো,,,রাগের মাথায় আয়েশা কে এইসব কথা বলা উচিত হয়নি তাও আবার এই পরিস্থিতি তে,,,রাগ এতটাই মাথায় চড়ে গেছিলো আহিলের যে কি বলতে কি বলে ফেলেছে খেয়ালই করেনি,,,

আহিল আস্তে আস্তে আয়েশার দিকে এগোলেই আয়েশা পিছিয়ে যায় চোখ মুছতে মুছতে,,আহিল এক ঝটকায় আয়েশার হাত টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিতেই আয়েশা মোচড়া মুচড়ী করতে লাগে ছাড়া পাওয়ার জন্য,,,কিন্তু আহিল তো আহিলই জোর করে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নেয় আয়েশা কে আর আয়েশাও আহিলের জোরের সাথে না পেরে চুপচাপ শান্ত হয়ে আহিলের বুকে মাথা রেখে নাক টানতে থাকে আর হিঁচকী তুলতে থাকে,,,

💫💫 কিছু সময় আগে 💫💫

আয়েশা কে ছুড়ে মারে বিছানার ওপর আর আয়েশা সোজা হয়ে বসে বিছানার উপর পিছনে সরতে সরতে বলে,,

আয়েশা: “জ্যাক” কেনো আপনি আমার সাথে এমন করছেন?? কি ক্ষতি করেচি আমি আপনার?? আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ,,,আহিল আমাকে খুঁজবে ও বলেছে ও নিজে এসে আমায় বাড়ি নিয়ে যাবে,,

জ্যাক: হা হা হা হা কিন্তু সেটা যে আর হবে না,,আগে তুই আমাকে এখন আনন্দ দিবি নাহলে তুই মরবি আর সাথে তোর আহিল ও,,

আয়েশা: নাহহহ আহিলের কোনো ক্ষতি করবেন না,,,আপনি আর আহিল তো বন্ধু তাহলে কেনো এমন করছেন??

জ্যাক: তোর জন্য,,, তুই যা চিস আছিস তাতে আহিল যে কি করে তোকে ভোগ না করে রয়েছে কে জানে?? নাকি সব হয়ে গেছে,,,

আয়েশা চুপ করে গেলো এই কথাটা শুনে কারন ওর এই কথাটা শুনে নিজের বিয়ের রাতের কথা মনে পরে গেলো,,,জ্যাক আবার বললো

জ্যাক: শোন আমি আহিলের চেয়ে কম বড়লোক নই,,,আমার টাকা গাড়ি বাড়ি ব্যঙ্ক ব্যালেন্স সব আছে,,,রানির মতো করে রাখবো তোকে কোনো প্রব্লেম হবে না তোর,,,কোনো কষ্ট হবে না সো রাজি হয়ে যা ছেড়ে দে আহিল কে আর চলে আয় আমার কাছে,,

আয়েশা: টাকা গাড়ি বাড়ি ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স সবই তো আছে কিন্তু ভালোবাসা আছে কি?? যেখানে ভালোবাসা নেই সেখানে সুখ আনন্দ কিছু নেই আমি আমার আহিল কে ভীষণ ভালোবাসি আর ও আমাকে,,,আপনি আমাকে যেতে দিন প্লিজ,,আহিলললললল!!!

জ্যাক আয়েশার গায়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে যাবে তখনি কে জানো জ্যাকের জামার কলার ধরে পিছন থেকে টান দিয়ে দুরে ছিটকে ফেলে দিলো জ্যাক কে আর জ্যাক দেয়ালে গুতো খেয়ে আস্তে করে চিৎকার দিলো,,,আয়েশা মাথা নিচু করে চোখ বুজে নিয়েছিল জ্যাকের ঝাপিয়ে পরার সময় কিন্তু জ্যাকের গোঙানোর আওয়াজ শুনে তাকাতেই দেখে,,,

আহিল রনমূর্তি ধারন করে হাত মুঠো করে জ্যাকের দিকে তাকিয়ে আছে,,,জ্যাক দেয়াল থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াতেই আহিল জ্যাকের কাছে গিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে লাগলো,,,আহিল যখন মারছিলো তখন আয়েশা আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়,,এদিকে আহিল মারছে আর বলছে

আজিল: তোকে নিজের বন্ধু ভেবে ছিলাম আর তুই কি করলি?? আমারই পিছনে ছুরি বসাতে চাইলি?? আমার আয়েশার দিকে হাত বাড়ানোর সাহস কি করে হলো তোর?? আমার বউ ও,,আমি ব্যতীত কেউ ওর দিকে হাত বাড়ানো তো দুর তাকানোর চেষ্টা করলে পুতে ফেলবো,,,,তোকে তো আজ মেরেই ফেলবো আমি (এই বলে একটা ইট নিয়ে মারতে গেলো জ্যাকের মাথায়)

আহিল মারতে গিয়েও মারতে পারলো না কারণ মারার আগেই আয়েশা হাত ধরে নিয়েছে পিছন থেকে,,,আহিল আয়েশার দিকে রাগী চোখে তাকালো আর হাত থেকে ইট টা ঠাস! করে ফেলে দিয়ে আয়েশার হাত ধরে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে চলে গেলো,,,

আসলে জ্যাক আয়েশার কলেজে ছুটির সময় যায় আর আয়েশা কে বলে ওকে আহিল পাঠিয়েছে,,,আহিলের কাজ থাকায় আহিল আসতে পারবে না,,,আয়েশা কে এক প্রকার জোর করেই নিয়ে আসে ওদের কলজে থেকে সামান্য দুরের এক পোড়াবাড়ি তে,,,সেখানে আসতেই আয়েশা চলে যেতে চাইলে জ্যাক জোর করে আয়েশা কে একটা রূমে নিয়ে যায় কিন্তু ভুলবশত দরজা বন্ধ করতে ভুলে যায়,,,আর আহিল সিকিউরিটি গার্ডের কথা মতো পোড়াবাড়িতে এসে আয়েশার আওয়াজ শুনেই দৌঁড়ে রূমে গিয়ে দেখে এই অবস্থা,,,,

💫💫 এখন 💫💫

আহিলের বুকে থেকে আয়েশা আস্তে আস্তে শান্ত হয়ে গেছে,,,আহিল আয়েশা কে সোজা করে দাঁড় করিয়ে আয়েশার চোখের জল মুছে দেয় আর তখনই পিছন থেকে আরোহী ডাকে ওদের,,আহিল এখানে আসার আগেই আরোহী কে একটা গাড়ি নিয়ে এখানে চলে আসার জন্য কল করে দিয়েছিল ওখানে দাঁড়িয়ে,,,

আরোহী: ভাইয়া!! বৌদি তুমি ঠিক আছো??

আহিল: এখন কোনো কথা নয় তুই আয়েশা কে নিয়ে সিধে বাড়িতে যাবি আমি একটু পরে আসছি,,

আয়েশা: আহিল প্লিজ!!

আহিল: বাড়ি যেতে বললাম তো??

আয়েশা: কিন্তু??

আহিল: আমি এক কথা বারবার বলতে পছন্দ করিনা তুই সেটা জানিস তাই চুপচাপ আরুর সাথে বাড়ি যা,,গিয়ে রেস্ট নে আমি চলে আসবো তাড়াতাড়ি,,,ওকে??

আয়েশা হ্যাঁবোধক মাথা নাড়ল আর আরোহীর সাথে গাড়িতে উঠে চলে গেলো,,,আয়েশা আর আরোহী যেতেই আহিল নিজের শার্টের হাতা ফোল্ড করলো আর আবার ঐ পোড়াবাড়ির ভিতর ঢুকে গেলো,,,

আয়েশা ফ্রেশ হয়ে ঘরে সমানে পায়চারি করছে,,,আয়েশা ভাবছে আহিল রাগের মাথায় জ্যাকের কোনো বড়ো ক্ষতি করে দেবে না তো?? আহিল যদি রাগের মাথায় মেরে ফেলে?? এসব ভাবতেই আতকে উঠছে আয়েশা,,বারবার শুধু ঘড়ি দেখছে আর বলছে,,

আয়েশা: কি ব্যাপার এখনো আসছে না কেনো?? সেই কখন বাড়ি ফিরেছি আমি,, আমায় বললো তারাতাড়ি ফিরবে কিন্তু এ…

আয়েশার কথা শেষ করার আগেই আহিল রূমে এসে কোনো কিছু না বলে হনহন করে ওয়াশরূমে ঢুকে গেলো,,,আহিল ওয়াশরূমের দরজা ঠাস! করে বন্ধ করতেই আয়েশা কেঁপে উঠলো,,,এদিকে আহিল শাওয়ারের নীচে দাঁড়িয়ে ভিজছে জামা কাপড় কিছু না ছেড়েই বাইরের ড্রেস পরেই ভিজছে,,,

আয়েশা ওয়াশরূমের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো আহিল কে,,

আয়েশা: আহিল,,,আহিল!!

আহিল: কি হয়েছে??? আমাকে কি একটু ফ্রেশ হতেও দিবি না শান্তি তে,,,জাস্ট লিভ মি অ্যালোন ড্যাম ইট!! (রেগে চিল্লিয়ে বললো)

আয়েশা আর কিছু বললো না মুখ ভার করে ওখান থেকে চলে গেলো আর আহিল শাওয়ারের নীচে দাঁড়িয়ে দেয়ালে দু-তিনটে সজোরে ঘুসি মারলো আর বললো,,,

আহিল: কি করে পারলাম আমি এটা?? এতো বড়ো ভুল আমি কি করে করে ফেললাম,,,আমি কি করে…………………………
,
,
,
,
,
,
[ ফিরে আসবো আগামী পর্বে 💕]

#তোমার_মাঝে_আমি 🌸❤ [I_Am_In_You]
#লেখিকা_আয়েশা (কোয়েল)
#পর্ব_৯



বেশ কিছুক্ষণ বাদে আহিল চুপচাপ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে ব্যালকনি তে চলে যায় আর ইসি চেয়ারে বসে দু হাত দিয়ে সিটে ভর করে নীচের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে,,,আয়েশা রূমে ছিলো না যখন আহিল ওয়াশরূম থেকে বেড়িয়েছে কারণ প্রায় ১ ঘন্টা পর আহিল বেরিয়েছে,,,আয়েশা আহিলের বেড়ানোর পর প্রায় ৩০ মিনিট পর ঘরে এসে দেখল আহিল ঘরে নেই,,,

আয়েশা: কি ব্যাপার আহিল কি এখনো ওয়াশরূম থেকে বের হয়নি,,,এতক্ষণ শাওয়ার নিলে তো শরীর খারাপ করবে,,(আস্তে করে বলে ওয়াশরূমের দিকে যেতেই হঠাৎ ব্যালকনির দিকে চোখ গেলো)

আয়েশা: আহিল ব্যালকনি তে?? যাবো একবার?? ও কি এখনো রেগে আছে আমার উপর?? নাহ একবার যাই,,যা রাগ জল্লাদটার হুহ! তাতে কি আমি যাবো,,,

আয়েশা আস্তে আস্তে ব্যালকনি তে গেলো আর গিয়ে দেখলো আহিল চুপচাপ বসে একমনে কিছু একটা ভাবছে তাই আস্তে করে আহিলের পাশে বসলো,,,কিন্তু এতে আহিলের কোনো হেলদোল নেই ও যেভাবে বসে ছিলো ঠিক সেভাবেই বসে আছে,,,তাই আয়েশা একটু কাশি দিলো,,

আয়েশা: উহুঁ উহুঁ!

আহিল: (নিশ্চুপ)

আয়েশা: তুই কি আমার উপর এখনো রেগে আছিস?? আই প্রমিস আর কোনদিন তোর কথার বাইরে কোনো কাজ করবো না,,

আহিল: (নিশ্চুপ)

আয়েশা: ঠিক আছে তুই যখন কথা বলতে চাস না আমি বিরক্ত করবো না,,,আমি তো বিশ্বাসঘাতক তোর কাছে তাই তোকে আর কি বিশ্বাসের কথা বলছি,,,(বলেই আয়েশা উঠে গেলো আর ঘরের দিকে পা বাড়ালো)

আহিল: আয়ু!!

আয়েশা জানো জমে গেলো,,,বিশ্বাস হচ্ছে না আহিল ওকে আয়ু বলে ডাকছে,,,আজ কতোদিন পর আয়েশা আহিলের মুখে আয়ু! ডাক টা শুনছে আয়েশার মনে নেই,,,আহিল আয়েশার কোনো প্রতিউত্তর না পেয়ে বললো,,,

আহিল: এবার কি তুইও আমার মতো চুপ করে থাকবি নাকি আমার পাশে বসবি??

আয়েশা: ন..ন..নাহ ব..ব..বসছি,,(আয়েশা আহিলের পাশে বসতেই আহিল বললো)

আহিল: তুমি করে কবে বলবি তুই আমাকে?? বর হই এখন বন্ধু নই,,

আয়েশা তো চরম অবাক আহিলের এমন পরিবর্তনে তারপরেও নিজেকে সামলে বললো,,

আয়েশা: না মানে,,তুই ও তো তুই করেই বলিস আমায়,,,

আহিল: (হেসে) আমি তুমি করে বললে তুই ও তুমি করে বলবি??

আয়েশা খানিক টা লজ্জা পেয়ে হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ল আর বললো

আয়েশা: হ্যাঁ মানে চেষ্টা করব আর কি কারণ তুই টা তো অনেক দিনের অভ্যেস,,

আহিল: বলতে বলতে ঠিক হয়ে যাবে,,

আয়েশা: হম,

আহিল: খেয়েছো কিছু??

আয়েশা ভাবেনি আহিল ওকে এখন থেকেই তুমি করে বলবে,,,আয়েশা অবাকের উপর অবাক হচ্ছে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না,,,যেই আহিল কি না ঠিক করে কথা বলছিল না সেই আহিল আজকে এতো ভালো ভাবে কথা বলছে?? আয়েশা কিছুই ভেবে পাচ্ছে না,,এসবের মাঝেই আহিল আবার বললো,,

আহিল: কি হলো কিছু জিজ্ঞেস করলাম তো?? খেয়েছো?

আয়েশা: ন..নাহ

আহিল: কেনো?? যাও গিয়ে খেয়ে নাও আর তারপর রেস্ট করো,,

আয়েশা: আমি একা কেনো খাবো তুমি ও তো কিছু খাওনি??

আহিল আয়েশার মুখে তুমি শুনে সামান্য হাসলো আর বললো,,

আহিল: আমি খাবো না তুমি খেয়ে নাও,,আমি খেয়ে এসেছি তাই দেরী হয়েছে আসতে,,যাও খেয়ে শুয়ে পরো,,,ওকে??

আয়েশা: (কিছু একটা বলতে গিয়েও বললো না) আচ্ছা ঠিক আছে,,(বলে চলে গেলো)

আয়েশা চলে গেলে আহিল আবার ও নিজের ভাবনায় মগ্ন হয়ে যায়,,,ভাবতে থাকে কিছুক্ষণ আগের কথা যখন আহিল আয়েশা কে আরোহীর সাথে পাঠিয়ে দেওয়ার পর আবার সেই পোড়াবাড়িতে ঢোকে,,,,

💫💫 কিছুসময় আগে 💫💫

আহিল পোড়াবাড়ির রুমটাতে ঢুকতেই দেখলো জ্যাক বিছানায় নিজের মাথাটা ধরে বসে আছে,,,আহিল রেগে গিয়ে জ্যাকের কলার চেপে ধরে দাঁড় করিয়ে বললো,,

আহিল: কেনো করলি এটা?? তোকে নিজের বন্ধুর থেকে ও বেশি নিজের ভাই মনে করেছিলাম আর তুই কি করলি?? আমারই বউয়ের দিকে খারাপ নজর দিলি,,,কেনো করলি বল?? আনসার মি ড্যাম ইট!! (ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো বিছানায়)

আহিল: আমারই দোষ সবাই কে আপন মনে করে বিশ্বাস করি আর সবাই সেটার ফায়দা ওঠায় বিশ্বাসঘাতকতা করে,,,

জ্যাক: আয়েশা বিশ্বাসঘাতক হলে এতক্ষণে আমার কাছে চলে আসতো,,,তোর বাঁচানোর আশায় বসে থাকতো না!!

আহিল কিছুটা অবাক হলো জ্যাকের কথা শুনে,,,বললো

আহিল: কি বলতে চাইছিস তুই??

জ্যাক: তুই যেটা বুঝলি সেটাই বলেছি,,,আয়েশা যদি ফ্রড হতো দেন বলতো না ” আহিল আমাকে খুঁজছে আমাকে যেতে দিন ”

আহিল: মানে কি এসবের?? তুই ইচ্ছে করে এসব??

জ্যাক: ইয়াহ!! ইচ্ছে করে করেছি,,,তোকে প্রুফ দেখাতে করেছি,,ইউ নো ভেরি ওয়েল আমার বাড়ি গাড়ি ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স সব আছে,,আর আমি এসব আয়েশা কে অফার ও করেছি বাট ও কি বললো জানিস??

আহিল: কি বললো??

জ্যাক: এসবে সুখ পাওয়া যায় না,,,যেখানে ভালোবাসা নেই সেখানে কোনো সুখ নেই,,,ও তোকে ভালোবাসে আর তুই ওকে তাই তোকে ছেড়ে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না,,

আহিল চুপ করে আছে এসব শুনে সেই দেখে জ্যাক উঠে দাঁড়িয়ে বললো,,,

জ্যাক: কোনো মেয়ে যদি ফ্রড হয় তাহলে তো ভালোবাসা চাইবে না আহিল,,,অকৰ্ডিং টু ইউ আয়েশা একটা লোভী মেয়ে যার নাকি ভালো দেখতে ছেলে চাই টাকা বাড়ি গাড়ি এসব চাই,,,দেন ওয়াই সি রিজেক্ট মি??

আহিল: আমি যেই ইমেজ গুলো দেখেছি সেইগুলো?? সেগুলো কি ছিলো জ্যাক??

জ্যাক: ষড়যন্ত্র!!

আহিল: ওয়াট??

জ্যাক: ইয়াহ কন্সপিরেসি,,,এছাড়া আর কি বা হতে পারে?? যেই ছেলে কে পাওয়ার জন্য আমেরিকার মেয়েরা পাগল সেই ছেলে কে একটা ইন্ডিয়ান মেয়ে রিজেক্ট করলো,,,কারন টা কি সেটার ” ভালোবাসা ” আরে এরপর তো কোনো সন্দেহ থাকেই না যে আয়েশা তোকে ভালোবাসে,,,

আহিল: আমি কিচ্ছু জানি না,,,বুঝতে পারছি না কি করবো,, আজকে থেকে নয় বিয়ের প্রথম দিন থেকে আমি দোটানায় পড়েছি,,,উফফ পাগল হয়ে যাবো আমি (দু-হাত দিয়ে মাথা চেঁপে ধরে)

জ্যাক: আই নো যেই ইমেজ গুলো তুই দেখেছিস সেগুলো দেখার পর যে কেউ তোর মতই ভাববে,,,আচ্ছা কি ছিলো ইমেজ এ?? আয়েশা একটা অন্য ছেলের সাথে অনেকটা ক্লোস হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো,,,কথা বলছিল

আহিল: জ্যাক ইমেজ আজ কাল এডিট হয় বাট ভয়েজ?? আয়েশার কন্ঠ কেউ কি করে এডিট করবে?? ভয়েজ টাতে স্পষ্ট শোনা গেছে আয়েশা আই লাভ ইউ বলেছে,,

জ্যাক: কাকে বলেছে??

আহিল: একটা ছেলে কে আর সে রিপ্লাই ও করেছে,,

জ্যাক: বন্ধু ও তো হতে পারে,,,আহিল জাস্ট থিঙ্ক এখনকার দিনে বেস্ট ফ্রেন্ডদের আই লাভ ইউ বলাই যায় ইনফ্যাক্ট যে কাওকে আই লাভ ইউ বলা যায়,,,আমি বলছি তুই একবার এসব নিয়ে আয়েশার সাথে কথা বল আর তুই তো বললি সেদিন আয়েশা নাটক করছিল ফোনে অন্য কাওর সাথে কথা বলার,,,তোর থেকে সত্যি জানার জন্য,,,ও যখন জানতে চায় তখন ওকে জানা ব্যাপার টা,,,

আহিল: ওর ফ্যামিলি যেটা করেছে আমার দির সাথে সেটার পর ও আমি ওকে ভালবেসেছি,,,আমি তো প্রথমে বিশ্বাসই করিনি যে আয়েশা আমাকে ঠকাবে,,,

জ্যাক: আই নো ব্রো,,,তোর ফ্যামিলির ব্যাপার টা তোর দির ব্যাপার টাও আমি জানি,,,দেখ তোর দি কি ভাবে মারা গেছে বল আমায়,,,

আহিল: ছাদ থেকে পরে,,,কোমায় চলে গেছিলো আর তারপর জ্ঞান ও ফিরেছিল,,,কিন্তু হঠাৎই শুনলাম আমার দির অক্সিজেন মাস্ক টা কেউ খুলে দেয় আর যার জন্য ও,,,

জ্যাক: তুই বলেছিলিস সবার শেষে তোর দি কে দেখতে আয়েশার দাদা আই মিন তোর দিদির বর গেছিলো,,,

আহিল: হম আমাকে একজন এটাই বলেছে

জ্যাক: কে বলেছে??

আহিল: ও…এক মিনিট নাম বলেননি উনি জাস্ট ফোন করে বললো আমার দির সাথে অঙ্কুর (আয়েশার দাদা) এর ঝগড়া হয়েছিল তাই দি ছাদে ছিলো আর অঙ্কুর ও নাকি ছাদে গেছিলো কারন দি যখন ছাদে ছিলো তখন অঙ্কুর ঘরে ছিলো না,,,আয়েশার বাবা কে এসব কথা জিজ্ঞেস করায় ওর বাবা সেম কথা বলেছে,,,এমনকি হসপিটালে দি কে দেখতে অঙ্কুর যখন গেছিলো তখন ও দির সাথে ঝগড়া করে বেরিয়ে গেছিল এটা আমি স্পষ্ট দেখেছি সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজে,,,তারপরের ফুটেজ টা দেখতে গিয়ে দেখলাম তখন ক্যামেরা টা কেউ অফ করে দিয়েছে,,,

জ্যাক: আচ্ছা,,,কিন্তু সেই ব্যক্তি টা কে যে তোকে এতো উপকার করলো,,,ইভেন তুই তো এটাও জানিস না তোকে আয়েশার ইমেজ আর ভয়েজ গুলো কে পাঠিয়েছে,,,

আহিল: নাহ,,,কি করে জানবো এগুলো তো আমাকে মেসেঞ্জার বা ওয়াট’সাপ এ পাঠায়নি,,কুরিয়ার করে ছিলো

জ্যাক: এক্সজ্যকলী,,,থিঙ্ক অবাউট ইট আহিল,,,যে তোকে কুরিয়ার করে ছিলো সে নিজের নাম টা কি তোকে জানিয়েছে?? নিশ্চয় না,,,ইটস মিন কেউ ইচ্ছে করে এগুলো করেছে,,তোকে আর আয়েশা কে আলাদা করার জন্য কারণ তুই এমনিতেও আয়েশার ফ্যামিলি কে নিয়ে রেগে ছিলিস,,,

আহিল: এভাবে তো ভাবিনি আমি কোনদিন

জ্যাক: ভাবার জন্য যে বুদ্ধি টা দরকার সেটা তোর নেই তাই 😒😒 আছে শুধু গায়ের জোর 😣😣

আহিলের এবার খেয়াল পরলো যে ও খুব বাজে ভাবে জ্যাক কে মেরেছে,,,জ্যাকের দিকে তাকাতেই দেখলো জ্যাকের কপালের কোণে অনেক টা কেটে গেছে আর রক্ত বের হচ্ছে,,,

আহিল: ভাই,,ভাই তোর তো কপাল থেকে ব্লিডিং হচ্ছে,,,

জ্যাক: হ্যাঁ ঐ একটু আর কি,,

আহিল: হাত টাও তো কেটে গেছে ব্রো,,,আ’ম সরি য়ার তখন

জ্যাক: আরেহ আমি যা এক্টিং করেছি তাতে এক্টর রাও ধরতে পারবে না তুই তো কোন কুলুর বলদ 😂🤣

আহিল: কি বললি 😒😒

জ্যাক: কুলুর বলদ 😀🤣 আচ্ছা যা এবার বাড়িতে,,,আয়েশা কি একা গেছে??

আহিল: হুহ! নাহ ও আরোহীর সাথে গেছে আমি ওকে বলেছি তারাতাড়ি ফিরব তাই চলে গেছে,,

জ্যাক: আরেহ তাহলে এখন ও এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো যা বাড়ি যা,,,

আহিল: হম তুইও চল

জ্যাক: পাগলা নাকি আমি?? এখন বউদি আমায় দেখ্লে কি হবে বল তো?? কিছুদিন বাদে গিয়ে দেখা করবো ততদিনে সব মিটমাট করেনে তোরা

আহিল: আচ্ছা সেটা ঠিক আছে কিন্তু এখন তুই চল আমার সাথে গাড়িতে ফার্স্ট এইড বক্স আছে,,,ব্যান্ডেজ করে তোকে তোর ফ্ল্যাটে নামিতে দেবো

জ্যাক: ওকে ফাইন,,,ভাই একটু ধর হাঁটতে ও কষ্ট হচ্ছে যা লাথি মারলি 😒

আহিল: সরি দোস্ত,,,বুঝতে পারিনি,,,আয় ধর আমায় (জ্যাক আহিলের কাঁধে ভর করে ওখান থেকে বেরিয়ে গেলো)

💫💫 এখন 💫💫

আহিল এসব ভাবতে ভাবতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো মাঝরাত,,২টো বাজে তাই ঘরে গেলো,,,ঘরে গিয়ে দেখলো আয়েশা গুঁটি শুঁটি মেরে বিছানায় শুয়ে আছে,,,সেই দেখে আহিল এসির টেম্পারেচর টা কমিয়ে দিলো আর আয়েশার গায়ে চাদর টা টেনে দিলো,,,দিয়ে নিজে গিয়ে সোফায় শুয়ে পরলো আর শুতে শুতেই আহিল ঘুমিয়ে পরলো,,,,

সকালে………………..☀️☀️

আয়েশা ব্রেকফাস্ট টেবিলে আহিলের মা কে হেল্প করছিল আর তখনই আরোহী এসে বসলো আর আয়েশা কে বললো,,

আরোহী: কি গো বৌমনি তুমি কলেজ যাবে না?? ব্রেকফাস্ট করে রেডি হয়ে নাও,,,ভাইয়া তো আবার লেট পছন্দ করে না,,

আয়েশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আহিল সিঁড়ি দিয়ে নিজের শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে নামতে নামতে বললো,,,

আহিল: আয়েশা কলেজ যাবে না……………
[ফিরে আসবো আগামী পর্বে 🌹]

#তোমার_মাঝে_আমি 🌸❤ [I_Am_In_You]
#লেখিকা_আয়েশা (কোয়েল)
#পর্ব_১০



আয়েশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আহিল সিঁড়ি দিয়ে নিজের শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে নামতে নামতে বললো,,,

আহিল: আয়েশা কলেজ যাবে না…

আয়েশার মুখটা ছোটো হয়ে গেলো আহিলের কথাটা শুনে তবুও কিছু বললো না,,কি বা বলবে গতকাল যা হলো কিন্তু তাতে আয়েশার কি কোনো দোষ ছিলো?? আয়েশার মনে এই প্রশ্ন টা থাকলেও কিছু বললো না,,,শুধু ভাবলো,,

আয়েশা: আমার স্বপ্ন পুরন হয়তো কোনদিন হবে না (মনে মনে ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো)

আহিল টেবিলে এসে বসেই দেখলো আরোহী আর আয়েশা দুজনের মুখ্টাই শুকিয়ে গেছে,,,আর ওর মা ও ওর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে,,সেই দেখে ও বললো ওর মাকে

আহিল: ওয়াট হ্যাপেন মম এভাবে কেনো তাকাচ্ছো আমার দিকে??

আহিলের মা: তুই আয়েশার কলেজ যাওয়া টা কেনো বন্ধ করলি??

আহিল: যেটা উচিত সেটাই করেছি (আয়েশার দিকে তাকিয়ে)

আহিলের মা : বড্ড বেশি বাড়াবাড়ি করছিস তুই??

আহিল: আমি এখনো কোনো কিছুই করিনি মম,,

আরোহী: ভাইয়া বৌমনি কলেজ কেনো যাবে না??

আহিল: আমি বলেছি তাই,,

আরোহী: কিন্তু…(আয়েশা চোখের ইশারায় থামিয়ে দিলো)

আহিল: আয়ু!!

আয়েশা: হমম (মাথা নীচু করে)

আহিল: খেয়ে রেডি হয়ে নাও

আয়েশা: কলেজ তো যাবো না তাহলে??

আহিল: আমার সাথে বেরোবে তুমি,,,তাই রেডি হয়ে নাও খেয়ে,,

আয়েশা: কোথায় যাবো??

আহিল: গেলেই জানতে পারবে,,,তাই কথা না বলে তারাতাড়ি রেডি হয়ে নাও,,

আয়েশা: আচ্ছা,,

আহিল খেয়ে উঠে সোফায় গিয়ে বসলো ম্যাগাজিন নিয়ে আর আয়েশা খেয়ে উপরে চলে গেলো রেডি হতে,,,

আয়েশা: কি ব্যাপার কোথায় নিয়ে যাবে আমায়?? এই ছেলেটা কখন যে কি করে কিছুই তো বুঝিনা,,,ধুর কি যে করবে?? (রেডি হতে হতে)

আয়েশা রেডি হয়ে নীচে নেমে এলো কিন্তু আহিল কে দেখতে পেলো না ড্রয়িং রুমে,,এদিক ওদিক খুঁজতেই আহিলের মা বললো,,,

আহিলের মা: আয়েশা মা আহিল কে খুঁজছিস??

আয়েশা: হ্যাঁ মা কোথায় ও??

আহিলের মা: আমাকে বলে গেলো ও তোর জন্য গাড়িতে ওয়েট করছে,,

আয়েশা: ওহ আচ্ছা,,মা আমি তাহলে আসছি,,

আহিলের মা: আয় মা,,তোরা যে দুজন দুজনকে তুমি করে বলছিস এটা শুনেও ভালো লাগলো,,এভাবেই মানিয়ে নে মা আমার ছেলেটার যে কি হয়েছে কে জানে,,

আয়েশা: চেষ্টা করবো মা,,,আচ্ছা আসছি,,

আয়েশা বাইরে এসে দেখলো আহিল দু হাত বটে নিয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে,,আয়েশা সামনে আসতেই গাড়ির সামনের সিটের দরজা টা খুলে দিলো,,,আর আয়েশা বসে পরলো এক ঝলক আহিলের দিকে তাকিয়ে,,,আয়েশা বসতেই আহিল ও ড্রাইভিং সিটে বসে পরলো আর ড্রাইভ করতে শুরু করলো,,,রাস্তায় কেউ কাওর সাথে ঠিক মতো কথা বলছে না চুপচাপ রয়েছে,,আহিল নিজের মতো ড্রাইভ করছে আর আয়েশা জানলার বাইরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে,,,গাড়ি চলায় হাওয়ায় আয়েশার খোলা চুল গুলো উড়ছে আর আহিল মাঝে মাঝে আড় চোখে আয়েশার দিকে তাকাচ্ছে,,,,

সিগন্যাল এর জন্য আহিল গাড়ি থামালো আর কিছুক্ষণ আগে আয়েশার চুল টা এলোমেলো হয়ে গেছে হাওয়ায় তাই আয়েশা নিজের চুলের দিকে তাকালো আর সিগন্যাল এর দিকে একবার তাকালো দেখলো গ্রীন সিগনাল হতে দেরী আছে,,,তাই আয়েশা নিজের চুল ঠিক করতে লাগলো,,,চুল ঠিক করতে করতে আয়েশা জানলা দিয়ে তাকাতেই দেখলো ওদের বিপরীত দিকে যে গাড়ি টা দাঁড়িয়ে আছে সেই গাড়ির জানলা থেকে একটি লোক খুব বাজে ভাবে আয়েশার দিকে তাকিয়ে আছে,,,আয়েশা সেটা দেখে কিছু না বলে মুখ ফিরিয়ে নেয় আর নিজের চুল ঠিক করে অন্যদিকে তাকিয়ে বসে কিন্তু চোখ টা আবার ঐ গাড়ির দিকে যেতেই দেখলো এখনো লোকটা ওরম বাজে ভাবেই তাকিয়ে আছে,,,হুট করেই আয়েশার দিকের জানলার কাঁচ টা বন্ধ হয়ে গেলো,,,আয়েশা অবাক হয়ে আহিলের দিকে তাকাতেই দেখলো আহিল ওর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো,,,আয়েশা এটা দেখে মনে মনে হাসলো আর কিছুক্ষণ পরেই গ্রীন সিগনাল হওয়ায় আহিল গাড়ি স্টার্ট দিলো,,,,,

আহিল গাড়ি থামালো একটা বড়ো শপিং মলের সামনে আর গাড়ির দরজার লক খুলে দিয়ে বললো,,

আহিল: বেরিয়ে দাঁড়াও আমি গাড়ি টা পার্ক করে আসছি,,

আয়েশা: এখানে কেনো?

আহিল: সবসময় প্রশ্ন করতে হয়?? চুপচাপ যেটা বললাম সেটা করা যায় না??

আয়েশা একটা ভেংচি কেটে গাড়ি থেকে বেরিয়ে দাঁড়ালো,,,আর আহিল গাড়ি টা পার্ক করতে চলে গেলো,,,কিছুক্ষণ হয়ে যাওয়ার পর আয়েশা ভাবছে,,,

আয়েশা: এখানে কেনো নিয়ে এলো এই ছেলে??

আহিল: আমার গার্লফ্রেন্ড এর জন্য শপিং করতে,,(পিছন দিয়ে)

আয়েশা : তোর গ..গা..গার্লফ্রেন্ড??

আহিল: হমম চল

আহিল এগিয়ে গেলো মলের গেট এর দিকে কিন্তু আয়েশা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে নিজের জায়গায়,,,আহিল নিজের পাশে তাকিয়ে দেখল আয়েশা নেই তাই পিছন ফিরলো আর দেখলো আয়েশা এক ভাবে ঐ জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে,,,সেই দেখে আহিল এগিয়ে গেলো আয়েশার সামনে কিন্তু আয়েশার কোনো পরিবর্তন নেই ও নিজের ভাবনায় মগ্ন,,,

আয়েশা: আহিলের গার্লফ্রেন্ড মানে?? ও এটা কি বলে গেলো?? ওর জীবনে এখন অন্য কেউ আছে?? তাই আমার সাথে এমন ব্যবহার করছে,,অন্য কেউই যখন আছে তখন আমাকে কেনো বিয়ে করলো?? কিসের প্রতিশোধ নিচ্ছে ও,,,

এসব ভাবতে ভাবতেই চোখের সামনে তুরি বাজলো আর আয়েশা পাশে তাকিয়ে দেখল তুরি টা আহিল বাজিয়েছে,,আহিল বললো,,

আহিল: কি ভাবছো,,,যাবে নাকি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে??

আয়েশা ছলছল চোখে আহিলের দিকে তাঁকাতেই আহিল কিছুটা অবাক হলো আর আয়েশা বললো,,

আয়েশা: যখন অন্য কাওকে ভালোবাসো,,,অন্য কেউ তোমার মনে আছে,,,আমার জায়গা টা যখন অন্য কেউ নিয়ে নিয়েছে তখন আমায় কেনো বিয়ে করলে?? কি এমন ভুল করেছি আমি যার শাস্তি এভাবে দিচ্ছো আমায়,,এভাবে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছো,,,এর থেকে তো আমায় একেবারে মেরে…(আয়েশার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে)

আহিল: শশশশ! যেই কথাটা চুপচাপ মানতে বলি সেটা তুমি মানো না যেটা মানার দরকার সেটা মানো না কিন্তু যেটা মানার দরকার নেই সেটা তুমি কি সুন্দর মেনে বসে আছো,,,ওয়াও হাউ কিউট

আয়েশা: ম..মানে??

আহিল: টোটাল রাবিশ,,,ওটা আমি এমনি বলেছিলাম জাস্ট তোমার প্রশ্নের ঝুলি গুলো আভয়ড করার জন্য আর তোমার মুখ বন্ধ রাখার জন্য বাট আমি কি করে জানবো তুমি এটা শুনে মাঝ রাস্তায় কাঁদতে বসবে??

আয়েশা এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো সত্যি মাঝ রাস্তা কিন্তু যে যার মতোন মলে ঢুকছে বের হচ্ছে,,,তাই আহিল কে বললো

আয়েশা: তুমি,,,তুমি খুব বাজে!! এসব বিষয় নিয়ে কেউ মজা করে নাকি?? ধুর!!

আহিল: এবার যেতে পারি?? আপনার কান্না কাটি শেষ হলে??

আয়েশা: হুহ!! আমার চোখের জল গুলো নষ্ট হলো 😒😒

আহিল : হে ভগবান বাঁচাও আমায়,,

বলেই আহিল আয়েশার হাত ধরে নিয়ে মলে ঢুকে গেলো,,,আর সোজা ফোন শপে চলে গেলো,,,

আয়েশা: ফোন শপে কেনো??

আহিল: ফোন কিনব তাই,,

আয়েশা: কেমন ত্যাড়াবাঁকা কথা বলছে দেখো (মনে মনে) কার জন্য??

আহিল: পছন্দ করো কোন ফোন টা নেবে,,

আয়েশা: আব আমি??

আহিল: হম তোমার ফোন টাতো ভেঙে গেছে আর তোমার ফোন তুমি ছাড়া অন্য কেউ পছন্দ করে কিনুক সেটা তুমি আবার পছন্দ কর না তাই তোমায় নিয়ে আসা,,নাও পছন্দ করো,,,

আয়েশা: এখন ও তোমার আমার পছন্দ অপছন্দ মনে আছে আহিল (মনে মনে) আব,,এখানে তো অনেক দামি দামি ফোন (আহিল কে টেনে আহিলের কানে কানে)

আহিল: হমম তাতে কি হয়েছে??

আয়েশা: আমার ফোন টাতো ওতো দামী ছিলো না,,,এই গুলো অনেক দামী আমার এসব লাগবে না কম দামের ফোন হলেই চলবে,,,নেবো না এতো দামী ফোন,,,

আহিল: জ্যাকের কথা টা এখন ধীরে ধীরে সত্যি মনে হচ্ছে,,,সত্যি আমি ভুল করেছি তোমার সাথে,,আজকেই সব সত্যি গুলো জানাবো তোমায় (মনে মনে)

আয়েশা: কি হলো?? চলো,,

আহিল: চুপচাপ এখানে দাঁড়িয়ে ফোন নেবে,,আমি খুব ভালো ভাবেই জানি তোমার কোন ফোনের শখ,,,(আয়েশার কানের কাছে গেলো আর বললো) তোমার বরের যথেষ্ট ক্ষমতা আছে তোমার সব শখ পুরণ করার,,,

আয়েশা কিছু বললো না মাথা নীচু করে সামান্য হেসে ফোন পছন্দ করতে লাগলো,,,ফোন কেনা শেষে আহিল আয়েশা কে নিয়ে ড্রেস কিনতে চলে গেলো সেখানেও জোর করে আয়েশা কে শাড়ি চুরিদার আর কয়েকটা জিন্স কিনে দিলো যেটা কুর্তি দিয়ে পরবে,,,,কেনা কাটি শেষে আহিল আর আয়েশা যখন মল থেকে বেরালো তখনই আয়েশা একটা আইসক্রিমের ওয়ালা দেখতে পেলো আর আহিল কে বললো,,,

আয়েশা: এই আহিল!! ঐ দেখো আইসক্রিম,,,প্লিজ প্লিজ আইসক্রিম খাবো অনেকদিন খাইনা,,,

আহিল: উমম ঠিক আছে এখানে দাঁড়াও আমি ব্যাগ গুলো গাড়িতে রেখে আসছি,,,

আয়েশা: ওকে,,,তারাতাড়ি আসবে,,

আহিল: হম বাবা তারাতাড়ি আসব,,

আহিল চলে গেলো ব্যাগ গুলো রাখতে গাড়িতে,,,আহিল মনে মনে হাসছে আয়েশার বাচ্চামু দেখে,,আয়েশা বরাবর আইসক্রিম খেতে ভীষণ ভালোবাসে,,,তাই ব্যাগ রেখে আয়েশা কে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য অন্য দিক দিয়ে নিজেই চলে গেলো আইসক্রিম আনতে,,,আহিল জানে আয়েশার পছন্দের ফ্লেভার,,,

কিন্তু আইসক্রিম কেনার পর যে জায়গায় আয়েশা কে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছিল সে জায়গায় এসে আহিল দেখলো আয়েশা নেই,,,

ঐ যে বলে না দুঃখ কষ্ট সহজে যেতে চায় না আর একটু সুখের দেখা পেলেই সেটা মুহুর্তেই চলে যায় ওদের জীবনেও ঠিক এমন ঘটনায় ঘটতে চলেছে,,,

আহিল চারিদিকে পাগলের মতো খুঁজছে আয়েশা কে কিন্তু পাচ্ছে না হঠাৎ আহিলের মনে পরলো মলের পিছনের দিকের রাস্তা টা শুমসাম,,,আয়েশা কে কেউ ওদিক থেকে তুলে নিয়ে যায়নি তো?? আহিলের বিশ্বাস আয়েশা পালাবে না তাই আহিল ছুটে মলের পিছন দিকে চলে গেলো আর যা দৃশ্য দেখলো তা দেখার জন্য আহিল প্রস্তুত ছিলো না,,আহিলের হাতের আইসক্রিম টা ধপ করে মাটিতে পরে গেলো,,,

আহিল: আয়েশাআআআআ!!!!

[ফিরে আসবো আগামী পর্বে 🌹]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here