ডুবেছি_আমি_তোমাতে #লেখিকা_Aiza_islam_Hayati #পর্ব_০৫

0
185

#ডুবেছি_আমি_তোমাতে
#লেখিকা_Aiza_islam_Hayati
#পর্ব_০৫

আহির চেয়ার টেনে বসে।আহনাভের দিকে তাকিয়ে বলে,”এই হচ্ছে সেই আর্কিটেক্ট মিস হায়াতি,যার সাথে আজকে আমাদের মিটিং।তুই আর্কিটেক্ট কে তার সম্পর্কে জানতে চাস নি বলে আমিও জানায়নি।”

“জানতে চাই নি বলে কী তুই জনাবি না?”

“মনে কর এইটা সারপ্রাইজ ছিল।এখন যক্ষার রোগী আমরা কী মিটিং শুরু করতে পারি?”

আহনাভ বিরক্তি মাখা কন্ঠে বলে,”হোয়াট দা ফাউ কথা আহির আমি যক্ষার রোগী??”

“দিস ইজ ভেরি ইম্পর্টেন্ট কথা যেইভাবে কাশা কাশি শুরু করলি।”

লায়ানা আহনাভের বরাবর চেয়ারে বসে বলে,”আমরা তাহলে মিটিংটা শুরু করি।”

আহির মৃদু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।রাফি লায়ানার দিকে কিছু ফাইল এগিয়ে দেয়।লায়ানা ডিজাইন সম্পর্কে আলোচনা শুরু করে।

.
এক ঘন্টা সময় লাগিয়ে মিটিং শেষ করে তিনজন।

“কী খাবেন বলুন?আজ আমার তরফ থেকে ট্রিট।”
লায়ানা কথা শেষ করতেই পাশ থেকে মেয়েলি কণ্ঠে কেউ বলে উঠে,

“আপনারা কী কিছু অর্ডার করতে চান?”

তিনজন এক সাথে মাথা ঘুরিয়ে তাকাতেই লায়ানা বাদে আহির ও আহনাভ যেনো অনেকটা অবাক হয়ে যায়।লায়ানা দাড়িয়ে গিয়ে বলে,”আরেহ বনু আমি তো ভেবেছিলাম তুই আরো লেট করে রেস্টুরেন্ট আসবি।”

আহির দাড়িয়ে বলে,”মুগ্ধ আপনি এইরকম ওয়েটার এর ড্রেস পরে?”

মুগ্ধতা হেসে বলে,”আমার রেস্টুরেন্ট আমি ওয়েটার এর ড্রেস পড়তেই পারি।”

“মানে?”

“আরেহ আহির,এই ব্লু বেরি রেস্টুরেন্টের ওনার হচ্ছে আমার বনু মুগ্ধতা।”

“সেইদিন তো জানলাম উনি একজন সাইকোলজিস্ট আবার এই রেস্টুরেন্টের ওনার বুঝি মিস মুগ্ধ ওয়াও।”

“একটি পেশায় যুক্ত হলে কী অন্য কোনো কিছু করা বারণ নাকি?”

“একদমই না এইযে আমি নিজেই হার্ট স্পেশালিস্ট ডক্টর হওয়ার পর পাশাপাশি বাবার বিজনেসে জয়েন হই।”

আহনাভ বলে,”নিজেদের কাজের পাশাপাশি বাবাদের বিজনেসে যখন লাল বাতি জ্বলে উঠেছিল আমি আর আহনাভ রংধনুর বাকি রং আনতে নেমে পরি।”

লায়না মৃদু হেসে বলে,”আমরা যখন কানাডায় ছিলাম পড়াশোনার পাশাপাশি ঐখানে একটা রেস্টুরেন্ট খুলেছিলাম নাম দিয়েছিলাম ব্লু বেরি। পড়াশোনা শেষ করে দুজনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বারো বছর পর বাংলাদেশ ফিরে এলাম।ফিরেই বনু ভাবলো এইখানেও একটা রেস্টুরেন্ট খোলা যায়।যা ভাবা তাই কাজ।বনু মাঝে মাঝে সময় পেলেই এসে রিসেপশান থেকে শুরু করে সব কিছুতেই সবার সাথে হাত লাগায়।”

” তাহলে কানাডার রেস্টুরেন্ট এর কী হলো?”

“ঐখানে বনুর ম্যানেজার জ্যাক সব সামলাচ্ছে।আমরা তো আর একেবারের জন্য বাংলাদেশ আসিনি।এক গুরুত্ব পূর্ণ কাজ শেষ করার জন্যই এই দেশে আসা।”

আহির ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে বলে,”ওহ ভালোই।মিস মুগ্ধ আমি আপনার রেস্টুরেন্ট টা একবার ঘুরে দেখতে চাই প্লিজ আপনি আমাকে ঘুরে দেখাবেন?”

“আপনার পা তো আছেই নিজেই হেঁটে হেঁটে নিজের চোখ দিয়ে দেখে নিন।”

“সেটা তো আছেই।আপনি ওনার হিসেবে আমার সাথে আসুন।”

“কেনো আপনি কী চোর নাকি যে আপনার সাথে সাথে আমার ঘুরতে হবে এইজন্য যে আপনি কিছু চুরি করে নিবেন?”

“ডাকাতি ও করে ফেলতে পারি বলা যায় না।তাই আমাকে পাহারা দিতে চলুন আমার সাথে।”

“মজা করলাম।ডাকাতি তো আপনি করতে পারবেন না।আপনার মত একজন বড় ব্যাক্তিত্বের মানুষ ডাকাতি করবে এটা তো মানা যায় না তাই না। আচ্ছা চলুন আমার সাথে আজকে আমি ফ্রিই আছি।”

আহির মুগ্ধতার সাথে চলে গেলে আহনাভ উঠে ওদের সাথে যেতে নেয় কিন্তু আহনাভ যেতে পারে না লায়ানা আহনাভের হাত টেনে এনে লায়ানার পাশে বসিয়ে দেয়।আহনাভ চট করে লায়ানার থেকে নিজের হাত ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়া নেয়।লায়ানা আহনাভের হাত শক্ত করে আবার ধরে ফেলে।আবার আহনাভ ছাড়াতে নিলে শক্ত করে হাত ধরে রেখে লায়ানা হেসে বলে,” আরেহ হোয়াইট ডায়মন্ড চুপ করে বসো তো।তোমাকে একটু নয়ন ভরে দেখতে দাও।”

আহনাভ ভ্রু কুচকে বলে,”এই মেয়ে তোমার সমস্যা কী বলোতো আমাকে?

লায়ানা মলিন হেসে বলে,”আমার সমস্যা তুমি।প্রথম দিন তোমাকে দেখেই এক ভালো লাগা অনুভূতি জেগে উঠে মনে।ভাবিনি আবার দেখতে পাবো তোমাকে।কিন্তু ফ্যামিলি ডিনার ডেটে ভাগ্য আবার দেখা করিয়ে দিল তোমার সাথে,সেইদিনই ভেবে নিয়েছি আমার তোমাকেই চাই।রাতে তোমার ভাবনায় আমি ডুবে ছিলাম পুরোপুরি।তোমার প্রতি ভালোলাগা অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে গেলো,তুমি আমার জীবনের এক বড় সর্বনাশ হয়ে এলে আহনাভ,আমি যে তোমাকে নিয়েই ভাবনায় ডুবে থাকি দিনের অধিকাংশ সময়।একেবারে মায়ায় পড়ে যাচ্ছি আমি তোমার।”

আহনাভ তাচ্ছিল্য করে বলে,”এই পাঁচদিনে মায়ায় পড়ে গেলে?এই পাঁচদিনে আমাকে নিয়ে ভাবনায় ডুবে গেলে?আসলে তুমি মোহে জড়িয়ে গিয়েছো হায়া।”

“উফ তোমার মুখে আমার ‘হায়া’ নাম টা কী ভালো লাগে আহনাভ! মোহ বা মায়া যা ইচ্ছে তাই ভাবতে পারো তুমি।আমি তোমার সম্পর্কে সব জেনেই তোমাকে আমার এই মনে জায়গা দিয়েছি।”

আহনাভ নিজের হাত লায়ানার থেকে ছাড়িয়ে কণ্ঠের খাদ বাড়িয়ে বলে উঠে,”তুমি আমার সম্পর্কে কী জানো?সেইদিন বলেছি আমার কাছে একদম আসবে না তুমি কি শুনতে পাও নি।আমার এইসব একদম পছন্দ না।তোমরা মেয়েরা ভালোবাসতে জানো না।আমি যদি আজ একটা গরীব পরিবারের ছেলে হতাম তুমি আমাকে পছন্দ করতে?অবশ্যই করতে না তাই আমার সামনে এইসব বলতে আসবে না।” আহনাভ থামতেই লায়ানা পিজার একটি স্লাইজ আহনাভের মুখে পুরে দেয়।

আহনাভ চোখ বড় বড় করে ফেলে।

লায়ানা বলে,”আমি সব জানি তোমার সম্পর্কে তাই চুপ থাকো।এখন পিজা খাও,আমার ফেভ্রেট পিজা এইটা বুঝলে আমি করো সাথে শেয়ার করি না তাও তোমাকে দিলাম।এইবার বুঝে নাও তুমি আমার কত্ত প্রিয়।”

আহনাভ ভ্রু কুঁচকে মনে মনে বলে,”বেশরম মেয়ে একটা!বাচ্চাদের মত লজিক দিচ্ছে।হাতে পায়ে দেখতেও বাচ্চা। বয়স টাই বেড়েছে শুধু।”

“তুমি কী জানো?”

লায়ানা পিজা খেতে খেতে বলে,”আমি যা জানি তোমাকে কেনো বলবো?আর শুনে রাখো তুমি কানা,বয়রা,লুলা, কালা,গরীব,ভিকারি যাই হয়ে যাও না কেনো আমি তোমাকেই ভালোবাসবো।” লায়ানা খাওয়া বন্ধ করে আহনাভের দিকে তাকিয়ে আবার বলে উঠে,”আর এমন উল্টো পাল্টা গেজ গেজ করে আমার মাথা গরম করবে না একেবারে পিঠের মধ্যে কিল বসিয়ে দিবো বলে দিলাম।”

আহনাভ কপালে ভাঁজ ফেলে বলে,” এই তুমি আমার গায়ে হাত তুলবে?তোমার এত্ত বড় সাহস!”

“ঠিক আছে দেখাচ্ছি আমার কত বড় সাহস।” বলেই আহনাভ কে টেনে আহনাভের পিঠে কিল বসিয়ে দিল।

আহনাভ পিঠে হাত দিয়ে বলে উঠে,”আম্মুইই”

লায়ানা হেসে বলে,”বুইড়া বেডা আম্মু আম্মু করে।আরেহ এইটা ডেমো ছিল আরো সাহস দেখতে চাইলে আরেকটু দেখাই?”

আহনাভ লায়ানার দিকে একদম এগিয়ে এসে লায়ানার চুল টেনে ধরে আউলা ঝাউলা করে দেয়।অতঃপর লায়ানার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দেয়।

লায়ানা আলতো হাতে নিজের চুল ঠিক করতে করতে বলে,” তোমার এই হাসি আমাকে খুব খারাপ ভাবে ঘায়েল করে আহনাভ।”

আহনাভের হাসি উড়ে যায়,মুখে গম্ভীর ভাব টেনে বলে,” তুমি মেয়েটা আসলেই বেশরম।”

.

মুগ্ধতা আহির পাশাপাশি হাঁটছে তাদের মাঝে এক হাত দুরত্ব।আহির বলে উঠে,” মুগ্ধ আপনার নাম মুগ্ধ না হয়ে যদি পারমাণবিক বোম হতো না জোস হতো।আপনি যেকোনো সময় ফুটে যাওয়ার মত একটা মানুষ।”

“আমি সহজে ফাটি না।ফাটব নাকি তা সামনের মানুষটির উপর নির্ভর করে।”

“তাহলে তো সিওর বোম টা তাড়াতাড়ি ফাটবে।”

“আচ্ছা আপনি তো আমার মামা কে চিনেন।আমার মামা আপনার মত বদের হাড্ডির সাথে মিসলো কিভাবে?আমার মামা তো কত ভদ্র মানুষ।”

“আপনি জানেন না আমি অনেক ভদ্র কিন্তু কেউ বুঝতেই চায় না আমি যে ভদ্র।”

“আপনি যে কত্ত ভদ্র আমি তা জানি।আমি কারো মুখের কথায় না চোখে দেখায় বিশ্বাসী।আপনি যে কত্ত বড় বদের হাড্ডি আমি তা ভালো করেই দেখেছি।”

“কী,কবে,কখন দেখলেন?আমি এতোই ভদ্র যে শয়তান আমার পাশে ঘেঁষতে আসলেও তাকে বলে দি ব্রো কাছে এসো না,তুমি আমার কাছে এলার্জি”

“সব এমন ভাবে বলছেন যেনো আপনার থেকে ভদ্র এর কেউ নেই।”

“আপনি আমার মত ভদ্র অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে খুঁজে পাবেন না বুঝলেন।”

“অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে এভাবেও পাওয়া যাবে না কারণ অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে মানুষ খোঁজা যায় না।”

“থাক আপনার কষ্ট করে খোঁজা লাগবে না আমি আপনার পাশেই আছি আমাকে দেখে নিন।”

“আরেহ আমার ভদ্র রে।ভাই এইবার আশপাশ টাও ভালো করে দেখেন নাহলে আবার মামা কে গিয়ে বলবেন আমি আপনাকে ঘুড়িয়ে দেখাই নি।”

আহির হাঁটা থামিয়ে দেয়।আহিরের এইভাবে থেমে যেতে দেখে মুগ্ধতা দাড়িয়ে গিয়ে ভ্রু কুচকে তাকায়।
আহির এক ভ্রু উচু করে বলে,”ওয়ান মিনিট আমি আপনার কোন জন্মের কোন কালের ভাই হই হাহ?”

“এই জন্মের এই কালের ভাই।এই মুখ দিয়ে ভাই আর তুই শব্দ টা একটু বেশি বের হয় আমার কিছু মনে করবেন না।”

“আমি আপনার ভাই এই জন্ম ,আগের জন্ম,ইহকাল পরকাল কোনো কালেই হতে চাই না।”

“কেন ভাই হলে কী সমস্যা? আমার ভাইয়ের বন্ধুরা সবাই আমার ভাই আমাকে তাদের ছোট বোনের মতো আদর করে।আপনি হলে সমস্যা কি?”

“এত্ত ভাই থাকতে আমাকে কেনো ভাই বানাতে চাইছেন।আমি ভাই টাই হতে পারবো না বুঝলেন।”

“আরেহ ভাই হলে সমস্যা কী ।”

আহির কিছু না বলেই হন হন করে হাঁটা ধরে।মুগ্ধতা পিছন থেকে বলে উঠে,”এই এই কোথায় যাচ্ছেন।”

আহির কিছু না বলেই রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যায়। মুগ্ধতা বুঝে উঠতে পারে না আহিরের হঠাৎ এইভাবে চলে যাওয়ার কারণ।

.

মুগ্ধতা আহনাভ,লায়ানার কাছে আসতেই মুগ্ধতার চোখ চড়ক গাছ।লায়ানা আহনাভের দুই গাল টিপে ধরে মুখের মধ্যে ফ্রাইড রাইস পুরে দিচ্ছে আর আহনাভ তার গাল টিপে ধরে রাখা লায়ানার হাত সরানোর চেষ্টায় আছে।আহনাভ বুঝে উঠতে পারছে না লায়ানার শক্তির সাথে সে পেরে উঠছে না কেনো।

মুগ্ধতা হালকা কেশে উঠে।লায়ানা মুগ্ধতাকে দেখে আহনাভের গাল থেকে নিজের হাত হালকা করে নিতেই আহনাভ লায়ানার হাত নিজের গাল থেকে সরিয়ে টেবিল থেকে পানি নিয়ে খেয়ে চট করে দাড়িয়ে ঘাবড়ে গিয়ে বলে,”মুগ্ধ আপ্পি আপনি!আপ্পি আহির টা কোথায়?”

“হঠাৎ কী হলো চলে গেলো।”

“ওহ,তাহলে আমিও আসি।”বলেই আহনাভ বড় বড় পা ফেলে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যায়। রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে পার্কিং সাইডে গিয়ে দেখে তারা দুজন যেই গাড়ি দিয়ে এসেছিল তা নেই।

আহনাভ বলে উঠে,”শা’লা আমাকে রেখেই চলে গেসে,আমাকে নিয়ে গেলি না কেনো?একটা জমের মুখে রেখে গিয়েছে সব কিছুতে জোর জবস্তি করে বেশরম মেয়ে।আমার সাদা গাল টাকে টিপে ধরে টমেটোর মত লাল করে দিয়েছে।মুগ্ধ আপ্পি কী ভেবেছে? আমার মান সম্মান বরবাদ করে দিসে মেয়েটা।বাঁধা দিতে গেলে গুন্ডিদের মত মারামারি শুরু করে।সাংঘাতিক মেয়ে একটা”

আহনাভ তার এসিস্ট্যান্ট তমাল কে ফোন করে গাড়ি নিয়ে আসতে বলে।তমাল আধ ঘন্টার মধ্যে গাড়ি নিয়ে হাজির হলেই আহনাভ তার গাড়িতে করে চলে যায়।

.

অর্ধচন্দ্রের পাশে জল জল করছে অনেকগুলো তারা রাতের এই আকাশ মন ছুঁইয়ে যাওয়ার মত।
বারান্দার দোলনায় বসে মুগ্ধতা,লায়ানা দুজন চন্দ্র বিলাস করছে।মুগ্ধতা মনে মনে ভাবছে,”আহির এভাবে রেগে কেনো গেলো?ভাই বলেছি বলে?এইভাবে রেগে যাওয়ার কী আছে ভাই তো বলেছি।আজব বিরক্ত লাগতেসে এমন রাগ কইরা কী লাভ বুঝিনা ভাই!”

লায়ানা অর্ধ চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলে,” বনু পৃথিবীতে সবাই তো আর এক না বল।সবাই কী টাকার জন্য ভালোবাসে নাকি।জানিস আমি সত্যি আহনাভকে পছন্দ করা শুরু করেছি।এখনও পাগলের মত অতি মাত্রায় ভালোবাসা জেগে উঠে নি তার প্রতি,হয়তো ধীরে ধীরে হবে।কিন্তু তাকে হারিয়ে ফেললে আমি সত্যি পাগল হয়ে যাবো।আমি পাগল হয়ে গেলে মিস সাইকোলজিস্ট মুগ্ধতা আপনি আমার ট্রিটমেন্ট করবেন বুঝলেন।”

লায়ানার সিরিয়াস কথার মাঝে শেষ কথাটা শুনেই মুগ্ধতা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে শুরু করে। হাসা কোনো ভাবে থামিয়ে বলে,” তুই তো এমনিতেই পাগল।তুই হলি আমার হসপিটালের পাগলদের থেকেও বড় পাগল।”

লায়ানা মৃদু হাসে।

মুগ্ধতা বলে উঠে,” এই মাইয়া শুননা আমার একটা হেল্প লাগতো।প্লিজ বনু আমাকে একটা হেল্প কর।”

মুগ্ধতার কোল থেকে মাথা তুলে চট করে বসে পড়ে লায়ানা।বসে বলে,” কী হেল্প?তুই শুধু বলে দেখ ঐ চান মামা কেও এনে দিতে পারবো।”

“তোর চান মামা লাগবে না ঐটা তোর জামাইর জন্য বাঁচিয়ে রেখে দে।বনুনু আমার না মি.আহির এর নাম্বার লাগবে একটু দে না।”বলেই লায়ানার কাঁধ ধরে মৃদু ঝাঁকি দেয়।

লায়ানা তর্জনী তুলে বলে,”ওয়ান মিনিট আমি কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে থাকতে চাই।”

“মজা করিস না প্লিজ ।”

“তুই এমন সব শক দিস না আমি হার্ট এ্যাটাক করে ফেলবো যেকোনো সময়।আরেহ যে কিনা ছেলেদের থেকে একশো হাত দূরে থাকে সে কিনা একটা ছেলের নাম্বার চাইছে তাও আবার আহির এর।”

“এমন রিঅ্যাকশন দিস না সলোম লাগে।আরেহ আমি তো প্রেম করার জন্য নাম্বার চাইছি না।আমার উপরে রাগ করে আছে মাফ চাওয়ার জন্য নাম্বার চাইছি।তুই তো জানিস আমার উপর কেউ রাগ করলে আমার কত্ত বিরক্ত লাগে।”

“কেনো রাগ করেছে?”

“আমি সঠিক কারণ জানি না জানলে তোকে বলবো।”

লায়ানা বারান্দা থেকে ঘরে চলে যায়,বিছানার পাশের মিনি টেবিল থেকে ফোন নিয়ে কিছু একটা করে বলে,” দেখ নাম্বারটা ম্যাসেজ করে পাঠিয়ে দিয়েছি তোকে।তুই মাফ চা আমি ঘুমাতে যাই অনেক ঘুম পাচ্ছে।”

বলেই বিছনায় ধপ করে শুয়ে পড়ে।মুগ্ধতা ঘরে না গিয়ে বারান্দার দোলনায় বসেই নাম্বার ডায়াল করে ফোন লাগায়।অনেক বার রিং হয়ে শেষে টুট টুট করে কল কেটে যায়, মুগ্ধতা আবার ট্রাই করে কিন্তু একই ভাবেই কল কেটে যায়।সময় এখন রাত বারোটা হয়তো আহির ঘুমাচ্ছে হয়তো মুগ্ধতা ভুল সময়ে ফোন দেয়ার ট্রাই করছে এই ভেবে নিজেও ঘুমাতে চলে যায়।

.

“এই অর্ধচন্দ্রের গায়ের দাগের মতো তুমিও আমার মনে এক গাঢ় দাগ কেটে গিয়েছো লিলিমা।তুমি আমার অবস্থা এমন করে রেখে গিয়েছো যে,কাউকে বিশ্বাস করতে পারছি না।ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস আমার উঠে গিয়েছে লিলিমা।শুধু মনে হয় তোমার মত সবাই টাকার জন্যই ভালোবাসবে। ”

বারান্দার কর্নারে রাখা কাউচটিতে বসে আকাশ পানে ওই অর্ধচন্দ্রের দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলছিল আহনাভ।ক্লান্ত চোখ দুটো বন্ধ করে নিল আর উঠতে মন চাইলো না আহনাভের,কাউচে গা এলিয়ে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো।

“এই আহনাভ ভাই তুই কই।” বলতে বলতে আহির আহনাভের ঘরের দরজা ঠেলে ঢুকে এক অন্ধকার ফাঁকা ঘর আবিষ্কার করে।আহির ভ্রু কুচকে মনে মনে বলে,” কই গেলো বেটা?”

#চলবে।

ভুল ত্রুটি হলে আশা করি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here