নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে #ইফা_আমহৃদ পর্ব: ১৩ (বর্ধিতাংশ)

0
248

#নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ১৩ (বর্ধিতাংশ)

“অপূর্ব ভাই, আসলে আমি একটা কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ভুলে গেছি।” চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে আরু।

“কী সেটা? বলার আগেই ভুলে গেলি?” অপূর্ব-র ফিরতি প্রশ্ন। আরুর তার হাতটা রাখল অপূর্ব-র বুকের পাপাশে। রুপার বালা শব্দ করল মৃদু। হাতটা মৃদু ভর প্রয়োগ করতেই অপূর্ব-র হৃৎপিণ্ডের ধুকপুক শব্দটা ঘোড়ার মতো টগটগ করতে ব্যস্ত হলো। ছ্যাকা লাগল বুকে। প্রেমতরঙ্গে নিজেকে ভাসিয়ে আরু কণ্ঠে হয়ে উঠে আসক্ত, “ধুকপুক ধুকপুক ধুকপুক। এই শব্দটা আমায় অগোছালো করে দেয়। মনে হয় আমার স্থান এখানে। ঠিক এখানে। যেই হাড়টা আপনার নেই, সেই হাড়টা আমি। মনে হয়, আমি আপনার বাম পাজরের অধিকারিণী।”

“কীসব বলছিস?”
অপূর্ব পিছিয়ে গেল কদম। আরুর হাতে হাওয়া প্রবেশ করল। অপূর্ব-র ডানহাতটা নিজের বুকে রেখে বলে, “বিশ্বাস না হলে দেখুন। আপনার স্পর্শ আমার স্পন্দন অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।”

আরুর সেই স্পন্দন অপূর্ব অনুভব করতে পারছে। তার সিক্সসেন্স বলছে, এটা অস্বাভাবিক। সে যে মনের ডাক্তার, মনোচিকিৎসক। মনের ভাষা বোঝাই তার পেশা।
মুহুর্তে হাতটা পরিণত হলো কোনো ইট, পাথর বা শক্ত কোনো ধাতুতে। নিজের হাতটা সরানোর ভরটুকু অপূর্ব-র নেই। অব্যক্ত স্বরে বলে, “হাত ছাড় আরু।”

“কেন? আপনি অন্য পুরুষদের থেকে চার ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে বলেছেন। আপনার থেকে নয়।”

বিদেশে অবস্থানরত সময়ে বহু নারীর সংস্পর্শে গিয়েছিল। ‘হাত ধরেছে, জড়িয়ে ধরেছে’ তখন তো এমন অগোছালো অনুভূতির সম্মুখীন হতে হয়নি।

ঝোপঝাড় থেকে বেরিয়ে এসেছে তুর। অপূর্ব-র ভয়ে নদীর তীরেই বসে আছে। শেফালী ও তন্বী অতি নিকটে। তিন সই একত্রিত হয়ে বলে, “অপূর্ব ভাই, আপনি এখানে?”

হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ল অপূর্ব। চেতনা ফিরত এলেই হাত নিজের কাছে টেনে যথাসম্ভব গম্ভীর গলায় হলে, “কয়টা বাজে এখন? চারটা বাজে স্কুল ছুটি হলে বাড়িতে যেতে লাগে পনেরো মিনিট। এখন সময় সাড়ে পাঁচটা। এতক্ষণ এখানে কী করছিস?”

“ভাইয়া, আমরা প্রতিদিন দেরি করেই বাড়িতে ফিরি। আজ একটু বেশি দেরি হয়ে গেছে। নদীর পাড়ের হাওয়া খেতে ভালো লাগে।” তুর সাহস সঞ্চয় করে বলে। পুনরায় প্রশ্ন করে, “নদীর পাড়ে হাঁটতে ভালো লাগে। তাহলে আরু এখানে কী করছে?”

“আমার পা ব্যথা করছিল। তাই যাইনি। এসে দেখলেন না, বসে ছিলাম?” আরু বলে। অপূর্ব-র মন হতে সন্দেহে দূর হয়নি। সামনের দিকে অগ্রসর হতে হতে বলে, “হম, চল। (আরু-কে একান্ত ভাবে বলে) জড়িয়ে ধরে কী জানো বলতে চেয়েছিলি। ঘুমানোর আগ পর্যন্ত সময়। উল্লেখযোগ্য কোনো কারণ না পেলে, ঢেউ খেলা দেখিয়ে যে ইঁদুর তাড়াচ্ছিলি। সেই ইঁদুরের গর্তে আমি তোকে রেখে মাটি চাপা দিয়ে দিবো।”

আঁতকে উঠল আরু। কী করবে ভেবে পেল না। বাংলা সিনেমায় দেখেছে নায়িকা আঘাত পেয়ে স্মৃতিশক্তি লোপ পেলে পরবর্তী আ/ঘা/তে ফিরে আসে। কিন্তু আরু তো ভুলে যায়নি। আচ্ছা অপূর্ব হৃৎপিণ্ডের ধুকপুকানির শব্দে বিস্মৃত হয়েছে কথা, আবার ঐ ঝড় তোলা বুকে মাথা রাখলে মনে পড়বে সেই কথা?

“এনেছিস ক্যাসেট?” ফিসফিসিয়ে বলে আরু। তুর নক টাকতে টিকতে বলে, “কীসের ক্যাসেট?”

আরু উত্তর দিতে পারেনা, কারণ সে জানে না। শেফালী বলে, “এনেছি, আরুর বইয়ের ভেতরে রেখে দিয়েছি।”

আরু ও অপূর্ব মধুর সময়ে অগোচরে লুকিয়ে রেখেছে ঘাসের উপর রাখা আরুর বইয়ের ভাঁজে। কৌতূহল নিয়ে বইয়ের পাতা উলটায় আরু। ক্যাসেটের উপরে লাগানো পোস্টারে নজর যেতেই গলা শুকিয়ে গেল। অপূর্ব-কে খেয়াল না করে আচমকা বলে ফেলে, “ছিঃ, এগুলো কী এনেছিস তোরা?”

অপূর্ব-র কদম থেমে গেল। ঘাড় কাত করে তাকাল চারজনের দিকে। আরুর মুখ চেপে ধরেছে তিনজনে। ডাগর ডাগর চোখ করে কেবল চেয়ে আছে। বলে নিজেও নির্বোধ হলো আরু। থমথমে গলায় বলে, “তোরা ওর মুখ চেপে আছিস কেন?”

পরক্ষণে হাত ছেড়ে নতজানু হয়ে গেল দুই জোড়া কিশোরী। অতঃপর অপূর্ব বলে, “মাত্র কী বললি? কী এনেছিস তোরা?”

তন্বী দাঁড়াল না। অপূর্ব-কে অতিক্রম করে সর্বশক্তি দিয়ে ছুটে গেল। অপূর্ব চাইলে ধরতে পারত হাত, কিন্তু অচেনা অজানা মেয়েকে স্পর্শ করা বেঠিক। প্রয়াসের এনে দেওয়া চানামুঠ দেখিয়ে বলে, “এগুলোর কথা বলেছে। আসলে আরু খায়না তো তাই।”

আপাদমস্তক চেয়ে থেকে বলে, “তোদের তিনটাকে আমার বিশ্বাস হয়না। সামনে সামনে এগো।”

মাটির রাস্তা সরু হওয়াতে তিনজনে এক লাইনে হাঁটতে পারছে না। ধাক্কা লাগছে। দুপাশের ঝোপঝাড়ের মাঝে সাপ থাকা‌ অবাস্তব বিষয় নয়। হাঁটার সময় সামনে পেছনে যাওয়া আরুর বামহাতটা নিজের মুঠোয় নিয়ে নিল অপূর্ব। কিয়ৎক্ষণ পূর্বের অনুভূতি সম্মুখীন হলো সে। মাগরিবের আযানে মুখরিত হচ্ছে। গলায় প্যাঁচিয়ে রাখা ওড়নার শেষ কোণাটা আরুর মাথা তুলে দিয়ে বলে, “আযান দিচ্ছে অথচ দেঙ্গি মেয়েরা মাথায় কাপড় না দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।

সুন্দরনগরে সূর্য ডুবে মৃদু অন্ধকারে আবৃত গ্ৰাম। আরু দিঘি থেকে ডুব দিয়ে কলতলায় গেছে পোশাক পালটাতে। শেফালী ও তুর রাত নেমে আসার কারণে হাতমুখ ধুয়ে পোশাক পালটে নিয়েছে আরও আগে। সাঁতার না জানার দরুণ কলতলার উদ্দেশ্য এগোল অপূর্ব। টিনের দরজাটা ফাঁক করে একপা বাড়াতেই থমকে‌ গেল অপূর্ব। আরুকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে তার গলা শুকিয়ে এলো। আরু উলটো হয়ে দাঁড়ানো। দ্বি মুহুর্ত একধ্যানে তাকিয়ে থাকার পর যখন চেতনা ফিরে এলো সময় অপচয় না করে দৃষ্টি সরিয়ে নিল। দরজা তখনও অপূর্ব-র হাতে‌ বন্দি। ছেড়ে দিতেই খ্যাক খ্যাক শব্দে ভিড়ে গেল। আরু সেই শব্দ শুনে বলে উঠে, “কে এখানে?”

অপূর্ব জবাব দিল না। উলটো পথে অগ্রসর হলো। আজ সে আর কলতলায় আসবে না। প্রয়োজনে মায়ের টেনে রাখা পানি দিয়ে হাত মুখ ধুবে।

অপূর্ব ঘরে যেয়ে দেখল, বাড়ির গৃহিনীরা তৈরি হয়ে নামছে ঘর থেকে। বৈঠকখানায় বসে টিভি দেখছে শেফালী ও তুর। অপূর্ব সন্দিহান গলায় বলে, “তোমরা সবাই কোথায় যাচ্ছ?”

অনিতা চাপা গলায় বলে, “পানি আনতে গিয়ে পড়ে পারুল কোমরে ব্যথা পেয়েছে। ওকে দেখতে যাচ্ছি সবাই।”

“আরু যাবে না?” অপূর্ব-র ফিরতি প্রশ্ন। অনিতা সাজিয়ে রাখা উত্তরটা দিলেন, “না, ওকে নিয়ে গেলে সব কাজ ওকে করতে হবে। গিয়ে দেখি, প্রয়োজনে একটা কাজের লোক ঠিক করে দিবো। কিন্তু আরুকে দেওয়া যাবে না। তুইও আরুকে বলিস না।”

অপূর্ব সায় দিল। আরু নিজের জামাটা নিগড়াতে নিগড়াতে এলো। অপূর্ব-র মতো সেই প্রশ্ন করে, “কোথায় যাচ্ছো তোমরা?”

“একটু হাঁটতে যাচ্ছি।” অনিতার হাস্যোজ্জ্বল জবার। আরুও বায়না ধরে তাদের সাথে হাঁটতে যাওয়ার। তুর ও শেফালীর জন্য অসফল হয় আরু। তিস্তা শরীরের অসুস্থতার বাহানা দিয়ে রয়ে গেল সুজনের জন্য। সুজনকে চাচার কথাটা বলতে হবে।

সুন্দরনগর গ্ৰামে একমাত্র সাত ভাই চম্পা নিবাসে বিদ্যুৎ রয়েছে। চেয়ারম্যান বাড়ি বলে কথা, অস্বাভাবিক কিছু নয়। শেফালী ল্যান্ডফোনে ডায়াল করে বাড়ির পরিবেশ জানায় তন্বীকে। কিছুক্ষণ পর তন্বী এলো। তিস্তা তখন সুজনের ঘরে কথায় সাম্পান ওয়ালার সাথে ব্যস্ত কথায়। আরুর বইয়ের ভাঁজ থেকে ক্যাসেট এনে চালু করতেই আরু উঠে দাঁড়ালো। করুণ গলায় বলে, “আমাকে ছেড়ে দে-না, আমি এইসব দেখতে পারব না।”

“চুপ থাক, বিয়ের পর বর যখন জোর করে দেখাবে তখন দেখতে পারবি ঠিকই। এখন তোর বাহানা।” তুর বলে।

“তোকে কে বলেছে, বর বিয়ের পর এগুলো দেখায়?” কৌতূহলী কণ্ঠ আরুর।

“নাইনে ফেল করা মিতু বলেছে। ফেল করার পর চাচা তো ওকে জোর করে বিয়ের পিরিতে তুলে দিয়েছে। বিয়ের পর না-কি রোজ এগুলো দেখাতো। শুনে আর থাকতে পারলাম না। কবে না কবে বিয়ে করব। চুপচাপ দেখ।” বলেই দেখতে মন দিল তন্বী। সবাইকে অনুসরণ করে আরুও টিভির পর্দায় চোখ বুলিয়ে নিল। পরক্ষণে অস্বস্তিতে কুঁচকে এলো পল্লব।

আরুকে এই অবস্থা থেকে রক্ষা করতে আগমন ঘটল অপূর্ব-র। পায়ের শব্দ শুনে ব্যাকুল হয়ে উঠল তুর। চ্যাঁচিয়ে বলে শেফালীকে “তোকে আমি দরজা বন্ধ করতে বলেছিলাম। করেছিস?”

নক কাটতে কাটতে শেফালী বলে, “এই যা ভুলে গেছি। কে আসছে বল-তো।”

“বারণ করেছিলাম, শুনলি না। এবার কি হবে?” আরু বলে।

“থাকবি তোরা, মনে হয় তিস্তা আপু এসেছে। তিনি ছাড়া বাড়িতে আর কেউ নেই। আমি দেখছি।” বলতে বলতে দরজার দিকে অগ্রসর হলো তুর। পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকিতেই তার ধারণা ভুল প্রমানিত হলো। তিস্তা নয়, তিয়াস ও অপূর্ব এসেছে। তিয়াস শহরে গিয়েছিল চাকুরিতে, কিন্তু অপূর্ব যে মৃধা বাড়িতে গিয়েছিল। তুর নিচু অথচ উদ্বিগ্ন গলায় বলে, “টিভি বন্ধ কর তাড়াতাড়ি। অপূর্ব ভাই ও তিয়াস ভাই এসেছে।”

বলা মাত্র সবাই টিভি বন্ধ করতে ব্যস্ত হয়ে গেল। রিমোট খুঁজে পাচ্ছে না। রিমোট খুঁজবে না-কি ক্যাসেট খুলবে বুঝতে পারছে না। চট করে তুর বুদ্ধিমান হয়ে উঠল। প্ল্যাকের সকেট খুলে ফেলল। অতঃপর সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। ততক্ষণে তিয়াস ও অপূর্ব ঘরে প্রবেশ করেছে। হাতে নতুন ফোনের প্যাকেট। সদ্য কিনে আনা নিজের বাটন ফোনটা বের করে চার্জে দিতে দিতে বলে, “তোর ফোনের মতো স্মার্টফোন কিনতে চেয়েছিলাম। রাজধানী ছাড়া পাওয়া যাবে না।”

“এটা ফেরার সময় নিয়ে এসেছি। তুই যদি তখন বলতিস, তোর জন্যও নিয়ে আসতাম। ফেলেও যা দাম চাইবে।” অপূর্ব বলে। প্লাকে চার্জার দেওয়া পরেও সংযোগ আসছে না দেখে বিভ্রান্ত হলো তিয়াস। লাল রঙের তীক্ষ্ণ আলোটা প্ল্যাকে জ্বলছে না দেখে সন্দিহান হয়ে সকেটের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করল। অতঃপর বলে, “এই সকেটটা কেন খুলেছিস?”
তিয়াস বাড়িতে ফেরার আগে তার সদ্য কেনা নতুন ফোন দিয়ে অপূর্ব-র ফোনে কল করে সিস্টেম পরীক্ষা করছিল। তখনই জানতে পারে, আহসান পরিবার পারুলকে দেখতে যাচ্ছে। মহিলামহলকে মৃধা বাড়িতে পৌঁছে অপূর্ব-কে ফিরে আসতে বলে, কারণ তিয়াস নিজেও মৃধা বাড়িতে যাবে। পোশাক পালটাতে বাড়িতে এসেছে। সকেটটা বোর্ডে দিতেই তন্বী এক দৌড়ে বেরিয়ে গেল। তিনবোন একসাথে মাথায় হাত দিল।
অনাকাঙ্ক্ষিত গোঙানির শব্দ শ্রবণ হতে তিয়াস চার্জের পিন লাগিয়ে বলে, “কীসের শব্দ হচ্ছে রে?”

অপূর্ব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে টিভির সেই দৃশ্য মস্তিষ্কে ধারণ করছে। নেত্রপল্লব একবারের জন্যও ফেলছে না। দাঁতে দাঁত চেপে আছে। রোষের সাথে খুঁটিটা চেপে ধরে। তুর সৌজন্য হেসে ছুটে গেল। তিয়াস টিভির স্ক্রিনে তাকিয়ে নির্বাক হয়ে গেল। চক্ষু তার চড়কগাছ। অতঃপর বলে, “ছিঃ, এইসব কী ছেড়েছিস?”

আরু বেতের সোফার নিচে উবুড় হয়ে আছে। শেফালী একাই নড়তে পারে না। অবিলম্বে চ/ড় বসিয়ে দিল তিয়াস, “শেফু, এইসব টিভিতে এলো কীভাবে? ক্যাসেট পেয়েছিস কোথায়?”

শেফালী নতজানু হয়ে রইল। তিয়াস আরও কয়েকটা চড় বসাতেই ক্রন্দনরত অবস্থায় বলে, “আমি কি একা কিছু করেছি না-কি? তুর তো সায় দিয়েছে।”

অপূর্ব নিবৃত্ত কণ্ঠে বলে, “তুই কেন সায় দিলি? পাই একবার তুরকে। তোদের তিনজনের খবর আছে। (তিয়াসকে উদ্দেশ্য করে) তাড়াতাড়ি পোশাক ছেড়ে আয়। ওনাদের আনতে যেতে হবে তো।”

তিয়াস মাথা নেড়ে চলে গেল ঘরের দিকে। শেফালী তার পেছনে পেছনে ছুটল। তিয়াসের হাত ধরে বলে, “আমি ভুল করে ফেলেছি। আমি আর জীবনেও ঐসব দেখব না। প্লীজ রাগ করো না।”

“হম। যা এখন।”

“শোনো না?” শেফালীর আবদারে দাঁড়িয়ে যায় তিয়াস। উত্তরের আশায় চেয়ে থাকে। পায়ের টাকনুতে ভর দিয়ে তিয়াসের সমান হওয়ার প্রচেষ্টা করে শেফালী। কিঞ্চিৎ সম্ভব হয়। নাকে সংস্পর্শে নাক এনে প্রেমপূর্ণ কণ্ঠে বলে, “আমি আপনাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি তিন হাঁস ভাই। আপনি যদি আমার উপর রাগ করে থাকেন। আমি সহ্য করতে পারিনা।”
আলতো ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরত্ব বাড়াল। ঠাটিয়ে চ/ড় বসিয়ে দিল। অতঃপর তেজস্রী গলায় বলে, “কতদিন তোকে বলেছি, আমার সাথে এইসব কথা বলবি না। তুই শুধুই আমার বোন। আমি শুধু সুমিকে ভালোবাসি। বের হ আমার ঘর থেকে।”

“আপনি আমাকে শুধু শুধু মা/র/লেন। আমি আপনাকে অ/ভি/শা/প দিচ্ছি, সুমিকে নিয়ে আপনি একদিনও সংসার করতে পারবেন না।” ক্রন্দনরত অবস্থায়।
কিয়ৎক্ষণ পূর্বের চ/ড়ে আঘাত থাকলেও অভিমান হলো এখন। ছুটে চলে গেল ঘরে। দরজাটা ভিড়িয়ে কেঁদে উঠল শেফালী।
_
শেফালী ও তিয়াস দৃষ্টি আড়াল হতেই অপূর্ব বেতের সোফার পেছনে গিয়ে দাঁড়াল। গলা খাঁকারি দিয়ে বলে, “তুই কি বের হবি আরু, না-কি আমি বের করব? আমি জানি তুই এখানে লুকিয়ে আছিস।”

আরু কচ্ছপের গতিতে বের হলো। তখনও টিভির পর্দায় চলছে সেই দৃশ্যগুলো। দুহাতে গাল ধরে করুণ গলায় বলে, “বিশ্বাস করুন, আমি দেখিনি। আমি শুধুই বসে ছিলাম।”

“অপরাধ করা আর সহ্য করা, সমান” হাত ঘুড়িয়ে বেতের সোফার উপর বসে আরুকে নিয়ে। চঞ্চল আরু ইদানীং অপূর্ব-র স্পর্শে আজকাল বোকা হয়ে যায়। দিশেহারা হয়ে উঠে। লজ্জায় তার চোখে জল উপস্থিত হয়। তবুও অপূর্ব-র ধমকানিতে চেয়ে থাকে অপলক। অপূর্ব হাসে। আরুর চোখ মুখের লালচে ভাবটা নজরে আসতেই ছ্যাত করে উঠে অপূর্ব-র অন্তঃকরণ। রিমোট দিয়ে টিভি বন্ধ করে আরুর মাথাটা বুকে চেপে ধরে বলে, “তোর এই মুখের ভঙ্গিমা আমাকে জানিয়ে দেয়, তুই কেমন‌। ক্ষমা করে দিলাম।”

লজ্জা, অস্বস্তি ও অভিমানে মুখ তুলে চাইল না আরু। আরুর চিবুকে হাত রেখে ঈষৎ উঁচু করে আদুরে অপূর্ব শুধাল, “রাগ করে ছিলিস কেন?”

“আপনি আমার পিঠে আঁচড় দিয়ে রক্ত জমাট করে ফেলেছিলেন তাই।” উদাসীন আরুর অভিমানী কণ্ঠ। অপূর্ব অপ্রসন্ন হয়। আদরে মাখা গলা আরও আদুরে করে বলে, “তাই? আমি যে তখন হামি দিলাম তার বেলায়? আঘাত করলেই কথা বলা বন্ধ, আদর করলে উলটা কেন?”

“আপনি তো কপালের মধ্যিখানে হামি দিয়েছিলেন, বুঝব কীভাবে?” আরুর অস্বস্তির মাত্রা বাড়িয়ে অপূর্ব একটু নির্লজ্জ হলো, “তাহলে যেখানে আঘাত করেছি, সেখানে দেই। পেছনে ফের।”

আঁতকে উঠল আরু। এই অজপাড়া গাঁয়ে হয়তো স্বামীও তার স্ত্রীকে এরুপ মন্তব্য করেনা, লজ্জায় জড়সড়ো হয়ে বলে, “ছিঃ!”

“ছিঃ কীসের? তোর এই গ্ৰামে কেউ না বললেও, বিদেশে এসব সাধারণ বিষয়। মেয়েরা বিয়ে না করে লিভিং করতে চায়। আমার বান্ধবী সামিরা। আমাকে বলেছিল, তার সাথে লিভিং-এ যেতে। দেশে আসার আগে লিভিং শেষ করে অন্য একজনের সাথে পুনরায় লিভিং-এ যাবে।”

“লিভিং কী?”

“বিয়ে না করে বিবাহিতদের মতো থাকা।” অপূর্ব-র উত্তরে আরু বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। চোখমুখ কুঁচকে ঘরের দিকে যাওয়ার প্রয়াস করতে অপূর্ব বলে, “বালিশের নিচে তোর জন্য একটা প্যাকেট আছে।”

অপূর্ব সিডির ভেতর থেকে ক্যাসেট বের করে চূর্ণ বিচূর্ণ করে ফেলল। মৃদু কেঁপে উঠে আরু। উঠে ছুটে ঘরে দিকে গেল আরু। বালিশের নিচ থেকে ব্যাগটা নিয়ে বুকে আবদ্ধ করে নিল, “অপূর্ব ভাই, আপনার মতো করে কেউ আমাকে বোঝে না।
আপনি লিভিং-এ ছিলেন? এর শা/স্তি আপনাকে পেতে হবে। আগামীকাল সকালে যদি এর শাস্তি আমি না দিতে পারি, তবে আমার নাম আরু নয়, গরু।”

আরুর অবুঝ মন আ/সা/মি বানিয়ে দেয় অপূর্ব-কে।

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

Page:
https://www.facebook.com/profile.php?id=100092431226303

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here