নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে #ইফা_আমহৃদ পর্ব: ১৪

0
224

#নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ১৪

অপূর্ব ভাই উবুড় হয়ে গাঢ় নিদ্রায় ব্যস্ত। দিঘি কিনারা থেকে একটা কাঁকড়া ধরে এনেছে আরু। পানি ছাড়া কাঁকড়া ছয় ঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারে বলে আরুর কষ্ট কম হলো। দুহাত দিয়ে কাঁটাযুক্ত হাত ধরা ছিল। ধীরে ধীরে বিছানার কর্ণারে রেখে নিঃশব্দে পা বাড়ল আরু। রহস্যপূর্ণ হাসি দিয়ে আনমনে বলে, “বিয়ে না করে লিভ-ইন সম্পর্কে জড়ানোর খুব শখ না আপনার। আজ এই কাঁকড়া আপনার মন থেকে চিরতরে লিভ-ইন সম্পর্কে জড়ানোর শখ ঘুচিয়ে দিবে।”

সকাল বেলা ঘুম থেকে জেগে নিমপাতা দিয়ে দাঁত মাজতে মাজতে দিঘির পাড়ে গিয়েছিল আরু। তখনই কাঁকড়াটাকে দেখতে‌ পায়। অবশ্য রাতে ঘুমানোর সময় পরিকল্পনা করেই রেখেছিল।
__
আরু মামিদের সাথে রান্নাঘরে বসে আছে। আজ শুক্রবার। স্কুল বন্ধ। তাই চারবোন একসাথে বসে আছে। স্কুল থেকে দেওয়া সরকারি বিস্কুট দিয়ে রং চা খাচ্ছে সকলে। ভোরে রাখাল চাচা বাড়িতে ফিরে গেছে। তাই দুধ ধোয়ানো হয়নি। ফলস্বরূপ আজ দুধ নেই বাড়িতে। কিয়ৎক্ষণ পর তিয়াস ও অপূর্ব এসে যোগদান করে। অপূর্ব-র পরনে লুঙ্গি ছাড়া। নগ্ন পিঠে রক্ত জমাট বেঁধে আছে। সৃষ্টি হয়েছে ক্ষতের। উপর তৈলাক্ত মলম লাগানো। উপস্থিত সবাই স্তম্ভিত হয়ে যায়। অনিতা উদ্বিগ্ন হয়ে বলে, “অপু তোর বুকেপিঠে এগুলো কীসের ক্ষত?”

“কাঁকড়ার। ঘুমের মাঝে মনে হচ্ছে, পিঠ কেটে নিয়ে যাচ্ছে কিছুতে। প্রথমে ভেবেছি তোমরা কেউ। তখন তিয়াস দেখাল কাঁকড়া। অনেক কষ্টে ছাড়িয়েছি।”

“শোবার ঘরে কাঁকড়া, কী বলিস?”

“হ্যাঁ চাচি। তিয়াস তো বলল ওটা কাঁকড়া।”

আরু নতজানু হয়ে চায়ে চুমুক দেয়। উক্ত কাজটি আরুর দ্বারা সম্পন্ন হয়েছে, সে সম্পর্কে অবগত অপূর্ব। ক্ষতগুলোতে হাত বুলিয়ে বেদনাক্রান্ত কণ্ঠে বলে, “পিঠের সাথে চেপে ছিল। অনেক কষ্টেও ছাড়াতে পারিনি। তখন মনে হচ্ছিল প্রাণপাখিটা উড়ে যাচ্ছে।”

চায়ের কাপটা তৎক্ষণাৎ ঠেলে রাখে আরু। সামনে রাখা বড় পাত্রটা নিয়ে অবনত কণ্ঠে বলে, “মামি তখন তো বললে, অপূর্ব ভাইয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যাবে। চাচা না-কি ছুটি নিয়ে গেছে। মিষ্টিও তো বানাতে হবে। আমি একটা কাজ করি, দুধ দোহন করে নিয়ে আসি।”

উপস্থিত প্রত্যেকে স্বাভাবিক ভাবে ব্যাপার নিলেও অপূর্ব-র ক্ষেতে ব্যতিক্রম, পরিচিত হলো আরুও অসাধারণ একটি গুণের সাথে। তদানীং পাত্র নিয়ে গোয়ালের উদ্দেশ্যে অগ্ৰসর হয়েছে আরু।

আজ কুদ্দুস রাখাল আসেনি। সকালে গোয়াল আবর্জনাশূন্য করে নিজ সংসারে প্রত্যাগমন করেছেন। অপরাহ্ণের পূর্বেই পুনরায় যাত্রা শুরু করবেন।

আহসান নিবাসে ছয়টা গোরু। তার মধ্যে পাঁচটা দুধ দেয়, বাছুর রয়েছে বারোটা। আরু বাছুর সরিয়ে দিয়ে সংগ্রহ করতে ব্যস্ত হয়ে উঠল। একে একে চারটা গোরুর দুধ সংগ্রহ করে পঞ্চম গোরুর কাছে পৌঁছাতেই হাজির হলো বাহিনী। অপূর্ব পাত্রে অবলোকন করে ভ্রু কচকালো। পাঁচ সেকেন্ড আরুর কাজের গভীর দৃষ্টি মস্তিস্কে বন্দি করে বলে, “আরু সর, আমি সংগ্রহ করছি।”

“না আমি পারব। এমনিতেই আপনার দেহে পীড়া। গোরুতে পদাঘাত করলে হিতে বিপরীত হবে।” নেতিবাচক জবাব দিয়ে আরুর নিজের কাজে ব্যস্ত হলো। অপূর্ব স্থির রইল না। টেনেহিঁচড়ে আরুকে সরিয়ে নিয়ে কাজটি করতে বসল। আরুর মুখের কথা মুখে সীমাবদ্ধ রইল না, তিন সেকেন্ড পর পদাঘাত পড়তে বিলম্ব হলো না। চিত হয়ে গোয়ালে পড়ে। উপস্থিত সবাই হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। কিঞ্চিৎ হাসল আরু। অপূর্ব-কে টেনে তুলে লক্ষ্য করল বক্কে। গোরুর পায়ের বিষ্ঠার ছাপ অপূর্ব-র বুকেই শুধু নয়, সারাদেহে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিশ্রী গন্ধ। আরু কলতলার দিকে অগ্রসর হতে হতে তুরকে উদ্দেশ্য করে বলে, “দুধগুলো নিয়ে মামিকে দে। আর বলিস ভিখারি এসেছে। দুমুঠো চাল দিতে।”

প্রথমদিনের অপূর্ব-র উক্তিটিকে কটাক্ষ করে বলেছে, তাতে সন্দেহ নেই। আরু হাত ধুয়েছে, অপূর্ব গোসল সেরে নিয়েছে। অনিতা চুল হলুদ নিয়ে আরুকে পাঠাল অপূর্ব-র ঘরে।
অপূর্ব জানালার শিক ধরে রাজহাঁস দেখছে। সিল্ক চুলগুলো ভেজা, টুস টুস করে ঝরছে পানি। লুঙ্গি পরে রোদে বসেছে।

মৃদু স্বরে বলে, “আসব।”
অপূর্ব না তাকিয়ে জবাব দেয়, “আয়।”

আরু ঘরে প্রবেশ করে চুল-হলুদের মিশ্রণের পাত্রটা বিছানায় রাখে। অনিতা বাটিটা অপূর্ব-র কাছে পৌঁছে দেওয়ার আদেশ করেছে, কিন্তু আরু সেখানে ক্ষান্ত থাকতে চায় না। নিজের দেওয়া ক্ষতটা স্পর্শ করার স্পৃহা। নিশ্চল আরুকে দেখে মুখ খুলে অপূর্ব, “রেখে যা, আমি লাগিয়ে নিবো।”

একপা, দুইপা, তিনপা, চারটা.. গুনে গুনে দরজা পর্যন্ত গিয়ে পিছু ফিরে তাকায়। ফাঁকা ঢোক নেমে যায় গলা বেয়ে। ইতস্তত করে‌ বলে, “আমি লাগিয়ে দেই?”

“খুব ব্যথা করছে আরু। মনোচিকিৎসক না হয়ে ম্যাজিশিয়ান হলে ভালো হতো। এক নিমেষে নিজের ক্ষতটা সারিয়ে ফেলতাম।”‌ করুণ শোনাল অপূর্ব গলা। আরু থেমে নেই, বাটিটা নিয়ে অপূর্ব মুখোমুখি বসে। ডানহাতের চারটা আঙুলের তলে মেখে লেপ্টে দিল অপূর্ব-র ক্ষতে। জ্বলে উঠল স্থানটা।‌ মৃদু আর্তনাদ করে‌ আরুর হাতটা চেপে ধরে অপূর্ব। ছলছল চোখের তারা। আরু আশ্বাস দেয়, “একটু সহ্য করুন প্লীজ। এটা লাগালে কিছুক্ষণের ভেতরে জ্বালা কমে যাবে।”

আরু যত্নসহকারে ক্ষতগুলোতে চুল-হলুদের মিশ্রণ লাগিয়ে দেয়। অপূর্ব ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠেছিল আর আরু ঠিক ততবার গুনেছিল; এক, দুই, তিন, চার.. উনিশ। আরুর চোখ অশ্রুতে পূর্ণ হয়ে এলো। কাজটি শেষ হতে এক মুহুর্ত না থেমে সর্বশক্তি দিয়ে ছুটে গেল। অপূর্ব হেসে বলে, “আমি জানি, আমার বিছানায় তুই কাঁকড়া ছেড়েছিলি। কিন্তু কেন? আবার আমার আঘাতে কষ্টই বা কেন পাচ্ছিস?”

নদীতে পা ঝুলিয়ে বসেছে আরু। নদীটা পাড় হলেই তাদের বাড়ি। এখানে থেকে কাউকে কষ্ট দেওয়ার মানেই হয়না। চকিতে নামল নদীতে, অতঃপর থামল। এগোল না। নদীর তীরে দীর্ঘক্ষণ পা ডুবিয়ে বসে থাকল। নদীর তীরে তিনটা কাঁকড়া নজরে আসতেই ডান হাত বাড়িয়ে বাধা দিল তার গমনপথে। অতঃপর তিনটা কাঁকড়া ক্ষতবিক্ষত করল আরুর হাত। টলমলে চোখ বন্ধ করে দাঁতে দাঁতে চেপে সহ্য করে ঊনিশটা আঘাত। অতঃপর হাত ঝেড়ে কাঁকড়া ফেলে দিল। রক্তগুলো চুইসে চুইসে পড়ছে নদীতে। লাল রঙটা নিঃশেষ হয়ে উঠছে। প্রেমপূর্ণ কণ্ঠে বলে, “আপনাকে দেওয়া কষ্টগুলো আমি নিজে অনুভব করার চেষ্টা করলাম অপূর্ব ভাই।
_
ইমদাদ হোসেন মৃধা ঢাকা থেকে ফিরেছেন। ছেলে-মেয়েদের জন্য এত এত খাবার নিয়ে এসেছেন। এনেছেন আরুর পছন্দের পদ্মার ইলিশ। শ্বশুর বাড়ির জন্য এনেছেন মিষ্টি, পানসুপারি ও ফলমূল। তাকে দেখে আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত হয়ে গেলেন অনিতা। এক গ্লাস লেবুর শরবত দিয়ে আরও কিছুর তোরজোর করার চেষ্টা করতেই ইমদাদ হোসেন মৃধা বলেন, “ভাবী দুপুরের সময় এসেছি, পারলে দুমুঠো ভাত দাও। খেয়ে আরুকে নিয়ে রওনা দেই।”

“আরুকে নিয়ে যাবি?” মোতাহার আহসানের প্রশ্ন। মাথা নেড়ে ইমদাদ তার উত্তর জানাতেই অনিতা টঠস্ত হয়ে টেবিল সাজাতে লাগলেন, বংশের একমাত্র জামাতা বলে কথা।
শেফালী ও তুর ডাকতে গেল আরুকে। আরু ওদের ঘরে শুয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে আছে, যদিও একটু বসন্তের ছোঁয়া লেগেছে।
“তুই কি গোসল করবি না আরু?” তুরের প্রশ্নে আরু জবাব দেয়, “না-রে। ভালো লাগছে না।”

পীড়াপীড়ি করেও আরুকে সিদ্ধান্ত থেকে টলাতে পারেনি তুর বা শেফালী। অগত্যা যেতে হয় তাদের। ইমদাদ বিদেশেও গেছেন বেশ কয়েকবার। তার মাধ্যমেই অপূর্ব-র জন্য পিঠা প্রেরণ করতেন পারুল। সম্পর্ক তাদের মিষ্টি মধুর। অনিতাও এলেন ফিরে। চিন্তিত ধারায় বলেন, “আরুর কী হলো, কেন জানে? কতবার ডাকলাম আসল না।”

অপূর্ব-র খাওয়া শেষের পথে তখন। অবশিষ্ট খাবার এক লোকমায় মুখে তুলে কোনোরকম হাত ধুয়ে পা বাড়াল বোনদের কক্ষের দিকে। আরু পিঠ দেখিয়ে শুয়ে আছে। অপূর্ব বাজখাঁই গলায় বলে,

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]
রেসপন্স করার অনুরোধ রইল 💚
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

Page:
https://www.facebook.com/profile.php?id=100092431226303

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here