#বৃষ্টিস্নাত প্রেমের গল্প
#পর্ব-৩৩
#লেখনীতে-আসমিতা আক্তার ( পাখি )
“যে আপনাকে নিয়ে গেছিল সে কোথায়?
” মারা গেছেন।
কষ্ট অনুভূত হল হুরের।পরমুহুর্তে মনে পড়ল রুদ্ধের বাবার সাথে আসা সেই মহিলাটির কথা। জিজ্ঞেস করল,
“আর আপনার বাবার সাথে আসা সেই মহিলাটি?
গা দুলিয়ে হাসলো রুদ্ধ।বিদ্রুপের স্বরে বলল,
“আমার মাকে দেয়া ধোকার সাজা সে লোকটি পেয়েছে। যে মহিলার কারণে তিনি আমার মাকে ছেড়েছেন,সেই মহিলাই তাকে ছেড়ে গেছেন।তার কর্মের সাজা পরকালে পাওয়ার আগেই ইহকালে পেয়ে গেলেন।
“আর আপনার বাবার সাথে আশা ছেলে মেয়ে দুটো কে?
কিছুক্ষণ স্তব্ধ রইল রুদ্ধ। চটে গিয়ে উত্তর দিল,
“ওই ছেলেটা আমার সৎ ভাই।
ভাবুক হয়ে হুর বলে,
” আর মেয়েটি?
আবারো কিছু সময় মৌন থাকে রুদ্ধ ।নিজেকে ধাতস্থ করে বলে,
“আমার কাজিন। ছোট চাচার মেয়ে। তারা এখন কেউ ই বেঁচে নেই। তাই সে বাবার সাথেই থাকে।
আর প্রশ্ন করে না হুর। এই মুহূর্তে রুদ্ধকে প্রশ্ন না করাই ভালো মনে করল সে।রুদ্ধের চুল টানতে টানতে এক সময় আখি পল্লব বন্ধ করে নিল।
—————————
পরদিন সকাল…
রুদ্ধদ রেডি হয়ে নিচে নামছে। অনেকক্ষণ যাবত হুরকে তার চোখে পড়ছে না। এতে রাগ উঠে যাচ্ছে। ঘুম থেকে উঠার পর একবারও বউয়ের দর্শন সে পায়নি।তাই মেজাজ কিছুটা চটে আছে। ড্রয়িং রুমে এসে দেখল হুর সেখানেও নেই। রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিল। ফুলে উঠল হাতের এবং গলা, কপালের রগ। কয়েকটা নীল রংয়ের রগ ও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখলো না সে। চিল্লিয়ে উঠল,
“হুর!
বাজখাঁই গলার ডাক শুনে পুরো বাড়ি কেঁপে উঠল।এবং কি বাড়িতে থাকা সকল মানুষ ও কেঁপে উঠল।হুর রান্নাঘরে ছিল। জেরিন আর লিলির সহায়তা করছিল। বাড়িতে মানুষ বেশি। তাই রান্না ও বেশি। তাই ভাবলো লিলি আর জেরিনের হেল্প করলে মন্দ হয় না। হন্তদন্ত হয়ে রান্নাঘর থেকে ছুটে আসলো ড্রয়িং রুমে। বিচলিত হয়ে রুদ্ধের সামনে দাড়া হতেই দেখল রুদ্ধ রেগে বোম্ব হয়ে আছে।আকস্মিক রুদ্ধকে রেগে যেতে দেখে কিছুটা ভয় পেল হুর। বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কি হয়েছে, আপনি চেঁচিয়ে উঠলেন কেন?
দাঁত কট মট করে রুদ্ধ বলে,
“কোথায় ছিলে তুমি এতক্ষণ?
“রান্নাঘরে ।
রাগ কমার বজায় আরো বাড়লো।কোমরে এক হাত রেখে অপর হাত দিয়ে দু আঙ্গু কপালে ঘসলো। ফোঁস ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল।
“এ সময় তোমার রুমে থাকার কথা ছিল।আর কোনদিন যেন এই ভুল না হয়। ঘুম থেকে ওঠার পর পর যেন আমি তোমায় নিজের সামনে দেখতে পাই।
ফ্যালফ্যাল করে রুদ্ধের দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাঁকালো হুর। পরবর্তী রুদ্ধের হাত ধরে টেনে টেনে ডাইনিং টেবিলের কাছে নিয়ে যেতে যেতে বলল।
“চলুন, চলুন খাবার খাবেন। আজ স্পেশালি অনেক কিছু রান্না করা হয়েছে।
হুরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে সামনের দিকে এগোতে লাগল রুদ্ধ। পা জোড়া থেমে গেল ডাইনিং টেবিলের সামনে এসে। সাথে সাথে চোখ মুখ শক্ত হয়ে আসলো। ডাইনিং টেবিলে নেমন্তন্ন ব্যতীত সেই মানুষগুলো বসে আছে। যাদের একদমই সহ্য করতে পারে না রুদ্ধ। তাদের থেকে চোখ সরিয়ে এবার হুরের দিকে নজর রাখলো। রুদ্ধকে হঠাৎ আবার রেগে যেতে দেখে করুন হয়ে আসলো হুরের মুখশ্রী।কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়ে মুখ খুলবে সেই মুহূর্তে রুদ্ধ তাকে আঙ্গুল দিয়ে থামিয়ে দেয়। কঠিন স্বরে বলে,
“ওরা এখানে কি করছে?
বো/কা হেসে ডাইনিং টেবিলে বসে থাকা সবার দিকে একবার তাকিয়ে রুদ্ধর দিকে তাকাল হুর। গলার স্বর নীচু রেখে বলল,
“নাস্তা করতে এসেছে।
হুরের দিকে তেরে যেতে নাই রুদ্ধ। তার আগেই হুর নিজের জায়গা থেকে কয়েকটা পিছিয়ে যায়। ফিসফিস করে বলে,
“প্লিজ কোন রিয়েক্ট করবেন না।আপনার যা বলার তা আপনি আমায় রুমে বলবেন।কিন্তু এখানে কোন সিনক্রিয়েট করেবেন না।
আরো রাগ বেড়ে যায় রুদ্ধের। রাগে টেবিলে থাকা জগ ছুড়ে মারে ফ্লোরে। চিল্লিয়ে বলে,
“আমি সিনক্রিয়েট করছি?আমি!উইদাউট মাই পারমিশন ,তুমি এখানে তাদের বসিয়ে রেখেছো কেন?তাদের এই বাসায় থাকতে দিয়েছি বলে এই না যে,যখন তখন যেখানে মর্জি সেখানে নিজের ভাগ বসাবে।
ভয়ের মাত্রা বেশি হওয়ায় হুরের চোখে পানি চলে আসে। সাথে গলা ও শুকিয়ে আসে। তারা ডাইনিং টেবিলে নাস্তা করলে যে রুদ্ধ এতটা রেগে যাবে জানলে কখনোই তাদের ডাইনিং এ বসাতো না।কোনমতে নিজের অশ্রুকণা চোখের মধ্যে নিবদ্ধ রেখে রুদ্ধের দিকে এগিয়ে আসলো।ভেজা গলায় বলল,
“আর ভুল হবে না।আজকের মত এডজাস্ট করে নিন পরবর্তীতে আমি তাদের কে তাদের রুমে খাবার দিয়ে আসবো।
হা করে কয়েকবার নিশ্বাস নিয়ে শব্দ করে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসলো।প্রশান্তিময় নিঃশ্বাস ত্যাগ করল হুর। বাকিদের দিকে তাকিয়ে দেখলো তারা তিনজন একত্রে দাঁড়িয়ে রয়েছে। চোখে মুখে রয়েছে তাদের বিস্ময়।সামান্য একটা বিষয় নিয়ে যে রুদ্ধ এভাবে উত্তেজিত হয়ে যাবে তা বোধ হয় কেউ আঁচ করতে পারেনি।তা দেখে হুর তাদের চোখ দিয়ে আশ্বস্ত করে বলে,
“আপনারা বসুন!
হতবিহ্বল হয়ে তারাও বসে যায়।বিস্ময় হয়ে রুদ্ধের দিকে বারবার তাকাচ্ছে। সাথে কিছুটা ভয় পেয়েও গেছে। কখন কোন মুহূর্তের রুদ্ধ কি ঘটিয়ে ফেলে তার হদিস নেই। পরিস্থিতি এখন ভালো তো এখন খারাপ।রান্নাঘরের এক কোণে জড়োসড়ো হয়ে লিলি আর জেরিন সব দেখছিল।পরিস্থিতি শিথিল হওয়ায় খাবার নিয়ে ডাইনিং এ আসে।হুর ভয়ে ভয়ে রুদ্ধকে খাবার সার্ভ করে দেয়।রুদ্ধ ক্ষিপ্ত হয়ে খেতে থাকে।হুর বাকিদের খাবার পরিবেশন করবে,সে সময় রুদ্ধর গম্ভীর কন্ঠ কর্ণপাত হয়।
” ভুলেও না!নিজের জায়গায় বসে খাবার খাও।
হাত থেকে খাবারের বাটি রেখে দেয় হুর।জেরিন টেবিলের কাছেই ছিল। তাই রুদ্ধের কথা শুনতে পেয়েছিল।কথা বাড়বে তাই নিজেই এগিয়ে এসে সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে।হুরের উপর এত অধিকারবোধ দেখানো রিফার পছন্দ হল না। ক্ষেপে গেল।মেজাজ নিয়ে বলল,
“রীতিমতো তুমি আমাদের অপমান করছো রুদ্ধ।আর কাজের মেয়ের প্রতি এত অধিকার খাটানো ঠিক ঠেকছে না আমার কাছে।
মাথা নিচু রেখে চোখ উপর করে রিফার দিকে তাকালো রুদ্ধ। হিংস্র চাহনি। যে কেউ দেখে ভয় পাবে। রিফা ও ভয় পেল। রিফার কথা শুনে সবাই প্রথমে রিফার দিকে তাকালো।পরে রুদ্ধের দিকে তাকিয়ে তার রিঅ্যাকশন দেখতে চাইল।রিফার মত তারাও ভয় পেল।এখন শুধু অপেক্ষা রুদ্ধের মুখ খোলার। তবে রুদ্ধ কিছুই বলছে না। মাথা উঁচু করে রিফার দিকে তাকালো বাম হাতের কনুই টেবিলে ঠেকিয়ে থুতনিতে হাত রাখল।চেয়ারে বাঁকা হয়ে বসল। পায়ের উপর পা তুলল।কঠিন চাহনি, শান্ত স্বরে,
“এক মাত্র বউ বলে তার উপর অধিকার একটু বেশি ই খাটানো হয়।আর আমার তো মনে হয় না আমি কাউকে অপমান করেছি। আমি আমার বউয়ের সাথে কথা বলছি। তাতে যদি অপমান হয়ে হয়, তাহলে এতে আমার কিছু না।এন্ড নেক্সট টাইম ওকে কাজের মেয়ে বলার আগে নিজের দিকে একবার তাকিয়ে দেখবে, তুমি কি!এখন তো তুমি কাজের মেয়ে হওয়ার ও যোগ্যতা রাখো না।ভিখারির মতো আমার কাছে এসেছ আশ্রয়ের জন্য।যেখানে তোমার কাছে এক টাকাও নেই, সেখানে আমার বউয়ের কাছে কোটি কোটি টাকা আছে।এবং কি আমার থেকেও বেশি টাকা আমার বউয়ের আছে।তোমার তো উচিৎ দিন রাত তার সেবা করা। আফটার অল তার কারনেই এ বাড়িয়ে তোমরা আশ্রয় পেয়েছো।
সবার চোখ বড়বড় হয়ে এলো।বিশেষ করে হুরের। তার কাছে কোটি কোটি টাকা আছে!কখন,কিভাবে আসল?তার এত টাকা আছে আর সেই জানে না!রুদ্ধর থেকেও বেশি টাকা আছে!এটা কিভাবে সম্ভব?রিফা আর যুবক তো টাসকি খেয়ে গেছে রুদ্ধর কথা শুনে। রুদ্ধ বিয়ে করেছে?বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। খাবার বোধহয় গলায় আটকে গেছে।যুবকটি তো নিজের আশ্চর্য ধরে রাখতে না পেয়ে জিজ্ঞেস করেই বসল,
” ব্রো তুমি বিয়ে করে ফেলেছো?
কথার উত্তর দেয় না সে।একবার যেহুতু বলেছে হুর তার বউ,তাই দ্বিতীয় বার আর বলা প্রয়োজন মনে করছে না। আর তাদের তো জবাবদিহি আরো করবে না।নিজের বিস্ময় হারিয়ে ফেলে মধ্যবয়স্ক কে বলে,
“বাবা দেখো ভাইয়া বিয়ে করে ফেলেছে। আর আমাদের একবারও বলে নি।
কিছুটা অভিমান লুকিয়ে ছিল তার কথায়।মধ্যবয়স্ক হুরের দিকে তাকালেন। হুরকে তার খুব মনে ধরেছে। তাই এ নিয়ে কিছু বললেন না। আর বলবেই ই বা কি!যে ছেলেকে নিজেই ঘর থেকে বের করে দিয়েছিলেন সেই ছেলের ব্যাপার কথা বলাও বেমানান। তাই চুপ রইলেন। হুর রুদ্ধকে ভাবুক হয়ে বলল,
“আমার কোটি কোটি টাকা আছে মানে?আমার কাছে তো এক টাকাও নেই।আপনি মিথ্যা বললেন কেন?
শান্ত দৃষ্টিতে হুরের দিকে তাকাল রুদ্ধ। বললো,
” কয়টা মিথ্যা কথা ধরতে পেরেছো আমার?আমি মিথ্যা বলিনা। সত্য যতই তেতো হোক না কেন মুখের উপর বলা পছন্দ করি।
রুদ্ধর কথা ভেবে দেখল হুর। আসলেই তো রুদ্ধকে কখনও মিথ্যা কথা বলতে শুনেনি।তাহলে কেন বলল রুদ্ধর থেকেও তার টাকা বেশি?জিজ্ঞেস করল,
“তাহলে বললেন যে আপনার থেকেও আমার টাকা বেশি?
চামচ,ছু/রি দিয়ে মাংস কাটতে কাটতে রুদ্ধ বলে,
“আমার প্রপার্টির ৮০% তোমার নামে লেখা। তাই আমার থেকেও তোমার টাকা বেশি।
হতভাম্ভ হুর। রুদ্ধ কখন তার নামে এত প্রপার্টি লিখে দিয়েছে!কখনো তো এ কথা রুদ্ধ তাকে বলেনি।হুর শুধু একা অবাক হয়েছে এমন না। রুদ্ধর কথা শুনে সবাই ই অবাক হয়েছে।অবাকতার রেশে কথা বলতে ভুলে গেছে।গোলগোল চোখ করে হুর বলে,
” এই ৮০% প্রপার্টিতে কত টাকা হবে?
কিছুক্ষন ভেবে রুদ্ধ উত্তর দেয়,
“৫৫/৬০ কোটি।
মাথায় হাত চলে গেল হুরের।হতাশ হয়ে বলল,
” এত টাকা দিয়ে আমি কি করব?
“বসে বসে খাবে।
বিরক্ত হল হুর।মুখ থেকে ” চ” শব্দ বের করল।রিফা তো অবাক হয়ে রুদ্ধ আর হুরের দিকে তাকিয়ে আছে।
———
আই উইশ আমি হুর হতে পারতাম।আই উইশ আমি রুদ্ধের বউ হতে পারতাম।তাহলে কোটি কোটি টাকার মালিক হতাম।😶
Kon gadha sobar samne ei sob proshno kore? Ar kon gang star ei sob bokar moton proshner answer sobar samne day? Eta ki matha mota der pathshala?