ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো (৩৭)

0
310

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(৩৭)
” কলেজ লেভেলে শুরু হয় তামিমের সাথে আমার পথচলা। গোপনে গোপনে প্রেম ধীরে ধীরে তার প্রকাশ। বন্ধুরা জানতে জানতেই তানভীরের কাছে তামিম খায় ধরা। তানভীর তখন সুইজারল্যান্ড এ। তামিমও ডাক্তারি পড়ার জন্য সেখানেই যায়। দু একদিনেই তানভীর আমাদের ব্যপারটা ঠাহর করে উঠতে পারে। কারণ তখন আমি বাংলাদেশে আর তামিম সুইজারল্যান্ড এ। তামিম যাওয়ার পর তো আমার পাগল প্রায় অবস্থা। প্রত্যেকটা সেকেন্ডও বসে বসে গুণেছি। ক্লাস শেষে কখন এসে তামিম কল দিবে প্রহর গুনেছি। নিজের স্টাডি ফেলে তখন আমার তামিমকে ঘিরেই সব চিন্তা। বাইরের কান্ট্রি!বয়স কম। ফ্রেন্ডরা এতো এতো আজেবাজে কথা বলে যে আমি ভয়ে আড়ষ্ঠ হয়ে থাকি সব সময়। তামিমের সাথে যতক্ষন কথা হয় তামিম তামিমকে দিয়ে একের পর এক প্রমিজ করাই। উপদেশ তো আছেই। তামিম মোটেই রাগে না। বিরক্ত ও হয়না। শুধু হাসে। তাকে নিয়ে যে আমি এতো টেনশন করি এটা ভেবেই শান্তি পায়। এদিকে আমাকে নিয়েও তামিমের চিন্তার শেষ নেই। নামে মাত্র তামিমের গার্লফ্রেন্ড হিসেবে সব জায়গায় পরিচিত আমি যখন একটার পর একটা বছর কেটে যায় তখন নানান সুপ্রস্তাব কুপ্রস্তাব আসতে থাকে আমার দিকে। আমি সেদিকে কান বাড়াই না। নিজের প্যাশন টুকটাক মডেলিং নিয়ে আর স্টাডি নিয়ে বিজি থাকি। আমার প্যারেন্টস ছিলেন স্বাধীনমনা। তাঁদের ধারণা আমি নিজেরটা নিজে বুঝতে শিখেছি। বুঝে শুনে পা ফেলবো। হলোও তাই। তামিমের মতো একজনকে চুজ করলাম। বাবা মা নিশ্চিত থাকলো। কিন্তু তামিমের ব্যস্ততায় আর আমার ব্যস্ততায় সম্পর্কটা কেমন যেনো পানসে হয়ে উঠলো। কিন্তু আমরা দু’জনেই দু’জনকে ভেবেই দিন কাটাই। শুধু সময় দেওয়া হয়না। চলতে চলতে বছর তিনেক যেতেই বাবা মা এই ফিকে হওয়া সম্পর্কটাকে আর আমলে নিলেন না। আমার ভুল ভেবে নিলেন। সাথে বিয়ে দিয়ে দেবার সিদ্ধান্তও নিলেন। এতো তাড়াতাড়ি করছিলেন যে আমার মনে ভয় ঢুকে যায়। মূলত উনারা চাচ্ছিলেন আমি যেনো মডেলিং থেকে দূরে সরে আসি। উনারা মিডিয়া জগত কে একদমি নোংরা ভাবে নেয়। আমাকে সরিয়ে নেওয়াই লক্ষ্য। ততোদিনে তানভীরের সাথে আমার বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তামিম তখন ক্যাম্পেইনে। আমাদের যোগাযোগ পসিবল না। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমি সপ্ন আকাশচুম্বী। কিন্তু সমাজের ভেদাভেদ ঘুচিয়ে এটাও সম্ভব হচ্ছিলো না যে এমপির বাড়িতে আমার জন্য তাদের বড় ছেলের নামে বিবাহের সম্বন্ধ নিয়ে যাওয়া। তামিম তখনও পড়াশোনা শেষ করেনি। এসময় তো মেনে নেওয়া অসম্ভব।বাবা মা প্রথমে খুশি হয়েছিলেন ভেবেছিলেন তাদের কিছু করতে হবেনা। তামিমই করবে যা করার। আমার সৌন্দর্য দেখে শ্বশুরবাড়ির লোক ঠিক আপন করে নিবে। কিন্তু যখন তামিমই নেই তখন এই সপ্ন বহুদূর। আমার উপর যাদের নজর ছিলো ঝাঁপিয়ে পড়লো যেনো। বাড়ি ছাড়লাম। মামার বাড়িতে উঠলাম। অসহায় মুহূর্ত।‌ ঢাকায় চলে যেতে চাইলাম। মামা যেতে দিলেন না। পাগল হয়ে গেলাম আমি। তামিমকে ছাড়া আমার পক্ষে কাউকে গ্ৰহণ করা সম্ভব না। বাধ্য হয়েই আত্মসম্মান ভূলে তানভীরের কাছে সবটা খুলে বললাম। সাহায্য চাইলাম। তানভীর আমাকে আশ্বস্ত করার বদলে করলো উপহাস। বললো,
” এতো এতো পাংখা তোমার! সবাইকেই বিয়ে করবে? একে একে করতে থাকো।বছর খানেক তো চলবে। শেষ বিয়েটা হলেও আমরা দুই ভাই দাওয়াত খেতে চাই।”

আমি তখন কান্না ভূলে ফুসে উঠলাম। আমাকে সেখানেই‌ আবার আহত করলো। আমাকে বাজেট দেখালো। বিয়ের গিফটের জন্য। আমি আশাহত। একদম চুপ হয়ে গেলাম। শেষ ভরসাও শেষ। অনুভুতি শূন্য। বিয়ে ঠিক হলো। খাওয়া দাওয়া বাদ দিলাম। দুদিন বাদে আমার বিয়ে। সেদিন আমি জ্ঞান হারালাম। জ্ঞান ফেরার পর আমার সামনে লাগেজ দেওয়া হলো। মেরুন রংয়ের লাগেজ। আমি শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। অনেক সময় পর মামাতো ভাবী এসে বললো, পার্লারের লোক চলে এসেছে। ছেলেমেয়েরা সব বাইরে যাও। এখন কনে সাজানো হবে। আমি মনে মনে হাসলাম। আমাকে শুলে চড়াতে সময়ও বুঝি এগিয়ে নিয়ে এলো। লাগেজ খুলে যখন একেরপর এক প্রোডাক্ট বের করছে আর বলছে, সব বিদেশি জিনিস। দেখিস একটাও যেনো এদিক সেদিক হয়না। তখন আমার টনক নড়লো। যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে তার তো বিদেশী জিনিস আনার কথা নয়। নিজেই হাত লাগালাম। ম্যাক্সিমাম প্রোডাক্টের গায়ে সুইচ ট্যাগ। তখন আমার কলিজায় পানি এলো।আমি এক ছুটে বাইরে গেলাম। দেখলাম উঠোনে তানভীর দাঁড়িয়ে বড় একটা গাড়ির পাশে। তার পাশে আমার বাবা মামা। গভীর আলোচনায় ব্যস্ত। হুট করে তানভীর আমার দিকে তাকালো। হাত বাড়িয়ে আমার মামাতো ভাইকে ডেকে বললো, হুল্লোপার্টিকে তাড়াতাড়ি রেডি হতে বলো। বসা থেকে উঠে গেলে বরের জুতো আর চুরি করতে পারবে না। আমাকে হাতের আড়াল করে চোপ টিপ্পনি দিলো। আমার যা বুঝার বুঝে গেলাম। যত তাড়াতাড়ি রেডি হবো ততো তাড়াতাড়ি তামিমের দেখা পাবো । ছুটলাম সাজগোজ করতে। বিয়ের শাড়ি গহনা পরে পুরো বউ! আন্দাজ করলাম এসব কিছু তানভীর দিয়েছে। এর বাজেটই আমাকে বলছিলো। গহনা গুলো দিয়েছিলো তামিম। তামিমকে পাওয়ার জন্য এতোটাই উত্তেজিত ছিলাম যে ঘোরের মাঝেই বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ী চলে এলাম। সেখানে এসে জানতে পারলাম দুইভাই দেশে এসে বাড়িতে না গিয়ে সোজা আমাকে বিয়ে করে বাড়ি ফিরেছে বউ নিয়ে। তামিম আমার পাশে দাড়িয়ে রইলো। আমি ভয় পেয়ে তামিমের দিকে তাকিয়ে রইলাম। বিশাল ঝামেলা বাঁধলো। পাপা মম তো রেগে আগুন। আমাকে দেখলোনা পর্যন্ত। তানভীরকে তো যা নয় তাই বলে বকাবকি করছে। তামিম গেলে তাকে তো ছাড়লোই না। তামিম যখন ওর পাপা মমকে বুঝাতে ব্যস্ত তখন তানভীর এক আশ্চর্য কাজ করে বসলো। আমার হাত ধরে সোজা ঢুকে গেলো বাড়ির ভেতরে। বরণ ছাড়াই আমার পদার্পণ হলো শ্বশুরবাড়িতে। একদম তামিমের রুমে গিয়ে নিয়ে হাত ছাড়লো। মুচকি হেসে বেরিয়েও গেলো। আমি তখন একা। বেশ কিছুক্ষণ পর যখন তামিম এলো তখন পুরোপুরি ভাবে তামিম আমার। আমার স্বামী । দিক বেদিক না তাকিয়ে আমি তামিমকে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। এতো গুলো বছর আলাদা কাটানোর পর যেনো প্রাণ ফিরে পেলাম। কেউ কাউকে ছাড়লাম না। দরজায় নক পড়লো। তবুও আমি তামিমকে ছাড়লাম না। তামিম আমাকে নিয়েই দরজা খুললো। তানভীর দাঁড়িয়ে। হাতে একগুচ্ছ গোলাপ। আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, ” সরি ভাবী। এতো ঝামেলা পোহাতে হলো যে এদিকটা ভুলেই বসেছিলাম। এতো রাতে আর পসিবল হলো না।”
আমি তানভীরের হাত থেকে ফুলটা নিলাম। মাথাটা তামিমের বুকে রেখেই তানভীরের যাওয়ার দিকে কৃতজ্ঞতা স্বরুপ তাকিয়ে রইলাম।
পরদিন আমাকে সাজিয়ে গুছিয়ে আত্বীয় স্বজন সবার সামনে নেওয়া হলো। সদ্য বিবাহিত আমি দামী শাড়ি গহনায় রুপ যেন ঠিকরে পড়ছিলো। চারদিক থেকে প্রশংশা কুড়ালাম। শ্বশুর তো মাশাআল্লাহ বলেই বসলেন। তারপর থেকে যে কোন প্রয়োজনে তানভীর আমার পাশে থাকে ছোট ভাই হিসেবে। কিছুদিনের মধ্যেই দুই ভাই চলে যায়। ছয় মাস অন্তর অন্তর দুবার এলো তামিম। তামিমের অনুপস্থিতিতে আমার মডেলিং চললো দারুন ভাবে। তামিম ফিরে আসার পর তো হ্যাপিই ছিলাম। কিন্তু বাঁধ সাধলো কিছু কিছু ব্যপারে। আমার ড্রেস আপ, গ্ল্যামার, রাত করে ফেরা,সবার সাথেই হ্যাংআউট তামিমের ভালো লাগছিলো না। ধীরে ধীরে আমাদের মাঝে একটু একটু করে বিস্তর ফাঁক সৃষ্টি হয়। আমার শ্বাশুড়ি আমাদের মনমালিন্য লক্ষ্য করে আমাকে বুদ্ধি দেয় বাচ্চা নেবার জন্য। আমি না বললে প্রেশার দিতে থাকে। আমি তখন আমার সপ্নের দাড়গোড়ায়। সবাই এক নামে চিনে। একেরপর এক অফার আসতে থাকে। তানভীরও তখন দেশে চলে আসে। তানভীরের কাছে গিয়ে ওর ভাইকে বুঝাতে বললে তখন তানভীর ও আমাকে এ পথ থেকে সরে আসতে বলে। ওদের টাকার অভাব নেই। আমি ভালোই থাকবো। কিন্তু আমার আমি যে একটা পরিচয় সেটা শেষ হয়ে যাবে। ড. তামিম খানের বউ আমার পরিচয় হবে ‌। আমার যে একটা নাম আছে সেই নামটাই ঢাকা পড়ে যাবে। আমি মনস্থির করতে পারছিলাম না। বেশ কয়েকজন প্রডিউসার আমার সান্নিধ্য লাভের জন্য উঠেপড়ে লাগে। আমাকে আকাশ ছোঁয়া সপ্ন দেখায়। আমি আমার ক্যারিয়ারকেই চুজ করি। ডিভোর্স চাই তামিমের কাছে। তামিমের ভালোবাসা রঙিন আলোয় আমার চোখে পড়েনি। আমাকে তামিম তখনও ধৈর্য্য ধরে বুঝিয়ে গেছে।আমাকে ডিভোর্স দিতে চায়নি। মানিয়ে গেছে। আর এদিকে আমার সপ্নের পথ আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি তামিমকে জানালাম আমার একজনের সাথে ভাব হয়েছে। আমি তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছি। আর তাকেই বিয়ে করতে চাই ডিভোর্স দিয়ে। তামিম তখন হন্যে হয়ে সেই লোককে খুঁজে বেরিয়েছিলো শেষ করবে বলে। এদিকে একজন ডিরেক্টর যিনি তখন আমার শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে এসেছেন তাকে সন্দেহ করা শুরু করে। তামিমদের হাতে অনেক পাওয়ার। এক দুই টা মানুষ কে গুম করে দেওয়া বা হাতের খেল। আমি নিরুপায় হয়ে যাই। সন্দেহ কাতারে পাগল তামিম তখন আরেকজন ডিরেক্টর কেও টার্গেট করে।তাঁদের বাঁচাতে এবং তামিমের হাত থেকে মুক্তি পেতে আমার মনে যা আসার নয় সেই কুচক্রই সৃষ্টি হয়। ভাইয়ের মতো দেবরকে টুপ হিসেবে ব্যবহার করি। কারণ আমি জানি তানভীরকে কিছু করা হবেনা হয়তো দুই ভাইয়ের সম্পর্ক নষ্ট হবে একদিন ঠিকই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আমি মুক্তি পাবো। গভীর রাতে সুযোগ পেয়েই ঢুকে পড়ি তানভীরের রুমে। তানভীরের অভ্যাস উদোম গায়ে ঘুমনো। আমি গিয়ে শুয়ে পড়ি তানভীরের পাশে। চোখ বুজে ঘুমোনোর বাহানা দিয়ে থাকি। তামিম আমাকে না পেয়ে হন্যে হয়ে খুজে। সারা বাড়ি না পেয়ে যখন তানভীরের রুমে নক করে তখন তানভীর ঘুমের মাঝেই দরজা খুলে দেয়। আর তামিম দেখতে পায় আমি তানভীরের বিছানায় শুয়ে। সেদিন তানভীর সহ বাড়ির প্রত্যেকেই অবিশ্বাস চোখে তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে। কিন্তু আমি দমে যায়নি। জোর গলায় বলেছিলাম তানভীরের সাথে আমার সব ধরনের সম্পর্ক আছে আর তামিমের কাছে ডিভোর্স চাওয়ার কারণ তানভীরকেই আমি বিয়ে করবো। তামিম এতো বড় আঘাত নিতে পারেনি। পরদিনই ডিভোর্স ফাইল করেছে কোর্টে। দেনাপাওনা সব মিটিয়ে দিয়ে আমাকে ছুড়ে দিয়েছে। কিন্তু তাঁদের ভাইদের মধ্যে এক বিন্দুও মনমালিন্য হয়নি। তারা যেন জানতো তারা আত্নিক মনষঃত্ত্বের দিক দিয়ে কতটা পবিত্র সমৃদ্ধ। মাঝখান থেকে ছিন্ন হলো আমার দিন। এতোটাই রঙিন দুনিয়াতে সপে ছিলাম যে কি হারিয়ে ফেললাম আমি বুঝতেও পারলাম না। নিজেই নিজের পায়ে কুড়াল বসালাম। আমাকে কেনা হলো বেশ চওড়া দামে। আমি ভেবে নিলাম আমার মূল্য ঠিক এতোই। জাস্ট একজন ডিরেক্টরের সাথেই কাজ করে কুল পেলাম না। একের পর এক ড্রামাতে সাইন করলাম। হয়ে উঠলাম জনপ্রিয়। দেশ বিদেশে আমার ফ্যান। আমার খাতির যত্ন ছিলো বরাবরই স্পেশাল। আমাকে কাস্ট করলেই নাকি প্রডিউসার ইনভেস্ট করতে রাজি হয়। আমার মতো সুন্দরীদের যখন এফডিসির গেইটে পড়ে থাকতে দেখতাম অহংকার জেগে উঠতো মনে। এক থেকে অনেকজনের লোভনীয় অফার আসতে লাগলো। লোভী আমি এক প্রোডাকশনের আন্ডারে কতোই কাজ করবো? সাড়া দিতে চাইলাম তাদের ডাকে। ডিরেক্টর প্রডিউসার আমাকে ছাড়তে নারাজ। টাকার উপর টাকা ছুড়লো আমার উপরে। কিন্তু আমার ঐযে আকাশ ছোঁয়ার সপ্ন! প্রত্যেকটা প্রোডাকশনে কাজ করবো নিজের কর্তৃত্ব ফলাবো। ধরে রাখতে পারলোনা আমাকে। ঠিক ঐ মুহুর্তে ই আমি আমার স্থানটা আবিষ্কার করলাম। কাজের অফার তো ঠিকই আসে তার কমিশন হিসেবে দিতে হয় ডিরেক্টরকে কিছু ঘন্টা বা রাত। একের পর এক ইগনোর করতে থাকলাম। বিলাসিতায় মোড়ানো জীবন আমার কাজ বিহীন কয়েক মাসেই আর্থিক অভাবে পড়লাম। লাক্সারি ফ্ল্যাট ছেড়ে নরমাল ফ্ল্যাটে উঠলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে আমি ফিল করলাম আমার জীবনে আমি একাই। আমার পাশে কেউ নেই। আমার পরিবার আমাকে ত্যাগ করেছে। আমার হাজব্যান্ড হাজব্যান্ড এর ফ্যামিলি আমাকে ত্যাগ করেছে আর অহংকারের কারণে আমি ত্যাগ করেছি আমার শুভাকাঙ্ক্ষী ফ্রেন্ডসদের । আরেকজন কেও আমি ত্যাগ করেছি। আমার ডিরেক্টর। যিনি শুধু আমার কাজটাই বরাবর চেয়ে এসেছেন। অন্য কিছু নয়। তার সাথে কত রাত কত জায়গায় আমাকে কাটাতে হয়েছে কিন্তু কখনও আমি তার থেকে অসম্মানিত হয়নি। সব হারা আমি একজন ডিভোর্সী। আমি ভেবেছিলাম আমার ক্যারিয়ারই সব। তামিম কে আমি ভুলে গেছি। কিন্তু তাকে আমি ভুলতে পারিনি। হাজারটা প্রপোজাল এসেছে সামনে। কারো সাথে কথা বলা বা তাকে সেই নজরে দেখার রুচিটাও অভাব বোধ করেছি। আমি কারো ধারে কাছে যেতে পারিনি। নিজেকে বুঝিয়েছি আমি মুক্ত। আমি যাকে ইচ্ছে তাকে আমার জীবনে ইনভলভ করতে পারি। কিন্তু বার বার হেরে গেছি। আমার বিবেক আমার ব্রেইন আমাকে বার বার রিমেম্বার করিয়েছে আমি একজনের স্ত্রী। আমি তাকেই ভালোবাসি। অথচ আমি তখন ডিভোর্সী। ফিরে এলাম আমার সেই ডিরেক্টরের কাছে। কিন্তু আমার আর জায়গা হলোনা। কম কথা শুনিয়ে ইগনোর করে আমাকে সরে যেতে হয়নি! সেসবের জন্য ক্ষমাও চাইলাম। তিনি জানালেন ক্ষমার যোগ্য আমি নই। ছোটখাটো কাজ ধরলাম পেটের দায়ে। কিন্তু বড় কাজ হাতে পেলাম না। নিজেকে সেফ মনে হচ্ছিলো না। ভীষন ভাবে ভেঙে পড়লাম। আমাকে সাপোর্ট করার মতো কেউ নেই। প্রত্যেকটা দিন কাটে আমার হতাশায়। আর রাত কাটে তামিমের জন্য চোখে জল নিয়ে। তখন আমি তামিমের থেকে অনেক দূরে। তার সামনে আসার সাহস নেই। অধিকার নেই। আমার কর্মফল আমাকে পোড়ায় প্রত্যেকটা দিন। ভালোবাসার অভাবে আমি জড়জীর্ণ। একদিন দুই প্রডিউসারের একটা কাজে আমার ডাক পড়ে। গিয়ে দেখি সেই ডিরেক্টর। আমাকে দেখে উপহাস করতে ভুললো না যেনো। সুটিংটা ছিলো ইভটিজিং নিয়ে। কথায় কথায় শুনিয়ে দিলো মেয়েরা দুধের ধোয়া না। টাকা পেলে শরীর বিকিয়ে দিতেও ভাবে না। কথাটা আমার দিকে তাকিয়ে যেনো আমাকেই বললো। আমি শিউরে উঠলাম। ছিহ এতোটা নিচে নেমে গেছি আমি? এতোটা খারাপ চিন্তা আমাকে নিয়ে? এতো গুলো বছর কাজ করলাম তিনি আমাকে জানেননি? চিনেননি? আমি আবার ভেঙে পড়লাম। মুখোমুখি হতে চাইলাম। সব ই তো গেছে। সম্মানটুকু ও হারাবো? এটা নাহয় আমার ই থাক। গিয়ে যা দেখলাম তার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। সেই ডিরেক্টরের পাশের চেয়ারেই বসে তানভীর আর তামিম।‌ লাঞ্চে জয়েন হয়েছে একসাথে। লাঞ্চ টাইমে কাউকে এলাও করেনা। কিন্তু যেহেতু আমি পরিচিত আমাকে আটকানো হয়নি। সুন্দর ভাবে পৌঁছে গেছি ডাইনিং স্পেসে। আমাকে চোখ তুলে প্রত্যেকেই দেখলো। বিনিময়ে ছুড়লো তাচ্ছিল্য পূর্ণ হাসি। সামনাসামনি তামিমকে দেখে আমি তখন ফ্লোরে বসে পড়েছি। চোখ থেকে ছল ছল করে জল গড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু তামিম আমাকে একবারের জায়গায় দুবার মুখ উঁচিয়ে দেখার ইচ্ছা পোষন করলো না। জীবনের চরম সত্যের মুখোমুখি হলাম সেদিন। যে ক্যারিয়ার ক্যারিয়ার করে আমি আমার পরিবার ছেড়েছি সেই পরিবারই আমার ক্যারিয়ার গড়তে সাহায্য করেছে। এইযে এতো এতো স্পেশাল আদর যত্ন সব সেই পরিবারের জন্যই। আমার ডিরেক্টর আর কেউ নন তানভীরের বেস্ট ফ্রেন্ড সৈয়দ হাসান। আর আমার প্রত্যেক ড্রামার প্রডিউসার আর কেউ নন আমার এক্স হাজবেন্ড তামিম খান। এইযে আমার এতোবছরকার সেফটি দানকারী আমার এক্স দেবর তানভীর খান। আমার এতো বিলাসীতা জীবন তাঁদের টাকায়। আমার কাজের পারিশ্রমিক এই টাকার অর্ধেক ও নয়। এইযে আমি তাদের দেওয়া সেফটি সার্কেলের বাইরে সেজন্য আমি চরিত্রহীন।
অপবিত্র।”

চলবে __

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here