ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো (৩৯)

0
484

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(৩৯)
নরম বিছানা হটাৎ করে শক্তপোক্ত অনুভব হলো। অবচেতন লাবিবা ঘোরের মাঝেই হাত বাড়ালো। আঙুলের ডগায় লোমের ছোঁয়া লাগলো।‌‌ নড়লো না। ওভাবেই পড়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর‌ মনে হলো তার পুরো দেহটাকে কেউ তুলে নিচ্ছে শক্ত কিছুর উপরে। লাবিবা জোরপূর্বক চোখ খুললো। চোখের সামনে ভেসে উঠলো লোমশ ফর্সা বুক। লাবিবা নাক ঢুবিয়ে শ্বাস নিলো। অল্পপরিচিত একটা স্মেল যেটা সে দু তিনেকবার খুব কাজ থেকে পেয়েছে। টনক নড়তেই হুরমুড় করে উঠে বসলো। হাতে বাধাপ্রাপ্ত হলো। হাত ধরে টান দিতেই একটু ঝুঁকে গেলো। খোলাচুল গুলো এসে পড়লো কপালের দু পাশে। ক্লান্ত চোখে লাবিবা তাকিয়ে রইলো। বিরবির করলো ‘ খান সাহেব!’ মাথাটা উপরের দিকে ধরে রাখতে না পেরে বালিশে হেলে পড়লো। তানভীর এক হাতে লাবিবার কোমড় চেপে সৃষ্ট হওয়া দূরত্বটুকু ঘুচিয়ে নিলো। বাকিটুকু লাবিবাই ঘুচালো। আলতো ভাবে গলাটা একটু একটু করে জড়িয়ে ধরলো। মুখ গুজলো তানভীরের গলায়। তানভীর দুহাতে লাবিবাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। লাবিবার ঘাড়ের উপর ফুস ফুস করে উষ্ণ শ্বাস ছাড়লো। মৃদু আওয়াজ তুলল,’ উমমমমহ ‘। লাবিবা নিচু স্বরে জানতে চাইলো, ‘ আপনি রাগ? ‘ তানভীর উত্তর করলো না। আরো নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। ঘরময় শুধু উষ্ণ শ্বাস। তানভীর ছটফট করলো। কাতর গলায় বললো, ” বউ! জ্বর কমবে কখন? ভালো লাগছে না।” লাবিবা ফুঁপিয়ে উঠলো, ” য়্যু হার্ট মি।” এই কথাটাই যথেষ্ট তানভীরকে এলোমেলো করে দেবার জন্য। হাতের বাঁধন শিথিল হলো। কানের নিচে ঠোঁট ছোয়ালো। ছোট ছোট চুমু তে ভরিয়ে তুললো।‌ এতো আদরে লাবিবা বিড়ালছানার মতো গলা জড়িয়ে ঝুঁলে রইলো। তানভীরের বুকের মাঝে নিজেকে সঁপে দিলো। খানিক বাদেই তানভীর জিজ্ঞেস করলো,
” মেডিসিন নিয়েছো?”

” হুম। ”

” জ্বর কমছে না কেন? ”

” সারা রাতই তো থাকে।”

তানভীরের ভাবনা অস্থির হলো। একটা মাত্র বউ তার ওকে জানানোর কেউ প্রয়োজন বোধ করলো না। বউটা নাহয় বুদ্ধি কম। শ্বশুর শ্বাশুড়ি কি করলো? তার কারণেই জ্বর এসেছে জন্য তাকেই এলাও করলো না। কবিরটাও তো জানালো না। ফ্লোরা না জানালে তো জানতেই পারতো না। গিয়েছিলো টাঙ্গাইল। এক জানাজায় অংশগ্রহণ করতে। থাকতেও হয়েছিলো। টাঙ্গাইল এক ঝলক ট্যুর দেবার প্ল্যান করেই থেকে গিয়েছিলো। সারাদিন টই টই করতে করতে ফোনের দিকে নজর ছিলোনা। যখন ফোন হাতে নিলো ফ্লোরার মেসেজ দেখে এতো রাগ হয়েছিলো যে আসবেনাই ভেবেছিলো। কিন্তু মন মানলে তো? ঠিকি চলে এসেছে। আসতে আসতে রাত হয়ে গেছে। লাবিবা ওয়েট করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে। শ্বশুর শ্বাশুড়ির সাথে কথা বলে এসে দেখে কাঁপছে। মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে অন্তুর মা ছোটকাকী। তানভীরের সাথে কথা বলে চলে গেলে তানভীর একদম অসুস্থ বউটাকে বুকে নিয়ে নিজেকে শান্ত করে। লাবিবার শরীর আরো গরম হয়ে উঠে। লাবিবার শরীরের উষ্ণতায় তানভীরও প্রায় ঘেমে গেছে। লাবিবা বুঝতে পেরে হাত দিয়ে ঠেলে দু বার সরিয়ে দিতে চেয়েছে। তানভীর ছাড়েনি। আগুনের মতো গরম শরীরটাকে বুকে চেপে রেখেছে। কষ্ট শুধু বউটা কেন করবে? সেও করুক। লাবিবা আবার ঠেলে দেয়। বুঝানোর স্বার্থে বলে,
” ছাড়ুন। গরম! ”

” পোড়তে দাও।”

তানভীর কল করে তামিমকে।
” ভাইয়া কোথায়?”

” হসপিটালে। ”

” ফিরবে কখন?”

” একটু পরেই। ”

” আমার শ্বশুরবাড়ি থেকে ঘুরে যাও তো।”

” তুই ওখানে?”

“লাবিবার জ্বর। তিনদিন থেকে। কোনো মেডিসিনেই কাজ করছে না। একটু দেখে যাও। ”

” আচ্ছা আমি আসছি। টেনশন নিস না। সিরিয়াস কিছু মনে হলে আমার কলিগকে ফোন করলেই চলে আসবে।”

” হুম। ”

তামিম আসে ঘন্টা দেড়েক পরে। তামিম একা আসেনি সাথে করে তার কলিগকেও নিয়ে এসেছে। তানভীর এতোক্ষণ খেয়াল করেনি। তামিম আসার স্বার্থে শাড়ি ঠিক করতে গিয়ে লক্ষ্য করেছে লাবিবা স্লিভলেস ব্লাউজ পড়েছে। অনুসন্ধানী চোখে আবিষ্কার করে ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক ও ছুইয়েছে যেন বিশেষ খেয়াল না করলে বোঝা না যায়। গাল থেকে বেবী পাউডারের স্মেল আগেই পেয়েছে। কানে সুন্দর ঝুমকো। শাড়ির রংটা ফুটিয়েছেও গায়ে। বউটা তার দেখতে সাদাসিধে আদতে তা নয়। যাকে বলে সিম্পলের মধ্যে গর্জিয়াস। তানভীর শাড়ির আঁচলে দুই কাঁধ সুন্দর ভাবে পেঁচিয়ে দেয়। যাতে কাঁধ দেখা না যায়। ডক্টর কি কি ঔষধ খাওয়ানো হয়েছে তা দেখে জ্বর মেপে ইনজেকশন পুশ করে দিয়ে চলে যায়। যাবার আগে তামিম জ্বর কমলে তাকে একবার জানিয়ে দিতে বলে যায় ।

ঘন্টাখানেকের মধ্যে গা ঘেমে লাবিবার জ্বর ছাড়ে। উঠার শক্তি নেই। লাবিবার কাকী এসে গামছা ভিজিয়ে হাত পা মুখ পুছে দেয়। সাবিনা এসে মেয়েকে জোর করে স্যান্ডুইচ সহ মৃদু গরম দুধ খাইয়ে দেয়। ঘুমিয়ে পড়তে বলে লাইট আফ করে চলে যায়। ডাইনিং এ তানভীর কে খাবার দেওয়া হয়েছে। সাথে বসেছে কবির। তানভীরের কথা শুনেই এসেছে। কবিরের মেয়েটাও বাবার সাথে টুক টুক করে খাচ্ছে। তা দেখে তানভীর হাসে।

ক্লান্ত তানভীর যখন ঘুমোনোর উদ্দেশ্য বিছানায় শুলো লাবিবা পাশ থেকে এক গড়ান দিয়ে তানভীরের উপর উঠে যায়। দু হাতে গলা জড়িয়ে ধরে। তানভীর দ্বিমত করে না। লাবিবার শরীরের ভাড় নেওয়া তার কাছে ব্যাপার না। বরং সে চায় নিতে। তার হৃদয় কেনো শরীর ও জানুক একজন আছে। যার সংস্পর্শে সুখ মেলে। যাকে বহন করতে গেলে ক্লান্ত দেহও সায় দেয়। কখনোই বিরক্তি আসেনা। তানভীর ঝুমকোর উপর আলতো করে চুমু দেয়। ডাকে,
” লাবি পাখি?”

” হুম।”

” শাড়ি পরেছো?”

” হুম।”

” আমার জন্য?”

” হুম। ”

” সুন্দর লাগছে। আমার বউটা ভীষণ সুন্দর। মাশাআল্লাহ। ”

লাবিবা মুখ তুলে তাকায়। চোখে চোখ মেলায়।
” আপনার সাথে আমার অনেক গল্প আছে।”

” শুনবো। এখন ঘুমাও। ”

” কয়টা বাজে?” লাবিবা ফোনে টাইম দেখলো। বেশি রাত নয় ‌। এগারোটা দশ।

“ঘুমোলে আপনি চলে যাবেন। ”

” আজ থাকছি। ভীষন টায়ার্ড।”

লাবিবা খুশি হলো। তানভীরকে শক্ত জড়িয়ে ধরলো। শান্তি পেলো না। শাড়িটাকে তাঁদের মাঝে বাঁধা মনে হলো। লাজ শরম ফেলে আঁচলটা কাঁধ থেকে ফেলে দিলো। তানভীরের উদোম বুকে নিরাভরণ বুক পেট ছুঁয়া লাগতেই শরীরটা শিরশির করে উঠলো। ঠান্ডাও লাগলো। উঠতে গেলো। কিন্তু পারলো না।‌ তানভীর কোমড় চেপে মিশিয়ে নিলো।‌ কানে মুখ নিয়ে ফিসফিস করলো, ” আমাকে অশান্ত করার চেষ্টা করোনা দুর্বল শরীরে পরে কিন্তু আমাকে শান্ত করতে পারবেনা। বউয়ের জন্য দ্বিতীয়বারের মতো শ্বশুড়ের কাঠগড়ায় উঠতে চাইছি না। ”

ছোট্ট একখান পর্ব দিলাম। বাড়তি কিছু এড করলাম না।‌ আসলে বড় করে আজকের পর্ব লিখতেই ইচ্ছে করলো না। আশা করি এতেই আপনাদের দুলাভাই ছাড়া পর্বগুলো পুষিয়ে যাবে।‌গল্প নিয়ে আপডেট এবং আলোচনায় অংশ গ্ৰহন করতে এড হোন আমার ছোট্ট গ্ৰুপে Labiba’s Tale🧚‍♀

চলবে __

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here