গল্পঃ_একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় #পর্বঃ_২৩ #লেখাঃ_ইয়াসমিন_খন্দকার

0
460

#গল্পঃ_একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#পর্বঃ_২৩
#লেখাঃ_ইয়াসমিন_খন্দকার
—-
প্রভা রকস্টার রিহানের কাছে এসে দাঁড়িয়ে আছে। অপলক তাকিয়ে আছে তার দিকে। রকস্টার রিহান প্রভাকে হতাশ করে বলে,”May you have some misunderstanding. I am not Riyan, I’m rockstar Rihan.”

প্রভা তবুও জোর দিয়ে বলে,”আমার কোন ভুল হয়নি। আপনিই আমার রায়ান।”

রকস্টার রিহান বিরক্ত হয়ে প্রভাকে নিজের থেকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলে,”Somebody take her.”

প্রভা ছলছল চোখে তাকিয়ে রইল রিহানের দিকে৷ তার সন্দেহ কি তবে ভুল? তাহলে কি এ তার রায়ান নয়? যদি রায়ান হতো তাহলে কি পারত প্রভাকে এভাবে বলতে? প্রভাকে কয়েকজন সিকিউরিটি গার্ড টেনে নিচে নামালো। ইলিয়ানা প্রভার কাছে এসে বললো,”কি হয়েছিল তোমার? তুমি হঠাৎ এমন করেছিলে কেন? এভাবে স্টেজে উঠে..”

“আমি যাচ্ছি।”

বলেই প্রভা চলে আসে৷ রকস্টার রিহান নিজের পারফরম্যান্স চালিয়ে যায়। এসবের মধ্যে বেচারি ইলিয়ানাকেও প্রভার পিছনে ছুটতে হয়। সে তো বুঝলই না এখানে কি কি ঘটল।

~ ~ ~~~~~~~~~~~~~~~~
সেদিনের পর আরো কিছু দিন পেরিয়ে গেল। প্রভা রকস্টার রিহানের ব্যাপারটা নিয়ে আর মাথা ঘামায়নি। বলা বাহুল্য ইচ্ছে করেই ব্যাপারটা এড়িয়ে গেছে সে। আপাতত প্রভা সৌভিকের সাথে যোগাযোগ বাড়িয়েছে। আবির মোটেই সুবিধার লোক নয়৷ সে যেকোন সময় রুহুল আমিন বা প্রভার মা-বাবার কোন ক্ষতি করতে পারে। তাই প্রভা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আবিরের আসল মুখোশ সবার সামনে আনতে চায়। সৌভিক প্রভাকে আশ্বাস দিয়ে বলে,”তুমি এত চিন্তা করিও না৷ আমি এদিকটা সব সামলে নিচ্ছি। আবির খুব শীঘ্রই বিপদে পড়তে চলেছে। তার অপরাধ সবার সামনে আসবেই।”

প্রভা কিছু একটা মনে করে সৌভিককে জিজ্ঞেস করে,”আচ্ছা দাদা, আপনি যে আমায় বলেছিলেন কানাডায় কেউ আমাকে সাহায্য করবে কিন্তু এখনো তো সেই ব্যাপারে কিছু জানলাম না।”

সৌভিক বলে,”যার সাহায্য করার সে ঠিকই গোপনে সাহায্য করে যাচ্ছে। সঠিক সময় সে সামনে আসবে।”

এই বলে সৌভিক ফোন রেখে দেয়। প্রভা আবারো ভাবনায় পড়ে যায়৷ সৌভিক কি বলতে চাইলো? গোপনে সাহায্য মানে? প্রভা চুপচাপ ভেবে গেলো। আর একটু পরেই তার মাথায় অন্য চিন্তা এলো। রকস্টার রিহানের কথাটা আরেকবার এলো তার মাথায়। অনেকদিন পর মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। প্রভা বলল,”যদি সুযোগ পাই তাহলে আমি সব সত্য বের করবোই।”

প্রভার ভাবনার মাঝেই ডা:ইলিয়ানা ও ডা:অভিষেক এলো তার কেবিনে। তারা এসেই প্রভাকে বলল,”আপনি কি এখন ফ্রি আছেন?”

প্রভা বলল,”জ্বি, কেন?”

ডা:ইলিয়ানা ও ডা:অভিষেক একে অপরের দিকে কিছুক্ষণ দেখল। অত:পর ডা:ইলিয়ানা প্রভাকে বলল,”আমরা সবাই সানা প্রিস্টের আমন্ত্রণে একটা পার্টি এটেন্ড করতে যাচ্ছি। আপনিও চলুন আমাদের সাথে।”

প্রভার এসব পার্টি তেমন ভালো লাগে না। কিন্তু সানা প্রিস্টের ডাক সে উপেক্ষা করতে পারবে না। মহিলাকে অসম্ভব ভালো লেগে গেছে তার। যখনই দেখা হয় হাসি মুখে কথা বলেন। যা থেকে বোঝাই যায় যে তিনি ভীষণ আন্তরিক। তাই প্রভা বলে,”ঠিক আছে। আমি যাচ্ছি আপনাদের সাথে।”

তিনজনে মিলে বের হলো সানা প্রিস্টের পার্টি এটেন্ড করতে। প্রভা এসে দেখলো পার্টিতে খুব একটা লোক সমাগম নেই৷ হাসপাতালেরই কিছু স্টাফ এখানে উপস্থিত। এটা দেখে সে স্বস্তি পেল। সানা প্রিস্ট তাদের দিকে এগিয়ে এসে হাসিমুখে বলল,”আপনারা এসে গেছেন। দেখে খুশি হলাম। এনজয় করুন।”

প্রভা সৌজন্য সূচক হাসে। অত:পর কয়েকজন পরিচিত কলিগের সাথে কিছু কথা-বার্তা বলে। এভাবেই সময় যাচ্ছিল।

কিছুক্ষণ পরেই সানা প্রিস্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলল,”আপনাদের সাথে আজ আমি কারো পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। আপনারা সবাই জানেন যে আমার একজন ভাই আছে৷ যে মূলত টরেন্টোতে থাকে। আজ সে এখানে এসেছে। আজ মূলত তাকে ওয়েলকাম জানানোর জন্যই আমি এই পার্টির আয়োজন করেছি। দীর্ঘ ৩ বছর পর আমার ভাইটা টরেন্টো থেকে আবার অটোয়াতে এলো আমার সাথে দেখা করতে। তাই আমার কাছে আজকের দিনটা খুবই স্পেশাল।”

সবাই সানা প্রিস্টের ভাইকে দেখার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। ইলিয়ানা প্রভা ও অভিষেককে বলল,”আমি অনেক শুনেছি সানা প্রিস্টের ভাইয়ের সম্পর্কে। দুই ভাই বোনের সম্পর্ক নাকি অনেক মধুর। কিন্তু ৩ বছর আগে কিছু একটা নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝামেলা হয়৷ আসলে সানা প্রিস্ট চেয়েছিল তার ভাই স্টাডি শেষ করে নিজের ক্যারিয়ারে ফোকাস করুক কিন্তু তার ভাই নাকি মিউজিকে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চেয়েছিল। এই নিয়ে দুই ভাই বোনের মধ্যে মান অভিমান হয়। আর সেই মান-অভিমান থেকেই ওনার ভাই টরেন্টোতে চলে যান। আজ আবার অটোয়াতে ফিরছেন। ব্যাপারটা বেশ ভালো লাগল।”

এমন সময় কারো আগমন ঘটল। সানা প্রিস্ট সকলের উদ্দ্যেশ্যে বলল,”ঐ তো আমার ভাই এসে গেছে।”

সবাই পিছনে ফিরে তাকালো। প্রভাও তার ব্যতিক্রম নয়৷ সেও ফিরে তাকালো। তার পিছনে ফিরে তাকাতেই সে দেখতে পেল সেই পরিচিত দুটো নীল চোখ। চোখ দেখেই সে চিনে ফেলল ইনি কে। বিস্মিত কন্ঠে বলল,”রিহান!”

ইলিয়ানাও অবাক হয়ে গেছে রিহানকে এখানে দেখে। আর আজও সে মাস্ক পড়েই এসেছে। সানা প্রিস্ট সকলের উদ্দ্যেশ্যে বলল,”আপনারা একদম ঠিকই ধরেছেন ও হলো আমার ভাই রিহান প্রিস্ট। যাকে আপনারা সবাই রকস্টার রিহান নামেই চেনেন। লেট’স ওয়েল্কাম হিম।”

সবাই করতালি দিয়ে রিহানকে স্বাগতম জানালো। অনেকে তো হুমড়ি খেয়ে পড়লো তার সাথে সেলফি তোলার জন্য তো আবার কেউ অটোগ্রাফ নিতে গেল। কিন্তু প্রভা ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। রিহানকে এখানে দেখে সে ঘোরের মধ্যে চলে গেছে। সেই ঘোর থেকে এখনো বেরই হতে পারছে না।

রিহানও কিছুক্ষণ পর লক্ষ্য করল প্রভাকে। সানা প্রিস্ট সকলের উদ্দ্যেশ্যে বলল,”আমিই সেই যে আমার ভাইয়ের মিউজিক ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ও নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী থাকলেও আমার মনে হয়েছিল এই প্রতিযোগিতা মূলক মঞ্চে ও নিজের ক্যারিয়ার গড়তে পারবে না। কিন্তু রিহান আমাকে ভুল প্রমাণ করেছে। ও নিজের ট্যালেন্ট দিয়ে আজ এই যায়গায় পৌঁছেছে যে সকলে ওকে এক নামে চেনে। এখন আমিও নিজের ভাইকে নিয়ে অনেক গর্ব করি।”

এরইমধ্যে ইলিয়ানা বলে ওঠে,”ম্যাম, আমার একটা প্রশ্ন আছে। যদি আপনি অনুমতি দেন তো করতে পারি।”

“হ্যাঁ, করো।”

“আচ্ছা রকস্টার রিহান কাউকে মুখ দেখায় না কেন? আজও উনি মুখ ঢেকেই এখানে এসেছেন।”

রিহান হেসে বলে,”আমিই এই প্রশ্নের উত্তর দেই। আমি নিজের মুখ এখনো কাউকে দেখাই নি কারণ আমি সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করছি। সঠিক সময় এলেই আমি সবাইকে আমার মুখ দেখাব।”

কথাটা প্রভার দিকে তাকিয়েই বলে রিহান। প্রভা ব্যাপারটা খেয়াল করে না৷ সে তো শুধু রিহানের বলা কথা আর সৌভিকের বলা কথার মধ্যে সাদৃশ্যই খুঁজে পাচ্ছিল। প্রভা চিন্তা-ভাবনা করতে থাকে। বিড়বিড় করে বলে,”তাহলে কি রিহানই সেই ব্যক্তি যে আমায় সাহায্য করবে?”

প্রভা রিহনের দিকে তাকায়। দুজনের চোখাচোখি হয়। অত:পর সবকিছুই শান্ত। কিছুক্ষণ পর প্রভার কাছে আসে রিহান। এসে ফিসফিস করে বলে,”কেমন আছেন আপনি আমার ক্রেজি ফ্যান?”

“আমি মোটেই আমার ক্রেজি ফ্যান না।”

“তাহলে সেদিন ওভাবে মঞ্চে উঠে আমায় জড়িয়ে ধরেছিলেন কেন?”

“আমার কিছু ডাউট ছিল।”

“ওহ, আমায় ভালো টালো বাসেন নাকি?”

প্রভা ম্লান হেসে বলে,”আমি শুধু একজনকেই ভালোবাসি। আর আজীবন তাকেই ভালোবেসে যাব৷ অন্য কারো প্রতি আমার কোন আগ্রহ নেই।”

রিহান বলল,”কে সেই ভাগ্যবান ব্যক্তি?”

প্রভা রাগী কন্ঠে বলে,”আপনাকে জানতে হবে না। আমার প্রতি এত আগ্রহ আপনার দেখানোর দরকার নেই।”

“আমার তো মনে হয় আপনি আমার প্রতি ইন্টারেস্টেড।”

প্রভা চোখ পাকিয়ে বলে,”আমার আপনার প্রতি কোন ইন্টারেস্ট নেই৷ শুধু কিছু ডাউট আছে। আপনার কন্ঠের সাথে একজনের খুব মিল পাই। কিন্তু অন্য কোন মিল নেই আপনাদের মাঝে।”

এটা বলেই প্রভা পার্টির ওখান থেকে চলে আসলো৷ রিহান প্রভার যাওয়ার পানে তাকিয়ে অদ্ভুত ভাবে হাসতে লাগল।

(চলবে)…
#গল্পঃএকই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়

(সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন, ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here