#গল্পঃ_একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#পর্বঃ_২১
#লেখাঃ_ইয়াসমিন_খন্দকার
—-
প্রভা টের পেল কারো একজনের অস্তিত্ব। কেউ ছাতা হাতে তুলে তাকে বৃষ্টি থেকে আড়াল করছে। প্রভার মনে হলো এটা রায়ান। তাই সে অস্ফুটস্বরে বলে,””‘রায়ান! আপনি ফিরে এসেছেন আবার!”
প্রভা সাথে সাথেই পিছনে ফিরে তাকায়। পিছনে ফিরে তাকাতেই হতাশায় মজে যায় সে। প্রভার দৃষ্টিগোচর হয় দুটো নীল চোখ। ব্যক্তিটির মাস্ক পড়ে আছে বিধায় তার মুখ সে দেখতে পায়না। হতাশার শ্বাস ফেলে। লোকটির নীল চোখ, ব্রাউন কালারের চুল দেখেই বোঝা যায় সে এদেশীয় কেউ। তাই প্রভা নিজের ভুল বুঝতে পেরে হতাশ হয়। যুবকটি প্রভার থাকা ছাতাটি তুলে দিয়ে বলে,”Take this umbrella otherwise you will drench in the rain’s water.”
কথা টুকু বলেই যুবকটি চলে যায়। অদ্ভুতভাবে এই কন্ঠটা অনেক পরিচিত লাগে প্রভার। হুবহু রায়ানের মতো। কিন্তু সেটা কি করে হতে পারে? ইনি তো একজন বিদেশী ব্যক্তি। তাই প্রভা নিজের মনের দ্বন্দ্ব দূর করার জন্য যুবকটিকে ডাক দিলো। বলল,”Please wait.”
যুবকটি দাঁড়ালো। প্রভা তার সামনে গিয়ে বলল,”Can you show me your face, please!”
যুবকটি বোধহয় হাসলো। অত:পর বেশ ঠান্ডা মেজাজেই বলল,”Sorry. I can’t. Excuse me.”
বলেই সে চলে যায়। প্রভার হতাশার পাল্লা বাড়ে। যুবকটির কন্ঠ এবার ভালো করে শুনেছে প্রভা। তাই তার আবারো মনে হয় এটাই রায়ান। সে চিৎকার করে বলে,”রায়ান!”
কিন্তু যুবকটি এবার আর অপেক্ষা করে না। ত্রস্ত পায়ে হেটে চলে যায়। প্রভা তাকে অনুসরণ করতে যায় কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই যুবকটি তার দৃষ্টিগোচর হয়ে যায়। প্রভা হতাশার শ্বাস ফেলে বলে,”এতদিন পর তো একটা আশার আলো দেখতে পেলাম। সেটাও কি নিভে গেল?”
প্রভার হঠাৎ করেই মনে হলো এটা কি সত্যিই রায়ান ছিল? যদি রায়ান হতো তাহলে তার সাথে কথা বলল না কেন? তাহলে কি এটা অন্য কেউ? প্রভা কিছু বুঝতে পারছে না। সে তো কন্ঠটা শুনেছে ঠিক করে। অবিকল রায়ানের মতো। কিন্তু এ যে ভিনদেশী যুবক। প্রভার কাছে সবটা কেমন খালি খালি লাগছে। সে আর কিছু ভাবতে পারছে না৷ হঠাৎ করেই তার মাথা ঘুরতে থাকে। এরপর প্রভার চোখ ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে যায়। সে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। এমন সময় ঝাপসা চোখে সে দেখতে পায় কেউ এগিয়ে আসছে তারদিকে। জ্ঞান হারানোর পূর্বে আবারো তার দৃষ্টিতে এসে বাধে সেই দুটি নীল চোখ!
~~~~~~~~~
প্রভার জ্ঞান ফিরলে সে নিজেকে হাসপাতালের কেবিনে আবিষ্কার করে৷ তার পাশেই বসে থাকতে দেখতে পায় ডাক্তার অভিষেক চক্রবর্তীকে। প্রভা খুঁজতে থাকে সেই নীল চোখের যুবকটিকে। অভিষেক চক্রবর্তী প্রভার জ্ঞান ফিরতে দেখে বলে,”আপনি ঠিক আছেন তো? দেখেন তো কি কাণ্ড। ডাক্তার হতে এসে তো আপনি একদম রোগী হয়ে গেলেন।”
প্রভা বলল,”আসলে হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু আমাকে এখানে কে নিয়ে এলো?”
অভিষেক চক্রবর্তী বলল,”আমি যতদূর শুনেছি একজন যুবকই আপনাকে এখানে নিয়ে এসেছে।”
প্রভা অস্থির হয়ে জানতে চায়,”সেই যুবক এখন কোথায়? আমাকে প্লিজ তার কাছে নিয়ে চলুন না।”
অভিষেক চক্রবর্তী বলেন,”আপনি আগে শান্ত হন মিস:প্রভা। উনি আপনাকে হসপিটালের মধ্যে রেখেই চলে গেছে।”
“উনি আমার সাথে দেখা না করেই চলে গেলো?”
“আপনি ওনাকে চেনেন নাকি? কে ছিলেন উনি?”
প্রভা সম্বিত ফিরে পেয়ে বলে,”না, মানে আমার এত বড় উপকার করলেন তো। তাই ওনাকে ধন্যবাদ দেওয়ার ছিল। কিন্তু পারলাম না।”
“আরে এটা নিয়ে এত ভাবতে হবে না। এখানে সবাই এমন হেল্পফুল। আমার বাঙালিদের মতো কানাডিয়ানরা নয়। আমাদের বাঙালিদের ব্যাপারে তো জানোই একবার কোন উপকার করলে ঢাকঢোল পিটিয়ে বেড়ায়। কিন্তু কানাডিয়ানরা এমন না। কিছুদিন এখানে থেকেই বুঝতে পেরেছি এরা অনেক পরোপকারী এবং ভদ্র জাতি।”
এরপর ডা: চক্রবর্তী আরো অনেক কথা বলতে থাকেন৷ কিন্তু প্রভা সেসব কথায় আর কানই দেয়না। সে তো শুধু ঐ নীল চোখের যুবকের কথা ভাবতে থাকে। তার কেন জানি মনে হচ্ছে এই ছেলের সাথে রায়ানের অনেক মিল। তাই প্রভাকে যে করেই হোক তার সন্ধান পেতেই হবে। কিন্তু সেটা কি আদৌ সম্ভব হবে?
~~~~~~“
১ মাস পর,
প্রভার কানাডায় পৌঁছানোর পর এক মাস অতিবাহিত হয়েছে। এই এক মাসে প্রভা কানাডায় নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। প্রথম দিকে একটু অসুবিধা হলেও সে এখন নিজেকে সামলে নিয়েছে। নিয়মিত সে অনুরাধার মাধ্যমে নিজের মা-বাবারও খবর নেয়। তবে সেই দিনের পর আরো অনেক খুঁজেও সেই যুবকের কোন খোঁজ পায়নি প্রভা। তাই তার আশাও ছেড়ে দিয়েছে।
প্রভা আজ হসপিটালের ডিউটি শেষে বের হচ্ছিল। এমন সময় তার এক সহকর্মী ইলিয়ানা এসে তাকে বলে,”আজ আমরা একটা কনসার্ট দেখতে যাব। তুমি কি যাবে আমাদের সাথে?”
প্রভা আপত্তি জানিয়ে বলে,”সরি, আসলে আমি আজ খুব টায়ার্ড আছি। তাই যেতে পারবো না।”
“ইটস ওকে। তুমি যেতে না পারো কিন্তু আমরা যেই কনসার্টে যাচ্ছি সেখানে আজ কে আসবে সেটা আগে শোনো শুধু।”
“কে আসবে?”
“রকস্টার রিহান।”
“রকস্টার রিহান? কে তিনি?”
“তুমি রকস্টার রিহানকে চেনো না? Oh my god, ওয়েট আমি তোমাকে ওনার একটা গান শোনাচ্ছি।”
এই বলেই ইলিয়ানা নিজের ফোন বের করে একটা গান চালিয়ে দেয়,
This night is cold in the kingdom
I can feel you fade away
From the kitchen to the bathroom sink and
Your steps keep me awake
Don’t cut me down, throw me out, leave me here to waste
I once was a man with dignity and grace
Now I’m slippin’ through the cracks of your cold embrace
So please, please
Could you find a way to let me down slowly?
A little sympathy, I hope you can show me
If you wanna go then I’ll be so lonely
If you’re leavin’, baby, let me down slowly
Let me down, down, let me down, down, let me down
Let me down, down, let me down, down, let me down
If you wanna go then I’ll be so lonely
If you’re leavin’, baby, let me down slowly
Cold skin, drag my feet on the tile
As I’m walking down the corridor
And I know we haven’t talked in a while
So I’m looking for an open door
Don’t cut me down, throw me out, leave me here to waste
I once was a man with dignity and grace
Now I’m slippin’ through the cracks of your cold embrace
So please, please
Could you find a way to let me down slowly?
A little sympathy, I hope you can show me
If you wanna go then I’ll be so lonely
If you’re leavin’, baby, let me down slowly
Let me down, down, let me down, down, let me down
Let me down, down, let me down, down, let me down
If you wanna go then I’ll be so lonely
If you’re leavin’, baby, let me down slowly
প্রভা গানটা শুনে হতবাক হয়ে যায়। কন্ঠটা তার কাছে নিদারুণ চেনা লাগে৷ ১২ বছর আগে এই কন্ঠেই তো সে সুমধুর গান শুনেছিল যা আজো তার কানে বাজে। প্রভা ইলিয়ানার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আমি তোমার সাথে যাব।”
(চলবে)…
#গল্পঃএকই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
(সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন, ধন্যবাদ)