গল্পঃ_একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় #পর্বঃ_০২ #লেখাঃ_ইয়াসমিন_খন্দকার

0
606

#গল্পঃ_একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#পর্বঃ_০২
#লেখাঃ_ইয়াসমিন_খন্দকার

প্রভা এসে উপস্থিত হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে। আজ তাকে অনেক রোগী দেখতে হবে। সারাদিন অনেক ব্যস্ত শিডিওল আছে। নিজের কেবিনে প্রবেশ করল সে। অতঃপর চেয়ারে বসে পড়লো৷ কিছুটা জিরিয়ে নিয়ে রোগী দেখতে বসে পড়লো। কিছু সময় গড়ালো। একটা সময় পর একজন নার্স এসে তাকে বলল,”ম্যাম একজন আপনার সাথে দেখা করতে চাইছেন।”

“কোন পেশেন্ট?”

“না, উনি বলছেন আপনার সাথে জরুরি কথা আছে।”

প্রভা কপট রাগ দেখিয়ে বলল,”তুমি জানো না কাজের সময় আমি কোন অন্য কাজে ধ্যান দেইনা। যিনি এসে থাকুন না কেন ওনাকে অপেক্ষা করতে বলো।”

“ম্যাম, উনি সাধারণ কেউ নন।”

প্রভার রাগের মাত্রা বাড়লো। চেচিয়ে বললো,”কে উনি প্রেসিডেন্ট না প্রাইম মিনিস্টার? যেই হোন না কেন ওনাকে অপেক্ষা করতে বলো আর নাহলে বলো চলে যেতে।”

“ভেতরে আসবো?”

চেনা পরিচিত কন্ঠস্বরটা কানে আসতেই প্রভা তাকালো দরজার দিকে। কিছুটা অবাক হয়ে বলল,”আপনি?”

“হ্যাঁ, আমি। ভেতরে আসতে বলবে না?”

প্রভা নার্সকে বলল,”তুমি একটু বাইরে যাও।”

নার্স বাইরে চলে যেতেই প্রভা বলল,”আসুন আঙ্কেল ভেতরে আসুন।”

বৃদ্ধ রুহুল আমিন প্রভার কেবিনে প্রবেশ করলেন। প্রভা রুহুল আমিনকে প্রশ্ন করল,”ভালো আছেন তো আঙ্কেল?”

“ভালো আর থাকতে দিলে কই মা?”

“কেন আঙ্কেল.?”

“আমার ছেলেটাকে এভাবে ফিরিয়ে দিলে কেন?”

প্রভা কিছু বলল না। রুহুল আমিন খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলেন প্রভাকে। দেখে বোঝার জো নেই এই মেয়ের বয়স ৩০ ছুঁয়েছে। এখনো আগের মতোই স্নিগ্ধতা আছে মেয়েটার মাঝে।

রুহুল আমিন হাহাকার ভরা কন্ঠে বললেন,”আমি একজন রাজনীতিবিদ মা। জীবনে অনেক চড়াই উতড়াই দেখেছি। পাঁচ বার এই এলাকা থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছি। আমার জীবনে অনেক ঘটনার সাক্ষী হয়েছি। অনেক কিছু হারিয়েছি আবার অনেক কিছু অর্জনও করেছি। কিন্তু তবুও দেখো আমি আজ তোমার সামনে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে। তাহলে তুমি কেন হাসতে পারছ না মা?”

প্রভা বলল,”কি করবো আঙ্কেল? অতীত যে আমায় হাসতে দেয় না।”

“অতীতকে ভুলে যাও।”

“সবাই শুধু এটাই বলে। কিন্তু চাইলেই কি সব ভোলা যায়? আপনি পেরেছেন ভুলতে ১২ বছর আগের ঘটনাটা?”

হঠাৎ করে রুহুল আমিনের চোখ ভিজে উঠল। মনে পড়লো অতীতের টুকরো কথা।

“চা খাবেন বা কফি?”

“কিছু না মা, আমি শুধু তোমাকে এটুকু বলব অতীত ভুলে পারলে সামনে এগোও। চলি তাহলে।”

রুহুল আমিন বেরিয়ে গেলেন। তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইল প্রভা। একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। তারপর ডুব দিলো ১২ বছর আগের সেই দিনগুলোয়। হাসি, মজা, বন্ধুত্ব আর ভালোবাসায় ভরা সেই দিনগুলোর গল্প এবার আপনারাও শুনুন,,,,

~~~~~~~
১২ বছর আগে,,,

“এই প্রভা এখনো ঘুমাচ্ছিস কেন? আজ না আমাদের কলেজের প্রথম দিন, তাড়াতাড়ি উঠ।”

অনুরাধার ডাকে ঘুম ভাঙে প্রভার। সে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বলে,”সকাল হয়ে গেছে?”

তখনই প্রজ্ঞা বেগম রুমে এসে বললেন,”অনেক আগেই সকাল হয়েছে মা। সূর্য অনেক আগেই কিরণ দিয়েছে। তোমার অপেক্ষায় বসে নেই।”

“ওহ বুঝতে পারিনি।”

“তা বুঝবে কিভাবে? সারারাত জেগে পড়লে তো এমনই হবে না। আমি বুঝি না, কলেজ শুরু হতে না হতেই তোমার এত কিসের পড়াশোনা। বাপের জন্মে এমন পড়াকু মেয়ে দেখিনি।”

অনুরাধা প্রজ্ঞা বেগমের উদ্দ্যেশ্যে বলল,”আপনার কথা শুনে আমি আপনার ফ্যান হয়ে গেলাম আন্টি। ইস,আমার মাও যদি আপনার মতো হতো। তা না, সারাদিন শুধু বলে পড় পড়, মানে পড়া ছাড়া দুনিয়ায় যেন আর কোন কাজই নেই।”

প্রজ্ঞা বেগম অনুরাধার কথার প্রতিত্তোরে বললেন,”আমিও তো প্রভাকে সেটাই বলি। পড়াশোনার তো একটা লিমিট আছে নাকি। সারাদিন রাত ২৪ ঘন্টা বইয়ের সামনে বসে থাকবে। না কোথাও ঘুরতে যাবে, না অন্য কিছু করবে। এই পড়াকু মেয়েকে নিয়ে আমি আর পাইনা।”

তাদের কথার মাঝেই প্রভা ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে কলেজে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে নিলো। অনুরাধাকে বলল,”চল, আমি তৈরি হয়ে গেছি।”

“চল মানে? নাস্তা করে যাও।”

“না, মা। অনেক দেরি হয়ে গেছে।”

অনুরাধা বলে উঠল,”কিচ্ছু দেরি হয়নি৷ আন্টি তুমি ওর সাথে সাথে আমাকেও খেতে দাও তো, আমি তো আসার সময় খিচুড়ির গন্ধ পাচ্ছিলাম। তুমি নিশ্চয়ই আজও তোমার হাতের স্পেশাল ভুনা খিচুড়ি করেছ। যাও নিয়ে এসো।”

“আচ্ছা, তুমি প্রভাকে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে এসো। আমি দিচ্ছি।”

প্রজ্ঞা বেগম যেতেই প্রভা অনুরাধাকে বলল,”আচ্ছা, তুই না বললি দেরি হয়ে গেছে তাহলে এখন খেতে চাচ্ছিস কেন?”

“ক্ষুধা পেয়েছে খুব।”

প্রভা কিছু বলল না আর। চুপচাপ খেতে বসে পড়লো অনুরাধাকে নিয়ে৷ খাওয়া দাওয়া শেষ করে অনুরাধার সাথে কলেজের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিলো। দুই বান্ধবী যেতে যেতে গল্প করছিল। গল্প করছিল বললে অবশ্য ভুল হবে। অনুরাধা বলছিল আর প্রভা চুপচাপ শুনছিল। প্রভা খুবই চুপচাপ স্বভাবের। গুনে গুনে কথা বলে। অপরদিকে অনুরাধা মুখর প্রকৃতির। তার হাতের থেকে মুখ চলে বেশি।

অনুরাধা বলে চলছিল,”আমি তো কলেজ লাইফ নিয়ে খুব এক্সাইটেড। স্কুল লাইফে তো একটা প্রেম করতে পারলাম না। কলেজে যদি মনের মতো কাউকে পাই।”

প্রভা বলল,”এসব প্রেমের কথা বাদ দিয়ে পড়াশোনায় ফোকাস কর। লাইফে ভালো কিছু হবে।”

“তুই চুপই থাক। তুই ভুলে যাচ্ছিস, আমি আর্টসের স্টুডেন্ট তোর মতো সাইন্সের না। পড়াশোনা শেষ করে আমি লাইফে প্রেম করার পর্যাপ্ত সময় পাবো।”

প্রভা চুপ হয়ে গেল। অনুরাধা যেতে যেতে হঠাৎ বললো,”তবে আমার আরো একটা ইচ্ছা আছে। এবার কলেজে তোকেও একটা ছেলের সাথে প্রেম করিয়ে দেব। একটা হ্যান্ডসাম দেখে ছেলে৷ স্কুলে তো কম প্রপোজ পেলি না। কত বেচারার মুখের উপর না বলে দিলি। এবার কলেজে কিন্তু তোকে প্রেম করতেই হবে।”

“আমাকে আবার এসব প্রেম-টেমের মধ্যে টানছিস কেন?”

“কেন রে? তোর কি ফিলোফোবিয়া আছে যে প্রেম করতে পারবি না?”

“ঠিক সেটা না কিন্তু….”

কথা বলতে বলতে খেয়ালই ছিল না প্রভার। অন্যমনস্ক হয়ে গিয়ে হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে যায়। খানিকটা পিছিয়ে এসে বলে,”সরি।”

“সরি? হোয়াট সরি? চোখে দেখতে পাও না?”

“সরি।”

“আবার সরি? ধাক্কা দিয়ে সরি বললেই সব মিটে যায়?”

অনুরাধা তেঁতে উঠে বললো,”এই ছেলে তোমার সমস্যা কি হ্যাঁ? আমার বান্ধবী তো সরি বললই। আর কি চাও তুমি? এবার কি তোমায় পায়ে পড়বে?”

চোখ থেকে সানগ্লাসটা নামিয়ে অনুরাধা এবং প্রভাকে ভালো করে পরখ করে নিলো রায়ান৷ অতঃপর অনুরাধাকে বলল,”প্রয়োজনে তাই করবে।”

অনুরাধা প্রচণ্ড রেগে গেলো। আরো কিছু বলতে যাবে তখন প্রভা তার হাত টেনে বললো,”চল এখান থেকে। শুধু শুধু ঝামেলা বাড়িয়ে লাভ নেই। আমাদের লেইট হয়ে যাচ্ছে।”

এই বলে অনুরাধাকে একপ্রকার টেনে টেনে নিয়ে যেতে লাগল। রায়ান সেদিকে তাকালো। প্রভার দিকে তাকিয়ে আনমনে বললো,”মেয়েটা বেশ সাধাসিধা। ঝামেলা এড়িয়ে চলে। আই লাইক ইট।”

~~
অনুরাগ ফুঁসতে ফুঁসতে বলতে লাগল,”তুই আমাকে ওখান থেকে এভাবে নিয়ে এলি কেন প্রভা? ছেলেটার এত সাহস বলে কিনা তোকে পা ধরে ক্ষমা চাইতে হবে। আজ ওকে মজা দেখিয়ে দিতাম।”

“তুই কি ঝামেলা ছাড়া কিছু বুঝিস না অনু? কি দরকার এসবের? চল তো আমরা যাই, লেইট হচ্ছে তো।”

“ধুর। তুই এত সাধাসিধা কেন রে? এমন হলে তো এই জটিল দুনিয়ায় টিকতেই পারবি না।”

কথা বলতে বলতেই কলেজের সামনে উপস্থিত হলো দুজনে৷ নতুন কলেজ, নতুন উন্মাদনা। কলেজের গেট ভেদ করে ভেতরে প্রবেশ করতেই পিলে চমকে গেল দুজনের। অনুরাধা চমকে উঠলো,”এই ছেলে এখানে!”

প্রভাও অবাক হয়ে গেলো বেশ৷ রায়ানেরও নজর পড়লো প্রভাদের দিকে। প্রভার দিকে একনজর তাকিয়ে বললো,”এই সাধাসিধা মেয়েটা তাহলে আমাদের কলেজেই পড়বে! ইন্টারেস্টিং।”

(চলবে)…
#গল্পঃএকই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়

[অনেকেই হয়তো বুঝতে পারবেন না,তাই পরিস্কার করে দিচ্ছি #একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় গল্পটা এখন থেকে ১২ বছর অতীতের গল্প শোনাবে। অতীতে প্রভার সাথে কি হয়েছিল তা আপনারা জানবেন। কেন হাসিখুশি, নম্র, ভদ্র মেয়েটা এমন বদলে গেল জানতে পারবেন। এরপর অতীত শেষ হয়ে বর্তমান আবার আসবে।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here