#গল্পঃ_একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#পর্বঃ_২২ (বোনাস)
#লেখাঃ_ইয়াসমিন_খন্দকার
—-
প্রভা তার কলিগ ইলিয়ানার সাথে রকস্টার রিহান এর কনসার্ট দেখতে এসেছে। তার মনে অনেক আগ্রহ তৈরি হয়েছে এই ভিনদেশী রকস্টারকে নিয়ে। কারণ তার গান প্রভাকে কারো কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। যেই লোকটিকে সে ভুলতে পারছে না। ১২ বছর আগে যাকে হারিয়েছে কিন্তু এখনো খুঁজে বেড়ায়। প্রভার আজও মনে হয়, কোন একদিন রায়ান আবার তার সামনে এসে দাঁড়াবে। হোক না সেটা কোন রূপকথার গল্পের মতো। কিন্তু গল্পও তো কখনো বাস্তবতাকে ছাপিয়ে যায়। আর যেই গল্প বাস্তবতাকে ছাপিয়ে যায় তাই উদাহরণ সৃষ্টি করে দেয়।
প্রভা লক্ষ্য করছে ইলিয়ানা অনেক উদগ্রীব। দেখে বোঝাই যাচ্ছে সে রকস্টার রিহানের অনেক বড় গান। প্রভা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। তার রকস্টার রিহানকে নিয়ে কোন আগ্রহ নেই। সে তো শুধু নিজের মনের সন্দেহ দূর করার জন্য এখানে এসে পৌঁছেছে। রিহানের কনসার্ট দেখার জন্য তারা এসে উপস্থিত হয় অটোয়া শহরের কিংস গ্রাউন্ডে। এই কিংস গ্রাউন্ডেই আজ রিহানের কনসার্ট হবে। যেই উপলক্ষে লাখ লাখ মানুষ জড়ো হয়েছে চারিদিকে। প্রভা বুঝল রকস্টার রিহান বেশ জনপ্রিয়। সে খুব কমই এত জন সমাগম দেখেছে। কোথাও পা ফেলার পর্যন্ত যায়গা নেই। প্রভার মনে এই মুহুর্তে অন্য চিন্তা এলো। সে কি তবে এখানে ভুল বশত চলে এলো? তার সন্দেহ কি তবে শতভাগ ভুল? এতটা ভুল সে কি করে হলো রায়ানের গলার স্বর শুনতে। প্রভা বুঝতে পারল না কিছুই। তবে এখন তার রকস্টার রিহানের জন্য অপেক্ষা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। তাই প্রভা অপেক্ষার প্রহর গুনতে লাগল।
সময় যতো এগোচ্ছিল প্রভার মনে উত্তেজনার পারদ ততোই চড়ছিল। এমনিতেই তার এত ভীড় ভাট্টা পছন্দ নয়। ছোটবেলা থেকেই এসব এড়িয়েই চলেছে সে। ইন্ট্রোভার্ট আর প্রচণ্ড ঘরকুনো ছিল প্রভা। এখন একটু চেঞ্জ হলেও পুরোপুরি বদলে যায়নি সে। তাই এত লোকের সমাগমে সে বিরক্তই ছিল। তবু দাঁতে দাঁত চেপে সব সহ্য করছিল সত্য উদঘাটন করার উদ্দ্যেশ্যে। সময় যতো এগোচ্ছিল প্রভার অপেক্ষা যেন আর শেষই হতে চাইছিল না। প্রভার পাশে বসে থাকা ইলিয়ানাও চরম উত্তেজিত। সে প্রভার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আর একটু পরই রকস্টার রিহান স্টেজে পারফর্ম করার জন্য উঠবে। আমার তো খুব এক্সাইটেড লাগছে।”
প্রভা হাফিত্তেশ করে। ইলিয়ানা দীর্ঘ সময় ধরে এই এক কথাই বলে চলেছে। তবে বাস্তবতা হলো রিহানের আসার এখনো কোন খোঁজ খবরই নেই।
প্রভার এহেন ভাবনার মধ্যেই স্টেজে উঠে এলো এই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক। তিনি এসেই বলেন,”Ladies and gentleman, thanks for your patience. I know that you all are waiting for Rock star Rihan. And he is on the way. Just wait… he will arrive soon. ”
উপস্থিত দর্শক আরো উত্তেজিত হয়ে যায়। তারা সকলেই নিজেদের আইডলকে দেখার জন্য উদগ্রীব ছিল। তাই কারো আর তড় সইছিল না৷ এমন সময় সঞ্চালক পুনরায় সবার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”The time is coming. Rock star Rihan is here…please welcome him.”
দর্শক উত্তেজিত হয়ে কড়তালি দেওয়া শুরু করে। কেউ তো আবার রিহানের নামে প্লাকার্ড নিয়ে চিল্লাতে থাকে। প্রভা এসবে বিরক্ত হচ্ছিল ভীষণ। তবু সে ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করে রিহানের আগমনের জন্য। অবশেষে প্রভার অপেক্ষার পালা শেষ হয়৷ রকস্টার রিহান এসে উপস্থিত হয় কিংস গ্রাউন্ডের মঞ্চে। প্রভা ভালো করে তাকিয়ে দেখতে পায় সেই দুটি নীল চোখ আর ব্রাউন চুলের লোকটিকে। প্রভা হতবাক কন্ঠে বলে ওঠে,”ইনিই রিহান!”
পাশ থেকে ইলিয়ানা বলে,”হ্যাঁ, এই হলো রকস্টার রিহান। যার জন্য সবাই পাগল। দেখেছ কি হ্যান্ডসাম? এইজন্য ওনার এত এত ফ্যান। শুধু হ্যান্ডসামনেস নয় ওনার গানও খুব সুন্দর। তুমি তো শুনলেই।”
প্রভা কিছু বলল না। লোকটি আজও মাস্ক পড়ে এসেছে। প্রভার এই ব্যাপারটা অনেক বিরক্ত লাগে। প্রভা শুধু অপেক্ষা করে তার মাস্ক খোলার। কিন্তু সে মাস্ক না খুলেই তার অডিয়েন্সের উদ্দ্যেশ্যে কিছু বলতে থাকে। প্রভা ইলিয়ানাকে জিজ্ঞেস করে,”আচ্ছা এই রকস্টার রিহান মাস্ক পড়ে আছে কেন? সে কি নিজের মুখ দেখাবে না?”
ইলিয়ানা মৃদু হেসে বলে,”ওহ তুমি বোধহয় জানো না, রকস্টার রিহান আজ অব্দি কোনদিন জনসম্মুখে নিজের মুখ দেখায় নি। মাস্ক পড়েই সবসময় কনসার্ট এটেন্ড করেছে। তার এত ফ্যান থাকার পরেও কারো আজ অব্দি তার মুখ দেখার সৌভাগ্য হয়নি। কত সাংবাদিক চেষ্টা করেছে তার ছবি তোলার কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। উনি এতোটা প্রাইভেসি মেইনটেইন করে চলেন যা বলার বাহিরে।”
প্রভা বিড়বিড় করে বলে,”স্ট্রেঞ্জ! এত বড় একজন সেলিব্রিটি অথচ তার মুখ কেউ দেখে নি। ব্যাপার টা বেশ রহস্যজনক লাগছে।”
এরমধ্যে রকস্টার রিহান ঘোষণা দেয় আজকের কনসার্টটা অনেক স্পেশাল হবে। কারণ আজ সে ১৫ টি ভিন্ন ভাষায় ১৫ টি দেশের গান বলবে। যার মধ্যে আছে ইংরেজি, তুর্কি, কোরিয়ান, ফ্রেঞ্চ, চাইনিজ, ইটালিয়ান,পর্তুগীজ, স্প্যানিশ, আরবি, ফার্সি, হিন্দি, জার্মান, ফিলিপিনো, সিংহলি এবং বাংলা।
রিহানের এই ঘোষণা তো তার ভক্তদের
অনেক খুশি করে দেয়। ইলিয়ানা তো উত্তেজিত হয়ে বলে,”আজ তো এই কনসার্ট লাখো দর্শকের হৃদয়ে আলোড়ন তুলবে। রিহানের ম্যাজিকাল কন্ঠে আজ আমরা ১৫ টি ভাষার ১৫ টা গান শুনতে পারবো। ভাবলেও খুশি হচ্ছে খুব।”
রিহান ঘোষণা দিয়েই বসে থাকে না। প্রথমেই সে জনপ্রিয় ইংরেজি গান, “See You Again” দিয়ে স্টেজে আগুন লাগিয়ে দেয়। এরপর টার্কির ভাইরাল আইসক্রিম সংগ গায়। এরপর কোরিয়ান “গ্যাংগনাম স্টাইল” গেয়ে স্টেজ কাপায় সে। হিন্দিতে গায়, “Dilwale Dulhaniya le jayegenge” মুভির টাইটেল সংগ। এরপর পালা আসে বাংলার। বাংলা গানের পালা আসতেই রিহান চুপ রয় কিছুক্ষণ।
এদিকে প্রভা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে রিহানের মুখে বাংলা গান শোনার জন্য। এতক্ষণ তার কন্ঠ ভালো ভাবেই পর্যবেক্ষণ করেছে প্রভা। তাতে সন্দেহ অনেকটাই গাঢ় হয়েছে। কিন্তু এবার যদি তার গলায় বাংলা গান শোনে তাহলে একদম শত ভাগ নিশ্চিত হতে পারবে যে এই তার রায়ান।।
অন্য দিকে রকস্টার রিহান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বাংলায় গাইতে শুরু করে,
❝যদি বারে বারে একই সুরে প্রেম আমায় কাঁদায় তবে
প্রেমিকা কোথায় আর প্রেমই বা কোথায়?
যদি দিশেহারা ইশারাতে প্রেমই ডেকে যায়
তবে ইশারা কোথায় আর আশারা কোথায়?
যদি মিথ্যা মনে হয় সব পুরোনো কথা…❞
রিহান তার পুরো গান শেষ করার আগেই প্রভা চিৎকার করে বলে,”রায়ান! আপনি ফিরে এসেছেন!”
এই বলে দৌড়ে স্টেজের দিকে যায় প্রভা। ইলিয়ানাও কিছু বুঝে উঠতে না পেরে তার পিছনে দৌড় দেয়। প্রভাকে শুরু থেকেই তার অন্যরকম লাগে। আর আজ যা হলো তা সত্যিই অন্যরকম ছিল। এটা সে আশা করেনি।
প্রভা দৌড়ে স্টেজে উঠে রকস্টার রিহানকে জড়িয়ে ধরে। লাখ লাখ দর্শক একদম হতবাক হয়ে যায়। প্রভা রিহানকে জড়িয়ে ধরেই বলে,”আমি আপনাকে চিনতে ভুল করিনি। আপনি আমার রায়ান। কোথায় ছিলেন এতদিন আপনি? কেন আমার থেকে লুকিয়ে ছিলেন?”
রকস্টার রিহান বলে,”Who are you? And what are you saying? I can’t understand.”
“আমি প্রভা। তুমি আমায় চিনতে পারছ না?”
রকস্টার রিহান অপলক তাকিয়ে থাকে।
(চলবে)…
#গল্পঃএকই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
(সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন, ধন্যবাদ)