তপ্ত ভালোবাসা #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া #পর্বঃ২৫

0
242

#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ২৫

.
🍁
কথাটা বলে আমি আস্তে করে ঘাড় ঘুরিয়ে বাহিরের দিকে তাকায় অনুভূতি শূন্য চোখে, কিছু ভালো লাগছে না আমার সবকিছু কেমন ধোঁয়াসা ধোঁয়াসা লাগছে আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি কোথায় গোলক ধাঁধাঁর ফেঁসে আছি বাজে ভাবে, আর এখন যেটা হচ্ছে সেটা ঠিক না সবকিছু পিছনে বড় কিছু সত্যি লুকিয়ে সেটা যেটা আমার চোখের সামনে হচ্ছে না বাহিরের হচ্ছে,,,,,

.

আমার এমন সব চিন্তা ভাবনায় মাঝে আমার এসে পৌছায় একটি বিশাল বড় বাড়ির সামনে যেখানে বড় বড় অক্ষরে লেখা আছে খাঁন ম্যানসন গেটের ওপর,,, গেটের ওপরের নামটি দেখেই আমি হালকা চমকে উঠি কারণ আমার বুঝতে বাকি নেই এটি খাঁন মনজিল রুদ্রের বাসা নয় আর রুদ্র আমাকে এখানে কেন নিয়ে আসেছে আপাতত কিছুই বুঝতে পারছি না এই মূহুর্তে, আমি আরও ভালো ভাবে বুঝার জন্য গাড়ির জালানা দিয়ে নিজের মাথাটা বের করে চারপাশে নিজের চোখ বুলিয়ে চলছি বরাবরই মতোই, আর রুদ্রের গাড়িটি গেট ধরে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করে, গেটের ভিতর প্রবেশ করার পরও আরও দুমিনিট রুদ্র গাড়িটি চালিয়ে বাড়িটি সামনে এনে থামায় গাড়িটি, গেট থেকে আরও অনেকটা দূরে বাড়িটি অবস্থান করছে ,

.

বাড়ির ভিতর প্রবেশের রাস্তা ও চারপাশে বাগানটা ছিল অতিব সুন্দর দৃশ্য অধিকারী যাকে বলে নজর কারা সুন্দর এখানে সবকিছু অত্যাধুনিক নিজের হাতে গড়া বাগানের এক একটি প্রতিমা,, বাড়ির বাহিরটা বিশাল বড় এরিয়া নিয়ে একটি বাগান তৈরি করে রেখেছে আর বাগানের সবটা দৃশ্য ভালো করে পযবেক্ষন করার জন্য এক পাশে বসার জায়গায়ও করে রেখেছে ছোট খাটো ডিজাইন বাংলো ঘরে মতো করে আর সবচেয়ে বড় কথা হলো বাগানের, গেটের, বাগানের রাস্তা, জায়গায় জায়গায় সিকিউরিটি গার্ড দাড়ানো বন্দুক হাতে নিয়ে, সবমিলিয়ে মনোরম পরিবেশ খান বাড়ির বাহিরের পরিবেশটা, আর এই পরিবেশ দেখে যেকেউ বুঝতে পারবে যে কতটা সুখীন মানুষ যে রিদ খানের পরিবার……..

.

আমি চোখ বুলিয়ে চারপাশটা পযবেক্ষন করেই চলছি, আমার এমন পযবেক্ষন করার মাঝখানেই রুদ্র এসে আমার পাশের গাড়ির দরজাটি খুলে দেয় হাসি মুখে, আমি রুদ্র দিকে তাকিয়ে থেকে হালকা মুচকি হেসে আস্তে করে গাড়ি থেকে নেমে যায়, আমি নামার সাথে সাথে রুদ্র আমার হাত ধরে বাড়ির ভিতর নিয়ে যেতে লাগলো, আমি রুদ্রের পায়ে পায়ে সাথে তাল মিলিয়ে হাটতে থাকি আর আবাক করা দৃষ্টিতে চারপাশেটা তাকিয়ে পযবেক্ষন করতে থাকি, আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমি এই বাড়িটি আগেও কোথাও দেখেছি কিন্তু কোথায় দেখেছি সেটা মনে করতে পারছি না, কিন্তু আমর একদম ভিতর থেকে ফিংল হচ্ছে আমি আগেও এই বাড়িটি নিশ্চিত ভাবে কোথাও দেখেছি কারও কাছে, আমার এমন দু-টানা মধ্যেই চারপাশে চোখ বুলাতে বুলাতে রুদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠি…….

.

—” এই বাড়িটি আমি আগেও কোথাও দেখেছি মনে হচ্ছে,,,,

.

আমার এমন কথায় রুদ্র হাটতে হাটতে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে হাসি মুখে বলে……

.

—” তাই বুঝি,

.

আমার কথাটা রুদ্র হেঁয়ালি ভাবে নিতে দেখে আমি আবারও চারপাশে চোখ বুলাতে বুলাতে হালকা উত্তেজিত কন্ঠে রুদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠি…….

.

—” হ্যাঁ আমি সত্যি বলছি কোথায় যেন দেখেছি এই বাড়িটি, পরিস্কার করে বলতে পারছি না কোনো কিছু,,,,,

.

আমার উত্তেজিত কন্ঠ শুনে রুদ্র আমাকে শান্তনা সুরে বলে….

.

—” আমি জানি তো সেটা কোথায় দেখেছো তুমি, হয়তো তুমি কোনো নিউজ পেপারে দেখছো এই বাড়িটি, কারণ রিদ বা নানাভাই অনেক বার এই বাড়ি থেকে ইন্টারভিউ দিয়েছে, আর সেটাই তুমি হয়তো তখন দেখছো টিবিতে বা নিউজ পেপারে,,,,,

.

রুদ্র এমন কথায় আমি মূহুর্তেই চুপ করে যায়, কারণ এই বিষয়টি সত্যি হতে পারে আমার মনে হচ্ছে, হয়তো আমি কখনো টিবিতে দেখেছি এই বাড়িটি কিন্তু এখন মনে পরছে না সেটা, তাই আমি রুদ্রের কথা অনুযায়ী সুমতি জানিয়ে আস্তে করে বলি…..

.

—” হুমমম….

.

কথাটা শেষেই রুদ্র আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে বাড়ির মেন দরজা ধরে বাড়ির ভিতরের প্রবেশ করে, খুব সম্ভবত বাড়ির মেন দরজা সামনে দু’জন বডিগার্ড দাড়ানো থাকা কারণে তাই বাড়ির মেন দরজাটা লাগানোর প্রয়োজন বোধ মনে করে না খান বাড়ির সদস্যরা,,,,

.

আমার এমন সব চিন্তা ভাবনায় মাঝে আমার এসে পৌছায় বাড়ির ভিতরের, রুদ্রের সাথে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করার পর পরই আমি বাড়ির ভিতরটা দেখে সাথে সাথে চমকে উঠে হা করে তাকিয়ে থাকি বাড়ির ভিতরের প্রতিটা জিনিসের দিকে, আমার মনে হচ্ছে আমি ভুল করে কোনো রাজপ্রাসাদে চলে এসেছি এত সুন্দর আর ডিজাইনিং বাড়ি আমার লাইফে এই প্রথম সরাসরি দেখেছি, এতটা সুন্দর যে যতটা বর্ণানা করবো ততাই কম হবে,,,,,

.

বাড়ি বাহিরের রংটা সাদা থাকলেও ভিতরটা গোল্ডেনের ছড়াছড়ি আর চারপাশে তার সাথে গোল্ডেন ডেকোরেট করা, বিশাল বড় এরিয়া নিয়ে ড্রয়িংরুমে তার সাথে একপাশে কাঁচের ডাইনিং আর নিচে ফ্লোরের দিকে তাকালে মনে হয় আমি কাঁচের ওপর দিয়ে হাঁটছি কারণ ফ্লোরটা এতটাই সচ্ছ যে নিজের ফেসটা দেখে যাচ্ছে স্পষ্ট ভাবে….
ড্রয়িংরুমের এক একটা ফিলার গুলো নকশা মতো করে ডিজাইন করে তৈরি করেছে উনারা, আর ফ্লোর থেকে ছাদটা এতটাই উঁচু যে মনে হচ্ছে তিন তলা বিশিষ্ট উঁচুটা হবে, ড্রয়িংরুম থেকে ওপরের যাওয়ার সিঁড়িটা মনে হচ্ছে কাঁচ দিয়ে তৈরি করা তার সাথে প্রতিটি কাচের সিঁড়ির ভিতরে লাইটিংও করে রেখেছে সুন্দর করে,,,,

.

আমি আবাক করা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে সবটা দেখেই চলছি আমার এমন করে দেখার মাঝে খানে কারও কন্ঠ পেয়ে চমকে দ্রুত পাশ ফিরে তাকায় আমি তখনই চোখ পড়লো মিসেস খাঁনকে মানে রিদ খানের দাদীকে, উনি হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,, উনাকে আমাদের সামনে আসতে দেখে রুদ্র হাসি মুখে উনার দিকে এগিয়ে গিয়ে পাশ থেকে জরিয়ে ধরে আহাদু সুরে বলে উঠে……

.

—” এইতো আমার কলিজা বুড়িটা,,,,

.

রুদ্রের এমন কথায় দাদীর একহাতে রুদ্রের কান ধরে ক্ষেপ্ত সুরে বলে উঠে……..

.

—” বিপদে পরলে বুড়ি কথা মনে হয় তোদের দুই ভাইয়ে নয়তো সারা বছরে কোনো খবর নিতে হয়না তোদের তাই না…….

.

—” আহ বুড়ি লাগছে তো,,,

.
—” লাগুক….

.
—” আরে ইচ্ছে করে এমনটা করি নাতো, আমার দুই ভাই ই কাজে চাপ থাকি অনেক তাই তোমাকে ঠিক করে সময় দিতে পারিনা অন্য কিছু না…..

.

রুদ্রের এমন কথায় দাদী হালকা নরম হয়ে আসে পরে রুদ্রের কান ছেড়ে দিয়ে অভিমান সুরের বলে উঠে….

.

—” সেটাই তো তোদের কাছে তোদের কাজটাই প্রদান্য পাই সব সময় বাকি তোদের পরিবার তোদের কাছে কিছু না,,,,

.

দাদীর এমন কথায় ছিল একরাশ কষ্ট লুকানো আর সেটা হয়তো উনার দুই নাতিকে নিয়ে বিশেষ করে রিদ খানকে নিয়ে একটু বেশি হবে কারণ উনি পরিবারকে একদমই সময় দিতে চাই না রুদ্র তাও সবাইকে যতটা সময় দেয় রিদ খান তাও দেয় না নাকি রুদ্র বলেছে আমাকে, তাই দাদীর অভিমানের ধাপটা ও উনার দ্বিতীয় নাতির ওপরই একটু বেশি,,,, দাদীর কথার মানেটা রুদ্র বুঝতে পেরে দাদীর মুড ঠিক করার জন্য কথা ঘুরিয়ে আমাকে দেখিয়ে তাত্ক্ষণিক বলে উঠে……

.

—” দাদী তুমি তো মায়াকে দেখনি সাথে কথায় বলো নি এখনো পর্যন্ত,,,,,

.

রুদ্র এমন কথায় দাদী হাসি মুখে আমার সামনে এগিয়ে এসে আমাকে জরিয়ে ধরে কপালে আলতো করে একটা চুমু খেয়ে হাসি মুখে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে…….

.

—” আমার মা টাকে আমি মনে রাখবোনা তা কি হয় নাকি, আমার রাগটা রিদ আর রুদ্রের ওপর থাকলেও তোর ওপর কিন্তু আমার ভালোবাসাটা শত% আছে,, তোকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে মন থেকেই,,,,

.

দাদী কথা আমি শুধু একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিলাম কিছু না বলে দাদী আমার একহাত চেপে ধরে নিজের সাথে করে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসিয়ে উনি নিজের ও আমার পাশে বসে পরে, রুদ্র ও আমাদের পিছন পিছন এসে সোফায় আমাদের পাশে সোফাটাশ বসে পরে দাদী আমাকে নিয়ে সোফায় বসেই বলে ওঠে…..

.

—” কি ব্যাপার এতটা চুপচাপ কেন তুই, আমি তো জানি তুই নাকি প্রচুর কথা বলিস মানুষকে নাকি সর্বোচ্চ বিরক্ত করিস সাথে নাকি অদ্ভুত সব কাজ করে বেড়াস তাহলে এখন চুপ করে বসে আছিস কেন হুমম….

.

দাদীর এমন কথায় চমকে উঠে দাদীর দিকে তাকায় আমি কারণ আমি বেশি কথা বলি এটা কে বলতে পারে দাদীকে সেটাই ভাবছি এখন, আমি যতটুকু জানি আমার পরিবারের কেউ এমন কথা গুলো বলবে না দাদীকে আমার আম্মু ভয়ে যদি বিয়েটা ভেঙে যায় তো সেই জন্য, আর রইলো রুদ্র তাহলে রুদ্র সাথে আমার তেমন একটা দেখা বা কথা হয়নি যার মাধ্যমে রুদ্র বুঝতে পারবে যে আমি বেশি কথা বলি সেটা, রুদ্র নিজেও হয়তো ঠিক করে জানে না যে আমি কতটা পাগলামো করতে পারি এই বিষয়ে তাহলে কে বলতে পারে দাদীকে এমন বিষয়ে এ, আমি এমন সব চিন্তা ভাবনায় মাঝেই কৌতুহলী হয়ে দাদীকে প্রশ্ন করে বলে উঠি…..

.

—” তুমি কি করে জানলে দাদি…… (আমি দাদীকে তুমি করে বলি, কারণ দাদী বলেছে তুৃমি করে বলতে, দাদী যখন আমাকে রুদ্রের জন্য আক্টি পরিয়ে দেয় তখনই আমার সাথে দাদী একদমই ফ্রী হয়ে যায় এসব বিষয় নিয়ে, তাই দাদী আমাকে তুই আর আমি দাদীকে তুমি করে বলি)

.

আমার এমন কথায় দাদী হেসে উঠে বলে……

.

—” তোর অনেক কৌতুহল এটাও বলেছে…….

.

দাদীর এমন কথায় এবার আমার কৌতুহল হওয়ার ধাপটা আরও একগুণ বেড়ে যায়, আমার সাথে সাথে রুদ্র ভ্রুঁ কুঁচকে দাদীর দিকে তাকিয়ে আছে জানার জন্য কে বলেছে এসব কথা গুলো, কে হতে পারে যে আমাকে এতটা ভালো করে জানে আমার অগোচরে,,,, আমার দু’জনকে এই ভাবে তাকাতে দেখে দাদী হেসে উঠে বলে…..

.

—” রিদ বলেছে এই কথা গুলো, আমিও প্রথমে চমকে ছিলাম তোদের মতোই পরে রিদ আমাকে নিজেই থেকে আবার বলে ওকে নাকি মায়া বেশ কয়েক বার বিরক্ত করেছে তাই ওহ জানে নাকি,,,

.

দাদী কথায় রুদ্র হেসে ফেললেও আমি আপাতত কোনোটাই করছি না কারণ রিদ খান সম্পর্কিত কোনো কিছু জানতে চাই না আমি,,,, তাই আমি চুপচাপ বসে আছি দাদীর পাশে আমার চুপ থাকার মাঝে একগাদা খাবার এনে রেখে যায় আমাদের সামনে সার্ভেন্ডরা, খাবার সামনে আসতেই দাদী আমাকে তাড়া দিয়ে বলে সব গুলো খাবার শেষ করে তারপর জায়গায় থেকে উঠতে, আমি এক পলক খাবার দিকে তাকিয়ে থেকে আবারও দাদীর দিকে করুন চোখে তাকায় অসহায় ফেস করে কারণ এত খাবার আমি কোনো কালেই শেষ করতে পারবো কিনা আল্লাহ জানে….

.

নেক্সট পাট একদিন পর পাবেন….)

.

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here