তপ্ত ভালোবাসা #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া #পর্বঃ_২৩

0
256

#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_২৩

.
🍁
—” আস্তে আস্তে মায়ুপাখি, তুমি একসাথে এতো গুলা প্রশ্ন করলে আমি উত্তর দিব কি করে, আমি একটা করে তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি ঠিক আছে… তো হ্যা কি যেন বললা তুমি প্রথমে কোথায় আছো তাই তো,, এটা হসপিটাল, তুমি এখন হসপিটালের কেবিনে শুয়ে আছো অজ্ঞান অবস্থায় দীর্ঘ বার ঘন্টা যাবত, তোমাকে দুপুর দুটোর সময় হসপিটালের আনা হয়েছে আর এখন রাত একটা বাজে তুমি দীর্ঘ বারো ঘন্টা যাবত অজ্ঞান অবস্থায় ছিলে,,, তুমি জানো তোমাকে নিয়ে কতটা টেনশনে ছিলাম আমরা সবাই, তোমার যদি কিছু হতো তাহলে আজ আমার কি হতো, আর সাথে আসিফকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাতে মন চাইছে আজ যদি আসিফ তোমাকে সময় মতো হসপিটালের না আনতো তাহলে তো আজ তোমার সাথে সাথে আমিও মরে যেতাম নিশ্বাস আটকে……

.

রুদ্র এমন কথায় আমি শিহরিত হয়ে চমকে উঠি, আমি গত বারো ঘন্টা যাবত অজ্ঞান অবস্থায় হসপিটালের কেবিনে শুয়ে আছি তাহলে আমার পরিবার কোথায় ওরা নিশ্চয় আমার জন্য অনেক টেনশন করছে আমাকে না পেরে, বাবা, ভাইয়া, মা, ভাবি, আপু সবাই এতক্ষণে হয়তো আম্মু আমার পাগল পাগল হয়েও গেছে আমার টেনশনে, এমনিতে যদি আমি কোনো কারণ মাথায় অল্প আঘাত ও পাই সেটাই মেনে নিতে পারেনা আমার পরিবারের কেউই সবার চোখে মুখে তখন আমাকে নিয়ে টেনশনে আর ভয়ে ছাপ স্পষ্ট ফুটে ওঠে অজানা কারণে,, আর এখন তো আমাকে স্বয়ং খুজে পাওয়া যাচ্ছে না হয়তো এতক্ষণে সবার অনেক বেশি খারাপ অবস্থা হয়ে গেছে,

.

আমি এমন সব চিন্তা ভাবনায় মাঝেই ভয় ভয় নজর রুদ্র দিকে তাকিয়ে থেকে আবারও বলে উঠি……

.

—” আমার আম্মু আব্বু যাবো, আআমার আমার পরিবারের সবার সাথে আমি কথা বলতে চাই প্লিজ আপনি আমাকে সবার সাথে একটু কথা বুলিয়ে দিন, সবাই আমার জন্য টেনশনে করছে অনেক, আমি বাসায় যাবো…..

.

আমাকে অস্থির হতে দেখে রুদ্র দ্রুত আমাকে শান্ত করার জন্য শান্তনা সুরে বলে উঠে……

.

—” cool, cool, মায়ুপাখি তুমি শান্ত হও আগে, তোমার পরিবারের সবাই এখানেই ছিল দুপুর থেকে কিছুক্ষণ আগে তাদেরকে আমি বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি আরিফকে দিয়ে এখন শুধু তোমার মা আর আমি আছি হসপিটালের, তোমার মা তোমার পাশের সিটেই ঘুমিয়ে আছে দেখো তুমি, আর হ্যা এখন তোমার মাকে ডাকার দরকার নেই, আমি আছি তো তোমার পাশে ভয় নেই তোমার কেমন, আর দুপুর থেকেই তোমার টেনশনে টেনশনে কান্না করতে করতে শেষ তোমার আম্মু, বারবার বলছে এভার যদি তোমার কোনো কিছু হয় তো উনি নাকি বাচবে না, তোমার পরিবারের সবাই তোমাকে দেখে গেছে এখানে আর কাল তোমাকে রিলিজ করা হবে তাই তুমি কালিই বাসায় যেতে পারবে,,,,

.

রুদ্র কথায় আমি পাশ ফিরে আম্মু দিকে তাকালাম চোখের সামনে আম্মু ঘুমন্ত চেহেরাটা দেখে মনের মধ্যে প্রশান্তি অনুভব করছি, কিন্তু আবারও হঠাৎ রুদ্র আজব কথা চমকে উঠে রুদ্র দিকে তাকায় আমি, আমাকে তাকাতে দেখে ভ্রুঁ কুচকে রুদ্র বলে উঠে……..

.

—” আচ্ছা তোমার কি আগে কখনো কোনো সময় এক্সিডেন্ট হয়েছিল, উনার কথায তো তাই মনে হচ্ছিল আমার,,,

.

—” নাতো আমার কখনোই এমন কোনো এক্সিডেন্ট হয়নি, আমার তেমন কিছুই মনে পরছে না, আর আমার পরিবারের কেউ আমাকে এমন সব কথা কখনো বলেনি,,,,

.

—” ওরা সবাই তোমার সামন্য অজ্ঞান হওয়াতে এতটা রিয়েক্ট কেন করছিল তাহলে….. (কৌতুহল নিয়ে)

.

—” মানে….

.
আমাকে চমকিত হতে দেখে রুদ্র আমার দিকে তাকায় পরে নিজেকে স্বাভাবিক করে আমাকে বলে উঠে….

.
—” মানেটা আমি বলবো কি করে,, আচ্ছা বাদ দাও এইসব পরে দেখা যাবে, তোমার এখন রেস্ট প্রয়োজন তুমি চুপচাপ শুয়ে থাকো কেমন,,,,

.

রুদ্র এমন সব কথায় আমি মূহুর্তেই চুপ করে গেলাম, পরে আর কিছুই চিন্তা করিনি এইসব বিষয় নিয়ে কারণ আমার মাথায় এখন অন্য চিন্তা ভাবনায় ঘুরপাক খাচ্ছিল খনে খনে, আর সেটা হচ্ছে রিদ খানকে নিয়ে, জংগল থেকে আসার পর উনার সাথে দেখা হয়নি দশদিন হয়েছে আমার, আজ হঠাৎ করেই দুপুরে দেখা হয়ে যাবে আমি পাবতেও পারিনি,,,,

.

যদিও দুপুরে রিকশা থেকে নেমে ছিলাম কৌতুহল নিয়ে কারণ সামনে কি হচ্ছে সেটা দেখার জন্য কিন্তু পরে যখন রিদ খানের নামটা শুনেছি তখন আমি ইচ্ছে করেই সামনে এগিয়ে উনার কাছে গিয়ে ছিলাম উনাকে দেখতে, কারণ আমার মনটা তখন অনেকটাই ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল উনাকে এক পলক দেখার জন্য, তাই এক প্রকার মনের কাছে হার মেনেই বাধ্য হয়ে উনার সামনে গিয়েছিলাম আমি, আর ঐখানের পরিবেশটা যে এতটা ভয়াবহ হবে সেটা আমার চিন্তা ভাবনায় বাহিরের ছিল, তাই উনার বলার সব কয়েকটি কথাও ছিল বড় ধরনের ধাক্কা মতোই, উনার এমন সব কথা গুলো কেন যেন তখন আমি মেনে নিতে পারছিলাম না, ভিতরে ভিতরে পুড়ে মরছিলাম ভিষণ ভাবে, কেন উনাকে এতটা চাইতে মন চাই আমার সেটাও জানি না আমি,উনার ওপর কেন যেন রাগটাও আসে না আমার,,,,

.

রুদ্রের কথা মতে দুপুরে অজ্ঞান হওয়ার পর আসিফ আমাকে হসপিটালের ভূর্তি করিয়েছেন রিদ খান নাকি ঐখান থেকেই চলে যায় নিজের মতো করে সাথে সাথেই,, আমার জন্য এতটুকু দয়া মায়া হলো তার পাষণ্ড মনে অধিকারী উনি, মাঝে মাঝে রিদ খানকে খুব ঘৃণা করতে মন চাই কিন্তু অজানা করণে তারও করতে পারি না আমি, কিন্তু আজকের পর খুব খুব করে চাইবো উনাকে ঘৃণা করতে, আর আমি সেটা করতে পারবো আমাকে সেটা পারতেই হবে আর এমনটা করতে আমাকে সাহায্য করবে রুদ্র নিজের সাথে আমাকে জরুরি,, কথা গুলো ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম নিশ্চুপে আমাকে হতাশ দেখে রুদ্র আমার পাশে বসে আমার একটা হাত নিজের দুহাতের মাঝে নিয়ে করুন কন্ঠে বললো……

.

—” মায়ুপাখি তুমিটা আমার, তুমিটা আমার সবটা জোরে বিচরণ করছো, তুমি সুস্থ তো আমিও ঠিক, তাই প্লিজ তুমি কোনো বিষয় নিয়ে টেনশন করো না, যাহ হাবার তো তাহ হবেই পরে, কোনো বিষয় নিয়ে এখন চিন্তা করাটা জরুরি নয় তোমার জন্য…..

.

—” হুমম…..(আস্তে করে)

.

আস্তে করে উত্তর দিয়ে নিমিষেই নিজের চোখটা বন্ধ করে সিটে মধ্যে গা এলিয়ে শুয়ে পরি, এখন আর কিছুই ভালো লাগছে না, তাই কিছুক্ষণ নিজের মতো করে থাকতে চাই, কথা ভেবে একটা সময় ঘুমিয়ে পরি ঐ অবস্থায়, রুদ্র আমার পাশেই বসে থাকে চুপচাপ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে…….

.

গভীর ঘুমে তলিয়ে ছিলাম আমি কিন্তু হঠাৎ করেই কিছু শব্দ পেয়ে আদু আদু করে চোখ খুলে তাকায়, শব্দের উৎস সন্ধানে চারপাশে নিভু নিভু চোখ বুলিয়ে নেই আমি, চোখে সামনে কিছুই দেখতে না পেয়ে কপাল কুচকে এলো আমার, আমার স্পষ্ট মনে আছে কেউ আমার কপাল সাথে তার কপাল মিলিয়ে রেখেছিল বেশ সময় ধরে, সে আমার পাশের বসে ছিল সাথে অনেকক্ষণ যাবত তার চোখের অশ্রু বিসর্জন দিয়েছিল, তার ফুঁপানোতোই ঘুম ভেঙেছে আমার কিন্তু চোখ খুলে চোখের সামনে কাউকেই দেখতে পাইনি আমি, কে হতে পারে বিষয়টি ভেবে ভেবে রুদ্র অনুসন্ধান করতে লাগি আমি কারণ আমার পাশে এতক্ষণ যাবত রুদ্রই বসে ছিল, তাহলে কি রুদ্র কান্না করছিল আমার জন্য, আমার এমন সব চিন্তা ভাবনায় মাঝে রুদ্র কেবিনের দরজার দিয়ে রুমের ভিতরে প্রবেশ করে কিছু ফাইল হাতে নিয়ে খুব সম্ভবত আমার হসপিটালের কাগজ পত্র হবে, রুদ্র আমাকে তাকাতে দেখে হাসি মুখে আমার দিকে এগিয়ে আসে পরে সুপ্ত কন্ঠে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে…….

.

—” কি ব্যাপার ঘুম ভেঙ্গে গেছে বুঝি ম্যাডামের….

.

রুদ্র এমন কথায় আমি আমার মতো করে বলে উঠি…..

.

—” এতক্ষণ কোথায় ছিলে তুমি……

.

—“ম্যাডাম কি আমাকে দেখতে না পেয়ে বেশ চিন্তায় ছিল হুমমম……..

.

—” আপনি কি বলবেন কোথায় ছিলেন….(চোখ গরম করে)

.
—-” ওকে ওকে ম্যাডামকে আর হাইপার হতে হবে না বলছি কোথায় ছিলাম, আসলে তোমার কিছু টেস্ট করানো হয়েছে সেই গুলো কালেক্ট করতে গিয়েছিলাম, তাই আসতে একটু লেট হয়ে গেছে…..

.
রুদ্রের এমন কথায় আমি চমকে উঠি তার মানে এতক্ষণ যাবত আমার পাশে অন্য কেউ বসে ছিল, কে হতে পারে যে আমার এতোটা কাছ থেকে আমার জন্য কান্না করবে,,,,,,,

.

.

চলবে……..

.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here