একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় #Part_24(Bonus) #ইয়াসমিন_খন্দকার

0
831

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_24(Bonus)
#ইয়াসমিন_খন্দকার

প্রভা নিজের কেবিনে বসে রকস্টার রিহানকে নিয়েই ভাবছিল। কাল দ্বিতীয় বার লোকটার মুখোমুখি হওয়ার পর এবং তার বলা কিছু কথা শোনার পর থেকেই প্রভা ভীষণ দুশ্চিন্তায় ভুগছে। সে জানে না যে এসব কি হচ্ছে এবং কিভাবে হচ্ছে। প্রভার কাছে সবটাই শুধু ধোয়াশা। যেখান থেকে বেরোনোর কোন উপায় সে খুঁজে পাচ্ছে না। প্রভা চোখ বন্ধ করে বসে ছিল। এমন সময় কারো পায়ের শব্দে সে চোখ মেলে তাকালো। নিজের চোখের সামনে সানা প্রিস্টকে দেখে সে উঠে দাঁড়ালো। সামান্য হেসে বললো,”ম্যাডাম আপনি! আসুন ভেতরে আসুন।”

সানা প্রিস্টও হাসি মুখে প্রভার সামনে এসে বললো,”হ্যালো, কেমন আছ?”

“জ্বি, আলহামদুলিল্লাহ। আপনি হঠাৎ আমআর কেবিনে এলেন? কোন সমস্যা হয়েছে কি?”

“আরে না! তোমার সাথে কিছু ব্যক্তিগত কথা বলতে এলাম।”

“ব্যক্তিগত কথা!”

“হুম। আমার ভাই রিহান প্রিস্টকে তুমি তো কাল দেখলে। তা ওকে তোমার কাছে কেমন লেগেছে?”

প্রভা ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলে,”না..মানে..ভালোই তো”

সানা প্রিস্ট হেসে বলে,”জানো আমার ভাই না একদম পিওর সিঙ্গেল। জীবনে কখনো প্রেমে-টেমে জড়ায় নি। ব্যাপারটা আমার কাছেও অদ্ভুত লাগে। কানাডাতেই ওর জন্ম আর কানাডাতেই ওর বেড়ে ওঠা। যেখানে কানাডায় টিনএজ বয়সেই সবাই ভার্জিনিটি হারায় সেখানে আমার ভাই জীবনে কোনদিন ডেট করেনি। আমার তো আমার ভাইকে নিয়ে সন্দেহ হয়েছিল। ও বলেছিল ওর মেয়েদের প্রতি কোন ইন্টারেস্ট নেই। আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম যে ও গে নাকি। কিন্তু পরে দেখলাম ওর ছেলেদের প্রতিও আগ্রহ নেই। তখন নিশ্চিত হয়েছি কিছুটা। জানো, ও আগে কখনো কোন মেয়ের প্রতিই ইন্টারেস্ট দেখায় নি। কিন্তু কাল পার্টিতে তোমায় দেখার পর তোমার সম্পর্কে আমার কাছে অনেক কিছু জানতে চেয়েছে। আমি তো পুরো হতবাক হয়ে গেছি। এটাই কি আমার ভাই? সত্যিই অবিশ্বাস্য, ঘন্টার পর ঘন্টা ও তোমাকে নিয়েই আমার সাথে কথা বলেছে।”

প্রভা অবাক হয়ে সবকিছু শুনছে। সানা প্রিস্ট হঠাৎ করে বলে ওঠে,”আমার মনে হয় আমার ভাই তোমার উপর ইন্টারেস্টেড। তুমি কিন্তু ওর সাথে ডেট করতে পারো।”

প্রভা বলে,”সরি, এটা সম্ভব নয়। আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি।”

সানা প্রিস্ট হতাশ হয়ে বলে,”ওহ, কোন ব্যাপার না। সরি, কিছু মনে করো না।”

“আমি কিছু মনে করিনি।”

~~~~~~~
প্রভা হসপিটাল থেকে নিজের ফ্ল্যাটে ফেরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিল। সানা প্রিস্টের বলা কথাগুলোই শুয়ে শুয়ে ভাবছিল সে। তাছাড়া রিহান ছেলেটাও তাকে ভাবাচ্ছে। ছেলেটার গলার স্বরের সাথে রায়ানের এত মিল কেন? আর ও সব সময় নিজের মুখই বা ঢেকে রাখে কেন? কোন প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজে পায় না প্রভা। বদলে জোটে এক বুক দীর্ঘ শ্বাস। এরই মধ্যে নোটিফিকেশনের টুংটাং আওয়াজ বেজে ওঠে প্রভার ফোনে৷ সে নিজের ফোন হাতে নিতেই দেখতে পায় তার সেই সমস্যা সমাধানকারীর ম্যাসেজ। সামান্য, “Hi” লিখেছে সে।

প্রভা প্রতিত্তোরে লিখে,”এতদিন পর অনলাইনে!”

“হ্যাঁ, আসলে একটু ব্যস্ত ছিলাম।”

“আপনাকে একটা কথা জানাতে চাই। আমি এখন কানাডায় আছি।”

“সত্যি?” হ্ম

“জ্বি, আপনার সাথে দেখা করতে চাই।”

“দুঃখিত। এটা সম্ভব না। আপনার যদি কোন সমস্যা থাকে তাহলে আমায় বলতে পারেন।”

প্রভা এবার রিহানের কথা মনে করে বলল,”আসলে আমি কানাডায় এসে এমন একজনকে দেখেছি যার সাথে আমার পরিচিত একজনের ভীষণ মিল রয়েছে। কিন্তু আমি পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারছি না যে এই আমার সেই চেনা মানুষটা কিনা।”

“হুহ, বুঝলাম। সমস্যাটা বেশ গভীর। আচ্ছা যার সাথে আপনি আপনার চেনা ব্যক্তির মিল খুঁজে পেয়েছেন তার সাথে কথা বলেন নি?”

“হ্যাঁ,বলেছি।”

“তার সাথে কথা বলে কি মনে হয়েছে? আর সে কি আপনাকে চিনতে পেরেছে?”

“না। সে আমায় চিনতে পারেনি।”

“আপনার মন কি বলছে?”

“আমি কনফিউজড।”

“থাক, এত কনফিউজড থাকতে হবে না। আপনি নিজের কনফিউশান খুব সহজেই দূর করতে পারবেন।”

“কিন্তু কিভাবে আমি নিজের কনফিউশান দূর করব?”

“দেখুন, একটা মানুষকে কিন্তু খুব সহজে চেনা যায়না৷ বিশেষ করে যখন কেউ নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চায়। তখন তাকে সঠিক ভাবে চিনতে গেলে আমায় তাদের সাথে মিশে যেতে হয়৷ তাকে ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করলেই তো বোঝা যাবে সে আপনার পরিচিত কিনা।”

“তাহলে আমার কি করা উচিৎ?”

“আপনার উচিৎ ঐ ব্যক্তিটির সাথে আরো বেশি বেশি সময় কাটানো। তাহলেই আপনি ওনাকে চিনবেন। আপনার মনের সব ধরনের কনফিউশানও দূর হবে।”

“এজন্যই আপনাকে আমার এত ভালো লাগে৷ আমার এমন কোন সমস্যা নেই যার সমাধান আপনার কাছে নেই।”

বিপরীত দিক থেকে আর কোন উত্তর আসে না। প্রভা বুঝতে পারে আর রিপ্লাই আসবেও না৷ তাই সে ফোনটা রেখে দিয়ে বাইরে চলে যায়।

বাইরে এসেই হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খায় প্রভা। আর তার মুখ ফুটে বের হয়,”সরি।”

তখনই সে নিজের চোখের সামনে রকস্টার রিহানকে দেখতে পায়৷ রকস্টার রিহানকে দেখে সে চুপ করে যায়। রকস্টার রিহান বলে,”হেই, ইনোসেন্ট লেইডি, চোখে দেখতে পান না? এভাবে ধাক্কা খেলেন কেন?”

রিহানের বলা কথা গুলো শুনে প্রভা হারিয়ে যায় ১২ বছর আগের অতীতে। মনে পড়ে যায় রায়ানের সাথেও এভাবে ধাক্কা খেত সে। আর রিহানের বলা ইনোসেন্ট লেইডি ডাকের সাথে রায়ানের বলা সাধাসিধা মেয়ে ডাকেরও মিল খুঁজে পায় সে। প্রভা আর কিছু ভাবতে পারে না। হঠাৎ তার মাথা ঘুরতে থাকে। সে পড়ে যেতে নিতেই রিহান তাকে আগলে নেয়৷ প্রভা রিহানের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,”আমার রায়ান!”

প্রভার জ্ঞান ফিরতেই সে নিজেকে আবিষ্কার করে নিজের রুমে। সানা প্রিস্ট তার মাথার কাছেই বসে আছে। প্রভা উঠে সানার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আমি হঠাৎ এখানে কি ভাবে চলে এলাম?”

“তোমার কি হয়েছিল প্রভা? তুমি হঠাৎ কিভাবে অজ্ঞান হয়ে গেলে? রিহান যখন আমায় ডেকে পাঠালো..”

“আপনার ভাই..”

“ও বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়াও, আমি ডাকছি। রিহান ভেতরে এসো।”

রিহান ভেতরে চলে আসে। এসে প্রভাকে বলে,”আপনি এখন কেমন আছেন?”

“ভালো।”

প্রভা সানা ও রিহানকে বসতে বলে। দুজনে বসে পড়ে। দুজনে প্রভার সাথে কিছুক্ষণ আলাপচারিতা করে। হঠাৎ করে সানা প্রিস্ট বলে ওঠে,”আমার কিছু জরুরি কাজ আছে৷ তোমরা গল্প করো আমি আসছি।”

বলেই সে চলে যায়৷ রিহানও কয়েক পলক চুপ থেকে প্রভাকে বলে,”আপনি নিজের খেয়াল রাখুন৷ আমি আসছি।”

বলেই রিহান বিদায় নেয়। রিহান চলে যাবার কিছু সময় পরেই প্রভা ফোনের রিংটন শুনতে পায়। ডেস্কের উপর একটা ফোন দেখে সে অবাক হয়। কারণ এটা তার নিজের ফোন নয়৷ ফোনটা হাতে তুলে নেয় প্রভা। প্রোফাইল পিকে রিহানের ছবি দেখে সে বুঝতে পারে এটা রিহানের ফোন। হঠাৎ ফোনে এমন একটা জিনিস লক্ষ্য করে যাতে সে চমকে ওঠে৷ কিছুক্ষণ পর রিহান পুনরায় প্রভার রুমে এসে বলে,”আমি বোধহয় আমার ফোনটা রেখে গেছি।”

প্রভার হাতে নিজের ফোন দেখে বেশ ঘাবড়েও যায় সে। প্রভা রিহানের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আর কতদিন নিজেকে লুকিয়ে রাখবেন আপনি? আমি আপনার ব্যাপারে সব জেনে গেছি। আর আপনি পালিয়ে বেড়াতে পারবেন না।”

to be continue…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here