একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় #Part_30(Bonus) #ইয়াসমিন_খন্দকার

0
429

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_30(Bonus)
#ইয়াসমিন_খন্দকার

প্রভা ও রায়ানের বিয়ের পর পেরিয়ে গেছে ৬ টা মাস। এই ৬ মাসে অনেক কিছু বদলে গেছে। আবিরের সব কুকীর্তি ধরা পড়েছে। তাকে কানাডা থেকে বাংলাদেশে আনা হয়েছে এবং বাংলাদেশের আদালত তাকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। বর্তমানে সে নিজের কুকর্মের সাজাই ভোগ করছে।

এদিকে বিবাহ পরবর্তী জীবনে অনেক সুখী আছে রায়ান ও প্রভা। তাদের জীবনে ভালোবাসার কোন কমতিই নেই। রায়ান প্রভাকে একদম নিজের সবটুকু দিয়েই আগলে রাখছে। তার গায়ে ফুলের টোকাও লাগতে দিচ্ছে না। এদিকে আবির গ্রেফতার হয়ে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার দরুণ তার সংসদীয় আসন ফাকা হয়ে আছে। তাই নির্বাচন কমিশন কতৃক এই আসনে উপনির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। রুহুল আমিনের পার্টির লোকেরা চাইছেন রুহুল আমিনের ছেলে মানে রায়ান এবার এই আসন থেকে নির্বাচনে দাঁড়াক। রুহুল আমিনকে এই বিষয়ে বলতেই তিনি সবটা রায়ানের উপরেই ছেড়ে দেন। কিন্তু রায়ানের এসব রাজনীতির প্রতি আগ্রহ না থাকায় সে সরাসরি না বলে দিয়েছে৷ কিন্তু দলীয় নেতৃবৃন্দ আদা জল খেয়ে তার পেছনে লেগেছে। যাতে রায়ানকে এই নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি করানো যায়। আজও তারা এসেছিল রায়ানের সাথে দেখা করতে। কিন্তু রায়ান আজও অমত জানিয়েছে। এরপরেই প্রভাকে নিয়ে সে ঘুরতে বের হয়েছে। প্রভা অনেকদিন থেকেই বলছিল সে ঘুরতে যেতে চায়। কিন্তু ব্যস্ততার জন্য হয়ে উঠছিল না। আসলে প্রভা কানাডা থেকে দেশে ফেরার পর আবারও চট্টগ্রাম মেডিকেলেই ডাক্তার হিসেবে যোগদান করেছে। এই জন্য তাকে অনেক ব্যস্ত থাকতে হয়। এদিকে রায়ানও তার বাবার ব্যবসা সামলাচ্ছে৷ আজ অনেক কষ্টে দুজনেই টাইম ম্যানেজ করেছে। তাই এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দুজনে ঘুরতে বেড়িয়েছে।

আজ দুজনে সারাদিন অনেক ঘোরাঘুরি করল। প্রভার খুব আইসক্রিম খেতে ইচ্ছা করছিল। সে রায়ানকে বলে,”চলুন না আইসক্রিম খাই।”

রায়ান প্রভাকে বলে,”তুমি না একজন ডক্টর৷ তুমি এমন কেয়ারলেসের মতো কথা কিভাবে বলতে পারো? এই ঠাণ্ডায় তুমি আইসক্রিম খাবে?”

প্রভা বলে,”হ্যাঁ, আমি ডক্টর। কিন্তু তার আগে আমি একজন মানুষ। আমার তো একটা স্বাদ আহ্লাদ থাকতেই পারে তাইনা? আর কে বলেছে এখন ঠান্ডা পড়েছে? এখনো তো আবহাওয়া বেশ গরমই।”

রায়ান বলে,”বাহ, আমার ইনোসেন্ট গার্ল তো দেখছি বেশ ভালোই কথা বলতে শিখেছে। এখন তো তোমার সাথে কথা দিয়েও আমি পারব না।”

প্রভা উত্তরে স্মিত হাসে। রায়ান প্রভাকে একটা আইসক্রিম এনে দেয়। অতঃপর বলে,”চলো এখন যাওয়া যাক।”

“হ্যাঁ, চলো।”

প্রভা ও রায়ান যেতে যাবে তখনই তারা হঠাৎ দেখতে পায় রাস্তায় কিছু মানুষ আন্দোলন করছে। বেশ বড়সড় জটলা পেকেছে সেখানে। মানুষজন কিছু প্লাকার্ড হাতে বেরিয়েছে। তাদের দাবি একটাই, এলাকার বেহাল অবস্থার উন্নতি করতে হবে। প্রভা ও রায়ান সেদিকে এগিয়ে যায়। মিছিলে কিছু মানুষ বক্তব্য রাখে। তাদেরই একজন বলে,”দীর্ঘ দিন ধরে এই এলাকায় আবির হোসেন অপশাসন চালিয়েছেন। তার শাসনামলে এখানে কোন উন্নতি তো হয়নি বরং আরো অবনতি হয়েছে। রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ টাকা লুট, অবৈধ প্রকল্প, ড্রেনেজ ব্যবস্থার অবনতি আমরা দেখতেই পাচ্ছি। বৃষ্টি হলে গোটা চট্টগ্রাম শহর ডুবে যায়। সবমিলিয়ে শহরে নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এই অবস্থা থেকে মুক্তি চাই। এইজন্য আমাদের একজন যোগ্য নেতার প্রয়োজন। কিন্তু এখনো অব্দি উপনির্বাচনে যাদেরকে প্রার্থী করা হয়েছে তারা প্রায় সবাই দূর্নীতিগ্রস্থ এবং তাদের জনগণের উন্নতি নিয়ে কোন মাথা ব্যাথাই নেই। তারা শুধু নিজের স্বার্থে লড়ছে।”

এভাবে নানা জনগণ তাদের দূর্ভোগের কথা জানায়। সব শুনে রায়ান ও প্রভা দুজনেরই খুব খারাপ লাগে। সত্যি অপশাসন এবং দূর্নীতি একটি দেশ বা অঞ্চলের উন্নতির পথে প্রধান অন্তরায়। রায়ান ও প্রভা আর সেখানে বেশিক্ষণ না থেকে রওনা দেয়। গাড়িতে উঠে প্রভা ও রায়ান দুজনেই চুপচাপ ছিল। রায়ান কোন চিন্তায় মগ্ন ছিল। প্রভার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। রায়ান প্রভার দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমিও কি সেটাই ভাবছ যেটা আমি ভাবছি?”

প্রভা বলে,”হুম। আমার মনে হয় আপনার নির্বাচনে দাঁড়ানো উচিৎ। যাতে করে আপনি এলাকার মানুষের সকল দূর্ভোগ দূর করতে পারেন।”

রায়ান এসব নিয়েই ভাবতে থাকে। সে তাড়াহুড়ো করে কোন সিদ্ধান্ত নিতে চায় না। বাড়িতে ফিরেও সে এসব নিয়ে ভাবছিল। এমন সময় রুহুল আমিন তার রুমে আসেন। রুহুল আমিনকে দেখে রায়ান তার সাথে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে। একসময় নানা কথা বলতে বলতে সে বলে,”আচ্ছা, আব্বু। তুমি কেন রাজনীতিতে এসেছিলে?

রুহুল আমিন বলেন,”আমি বড় হয়েছি খুব দরিদ্র পরিবেশে। সেই থেকেই আমার মনে জেদ ছিল যে আমি একসময় মানুষের দুঃখ দূর্ভোগ দূর করব। সেই ভাবনা থেকেই রাজনীতিতে আসা। আমি জানি না কতোটা সফল হয়েছি। কিন্তু নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছি।”

রায়ান যেন তার উত্তর পেয়ে যায়। রুহুল আমিনের সামনে মাথা নিচু করে বলে,”তুমি আমাকে দোয়া করো আব্বু। আমি যেন তোমার দেখানো পথে হেটে মানুষের সব দুঃখ দূর্ভোগ দূর করতে পারি।”

রুহুল আমিন খুশি হন। তিনি কখনোই রায়ানের উপর জোর করে কোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চান নি। তাই রাজনীতির ব্যাপারেও তাকে জোর করেননি। কিন্তু রায়ান নিজে থেকেই এই ব্যাপারে এগিয়ে আসায় তিনি অনেক খুশি।
~~~~~
সেদিনের পরই রায়ান মনোনয়ন পত্র তুলে জমা নিয়েছিল। আর স্বাভাবিকভাবেই দল থেকে তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়। বর্তমানে সে ভোটের প্রচারণা চালাচ্ছে জোরদমে। মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চাইছে। রাজনীতিতে সে অনভিজ্ঞ। এইজন্য তাকে বেশ বুঝে শুনে পা ফেলতে হচ্ছে। তার বাবা তাকে অনেক পরামর্শ দিচ্ছে৷ এছাড়া আরো অনেক সিনিয়র রাজনীতিবিদও তার পাশে আছে। প্রভাও রয়েছে রায়ানের পাশে। একজন যোগ্য সহধর্মিণীর মতো সে সবসময় রায়ানের পাশে দাঁড়ায়। নিজের কাজের বাইরে সময় বের করে সে আজ এসেছে রায়ানের হয়ে ভোটের প্রচার করতে। একটি জনসভা থেকে প্রভা বলে,”আমি আমার স্বামীকে মানুষ হিসেবে যতোটা চিনি তিনি অনেক ভালো মানুষ। আমি আপনাদের গ্যারান্টি দিতে পারি আপনারা যদি তাকে ভোট দেন তাহলে আপনারা একজন যোগ্য মানুষকেই বেছে নিতে পারবেন। আর দেখবেন আমাদের চট্টগ্রাম শহর উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে যাবে। এমনকি উন্নতিতে ঢাকাকেও ছাড়িয়ে যাবে। এখন মানুষ যেমন ঢাকায় যায় তেমনি দেখবেন আমার স্বামী এমপি হয়ে শহরের এমন উন্নতি করবে যে সবাই চট্টগ্রামে আসবে। চট্টগ্রাম শিল্প, শিক্ষাদীক্ষা, পর্যটন সব দিক দিয়েই এগিয়ে যাবে। এখান থেকে দারিদ্র্য একেবারে মুছে যাবে। বিপদে আপদে সবসময় আপনারা আমার স্বামীকে পাশে পাবেন।”

এরকম আরো নানান ভাষণ দেয় সে। হঠাৎ করে তার অনেক ক্লান্তি অনুভূত হয়। প্রথার মাথা ঘুরতে থাকে। আর সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। রায়ান সাথে সাথেই মঞ্চে উঠে যায়। এরপর তার এক কর্মীকে বলে,”তাড়াতাড়ি গাড়ি বের করো। প্রভাকে হাসপাতালে নিতে হবে।”

রায়ান প্রভার জন্য অনেক চিন্তা করতে থাকে। তার মনে হয় প্রভার স্ট্রেসের জন্যই এমন হয়েছে। সে পানি নিয়ে প্রভার মুখে ছিটায়। প্রভার জ্ঞান ফিরে আসে। রায়ান প্রভাকে বলে,”তুমি ঠিক আছ তো?”

প্রভা বলে,”হ্যাঁ, আমি ঠিক আছি। হঠাৎ করে কেন জানি মাথা ঘুরে..”

এই বলে হঠাৎ করে প্রভা মুখ চেপে ধরে। তার কেন জানি খুব বমি পাচ্ছে। রায়ান বলে,”কি হয়েছে? এনি প্রব্লেম?”

প্রভা আর কিছু বলার সময় না দিয়ে বমি করা শুরু করে।

to be continue…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here