#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_25
#ইয়াসমিন_খন্দকার
প্রভা উঠে বসে রিহানের কাছাকাছি চলে যায়। রিহানের চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে অনেক ভয় পেয়ে আছে। প্রভা রিহানের সামনে গিয়ে বলে,”এতদিন কেন সত্যিটা লুকিয়ে রেখেছিলেন আমার কাছে? শেষ পর্যন্ত তো আমি সব জানতেই পারলাম।”
রিহান বুঝতে পারে সে ধরা পড়ে গেছে। তাই আর ভনিতা না করে বলে,”আসলে…”
“আসলে কি? এমনটা আপনি কি করে করতে পারলেন? এতগুলো দিন ধরে আমাকে বোকা বানিয়ে গেলেন! আর সৌভিকদাও আপনার সাথে আছে তাইনা?”
রিহান বলে,”আমি কিছু কারণে সবকিছু গোপন রাখছিলাম। কিন্তু.. ”
“থাক, আপনাকে আর কিছু বলতে হবে না মিস্টার রিহান। এতদিন ধরে আমার সব সমস্যার সমাধান করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ মিস্টার সমাধানকারী।”
এই বলে প্রভা রিহানের হাতে তার ফোনটা তুলে দেয়৷ রিহান ফোনটা হাতে নেয়। ফোনটা হাতে নিয়ে সে দেখে ফোনে তার আইডি থেকে সে যে প্রভাকে ম্যাসেজ করে সেটা দেখা যাচ্ছে। হয়তো নোটিফিকেশনের কারণেই প্রভা এটা জানতে পারছে৷ রিহান বলে,”তার মানে ও এটা নিয়েই কথা বলছিল।”
অত:পর সে প্রভাকে বলে,”তার মানে আপনি সেই মেয়ে যাকে আমি সাহায্য করতাম।”
প্রভা অবাক হয়ে বলে,”তার মানে আপনিও এটা জানতেন না। আজকেই প্রথম জানলেন? আমার তো সেটা মনে হচ্ছে না।”
“আমি সত্যিই জানতাম না।”
“সৌভিকের সাথে আপনার কোন যোগাযোগ নেই?”
“এই সৌভিক আবার কে?”
প্রভা হতাশ হলো। সে বুঝতে পারছে না রিহান কি সত্যিই কিছু বুঝতে পারছে না নাকি সব বুঝেও না বোঝার ভান করছে। তাই সে রিহানকে বলে,”আপনি তার মানে সব সত্যিই বলছেন?”
“ইয়েস। আচ্ছা আপনি যে বলেছিলেন যে একজনের সাথে আপনি নিজের খুব চেনা কারো মিল খুঁজে পাচ্ছেন তো সেই একজন কি আমি?”
“হুম।”
“তাহলে পরীক্ষা করে দেখুন আমায়। ”
“আপনাকে বেশি কিছু করতে হবে না৷ শুধু আপনার মুখটা আমায় দেখান৷ তাহলেই সবকিছু ক্লিয়ার হয়ে যাবে।”
“এত সহজ না ম্যাম! দীর্ঘ ৩ বছর ধরে আমার কোন ফ্যানই আমার মুখ দেখতে পায়নি৷ সেখানে আপনি দুদিনের মেয়ে হয়ে আমায় দেখবেন!”
“তাহলে কিভাবে আমি নিজের কনফিউশান দূর করব?”
“আমি আজ ফ্রি আছি৷ আর আপনিও তো অসুস্থতার জন্য আজ হসপিটালে যান নি। তাই আমি আপনাকে অফার করছি আজ আমার সাথে একটা দিন স্পেন্ড করুন। তাহলেই আপনি সব ডাউট ক্লিয়ার করতে পারবেন।”
প্রভা কিছুক্ষণ ভেবে বলে,”ওকে ডিল।”
রিহান ও প্রভা একসাথে বেরিয়ে পড়ে৷ রিহান নিজের গাড়ি বের করে এবং প্রভাকে তার পাশে বসতে বলে৷ তখন প্রভা আপত্তি জানিয়ে বলে,”আমি আপনার পাশে বসবো না।”
“আমার পাশে না বসলে নিজের কনফিউশান কিভাবে দূর করবেন?”
প্রভা কিছু একটা ভেবে রিহানের পাশে বসে পড়ে। রিহান প্রভাকে সাথে নিয়ে ড্রাইভ করতে শুরু করে। রিহান প্রভাকে জিজ্ঞাসা করে,”বলুন কোথায় যেতে চান?”
“আপনার যেখানে খুশি নিয়ে যান।”
“আচ্ছা। ”
রিহান অনেকক্ষণ ড্রাইভ করে প্রভাকে নিয়ে অটোয়া নদীর তীরে একটা শান্ত পরিবেশে নিয়ে যায়৷ যেখানে খুব একটা জন সমাগম নেই। কারণ রিহান এমন একটা নির্জন পরিবেশই খুঁজছিল। দুজনে নদীর তীর ধরে হাঁটতে থাকে। এই সময় রিহান হঠাৎ করে প্রভার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আমি কি আপনার হাতটা ধরতে পারি?”
প্রভা হ্যাঁ বা না কিছু না বলে ফ্যালফ্যাল করে রিহানের দিকে তাকিয়ে থাকে। রিহান সাথে সাথেই বলে,”সবকিছু তো আপনার কনফিউশান দূরের জন্যই।”
“ঠিক আছে ধরুন।”
রিহান প্রভার হাত ধরে অটোয়া নদীর তীর ঘেষে হেটে চলে। অনেক বছর পর সে কোন পুরুষের হাত ধরে হাঁটছে। সর্বশেষ ১২ বছর আগে এভাবে রায়ানের হাত ধরে পার্কে হাঁটছিল সে। আর সেটাই ছিল রায়ানের সাথে তার কাটানো শেষ সময়। কারণ সেদিনই যে রায়ান তাকে চিরতরের জন্য ছেড়ে চলে যায়। প্রভার দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে৷ রিহান সেটা লক্ষ্য করে বলে,”আপনি কাঁদছেন কেন প্রভা?”
“একজনের কথা খুব মনে পড়ছে।”
“তাকে খুব ভালোবাসেন বুঝি?”
“কিভাবে বুঝলেন?”
“এই যে তার কথা ভেবে আপনার চোখে জল আসছে।”
“সত্যি ভালোবাসি। তার প্রতি আমার ভালোবাসা এতটাই গভীর যে তাকে হারানোর ১২ বছর পরেও আমি তাকেই ভালোবাসি।”
“হারিয়ে ফেলেছেন মানে?”
প্রভা কিছু বলে না আর৷ চেয়ে থাকে আকাশের দিকে৷ কিছু সময় চুপ থেকে বলে,”এখন যাওয়া যাক!”
রিহান আপত্তি প্রকাশ করে বলে,”না, একটু অপেক্ষা করুন। আরেকটু থাকলেই আমরা সূর্যাস্ত দেখতে পারবো।”
“আমার জীবনের সূর্য তো এমনিই ডুবে গেছে। এখন আর নতুন করে আমায় সূর্যাস্ত দেখতে হবে না।”
এই বলে প্রভা চলে যাচ্ছিল তখন রিহান হঠাৎ করে তার হাত ধরে তাকে আটকে দিয়ে বলে,”কারো জীবনের সূর্য এত দ্রুত অস্ত যায় বা। আমি আপনার জীবনে নতুন করে সানরাইজ নিয়ে আসতে চাই মিস প্রভা।”
প্রভা এবার একটু রাগী স্বরে বলে,”আমার কাউকে লাগবে না কাউকেই না। আমি শুধু আর শুধু আমার রায়ানকেই ভালোবাসি আর আজীবন তাকেই ভালোবাসব।”
“আপনি তো বললেন আপনি নিজের ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে ফেলেছেন।”
“সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। ও আমার সাথে থাকুক বা না থাকুক আমি সবসময় ওকেই ভালোবেসে যাব। আমার ভালোবাসা কখনো বদলাবে না ”
“এসব ডায়লগ সিনেমায় শুনতে ভালো লাগে৷ কিন্তু বাস্তবে আবেগ দিয়ে দুনিয়া চলে না। আর ১২ বছর আগে তো আপনি টিনেজার ছিলেন। টিনেজার আবেগকে এতো গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই।”
“হ্যাঁ, টিনেজার ছিলাম কিন্তু আমার অনুভূতি একদম সত্যি ছিল। যার প্রমাণ আমি আপনাকে দিতে ইচ্ছুক নেই।”
“আচ্ছা, আপনি শান্ত হোন৷ এই বিষয় নিয়ে কথা বা বলি৷ ঐ দেখুন সূর্য অস্ত যাচ্ছে। আমাদের এখানে একটা প্রচলিত বিশ্বাস আছে যে অটোয়া নদীর তীরে সূর্যাস্তের সময় কোন উইশ করলে সেটা পূরণ হয়। আপনি কোন উইশ করে দেখতে পারেন।”
প্রভা ডুবন্ত সূর্যের পানে চায়। দেখে মনে হচ্ছিল সূর্য অটোয়া নদীতেই ডুবে গেছে। প্রভা সেদিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,”আমি শুধু একটা জিনিসই চাই। আমি নিজের রায়ানকে ফেরত চাই। জানি এটা হয়তো অসম্ভব কিন্তু এটা ছাড়া আমার আর কিছু চাওয়ার নেই। কিছুই না।”
এই বলে প্রভা স্থান ত্যাগ করে। রিহান তার পিছু পিছু যায়। প্রভা রিহানকে বলে,”সূর্যাস্ত তো হয়ে গেছে। এখন তাহলে যাওয়া যাক!”
“যাচ্ছি। তার আগে আপনি এটা বলুন তো যে আজ সারাদিন আমার সাথে থেকে আপনার কি মনে হলো? আমার সাথে কি আপনার পরিচিত ব্যক্তির কোন মিল খুঁজে পেলেন?”
প্রভা কড়া গলায় বলল,”কোন মিল নেই আপনাদের মধ্যে।”
“আমার সাথে থেকে কি আপনি কিছুই ফিল করেন নি প্রভা?”
“না।”
বলেই প্রভা গাড়িতে উঠে বসে। রিহান অস্তমিত সূর্যের দিকে তাকায়৷ মলিন হেসে বলে,”তুমি আমায় চিনতে পারলে না প্রভা!”
to be continue…