একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় #Part_26_27(ধামাকা) #ইয়াসমিন_খন্দকার

0
365

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_26_27(ধামাকা)
#ইয়াসমিন_খন্দকার

প্রভাকে তার ফ্ল্যাটের সামনে নামিয়ে দিয়ে উদাস মনে নিজের বাড়িতে ফিরল রিহান। অত:পর নিজের রুমে এসে উদাস মনে বসে পড়লো বিছানার উপর। নিজের নীল রঙের লেন্স এবং নকল চুলটা খুলে ফেলল। রিহান রূপ ছেড়ে রায়ান রূপে ফিরল সে। কিছুক্ষণ ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস নিল। প্রভার সাথে আজ কাটানো মুহুর্ত গুলো মনে করে হাসছে। আজকের দিনটা অনেক সুন্দর ছিল। অনেকদিন পর প্রভার সাথে এত সুন্দর সময় কা’টালো। তবে আফসোস এখনো তার প্রভা তাকে চিনলো না। রায়ানের এমন ভাবনার মাঝেই সৌভিক তাকে ফোন করল। রায়ান ফোন রিসিভ করতেই সৌভিক রাগী গলায় বলল,”তুই এমন কেন রে রায়ান?”

“এমন মানে?”

“প্রভাকে এত কষ্ট দিচ্ছিস কেন? মেয়েটা এমনিতেই ১২ বছর অনেক কষ্ট করেছে। এখন তো মেয়েটাকে একটু সুখের মুখ দেখতে দে৷ তুই কোথায় এখন ওকে আগলে রাখবি তা না তুই আরো ওকে বেশি কষ্ট দিচ্ছিস।”

“তুই সব জেনেও এমন কথা বলবি?”

“আমি সব জানি জন্যই তো বলছি রায়ান। তুই আর প্রভার সাথে এই লুকোচুরি খেলা খেলিস না। এবার বন্ধ কর এইসব। মেয়েটাকে এবার আপন করে নে।”

“…”

“একদম চুপ। আর একদম সঠিক সময়ের কথা বলবি না। আমি আবিরের বিরুদ্ধে প্রায় অনেক প্রমাণ একজোট করেছি। আর কিছুদিনের মধ্যেই ওর মুখোশ সবার সামনে খুলে দেব। তুই এখন প্রভার কাছে গিয়ে নিজের আসল পরিচয় প্রকাশ কর।”

“হুম শীঘ্রই সব করব।”

সৌভিক কিছুটা থেমে বলে,”আমাকে এখনো কিন্তু তুই তোর অতীতের ব্যাপারে কিছু বলিস নি। ১২ বছর ধরে কেন তুই মৃত হওয়ার নাটক করছিলি রায়ানা? আমিও তো এতদিন তোকে মৃতই জানতাম। মাত্র ৬ মাস আগে তুই আমার সাথে যোগাযোগ করলি। প্রথম যখন তুই আমাকে ফোন করে জানালি তুই রায়ান আমি তো তখন বিশ্বাসই করতে পারিনি। তারপর যখন তুই ভিডিও কল দিয়ে আমার সাথে কথা বললি তখনই তোকে চিনতে পেরেছি। তুই তখন বললি সবটা গোপন রাখতে৷ আবিরের অপকর্মের ব্যাপারে সব কথা আমায় বললি। তোর কথা মতোই আমি আবিরের আরো বেশি ঘনিষ্ঠ হলাম। আবিরের বিশ্বাস অর্জন করলাম। কিন্তু এসবের পেছনে আসল রহস্য কি সেটা আমায় বল তো।”

রায়ান এবার ডুব দিলো তার অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলোতে।

সেইদিন দূর্ঘটনায় আসলে রায়ান মারা যায়নি। কিন্তু মারাত্মক ভাবে জখম হলো সে। রুহুল আমিন যখন চিকিৎসকের সাথে কথা বলেন তখন তিনি বলেছিলেন রায়ানের চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশ পাঠাবে। রুহুল আমিন তখন তাকে জরুরি ভিত্তিতে বিদেশে নেওয়ার তোড়জোড় শুরু করেন। এদিকে রায়ানের মনে তখন অন্য ভাবনা চলছিল। যেই প্রভাকে সে এত ভালোবাসে সে কিনা তারই প্রাণপ্রিয় বন্ধু আবিরকে ভালোবাসে। এমনকি তার বন্ধু আবিরও প্রভার জন্য তার সাথে ফাইট করল এত সব ধাক্কায় রায়ান অনেক ভেঙে পড়েছিল। তাই সে রুহুল আমিনের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আমি বিদেশে যাব কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।”

“কি শর্ত?”

“তোমায় সবাইকে জানাতে হবে যে আমি মারা গেছি।”

“রায়ান! এসব কি বলছিস তুই?”

“আমি যেটা বলছি সেটাই করো৷ নাহলে কিন্তু আমি বিদেশে যাব না।”

“রায়ান!!”

এমন সময় ডাক্তার তাকে গোপনে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলে,”আপনার ছেলের অবস্থা কিন্তু এখন বেশি ভালো না। যদি ভালো চান তো নিজের ছেলের কথাই শুনুন। নাহলে কিন্তু হিতে বিপরীত হতে পারে।”

রুহুল আমিন নিজের ছেলেকে খুব ভালোবাসতেন। তাই তিনি ছেলের ভালোর কথা ভেবে রাজি হয়ে যান। যার ফলস্বরূপ ডাক্তার এবং রুহুল আমিন সেসময় মিথ্যা নাটক করেন যে রায়ান মারা গেছে এবং রায়ানকে চিকিৎসার জন্য কানাডায় পাঠানো হয়। সেই সময় সানা প্রিস্টই রায়ানের চিকিৎসা করেছিল। এদিকে রায়ানের মৃত্যুর নাটক সাজানোর জন্য রায়ানের বাবা মিথ্যা বলেন যে তার জানাজা গ্রামে অনুষ্ঠিত হবে এবং সেখানে প্রভা বা অন্য কাউকেই তিনি যেতে দেন না। সেসময় তিনি সবার সাথে রূঢ় ব্যবহার করতে বাধ্য হন।

এদিকে রায়ানের অবস্থা অনেক খারাপ ছিল। ডাক্তার তো তার বাঁচার আশাই ছেড়ে দিয়েছিল কিন্তু সৌভাগ্যবশত সে বেঁচে যায়। রুহুল আমিনের মাথায় এসময় সন্তান হারানোর ভয় আরো বেশি জেকে বশে। আর এই জিনিসটারই সুযোগ নেয় রায়ান। সে নিজের বাবাকে অভিনয় চালিয়ে যেতে বাধ্য করে। রায়ান সেইসময় টিনেজার ছিল আর ছোটবেলা থেকে বেশ জেদি হওয়ায় সে ঠিক ভুল বুঝতে পারছিল না। রায়ানের কথাতেই রুহুল আমিন আবিরকে দত্তক নেন এবং তাকে নিজের ছেলের মতো মানুষ করতে থাকেন। রায়ান এসব কিছু করেছিল শুধুমাত্র প্রভার সুখের জন্য। কারণ সে ভেবেছিল আবির ও প্রভা একে অপরকে ভালোবাসে এবং একসাথে সুখী হতে পারবে। রায়ানও কানাডায় অন্য পরিচয়ে বড় হতে থাকে। সানা প্রিস্টের সাথেও তার সম্পর্ক অনেক ভালো হয়ে যায়। সানা প্রিস্ট রায়ানকে নিজের ভাইয়ের মতোই দেখতে শুরু করে। এভাবে সময় এগিয়ে যেতে থাকে। দীর্ঘ ১১ বছর এভাবেই চলে যায় কিন্তু রায়ান তখনো অব্দি অভিমান করেই দূরে থাকে। এই ১১ বছর কানাডাতেই থেকেছে সে। কখনো বাংলাদেশে ফেরেনি। শুধুমাত্র গোপনে রুহুল আমিনের সাথে যোগাযোগ রেখেছে। এরপর ১১ বছর পর হঠাৎ একটি ঘটনা তাকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। আবিরকে নিয়ে অনেক নিউজই তার সামনে আসছিল। কিন্তু আবির এমপি হওয়ার পর থেকে তার করা বিভিন্ন ভয়ানক অপরাধের খবর পায় রায়ান। সেসময় তার সন্দেহ হয়। রায়ানের সাথে কানাডায় বাংলাদেশের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তার দেখা হয়েছিল এর মাঝে। তার মাধ্যমে রায়ান আবিরের উপর নজরদারি করায় এবং এর ফলে তার হাতে আবিরের সম্পর্কে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। আবির যে পুরো চট্টগ্রামে ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করেছে সেটা জানা যায়। বাংলাদেশের প্রশাসন অনেক দূর্নীতিগ্রস্থ এবং আবিরের সাথে অনেক উচ্চপদস্থ নেতার যোগাযোগ আছে। তাই এত সহজে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হবে না এটা রায়ান সহজেই বুঝে গেছিল। এমনকি সে কিছু করতে গেলে আবির যে রুহুল আমিন ও প্রভার ক্ষতি করতেও দুবার ভাববে না এটাও বুঝে যায় রায়ান। তাই রায়ান তখন সৌভিকের সাথে যোগাযোগ করে। অত:পর সৌভিকের মাধ্যমেই আবিরের উপর নজরদারি করতে থাকে। সেই সময়ই রায়ান সৌভিকের মাধ্যমেই জানতে পারে প্রভা আসলে আবিরকে নয় তাকেই ভালোবাসে৷ এটা জেনে রায়ানের অনেক আফসোস হতে থাকে। রায়ান নিজেও বুঝতে পারে যেই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার জন্য রায়ানই পরোক্ষভাবে দায়ী। সে যদি এসব নাটক করে দূরে না থাকত তাহলে আবিরও আজ এই ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করতে পারত না। আর না প্রভাকে এত কষ্ট পেতে হত। এইসব কারণেই রায়ান আজো প্রভার মুখোমুখি হতে ভয় পায়। কারণ সে যে প্রভার চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারবে না। প্রভার কাছে যে সে অপরাধী। শুধুমাত্র তার ভুল বোঝার জন্যই প্রভাকে এই ১২ বছর যে কত কষ্টে পার করতে হয়েছে সেটা রায়ান জানে।

এসব ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে রায়ান বলে,”আমি প্রভার সামনে কিভাবে নিজের আসল পরিচয় নিয়ে দাঁড়াবো সৌভিক?”

“তুই এত ভাবিস না। আজ নাহয় কাল তোকে ওর সামনে যেতেই হবে। তাই আর দেরি করিস না রায়ান। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রভাকে নিজের আসল পরিচয় জানা। এই রিহান হওয়ার নাটক বন্ধ কর।”

রায়ান বলে,”তুই ঠিক বলেছিস। আমি এবার রায়ান হয়েই প্রভার মুখোমুখি হবো। প্রভাকে নিজের সব কথা জানাবো। এই ১২ বছর অনেক কষ্ট পেয়েছে সাধাসিধা মেয়েটা। আমি ওকে আর কষ্ট পেতে দেবো না।”

বলেই রায়ান ফোন রেখে উঠে দাঁড়ায়। নিজের ঘরের দরজা খুলতেই চমকে যায় সে। কারণ প্রভা ঠিক তার দরজায় দাঁড়িয়ে। প্রভার চোখ অশ্রুতে টলোমলো করছে। প্রভা কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলে,”আপনাকে আমায় আর কিছু বলতে হবে না রায়ান। আমি আপনাকে চিনতে পেরে গেছি।”

to be continue…

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_27
#ইয়াসমিন_খন্দকার

প্রভাকে নিজের বুকে আগলে নেয় রায়ান। তাকে শক্ত আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে। কিন্তু প্রভা অনুভূতিহীনের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। রায়ান প্রভাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই প্রভা বলে ওঠে,”আপনাকে আমায় কিছু বলতে হবে না। আমি সব জানি। আপনি আমায় একটুও বিশ্বাস করেন না তাইনা? এইজন্যই বোধহয় এত গুলো বছর ধরে এইসব মিথ্যা নাটক করলেন?”

রায়ান নিরুত্তর। প্রভা মলিন হেসে বললো,”জানেন আপনাকে যেদিন প্রথম দেখেছি সেদিনই আমি আপনাকে চিনতে পেরেছি। সেদিনই আমি বুঝতে পেরেছি যে আপনিই আমার রায়ান। কিন্তু আমি এতদিন ধরে আপনাকে না চেনার ভান করে গেছি শুধু একটাই কারণে। আমার বিশ্বাস ছিল যে আপনি আমার কাছে এসে নিজের মুখে সব সত্যি আমায় বলবেন। নিজের আসল পরিচয়ে আমার সামনে আসবেন। কিন্তু..আপনি আমার সাথে নাটক করে গেলেন। আমাকে হয়তো আপনার বিশ্বাসযোগ্যই মনে হয়নি।”

“প্রভা লিসেন..”

“আমার কিছু শোনার নেই রায়ান। আপনার কাছে আমি কোন কৈফিয়ত চাইবোনা। আমার ১২ বছরের কষ্টের ফিরিস্তি নিয়েও বসব না। শুধু আপনাকে একটা কথাই বলবো, আমাকে কি একটুও বিশ্বাস করা যেত না?”

রায়ান কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না। সেও তো ভেতরে ভেতরে এতদিন ছটফট করেছে প্রভাকে সবকিছু বলার জন্য কিন্তু পরিস্থিতি তাকে এইসব নাটক করতে বাধ্য করেছে। রায়ান এইজন্য অনেক লজ্জিত৷ সে বারবার করে প্রভার কাছে ক্ষমা চাইতে থাকে। কিন্তু প্রভার প্রচণ্ড অভিমান হয়েছে। তাই সে রায়ানকে সরাসরি বলে দেয়,”আমার আর আপনার কাছে কিছু শোনার নেই রায়ান। আপনার কাছে আমার শুধু এখন একটাই অনুরোধ। প্লিজ আমায় একা থাকতে দিন। আমি না বলা পর্যন্ত আর আমার সামনে আসবেন না।”

এই বলে প্রভা রায়ানের বাড়ি থেকে চলে যায়। আর রায়ান অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকে তার যাওয়ার পানে।

রায়ান বলতে থাকে,”তুমি আমাকে কিছু বলার সুযোগই দিলে না প্রভা। আমি এখন তোমার ভুল কিভাবে ভাঙাবো?”

~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আবির পা রেখেছে কানাডার মাটিতে। উদ্দ্যেশ্য প্রভাকে খুঁজে বের করে তার চ্যাপ্টার চিরদিনের জন্য ক্লোজ করে দেওয়া। কারণ আবির জানে প্রভা তার জন্য অনেক বড় বিপদের কারণ হতে পারে। আবির জানত প্রভা এখন কানাডাতেই আছে। কারণ প্রভার কানাডায় আসার কথা ছিল। এরপর নিজের ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে সে প্রভা বর্তমানে কোথায় আছে সেই সব ডিটেইলস জেনে নিয়েছে। তবে আবির এবার অনেক ভালো চাল চেলেছে। বর্তমানে সে আর কাউকে বিশ্বাস করে না। এজন্য সব কাজ বেশ সাবধানে করেছে। গোপনে পাসপোর্ট, ভিজার আবেদন করেছে। এবার সৌভিককেও কিছু জানায় নি। কারণ কাউকে সে বিশ্বাস করতে পারে না আর। ঢাকায় মিটিংয়ের কথা বলেই সে কানাডায় এসেছে। এখন আবিরের লক্ষ্য একটাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রভাকে খুঁজে বের করে তাকে শেষ করে দিয়ে তারপর আবার দেশে ফেরা।

আবির প্রভার ঠিকানা পেয়ে গিয়েছিল। তাই সেখানেই প্রভার খোঁজ করতে যায়। কিন্তু প্রভা বাসায় ছিল না। তার দরজার সামনে তালা ঝুলছিল। এইজন্য হতাশ হয়ে ফিরে আসছিল সে। প্রভার ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে কিছুদুর যেতেই কারো একটা সাথে ধাক্কা খায় সে। বোঝাই যাচ্ছিল লোকটা অনেক তাড়ায় ছিল। লোকটা আবিরকে লক্ষ্যই করে নি। তাই আবিরের দিকে না তাকিয়েই সরি বলে চলে যায়।

এদিকে কন্ঠস্বরটা শুনে আবির দাঁড়িয়ে যায়। কন্ঠস্বরটা তার কাছে অনেক চেনা লাগে। তাই পিছনে ফিরে তাকিয়ে লোকটাকে দেখার চেষ্টা করে কিন্তু আর তাকে দেখতে পায়না। আবির বিড়বিড় করে বলে,”রায়ানের গলা শুনলান মনে হয়।”

তারপর নিজেই নিজের মাথায় চাটি দিয়ে বলে,”ধুর, কিসব ভাবছি আমি? রায়ান তো কবেই মরে ভূত হয়ে গেছে এখন আবার কিভাবে আসবে ও? নিশ্চয়ই আমারই শুনতে ভুল হয়েছে। না, এসব ভেবে সময় নষ্ট করা যাবে না। আমাকে আগে ঐ প্রভাকে খুঁজে বের করে ওর চ্যাপ্টার ক্লোজ করতে হবে। খুব ভালোবাসে না ও ঐ রায়ানকে? আজ ওকে আমি রায়ানের কাছেই পাঠিয়ে দেব।”

এই বলে গগণবিদারী হাসতে থাকে আবির। তার এই হাসি এত ভয়ানক ছিল যে শয়তানও তার এই হাসি দেখে ভয় পেয়ে যাবে।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
প্রভা আজ হাসপাতালেই রোগী দেখতে ব্যস্ত ছিল। প্রভা নিজের কাজের ব্যাপারে অনেক সিরিয়াস। কখনই নিজের পারসোনাল প্রব্লেমের জন্য নিজের প্রফেশনাল লাইফে কোন সমস্যা আসতে দেয় না। তাই আজও মনে অনেক কষ্ট নিয়েই হাসপাতালে এসেছে। নিজের দায়িত্ব সে কোনমতেই অবহেলা করে না।

হঠাৎ করে প্রভার অনেক ক্লান্তি হচ্ছিল তাই সে একটু বাইরে আসে। এমন সময় একজন ওয়ার্ড বয় তার কাছে এসে তাকে বলে,”আপনাকে সানা প্রিস্ট ছাদে ডাকছে।”

প্রভা ওয়ার্ড বয়ের কথা শুনে ছাদে চলে যায়। কিন্তু সেখানে গিয়ে কাউকেই দেখতে পায়না। এমন সময় পেছন থেকে আবির এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”নাইস ঠু মিট ইউ।”

প্রভা ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। চিৎকার করতে যাবে তার আগেই আবির তাকে ক্লোরোফম মিশ্রিত রুমাল দিয়ে অজ্ঞান করে দেয়। তারপর দুজন ওয়ার্ড বয়কে ইশারা করতেই তারা লাশ রাখার প্লাস্টিক ব্যাগ নিয়ে আসে। আসলে আবিরই এই ওয়ার্ড বয়দের টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে।

আবিরের নির্দেশমতো ওয়ার্ড বয়রা প্রভাকে লাশ রাখার ব্যাগের মধ্যে ঢুকায়। তারপর তাকে নিয়ে যেতে থাকে। যার ফলে কেউ আর সন্দেহই করেনা তাদেরকে। তারা প্রভাকে নিচে আবিরের ঠিক করা একটা এম্বুল্যান্সের কাছে নিয়ে যায়। আবিরও ছিল তাদের সাথে। এমন সময় ডাক্তার অভিষেক চক্রবর্তী তাদের আটকিয়ে বলে, “কি হচ্ছে এখানে?”

ওয়ার্ড বয়েরা ভয় পেয়ে যায়। আবির ব্যাপারটাকে সামলানোর জন্য বলে,”আমার স্ত্রী এই হাসপাতালেই ভর্তি ছিল। ওর ক্যান্সার হয়েছিল লাস্ট স্টেজ। ওকে আর বাঁচানো যায়নি ”

বলেই কান্নার অভিনয় করতে শুরু করে। ডাক্তার অভিষেকের প্রথমদিকে একটু সন্দেহ হয়েছিল কিন্তু আবিরের কথা শুনে তার অনেক মায়া লাগে। তিনি আবিরকে শান্তনা দিয়ে বলে,”আপনি কষ্ট পাবেন না। জন্ম-মৃত্যু সব তো সৃষ্টিকর্তার হাতে। আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করব আপনার স্ত্রীর আত্না যেন শান্তি পায়।”

বলেই তিনি চলে যান। আবির তাড়া দিয়ে বলে,”তাড়াতাড়ি এটাকে গাড়িতে তোল।”

দুজন ওয়ার্ড বয় মিলে প্রভাকে এম্বুলেন্সে তুলে দেয়। এরপর তারা আবিরের কাছ থেকে টাকা বুঝে নেয়। আবির প্রভাকে নিয়ে রওনা দেয়। শয়তানী হাসি হেসে বলে,”আজ আমি তোর এমন অবস্থা করব যা তুই কল্পনাও করতে পারবি না।”

~~~~~~~
রায়ান আজ সারাদিন ধরে প্রভাকে খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত। প্রভা নাতো তার ফোন ধরছে আর নাতো তার সাথে যোগাযোগ করছে। প্রভাকে খুঁজতে খুঁজতে হাসপাতালে চলে আসে রায়ান। কিন্তু এখানেও তার কোন খোঁজ পায়না। সে উদাস হয়ে যায়। রায়ান উদাস মনে হাসপাতালের ছাদে চলে যায়। হঠাৎ তার পায়ে কিছু একটার সাথে হোচট লাগায় সে সেটা চেক করতে গিয়ে দেখে একটা ফোন পড়ে আছে। ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে সে বুঝতে পারে এটা প্রভার ফোন। অত:পর হতভম্ব হয়ে বলে,”প্রভার ফোন এখানে কি করছে? আর প্রভা কোথায়?”

এমন সময় রায়ানের ফোন বেজে উঠল৷ সৌভিক ফোন করেছে। রায়ান ফোনটা রিসিভ করতেই সৌভিক বলে,”তুই কোথায় রায়ান? তোকে একটা খারাপ খবর দেওয়ার আছে।”

“কি খারাপ খবর?”

“আবির কানাডায় গেছে।”

“কি? কবে এসেছে? আর তুই এখন আমায় এটা জানাচ্ছিস?”

“আমিও একটু আগেই জানতে পারলাম। ও আসলে কাউকেই বলে যায়নি। তুই সাবধানে থাকিস আর প্রভারও খেয়াল রাখিস। আবির কিন্তু প্রভার ক্ষতি করার চেষ্টা করবে।”

রায়ানের মনে ভয় ঢুকে যায়৷ আবির আবার প্রভার কোন ক্ষতি করলো না তো?

to be continue…
[আপনাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো আবিরকে মিস করছিলেন। তাই আবার আবিরকে ফিরিয়ে আনলাম আপনাদের মাঝে। আবিরকে আবার ফিরতে দেখতে আপনাদের অনুভূতি কেমন?]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here