#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_28(Bonus)
#ইয়াসমিন_খন্দকার
রায়ান অস্থির হয়ে যাচ্ছিল প্রচুর। প্রভার জন্য তার খুব চিন্তা হচ্ছিল। তাই সে বিন্দুমাত্র কাল বিলম্ব না করে সানা প্রিস্টের কেবিনে তার সাথে দেখতে যায়৷ রায়ান হাফাতে হাফাতে সানা প্রিস্টের কেবিনে প্রবেশ করলে সানা প্রিস্ট রায়ানের দিকে পানির গ্লাস বাড়িয়ে দিয়ে বলে,”এই নাও পানি খাও। কি হয়েছে তোমার? তোমাকে এমন লাগছে কেন?”
রায়ান পানিটা খেয়ে বলে,”প্রভার কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আমার মনে হয় ওর কোন বিপদ হয়েছে। আমি ওর ফোনটা ছাদে কুড়িয়ে পেয়েছি। তুমি প্লিজ একটু সিসিটিভি দেখে খোঁজ লাগাও।”
সানা প্রিস্ট রায়ানের কথা মতো কাজ করে। যদিও ছাদে কোন সিসিটিভি ছিল না কিন্তু একজন ওয়াড বয় প্রভাকে কিছু বলার পর সে ছাদের দিকে চলে যায় এটা সিসিটিভিতে দেখা যায়। এমনকি সেই ওয়াড বয় যে আরেকজনকে সাথে নিয়ে পুনরায় ছাদ থেকে একটা লাশের ব্যাগ নিয়ে বের হয় সেটাও দেখা যায়। রায়ান উত্তেজিত হয়ে বলে,”এই ওয়াড বয়কে ডেকে পাঠানোর ব্যবস্থা করো।”
সানা প্রিস্ট পুলিশকে এই ব্যাপারে সব জানায়। পুলিশ ওয়াড বয় দুজনকে গ্রেফতার করে এবং তাদের জেরা করতে থাকে। কিন্তু তারা এ ব্যাপারে বেশি কিছু করতে পারে না। এদিকে রায়ান হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না। সে হন্যে হয়ে প্রভাকে এদিক ওদিক খুঁজতে থাকে।
হঠাৎ করে রায়ানের ফোন বেজে ওঠে। রায়ান সেই ফোনটা রিসিভ করতেই আবির বলে ওঠে,”অনেকদিন পর আবার তোর সাথে কথা বলার সৌভাগ্য হলো দোস্ত।”
রায়ান রেগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। অনেক কষ্টে নিজের রাগ সংবরণ করে বলে,”প্রভাকে তুই কিডন্যাপ করেছিস তাইনা? বল, কোথায় রেখেছিস তুই ওকে?”
“কুল, কুল। এতদিন পর নিজের বেস্টফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিস আর আমার খবর না নিয়ে নিজের প্রেমিকার খবর নিচ্ছিস। দিস ইজ নট ফেয়ার রায়ান। প্রভার কথা বাদ দে। তুই নিজের কথা বল। কিভাবে এত খেলা খেললি তুই? ১২ বছর ধরে মৃত হওয়ার নাটক করলি কিন্তু কোন লাভ হলো না৷ আমি কানাডায় আসার আগেই রকস্টার রিহানের পারফরম্যান্সের একটা ক্লিপ দেখেছি। আর সেটা দেখেই আমি বুঝে গেছি যে রিহানই রায়ান। তোর গলার সুর আমি ভুলিনি দোস্ত। যাইহোক, সব নাটকের এবার শেষ হোক। আমি তোকে একটা ঠিকানা পাঠিয়ে দিচ্ছি তুই সেখানে চলে আয়। আর হ্যাঁ, একদম চালাকি করে পুলিশ আনার চেষ্টা করবি না। নাহলে তোর প্রভাকে আমি শেষ করে দেব।”
“না আবির, তুই এমন কিছু করবি না। তুই যা বলবি আমি তাই করবো।”
“এই তো গুড বয়।”
বলেই আবির ফোন রেখে দেয়। তারপর রায়ানকে ম্যাসেজ করে ঠিকানাটা পাঠিয়ে দেয়। এরপর সে প্রভার কাছে যায়। প্রভাকে একটা চেয়ারের সাথে বেঁধে রেখেছে আবির। প্রভার সামনে বসে বলে,”আজ তোর আর রায়ানের চ্যাপ্টার একসাথে ক্লোজ করব। ঐ বাংলায় একটা কথা আছে না সহমরণ? আজ তোদের সহমরণ হবে।”
প্রভা আবিরের দিকে ঘৃণাভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,”আপনার এই ইচ্ছা কোনদিন পূরণ হবে না। আপনার পাপের বিনাশ হবেই। মনে রাখবেন, আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না৷ এতদিন ধরে আপনি অনেক অন্যায় করেছেন। এবার আপনার সব অন্যায়ের ফল আল্লাহ আপনাকে দেবেনই।”
আবির অট্টহাসি দিয়ে বলে,”দেখা যাক।”
~~~~~~~
রায়ান ছুটতে ছুটতে চলে আসে একটি পরিত্যক্ত শপিং মলে। এই ঠিকানাই আবির তাকে ম্যাসেজ করে পাঠিয়ে দিয়েছে। রায়ান সেখানে এসেই প্রভার নাম ধরে ডাকতে থাকে। তখনই আবির এসে রায়ানের সামনে দাঁড়ায়। রায়ান আবিরের শার্টের কলার ধরে বলে,”প্রভা কোথায় আবির? কোথায় রেখেছিস ওকে?”
“এত প্রভা প্রভা করছিস কেন? একটা মেয়েকে নিয়ে এত আগ্রহ কেন রে তোর? এই মেয়েটার জন্য নিজের ১২ বছর নষ্ট করলি। আহ, কি ভালোবাসা!”
“বাজে বকা বন্ধ কর আর বল আমার প্রভা কোথায়।”
“যমের দুয়ারে গেছে? তুই যাবি নাকি?”
রায়ান নিজের ধৈর্য হারিয়ে ফেলে। আবিরকে একের পর এক প্রহার করতে থাকে। আবির রায়ানের হাত ধরে তাকে আটকিয়ে দিয়ে বলে,”ব্যাস, অনেক হয়েছে আর না। ঐ দেখ তোর প্রভাকে।”
রায়ান দেখতে পায় আবিরের লোক প্রভার মাথায় বন্দুক ধরে আছে। রায়ান হতাশ হয়ে যায়। আবির হেসে বলে,”কি রে থামলি কেন? মা’র আমায়।”
“আবির তুই প্রভাকে ছেড়ে দে। তোর শত্রুতা আমার সাথে। প্রভাকে এসবের মাঝে টানিস না।”
“ছেড়ে দেব? এত সহজে? নাহ, এবার দেখ তোদের আমি কি হাল করি।”
বলেই আবির একটি রড হাতে তুলে নেয়। তারপর রায়ানকে বেধড়ক মা’রতে শুরু করে। প্রভা রায়ানের নাম ধরে চিৎকার করতে থাকে। আবিরের মনে কোন দয়া হয়না। সে নির্দয়ের মতো মা’রতে থাকে রায়ানকে। রায়ান প্রভাকে বাঁচানোর জন্য সব মার মুখ বুজে সহ্য করে। কোন প্রতিবাদ করে না। আবিরের রড দিয়ে মে*রে রায়ানকে রক্তাক্ত করে দেয়। রায়ান মেঝেতে শুয়ে গোঙাচ্ছিল। তার রক্তে চারিদিক রঞ্জিত হয়ে গেছে। তার নিঃশ্বাস ক্রমশ ভারী হয়ে আসছে। প্রভা আর এসব কিছু সহ্য করতে পারছিল না। এরমধ্যে আবির রায়ানের মাথা লক্ষ্য করে সজোরে একটা আঘাত করে রড দিয়ে। রায়ান মাথায় হাত দিয়ে পড়ে যায়। প্রভা লক্ষ্য করে রায়ানের কান দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে৷ প্রভা হতভম্ব। রায়ানের মাথায় এর আগেও আঘাত লেগেছিল দূর্ঘটনার কারণে। আজ আবারো এই আঘাতের ফল কত ভয়াবহ হতে পারে একজন ডাক্তার হিসেবে এটা সহজেই অনুমান করতে পারে প্রভা। সে আর কোন উপায় খুঁজে পায়না৷ রায়ানের বাঁচানোর জন্য এবার আবিরকে আটকাতেই হবে। প্রভা সুকৌশলে তার মাথায় বন্দুক ধরে থাকা ব্যক্তির হাত থেকে বন্দুক কেড়ে নেয়। তারপর আবিরের হাতে,পায়ে গুলি করে। আবির মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
এমন সময় সানা প্রিস্টও পুলিশ নিয়ে হাজির হয়। রায়ানই তাকে সবটা ইনফর্ম করেছিল। পুলিশ আবির ওর তার দলের বাকি লোকদের গ্রেফতার করে। প্রভা দৌড়ে রায়ানের কাছে আসে৷ রায়ানের কোন সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না। প্রভা কান্নামিশ্রিত কন্ঠে সানা প্রিস্টকে বলে,”রায়ান কোন রেসপন্স করছে না কেন? ওর কিছু হয়ে গেল না তো?”
সানা প্রিস্ট প্রভাকে শান্তনা দিয়ে বলে,”তুমি কোন চিন্তা করো না প্রভা। আমি এখনই ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবহার করছি।”
~~~~~~~
সানা ও প্রভা দুজনেই বসে আছে অটির বাইরে৷ ভেতরে রায়ানের চিকিৎসা চলছে৷ প্রভা সমানে আল্লাহকে ডেকে যাচ্ছে। সানাও তার সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছে।
একজন ডাক্তার আসতেই প্রভা তার সম্মুখীন হয়ে বলে,”রায়ান এখন কেমন আছে?”
ডাক্তার হতাশ কন্ঠে বলে,”আমরা নিজেদের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। বাকিটা সৃষ্টিকর্তার হাতে। তবে ওনার বাঁচার আশা একেবারে নেই বললেই চলে। পরপর দুবার মাথায় সিভিয়ার আঘাত পেলেন।”
~~~~~
২ দিন পর,
রায়ানকে ৭২ ঘন্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এখনো তার জ্ঞান ফেরেনি। প্রভা আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করতে থাকে। একসময় সে বলে,”আল্লাহ তুমি আমার রায়ানকে বাঁচাও। প্রয়োজনে আমার জীবন নিয়ে নাও। তবুও রায়ানকে বাঁচিয়ে দাও।”
প্রভা এরপর রায়ানের কেবিনে যায়। রায়ানের পাশে বসে বলে,”একবার আপনাকে আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম রায়ান। আপনাকে পাওয়ার কোন আশা ছিল না কিন্তু আল্লাহ আপনাকে আবার আমার কাছে ফিরিয়ে দিলো। আপনি আরেকবার লড়াই করে আমার কাছে ফিরে আসুন না। আমাদের যে এখনো অনেক পথচলা বাকি আছে। আমার না অনেকদিনের স্বপ্ন আমাদের একটা সুখের সংসার হবে। আপনাকে ছাড়া যে সেই স্বপ্ন পূরণ হবে না। আপনাকে একবার হারিয়ে আমি আধমরা হয়ে বেঁচে ছিলাম কিন্তু আরেকবার যদি হারাই তাহলে আমি একেবারে মরে যাব। প্লিজ আমায় আর কাঁদাবেন না। আপনার প্রেম যে বারংবার আমায় কাঁদাচ্ছে।”
হঠাৎ করেই রায়ান জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে। প্রভা রায়ানের হার্টবিট চেক করে বুঝতে পারে তার হার্টবিট ক্রমশ কমছে। যা মোটেই ভালো লক্ষণ নয়। কিছুক্ষণ পর প্রভা লক্ষ্য করে রায়ানের আর শ্বাস পড়ছে না। প্রভা দূরে সরে যায়। রায়ানের দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলে,”তুমি আবারো আমায় ফাঁকি দিয়ে চলে গেলে রায়ান!”
to be continue…