একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় #Part_29(বিয়ে স্পেশাল) #ইয়াসমিন_খন্দকার

0
375

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_29(বিয়ে স্পেশাল)
#ইয়াসমিন_খন্দকার

চট্টগ্রাম শহরে রায়ানদের বাড়ি সেজে উঠেছে আলোকসজ্জায়। রুহুল আমিন আজ খুশি মনে সবটা তদারকি করছেন। আজ যে তার একমাত্র ছেলের বিয়ে! তাই আয়োজনের কোন ত্রুটি রাখতে চাইছেন না তিনি।

নিজের রুমে বসে তৈরি হচ্ছে রায়ান। তার পরনে একটা সুন্দর কারুকার্য করা পাঞ্জাবি। সৌভিক রায়ানকে দেখে বলে,”তোকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে। প্রভা আজ তোকে দেখে একদম ফিদা হয়ে যাবে।”

রায়ান হেসে বলে,”নতুন করে আর কি ফিদা হবে? ও তো ১২ বছর ধরেই আমার উপর ফিদা!”

অন্যদিকে নিজের বাড়িতে তৈরি হচ্ছে প্রভাও। তার পড়নে গোলাপী রঙের খুব সুন্দর একটা বেনারসি শাড়ি৷ সাথে রয়েছে বিভিন্ন ভারী গহনা। সব মিলিয়ে তাকে আজ একদম রাণীর মতোই লাগছে। অনুরাধা প্রভার কাছে এসে বলে,”তোকে অনেক সুন্দরী লাগছে বউয়ের সাজে! ইশ, যদি আমি ছেলে হতাম তাহলে আমিই তোকে বিয়ে করে নিতাম। দেখবি রায়ান ভাইয়া আজ আবার নতুন করে তোর প্রেমে পড়বে।”

প্রভা মৃদু হাসে। এখন তার চেহারায় সবসময় এই হাসিই বজায় থাকে। দুঃখ যেন বিদায় নিয়েছে তার জীবন থেকে। প্রভা ভাবতে থাকে তার দুঃখের সময়গুলো। সে তো সেদিন ভেবেছিল রায়ানকে দ্বিতীয়বারের মতো হারিয়ে ফেলবে। কিন্তু মীরাক্কেল ঘটে যায়! রায়ানের সেদিন শ্বাস কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হলেও পরবর্তীতে সে আবার শ্বাস নেয়। এরপর ২ মাস কোমায় থেকে রায়ান একেবারে সুস্থ হয়৷ রায়ান সুস্থ হবার কিছুদিনের মধ্যেই তারা দুজনে বাংলাদেশে ফিরে আসে। আর তখন থেকেই তাদের বিয়ের কথা পাকা হয়। আজ অবশেষে সেই শুভদিন এসেই গেল। যেদিন তাদের চার হাত এক হবে।

~~~~~~~~~~
অনুরাধা ও প্রভার কিছু কাজিন মিলে রায়ানকে গেটে আটকে রেখেছে। রায়ান তাদের সকলের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”বলো তোমাদের দাবি কি?”

অনুরাধা বলে,”বেশি না দুলা ভাই। মাত্র ১০ লাখ টাকা দিলেই আমরা গেট ছেড়ে দেব।”

সৌভিক ছিল রায়ানের পাশেই৷ সে বিষম খেয়ে বলে,”এটা একটু বেশিই হয়ে গেল না? এত টাকা তোমরা কি করবে? আমার বন্ধুটার উপর একটু দয়া কর।”

অনুরাধা বলে,”কোন দয়ামায়া হবে না। তোমার বন্ধু এই ১২ বছর ধরে আমার বান্ধবীকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। তাই ওকে তো এত সহজে যেতে দেওয়া যাবে না। সেই তুলনায় ১০ লাখ টাকা তো কমই হয়ে গেছে। আমাদের তো ১ কোটি টাকা চাওয়া উচিৎ ছিল।”

রায়ান কোন কথা না বাড়িয়ে ১০ লাখ টাকার চেক তাদের হাতে তুলে দেয় এবং বলে,”প্রভার জন্য অনেক অপেক্ষা করেছি। আর অপেক্ষা করতে চাইছি না। তাই তোমরা যত তাড়াতাড়ি গেট ছাড়বে ততোই ভালো।”

প্রভার খালাতো বোন মশকরা করে বলে,”বোঝাই যাচ্ছে আমাদের হবু দুলাভাই প্রভার বিরহে একেবারে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এই তোরা জলদি গেট খুলে দে। নাহলে এই বিরহের জ্বালায় উনি না আবার পুড়ে যান।”

রায়ান এসে বিয়ের আসরে উপস্থিত হয়৷ কিছু সময়ের মধ্যে প্রভাকেও নিয়ে আসা হয়। প্রভাকে বধূবেশে দেখে রায়ান মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে। প্রভার দিক থেকে চোখই ফেরাতে পারে না। সৌভিক তার পিছন থেকে হালকা কেশে বলে ওঠে,”দেখার আরো অনেক সময় পাবি। আপাতত বিয়েটায় মন দে।”

রায়ান তবুও প্রভার দিক থেকে চোখই ফেরাতে পারছিল না। বড্ড বেহায়া হয়ে উঠেছে যেন।

রায়ান ও প্রভাকে মুখোমুখি বসিয়ে তাদের সামনে একটা পর্দা রাখা হয়। আয়নায় তারা একে অপরের মুখ দেখে৷ কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করেন।

“৫ কোটি মোহরানা ধার্য করে মোহাম্মদ রুহুল আমিনের সুযোগ পুত্র আব্দুল্লাহ রায়ানের সাথে আকরাম খানের সুযোগ্যা কন্যা প্রভা খানের বিয়ে ঠিক করা হলো। মা, এবার তুমি কবুল বলো।”

প্রভা কিছুটা সময় নিয়ে বলে,”আলহামদুলিল্লাহ কবুল।”

রায়ানকে কবুল বলতে বললে সে অবশ্য সময় নেয় না। তড়িঘড়ি করে বলে,”জ্বি, কবুল।”

বিয়ে পড়ানো সম্পন্ন হয়। সবাই একে অপরের সাথে কোলাকুলি করতে থাকে। রায়ান এবার পর্দা সরিয়ে প্রভার দিকে তাকায়। মৃদু হেসে বলে,”অপেক্ষার পালা শেষ! এবার আমাদের মিলনের প্রহর ঘনিয়ে আসছে।”

প্রভার বিদায়ের সময় ঘনিয়ে আসছিল। প্রজ্ঞা বেগম এসে নিজের মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করেন। আকরাম খান নিজের স্ত্রীকে সামলে বলেন,”এমন করো না প্রজ্ঞা। মেয়েটা তো অনেক কষ্ট পাচ্ছে।”

এরপর তিনি রায়ানের হাতে প্রভাকে তুলে দিয়ে বলেন,”আমার মেয়েটাকে তোমার হাতে তুলে দিলাম বাবা। ও জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছে। ওর ১২ টা বছর অনেক কষ্টে কেটেছে। বাকি জীবনটা ওকে সুখে রেখো।”

রায়ান প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলে,”আপনি কোন চিন্তা করবেন না। আপনার মেয়েকে আমি নিজের জীবন দিয়ে হলেও আগলে রাখব।”

এই বলে প্রভাকে নিয়ে রওনা দেয় রায়ান। প্রভা নিজের মা-বাবার সামনে স্বাভাবিক থাকলেও গাড়িতে উঠে কান্নায় ভেঙে পড়ে। রায়ান তাকে সামলে বলে,”তুমি একদম কাঁদবে না প্রভা। এতদিন তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছ। আজকের কান্নাই যেন তোমার জীবনের শেষ কান্না হয়। আর কখনো যেন আমি তোমার চোখে জল না দেখি।”

~~~~~
প্রভা ও রায়ান রায়ানদের বাড়িতে এসে উপস্থিত হতেই রুহুল আমিন বরণ ডালা নিয়ে আসেন। তিনি হেসে বলেন,”আজ আমি নাহয় একটু নিয়মের ব্যত্যয় ঘটাই। সাধারণত ছেলের মায়েরাই নতুন বউকে বরণ করে ঘরে তোলে। কিন্তু রায়ানের মা তো বেঁচে নেই। তাই আমিই আমার ছেলের বউকে আমার ঘরের বউকে বরণ করে ঘরে তুলি।”

এই বলে তিনি প্রভাকে বরণ করে ঘরে তোলেন। রুহুল আমিনের বোন রাহেলা খাতুন প্রভাকে নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করেন। তিনি প্রভাকে বলেন,”অনেকদিন বাড়িতে খুশির আমেজ তৈরি হলো। আশা করি তোমরা অনেক সুখী হবে।”

♪♪
কথায় আছে, “অভাগা যেদিকে যায় সাগর শুকায়ে যায়”

আজ যেন এই কথার বাস্তব প্রতিফলন দেখতে পেল রায়ান। সে এখন তাদের বাসর ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। সৌভিকের নেতৃত্বে রায়ানের আরো কিছু বন্ধুবান্ধব দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। তাদের একটাই দাবি ২০ লাখ টাকা না দিয়ে রায়ান কিছুতেই ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না। বিশেষ করে সৌভিক একরোখা। তার স্ত্রী অনুরাধা সৌভিকের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা আদায় করে নিয়েছে তাই নিজের মুখ রাখতে তাকে ২০ লাখ নিতেই হবে। রায়ান আর কোন উপায় না পেয়ে সৌভিকের দাবি মেনে নিয়ে ২০ লাখ টাকা দিয়ে তবেই বাসর ঘরে প্রবেশ করে।

প্রভা তখন ঘোমটা মাথায় বসে ছিল। রায়ান প্রভার কাছে গিয়ে তার ঘোমটা তোলে। প্রভার দিকে কিছুক্ষণ মন্ত্রমুগ্ধের মতো চেয়ে থাকে রায়ান। প্রভা বলে,”কি দেখছেন এভাবে?”

“দেখছি এক রাজকন্যাকে। যে আমার ঘরে রাণী হয়ে এসেছে।”

প্রভা মৃদু হাসে। রায়ান প্রভার গাল আলতো করে ছুঁয়ে বলে,”তোমাকে যে আবার নিজের করে পাবো সে আশা আমি করিনি প্রভা। আসলেই আমি কতো বোকা ছিলাম। আমার বোকামোর জন্য তোমাকে কতোটাই না সাফার করতে হয়েছে! আমি কেন বুঝলাম না তুমি আবিরকে নয় আমায় ভালোবাসো।”

প্রভা বলে,”আজ আমাদের জীবনে অনেক স্মরণীয় একটি দিন। আজ আমরা তিক্ত অতীতের কথা মনে না করি। বরং গড়ে তুলি সুন্দর ভবিষ্যৎ।”

প্রভার কথা শুনে রায়ান অনেক খুশি হয়। আলতো করে তার কপালে চুমু খায়। অত:পর ধীরে ধীরে প্রভার আরো নিকট হতে থাকে। অবশেষে বহু প্রতীক্ষার পর তাদের দুটি দেহ ও মনের মিলন সম্পন্ন হয়। যেখান থেকে তৈরি হতে চলেছে।

to be continue…
[অনেকের কাছেই মনে হতে পারে গল্পটা শেষের দিকে। যারা এমন টা ভাবছেন তাদের জন্য এক বালতি সমবেদনা। গল্পটা এখানেই শেষ নয়। বরং এখান থেকেই গল্প নতুনভাবে শুরু হবে। ঈদের পর গল্পে আসছে নতুন টুইস্ট। Just wait and watch.]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here