#আগন্তুকের_আসক্তি
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৯]
গরম গরম ধৌয়া উঠা চায়ে চুমুক দিয়ে স্বস্তির শ্বাস ফেললেন নাসরিন।ইতিকার মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে সুরে শুধালেন,
– চলরে মা তুই আমার সঙ্গে।এই বুড়ো মানুষটাকে আর জ্বালাতন করিস না তোরা।আমার ছেলের কথা ছাড়।কান টানলে মাথা সুর সুর করে আসবে।
নাসরিনের কথায় চোখ তুলে সুফিয়ার দিকে তাকায় ইতিকা।তাদের দুজনের অবস্থা করুন।সাত সকালে ইনানের মা নাসরিন এসে বায়না জুড়েছেন ইতিকাকে তিনি নিয়ে যাবেন।কিন্তু ইনান বিষয়টি জানতে পারলে যে কুরুক্ষেত্র বাঁধিয়ে ছাড়বে তার ভয়ে কুঁকড়ে আছে ইতিকা এবং সুফিয়া।
– প্লিজ আন্টি এই দুঃসাহস করবেন না।আপনার সঙ্গে ইতিকাকে যোগাযোগ করতে সাহায্য করায় ইনান আমার মোবাইল ভেঙ্গেছে আমার সাথেও সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেছে।এখন আবার যদি জানে আপনি তাকে নিয়ে গেছেন তবে আমার গর্দান যাবে আন্টি।তাছাড়া বাইরে সিকিউরিটি রেখে গেছে।ইতিকা যেদিকেই যাবে খবর তার কাছে পৌঁছে যাবে শিওর।
সুফিয়ার কাদো কাদো স্বরে ঠোঁট বাকিয়ে হাসলেন নাসরিন।
– আমার ছেলেকে ভয় পাও ভালো কথা কিন্তু আমার কথার অমান্য করার সাহস করো না।আমি ভাইজানকে বলে রেখেছি ইতিকা আমার সঙ্গেই যাবে।আর সিকিউরিটিরা সব আমার ভাইজানের কথা মত কাজ করবে তোমরা আমার সঙ্গে চলো কোন সমস্যা হবে না।
নাসরিনের কথায় ঠোঁট উলটে তাকায় সুফিয়া।সবটা তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
ইতিকা মাথা নুইয়ে অনুনয় স্বরে বলে,
– আম্মা আপনি আমায় মাফ করুন।আপনার ছেলের অনুমতি ছাড়া কোথাও যাওয়ার সাহস আমার নেই।আপনি ভালো করেই জানেন তিনি কতটা ক্রুদ্ধ স্বভাবের
যদি জানে আমি আপনার সঙ্গে ওই বাড়িতে গেছি তবে সবটা রাগ সুফিয়া আপুর উপরে মেটাবেন।
– হয়েছে হয়েছে আর স্বামী ভক্ত হয়ে হবে না।তুমি কি চাওনা তোমার স্বামী সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করুক?রাজনীতি ছেড়ে ঘর সংসারে মন নিবেশ করুক।যদি চাও তবে আমার সঙ্গে চলো।
– আম্মা আপনি যা বলছেন ঠিক কিন্তু….
– আর একটা কথা বাড়ালে চড় তোমার গালে পড়বে।’মা’ ডেকেছো আমায় তোমার খারাপ আমি কখনো চাইবো না।তাই দ্রুত ব্যাগপত্র গুছিয়ে নাও।সুফিয়া তুইও চল।
নাসরিনের রাগ দেখে আর দু’বাক্য প্রকাশ করলো না ইতিকা।শশুড় বাড়ি যাওযার জন্য লাহমায় রাজি হলো।
.
বুকের ভেতরটায় হতে থাকা অদ্ভুত ধুকপুক শব্দটা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে ইতিকার।চারিদিকে শুনসান নিরবতা এই বাড়িতে কেউ আছে বলে মনে হচ্ছে না তার।
– আপু এইবাড়িতে কেউ থাকেনা?দারোয়ান ছাড়া আর কাউকে দেখলাম না।
ইতিকার প্রশ্নে কিঞ্চিৎ হাসে সুফিয়া।
– বাড়িতে আঙ্কেল আন্টি আর কয়েকজন কাজের লোক এইছাড়া কেউ থাকেনা।বছর খানিক আগে আমাদের আড্ডা ছিল এই বাড়িতে সবাই হইচই করে মিলেমিশে বাচঁতাম কিন্তু ইনান তার মামুর প্ররোচনায় এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় এক বছর আগে।তারপর থেকে আমাদেরো আর আসা হয়নি।
নাসরিনের হাত ধরে শুশুড় বাড়ির চৌকাটে পা বাড়ায় ইতিকা।বাড়ির চারদিকে সে তাকিয়ে আছে অদ্ভুত দৃষ্টিতে।সাজানো পরিপাটি বাড়িটা নির্জন কোলাহল মুক্ত।
_
ইনানের অজান্তে কেটে গেলো চার দিন।সে জানতে পারলো না তার ইতিবউ ফ্লাটে নয় বরং তার বাড়িতে আছে।অপরদিকে ইতিকাও যেন ভয়,ডর ভুলে হাসিখুশি দিন কাটাতে লাগলো।
গভীর রাত ঘুম নেই ইনানের চোখে।হোটেলের বারান্দায় বসে একের পর এক সিগারেটের ধৌয়া উড়াতে ব্যস্ত সে।এই কয়দিন ঘুম তার দু’চোখ থেকে উড়ে গেছে।ইতিকার ভাবনায় বিভোর সে।মাঝে মাঝে নিজের প্রতি নিজেই বিরক্ত হয়ে যায়। ইতিবউ তো তার জীবনে আছেই তবে কিসের এত ভাবনা?
মোবাইলে স্কিনে তাকিয়ে রাত তিনটা ছয় বাজতে দেখে উঠে দাঁড়ায়।রুমের লাইট অন করে একে একে কাভাড থেকে সব জামা নিয়ে ছুড়ে রাখে ব্যাগে।বিছানার সামনে এসে অলীদের মুখে পানির ছিটা দিতে থাকে,
– এই অলীদ।দ্রুত উঠ হাতে সময় নেই।
– আহ!দিনে খাটিয়ে মারিস এখন রাতেও শুরু করেছিস?যা এখান থেকে।
– ঠিক আছে তুই ঘুমা আমি গেলাম।
ইনানের কথাৎ তড়াক করে উঠে বসে অলীদ।
– যাবো মানে?এত রাতে কোথায় যাবো?আর এখনো ৩/৪ দিন থাকতে হবে আমাদের।
– আমার ভালো লাগছে না অলীদ।বাকি কাজের দায়িত্ব আমি অন্যদের দিয়ে যাবো।আমি বাড়ি ফিরতে চাই।
অলীদ প্রত্যুত্তর করলো না।বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমের দিকে হাটা শুরু করলো।দরজাটা ভিড়ে দিয়ে বিরবির করে বলে,
– বুঝি বুঝি তোর ইতিবউয়ের শোকে রাত দিন সব এক করে ফেলছিস তুই।
_
যতটা হাসিখুশি হয়ে বাড়ি ফিরলো ইনান সেই হাসিখুশীটা আর ঠোঁটের কোনে রইলো না তার।যখন জানতে পেরেছে ইতিকা ফ্লাট ছেড়ে তার বাড়িতে চলে গেছে।
– আম্মু তুমি কার পার্মিশনে ইতিকাকে ওইবাড়িতে নিয়ে গেছো?
– আমার ছেলের বউকে আমি আমার বাড়িতে এনেছি তার জন্য আলাদা কোন পার্মিশন নেওয়ার প্রয়োজন বলে আমি মনে করিনা।
– ভালো হচ্ছে না বলে দিলাম।ইতিকাকে পাঠিয়ে দাও।
– সম্ভব না।
– মা!আর সহ্য হচ্ছে না এই নাটক
ইনানের ধমক শুনে নাসরিন সহসা ফোন কেটে দিলেন।এতক্ষন নাসরিনের পাশে বসে তাদের কথোপকথন শুনছিল ইতিকা।এসির মাঝেও সে ঘেমে একাকার।
– আম্মা আমি বরং ফিরে যাই।উনি একটু বেশি রেগে আছেন।
-এক চড়ে তোর সবকটা দাঁত ফেলে দেবো।স্বামী ভক্ত আর সাজতে হবে না।চুপচাপ নাটক দেখে যা।এই ছেলের রাগ, জেদ,অভিমান,ত্যাড়ামো সারিয়ে তুলবি তুই।
নাসরিনের ধমকে চুপসে যায় ইতিকা।ইনানের বাবা ইব্রাহিম পত্রিকা পড়ার উচিলায় সোফায় বসে বউমা শাশুড়ির কান্ড দেখছিলেন।ইতিকার ভীতিকর মুখটা দেখে বিদ্রুপের হাসি হাসলেন তিনি।পত্রিকাটা পাশে রেখে শুধালেন,
– আমার ছেলে সে।তোমার শাশুড়ীর কথার যুক্তি ধরে নিজেকে নিরাপদ ভেবে লাভ নেই।হামলা যেকোন সময় তোমার উপর আসবে।
ইব্রাহিমের কথা শুনে গোপনে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে ইতিকা
.
রোদের দরুনে মাথায় ওড়না দিয়ে হাটছে সুফিয়া।বিশেষ প্রয়োজনে আজ ভার্সিটিতে এসেছে।কিন্তু অলীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানতে পেরেছে ইনান ফিরে এসেছে।
আর সেই ভয়েই সুফিয়া দ্রুত পা চালিয়ে বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্য ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে যায়।
হঠাৎ মাথায় প্রচন্ড জোরে চড় পড়ায় পেছেনে ঘুরে তাকায় সে।আরক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা ইনাকে দেখে চোখে মুখে যেন ধৌয়া উড়তে শুরু করেছে সুফিয়ার।
– দ..দোস্ত!
– আমার বউ তোর আমানতে দিয়ে গেছিলাম।
– বিশ্বাস কর আমার কোন দোষ নেই।
– সব দোষ তোর তুই আমার বউকে ফিরিয়ে আনবি কুইক।
সুফিয়া পড়েছে মহা ঝামেলায়।ওড়না দিয়ে কপালের ঘাম মুছে শুরু থেকে সবটা বলতে থাকে ইনানকে।সবটা শুনে ইনানের মাথায় যেন বাজ পড়েছে।
– মামু ইতিকাকে নেওয়ার পার্মিশন দেওয়ার কে?আমার বউ পার্মিশন নিশ্চই আমি দেবো।কাজটা কিন্তু ভালো হলো না।
– আমি জানি না তুই তোর ইতিবউকে বুঝা।সে আমাকে বলেই দিয়েছে তোর ফ্লাটে আর ফিরবে না।
– এত বড় সাহস!আমাকে অবমূল্যায়ন করছে সে।
– তোর বউয়ের এখন শুধু সাহস বাড়েনি পাখনা গজিয়েছে ২ টা করে।একটা তার শাশুড়ীর আশকারায় অন্যটি তার শশুড়ের।মাঝখানে আমি বখরির গরু।
সুফিয়া কথাটি বলেই ঠোঁট উল্টে ফেলে।অপরদিকে চিন্তায় মাথায় হাত চলে গেছে ইনানের। কি করে ফিরিয়ে আনবে তার ইতিবউকে
#চলবে…
সবগুলো পর্ব একসাথে – https://polyanan.com/tag/aguntuker-asokti/
❌কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ ❌