এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️ #লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️ — পর্বঃ৫১

0
148

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৫১

“আমাকে চিনতে পারছেন ফারিশ ভাইয়া?”
আচমকা এক মেইলি কণ্ঠ কানে আসতেই খানিক চমকে চাইলো ফারিশ। সাদা থ্রি-পিস পড়া এক মেয়ে দাঁড়িয়ে। ফারিশ বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। এগিয়ে গেল মেয়েটির পানে। মেয়েটি ফারিশকে দেখেই মৃদু হাসলো। আবার জিজ্ঞেস করল,“আমাকে চিনতে পেরেছেন ভাইয়া?”

ফারিশ কতক্ষণ চেয়ে দেখলো মেয়েটিকে। অদ্ভুত ব্যাপার তার মেয়েটির কথা মনে পড়ছে না। ফারিশের স্মৃতি শক্তি খুব একটা দূর্বল নয় তবুও মেয়েটিকে তার মনে পড়ছে না। মেয়েটি ফারিশের দৃষ্টি ভঙ্গি বোধহয় বুঝতে পারলো। সে বলল,“আমি তিশা ভাইয়া। আপনার মনে আছে ওই এক বছর আগে মেয়ে পাচার কারির হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন।”

ফারিশের তড়িৎ মনে পড়ে গেল সবটা। এই মেয়েটা ল’য়ের স্টুডেন্ট ছিল। ফারিশ দারুণ অবাক হলো। সে ভাবতেও পারে নি। ওই মেয়েটা আসবে। ফারিশ বিস্মিত নজরে কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,
“কেমন আছো তুমি?”

তিশা মিষ্টি স্বরে বলল,
“ভালো ভাইয়া। আপনি?”
“আমি তো এই আছি।”
“আপনি সত্যি মাফিয়া ভাইয়া?”

ফারিশ মাথা নাড়িয়ে বলে,
“দেখে মনে হয় না তাই না।”
“তেমনটাই।”
“আসলে কি বলো তো দুনিয়ার সব খারাপ মানুষই ভালো মানুষের মুখোশ নিয়ে ঘোরে।”
“আপনি খারাপ মানুষ নন।”

চমৎকার হাসলো ফারিশ। বলল,
“টিভিতে আমার অস্ত্র সস্ত্র, মাদকদ্রব্য দেখো নি?”

তিশা কথা বলে না। ফারিশ বলে,
“তুমি কি আমাকে সাহায্য করতে এসেছো?”
“বিষয়টা মিথ্যে হলে আমি প্রাণপণ চেষ্টা করবো।”

ফারিশ বলে,
“আমি যে আত্মসমর্পণ করেছি শোনো নি?”
“শুনেছি। তবুও মিথ্যে বলে মনে হয়েছে। কারো কি ব্ল্যাকমেলের শিকার হয়েছেন ভাইয়া।”

ফারিশ মাথা নাড়ায়। যার অর্থ, ‘হয়েছে।’
তিশার ঠোঁটে হাসি রেখা দেখা যায়। সে আওয়াজ করে বলে,“সত্যি। নাম বলুন আমি সাক্ষর প্রমাণ সংগ্রহ করে আপনায় ছাড়াবো।”

ফারিশ আবার হাসে। মেয়েটার কথায় তার এত হাসি পাচ্ছে। ফারিশ বলে,“সে তো কোনো মানুষ নয় তিশা।”

তিশা অবাক হয়ে বলল,
“মানে?”
“আমি যে ভালোবাসায় ব্ল্যাকমেল বদ্ধ তিশা।”

তিশা ফারিশের কথার আগামাথা বুঝে না। তিশা বলে,“আমায় একটু বুঝিয়ে বলুন না।”

ফারিশ দ্বিধাহীন কিছু কিছু বললো। তিশা অবাক না হয়ে পারলো না। ভালোবাসার জন্য জেল খাটছে এসেছে ফারিশ। তিশা বলল,
“আমি আপনায় বের করবো ফারিশ ভাইয়া। আপনি কোনো টেনশন করবেন না পুরো কেস আমি ঘুরিয়ে দিব। আমি জানি এতে আমাকে অনেকগুলো মিথ্যে সাজাতে হবে তবুও আমি আপনায় বাঁচাবো।”

ফারিশ সঙ্গে সঙ্গে নাকচ করলো তাতে। বলল,
“লোকে বলে খারাপ মানুষের সাথে মিশলে মানুষ খারাপ হয়ে যায়। তুমি তো আমার সাথে মেশো নি তবুও খারাপ কেন হচ্ছো?”
“আমি আপনায় বাঁচাতে চাই ভাইয়া। মাঝে মাঝে কিছু ভালোর জন্য আমাদের একটু আকটু খারাপ হতে হয়।”
“এতে আমার আত্নসমর্পণ করে লাভটা কি হলো?”
“বেআইনী কাজ থেকে তো মুক্তি পেলেন।”
“তোমার কি মনে হয় জেল থেকে বের হলেই আমি মুক্ত। শুনেছি আমার সাথে যারা কাজ করতো তাদের মধ্যে দুজন পালিয়েছে। তোমার কি মনে হয় তারা আজীবন পালিয়ে থাকবে আমায় খুন করতে আসবে না।”

তিশা কি বলবে বুঝতে পারছে না। ফারিশ বলে,
“একটা কথা বলি শোনো,আইনের পোশাক যেহেতু পড়েছো। সবসময় সত্যের হয়ে লড়বে। আর আমার সত্য হলো আমি পাপী। আমার মুক্তি নেই। কঠিন শাস্তিই আমার প্রাপ্য।”
“আমি আপনায় সাহায্য করতে চাই ভাইয়া?”
“করবে তো তবে এবার নয় পরের বার। পরেরবার ফারিশ ভুল করবে না।”

তিশা ছলছল নয়নে তাকিয়ে রয় ফারিশের দিকে। ফারিশ শান্ত গলায় বলে,“চলে যাও তিশা। আমার এই মুহূর্তে সাহায্যের প্রয়োজন নেই। পরেরবার লাগলে আমি নিজে তোমায় ডাকবো।”

তিশা মাথা নুইয়ে বলে,
“আপনার ওপর যে অভিযোগগুলো আছে তার শাস্তি অনেক কঠিন ভাইয়া। মৃত্যুদন্ড হওয়ার চান্স আশি পারসেন্ট। বাকি বিশ পারসেন্টের শাস্তিও সহজ নয়। কম করে হলেও পনের থেকে বিশ বছরে জেল।”

শাস্তির কথা শুনে ফারিশ হাসিমুখে বলে,
“যে শাস্তিই হোক আমি নিতে প্রস্তুত।”
“একটু কি মিথ্যের আশ্রয় নেয়া যায় না?”
“এতদিন যাবৎ তো ছিলাম মিথ্যের আড়ালে প্রথমবার সত্যের কাছে এলাম। কঠিন হলেও শান্তি পাচ্ছি। মিথ্যেতে শান্তি নেই আছে গুমোট অশান্তির নিঃশ্বাস।”

তিশা আর কিছু বলতে পারলো না। অতঃপর তাকে নিরাশ হয়েই ফিরতে হলো। ফারিশ কিছুতেই রাজি হলো না। তিশা তপ্ত নিশ্বাস ফেলে পুলিশ স্টেশন থেকে বের হলো। কি করবে বুঝতে পারছে না। মানুষটা বাজে কাজ করলেও মনটা ভালো ছিল। তিশার মন খারাপ হলো। মনে মনে ভাবলো,
“আমার কথাটা মানলে খুব বেশি কি ক্ষতি হতো ফারিশ ভাইয়া?”

প্রশ্ন আসলো। তবে উত্তর আসলো না। তিশা প্রচন্ড মন খারাপ নিয়ে চলে গেল।’


পুরনো বাংলো। এটা হলো সেই বাংলো যেখানে ফারিশ আর আদ্রিতা প্রায় আসতো। বাংলোর ওই সামনের উঠোনটায় গতবারের শীতের সেই সময়ে আগুন জ্বালিয়ে ফারিশ আদ্রিতার কত প্রেমআলাপ চলতো। আদ্রিতা জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে সেই উঠোনটার দিকে। মন জুড়ে বিষাদ ঘুরছে। আদিবের আওয়াজ শোনা গেল তখন। সে বলছে,
“ডাক্তার ভাবি আসবো?”

আদ্রিতা পিছন ঘুরে চাইলো। আদিব খাবার নিয়ে এসেছে। আদ্রিতা কাল থেকে কিছু খায় নি। আদিব খাবার নিয়ে যেতে যেতে বলল,“খাবারটা খেয়ে নেও ভাবি।”

আদ্রিতা শান্ত ভঙ্গিতে বলে,“আমার খেতে ইচ্ছে করে না ভাইয়া।”

আদ্রিতার অসহায় কণ্ঠস্বর শুনে আদিবের কষ্ট লাগলো। খাবারটা বিছানায় রেখে বলল,
“এভাবে বলে না ভাবি শক্ত হও ভাই ফিরে আসবে দেখো। ভেঙে পড়লে কি চলবে বলো?”

আদ্রিতা হেঁটে আসতে নেয়। দাঁড়িয়ে থাকতে আর ভালো লাগছে না। হঠাৎ আদ্রিতার মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। সে পড়ে যেতে নিলো সঙ্গে সঙ্গে তাকে ধরে বসলো আদিব। বলল,“সাবধানে ভাবি।”

আদ্রিতা শক্ত হয়ে দাঁড়াতে চাইলো। পেট কামড়ে বমি আসলো তখন। আদ্রিতা দ্রুত ছুট লাগালো ওয়াশরুমে। আদিব চিন্তিত নজরে তার পানে তাকানো। কাল রাত থেকেই দেখছে আদ্রিতা ভাবি ঠিক নেই। ঘন ঘন বমি করছে। আদিব ওয়াশরুমের দিকে যেতে গিয়েও গেল না। খানিক সংকোচ লাগে। বাড়ির কলিংবেল বাজলো তখন। আদিব আদ্রিতাকে বলে চলে যায় নিচে। নিশ্চয়ই আদ্রিতার বন্ধুমহলেরা এসেছে।”

সোফায় গোল হয়ে বসে আছে আশরাফ, রনি,মুনমুন, মৃদুল আর আদিব। চাঁদনী এখনও চট্টগ্রাম থেকে পৌছায় নি। আদ্রিতা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সোফায় বসেছে মাত্র। মুনমুনই তাকে ধরে বসালো। সবাই ফ্যাল ফ্যাল নজরে তাকিয়ে আছে আদ্রিতার দিকে। আদ্রিতা বেশ বিরক্ত নিয়ে বলল,
“তোরা এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? আগে কখনো দেখিস নি আমায়।”

জবাব দিতে চায় না কেউই। কিছু সময় পর মৃদুল বলে,“তুই ঠিক আছিস তো আদু?”

আদ্রিতা স্বাভাবিক কণ্ঠেই বলে,
“হুম।”

মুনমুন বলছে,“এমন বমি কি তোর ঘনঘন হচ্ছে? চোখ মুখেরও তো বেহাল অবস্থা।”

আদ্রিতা কিছু বলার আগেই আদিব বলে উঠল,
“হুম। কাল থেকেই দেখছি।”

মৃদুল হেঁসে বললো,“দোস্ত আমরা কি মামা হমু?”
মৃদুলের আকস্মিক প্রশ্নে হতমত খেয়ে গেল সবাই। এমন একটা সময়ে এই কথাটা কি বলার মতো সময়। রনি বলল,“তুই আর মানুষ হলি না।”

মুনমুন চেয়ে চেয়ে দেখলো আদ্রিতাকে। মৃদুলের কথাটা একেবারেও ফেলে দেয়ার মতো নয়। আদ্রিতার চোখমুখ যেন সেদিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। আদিব বিস্মিত নজরে তাকিয়ে আছে আদ্রিতার দিকে। আদ্রিতা কিছু বলছে না। মুনমুন বলল,“মৃদুলের ধারণা কি ঠিক আদু?”

আশরাফ বলল,“তুইও মৃদুলের মতো শুরু করলি।”
মুনমুন বলল,“আদ্রিতার মুখ থেকেই শুনি।”

সবাই আদ্রিতার দিকে তাকাল। মুনমুন ফের প্রশ্ন করে,“আদু মৃদুলের ধারণা কি সত্যি?”

আদ্রিতা এবার মাথা নাড়ালো। মলিন মুখে জানালো,“সত্যি।”

আদিব হতভম্ব হয়ে গেল আদ্রিতার উত্তর শুনে। বুকের ভেতর আচমকা মোচর দিয়ে উঠলো। এমন একটা সময়ে তার ভাই বাড়ি নেই। আদিবের ভাবতেই কান্না পাচ্ছে। আদিব উঠে দাঁড়ালো। তার মনে হলো এই খবরটা ভাইকে দেয়া দরকার।

বিষয়টা খুশির হলেও আদ্রিতার বন্ধুমহলের কেউ খুশি হতে পারলো না। সবার চোখে মুখে বিষণ্ণ ভাব। এখন কি হবে? ফারিশের কথা চিন্তাও করতে পারছে না কেউ। তারা বুঝতেই পারে নি যাকে নিয়ে তারা পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ করতে গিয়েছিল সে আসলেই মাফিয়া ছিল। অথচ তখনকার পরিস্থিতি আর এখনকার পরিস্থিতি কত ভিন্ন। আগামীতে কি হবে কেউ ধরতে পারছে না যেন। সবার চোখেমুখে চিন্তার ছাপ। কেমন হবে তাদের বান্ধুবীর ভবিষ্যতে?”

আদিব বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে। নিজে ড্রাইভ করে ছুটছে। তার উদ্দেশ্য আদ্রিতার মা হওয়ার ব্যাপারটা ফারিশকে জানানো। তাকে বোঝানো সে যেটা করেছে সেটা ভুল করেছে। ঠিক করে নি। আদিবের মাথা কাজ করা হঠাৎ বন্ধ করে দিয়েছে সে ভুলতে বসেছে ফারিশের বলে যাওয়া একটি কথা,“তুমি পুলিশ স্টেশন আসবে না আদিব।”

#চলবে….

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আপাতত কিছু বলার নেই শুধু বলবো একটু ধৈর্য্য ধরতে।]

#TanjiL_Mim♥️.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here