এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️ #লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️ — পর্বঃ৫২

0
127

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৫২

হন্তদন্ত হয়ে পুলিশ স্টেশন ঢুকলো আদিব। আর একটু আগাতেই তার পথ আটকালো নয়নতারা। শান্ত স্বরে বলল,“কোথায় যাচ্ছেন ভাইয়া?”

আদিব তাকায় নয়নতারার দিকে। বলে,
“আমি ফারিশ ভাইয়ের সাথে দেখা করতে চাই।”
“এভাবে তো আমরা আপনার সাথে দেখা করাতে পারি না।”
“দয়া করে আমায় ভিতরে যেতে দেও। আমি অল্পক্ষণ থাকবো। ভাইকে দুটো কথা বলেই চলে আসবো।”

নয়নতারা মাথা নত করলো। অফিসে কিশোর নেই। কিশোর যাওয়ার আগে নয়নতারাকে পই পই করে বলে গেছে,“আমি যতক্ষণ পর্যন্ত না আসবো ততক্ষণ পর্যন্ত ফারিশের সাথে কাউকে দেখা করতে দিবেন না মিস নয়নতারা।”

নয়নতারাও মাথা নাড়িয়ে হা জানায়। কিন্তু এখন আদিবকে কি করে আটকাবে। নয়নতারার ভাবনার মাঝেই আদিব আবার বলে,“প্লিজ নয়নতারা আমায় একটিবার যেতে দেও।”

নয়নতারা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“ভাইয়া অফিসে কিশোর স্যার নেই। উনি বলে গেছেন আমি যেন কাউকে ফারিশ ভাইয়ের সাথে দেখা করতে না দেই।”
“প্লিজ নয়নতারা মাত্র পাঁচ মিনিটের জন্য আমায় দেখা করতে দেও।”

নয়নতারা মানলো। বলল,
“ঠিক আছে কিন্তু বেশি সময় নিয়েন না ভাইয়া।”

আদিব কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো। দ্রুত ঢুকে গেল ভিতরে। নয়নতারা দরজার কাছে দাঁড়ালো। মনে মনে প্রার্থনা করল,“কিশোর স্যার আসার আগে যেন আদিব ভাই বেরিয়ে যান।”


চুপচাপ বসে আছে ফারিশ। সময় কেমন হবে বিকেলের প্রথম প্রহর। পুরো একটা দিন কেটে গেল ফারিশ চার দেয়ালে বন্দী। ফারিশের আচমকা আদ্রিতাকে দেখতে মন চাইলো। কিন্তু কি করে দেখবে? ফারিশের অসহায় লাগলো। মেয়েটা একবার আসতো। আদিব কি করছে? তাকে ছাড়া চলতে পারছে তো। ফারিশের এত খারাপ লাগছে বোঝানো যাচ্ছে না। হঠাৎ আদিবের কণ্ঠ শোনা যায়। সে নিদারুণ বিষণ্ণ সুরে ডাকে,“ভাই।”

ফারিশের বুকটা বুঝি আচমকা কেঁপে উঠলো। পুরো একটা দিন পর আদিবের কণ্ঠ শুনছে ফারিশ। ফারিশ চাইলো। আদিব অসহায়ের ন্যায় দাঁড়িয়ে। চোখ ছলছল। ছেলেটা কাঁদবে। ফারিশ বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। একটু একটু করে এগিয়ে গেল আদিবের দিকে। আদিব শক্ত করে জেলের শিক চেপে ধরলো। ইচ্ছে করছে জেলের শিক ভেঙে ফারিশকে বের করতে। ফারিশ হাসার চেষ্টা করলো। আশ্চর্য! তার হাসি আসছে না। ফারিশ তাও চেষ্টা করলো। না হচ্ছে না। ফারিশ জোরে নিশ্বাস ফেলে বলল,“কেমন আছো আদিব?”

আদিব শোকাহত স্বরে বলে,
“ভালো।”
“আমায় মিথ্যে বলছো?”
“সত্যিটা জেনেও জানতে চাইলে কেন?”

ফারিশ উত্তর দেয় না প্রসঙ্গ পাল্টে বলে,
“তোমার ডাক্তার ভাবি কেমন আছে আদিব?”
“তুমি যেমনটা রাখতে চেয়েছিলে তেমনটাই আছে।”
“আমার উপর রাগ করেছো তুমি?”

আদিব জবাব দেয় না। মাথা নুইয়ে ফেলে। ফারিশ বলে,
“তোমাকে এখানে আসতে বারণ করেছিলাম না আদিব। তাও এলে কেন?”
“তোমার কি কষ্ট লাগছে না ভাই?”
“ফারিশদের কষ্ট লাগে না।”

তড়িৎ জবাব ফারিশের। আদিব মৃদু স্বরে বলে,
“তুমি খুব স্বার্থপর ভাই।”
“চলে যাও আদিব।”

কথা বলে মুখ ঘুরিয়ে নেয় ফারিশ। শক্ত কণ্ঠে বলে,
“তোমায় দেশ ছাড়তে বলেছিলাম আমি।”
“আমিও তো বলেছি ছাড়বো না।”
“চলে যাও। এখানে আর এসো না।”
“তুমি একটা নিষ্ঠুর মানুষ।”

ফারিশ জবাব দেয় না। আদিবের নিজেকে ধৈর্য্যহীন লাগে। বিতৃষ্ণা নিয়ে বলে ওঠে,“তুমি বাবা হতে চলেছো ভাই।”

কথাটা যেন ভূমিকম্পের ন্যায় কানে বাজলো ফারিশের। ফারিশে রুহু সমেত কেঁপে উঠল। এ কি শুনলো সে? ফারিশ ঘুরে চাইলো। আদিবের আর একটু কাছে এগিয়ে বলল,
“এসব তুমি কি বলছো আদিব?”
“সত্যি বলছি ভাই ডাক্তার ভাবি মা হতে চলেছেন।”

ফারিশের হঠাৎ সবটা এলেমেলো লাগলো। আদিব বলল,“এবার তো মনে করো ভাই তুমি কাজটা ঠিক করো নি।”

ফারিশ জবাব দেয় না। কি বলবে! সবটা এমন অগোছালো লাগলো কেন! আদিব বলল,
“এবার কি করবে ভাই?”

ফারিশ শক্ত মুখে চোখ বন্ধ করে বলল,
“তুমি বাড়ি যাও আদিব।”
“এখান থেকে বার হওয়ার কোনো কি পথ খোলা নেই?”

ফারিশ কপট রাগ দেখিয়ে বলে,
“না নেই। তুমি যাও।”
“আদ্রিতা ভাবির কাছে ফেরার ইচ্ছে নেই।”

ফারিশ মলিন মুখে বলে,
“আমি কি করবো আদিব? কিছু করার নেই তুমি চলে যাও?”

আদিব কিছু বলবে এরই মাঝে নয়নতারা ছুটে আসলো। থরথর করে বলল,“আদিব ভাইয়া চলুন কিশোর স্যার এসে পড়েছেন।”

ফারিশ আতঙ্কিত স্বরে বলল,
“তুমি যাও আদিব।”
“ভাই,
“তোমাকে যেতে বলেছি আমি,

প্রচুর বিতৃষ্ণা নিয়ে বলল ফারিশ। আদিব কিছু সময় চুপ থাকলো। ফারিশের অস্থিরতা দেখে আর দাঁড়ালো না। আদিব অশ্রু ভেজা চোখে বলল,
“আপনি খুব খারাপ ভাই। আপনি খুব খারাপ।”

কথাটা বলেই চলে গেল আদিব। ফারিশ ঠায় দাঁড়িয়ে। জেলের শিক শক্ত করে চেপে ধরলো। তার হঠাৎ রাগ লাগছে। এত রাগ হচ্ছে, ইচ্ছে করছে নিজের প্রানটাই নিয়ে নিতে। আদ্রিতার মুখখানা চোখের সামনে ভেসে উঠলো ফারিশের। ফারিশ জেলের দেয়ালে ঘুষি মারলো। তার জীবনটা এমন কেন হলো? ফারিশ ভুল করেছে। আদ্রিতাকে তার জীবনে আনা ঠিক হয় নি। আদ্রিতার জীবন নষ্ট করেছে ফারিশ। কথাটাগুলো ভেবেই রাগ হলো ফারিশের। সে পরপর কতগুলো ঘুষি মারলো দেয়ালে। সেই মুহূর্তে হাজির হলো কিশোর। ফারিশকে পাগলের মতো করতে থতমত খেল কিশোর। দৌড়ে ছুটে গেল জেলের ভিতর। ধরলো ফারিশকে। বলল,
“এসব কি করছেন আপনি?”

ফারিশ কিশোরের কথার উত্তর দেয় না। অনবরত ঘুষি মারতে থাকে। কিশোর উপায় না পেয়ে দুজন কনস্টেবলকে ডাকে। তারা দৌড়ে আসে। কিশোর একটা চেয়ার আর দড়ি আনতে বলে। তারা আনে। অতঃপর তিনজন পুলিশ মিলে ফারিশকে চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে দেয়। কিশোর বলে,“শান্ত হন ফারিশ এসব কি করছেন?”

ফারিশ বলে,
“আপনার কাছে রিভলবার নেই আমার বুকে গুলি করুন অফিসার। আমার আর সহ্য হচ্ছে না।”

কিশোর কি বলবে বুঝছে না। আচমকা ফারিশের হলো টা কি!’

সময় গেল দশ মিনিট। পরিবেশ হলো শান্ত। কিশোর বাকি দুজন কনস্টেবলকে চোখের ইশারায় বললো চলে যেতে। তারাও আদেশ মেনে চলে গেল। কিশোর জেল থেকে বেরিয়ে ফারিশের জন্য পানি আর একটা চেয়ার নিয়ে আসলো। ফারিশের একহাত খুলে হাতে দিল পানি। ফারিশ নিলো। কিশোর বলল,
“পানিটা খান।”

ফারিশ খেল। অতঃপর কিশোর সামনে চেয়ারটায় বসলো। শান্ত স্বরে বলতে লাগলো,
“আপনি কি জানেন ফারিশ সাহেব আমার আপনার ওপর একটা চাপা রাগ ছিল। অবশ্য ছিল বললে ভুল হবে এখনও বোধহয় আছে।”

ফারিশ অবাক স্বরে বলে,
“কিসের রাগ?”
“বলছি,

ফারিশ চেয়ে রয় কিশোরের মুখের দিকে। কিশোর তপ্ত নিশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করে,
“আপনার মনে আছে কি না জানি না বছর তিনেক আগে আপনাকে খোঁজার জন্য আপনার গাড়ির সামনে একটি মেয়ে আসে। মেয়েটার নাম মাইশা। একজন জার্নালিস্ট ছিল।”

ফারিশ অবাক হলো কিশোরের কথা শুনে। বছর তিনেক আগে। হ্যাঁ ফারিশের মনে পড়েছে, একদিন মধ্যরাতে একটা মেয়ে হঠাৎ তার গাড়ির সামনে এসে সাহায্য চায়। বলে তাকে কিছু বাজে লোক তাড়া করেছে ফারিশ যেন তাকে সাহায্য করে। ফারিশ সেদিন সাহায্য করে। এরপর,

কিশোর বলে ওঠে তখন,
“মেয়েটা আপনায় ভালোবেসে ছিল ফারিশ। আর আপনি তাকে রিজেক্ট করেন। ও মূলত আপনার বিরুদ্ধে প্রমাণ খোজারের জন্য গিয়েছিল। কিছুমিছু পেয়েও ছিল। কিন্তু ও বেইমানি করে আপনি মাফিয়া জেনেও বলে মাফিয়া নন। আপনি যেদিন ওকে রিজেক্ট করে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন সেইদিন ও গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে। ও আমার বোন ছিল। আমার কথাতেই ও আপনার কাছে এসেছিল আদ্রিতার মতো। কিন্তু ওই যে আপনি আদ্রিতার প্রেমে পড়লেও আমার বোনের প্রেমে পড়লেন না। এই ব্যাপারটায় আমার প্রথমে রাগ থাকলেও এখন আর নেই। কারণ এতে আপনার কোনো দোষ ছিল না। তবুও ভাই তো তাই রাগ নিয়েই আপনার বিরুদ্ধে শুধু প্রমাণ খুঁজেছি। কিন্তু আপনার বুদ্ধিমত্তার কাছে আমি প্রতিবার ব্যর্থ হয়েছি। সেদিন যখন আপনি আমায় ফোন করে বললেন আপনি আত্নসমর্পণ করবেন। বিশ্বাস করুন আমি দারুণ অবাক হয়েছি। ভালোবাসা মানুষকে জেনেশুনে এমন মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে এ যেন আপনায় না দেখলে জানতামই না। আপনি চিন্তা করবেন না আমি আপনার তরফ থেকে আদালতে একটা দরখাস্ত পাঠাবো, সেখানে বিশেষ করে ওই মেয়ে পাচারকারীর দলটা ধরিয়ে দেওয়ার কথা উল্লেখ থাকবে। আশা করি তারা আপনার শাস্তি কমিয়ে দিবেন।”

এই বলে ফারিশের হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিল কিশোর। ফারিশ বলল,
“আপনার বোনকে আমি বুঝিয়ে ছিলাম আমার জীবন ঠিক নয়। কিন্তু ও যে এমন কিছু করবে আমি ভাবতে পারি নি।”

কিশোর মৃদু হেঁসে বলে,
“বুঝতে পেরেছি। আবেগী ছিল আমার বোনটা যার দরুন এমনটা করেছে। যাক আপনার ভালো হোক।”

কিশোর চোখ মুছে বেরিয়ে গেল জেলের ভিতর থেকে ফারিশ চুপচাপ বসে। এসব সে কি শুনলো? মাইশা মেয়েটা আর ফারিশের কাছে আসছে না বলে ফারিশ ভেবেছিল বোধহয় বিষয়টা বুঝতে পেরে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে নতুনভাবে জীবন শুরু করেছিল মাইশা। এরপর কাজে কাজে আর মেয়েটার কথা মনে ছিল না ফারিশের। অথচ আজ কি শুনলো?’ ফারিশের ভীষণ মন খারাপ হলো।


টানা কয়েকদিন ফারিশকে জেলবন্দী করে রাখা হলো। এই কয়েকদিনে ফারিশ শুধু চুপচাপ বসেই থাকলো। সারাক্ষণ ভাবলো। আদ্রিতার কথা, আদিবের কথা, তার অনাগত সন্তানের কথা।’ ফারিশ বুঝতে পারছিল না কি করবে? তিশার কথাটা কি তার শোনা উচিত ছিল?”

আজ সোমবার। ফারিশের কেসটা কোর্টে ওঠার দিন। আজই হয়তো ফারিশের কাজের শাস্তি কিরূপ হবে তা জানা যাবে। আদ্রিতা তৈরি হচ্ছে। তার চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে। গত কয়েকদিন যে নির্ঘুম কাটিয়েছে। এই কয়েকদিনে ফারিশের সাথে কোনোরূপ যোগাযোগ করে নি আদ্রিতা। মাঝে পাঁচ’দিন আগে আদ্রিতার বাবা, মা আর ভাই এসেছিল তার সাথে দেখা করতে। আদ্রিতার মায়ের সে কি কান্না! আদ্রিতা শুধু বুঝিয়েছে কিছু হয় নি মা। সব ঠিক হয়ে যাবে। আদিবের মন খারাপ থাকে সারাক্ষণ। কি করবে? ভেবে পায় না। বসে বসে কি শুধুই দেখবে ফারিশ ভাইয়ের শাস্তির কাহিনি।’

#চলবে…

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ।]

#TanjiL_Mim♥️.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here