তপ্ত ভালোবাসা #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া #পর্বঃ৫৬

0
667

#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ৫৬

.
🍁
বর্ষার সুমতি পেয়ে আমি এখানকার সব ঘটনা গুলো চিন্তা করে লেখতে থাকি। আমার লেখার মধ্যে দিয়েই পুরো বাড়িতে সাথে সাথে আগুন লেগে উঠে দাউদ দাউদ করে। আগুনের মধ্যে দিয়ে চিন্তা করি জালানা দিয়ে কোনো রকম ডাইরিটা ফেলে দিব কারণ আমাদের রুমে তেমন একটা আগুন ছিল না। কারণ তখন রুমে জালানা খুলা থাকায় গ্যাস তেমন একটা ছাড়ায় নি তবে পাচ মিনিটে মধ্যে হয়তো সব পুড়ে যাবে সাথে আমরা ও। কারণ বাড়িতে যে পরিমাণ আগুন লেগেছে এখান কেউ আসলেও আমাদের বাঁচাতে পারবে না। চারদিকে শুধু আগুন আর আগুন দাউদাউ করছে। মৃত্যুটা নিজের খুব কাছ থেকে দেখতে ডাইরিটা বন্ধ করে জালানা দিয়ে ফেলে দেওয়ার সিন্ধান্ত নেয়। আর তখন কেয়া আর বর্ষাও কান্না করছিলো অঝোরে ……
.

কেয়া আর বর্ষা তখন একে অপরকে জরিয়ে ধরে কান্না করছিল অঝোরে কারণ তখন আমাদের রুমেও চারদিকে আগুন ছড়িয়ে পরেছিল। আমাদের হাতে কিছুই ছিল না করার জন্য। আর এই আগুনে আমরা কেউ যে বাচবো না তাও নিশ্চিত। আমি চারপাশে আগুন ছড়িয়ে পড়তে দেখে দ্রুত গতিতে জালানা দিয়ে ডাইরিটা নিচে ফেলে কেয়া আর বর্ষার কাছে চলে আসবো এই সিদ্ধান্ত নেই। মরতে হবে নিশ্চিত তাই জীবনের শেষ মূহুর্তে গুলো আপনজনকে জরিয়ে ধরে মরতে চাই……….

.

.

বতমান

.

ডাইরিটা শেষ অংশটা পড়েই অঝোরে কেঁদে উঠি আমি(মায়া)। পৃপ্তী, বর্ষা, কেয়া সাথে ঘটে যাওয়া প্রতিটা মূহুর্তে ছিল অনেক চিতিবিচক্ষু। কিন্তু তাদের জীবনের শেষ মূহুর্তেটা ছিল কষ্ট দায়ক। আর এই শেষ মূহুর্তেটাই কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না আমি। তাই কান্নাটা যেন বুক ফেটে আসছে ভিতর থেকে আমার রিদ খানের জন্য। উনার জীবনের ভালোবাসা একটা মানুষ ছিল আর সেই মানুষটাকেই হারাতে হয় নিয়তির কাছে। উনি করে পারছে এই সবটা মেনে নিতে আর
কারও অতীত এতটা ভয়াবহ হতে পারে এই ডাইরিটা না পরলে কখনোই বুঝতে পারতাম না আমি। ডাইরিটা পরের পৃষ্ঠা গুলোতে কিছুই লেখা ছিল না। শূন্য পাতা দেখে আমি কান্না ছেয়ে আরও অস্থির হয়ে ওঠি। কারণ এর পর কি হয়েছিল ওদের সাথে সেটা জানার জন্য। ওরা তিনজনই কি মারা গেছে ঐ ভয়াবহ আগুনে পুড়ে? আর রিদ খানের তখন কোথায় ছিল? আর কবেই বা এসেছিল এই আগুনে মধ্যে। সবকিছু পুড়ে যাওয়ার পর? নাকি সঠিক সময়ে এসে ওদের বাঁচাতে পেরেছিল রিদ খান? আর এই ডাইরিটা পড়ে এতটা বুঝতে পারছি যে পৃপ্তী সেদিন সফল হয়েছিল এই ডাইরিটা আগুন মধ্যেও জালানা দিয়ে ফেলতে। কারণ আমার হাতের ডাইরিটাই পৃপ্তী দেওয়া শেষ উপহার রিদ খানের জন্য। আমি এই কথা গুলো চিন্তা করেই আরও অস্থির হয়ে ওঠি পৃপ্তী, বর্ষা, কেয়ার শেষ অতীতটা জানার জন্য। অশ্রু সিক্ত চোখে অস্থির হয়ে ডাইরিটা শেষ পাতা গুলো উল্টাতে থাকি বাকি জানার জন্য সেদিন কি হয়েছিল কেয়া, বর্ষা, পৃপ্তীর সাথে? আমি কান্না করতে করতে অস্থিরতা নিয়ে একের পর এক পাতা উল্টাতে থাকি আর কোথাও কিছু লেখা আছে কিনা? কিন্তু কোথাও কোনো লেখা না দেখে এবার হালকা হালকা শব্দ করে ফুপাতে থাকি কান্না করতে করতে আর খুজতে থাকি। সম্পূর্ণ ডাইরিটা খুঁজে কোথাও আর কোনো লেখা না দেখে এবার ফুপিয়ে কেঁদে ওঠি শব্দ করে। আর অস্থিরতা যেন এবার আমার বহু গুণ বেড়ে যায় আমার বাকি প্রশ্নের উত্তর গুলো জন্য।

.
আমার এতো এতো প্রশ্নের উত্তর কে দিবে আমায়, কার কাছে যাবো আমি এসব প্রশ্ন নিয়ে, পরিবারে কারও কাছে যেতে পারবো না কারণ তারা আমার এসব প্রশ্নের উত্তর কখনোই দিবে উল্টো আমি বিপদে সূমহীন হতে পারি আর আমার লক্ষ্য থেকে সরে যেতে পারি। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তারা কি আদু জানে কেয়া, বর্ষা, ও পৃপ্তী সাথে জড়িত রিদ খানের অতীত সম্পর্কে? মাথায় প্রশ্ন অনেক কিন্তু উত্তর দেওয়ার মতো কেউ নেই। লাস্ট এই ডাইরিটা ছিল সেটাও অর্ধেকটা লেখা তাও পৃপ্তী মরার আগ পযন্ত। এরপর কি হয়েছে সেটা শুধু একমাত্র রিদ খানেই বলতে পারবে কিন্তু তিনি আমাকে কখনোই বাকিটা বলবে না। আমার সব প্রশ্নের উত্তর তিনি কখনোই দিবে না। সেটা উনি আরও আগেই বলে জানিয়েছেন। আর উনার যদি নিজের মুখে বলার হতো তাহলে উনি আমাকে এতোটা গোলকধাঁধা ফাঁসাতো না। তাই আমি শত চেষ্টা করেও উনার মুখ থেকে একটা প্রশ্নের উত্তর পাবো না। এটা চিন্তা করে আমি আরও অস্থির হয়ে ওঠি। বিছানায় উপুড় হয়ে ডাইরিটা জরিয়ে ধরে ফুপাতে থাকি কি করবো? কার কাছে যাবো? কিছু বুঝতে পারছি না আমি। সবকিছু যেন আমার কাছে এলোমেলো লাগছে। খুব বেশি অগজালো লাগছে সাথে বড্ড অসহায় ও মনে হচ্ছে নিজেকে।

.

বেশ সাজগোজ এর সাথে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আমি। দৃষ্টি আমার আকাশের শূন্যতে বহমান। অস্থির মন আর আর শূন্য অনূভতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি বেলকনির গ্রিল ধরে। পৃপ্তী ডাইরিটা পড়ে শেষ করেছি আজ তিন দিন হয়েছে। এই তিন দিনে লাক্ষ চেষ্টা করেও পৃপ্তীর সাথে ঘটে যাওয়া শেষ অংশটা জানতে পারিনি। এই তিন দিনে রিদ খানের সাথে একবার দেখাও পযন্ত করতে পারিনি। শুধু একবার ফোনে কথা হয়েছিল। আর তখন শুধু আমি উনাকে এতটা জিজ্ঞেসা করেছিলাম যে পৃপ্তী সাথে সেদিন কি হয়েছিল। বর্ষার, পৃপ্তী, কেয়া ওরা কি বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে। রিদ খান আমার এতটুকু শুনার পরপরই কলটা কেটে দেয় আমার। আর কিছু বলার সুযোগ দেয়নি আমাকে। পরে আমি গিয়েছিলাম উনার সাথে দেখা করতে কিন্তু উনি কোনো ভাবেই আমাকে উনার অবধি পৌঁছাতে দেয়নি। তাই আজ আমি ব্যথ পথিক হয়ে এইখানে দাঁড়িয়ে আছি। এখন দুপুর দুইটা বাজে বাহিরে কাট পুড়ানো রোদ। এই রোদের মাঝেও বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছি। কেন দাঁড়িয়ে আছি তা জানি না। যেটা জানি সেটা হলো আমার কিছু ভালো লাগছে না তাই। মন খারাপ ভাবটা কিছুটা দূর করতে এসেছি কারণ আর কিছুক্ষণ পর রুদ্র পরিবার বাবা-মা ও রিদ খানের দাদা-দাদী আসবে আমাদের বাসায় বিয়ে জন্য কেনাকাটা করতে কারণ আর পাঁচ দিন পরই আমার বিয়ে রুদ্রের সাথে। পুরো পরিবারের আমার বিয়ে নিয়ে হইচই বেঁধে আছে। রুদ্রও আমাদের বিয়েটা নিয়ে বেশ উত্তেজিত কিছুক্ষণ পরপর কল করে এটা সেটা জিগ্যেসা করতে আমাকে আর আমি প্রতিবারই হুম, হ্যাঁ উত্তরে জবাব দিচ্ছি।

.

আমার এমন চিন্তা ভাবনার মাঝেই রুদ্রের পরিবার এসে হাজির হয় আমার বাসায়। তিনটা গাড়ি করে উনারা সবাই আসে আমাদের বাড়িতে। রুদ্রের গাড়ি ঢুকতেই আরিফ ভাইয়া এগিয়ে আসে রুদ্রের রিসিভ করতে। সবাই হাসি মুখে একের একের আমাদের বাসার ভিতরে প্রবেশ করার সময় রুদ্র হঠাৎ উপরের দিকে একটা নজর তাকিয়ে আমাকে দেখে নেই হাসি মুখে। রুদ্রের মুচকি হাসিতে আমি কোনো রিয়েক্ট না করে চারপাশে চোখ বুলাই রিদ খানকে দেখার জন্য। ব্যস্ত হয়ে চারপাশে চোখ বুলিয়েও কোথাও রিদ খানকে না দেখে মূহুর্তে কান্না চলে আসে আমার। একটা লোক কতটা পাষান্ড হলে একটা মেয়ের সাথে এতটা খারাপ করতে পারে। উনি বুঝতে পারছেন আমি বড্ড অস্থিরতায় দিন পার করছি এখন। এই মূহুর্তে উনাকেই আমার প্রয়োজন আর উনি ইচ্ছে করেই আমাকে ধরা দিচ্ছে না। উনি জানে এখানে আসলে আমার প্রশ্নের সমূহীন হতে হবে আর সেটা জেনেই আসেনি আমি নিশ্চিত। গুন্ডা লোক একটা আমাকে জ্বালাতে উনার বড্ড সুখ সুখ লাগে আমি জানি কথা ভাবতে কাদুকাদু হয়ে ওঠি আমি। আমার কাদু কাদু মনোভাবের মধ্য দিয়েই হঠাৎ কেউ পিছন উচ্চ স্বরে টেকে উঠে। চমকে উঠে টলটলে চোখে পিছন ফিরে তাকাতেই চোখে পড়ল আরিফ ভাইয়ার বউকে, ভাবিকে একটা সবুজ শাড়ী জড়িয়ে আছে গায়ে। দেখতে পুরি চেয়েও কোনো অংশে কম মনে হচ্ছে না আমার কাছে। আমি ভাবির দিকে টলমলে চোখে তাকাতেই চমকে উঠে ভাবি আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে……….

.

—” একি মায়া কান্না করছিস কেন……..

.

ভাবির এমন কথায় রক্তচাপ হয় আমার মাথা তাইতো হিটহিটে মেজাজ উত্তর দিয়ে বলি……

.

—” মনের সুখে কান্না হয়েছে এবার……

.

আমার এমন কথায় ভারি কি বুঝতে পারলো তা জানি না তবে সাথে সাথেই একটা মুচকি হাসি দিয়ে এগিয়ে এসে আমার এক গাল স্পর্শ করে আদুরে সহিত বলে উঠে…….

.

—” পাগল মেয়ে কান্না করছি কেন? বিয়ের সময় সব মেয়েদের প্রথম প্রথম কান্না পাই, কষ্ট লাগে, একটা সময় দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে যখন নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে সবসময় পাশে পাবি তখন আর আমাদের কারও জন্যই তোর খারাপ লাগবে না কান্নাও আসবে না সত্যি বলছি।

.

ভাবির এমন কথায় মাথা গুরিয়ে ওঠে আমার। কান্না বাদ দিয়ে মেজাজ খারাপ হয়ে যায় মূহুর্তেই। আমি কখন বললাম যে আমি বিয়ে জন্য মন খারাপ করে কান্না করছি। আমিতো আমার দুঃখের কান্না করছি। আর উনি কি বুঝে আমাকে শান্তনা দিচ্ছে। বিষয়টি বুঝতে পেরেই আমি রাগে দুঃখে বলে উঠি………….

.

—” ধুরররররর বাবা আমিই গাঁজাখোর, কোথায় কি বলছি। এমনি নিজের কষ্টে বাচি না বিয়ের জন্য কাঁদার সময় আছে নাকি আমার। ধুররর থাকবই না এখানে……..

.

কথা গুলো বলেই আমি ভারির হাতটা আমার গাল থেকে সরিয়ে নিয়ে। রাগে গজগজ করতে করতে ধুপধাপ পা ফেলে ভাবিকে আমার রুমে রেখেই বেড়িয়ে যাচ্ছি রুম থেকে। আর ভাবি আমার এমন আচরণ ও
কথায় মূহুর্তেই বোকা বনে যায়। উনি আমাকে শান্তনা দিতে এসে উল্টো ফেসাদে পরে যায় সেটা ভেবে। তাই উনি কনফিউজড হয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে…….

.

—” আরে কি হয়েছে বলবি তো নাকি কান্না করছিস কেন? আর মা পাঠিয়েছে তোকে নিচে নিয়ে যেতে রুদ্রের পরিবারা সবাই চলে এসেতো……..

.

ভাবির এমন কথায় আমি কিছু না বলে জিদ্দে ফুসফুস করতে করতে বলে ওঠি…..

.

—” সেখানেই যাচ্ছি আমি। বিয়েবর্ত শুদ্ধস্বর করতে….

.

(আমি ভিপিন বা ওয়াই ফাই রাউটার ইউস করি না তাই কিছুদিন চাওয়া শর্তেও গল্প দিতে পারিনি ফেসবুকে । আর কাল অতিরিক্ত মাত্রায় ঝড় থাকায় আমাদের এখানে বিদ্যুৎ ছিল না তাই ফোনে চার্জ ছিল না তাই ফেসবুকে আসতে ও পারিনি গল্প ও দিতে পারিনি)

.

.

.
চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here