তপ্ত ভালোবাসা #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া #পর্বঃ৫৭

0
111

#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ৫৭

.
🍁
আমাদের ড্রয়িংরুমে মেহমান মহলে বসে আছি আমি রাগটা চেপে ধরে। আমার আশেপাশে এতো এতো বকবক করা পার্টির সামনে আমি একাই সেই কখন থেকে চুপচাপ বসে আছি পাথর মূর্তি সেজে। আম্মু জন্য ঠিকঠাক নড়াচড়াও করতে পারছি না। আম্মু ধারণা বেশি নড়াচড়া বা কথা বললে তারা আমাকে মানে রুদ্রের পরিবার আমাকে খারাপ জানবে। আর খারাপ জানলে বিয়েতে যদি কোনো রকম সমস্যা হয় তো। এটা ভেবেই আম্মু আমার আটঘাট বেঁধেই নিয়েছে আমাকে পাথরমূর্তির মতো বসিয়ে রাখার। সব গাঁজাখোরী চিন্তা ভাবনা আম্মু আমাকে শং সাজিয়ে বসিয়ে রাখার। তা অবশ্য করার একটা কারণ আছে আর তা হলো আমার সাথে রুদ্রের বিয়ে ঠিক হওয়ার পর আজকে প্রথমবার রুদ্রের বাবা-মা আমাদের বাসায় আসে আমাকে দেখতে ও বিয়ের জন্য কেনাকাটা করতে আর তার জন্যেই আম্মু আমাকে তাদের সামনে ভালো সাজানোর এতো শত চেষ্টা। কিন্তু এতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে আর কিছুক্ষণ এই ভাবে শাশ্ব আটকিয়ে বসে থাকলে আমি হঠাৎই ফেটে পড়বো সবার সামনে বোম এর মতো।

.

চঞ্চলতা আমার নিজি স্বভাব। এটাই আমি। আমি এমনই। যে আমাকে চাই সে আমার সবটা দেখে পছন্দ করবে এটাই স্বাভাবিক। কারও জন্য কিছু ছেড়ে দিয়ে বা আমাকে তার জন্য নিজেকে চেঞ্জ করতে হবে এটা মোটেও আমার ধর্ম না এটা আমি পারবোই না। কোনো কালেই না। তাহলে আম্মুকে কে বুঝাবে এই বিষয়টা? এখানে উপস্থিত সবাই আছে শুধু রিদ খান ছাড়া। উনি কোথায় আছে সেটাও জানি না কারণ উনার সম্পর্কে কেউ কিছু এখনো বলেনি। উনাকে হঠাৎই আজ খুব বেশি মিস করছি আমি। হয়তো উনাকে নিয়ে ইদানীং খুব বেশি ভাবছি কয়েকদিন ধরে তাই একটা নজর দেখার আকাঙ্খা জাগছে বারবার।

.
আমার নিরবতা সাথে শেষ হয় সবার খাওয়া দাওয়া ও আলোচনা পর্ব। আমাদের পরিবার সহ সবাই বেড় হচ্ছে শপিংমলে উদ্দেশ্য। আমাদের পরিবারের সবাই যেহেতু যাবে সেই জন্য আরও দুটো গাড়ি এড হয়েছে এখানে আসিফ দুটো গাড়ি নিয়ে এসেছে। আসিফ দেখেই আমি খুশি হয়ে ছিলাম মনে করেছিলাম রিদ খান বুঝি এখুনি এসেছে আমার সামনে। কিন্তু উনাকে এবারও আসতে না দেখে আমার সুপ্ত মনটা আহত হচ্ছে বারে বারে। আমি মন খারাপ ভাব টেনে উঠে বসি রুদ্রের গাড়িতে দাদির সাথে পিছনের সিটে। রুদ্র ড্রাইবিং করছে, দাদাজান রুদ্রের সাথে সামনের সিটে বসেছে। আর আমি দাদীর সাথে পিছনের সিটে বসেছি। বাকিরা অন্য গাড়ি গুলো দিয়ে আসছে আমাদের পিছন পিছন। আমি মন খারাপ করে চুপ করে সিটে বসে আছি অন্নমনস্ক হয়ে এইভাবে কিছুক্ষণ গাড়ি চলার পরপরই দাদী আমার পাশ থেকে হঠাৎই চিন্তিত সুরে রুদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে………

.

—” রুদ্র তুই কি জানিস, রিদ এখন কোথায়?

.

দাদীর এমন কথায় যেন মূহুর্তেই প্রাণটা ফিরে আসে আমার। আমি দ্রুত গতিতে ঠিক হয়ে বসে রুদ্রের দিকে তাকায় কাতর দৃষ্টিতে। রুদ্র কি বলে সেটা শুনা জন্য। দাদীর কথায় রুদ্র ড্রাইবিং করতে করতে বলে উঠে…….

.

—” না দাদী, আমি কিছু বলতে পারছি না রিদের সম্পর্কে নানুমা। ওর সাথে আমার লাস্ট কাল দেখা হয়েছিল এরপর কোনো কথা বা দেখা হয়নি। নানাভাই বলতে পারবে ওর সম্পর্কে।

.

এই প্রথম রুদ্রের কথায় রুদ্রের চুল ছিরতে ইচ্ছা করছে আমার। মেজাজটাই তিরিক্ষি হয়ে গেছে মূহুর্তেই আজব পাবলিক নিজের ভাই কোনো খুঁজ খবর রাখতে পারে না। কোথায় আছে সে, কি করছে একটা খুঁজ নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছে না। কেমন ভাই? মনে মনে রুদ্রকেও গালি দিতে ইচ্ছা করছে। আমার রুদ্রকে গালি দেওয়ার আগেই সামনের থেকে দাদাজান বললো……..

.

—” রিদের সাথে সকালে কথা হয়েছিল আমার। ওর আজকে সকাল ও বিকাল তিনটার দিকে মিটিং আছে বলেছে।

.
দাদাজানে বলার রিদ খানের কথা গুলো পছন্দ হলো না দাদীজানে। হয়তো রিদ খানের রোজ রোজ ব্যস্ততায় বিরক্তি হচ্ছেন তিনি। তাই দাদী বিরক্তি নিয়ে বলে উঠে…….

.

—” তাহলে ওর রাতে বাড়িতে আসেনি কেন?

.
দাদীর কথায় দাদাজান সাথে সাথে উত্তরে বললো…….
.

—” রাতে কাজ ছিল বলে বাসায় আসেনি। ওর বাংলোতে চলে গিয়েছিল……

.

দাদাজানের কথায় দাদী এবার পুরো দমেই ক্ষেপ্ত হয় সেই সাথে আমিও। এতো কাজ কাজ করার কি আছে মানুষটার? একটু কি পরিবারকে টাইম দিতে পারে না? কই পৃপ্তীকে টাইম ঠিকই দিতো সেই সময় তো এতো ব্যস্ততা দেখেইনি? তাহলে এখন এতো কাজ কাজ করে লোকটা? আমাদের জন্য কি একটুও মন জলে না তার? আমার এমন রাগে মধ্যে দিয়ে দাদী রেগে দাদাজানকে উদ্দেশ্য করে বললো….

.

—” ওর এতো কিসের কাজ? যে পরিবারকে টাইম দিতে পারে না হ্যাঁ। তুমি এখুনি ওকে কল দিয়ে বলো সব মিটিং বাদ দিয়ে আমাদের সাথে শপিং মলে আসতে আর সেটা আমার অর্ডার ওর জন্য….

.

দাদীর এমন কথায় মনে মনে বেশ খুশি হয় আমি। ইচ্ছা করছে দাদীর কোলে বসে জরিয়ে ধরে অনেকককক গুলা চুমু খায়। এক কথা চুমুর বৃষ্টি করি দাদীর ওপর এতো ভালো একটা কথা বলার জন্য। আহা মনটা জুড়িয়ে গেল আমার। বাচাধন বিঘত কয়েক দিন ধরে বেশ জ্বালিয়ে আমার সামনে না এসে, আজ আসুক সামনে তখন বুঝাবো আমি কি হুহ্? আমি খুশিতে গতগত হয়ে দাদাজানের দিকে তাকায়। দাদাজান পকেট থেকে ফোনটা বের করে রিদ খানকে লাগায়। বেশ কয়েক বার উনার পার্রসোনাল ফোনে ফোন দেওয়ার পরও উনি রিসিভ করেনি একবারও। আমি আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে তাকতেই দাদাজান বলে উঠে দাদীকে…….

.

—” রিদ ফোন ধরছে না তো……

.
দাদাজানে কথায় দাদী কিছু বলবে পাশ রুদ্র বললো……

.

—” হয়তো রিদ মিটিং এ আছে তিনটা বেজে গেছে তো তাই ধরছে না।

.

রুদ্রের কথায় দাদাজান সুমতি জানিয়ে বললো….

.

—” হুমমম হয়তো…..

.

রুদ্রের কথায় দাদী যেন মূহুর্তে আরও ক্ষেপে যায়। আর আমার এবার কষ্টে কান্না করতে ইচ্ছা করছে। কাকে বুঝাবো আমার এমন কষ্ট দায়ক বেদনা গুলো। আমার কষ্ট ভরা মন নিয়ে দাদীর দিকে তাকায় এই দাদীই আমার শেষ ভরশা রিদ খান অবধি পৌঁছানোর। কারণ বর্ষা, কেয়া, আর পৃপ্তী শেষ অতীতটা একমাত্র রিদ খানের বলতে পারবে অন্য কেউ নয়। তাই আমার তাকানোর মধ্যে দিয়েই দাদী সাথে সাথে বললো…..

.

—” —” কি এখন মিটিং আছে। এখুনি ওর মেনেজারকে কল দাও আর বলো শপিং মলে আসতে ওকে…..

.

দাদীর কথা দাদাজান দ্রুত মেনেজারকে কল দিয়ে বললো রিদ খানকে কল দিতে। মেনেজার পরিবারে কল দেখে রিদ খানের কাছে দিলে ও রিদ খানের কথা না বলে ফোনটা রেখে দেয়। পরে মেনেজার কল করে জানায় যে উনি মিটিং থাকার কারণে উনি কথা বলতে পারবে না। পরে কথা বলবে। রিদ খানের আচরণে দাদীও কান্না সিক্ত চোখ হয়ে যায়। হয়তো উনি সবসময়ই দাদীর সাথে এমন করে সেই জন্য। যখনই দাদী নিজেকে চুপ রাখার চিন্তা ভাবনা করে তখনই আমি শয়তানী বুদ্ধি আটকিয়ে দ্রুত সবাইকে উদ্দেশ্য করে দাদীকে শান্তনা দিতে দিতে বলে উঠি………

.

—” দাদী আপনি কষ্ট পাচ্ছেন কেন? রিদ ভাইয়া মিটিং এর জন্য আমাদের সাথে যেতে পারছে না বলে কি হয়েছে? আমরাতো রিদ ভাইয়াকে খুশি করতে উনার কাছে যেতে পারি মাঝে মধ্যে তাই না। মানে যখন উনি কাজের চাপে আমাদের সময় দিতে পারছে না তখন আমাদের তো উনার জন্য একটু সময় নিয়ে অপেক্ষা করে তারপর উনাকে আমাদের সাথে নিয়েই শপিং করতে যেতে পারি তাই না। আমরা সবাই এখন গিয়ে উনার অফিসে বসে থাকি পরে উনি যখন ফ্রি হবে তখনই রিদ ভাইয়াকে নিয়ে শপিং এ যাবো ব্যাস।

.

আমার এমন কথায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় সবাই আমার দিকে কথা গুলো বলে একটা মূহুর্তের জন্য ভয় পেলেও পরমূহুর্তেই সবকিছু ঠিক হয়ে যায়। আমার দাদী কথায় সাথে সাথে রুদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে……

.

—” রুদ্র গাড়ি গুড়া, রিদের অফিসের দিকে যা। আমরা সবাই এখন ওর অফিসে যাবো চল…..

.

এতো তাড়াতাড়ি দাদীকে আমার কথা মানতে দেখে ইচ্ছা করছে লুংগী ডান্স দিতে গাড়ির ভিতরে খুশিতে। আহা এবার গিয়ে আমার শান্তি লাগছে আমার বড্ড অবশেষে আমি আমার লক্ষে পৌঁছাতে পারবো এটা ভেবে।

.

(রাতে আরও একটা পার্ট দিব)

.

.

.
চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here