তপ্ত ভালোবাসা #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া #পর্বঃ৫৮

0
109

#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ৫৮

.
🍁
রিদ খানের কনফারেন্স রুমে বসে আছি আমি। উঁহুম একা বসে নেই আমি মোটেও এখানে। ওয়েট, এখানের পরিস্থিতিটা আগে আপনাদের বুঝি নেই। দাদী রিদ খানের চেয়ারে বসে বসে কান্না করছে আর টেবিল থেকে টিস্যু নিয়ে নাক পানি চোখে পানি মুচ্ছে বারবার। আর উনি নিজের দাদীর সামনে একটা চেয়ার টেনে বসে আছে সাথে একহাতে একটা পানির গ্লাস নিয়ে বসে আছে আর বিবৃতকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দাদী দিকে। কারণ এই মূহুর্তে এমন কিছু হয়তো কখনোই আশা করেনি তাই আর আমি? ঠিক উনার সামনের চেয়ারে বসে টেবিলে ওপর ঝুঁকে দুই গালে হাত দিয়ে হা হয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছি শুধু রিদ খানের দিকে এক দৃষ্টিতে। একটা পলকের জন্য দাদী দিকে অবধি তাকাচ্ছি না। আমরা তিন জনই উনার এই কনফারেন্স রুমে বসে আছি অন্য কেউ নেই। সবাই বাহিরে বসে আছে। সবাই দাদীর কষ্টটা বুঝে বাহিরে বসে আছে ভিতর আসছে না কেউ। আমারও এখন বাহিরে থাকার কথা ছিল কিন্তু আমি ইচ্ছা করেই যায়নি। আমি কেন বাহিরে যাবো হুম? দাদী আমার বুদ্ধি আজ এখানে এসেছে উনার সাথে দেখা করতে তাই আমার এখানে থাকার অধিকার আছে দুজনের মধ্যে হুহ্।

.
আসলে তখন যখন গাড়িতে দাদী আমার কথা মতো রিদ খানের অফিসে হামলা করেন এবং কাউকে কিছু না বলে সোজা রিদ খানের কনফারেন্স রুমে চলে আসে যেখানে উনি জরুরী বিত্ততে সবাই সাথে মিটিং করছিল। তখন আমারও কৌতুহলটা এতটাই ছিল যে আমিও দাদী পিছন পিছন দৌড়ে চলে আসি এখান অবধি। হঠাৎ করে দাদী উনার কনফারেন্স রুমে হামলে পড়ায় সবাই চমকে উঠে দরজা দিকে তাকায়। এবং দরজা সামনে দাদীকে রাগান্বিত ফেসে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রিদ খান সবাইকে হাতের ইশারায় চলে যেতে বলে রুমে থেকে। উনার ইশারা মতো কেউ কোনো রকম বাক্য না বলে চুপচাপ রুম থেকে চলে যায় বাহিরে। সবাই বাহিরের যেতে উনি এগিয়ে আসে আমাদের দিকে আর আমি তখনো দাদীর পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। উনি একটা বার আমাকে দেখের প্রয়োজন বোধ করেনি কিন্তু আমি উনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম এক দৃষ্টিতে। দাদী কষ্টে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদার মধ্যে দিয়েই উনি জোর করে হালকা পানি খাওয়ায় দাদীকে পরে পানি গ্লাসটা টেবিলে ওপর রাখতে গিয়ে সরাসরি তাকায় আমার দিকে। দুইজনের চোখাচোখি হলেও আমি তখনো পলকহীন চোখে ড্যাবড্যাব করেই তাকিয়ে ছিলাম উনার দিকে। আমার এমন তাকানোতে বিরক্তি প্রকাশ করেন মূহুর্তেই কোনো কিছু না বলে ঠাস করে উচ্চ শব্দ করে গ্লাস রাখে টেবিলে ওপর তারপর আবারও মনোযোগী দাদীর দিকে। উনার এমন করাতে আমি চমকে উঠলেও আমার বিশেষ কোনো পরিবর্তন আসেনি ঠিক আগের মতোই ছিলাম। তখনই উনি দাদীকে বিরক্তি নিয়ে বললো……..

.
—” দাদী কি হয়েছে বলবে তো? এমন করে কান্না করছো কেন?

.
দাদী উনাকে কোনো রকম উত্তর না দিয়ে কান্না করেই চলছে। তখনই আমি আগের মতো করে তাকিয়ে থেকে বলে উঠি……

.
—” আপনার জন্য…

.

আমার এমন কথায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় উনি আমার দিকে। পরে কিছু না বলে আবারও দাদীর দিকে তাকিয়ে থেকে বললো……

.
—” আমি কি করেছি তুমি বলবে তো নাকি.?

.
এবারও দাদীকে কিছু বলতে না দেখে আমি পাশ থেকে বলি……

.
—” কি করেননি সেটা বলুন! আপনি আমাদের সবসময় ইগনোর করেন কেন? সময় দেন না কেন আমাদের?

.

আমার এমন উত্তরে কপাল কুঁচকে এলো উনার। আমি উনাকে কি বুঝাতে চাইছি সেটা বুঝতে না পেরে হালকা সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো…..

.
—” মানেহ?

.
উনার এমন দৃষ্টিতে আমি হালকা নড়েচড়ে বসি। আমি কি বলেছি উনাকে সেটা বুঝতে পেরে দ্রুত আবারও কথা ঘুরিয়ে বলে উঠি……

.
—” মানে আপনি দাদীর কথা শুনেন না। দাদীকে ঠিকঠাক সময় দেন না আরকি। আপনি ছাড়া দাদীর কি আর কেউ আছে যাকে নিয়ে দাদীর সময় কাটবে। একমাত্র আপনিই তো ভরশা তাই না। তারপর আপনি বিয়েও করছেন না। আপনি যদি ঠিক সময়ে বিয়েটা করতেন তাহলে আজ আপনার একটা ছেলে মেয়ে থাকতো যাকে নিয়ে দাদীর সময় কাটাতে পারতো তাই না।

.

কথায় কথায় অনেক গুলা গোঁফগাঁফ বাজে কথা বলে দিয়েছি উনাকে। যেটা উনার কাটা গাঁয়ের নুন চিটানোর মতো ছিল। আর কেউ না জানুক আমি তো উনার অতীতটা সম্পর্কে জানি ভালো করে আমার একদমই ঠিক হয়নি উনাকে এসব কথা গুলো শুনানোর। নিজের কথার জালে নিজেই ফেঁসে গেলাম। কি বলে ফেলেছি সেটা বুঝতে পেরে মূহুর্তেই নিজের দুই হাতে মুখে চেপে ধরি শক্ত করে ভয়ে। আর উনি দাতে দাত পিষে আমার দিকে রাগে কটমট করতে করতে তাকিয়ে ছিল আর তখনই দাদী পাশ থেকে সুমিত জানিয়ে বলে উঠে…….

.

—” আমার কথা তো তুই একদমই শুনতে চাস না। তোর সাথের ভাই বিয়ে করছে আর তুই পালিয়ে বেড়াস আমাদের থেকে। তুই কখনো আমার কষ্ট শুনতে চাস না বুঝতে চাস না। কি করেছি আমি তোর সাথে…..

.

কথা গুলো বলেই দাদী আবারও ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে কষ্টে উনার সামনে নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে । রিদ খান আমার দিকে নাক মুখ শক্ত করে তাকিয়ে থেকে দাদীকে উদ্দেশ্য করে বলে…..

.

—” দাদী এবার থেকে তোমার সব কথা শুনব। আর কষ্ট দিব না তোমায়। তুমি যাহ বলবে তাই হবে। তোমার কথায় শেষ কথা হবে।

.
—” সত্যি বলছিস তুই। (খুশি হয়ে দাদী)
.

—” হুমমম সত্যি ( গম্ভীর কণ্ঠে)

.
—” বিয়ে করতে বললে করবি তুই…. (কোতুহলী হয়ে প্রশ্নটা করলো দাদী)

.
উনি আমাকে এক পলক দেখে সাথে সাথে সুমতি জানিয়ে দাদীকে বললো……

.

—” হুমমম করবো তবে পাঁচ দিনের মধ্যে। তবে মেয়ে তুমি ঠিক করবে যাকে বলবে তাঁকেই বিয়ে করবো। তবে রুদ্র বিয়ের দিনই আমিও বিয়ে করবো। একি দিনে দুটো বিয়ে হবে। আর নয়তো নয় তাই তুমি মেয়ে ঠিক করো দ্রুত…..

.

উনার এমন বোম ফাটা কথায় মূহুর্তে আমি আর দাদী আকাশ থেকে পড়লাম। দাদীর চোখে মুখে আনন্দ চিকচিক করলেও আমার চোখে মুখে ছিল ভয়ে চাপ। সেটা কিসের তাহ জানি না। তবে এই ছেলে হঠাৎ করে বিয়ে করে ফেলবে তাও এতোটা অল্প সময়ের। এটা কি করে সম্ভব। উনার কথায় শকট খেয়ে বসে থাকি আমি জায়গায় আর তখনই উনি উঠে চলে যায় এখান থেকে আর কোনো রকম বাক্য বা বয়ে আর আমি তখনো হা হয়ে বসে ছিলাম স্তব্ধ হয়ে। কি বলবো তা ভাষা হারিয়ে ফেলেছি…….
.

.

.

🍁
শাড়ীর শোরুমে অসংখ্যা শাড়ি সামনে বসে আছি আমি। আমার ওপর শাড়ী গুলো সবাই এটা সেটা ধরে ধরে দেখছে সেই কখন থেকে। রাত প্রায় আটটা ছুঁই ছুঁই । এখানে উপস্থিত সবাই রয়েছে রিদ খানও রয়েছে তবে আমাদের ওপর তার কোনো রকম মনোযোগ নেই। ফোন হাতে নিয়ে মনোযোগ সহকারে কি যেন করছে। আর আমি বার বার ঘাড় বাঁকা করে উনার দিকে তাকাচ্ছি কিন্তু উনি বিন্দু মাত্র আমার দিকে তাকাচ্ছে না পযন্ত। আরিফ ভাই রুদ্রকে নিয়ে গেছে ওর বিয়ের জন্য সেওরানী দেখতে অনুভব পাশে। আর আমি একের পর এক শাড়ি নিজের ওপর রেখে উনার দিকে তাকাচ্ছি বারবার কি হাই উনি একটা বার দেখার প্রয়োজন করছে না। এমন করতে করতে একটা সময় আমার প্রচন্ড রাগ উঠে যায় উনার ওপর। আর সেই রাগের রেশ ধরেই সবাইকে মিথ্যা বলে রেখে উঠে পরি সেখান থেকে আর চলে যায় একদমই সামনে গিয়ে দাঁড়ায় নাক মুখ শক্ত করে বলে উঠি…..
.

—” কি সমস্যা আপনার আমি কিছু ইশারা করছি সেই কখন থেকে সেটা দেখছে না কেন আপনি?

.

.

.
চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here