তপ্ত ভালোবাসা #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া #পর্বঃ_৬৫

0
107

#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৬৫

.
🍁
—” কারণটা খুবই সিম্পল। আমি রিদ খান খানকে ভালোবাসি। তাই রিদ খান আমার কাছে আসিফকে আসতে দিতে চাই না। রিদ খানের ধারণা আমি আসিফকে পটিয়ে রিদ খান অবধি পৌঁছাবো। আর সেটাই সত্য আমার আসিফকে রিদ খানের সম্পর্কে জানতেই চাই এখন…….
.

আমার বাকি কথা গুলো মুখেই রয়ে গেল শেষ অবধি টানতে পারিনি আমার পঞ্চ বান্ধবীদের উচ্চ স্বরে চিৎকারের কারণে। প্রত্যেকটা সদস্যদের গলা ফাটা চিৎকারে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে থামতে হয় আমাকে। আমার কথা বলার মধ্যে দিয়েই সবাই একসাথে চিৎকার করে বলে উঠে……..
.

—” কিহহহহ…?
.

আমি তাদের গলা ফাটা চিৎকারে বিমরীতিতে পড়ে যায়। নিজের কথা গুলো শেষ করতে না পেরে বিরক্তি নিয়ে চোখে তুলে তাকাই আমার পঞ্চ বান্ধবীদের দিকে। আমার মধ্যে বিরক্তি প্রকাশ পেলেও তাদের মধ্যে ছিল রাশি রাশি পূর্ণ শকট পূরণতা। আমার কথায় তাদের শকট খাওয়ার ধাপটা এতটাই ছিল যে একেক জনের চোখে কৌটা থেকে চোখে বেড় হয়ে আসার উপক্রম। আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে ছিল একেক জন। আমি ওদের এমন উঙ্গি ভঙ্গি মানে বুঝতে পেরেও না বুঝার ভান ধরে বিশাল প্রশ্ন বোধক চিন্হ ঝুলিয়ে রেখে ফেসে ওদের দিকে তাকিয়ে থেকে প্রশ্ন সিক্ত কন্ঠে বলে উঠি…….

.
—” কি সমস্যা তোদের ষাঁড়ের মতো চেচাচ্ছিস কেন? কি হয়েছে?

.
আমার বেহুলা টাইপ কথা শুনে এবার মেজাজ খারাপ হয় সবার। পঞ্চ ইন্দ্রয় বান্ধবীদের রাগটা বর্ষণ আকারে ঝরে আমার ওপর। আমার কথা সূত্রে নিজেদের রাগ জারতে থাকে একে একে। প্রথমটা শুরুটা বুঝদার কন্যা রুপা শুরু করলেও দ্বিতীয় বাক্যটা শেষ করে আমাদের ভাবুক কন্যা শিলা। রুপার প্রথম উক্তি ছিল বড্ড গাঢ় মূলক চরিত্রে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো…….

.
—” তোর কি আমাদের গাঁজাখোর মনে হচ্ছে মায়া। একটা পর একটা মনগড়া ইতিহাস শুনিয়ে যাবি আমাদের। আর তোর সেই কথায় অনুযায়ী রিয়াকশন দিলে হবো বলদা ষাঁড়পার্টি! তোর কি মনে হয়না তোর আমাদের সাথে স্পষ্ট ভাষায় কথা গুলো বুঝিয়ে বলা দরকার?

.
রুপা কথা পরিপক্ব করে ভাবুক কন্যা শিলা রাগী রাগী ভাব নিয়ে বলে উঠে….

.
—” হুমমম সেটাই! একবার বলছিস তোর আসিফকে চাই তো অন্যবার বলছিস রিদ খানকে ভালোবাসিস। আমাদের তুই পাগল বানাচ্ছিস কেন?

.
শিলার কথার সাথে পাল্লা দিয়ে আমাদের রাগী কন্যা মাহি দুই কদম এগিয়ে শিলার বরাবর হয়ে আমাকে নিজের রাগের শরণাপন্ন করে ক্ষেপ্ত কন্ঠে বললো……
.

—” দেখ মায়া! আজ বাদে কাল তোর বিয়ে রুদ্র ভাইয়ার সাথে। আর এখন তুই আমাদের রাম কাহিনি শুনচ্ছিস আর সেটা বিশ্বাস করতেও বলছিস। তুই কি বুঝতে পারছিস তুই কি বলছিস আমাদের এই মূহুর্তে।

.
পর পর তিন জনের রাগের শিকার হয়ে আমি স্বাভাবিক বগিতে তাকিয়ে থাকি ওদের দিকে। এমন একটা ভাব যেন এখানে তেমন কিছুই হয়নি বা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে। আমার এই অবুঝ পূর্ণতা দেখে মূহুর্তে তাদের রাগটা আরও দ্বিগুণ হচ্ছে আর এতে করে আমার কোনো রকম ভাবান্তর নেই। যার রাগ সে সামলাবে এতে আমার কি? আমার কারও রাগের টেঁকা নিয়ে রাখিনি তাই না! আর ব্যাক্তি মানেই তার মধ্যে কিছু না কিছু রাগ থাকতে পারে। আর অন্যে রাগ দেখে নিজেও রেগে গিয়ে পরিস্থিতি নিজের হাতের বাহিরে ফেলে দেওয়ার মতো মেয়ে আমি নয়। তাই ওদের কথা ইতি টানতে নিজের কথায় অটল থেকে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে স্বাভাবিক বগিতে বলি……

.
—” তোদের কি কমেন্ট করা শেষ? নাকি আরও কিছু বলা বাকি আছে করা? যদি থেকে থাকে তো দ্রুত শেষ কর। কারণ এরপর আমি যাহ বলবো সেটাও তোদের শুনতে হবে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
আমার সব কথার শেষ কথা একটাই রিদ খানকে আমার চাই-ই চাই। সেটা কিভাবে তা জানি না কিন্তু আমার চাই উনাকে। নয়তো আমি কি করবো নিজেও জানি না!

.
আমার কথার ধাঁচে নরম হয়ে আসে আমার পঞ্চ বান্ধবীরা সবাই। আমার সাথে আর কোনো রুপ তর্কবির্তক না করে হাটি হাটি পা পা করে এগিয়ে এসে আমার পাশে দল বেঁধে বসে সবাই। আমাকে শান্তনা দিয়ে আসস্বাস্ত সুরে বলে উঠে মাহি…..

.
—” আমরা যে করেই হোক আজ রাতের মধ্যে আসিফকে নিয়ে আসবো তোর কাছে চিন্তা করিস না তুই। আর তুই তো রিদ খানকে পছন্দ করতি না তাহলে হুট করে ভালোবাসতে গেলি কখন হুম?

.
মাহির কথায় ঘাড় ঘুরিয়ে একটা পলক দেখি মাহিকে পরে নিরবে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে সামনের দিকে তাকিয়ে থেকে বিনিত সুরে বলে উঠি……..

.
—” জানিনা কিছুই। তবে এখন মনে হচ্ছে উনিটা (রিদ) ছাড়া আমার এক মূহুর্তও চলবে না। কাল কি হবে জানি না? রুদ্রকে কি উত্তর দিব তাও জানি না? শুধু জানি রিদ খানকে আমার চাই-ই চাই।
.

কথা গুলো বলেই আস্তে করে নিজের মাথাটা রাখি মাহির কাঁধের উপর। নিজের অস্থিরতা শিকার হয়ে নীরবে চোখ দুটো বন্ধ করে নেই আপন মনে।

.

.
🍂
রাত প্রায় চারটা ছুঁই ছুঁই। এই মূহুর্তে আমার সামনে উপস্থিত শয়ন দাঁড়িয়ে আছে আসিফ। আমি স্বাভাবিক বগিতে দাঁড়িয়ে থাকলেও আসিফ বেশ কাচুমাচু করছে আমার সামনে দাড়িয়ে থাকতে। হয়তো আমার এইভাবে সমূহীন হবে সেটা কখনোই ভাবিনি। তাই আমার সামনে দাড়িয়ে থাকতে খানিকটা ইতস্তত বোধ করছে। আসিফকে এক প্রকার ফাঁসিয়ে আনা হয়েছে এখানে আমার পঞ্চ বান্ধবীরা। কি বলে এখানে এনেছে তা বলতে পারবো না। কিন্তু ওরা শুধু আমাকে এতটা বললো যে কাজ হয়ে গেছে আসিফ নাকি কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার সামনে উপস্থিত হয়ে যাবে। আমি প্রশ্নে করতেও ওরা কিছু বলেনি যে আসিফকে কি বলে রাজি করিয়েছে এখানে আসতে?
.

আমি আসিফকে নিয়ে এই মূহুর্তে আমাদের ছাঁদের ওপর দাঁড়িয়ে আছি একপাশে। প্রায় সকাল হয়ে এলো বলে, বাড়িতে আগ্রত সকল মেহমানরা মধ্যে হাতে গুনা কয়েকজন ছাড়া বাকিরা সবাই যার যার মতো করে নিজের ঘুম পূর্ণ করায় ব্যস্ত। মেহেদী অনুষ্ঠানের পূর্বোটা আরও এক ঘন্টা আগেই চুকানো শেষ হয়ে গেছে। আর আমি ওপর থেকে চারপাশটা এক পলক ভালো করে পযবেক্ষণ করে নিয়ে তাকায় আসিফের দিকে আসিফকে কাচুমাচু করতে দেখে কোনো রকম বনিতা ছাড়ায় স্পষ্ট ভাষায় বলে উঠি…..

.
—” ভাইয়া আপনাকে আমার পঞ্চ বান্ধবীরা কি বলে এখানে এনেছে তা আমি জানিনা। তবে আপনাকে আমার এই মূহুর্তে বড্ড প্রয়োজন তাই ওদের এতো সবকিছু করা। প্রয়োজনটা আমার ছিল তাই ওরা এতো সবকিছু করেছে আপনার সাথে। আমি ওদের হয়ে সরি বলে নিচ্ছি আপনাকে।

.
কথা গুলো বলেই কিছুক্ষণ মন্ত হয়ে যায়। খানিকটা চুপ থেকে আবারও বলে উঠি……

.
—” আমি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলে অযথা সময় নষ্ট না করে মূল কথায় আসি। আসলে আপানকে এখানে আনার একমাত্র কারণ হচ্ছে আপনার ভাই, মানে রিদ খানের জন্য। আপনার ভাইকে (রিদ) নিয়ে কিছু প্রশ্ন আপনাকে করবো আশা করি আপনি আমাকে আমার প্রশ্ন গুলোর উত্তর পেতে সাহায্য করবেন। আপনি আমার অসহায়ত্বটা বুঝবেন। আপনি তো নিজেই সাক্ষী আমার আর আপনার ভাইয়ে(রিদ) বিয়ে তাই না। আপনি এতটা জানেন যে কাল বাদে পরশু আমরা দুজনই অন্য দুজনের সাথে বিয়ে করতে চলেছি। আমি রুদ্রের সাথে আর আপনার ভাই (রিদ) উনার মামাতো বোন নিধি নামের মেয়েটির সাথে। যেখানে আমাদের ডির্বোসই হয়নি সেখানে দ্বিতীয় বিয়ের কোনো প্রশ্নই উঠে না। আমি আমার বিয়েটাকে একটা সুযোগ দিতে চাই মন থেকে। আর তার জন্য আমার রিদ খান সম্পর্কিত বিস্তারিত সবকিছুই জানা প্রয়োজন যেমন অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ। উনার বতমান সম্পর্কে সবটাই আমার জানা। আর আপনি আমাকে সাহায্য করলে আমি হবো উনার ভবিষ্যৎ। বাকি রইল উনার অতীতটা সেটা আমার অধেক জানা বাকিটা আপনি বলবেন আমাকে। কারণ আমার জানা মতো আপনি খুব বেশি সময় ধরেই আছেন উনার পাশে তাও খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত হিসেবেই। আপনার চোখে দেখাই উনার অতীতটা এখন আপনি আমাকে বলবেন উনার বাকি অতীতটা কি? মানে পৃপ্তী, বর্ষা, কেয়া ওরা কোথায় আছে এখন? সেদিন আগুনে কি হয়েছিল ওদের শেষ পরিনতিটা? আমি সবটা জানতে চাই আর আপনি আমাকে সেই সবটা বলবেন নিরদ্বিধায় এখন। কি হয়েছে ছিল সেই রাতে ওদের সাথে?

.
(কাল অতীতে বাকিটা তুলে ধরা হবে। কাল নেক্সট পার্টটা দিব এই টাইমই)

.

.

.
চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here